উন্নয়ন, সাহসিকতা ও সততা—এই তিন গুণ দিয়ে নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীর মন জয়ের পাশাপাশি আস্থা অর্জনে সফল হয়েছেন বলে মনে করেন নগরের বিশিষ্টজনরা।
তারই ধারাবাহিকতায় এই হ্যাটট্রিক জয় এসেছে বলে মনে করেন তারা। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আইভী ভোটযুদ্ধে পাস করলেও এই জয় নৌকার নয় বলে অভিমত তাদের।
রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। সেই ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে উড়িয়ে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেন আইভী। ব্যবধান ছিল ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোট। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট না হলে এই ব্যবধান আরও বড় হতে পারত বলেও বিজয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন মেয়র আইভী।
আইভীর পথটি অবশ্য মোটেও সহজ ছিল না। তার কারণ নারায়ণগঞ্জের ভোটের সমীকরণ। এখানকার হিসাব-নিকাশ দেশের আর ১০টি এলাকার চেয়ে ভিন্ন। এই জেলার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ মানুষের মুখে মুখে ফেরে। আর সেই বিরোধ হয়ে ওঠে নির্বাচনে মূল আলোচ্য বিষয়।
২০১৬ সালে সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি এলে আওয়ামী লীগ আস্থা রাখেন আইভীর ওপর। সেই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে ৭৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান আইভী।
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়ার পর প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হলেও দলের সমর্থন বঞ্চিত হন আইভী। কিন্তু তৎকালীন পৌর মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে থাকেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের মাঠে পারিবারিক দ্বন্দ্ব হয়ে ওঠে প্রকাশ্য। নির্বাচনে কী হবে না হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাখো ভোটের ব্যবধানে শামীম ওসমানকে পরাস্ত করে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আইভী।
এমনকি তার আগে যে পৌরসভা ছিল, তারও নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়নি আইভীকে। ওই সময়ের জেলা বিএনপির সহসভাপতি নূর ইসলামকে হারিয়ে পৌরসভার নেতৃত্ব নেন তিনি।
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘সব কটি নির্বাচন ছিল চ্যালেঞ্জিং। এটিও তার চেয়ে কম নয়। একেকটার ধরন একেক রকম। আমি এত চ্যালেঞ্জের কথা বলতে চাই না। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা-প্রতিযোগিতা।’
কোন জাদুমন্ত্রে তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীকে মুগ্ধ করে রেখেছেন, জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রশ্নটি রাখা হয় সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে।
মৃদু হেসে নবনির্বাচিত এই মেয়র বলেন, ‘আমার যত কিছু হয়েছে বা অতীতেও যে বিজয় হয়েছে, সব কিছুর মূলে কিন্তু আমার জনশক্তি, জনস্রোত এবং জনসমর্থন। জনসমর্থন যদি না থাকত, তাহলে আমি নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না।’
কেন এই জনসমর্থন তার ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন নৌকা প্রতীকের এই বিজয়ী।
আইভী বলেন, ‘এটা সত্যি যে, জনগণের যে আস্থা আমার প্রতি, তার কারণ মানুষকে কখনও মিথ্যে বলিনি, কখনও অযথা আশ্বাস দিইনি। আমি গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে যে আপনাদের সঙ্গে মিশেছি, কাজ করেছি, যেটা পেরেছি সেটা করেছি, যেটা পারিনি সেটা বলিনি। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে ভালোবেসেছি, মানুষ প্রতিবারই আমাকে প্রতিদান দিয়েছে।’
আইভীর এই সাফল্যকে উন্নয়ন, সাহসিকতা ও সততার মেলবন্ধন মনে করে নারায়ণগঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘এটা খুব সহজ জিনিস। প্রথমত তার কাজ, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দিনে তিনি মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। এটি উন্নয়ন বলি বা অন্য যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করি। এটা নগরবাসীর কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সাফল্যের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ধীমান সাহা বলছেন, সেলিনা হায়াৎ আইভীর সততার কথা।
তিনি বলেন, ‘এসব কাজের পেছনে তার সততা ছিল। একটা মানুষ শতভাগ সৎ হয় না। তিনি ৯৯ পার্সেন্ট সৎ ছিলেন। এটা নগরবাসী দেখেছে। তার কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ছিল, সততা ছিল। সততার পাশাপাশি জবাবদিহিও ছিল।
