নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আগামী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগেই এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘সংসদের চলমান অধিবেশনেই এটি পাস করার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। কাম অ্যান্ড সি, নাথিং ইজ ইম্পসিবল।’
সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
এর আগে সংলাপ করতে বেলা ৩টা ৫৬ মিনিটে বঙ্গভবনে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। বিকেল ৪টা থেকে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বের হয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত মেনে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন-সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত রয়েছে। খসড়াটি আজ মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের পর তা নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।
‘আইনের খসড়াটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (আইন মন্ত্রণালয়) জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদ প্রচলিত আইন বিধিবিধান অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ইসি গঠনে সার্চ কমিটির জন্য কারও নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি শুরু হলো। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়ায় এক দিনেই তো সব হয় না। এই প্রস্তাবের পর আইন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
আইন প্রণয়নে বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। আইনটির খসড়া নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে আলোচনা হবে। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটি প্রথমে বিবেচনা এবং পরে চূড়ান্ত বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে। মন্ত্রিসভায় পূর্ণাঙ্গভাবে পাস হওয়ার পর সেটি চলে যাবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে। পরে খসড়াটি আরও আলোচনার জন্য চলে যাবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। সেখানে শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, অন্যান্য দলও রয়েছে। এই কমিটিতে আলাপ-আলোচনা শেষ হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইনটি চলে যাবে সংসদে।’
অল্প সময়ের মধ্যেই আইনটি করা সম্ভব কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কাম অ্যান্ড সি, নাথিং ইজ ইম্পসিবল।’
আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই আইনটি করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়া নেই। অথবা আইন পাসের ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোনো ম্যাজিক তাস নেই। আইন আইনের গতিতেই হবে। আইনের বিকল্প কোনো বিধান নেই। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় আইন পাস হয়, এ ক্ষেত্রেও তাতে বিন্দু পরিমাণ ব্যত্যয় ঘটার কারণ নেই। বিকল্প ভাবার অবকাশই নেই।’
সংসদের চলমান অধিবেশনে আইনটি পাস করা সম্ভব হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যেহেতু এটা জন দাবি, সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। জাতীয় স্বার্থে একটা আইন পাস হওয়া দরকার ছিল, আগে হওয়ার কথা ছিল। কেন হবে না, প্রক্রিয়া তো আছে। ৫০ বছরে হয়নি। আমরা প্রথম ও দ্বিতীয়বার পারিনি। তৃতীয়বারের আগেও হয়ে যেতে পারে। আইনটি হলে এবারই হবে।’
মূল অপরাধ যেহেতু বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, সেহেতু ভারতে বিচারের আগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে ঢাকা ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার ফরেন এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্যারালাল সেশন-১ এ যোগদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুল হক।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে একটি গণমুখী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
‘জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করোনা মহামারির সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগ ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করে। এই পদক্ষেপ করোনাকালে জরুরি সমস্যা মোকাবেলা এবং কারাগারে বন্দিদের বাড়তি চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নের যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে একটি সমন্বিত কর্মপদ্ধতি নিয়েছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর ম্যাপিং, আর্থিক কৌশল, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, ডেটা গ্যাপ বিশ্লেষণ, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, এপিএ-তে এসডিজি অর্ন্তভুক্তিসহ অনেক কাজ সম্পন্ন করেছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার একটি জনকেন্দ্রিক আধুনিক গণতন্ত্র গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। আর এসব উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।’
সম্মেলনে বক্তব্য শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। তবে মানি লন্ডারিং আইন যেহেতু বিশ্বের সব জায়গায় কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, তাই টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে তাকে ফিরিয়ে আনা। এবং যে মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে, তখন থেকে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে সেই অভিযোগের বিচার করে তার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকোর সময় যে ব্যাপারটা ছিল, তখন আমরা যাদের সঙ্গে কোলাবরেট করেছিলাম তাদের জন্য টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
