নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস জয়ের পরদিন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের হাত থেকে মুক্তির জন্য মানুষ ছটফট করছে। তার দাবি, উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে ভোলানো যাবে না।
অবশ্য তিনি আগের দিনের আলোচিত এই নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে প্রার্থীও দেয়নি। তবে দলের নেতা তৈমূর আলম খন্দকার সেখানে মেয়র প্রার্থী হয়ে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মোকাবিলা করায় কার্যত আওয়ামী লীগ-বিএনপি লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
এই লড়াইয়ে ২০১৬ সালের মতোই বিএনপিকে বিপুল ভোটে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছেন আইভী, যে নির্বাচন নিয়ে বিরোধী পক্ষ বিশ্বাসযোগ্য কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি।
সোমবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের সুস্থতা কামনায় দোয়া করতে এই আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের তথাকথিত উন্নয়ন ফ্লাইওভার, সেতু দেখছে আর বন্দিশালায় ছটফট করছে।… তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে ভোলানো যাবে না। এখন পিছু হটার সুযোগ নেই। পিছু হটলে জাতি শত বছর পিছিয়ে পড়বে।’
বিএনপি নেতার অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চান। ক্ষমতার ক্ষুধার জন্য মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। মন্ত্রীদের দিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে। গোটা দেশ আজ বন্দিশালা। …কখন কাকে গুম করবে সেই ভয়ে সব সময় শঙ্কিত থাকে মানুষ।
দেশবাসী দুঃসময়ের মধ্যে দিন যাপন করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্র মুক্তির জন্য লড়াই করছে তারা কেউ ভালো নেই। আজ বিশ্ব মহামারির চেয়ে জাতীয় মহামারিতে বেশি আক্রান্ত দেশ। পুরো দেশ আজ অত্যাচার অনাচারে আক্রান্ত।
‘বিরোধী দল আজ প্রতিবাদ করলে, কর্মসূচি দিলে গুম হতে হয়, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। রেহাই পায় না মিডিয়াকর্মীরাও। তাদেরকেও বন্দি করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে লাশ।’
‘মনে হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাথমিক পাস করেননি’
যুক্তরাষ্ট্রে গুম, পুলিশের গুলিতে হত্যার সংখ্যা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের কথা শুনে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর মনে হয়, মন্ত্রী বুঝি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পাস করেননি।
বিএনপির মুখপাত্র বলেছেন, নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে মন্ত্রীরা একের পর এক অসত্য ও ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি বললেন, আমেরিকায় প্রতি বছর ছয় লাখ লোক গুম হয়। আপনার তথ্য দেখলে মনে হয় আপনি প্রাইমারিও পাস করেননি। দুদিন পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার বললেন আমেরিকায় প্রতি বছর এক লাখ মানুষ গুম হয়।
‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে মন্ত্রীরা একের পর মিথ্যা বলে যাচ্ছেন, ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছেন।’
সম্প্রতি র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করছে, তাদের নেতা-কর্মীদের গুম-খুনে জড়িত এই বাহিনী।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা অভিযোগ তুলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক আলোচনায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতেই প্রতি বছর সে দেশে ছয় লাখ মানুষ মিসিং হয়। পুলিশ ইন দ্য লাইন অব ডিউটি হাজারখানেক লোক মেরে ফেলে। আর আমাদের এখানে কালেভদ্রে কেউ মারা গেলেই বলবে যে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং। আপনারাই (সাংবাদিক) এসবের আসল মাতব্বর। আপনারাই বলেন বিনা বিচারে হত্যা, আর ওরা বলে ইন দ্য লাইন অব ডিউটি। সবাইকে আরও একটু সচেতন হতে হবে।’
‘বিদেশিদের মুখ বন্ধ করবেন কীভাবে’
বিদেশিরাও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে বলে মনে করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) অত্যাচার, ভয় দেখিয়ে বিরোধী দল ও মতকে বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু আমেরিকা, জার্মান, ব্রিটেনের মুখ বন্ধ করবেন কীভাবে? তারা কি দেখে না? তারা সবই দেখছে।’
র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জনি, সুমনসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে কালো মাইক্রোবাস দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। এগুলো কি আশপাশের মানুষ দেখে না? দেশের মানুষকে রক্তচক্ষু দেখাতে পারেন, কিন্তু বিদেশিদের পারবেন না।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের শক্তি বাড়াতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের আহ্বায়ক আমির হোসেন আমু।
