বারবার উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও তা রাখতে পারছে না বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড।
প্রথম দফায় উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় প্রথম ইউনিটের কমিশনিং তারিখ ঠিক হয় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কমিশনিং চূড়ান্ত করা হয় ২৬ মার্চ। কিন্তু এ দফায়ও সেই লক্ষ্যের কাছে পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশের এই যৌথ কোম্পানি।
এখন প্রকল্পের মূল ঠিকাদার ভারতীয় কোম্পানি ভেল আগামী ২৬ মার্চ প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এদিকে বারবার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ জন্য তিনি চলমান করোনা মহামারির পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কাজী আফসার উদ্দীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংকট হয়ে গেছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য। লোক ঠিকমতো আসতে পারছে না বা লোক যখন যাচ্ছে তখন তাদের নিজস্ব শিডিউল মতো আসতে দেয়া হচ্ছে না। তারা যখন আসতে চাচ্ছে, তখন তাদের সময়মতো ভারত থেকে আসতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু ভারত নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে আছে স্পেন, পোল্যান্ড, জার্মানি। সেখান থেকেও বিশেষজ্ঞরা সময়মতো আসছেন না। জার্মানি থেকে লোকবল যা আসার কথা ছিল, তা আসছে না।’
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট কমিশনিংয়ের তারিখ নির্ধারিত ছিল। এ জন্য গত আগস্ট থেকে প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু লোকবল ঠিকমতো আসতে পারেনি। বাংলাদেশ ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু বিভিন্ন দেশ তাদের কর্মীদের ভ্রমণের অনুমতি দেয়নি।
তিনি বলেন, ‘এগুলো তো বিশেষজ্ঞদের কাজ। এগুলো আমাদের স্থানীয় লোক দিয়ে করা যায় না। আমাদের লোক হয়তো তাদের হেল্পার হিসেবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু কাজের সময় বিদেশি এই বিশেষজ্ঞদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরঞ্জাম আসছে। কিন্তু তা লোকবলের অভাবে সংযোজন করা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো কোভিড-১৯। এখন যখন আমরা সব গুছিয়ে নিয়েছি, তখন আবার এই ওমিক্রন ঝামেলাটা শুরু হলো।
‘ভারতীয়দের ক্ষেত্রে আমরা যখনই আমাদের হাইকশিনকে বলেছি, তখনই তারা ভিসা করে রেখেছে। কিন্তু ওদের ওখানে এন্ট্রি হচ্ছে না। আমরা চিঠি লিখেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, ভারতের সাব কোম্পানিগুলো তাদের মূল কোম্পানি ভেলকে সহায়তা করছে না। এই নিয়ে ভেলের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব লেগে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আবার দেখা যাচ্ছে, আমরা আসতে বলছি ১৮ জনকে। তারা আসছে চারজন। আমরা বললাম, বাকিরা কোথায়? তারা বলল, আসবে। পরের সপ্তাহে এলো আরও পাঁচজন। পরের সপ্তাহে হয়তো এলো আরও চারজন। বাকিরা এলো না। এই যে আসা-না আসা, এটাই হলো মহাসংকট।’
তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো। ফলে এখানে বিশেষজ্ঞ কর্মীদের আসতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উপকরণ, যেমন- এফজিডি ও চিমনি এবং কোল লোডার ও শিপ আনলোডার এসে পৌঁছেছে। তেল সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান যমুনার সঙ্গে চুক্তি করে তেল এনে মজুদ করা হয়েছে। কেননা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিশনিং করতে তেল ও কয়লা দুটিই লাগে। এসব উপকরণ বসিয়ে রাখা হয়েছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপরে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এটি একটি। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি করে বাংলাদেশ ও ভারত।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে এই কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতাও সই হয়। দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিপিডিবি ও এনটিপিসি যৌথ কোম্পানি গঠন করে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়।
২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ২০১৬ সালের ১২ জুলাই। ইক্যুইটি বিনিয়োগ সমানভাগে ধরে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট রামপাল বাস্তবায়নে গঠন করা হয় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল। বাস্তবায়নকারী কোম্পানি বিআইএফপিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, কাজ শুরুর তারিখ থেকে ৪১ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হবে। সে হিসাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষম হয়ে ওঠার কথা ছিল।
বিদ্যুৎ খাতের সরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও রামপাল প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রামপালের কাজ চলছে। তবে কয়লার বিষয়টি এখনও সুরাহা ওভাবে হয়নি। আশা করছি, ওটা হয়ে যাবে। আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছি ইন্দোনেশিয়া কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমরা কয়লা নেব। আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট শুরু করা। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল কাজ শেষ করতে দেরি হলেও ভূমি উন্নয়নকাজ, সীমানা প্রাচীর ও স্লোপ প্রোটেকশন কাজ, মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেসিং কাজ, নির্মাণকাজের বিদ্যুৎলাইন, নির্মাণকাজের পানিসহ বেশ কিছু কাজের পুরোটাই শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুটি ইউনিট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে একটি ইউনিটের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারে যৌথ বিনিয়োগে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) যৌথ কোম্পানি গঠন করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা পরিস্থিতি এবং খাদ্য ঘাটতি ও সরবরাহে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেখানে থেকে উত্তরণে বিশ্বসংহতি ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোসহ চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থবিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত প্লাটফর্ম ‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অফ গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’ (জিসিআরজি)-এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে শুক্রবার রাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব রাখেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে জিসিআরজি গঠনে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ।
এই গ্রুপের মূল্য উদ্দেশ্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্বের দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়া। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এই গ্রুপে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।
গত ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জিসিআরজি গঠনের কথা জানান অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
এ বছরের ১৩ এপ্রিল জিসিআরজিতে যুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে সম্মতি জানান প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সভাপতিত্বে এদিন জিসিআরজির প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় শেখ হাসিনার চার প্রস্তাব
প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বিশ্ব সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে জি সেভেন, জি টোয়েন্টি ও ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা দেখে আমি খুশি হয়েছি যে, এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ গ্রহণে তাদের উদ্যোগে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।’
দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং সাপ্লাই চেইনের ঘাটতি মোকাবিলা সবচেয়ে জরুরি, যা পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। স্বল্পোন্নত দেশ এবং অন্যান্য দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে রক্ষায় বিশ্ব বাণিজ্য ও রপ্তানি আয় ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন।’
উন্নত অর্থনীতি ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’
তৃতীয় প্রস্তাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘খাদ্য মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেয়া জরুরি।’
স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘জিসিআরজিকে এগিয়ে নিতে আমরা উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকার সহযোগিতামূলক সম্পর্কের সুবিধা নিতে পারি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।’
চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪৮টি সদস্য রাষ্ট্রের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসাবে আমরা অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেসব দেশে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।’
তাই সবার কল্যাণে জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্জিত জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়াটা দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ এমন এক সময়ে আমাদের সামনে এসেছে যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই যুদ্ধ ইতিমধ্যে ভঙ্গুর বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথের একজন প্রতিনিধি হিসাবে আমি এই সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষের কণ্ঠস্বর নিয়ে এখানে যোগ দিয়েছি। স্বল্পোন্নত এবং দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে তাদের জন্য দ্রুত সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এ সময় এই গ্রুপে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোয় জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী। আমরা সবসময় বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গ্রুপটিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে এসেছে।’
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল জীবন এবং জীবিকার সুরক্ষায় সতর্ক থেকে ভারসাম্য রক্ষা করা। পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল মানুষদের আমরা সামনে রেখেছি।
‘পেছনে পড়ে থাকা মানুষগুলোর সুরক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোকে আমরা প্রসারিত করেছি। সময়মতো ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারা আমাদের বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট কাটাতে সাহায্য করেছে এবং প্রাণ বাঁচিয়েছে।’
রপ্তানি খাত এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকে রক্ষায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে বাস্তবসম্মত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘২৩ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়। এই পদক্ষেপগুলো আমাদের গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ জিডিপি প্রবৃদ্ধির অর্জনে সহায়তা করেছে।’
