গর্ভধারণের সঠিক ও কার্যকর উপায় বলতে গেলে নানা রহস্যে ঘেরা। ফলে গর্ভধারণে সক্ষম নারীও অনেক সময় জটিলতায় ভুগতে পারেন। আবার খাদ্যাভ্যাসসহ কিছু শারীরিক কারণেও বিলম্বিত হতে পারে গর্ভধারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার আগে জানতে হবে নিজের শরীরকে। যত্ন নিতে হবে শরীরের। এ ছাড়া কিছু অভ্যাস মেনে চললে গর্ভধারণের জটিলতা অনেকটাই কমে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনস রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের কৃত্রিম প্রজনন শাখার পরিচালক ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোনের মতে, গর্ভধারণে আগ্রহী নারীর জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিজের শরীর, বিশেষত ঋতুচক্রকে জানা।
পাভোন বলেন, ‘ঋতুচক্রের বিরতি কত দিনের সেটা সবার আগে জানা দরকার। এতে করে নারী তার যৌন মিলনের সময় নির্দিষ্ট করতে পারবেন ও গর্ভধারণের চেষ্টা চালাতে পারবেন।’
বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে ১০টি সহায়ক কৌশলের কথা বলা হয়েছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য বাংলায় প্রকাশ করা হচ্ছে কৌশলগুলো।
১. ঋতুচক্রের পুনরাবৃত্তির তথ্য সংরক্ষণ
সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক নারীর প্রতি মাসে তার পিরিয়ডের প্রথম দিনটির তারিখ লক্ষ রাখা উচিত। প্রতি মাসেই সমান দিনে পিরিয়ড শুরু হলে তা নিয়মিত বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এর হেরফের হলে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হয়। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালেন্ডারে এ তথ্যের ভিত্তিতে নারীর ওভুলেশন কখন হচ্ছে, তা অনেকটা সঠিকভাবে অনুমান করা যায়। ওভুলেশন হচ্ছে নারীর ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম নিঃসরণ। ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর সেটি ফেলোপিয়ান টিউবের নিচের দিকে চলে যায়, আর সেখানেই শুক্রাণু কোষ এই ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।
ঋতুচক্রের পুরো বিষয়টি হিসাবে রাখতে গ্লোওভুলেশনের মতো বেশ কিছু পিরিয়ড ট্র্যাকার অ্যাপ অনলাইনে পাওয়া যায়। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। অন্যদিকে নারী দেহে প্রবেশের পর পুরুষের শুক্রাণু পাঁচ দিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে।
২. ওভুলেশনের দিকে দৃষ্টি রাখা
ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোন বলছেন, ‘সাধারণত পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ আগে একজন নারীর ওভুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশ্য যাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র ব্যাহত হয়, তাদের ওভুলেশনের সময় নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে সাধারণত পরবর্তী পিরিয়ডের আগের ১২ থেকে ১৬ দিন আগে এটি ঘটতে পারে।’
নেচার জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ঋতুচক্রের দৈর্ঘ্য নারীভেদে আলাদা হতে পারে। সেই সঙ্গে নারীর রজঃশীল থাকার বছরগুলোর বিভিন্ন সময়ে ওভুলেশনের সময় ও দৈর্ঘ্যও বদলে যেতে পারে। এ কারণে ওভুলেশনের সময়কে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে নারীর গর্ভধারণ সহজ হয়। মাসের কোন সময়টি গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, সেটি বের করার অনেক উপায় আছে।
ওভুলেশন প্রেডিকশন কিটের সাহায্যে নারীর কখন ওভুলেশন হচ্ছে, সেটা অনুমান করার ঝামেলা কমে যায়। ওষুধের দোকানে বিক্রি হওয়া এ কিটগুলো মূত্রে লিউটেনাইজিং হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে। প্রতি মাসে ওভুলেশনের সময় এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু নির্গত করতে প্রস্তুত করে। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পজিটিভ ফল আসার পরের তিন দিন কোনো দম্পতির যৌন মিলনের মাধ্যমে গর্ভধারণের জন্য সেরা সময়।
ওভুলেশন কখন হবে সেটা বের করার আরেকটি উপায় হচ্ছে সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মার দিকে খেয়াল রাখা। এই প্রক্রিয়ায় নারীর যৌনাঙ্গে শ্লেষ্মার পরিমাণ ও ধরন নিয়মিত পরীক্ষা করতে হয়।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও মার্চ অফ ডাইমসের মতে, ওভুলেশনের ঠিক আগে যখন একজন নারী সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থায় থাকেন, তখন শ্লেষ্মার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পাতলা, স্বচ্ছ ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা এভাবে পিচ্ছিল হয়ে শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে। ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, যেসব নারী ছয় মাসে নিয়মিত নিজেদের সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা পরখ করেন তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা ২.৩ ভাগ বেশি।
ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালের মতে, শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণও ওভুলেশন পর্যবেক্ষণের অন্যতম পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে বিছানা ছাড়ার আগে নির্দিষ্ট সময়ে দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে এবং প্রতিদিনের তাপমাত্রার চার্ট করতে হবে। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের মতে, নারীর ডিম্বাশয় ডিম্বাণু ছাড়ার প্রস্তুতির সময় দেহের তাপমাত্রা হালকা কমে যায়। এ সময় দেহের গড় তাপমাত্রা থাকে ৯৭ থেকে ৯৭.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৬.১ থেকে ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মধ্যে। ডিম্বাণু ছেড়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও বেশ কয়েক দিন সে অবস্থায় থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ওভুলেশনের পরপর একজন নারীর দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৭.৬ থেকে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬.৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হতে পারে। তারা বলছে, ওভুলেশনের পর ডিম্বাণু ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকে।
ওভুলেশনের সময় দেহের মূল তাপমাত্রা খুব কম মাত্রায় পরিবর্তিত হয় বলে ডিজিটাল থার্মোমিটার বা বিশেষ বেজাল থার্মোমিটার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. ফার্টাইল উইন্ডোর সময় বিকল্প দিনে যৌন মিলন
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফার্টিলিটি উইন্ডো (ডিম্বাণু নিগর্ত হওয়ার প্রস্তুতি ও নির্গত হওয়ার পরে কার্যকর থাকার সময়) সাধারণত ছয় দিনের। ওভুলেশনের দিন এবং এর আগের পাঁচ দিন। প্রতি মাসে একজন নারী এই সময়টাতেই জন্মদানে সবচেয়ে বেশি সক্ষম বা উর্বর থাকেন।
অনেক নারী গর্ভধারণের সঠিক সময় জানতে ফার্টিলিটি-ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। তবে বিএমজে সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক রিভিউ অনুযায়ী, এই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কতটুকু নিখুঁত সেটা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি জার্নালে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৫০টি প্রচলিত ফার্টিলিটি ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ পরখ করে দেখেছেন। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই অ্যাপ ও সাইটগুলো প্রায়ই উদ্ভট ফল দিচ্ছিল। অনেক ফার্টিলিটি উইন্ডোর দিন-তারিখ একেবারে ভুলভাবে জানাচ্ছিল।
পাভোন বলেন, ‘ফার্টিলিটি উইন্ডোর সময়ে প্রতিদিন যৌন মিলনে অংশ নেয়া দম্পতিদের গর্ভধারণের হারে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। এই হার ৩৭ শতাংশ। ফার্টিলিটি উইন্ডোর বাইরে অন্য দিনগুলোতে যৌন মিলনে অংশ নেয়াদের ক্ষেত্রে এ হার ৩৩ শতাংশ।
পাভোনের মতে, মাসজুড়ে নিয়মিত যৌন মিলনে অংশ নিলেই বরং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের শত শত গর্ভধারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত অ্যাপ ঘেঁটে দেখেছেন। এসব অ্যাপের তথ্য ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কানাডার জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে। অ্যাপগুলোর ৩১টিতে ভুলভ্রান্তির ছড়াছড়ি ছিল। তবে কয়েকটি বেশ কার্যকর। এর মধ্যে সেরা তিনটি অ্যাপ হচ্ছে:
গ্লো.ওভুলেশন অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Glow.Ovulation & Period Tracker)
ফার্টিলিটি ফ্রেন্ড এফএফ অ্যাপ (Fertility Friend FF App)
ক্লু: হেলথ অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Clue: Health & Period Tracker)
গর্ভধারণ নিয়ে প্রচলিত অনেক মিথ রয়েছে। তবে এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া বেশ কঠিন। যেমন- অনেকে মনে করেন যৌন মিলনের সময় বিশেষ কোনো পজিশন সন্তান ধারণের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। পাভোন বলেন, যৌন মিলনের পর একজন নারীর নির্দিষ্ট সময় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার সঙ্গে তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধিরও কোনো সংযোগ নেই।