শনিবার দুপুরে ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হচ্ছে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা। সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু ও আনিসুর রহমান, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানতে চেয়েছেন, জাতিকে শেখ হাসিনা আর কত দেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে শনিবার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ আরও অনেক প্রকল্প হচ্ছে। আর কত দেবেন? একটা জাতিকে তিনি আর কী দেবেন?’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘১৯৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ৪৭ বছরে সবচেয়ে সৎ এবং সাহসী নেতা, দক্ষ প্রশাসক আর সফল কূটনৈতিক হলেন শেখ হাসিনা। ১৩ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ মিলিয়ে দেখেন। শেখ হাসিনা এই দেশে ছিলেন বলেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। জুন মাসের চন্দ্রদীপ পূর্ণিমা রাতে পদ্মা সেতু থেকে দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাবে। আমরা আগামীকাল নেত্রীকে সামারি পাঠাব। তিনি যে সময় নির্ধারণ করে দেবেন, আমরা সে সময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করব।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষ ভালো থাকলে মির্জা ফখরুলের মন খারাপ হয়। পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, কর্ণফুলী টানেলও হয়ে গেছে। মেট্রোরেল হয়ে যাচ্ছে। বিএনপির জ্বালা! এ এক মধুর জ্বালা।
‘শেখ হাসিনা সব করে ফেলল। আমরা কিছুই পারলাম না। নির্বাচন আসছে। কী দেখিয়ে ভোট চাইবেন? নেতাটা কে? পলাতক, দণ্ডিত তারেক রহমান? প্রধানমন্ত্রী কে হবে? দণ্ডিত ব্যক্তি?’
বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, `যতদিন শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা নয়, বাংলাদেশকে তুলনা করা হবে আমেরিকা, ইউরোপের সঙ্গে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক তার বক্তব্যে বিএনপির নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল অনেক বেশি কথা বলেন, যেগুলোর কোনো যুক্তি নেই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট এবং তৎকালীন সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
পদ্মা সেতুর নামকরণ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু কীভাবে নির্মিত হয়েছে সেটা আমরা জানি। এই সেতুর জন্য জননেতা ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ নাম প্রস্তাব করেছেন।”
সামাদ বলেন, ‘আমি উসকানি দিতে চাই না, উৎসাহিত করছি। পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধুকন্যার নামে হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও দায়িত্ব আছে। আমি শুধু এইটুকু বললাম। বাকি কী করবেন সেটা আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে প্রিয় মাতৃভূমি। ঈদুল ফিতরের পর অল্প কয়দিনের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই কয়েকবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার গ্রেপ্তারের চেষ্টা ছাত্র সমাজকে খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা ছাত্রদল এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সরকারকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ক্ষমতার প্রথম মেয়াদ থেকেই বিরোধী দল ও মতের মানুষের ওপর খড়গহস্তে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে আসছে৷ জেল-জুলুম আর অত্যাচার-নির্যাতনকেই ক্ষমতায় টিকে থাকার মানদণ্ড হিসেবে বেছে নিয়েছে৷ না হলে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বর্তমানে যখন নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সে সময় ছাত্রদল সভাপতিকে বারবার গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে হয়রানি, গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়৷’
আওয়ামী লীগ সরকার কোনোদিনই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক৷ বলেছেন, ‘তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচারহীনতার বহু উদাহরণ এ দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে৷ সেই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো ছাত্রদল সভাপতিকে বিনা কারণে বারবার গ্রেপ্তারে ও হয়রানির অপচেষ্টা।
‘ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ শুক্রবার দিবাগত রাতে ধানমন্ডিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন৷ ওই সময় সাত-আটজন সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের প্যান্টের বেল্ট ধরে টানাহেঁচড়া করে তাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তাদের সঙ্গে দুই গাড়ি পুলিশ ছিল। কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও তার সঙ্গে থাকা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৫-৫০ নেতাকর্মীর ওপর পুলিশ অশালীন আচরণ ও মারধরের ঘটনা ঘটায়।
‘উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতিকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুর রহমান বাবুকে বেধড়ক মারধর করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়৷’
সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গুলশান থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম জাসামকে কাকরাইল মোড় থেকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ অনেক খোঁজাখুঁজির পর আজ সকালে রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকায় চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়৷’