প্রধানমনন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি এবং নিশ্চিত করেছি জ্বালানি নিরাপত্তা। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সরবরাহ ঘাটতি এবং খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।’
এই সংকট কাটাতে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ রাখা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা, বৈধপথে আসা রেমিট্যান্সের সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ সহায়তাসহ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এমন বাস্তবতায় জিসিআরজিকে এগিয়ে নিতে সবার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:একুশে গানের রচয়িতা, বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ যুক্তরাজ্য থেকে বুধবার ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হবে, যা বৃহস্পতিবার দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
দেশে আসার পর জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা শেষে জানাজার আয়োজন করা হবে। তবে কোথায় জানাজার আয়োজন করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।
মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশেই সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরীকে শায়িত করা হবে বলেও জানান আবদুল মোমেন।
শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসভবনে (পররাষ্ট্র ভবনে) সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক জানান।
শোক জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা এবং বিশিষ্টজনরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আবদুল মোমেন বলেন,‘ ব্রিটিশরা অফিস খুলবে সোমবার। পরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বুধবার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি বলেছেন, আপনারা আমাদের হাইকমিশনকে সাপোর্ট দিয়ে যান।’
গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে এলে শহীদ মিনারে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন টেন্ট হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের পাশে। ওখান থেকে নিয়ে এসে মসজিদে জানাজা।’
গাফ্ফার চৌধুরীর স্ত্রীর কবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘গাফ্ফার ভাইয়ের জন্য জায়গা নির্ধারিত করেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন গাফ্ফার চৌধুরী।
আরও পড়ুন:দেশের এক হাজার মাদ্রাসা ও শতাধিক ইসলামি বক্তার বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের’ দুর্নীতির তদন্তের আহ্বান জানানো গণকমিশনের আইনি ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার দুপুরে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের ২৭তম বার্ষিক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘গণকমিশনের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তারা একটি বই প্রকাশ করেছে ২ হাজার দিন সন্ত্রাস নামে। বইয়ের ভেতরে কী লিখেছে, তা আমি জানি না। এগুলো আমাদের দেখতে হবে।
‘তারা কাদের নামে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দায় দিয়েছেন এগুলো আমরা কেউই কোনো তদন্ত করিনি। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। তারা দিয়েছেন। আমরা না দেখে বলতে পারব না। দেখে বলতে হবে।’
গণকমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হেফাজত আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। তারা আন্দোলনে নামলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন কেউ হাতে নিলে আমাদের যা করণীয়, সেটাই করব। এটা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি।
‘আমরা একটি কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, যে অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই, সে অভিযোগ আমরা আমলে নিই না।’
প্রেক্ষাপট
গত ১১ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে শ্বেতপত্র ও সন্দেহভাজন শতাধিক ব্যক্তির তালিকা হস্তান্তর করে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’।
কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্যসচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ তালিকা হস্তান্তর করে।
গণকমিশনের তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে ১১৬ জনের নাম রয়েছে। শ্বেতপত্র ও তালিকাটি একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও দেয়া হয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠন করা হয় গণকমিশন।
এর আগে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্রটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় ১২ মার্চ।
আরও পড়ুন:বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আনা হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা ইউএনবি।
একুশের গানের রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে জানিয়ে সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘তার মরদেহ বারনেট হাসপাতালে রাখা হয়েছে, যেখানে বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।
‘যুক্তরাজ্য থেকে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে আগামী সপ্তাহে তার মরদেহ ঢাকায় পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের উকলেন্ড মসজিদে তার জানাজা আয়োজনের চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে শহীদ আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
হাইকমিশনার বলেন, গাফ্ফার চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত করা হবে।
লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বিশিষ্টজনও শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