পাভোন অবশ্য বলেছেন, পানিভিত্তিক কিছু ভ্যাজিনাল লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়, যা শুক্রাণুর সচলতাকে আটকে দিতে পারে। তার পরামর্শ, লুব্রিকেন্ট প্রয়োজন হলে অ্যাস্ট্রোগ্লাইড বা কে-ওয়াই জেলির বদলে প্রি-সিড ব্যবহার করা।
৪. দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
একজন নারীর ওজন তার গর্ভধারণের সামর্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বা অনেক কম ওজন গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। পাভোন বলছেন, সাধারণ বডি মাস ইনডেক্সের (বিএমআই) একজন নারীর চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের নারীর গর্ভধারণে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগতে পারে। আর যেসব নারীর ওজন অনেক কম তাদের ক্ষেত্রে চার গুণ সময় লাগতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে তা অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন তৈরি করে। এটি ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকদের দাবি, যেসব দম্পতির দুজনই অতিরিক্ত ওজনের এবং যাদের বিএমআই অন্তত ৩৫ (বিএমআই অনুযায়ী ২৫-২৯.৯ পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন ও ৩০ এর বেশি স্থূলকায় বা ওবিস ধরা হয়) তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ দম্পতির চেয়ে ৫৫ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত সময় বেশি লেগেছে।
পিএলওএস ওয়ান জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, বিএমআই বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট সময়সীমায় নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে আসে। গবেষকরা চীনের সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক ৫০ হাজার দম্পতির ওপর করা এক গবেষণার ডেটা ঘেঁটে এ তথ্য পেয়েছেন।
অ্যান্ড্রোলজিয়া জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষের ওবিসিটি বা স্থূল দেহের জন্য হরমোন উৎপাদনের জন্য নিয়োজিত এন্ডোক্রিন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা ও ঘণত্ব কমে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়ে নারীর গর্ভধারণের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন হসপিটালস অ্যান্ড ক্লিনিকস অথরিটি জানিয়েছে, যেসব নারীর ওজন অনেক কম (বিএমআই ১৮ এর নিচে) তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৫. গর্ভাবস্থার আগে ভিটামিন খাওয়া
যেসব নারী গর্ভধারণের চেষ্টায় আছেন তাদের ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পাভোন। এতে করে গর্ভাবস্থায় দেহের উপযোগী ভিটামিন তিনি আগে থেকেই চিহ্নিত করতে পারবেন।
পাভোন প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন খেতে বলেন। তবে তাতে ন্যূনতম ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড থাকতে হবে। এটি এক ধরনের বি-ভিটামিন, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড মজবুত করতে সহায়তা করে।
জন্মের সময় শিশুর কোনো ধরনের ত্রুটি এড়াতে গর্ভধারণের অন্তত এক মাস আগে থেকে নারীদের প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে বলে দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করাটা ভালো। এর কারণ, নিউরাল টিউব যা গর্ভধারণের তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে পরিণত হয়। ওই সময়ে অধিকাংশ নারী বুঝতেও পারেন না যে তিনি গর্ভবতী।
৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যতালিকা না থাকলেও, স্বাস্থ্যকর খাবার একজন নারীর দেহে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে সুষম অবস্থা বজায় রেখে গর্ভধারণে সহায়তা করে। এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, সুষম প্রোটিন, বার্লি-ওটমিল জাতীয় হোল গ্রেইন, দুগ্ধজাত পণ্য ও চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
ফলিক এসিডযুক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পাশাপাশি একজন নারী সবুজ শাক-সবজি, ব্রকোলি, ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত রুটি ও সিরিয়াল, বিনস, লেবু জাতীয় ফল ও কমলার রস খেতে পারেন।
মেয়ো ক্লিনিকের মতে, গর্ভধারণের প্রক্রিয়া শুরুর সময় পারদের উচ্চ মাত্রা সমৃদ্ধ মাছ কম খাওয়া উচিত। এর কারণ পারদ গর্ভবতী নারীর রক্ত প্রবাহে মিশে যেতে পারে, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পারদযুক্ত খাদ্য গ্রহণ নারী ও পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনতে পারে।
কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থায় নারীদের ক্যাফিন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গর্ভবতী নারী যদি ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন (দুই কাপ কফির কম) পান করেন তাহলে গর্ভের সন্তানের কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ২০২০ সালে বিএমজে এভিডেন্স বেজড মেডিসিনের রিভিউ গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারী বা সন্তান গ্রহণের ইচ্ছুক নারীদের জন্য ক্যাফিনের কোনো নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রা নেই।
৭. কঠিন বা ভারী ব্যায়াম কমানো
২০২০ সালের মার্চে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালের প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিদিনের শারীরিক সক্রিয়তা একজন নারীর দেহকে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত করে। এতে করে তাদের জন্মদান ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যাও কমিয়ে দেয়।
তবে লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, যে সব নারী অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন বা নিয়মিত ভারী কাজ করেন তাদের ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
যে সব নারী ভারী ব্যায়াম করেন তাদের রজঃচক্রে ব্যাঘাত ঘটতে দেখেছেন চিকিৎসকেরা। লাইভসায়েন্সকে পাভোন বলেন, নারী গর্ভধারণ করতে চাইলে ব্যায়ামের পরিমাণ কমাতে হবে।
৮. বয়স বাড়লে কমে উর্বরতা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বা উর্বরতা কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকা ডিম্বাণু ও মান কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস, ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লক ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। যে কারণে উর্বরতা কমে যেতে পারে।
পাভোন বলেন, ‘৩০ বছরের পর নারীদের জন্মদান ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৭ বছরের পর তা আরও কমে যায় এবং ৪০ এর পর তা অনেকখানি হ্রাস পায়।‘
হ্রাস পাওয়ার অর্থ গর্ভধারণে বেশি সময় লাগতে পারে।
৯. ধূমপান ও মদ্যপানে ক্ষতি
ধূমপানের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমেরিকান সোসাইটি অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, সিগারেটের নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো রাসায়নিক নারীর ডিম্বাণু নষ্ট হওয়ার হারকে ত্বরান্বিত করে।
মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান নারীর ডিম্বাশয়ের জীর্ণতা তৈরি করে এবং দ্রুত এর ডিম্বাণুকে নিঃশেষ করে দেয়। ২০২০ সালে রিপ্রোডাকটিভ বায়োলজি অ্যান্ড এন্ডক্রাইনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জন্মদান ক্ষমতা হ্রাসের সঙ্গে ধূমপানের যোগাযোগ রয়েছে।
বিএমজে জার্নালে ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, নারীদের সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোক (পরোক্ষ ধূমপান) থেকেও দূরে থাকা উচিত। পরোক্ষ ধূমপানও গর্ভধারণের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থা বা গর্ভ ধারণ প্রক্রিয়ায় থাকার সময় মারিজুয়ানা গ্রহণ থেকেও বিরত থাকা উচিত।
গর্ভধারণের ইচ্ছা থাকলে মদ্যপানে ইস্তফা দেয়াটি নিরাপদ। তবে, ২০০৯ সালে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে ১,৭০৮ জন নারীকে নিয়ে ডেনিশ বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বিজ্ঞানীদের দাবি, পাঁচ বছর ধরে চলা তাদের গবেষণায় নিয়মিত মদ্যপান, অত্যাধিক মদ্যপান ও জন্মদানের ক্ষমতার মধ্যে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক নারী গর্ভাবস্থায়, গর্ভধারণের ঠিক আগে বা যখন তারাও জানেন না যে গর্ভধারণ করতে যাচ্ছেন সে সময় মদ্যপান করেন।
দ্য আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজির মতে, মাঝারি মাত্রায় মদ্যপান (দিনে ১-২ বার) বা বেশি মদ্যপান (দিনে দুই বা ততোধিকবার মদ্যপান) একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পাভোনও একমত এ বিষয়ে। তার মতে, গর্ভধারণের পর নিরাপদ মাত্রায় মদ্যপান বলে কিছু নেই।
১০. কখন সাহায্য লাগবে সেটা জানুন
পাভোন বলেন, ‘নারীর বয়স ৩৫ বছরের ওপরে হলে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পর ছয় মাসের মধ্যে সন্তানসম্ভবা না হলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।’
পাভোনের মতে, যে সব নারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে, তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পরেও গর্ভধারণ করতে না পারলে তার সঙ্গীর বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে করণীয়
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত সমস্যা। নারীর বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ এটি। আমেরিকায় প্রজননক্ষম ৬-১২ শতাংশ নারী এ রোগে ভোগেন।