অবিলম্বে আটক ছাত্রদলের সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে দেশ ধ্বংস করাই বিএনপির কাজ বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
শুক্রবার দুপুরে নওগাঁর সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিল, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করেছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে চালু করেছি। দেশের সব সেক্টরে উন্নয়ন হচ্ছে। বিএনপি উন্নয়ন দেখতে পায় না, তাদের কাজই হচ্ছে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে দেশকে ধ্বংস করা।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় পলিথিন দিয়ে বল বানিয়ে খেলেছি। কত স্মৃতি এই ফুটবল খেলা নিয়ে। কালের বিবর্তনে সেই পলিথিন দিয়ে বানানো ফুটবল খেলা আর নেই। এখন তো আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে ফুটবল তৈরি হয়ে থাকে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চালুর পর ফুটবল খেলায় আবারও প্রাণ ফিরেছে।’
সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার কাছেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তার দ্বারাই সম্ভব দেশের উন্নয়ন। আর দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি বা দলের দ্বারা এমন উন্নয়ন সম্ভব নয়। ২০০৮ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেখেছি দেশের কী অবস্থা করে রেখেছিল বিএনপি।
‘প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছিলেন, বর্তমানে সেই সুফল ভোগ করছে দেশের মানুষ। হাতে হাতে মোবাইল হয়েছে, ইন্টারনেট পেয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পেয়েছে। মানুষ এখন আর না খেয়ে থাকে না। কৃষকদের পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণ দেয়া হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম শাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রেজা সারোয়ার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী ও থানার ওসি তারেকুর রহমান সরকার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-১৭ বালক এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বিজয়ী অনূর্ধ্ব-১৭ বালিকাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন খাদ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে সব রাজনৈতিক দলের মতামতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন চরমোনাই পির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এ ছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, মদের বিধিমালা বাতিল, পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধসহ ইসলামিক আদর্শে রাষ্ট্র গঠনে ১৫ দফা দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে এমন দাবি করেন চরমোনাই পির।
শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে চরমোনাই পির আরও দাবি করেন, পরবর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণের আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ জাতীয় নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
সমাবেশে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার নেতাকর্মী দলে দলে অংশ নেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় ভরে ওঠে সমাবেশস্থল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি চরমোনাই পির ছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
এ সময় বক্তারা সরকারের নানা সমালোচনা করে অভিযোগ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে মেগা প্রকল্পের নামে ক্ষমতাসীনরা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। ১১৬ জন আলেম ওলামাকে বিতর্কিত করে ইসলামকেই হেয় করছে।
এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি শিক্ষা বাদ দিতেও সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
বক্তারা জানান, সমাবেশে যোগদানের জন্য পিরোজপুর জেলা শাখার আওতাধীন উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট শাখা থেকে প্রায় ১০৮টি পরিবহন বাস রিজার্ভের কথা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা বাস মালিক সমিতি হঠাৎ সব রিজার্ভ করা গাড়ি বাতিল করে নেতাকর্মীদের বায়না টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে বাস মালিক সমিতি দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে প্রশাসনের ওপর আর প্রশাসন দোষ চাপাচ্ছে বাস মালিক সমিতির ওপর।
সমাবেশে যোগদানে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আরও নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছে দাবি করে বক্তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বক্তাদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান অন্যতম।
আরও পড়ুন:গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ পদে নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম নতুন সভাপতি ও সাধারণত সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
অন্যদিকে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন সবুজ।
সকাল ১১টায় ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের নতুন নেতৃত্বের আহ্বান করেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বহুদিন পর নতুন নেতৃত্ব পাওয়ার আশা জাগে।