বরিশাল শহরে কিছুদিন মার্কসবাদী দল আরএসপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। ছাত্রজীবনেই তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম গল্প ছাপা হয়।
১৯৫০ সালে গাফ্ফার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয়। এর পর থেকে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে ‘সংবাদ’, ‘সওগাত’, ‘মেঘনা’, ‘চাবুক’, ‘আজাদ’, ‘জনপদ’, ‘বাংলার ডাক’, ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’, ‘নতুন দেশ’, ‘পূর্বদেশ’সহ অনেক পত্রিকায় কাজ করেন।
বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে বসেও গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোয় নিয়মিত লিখেছেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোর’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ও ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
ভারতে আটক হওয়ার পর প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) নাম নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছে। একই সঙ্গে জোরেশোরে প্রশ্ন উঠেছে, জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের হোতা পি কে হালদারের পেছনে কারা। বলা হচ্ছে, পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলে তার পেছনের রাঘববোয়ালদের সন্ধান মিলবে।
২০১৯ সাল থেকে পি কে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারি অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতেই এই তদন্ত থামানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর ওরফে এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।’
অন্যদিকে পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট তদন্তে আটক প্রায় সবাই আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এস কে সুর ও শাহ আলমের নাম বলেন। অনেকেই এদেরকে পি কে হালদারের গডফাদার হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আটক রাশেদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, ‘পি কে হালদারের নির্দেশেই তিনি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থ লোপাটের তথ্য ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে দুই লাখ টাকা করে মাসোহারা দিতেন পি কে।’
পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট তদন্তে আটক প্রায় সবাই আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে পি কে হালদারের গডফাদার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর ওরফে এস কে সুরের নাম বলেন। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ম্যানেজ করতে লাখ লাখ টাকা ঢেলেছেন পি কে হালদার- এমনটাও দাবি করা হয়েছে জবানবন্দিতে। তবে আরও বড় কোনো শক্তি পি কে হালদারের পেছনে আছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
সারা দেশ যখন ক্যাসিনোকাণ্ডে তোলপাড়, ঠিক তখনই সামনে আসে একটি নাম, প্রশান্ত কুমার হালদার। সংক্ষেপে তাকে ডাকা শুরু হয় পি কে হালদার। ঢাকা শহরের ক্লাব ও অভিজাত এলাকায় যখন ক্যাসিনোবিরোধী ধারাবাহিক অভিযানে গলদঘর্ম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ঠিক তখনই পি কের বোমা ফাটায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের রেশ না কাটতেই ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা ঠুকে দেয় দুদক। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল।
একে একে বের হতে থাকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে পি কে হালদারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনা। প্রকাশ হতে থাকে তার সহযোগীদের নামও। অভিযোগ আছে, দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় এই আর্থিক কেলেঙ্কারির পেছনে রয়েছে রাঘববোয়ালদের প্রচ্ছন্ন সহায়তা।
এই রাঘববোয়ালদের এখনো সামনে আনেনি দুদকসহ আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থা। যদিও বিভিন্ন সময়ে জানা গেছে, পি কের এই জালিয়াতির সঙ্গে ৭০ থেকে ৮০ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬২ জনকে দুদক শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকাও হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, পি কে হালদার পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্বে থেকেই প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লুট করেছেন।
পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের নামে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মামলা করেছে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বে করা টিম অনুসন্ধানের মাধ্যমে এসব মামলা করেন।
এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ১ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে।
আদালতের মাধ্যমে ৮৩ জনের বিদেশযাত্রায় দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। একই ইস্যুতে ৩৩ ব্যক্তির সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৩ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রেখেছে দুদক।
পিকের বান্ধবীরা
আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের ৮০ জন বান্ধবী থাকা নিয়ে একসময় তুমুল আলোচনা ছিল। তবে দুদকের তদন্তে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের তথ্য মিলেছে। তারা হলেন অবন্তিকা বড়াল, শিমু রায়, নাহিদা রুনাই, পূর্ণিমা রানি, সুপ্তি চৌধুরী, শাহনাজ বেগম, হালি আকতার, সুস্মিতা, সামিয়া বেগম, অনিন্দিতা মৃধা, আতশী, পাপিয়া, শুভ্রা রানি, লামিয়া ও সাজিয়া রহমান।
এই বান্ধবীদের নামে ৮৬৭ কোটি পাচার করেছেন পি কে। কেবল তাই নয়, এসব বান্ধবীকে কোটি কোটি টাকার উপহার, গয়না ও ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন এই জালিয়াত।