পিসিওএস চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসকেরা নিচের তিনটি লক্ষণের অন্তত দুটি খোঁজার চেষ্টা করেন:
ওভুলেশন হ্রাস পাওয়ায় পিরিয়ড না হওয়া অথবা অনিয়মিত হওয়া।
সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি পুরুষ হরমোনের কারণে মুখে ও শরীরে পশমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট হওয়া।
নারীরা কেন এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিষ্কার নন। তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ে অনেকের মধ্যে সমস্যগুলো ধরা পড়ে।
পিসিওএসজনিত বন্ধ্যাত্ব ও ওজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। থেরাপিউডিক অ্যাডভান্সেস ইন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়, পিসিওএসে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ নারী অতিরিক্ত ওজন বা ওবিসিটিতে ভুগছেন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে সক্ষম।
মেটফরমিন ও লেট্রোজোলের মতো অনেকগুলো ওষুধ ওভুলেশনে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ইনসুলিনের মাত্রা উচ্চ হলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ওভুলেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং। আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের তথ্য অনুসারে, এ পদ্ধতিতে একজন সার্জন বাড়তি হরমোন কমাতে ডিম্বাশয়ে ছোট কয়েকটি ফুটো করে দেন। তবে রোগীকে পুরো অজ্ঞান করে করা এ সার্জারি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। অনেক সময় এতে ডিম্বাশয়ের ক্ষতি হতে পারে, যা হিতে বিপরীত ফল ডেকে আনতে পারে।
বিকল্প পদ্ধতিগুলো কাজ না করলে চিকিৎসকেরা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (টেস্ট টিউব বা এ ধরনের কোনো পদ্ধতিতে গর্ভধারণ) করার অনুমোদন দেন।
এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্তদের গর্ভধারণ
প্রজননতন্ত্রের আরেকটি রোগ এনডোমেট্রিওসিস। আমেরিকায় প্রতি ১০ জন নারীর একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে জরায়ুতে পাওয়া টিস্যু নারীর ডিম্বাশয় বা ফেলোপিয়ান টিউবেও তৈরি হতে শুরু করে।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৃদু এনডোমেট্রিওসিসও প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে তা নারীর শ্রোণি অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফেলোপিয়ান টিউবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
এনডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীর পক্ষেও গর্ভধারণ করা সম্ভব। আর একবার গর্ভবতী হলে এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নন এমন নারীর সঙ্গে তার গর্ভাবস্থার কোনো পার্থক্য নেই।
যুক্তরাজ্যের এনডোমেট্রিওসিস সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসায় প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না। আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের মতে, এই ওষুধগুলোর মাধ্যমে রোগীর হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে করে তার জরায়ুর টিস্যুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং নতুন টিস্যু তৈরিতেও বাধা সৃষ্টি করে। তবে ওষুধগুলো হরমোনের ওপর নির্ভরশীল বলে (এগুলো সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ, ওভুলেশন পদ্ধতিকে আটকে দেয়া বা অ্যাস্ট্রোজেনের পরিমানকে কমানোর ওষুধ) এটি নারীর গর্ভধারণে বাধা দেয়।
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, একেক নারীর ওপর এনডোমেট্রিওসিস একেকভাবে প্রভাব ফেলে। যে কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের গবেষণাটিতে দেখা গেছে, এনডোমেট্রিয়াল ও স্কার টিস্যু সার্জারি করে আপসারণ করলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়তে পারে এবং এনডোমেট্রিওসিসের ব্যথা দূর করতে পারে।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যান্য পদ্ধতি যেমন, আইভিএফ, ওভুলেশন ঘটানো, কৃত্রিম ইনসেমিনেশন ও নারীর ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করে ডিম্বাণু উৎপন্ন করার অন্য প্রক্রিয়াগুলো একজন এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নারীকে গর্ভধারণে সহায়তা করতে পারে।