কিন্তু বিকেলে কমিটি অপরিবর্তিত থাকলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। নতুন কমিটি ঘোষণার পর বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা আনন্দ উল্লাস করলেও তৃণমূলের অনেকেই ক্ষোভ দেখান। অনুষ্ঠান চলাকালীন নেতাকর্মীদের মঞ্চ ত্যাগ করার দৃশ্যও দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘১৯ বছর পর গাজীপুরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছিল। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীদের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যেও বলা হয়েছিল, জেলা কমিটিতে নতুনদের স্থান দেয়া হোক। ভেবেছিলাম নিজেদের মনোনীত নেতাই পদপদবীতে আসবে। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য। উপজেলা নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তারাই আবারও নেতৃত্বে এসেছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ সাইদ খোকন, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, এমপি সিমিন হোসেন রিমি, এমপি শামসুন নাহার ভূঁইয়া প্রমুখ।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু ঠেকাতে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে খারাপ ধারণা তৈরি হয় বলেও মনে করেন তিনি।
শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে একটি আয়োজনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ফখরুল।
গত বুধবার পদ্মা সেতু নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস, মাহফুজ আনাম ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেছেন, যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছেন, তাদের সেতুতে নিয়ে গিয়ে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।
পরদিন ফখরুল এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ধরনের বক্তব্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে তিনি সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
এর পরদিনও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন ফখরুল। বলেন, ‘যখন একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বিষোদ্গার করেন, তখন স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। তিনি যখন একজন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদকে কটূক্তি করেন, তখন সেটা বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা সৃষ্টি করে।
‘এমনকি যে অর্থনীতিবিদেরা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে যে অশনিসংকেতের কথা বলেছেন, তাদেরও তিনি গালি দিতে ছাড়েননি।’
ফখরুল বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রের চিফ এক্সিকিউটিভ যে যেভাবেই আসুক, উনি যখন বলেন যে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দাও, এটা অমিনাস একটা ভয়ংকর কথা। আমরা গতকাল এ বিষয়ে নিন্দা করেছি। আজও করছি।
‘আমরা বারবার অনুরোধ করছি। দেশের যে পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, এটা আরও খারাপ না করে এখানে কমপক্ষে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করুন। এ ছাড়া বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকট, সে সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন
বুধবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের মিশনে মাহফুজ আনামও: প্রধানমন্ত্রী
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূস ছাড়াও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।
‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’
পর দিন মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে এক ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমি এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাইনি, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাইনি, কখনও হিলারি ক্লিনটনকে কোনো ই-মেইল পাঠাইনি, ওয়াশিংটনে বা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় বা শহরে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনো বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করিনি।
‘বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়।’
‘কাদেরের বক্তব্যে গুরুত্ব দিই না’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দেন না বলেও জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘তার (কাদের) কথা আমরা বেশি গুরুত্ব দিই না। কারণ কোনো সিদ্ধান্ত তিনি করেন না। সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।’
বিএনপি একটি ‘পচনশীল দল’– ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। সুতরাং ক্ষমতার বাইরে থাকলে পচনশীল হয় না। আমরা উচ্চগামী, ঊর্ধ্বগামী দল। আমরা যে ঊর্ধ্বগামী দল সেটা প্রমাণ করার জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। আর কিচ্ছু দরকার নেই আমাদের।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অর্থ খালেদার মৃত্যু কামনা নয়: কাদের
বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না বলে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের জবাব জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘দেখা যাক। এমন যদি তারা করে তখন দেখা যাবে কে ঠেকাতে পারে আর কে পারে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য