এদের মধ্যে অবন্তিকা বড়ালকে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকায় ধানমন্ডির ১০/এ সড়কে ৩৯ নম্বর বাড়িতে ফ্ল্যাট কিনে দেন পি কে। যদিও অবন্তিকা আয়কর নথিতে তা গোপন রাখেন। গোপন রাখেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা নগদ ১০ কোটি টাকার তথ্যও। বর্তমানে তিনি আটক রয়েছেন।
শিমু রায়ের ব্যাংক হিসাবে ৬৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন পি কে। ময়মনসিংহের আলোচিত কুমির খামারের নামে এই টাকা নিয়েছিলেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্সের বাণিজ্য বিভাগের প্রধান নাহিদা রুনাইয়ের নামে কয়েক কোটি টাকা রেখেছিলেন পিকে, যা বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়।
পূর্ণিমা রানির ব্যাংক হিসাবে ১০০ কোটি টাকা দেন পি কে। এই টাকা একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া লোন হিসেবে দেখানো হয়। হালি আক্তারকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে দেন ৭০ কোটি টাকা। অবনিতার কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় ৮৪ কোটি টাকা।
সুপ্তি চৌধুরীকেও কোটি কোটি টাকা দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। যদিও তদন্ত শুরুর গন্ধ পেয়ে কানাডায় চলে যান পি কের এই বান্ধবী। কানাডায় তার আশ্রয়েই পি কে ছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে দুদকের তদন্তে।
বান্ধবী শাহনাজকে ৬০ কোটি টাকা দেন পি কে। আবার সুস্মিতা ও সামিয়া বেগমের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে দেন ৬২ কোটি টাকা করে মোট ১২৪ কোটি টাকা।
অনিন্দিতা মৃধাকে উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকানাহীন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় ৭০ কোটি টাকা।
একই কায়দায় আতশি বেগমকে দেন ৮০ কোটি টাকা।
পাপিয়াকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক দেখান পি কে। এই পরিচয়ে এফএএস থেকে তাকে ১২০ কোটি টাকা ঋণ তুলে দেন তিনি। কাগুজে প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে শুভ্রা রানীকে দেয়া হয় ৮০ কোটি টাকা। একই কায়দায় সুস্মিতাকে দেয়া হয় ৭০ কোটি টাকা।
লামিয়া নামে একজন পার্টি এক্সপার্ট বান্ধবীও ছিল পি কের। তাকে নিয়ে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের পার্টিতে যেতেন পি কে। তার ব্যাংক হিসাবেও মিলেছে বিপুল টাকা। দুদককে দেয়া জবানবন্দিতে লামিয়া বলেছেন তার অতীত জীবনের সেই অধ্যায়।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাজিয়া রহমান নামে এক নারীও এসব পার্টিতে লামিয়ার সঙ্গী হতেন। তার হিসাবেও রয়েছে পি কের জালিয়াতির অর্থ। পি কে হালদার তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বান্ধবীসহ ঘনিষ্ঠদের নামে সরিয়ে নেন বলে নিশ্চিত হয়েছে দুদক।
পি কের সহযোগী কারা
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পি কের পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবী, সহযোগী, ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে নাম এসেছে প্রায় ১০০ জনের। এদের সবাইকে পিকের অর্থ লুটপাটের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত ও আসামি করেছে দুদক।
অর্থ লুটপাটে পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুস্মিতা সাহা ও এমডি মৈত্রেয়ী রানী বেপারী, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক মো. আবুল শাহজাহান, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মাহফুজা রহমান বেবী, সোমা ঘোষ, ডা. উদ্ভব মল্লিক, অরুণ কুমার কুণ্ডু, প্রদীপ কুমার নন্দী, এফএএস ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালক বীরেন্দ্র কুমার সোম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল শাহরিয়ার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল হক গাঙ্গী, সিনিয়র অফিসার মৌসুমী পাল, ম্যানেজার আহসান রাকিব, প্রাক্তন সিনিয়র অফিসার তাসনিয়া তাহসিন রোজালিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মীর ইমাদুল হক, প্রাক্তন ডিপি মনিরুজ্জামান আকন্দ, সাবেক এসভিপি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া এবং সাবেক এসইভিপি ও সিএডির প্রধান প্রাণ গৌরাঙ্গ দে।
সহযোগীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাসুদের ব্যানার্জি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক নওশেরুল ইসলাম, অঞ্জন কুমার রায়, মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, আর বি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, আর্থ-স্কোপ লিমিটেডের এমডি প্রশান্ত দেউরি, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার মিস্ত্রি, ওয়াকামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, পরিচালক সুভ্রা রাণী ঘোষ ও তোফাজ্জল হোসেন, কোলাসিন লিমিটেডের এমডি উত্তম কুমার মিস্ত্রি, চেয়ারম্যান অতশী মৃধা, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজের মালিক গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী, দ্রিনান অ্যাপারেলসের এমডি মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ, কণিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক রাম প্রসাদ রায় ও ইমেক্রো’র মালিক ইমাম হোসেন।
এ ছাড়া রয়েছেন দিয়া শিপিং লিমিটেডের পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি এবং এফ এ এসের চেয়ারম্যান এমএ হাফিজ। এরা সবাই দুদকের করা মামলার আসামি।
আরও পড়ুন:২০২১ সালের শেষ দিকে এসে দেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ড কভারেজ ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল মাত্র চার কোটি।