তবে বিষয়টি এনডোমেট্রিওসিসের তীব্রতা, নারীর বয়স ও প্রজনন সংক্রান্ত অন্যান্য কোনো জটিলতা আছে কি না তার ওপর নির্ভরশীল। এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর চিকিৎসায় চিন্তার বিষয় হচ্ছে এর মাধ্যমে অনেক সময় ডিম্বাশয় বাড়তি উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এতে একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় এবং একাধিক সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে আজ, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ইং তারিখে যাত্রা শুরু করলো ল্যাবএইড গ্রুপের নতুন কনসার্ন ‘ল্যাবএইড এআই’। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর সাহায্যে আরও সহজে ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রোগীর সেবাকে সহজ করতে এবং চিকিৎসকদের সক্ষমতা বাড়াতে দেশের অন্যতম পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলো ‘ল্যাবএইড এআই’-এর। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি প্রবেশ করলো এক নতুন যুগে, যার লক্ষ্য মানবিক সহানুভূতি ও এআই-এর বুদ্ধিদীপ্ততার সমন্বয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
ল্যাবএইড এআই-এর এই ঐতিহাসিক যাত্রায় মূল আকর্ষণ হিসেবে বাজারে আসছে দুটি যুগান্তকারী সমাধান— চিকিৎসকদের জন্য LABAID-GPT এবং সর্বক্ষেত্রিক এআই এসিস্ট্যান্ট (সহকারী) LUNA।
ল্যাবএইড এআই প্রবর্তিত LABAID-GPT হলো ডাক্তারদের জন্য তৈরি করা একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল এসিস্ট্যান্ট। এটি চিকিৎসার আন্তর্জাতিক গাইডলাইন এবং অসংখ্য ক্লিনিক্যাল ডেটা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকদের দ্রুত প্রমাণ-ভিত্তিক (Evidence-based) ফলাফল দিতে সক্ষম। কঠিন রোগ নির্ণয়ের সময় চিকিৎসকদের মধ্যে যে দ্বিধা বা সংশয় তৈরি হয়, LABAID-GPT সেখানে নির্ভুল তথ্য দিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলবে। এই প্রযুক্তির কারণে রোগ নির্ণয়ের সময় লাঘব হবে, যা সরাসরি রোগীদের জন্য বড় সুবিধা নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে ল্যাবএইড এআই নিশ্চিত করতে চায়, যেন কোনো রোগীই ভুল রোগ নির্ণয় বা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে ভোগান্তির শিকার না হন। LABAID-GPT চিকিৎসকদের কাজকে আরও সহজ করে তাঁদের মূল্যবান সময় বাঁচাবে, যাতে তারা রোগীর সেবায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন। এছাড়াও, ল্যাবএইড জিপিটি ব্যবহার করে রোগীরাও পাবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যথাযথ সুবিধা।
অন্যদিকে ল্যাবএইড এআই-এর আরেকটি বৈপ্লবিক উদ্ভাবন হলো LUNA, যা বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ইতিহাসে এক বিরল উদ্যোগ। এটি একটি বহুমুখী (Multi-domain) এআই চ্যাটবট এবং ব্যক্তিগত সহকারী, যা শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। LUNA-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এটি একইসাথে আটটি ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে পারে। LUNA একজন নার্স, একজন ডাক্তার সহকারী, একজন ব্যাংকার, একজন কর্পোরেট বিশেষজ্ঞ বা একজন আইনজীবীর মতো চরিত্র ধারণ করে আপনাকে আপনার কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে। যেমন, একজন ডাক্তার সহকারী হিসেবে LUNA প্রেসক্রিপশনের তথ্য ব্যাখ্যা করবে এবং একজন ব্যাংকার হিসেবে আর্থিক প্রশ্নের জবাব দেবে। এই উদ্ভাবনী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হতে যাচ্ছে, যারা এমন বহুমুখী এবং চরিত্রভিত্তিক AI এসিস্ট্যান্ট নিয়ে এলো। LUNA-এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ পাওয়া এখন হাতের মুঠোয়।
এই ঐতিহাসিক উদ্ভাবনের নেপথ্যে রয়েছেন তরুণ প্রজন্মের পথদ্রষ্টা ও অনুপ্রেরণা, উদ্ভাবক, সফল উদ্যোক্তা এবং ল্যাবএইডের কর্ণধার, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সাকিফ শামীম। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে তার অবদান সুদূরপ্রসারী। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথম ডেডিকেটেড ক্যান্সার হাসপাতাল, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার তৈরি হয়, যা চিকিৎসা সেবার এই কঠিন দিকটিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। একইসঙ্গে, ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন টেলিমেডিসিন পরিষেবা লাইফপ্লাস বাংলাদেশ (Lifeplus Bangladesh)।
সাকিফ শামীমের সবচেয়ে গৌরবময় ও অনন্য অর্জন হলো—তিনি বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্বাস্থ্যসেবা খাতে এআই-এর ব্যবহারকে এই নজিরবিহীন স্তরে নিয়ে এসেছেন। আটটি পেটেন্টসহ লঞ্চ করা ল্যাবএইড এআই দক্ষিন এশীয় অঞ্চল তো বতেই, গোটা বিশ্বে এক বিরল অবস্থানে নিয়ে গেছে এবং ল্যাবএইড এআই-এর যাত্রার আগেই এই বিপুল উদ্ভাবনী অর্জন এক নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। জনাব শামীমের এই দূরদর্শী নেতৃত্বই বাংলাদেশের চিকিৎসা প্রযুক্তিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পথ দেখাচ্ছে।