‘এখন পি কে হালদারের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনাটা আরও সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ সারাবিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর আইন করা হয়েছে। তা আমাদের দেশেও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
‘আমি এ ব্যাপারে অ্যাডভান্স কিছু বলতে চাই না। নিশ্চয়ই আমরা তাদের সঙ্গে আলাপে বসব। আমাদের এখানে যেহেতু মূল অপরাধটা করা হয়েছে, আমরা তাকে আগে চাইবো সেটাই স্বাভাবিক।’
এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার প্যারালাল সেশন-১ এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবগণ তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এই সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোসাররফ হোসেন ভূঁইয়া। আলোচক ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
আরও পড়ুন:সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে ঘাবড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু পত্রিকা আছে তারা একদিন ভালো লিখলে পরের সাতদিন লিখবে খারাপ।’ পত্রিকায় কী লিখল, তা দেখে নয়, দেশের মানুষ ও উন্নয়নের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় পত্রিকা পড়ে আপনারা অনেকে ঘাবড়ান। এই পত্রিকা এই সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকা আছে, তারা সব কিছুতে একদিন ভালো লিখলে পরের সাতদিন লিখবে খারাপ। এটা তাদের চরিত্র। আমি চিনি সবাইকে।’
নিজেকে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক একজন বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘হাই স্কুল থেকে তো রাজনীতি করি। সবাইকে আমার চেনাই আছে। সব পরিবারকেও চেনা আছে। এটা তাদের চরিত্র। কাজেই ওই পত্রিকা দেখে ঘাবড়ানোর কোনো দরকার নেই। আর পত্রিকা পড়েও সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই।’
টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নেব দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে। এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। কারণ, আমি সেইভাবেই চলি।
‘আর সেইভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছি বলেই আজ দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ভয়ে ভয়ে থাকতাম, ও কী লিখলো, ও কী বললো, ও কী করলো, তাহলে কোনো কাজ করতে পারতাম না। নিজের বিশ্বাস হারাতাম।’
কর্মকর্তাদের নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলারও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমি বলব অনেক সময় আপনাদের অনেকের মুখেই শুনি এই পত্রিকা লিখেছে। ওটা নিয়ে কখনও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওটা নিয়ে চিন্তাও করবেন না। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। সেটাই আমি চাই। তাহলে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’
কারও নাম উল্লেখ না করে এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাই বেশি কথা বলে, তারাই সমালোচনা বেশি করে, যারা ইমার্জেন্সি সরকারের পদলেহন করেছে, চাটুকারি করেছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। যাই হোক কে, কী বললো সেটা নিয়ে আমি কখনও ঘাবড়াইও না, চিন্তাও করি না। দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের জন্য যেটা করা ন্যায়সঙ্গত সেটাই করি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতটি রাজনৈতিক দল মিলে হচ্ছে নতুন জোট। এতে রয়েছে জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও নেতারা এই জোটকে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বলছেন। আর এই জোট গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভাঙনের সুর বাজছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে।
বাম জোটের অন্যতম দুই শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন যোগ দিচ্ছে নতুন জোটে। সে ক্ষেত্রে দল দুটির একসঙ্গে দুই জোটে থাকার সুযোগ নেই- এমনটাই বলছেন বাম জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা।
তারা বলছেন, আগামীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনকে ছাড়াই চলবে বাম জোট।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা যেতে চাচ্ছে বা অন্য একটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে তাদের নিয়ে আমরা বসব। তাদের কথা শুনব। আমরা এটা বলছি, একসঙ্গে তো দুটো জোটে থাকা যায় না।
‘এ বিষয়টি আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা ফয়সালা করব। সামনে আমাদের (বাম জোটের) একটা বৈঠক আছে তখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
বাম জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বাম জোট তাদের মতো এগিয়ে যাবে, এখানে একসঙ্গে দুই জোটে কেউ থাকতে পারবে না।’
তবে নতুন জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা জানালেও বাম জোট ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারছেন না বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আমরা বিশেষ করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচনকালীন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে আমরা একটা জাতীয় মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