সিঙ্গাপুরে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ইনোভেশন কংগ্রেস-২০২২। সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্র্যাকটিস’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানান।
হুয়াওয়ে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা ঘোষিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করার চিত্রও তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী নেতৃত্ব এবং এই খাতের সব অংশীজনের সার্বিক সহযোগিতায় কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব সময়েও বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে।’
২০২১ সালে জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন প্রকাশিত বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল সেবা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তার ওপর আলোকপাত করেন মোস্তাফা জব্বার।
হুয়াওয়ের আয়োজিত এই সম্মেলনে মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আদহাম বিন বাবা, হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু, আসিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইয়াং মি ইং, থাইল্যান্ডের ডিজিটাল অর্থনীতি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব আজারিন পাত্তানাপাঞ্চাই, হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য দেন।
হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা দিয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে, যা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার সমান। এক লাখ ৯৭ হাজারের বেশি কর্মী নিয়ে বিশ্বব্যাপী টেলিকম অপারেটর, উদ্যোক্তা ও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাজ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে হুয়াওয়ে।
আরও পড়ুন:করোনা মহামারি কাটিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ও ওভারটাইম বাড়লেও তা খেয়ে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। কারণ এ সময়ে চালে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর বাড়িভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
পোশাক শ্রমিকরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করছেন। গড়ে ১০ ঘণ্টার শ্রমে ভালো পারিশ্রমিক আসছে। এর সঙ্গে আছে ওভারটাইম। বেতন ও ওভারটাইম মিলে আয় বাড়লেও বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে তা পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) এবং পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ চ্যানেল দ্য গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিসের (জিডব্লিউডি) যৌথ জরিপের এ তথ্য বৃহস্পতিবার তুলে ধরে সানেম।
জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার এবং জিডব্লিউডির মাঠ ব্যবস্থাপক ফারাহ মারজান।
জরিপে শ্রমিকদের এ সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে সপ্তাহভিত্তিতে শ্রমিকদের গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা এবং শ্রমিকদের কাছে থাকা ডায়েরি থেকে নেয়া হিসাবের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপে উঠে আসা ফল থেকে ব্র্র্যান্ড-ক্রেতা, উদ্যোক্তা ও মালিক পক্ষ যাতে নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নিতে পারে সে ব্যাপারে সহায়তা দেয়াও জরিপের উদ্দেশ্য।
এক হাজার ৩০০ শ্রমিক জরিপে অংশ নেন, যাদের ৭৬ শতাংশই নারী। জরিপ এলাকা ছিল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও চট্টগ্রাম।
জরিপে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে লকডাউন শুরুর পর থেকেই শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে। এতে বেতনের সঙ্গে ওভারটাইমসহ শ্রমিকদের আয়ও বেড়েছে। তবে যে পরিমাণ আয় বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে চালের দাম।
এ সময়ে শ্রমিকরা যে ধরনের চাল কিনে থাকেন সেগুলোর দর বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ সময়ে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
জরিপের সাক্ষাৎকারে একজন শ্রমিক জানান, করোনা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় এখন তারা ভালো আছেন। কারণ করোনার আগে কারখানায় কাজ কম ছিল। এ কারণে বেতনও নিয়মিত ছিল না। প্রতি মাসে বেতনের অর্ধেকের মতো খাওয়া বাবদ খরচ হয়ে যেত। এখন নিয়মিত বেতন পান তিনি।
জরিপে দেখা যায়, করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন অন্তত ৮০ শতাংশ শ্রমিক। নারী শ্রমিকদের মধ্যে এ হার ৭৭ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় ডোজ কত শ্রমিক পেয়েছেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
করোনাকালে মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমিক তাদের সন্তানের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ অনেক বেড়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন উদ্যোক্তারা। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করাতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকারের দেয়া প্রণোদনার আওতায় ডিজিটাল মাধ্যমে বেতন পেতেন শ্রমিকরা।
২০২০ সালের এপ্রিলে ৭৬ শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক এ ব্যবস্থায় যুক্ত ছিলেন। তবে তার তিন মাস পরই আবার নগদ বেতন পরিশোধের পদ্ধতিতে ফিরে গেছেন মালিকরা। এখন তা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
কী কারণে ডিজিটালাইজেশনের এ প্রক্রিয়া থেমে গেল তা জেনে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য