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সাকিফ শামীম এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য খুব সহজ। আমরা চাই উন্নত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের জন্য সহজে গুণগত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে। LUNA এবং LABAID-GPT-এর মাধ্যমে আমরা ডাক্তারদেরকে আরও শক্তিশালী করতে চাই, যাতে তাঁরা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সেবা দিতে পারেন। অপরদিকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী রোগীও তার প্রেসক্রিপশনের তথ্য ও যাবতীয় ব্যখ্যাসহ রোগ সংক্রান্ত সকল প্রকারের সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান পাওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এটি কেবল শুরু, বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ তৈরি করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”
তাপ নিঃসরণ (হিট ডিসিপেশন), নেটওয়ার্ক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ডিউরেবিলিটিতে শীর্ষ পারফরম্যান্সের জন্য আসন্ন অপো এ৬ প্রো ডিভাইসটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) স্বীকৃতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে অপো বাংলাদেশ। পরীক্ষাটি প্রযুক্তিগত নেতৃত্বের প্রতি অপোর অব্যাহত প্রতিশ্রুতি ও ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের জীবনে পরিবর্তন আনতে উদ্ভাবনের প্রতি অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বুয়েটের পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এ৬ প্রো’র কুলিং সিস্টেম এর পূর্বসূরির তুলনায় বেশ ভালোভাবে আপগ্রেডেড। ডিভাইসটিতে একটি ৪,৩০০ বর্গ মিলিমিটার ভিসি ভেপর চেম্বার ও এক্সপান্ডেড গ্রাফাইট লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যা মোট তাপ নিঃসরণের এলাকা ২০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি করে। ফলে, ডিভাইসটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করলেও এর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে মাত্র। এর মানে এখন ব্যবহারকারীরা ডিভাইস অতিরিক্ত গরম হওয়া ছাড়াই আরও দীর্ঘ সময় গেমিং, স্ট্রিমিং বা মাল্টিটাস্কিংয়ের ক্ষেত্রে স্মুথ পারফরম্যান্স পাবেন।
নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টেবিলিটির ক্ষেত্রেও অপো এ৬ প্রো বিশেষভাবে অনন্য। এআই ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক সিলেকশন থাকা এই ডিভাইসটি ভিড়যুক্ত এলাকা, বেসমেন্টের দুর্বল সিগনাল, সাবওয়ে বা হাই-স্পিড রেলের মতো দ্রুতগতির মতো বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে এবং তাতে স্থিতিশীল সংযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম। সিগন্যাল কাভারেজ অ্যান্ড প্যানেট্রেশনকে আরও শক্তিশালী করে এর সিমেট্রিক্যাল লো-ফ্রিকোয়েন্সি গেইন অ্যান্টেনা; এটি এমনকি চ্যালেঞ্জিং অবস্থাতে আরও ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। গেমারদের জন্য, এআই গেম অ্যান্টেনা প্রযুক্তি ও এআই গেম ব্যাটল অ্যাক্সিলারেশন নিয়ে এসেছে অপো, যা দুর্বল বা জনবহুল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও গেমিং ট্রাফিককে এগিয়ে রাখে। এই ফিচারগুলো এমনকি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশেও স্মুথ ও নিরবচ্ছিন্ন গেমিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
ব্যাটারি স্থায়িত্ব এ৬ প্রো’র আরেকটি প্রধান বিষয়। ডিভাইসটিতে সুবিশাল ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একবার চার্জে প্রায় তিনদিন চলতে সক্ষম। এতে রয়েছে ৮০ ওয়াট সুপারভুক ফ্ল্যাশ চার্জ, যা স্ট্যান্ডার্ড ফাস্ট চার্জিংয়ের তুলনায়ও চার্জিং সময়কে কমিয়ে আনে। ঘরের বাইরে বেশি থাকতে হয় এমন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একদম যথার্থ। এছাড়াও, ফোনটির ৫ বছরেরও বেশি স্থায়ী ব্যাটারি পারফরম্যান্স রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বুয়েট; মানে, এর ব্যাটারি বছরের পর বছর ধরে উচ্চ সক্ষমতা বজায় রাখবে। এই দীর্ঘস্থায়ী নির্ভরযোগ্যতা কেবল মানসিক শান্তিই নিশ্চিত করে না, বরং ব্যবহারকারীদের ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন কমিয়ে অর্থও সাশ্রয় করে।