‘সেটা নিয়ে একটা আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো ঘোষণা দিইনি। কিছু প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, কিছুটা বোঝাপড়া তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি বা বিএনপিকেন্দ্রিক যে মেরুকরণ, বলতে পারেন ইসলামি দলগুলোর বাইরে বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গের যৌথ জাতীয় একটা প্ল্যাটফর্ম- এটারই অংশ হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ।’
এই জোট গঠনের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগটা আকস্মিক নয়, অনেক দিন ধরেই চলছে। লেখক মুস্তাক মারা যাওয়ার পরে আমরা একটা নাগরিক পদযাত্রা করেছিলাম, তার পর থেকেই অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা চলছে। ২৩ তারিখে আমাদের সাতটা দলের (গণতন্ত্র মঞ্চের অন্তর্ভুক্ত) পরবর্তী সভা আছে, সেখানেই হয়তো এটার নামকরণ বা আমরা কীভাবে আত্মপ্রকাশ করব সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।’
সে ক্ষেত্রে বাম জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কি না জানতে সাইফুল হক বলেন, ‘বাম জোটের শুরু থেকেই তো আমরা, আমাদেরকে কেন্দ্র করেই… বাম জোটকে আমরা বলেছি ওদের সঙ্গে (গণতন্ত্র মঞ্চ) জোট বা জোটের শরিক দলগুলো অংশ নিতে পারে। আমরা তাদেরকে জানিয়েছি এটি বাম জোটের বা অন্য কোনো জোটের প্যারালাল কোনো জোট না।
‘যেহেতু এটা একটা ন্যাশনাল মঞ্চ ফলে এখানে লেফট, প্রগেসিভ, ডেমোক্রেটিক দল ও সংগঠন আসতে পারে। আর এটা (গণতন্ত্র মঞ্চ) ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জোট হিসেবে কখনও ডেভেলপ করলে আমরা নিশ্চয় একসঙ্গে দুটো জোট প্র্যাকটিস করব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোর ভূমিকা, অ্যাটিটিউড সেটা দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। সামনে বাম জোটের একটা বৈঠক ডাকা হয়েছে, অনুমান করছি সেখানে এটা নিয়েও আলোচনা হবে।’
অন্যদিকে বাম জোটকে টিকিয়ে রেখেই আরেকটি বৃহত্তর রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার পক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাম জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে আমরা বহুদিন ধরেই প্রস্তাব রেখে যাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের যথাসম্ভব বৃহত্তর ঐক্য করা দরকার।
‘সেই বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে আমাদের ভিত্তিটা হচ্ছে, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা অর্থাৎ স্থায়ীভাবে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের এবং সংবিধানের সংস্কারসহ একটা স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি বিষয়ে একমত হবে, তাদের সঙ্গে আরেকটু বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলা দরকার। বিএনপিসহ যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের যুগপৎ ধারায় কাজ করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, বাম জোটকে টিকিয়ে রেখেই ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্মসূচির বিষয়ে যারা একমত হবেন, তাদের সঙ্গে আমাদের আরেকটি বৃহত্তর রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা বাম জোটের সব সংগঠনকেই একসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার জন্য কথা বলছি। এ আলোচনা এখনও চলছে বাম জোটের মধ্যে।’
বাম জোটের বাকি সংগঠনগুলো কেবল বাম ঐক্যের মধ্যেই থাকতে চায় উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘আমরা বলেছি কেবল বাম ঐক্যই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট কৌশল নয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে রণকৌশল হচ্ছে যথাসম্ভব বৃহত্তর ঐক্য করা। সে ক্ষেত্রে আমরা একটা ভিত্তি হিসেবে বলেছি, যারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্মসূচিতে একমত তাদের নিয়ে একটা মঞ্চ করা যেতে পারে।
‘সাতটি দলের সঙ্গে বৈঠক আমাদের প্রাথমিক আলোচনার সূত্রপাত। এ ধরনের বৃহত্তর একটা মঞ্চ গড়ে তোলা যায় কি না সেই লক্ষ্যে এই আলোচনা। আমরা তাদের (বাম জোট) প্রস্তাব দিয়েছি বিবেচনা করার জন্য। আবার তাদের দিক থেকেও আমাদের দিকে প্রস্তাব এসেছে। পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
বৈঠকে ফলপ্রসূ না হলে গণসংহতি আন্দোলন বাম জোটে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি, ‘এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা আগে আলোচনায় বসি, তারপর দেখা যাক কী দাঁড়াচ্ছে। আর আমাদের দলেও আলোচনার বিষয় আছে। সামনে আমাদের জাতীয় পরিষদের বৈঠক আছে, সেখানে চূড়ান্ত আলোচনা করে আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে।’
৯টি দল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বাম জোট। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন বাদেও এই জোটে আছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ- মার্কসবাদী, ওয়ার্কার্স পার্টি- মার্কসবাদী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