‘আমরা দেখেছি, মেয়র আইভীর পেছনে প্রতিপক্ষের অন্তত ১০০টা ক্যামেরা লাগানো ছিল। এখানে আমি আক্ষরিক ক্যামেরার কথা বলছি না, দৃষ্টিকে বুঝিয়েছি। এত কিছুর পরও তিনি তার কাজটি করে গেছেন। তাই সততা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে আমার কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না।’
আইভীর ‘সাহস’ তাকে অন্য একটি উচ্চতায় নিয়েছে বলেও মত তার।
ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘কোনো একটি কাজ করতে গিয়ে যদি একটা বিল্ডিং ভাঙতে হয় বা কারও একটু ক্ষতি হয়ে যায়, তারপরও দশজনের কল্যাণের জন্য কাজটা তিনি করেছেন। এই সাহসটা অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির মধ্যে দেখা যায় না।’
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী শামীম ওসমানের সঙ্গে বিরোধের প্রসঙ্গ টেনে ধীমান সাহা বলেন, ‘সাহস দুই ধরনের। একটি হচ্ছে কাজ করার সাহস। আরেকটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের একটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার যে সাহস। সৎ থেকে, কাজ করে, শুভ শক্তির সঙ্গে থেকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা। অশুভ শক্তি প্রতিটা জেলায়ই আছে। প্রতিটা জেলায়ই একাধিক অশুভ শক্তি থাকে। পাশাপাশি শুভ শক্তিও থাকে। শুভ শক্তিদের যে সম্মিলন, অশুভ শক্তিকে পরাভূত করার যে সাহস, লড়াই করার যে সাহস, তা আইভীর মধ্যে আছে।’
আর তাই আইভী জনমানুষের হৃদয়ে আছে জানিয়ে ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘গতকাল এর প্রতিফলন আমরা দেখেছি, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।’
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল করিম দীপু মনে করেন উন্নয়ন, সন্ত্রাস বিরোধিতা আর তরুণদের কাছে টানতে পারার ক্ষমতার দিক বিবেচনায় নিলে, অন্য যে কোনো প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি বলেন, ‘এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে মানুষ উন্নয়ন চায়। এখানে উন্নয়নের জয় হয়েছে। উনি দৃশ্যমান উন্নয়ন অনেক করেছেন, আমরা দেখেছি।’
দীপু বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতায় সন্ত্রাসবিরোধী যে অবস্থান, সেটা একটা ব্যাপার। তিনি একজন ভিশনারি মেয়র। ছোট করে হলেও ভবিষ্যতে কী কী করবেন তার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মধ্যে ছিল সবুজবান্ধব নগরী গড়া, যেটাকে আমরা বলছি গ্রিন কনসেপ্ট।’
গ্রিন কনসেপ্টই তরুণদের কাছে টানার কৌশল বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বয়স্ক ভোটার, তারা এতটা বুঝি না। আমরা হয়তো গ্রিন কনসেপ্ট মানে গাছ লাগানো বুঝি। কিন্তু যারা তরুণ ভোটার, তাদের জন্য বিষয়টা জরুরি। তারা এই বিষয়গুলো আমলে নিয়েছে বলে আমি মনে করি।’
আইভীর পারিবারিক পরিচয়কেও বড় করে দেখছেন দীপু। তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের ভক্ত যারা আছেন, তারা সংখ্যায় বিশাল, যারা ওনার বাইরে যাবে না।’
বন্দরকে মূল শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু তৈরি নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি। অন্তত নির্বাচনের মাঠে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তার গুরুত্ব বোঝা গেছে।
জাহিদুল করিম দীপু বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলা থেকে একটা দাবি ছিল কদম রসুল ব্রিজ। তিনি এর ব্যাপারে বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে ব্রিজটির কাজের উদ্বোধন হবে বলে আশা করছেন।’
এ ছাড়া সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তার পাস করাকে নৌকার বিজয় বলতে নারাজ তিনি। বলেন, ‘সাংস্কৃতিক জোট একটা লিফলেট করেছে, যেখানে কোনো মার্কা নেই। বর্তমান যে অবস্থা, সেখানে বিভিন্ন কারণে মানুষের নৌকা প্রতীকের প্রতি অনীহা আছে। কিন্তু আইভী এর ঊর্ধ্বে। লিফলেটেও বলা হয়েছে, আইভীকে সর্বস্তরের মানুষ ভোট দিবে এবং সেভাবেই আইভীর জয় হবে।’
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘মানুষ আইভীকে ভোট দিয়েছে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে তার সাহসিকতা ও গত ১০ বছরে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন সে জন্য।’
সব গুণ বাদ রেখে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করাকে এগিয়ে রাখলেন নারায়ণগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, ‘যেটা দৃশ্যমান দেখি, যেটা অনুভব করি, সেটা হলো কাজ। নিজের কর্মক্ষেত্র দিয়েই তো মানুষের পরিচয়। কাজই তাকে আর সবার চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। সিটি করপোরেশন বলি, ইউনিয়ন পরিষদ সবখানেই তো পাবলিক ফাংশন। মানুষ আসলে কাজ দিয়েই মূল্যায়ন করে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
মন্তব্য