আরও পড়ুন:হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে আরও ১০ দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিবিআই আদালতে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে হাজির করা হয়। সেখানে গ্রেপ্তার পাঁচ পুরুষকে ১০ দিন করে রিমান্ডে চাইলে আদালত কিছুটা সময় নিয়ে হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আর্থিক জালিয়াতি সংঘটনে ‘বহুমুখী প্রতিভার’ পরিচয় দেয়া পি কে হালদারসহ ছয়জনকে। এরপরই তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয় তাদের।
গ্রেপ্তারের সময় পি কে হালদারের কাছ থেকে ভারতের নাগরিকত্ব, আধার কার্ডসহ বেশ কিছু নথি জব্দ করে ইডি।
নানা কৌশলে নামে-বেনামে একের পর এক কোম্পানি খুলে, প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধসিয়ে দিয়েছেন পি কে হালদার।
ঋণের নামে টাকা লোপাট, নামে-বেনামে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার অভিযোগ রয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে।
পি কে হালদার ২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে এমডি পদে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:
কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার এই বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার ৯৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণেই প্রতি দিনই দর বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি এক ডলারও কিনতে পারিনি। তাই কোনো ডলার বিক্রিও করতে পারছি না।’
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। মঙ্গলবারও এই একই দামে বাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে ৫ টাকা বেশি দরে।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকও ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত) ৫২০ কোটি (৫.২০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আমদানি কমাতেই হবে
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
অর্থনীতির আরেক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে; বাজারকে তার গতিতেই যেতে দিতে হবে। কিন্তু সেটা না করে বাজারকে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম ধরে রাখা হয়েছিল। অল্প অল্প করে দাম বাড়ানো হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপ ঠিক ছিল না বলে আমি মনে করি।
‘আমি বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিলে ডলারের দাম যদি ৮৭/৮৮ টাকাতেও উঠে যায়, যাক। তারপর বাজার তার নিজের নিয়মেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ৮৭/৮৮ টাকাতেই ডলারের দাম ওঠাচ্ছে। কিন্তু বাজারটাকে অস্থির করার পর।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘ডলারের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাত। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো ২০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম।
‘এখন কথা হচ্ছে, কতদিন এই অস্থিরতা চলবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অনেক হয়েছে আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কয়েক মাস আগেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।’
ডলারের ব্যয় কমাতে সরকার এরই মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিলাস দ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আমদানিনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো জরুরি নয়, সেগুলোর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হবে বেছে বেছে। যেসব প্রকল্প এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করলেই নয়, সেগুলোই কেবল বাস্তবায়ন হবে।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে শঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই পরিস্থিতিতে বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করার পর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা শেষে এবার উন্নয়ন প্রকল্পও বেছে বেছে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে যেসব প্রকল্প অতি প্রয়োজনীয়, সেগুলোই কেবল চালিয়ে যাওয়া হবে। যেসব প্রকল্প এখনই না করলেও চলে, সেগুলো বাস্তবায়নে ধীরে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ঢাকার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বুধবার এই নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করলেও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর সারা বিশ্বের অর্থনীতিই চাপে পড়ে যায়। খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হওয়ায় রিজার্ভে পড়েছে টান। আর ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমেই কমছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকার জোর দিচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধনে। সরকারি কর্মকর্তা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকুরেদের বিদেশ সফরে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা, বিলাসপণ্য আমদানিতেও না করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভর প্রকল্পও বেছে বেছে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনটা আমার এখনই প্রয়োজন, সেগুলো আমরা করব। আর যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো একটু ধীরগতিতে করব। যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপটা না আসে।’
কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বেই মন্দা আসতে পারে জানিয়েও সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কারণ যেখানে সারাবিশ্বে এই মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী একটি দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সে জন্য টাকা খরচের ক্ষেত্রে বা সব ক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
‘অহেতুক আমাদের সম্পদ যেন আমরা ব্যয় না করি। সেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা যদি খুব ভালোভাবেই হিসাব করে চলতে পারি, তাহলে আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হবে না। এটা আমি বিশ্বাস করি।
‘কাজেই আমি মনে করি, প্রত্যেকে এ ব্যাপারে আপনাদের অগ্রাধিকারটা কী, শুধু একটা কিছু নির্মাণ করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে সে জন্য না, যেটা দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন- এই মুহূর্তে শুধু সেগুলোই এখন আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই বা ধীরে হলেও চলবে, সেগুলো আমরা ধীরগতিতে সম্পন্ন করব। আমরা যদি হিসাব-নিকাশ করে চলি তাহলে কিন্তু অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
‘মন্দা ঠেকাতে সাশ্রয়ী হতে হবে’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি ও আমদানিনির্ভরতাকে দায়ি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য সবাইকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কিন্তু এই অবস্থা বিরাজমান। তারপরও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি। এর প্রভাব তো পড়বেই, যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয় তার তো দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের জাহাজভাড়া বেড়ে গেছে। আর তা ছাড়া যেখানে যেখানে উৎপাদন হতো, উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে সেখানে যুদ্ধ এবং করোনার কারণে।’
এ সবের কারণে মূল্যস্ফীতি বা জিনিসের দাম বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশবাসীকে আমি এইটুকু অনুরোধ করব, সবাইকে যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, মিতব্যয়ী হয় এবং সব ব্যবহারে সবাই যেন একটু সতর্ক হয়, তাহলে খুব সমস্যা হওয়ার কথা না।’
‘আওয়ামী লীগ না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো’
এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই পরিস্থিতি এখনও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকে সমালোচনা করবেন। তার পরও বলব আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলে, তাও কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এটা যদি অন্য কেউ থাকত, দেশের যে কী অবস্থা হতো, রাস্তায় রাস্তায় মারামারি শুরু হয়ে যেত। সেটা হয়নি। আমরা সেই জায়গা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বেনাপোল বন্দর দিয়ে যখন দেশ ছেড়ে ভারতের মাটিতে পা রাখেন; তার কিছু সময় পরই তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার নোটিস পৌঁছায় সে বন্দরে।
পি কে হালদারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পি কে হালদারসহ ছয়জনকে। এরপরই তিনদিনের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয় তাদের। মঙ্গলবার এ আসামিদের আবার আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে।
ইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পি কে হালদার তাদের জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর তিনিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুন্দ্রবন্দর ও অভিববাসন কেন্দ্রে পৌছায় ২৩ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটি।
কর্মকর্তারা বলেছেন, বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে নিষেধাজ্ঞা পৌঁছানোর মাত্র ৩৮ মিনিট আগে, অর্থাৎ ৩টা ৫৯ মিনিটে বেনোপল বন্দর দিয়ে দালালের মাধ্যম পি কে হালদার ভারতে পৌঁছে যান।
সীমান্ত পেরিয়ে পি কে হালদার উত্তর পরগনার অশোকনগরে চলে যান এবং সেখানে তার সহযাগী সুকুমার মৃধার কাছে আশ্রয় নেন বলে জানান ইডি কর্মকর্তারা।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির পর ভারতে পালিয়ে গিয়ে শিবশঙ্কর হালদার নামে পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট গ্রহণ করেন পি কে হালদার। তাকে সাহায্য করেন অশোকনগরের সুকুমার মৃধা।
ইডির তদন্তকারীরা বলছেন, সুকুমারের সঙ্গে পি কের দীর্ঘদিনের পরিচয়। বাংলাদেশ থেকে জালিয়াতি করে পাওয়া টাকা পশ্চিমবঙ্গে নিতে মাছ ব্যবসার আড়ালে পি কে হালদারকে সাহায্য করতেন এই তিনি।
আর্থিক জালিয়াতি সংঘটনে ‘বহুমুখী প্রতিভার’ পরিচয় দিয়েছেন পি কে হালদার। নানা কৌশলে নামে-বেনামে একের পর এক কোম্পানি খুলে, প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ঋণের নামে টাকা লোপাট, নামে-বেনামে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার অভিযোগ রয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেন।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান গ্রামে পি কে হালদারের জন্ম। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তার মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে পি কে হালদার বড়। ছোট ভাইয়ের নাম প্রীতিশ কুমার হালদার। দুই ভাই-ই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
পি কে হালদার ২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে এমডি পদে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য