আরও বৈচিত্র্য যোগ করতে এ৬ প্রোতে নিয়ে আসা হয়েছে রিভার্স চার্জিং। এর মাধ্যমে এটি পোর্টেবল পাওয়ার ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এতে করে ব্যবহারকারীরা মিনি ফ্যান, পোর্টেবল লাইট বা এয়ার পিউরিফায়ারের মতো ছোট ইলেকট্রনিক্স বা অন্যান্য স্মার্টফোনও চার্জ করতে পারবেন, যা তাদের জন্য আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবে।
এ বিষয়ে বুয়েটের প্রফেসর ড. মাহবুব আলম বলেন, “আমাদের পরীক্ষা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাপ নিঃসরণ, নেটওয়ার্ক নির্ভরযোগ্যতা ও ব্যাটারি স্থায়িত্ব, এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে অপো এ৬ প্রো। বাস্তব জগতে এটি চমৎকার ফলাফল দেখিয়েছে, যা এটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।”
এ বিষয়ে অপো বাংলাদেশ অথোরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, “বুয়েট-কর্তৃক অপো এ৬ প্রোকে শীর্ষ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি দেওয়ায় আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। এই অর্জন আমাদের চলমান মিশনকে প্রতিফলিত করে; একইসাথে, যা ক্রেতাদের জন্য অর্থপূর্ণ উদ্ভাবন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতি। এ৬ প্রো কেবল অত্যাধুনিক ডিজাইনই নয়; বরং, নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স ও দীর্ঘস্থায়ী মান নিশ্চিত করে।”
বুয়েটের এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে অন্যতম টেকসই ও নির্ভরযোগ্য স্মার্টফোন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলো অপো এ৬ প্রো। সর্বাধুনিক কুলিং ও স্থিতিশীল সংযোগ থেকে শুরু করে আলট্রা-ডিউরেবল ব্যাটারি লাইফ ও রিভার্স চার্জিং বৈচিত্র্য, সবক্ষেত্রেই প্রতিদিনের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করবে এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসার অপোর দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে অপো এ৬ প্রো।
পৃথিবীর কাছের কক্ষপথে নতুন একটি কোয়াসি চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, কোয়াসি চাঁদ সাধারণ চাঁদের মতো নয়। এসব চাঁদ সরাসরি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার পরিবর্তে সূর্যের চারপাশে এমন একটি কক্ষপথ অনুসরণ করে যা দেখে মনে হয় চাঁদটি আমাদের গ্রহের সঙ্গে অবস্থান পরিবর্তন করছে। নতুন এই কোয়াসি চাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘২০২৫ পিএন৭’।
প্ল্যানেটারি সোসাইটির তথ্যমতে, কোয়াসি চাঁদ বা আধা চাঁদ মূলত গ্রহাণু। স্থায়ী চাঁদের মতো আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে বলে মনে হলেও কোয়াসি চাঁদ আসলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময় অস্থায়ীভাবে আমাদের গ্রহের পাশাপাশি সৌরজগতের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। নতুন কোয়াসি চাঁদ আবিষ্কারের বিষয়ে স্পেনের মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস জানান, এই ক্ষুদ্র গ্রহাণু পৃথিবীর সাতটি পরিচিত কোয়াসি চাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও সবচেয়ে কম স্থিতিশীল।
নতুন কোয়াসি চাঁদের ব্যাস প্রায় ৬২ ফুট বা ১৯ মিটার। বেশ ছোট এই কোয়াসি চাঁদকে দেখতে বেশ ক্ষীণ বলে শুধু উচ্চমানের টেলিস্কোপ ব্যবহার করেই দেখা যায়। কোয়াসি চাঁদ সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর মতো একটি কক্ষপথ অনুসরণ করছে। পৃথিবী থেকে ২৮ লাখ থেকে ৩৭ লাখ মাইল দূরে অবস্থান করছে চাঁদটি।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সীমিত দৃশ্যমানের কারণে নতুন কোয়াসি চাঁদটি ছয় দশক ধরে পর্যবেক্ষণের বাইরে ছিল। সম্ভবত আরও ৬০ বছর ধরে বর্তমানের মতোই থাকবে। ২০২৫ পিএন৭ নামের কোয়াসি চাঁদের আবিষ্কারের ফলাফল সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির রিসার্চ নোটস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি বাংলাদেশের বাজারে তাদের জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ি বিওয়াইডি অ্যাটো ৩-এর নতুন আপগ্রেডেড ভার্সন উন্মোচন করেছে। শনিবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তাদের ফ্ল্যাগশিপ শোরুমে গাড়িটি উন্মোচন করা হয়।
বিওয়াইডি অ্যাটো ৩-তে ইন্ডাস্ট্রির সেরা লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্লেড ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ডিসি ফাস্ট চার্জারের মাধ্যমে মাত্র ৩০ মিনিটে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ করতে সক্ষম। গাড়িটিতে পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা ও ইন্টেলিজেন্স বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে ই-প্ল্যাটফর্ম ৩.০। ইউরো এনসিএপি ৫-স্টার সেফটি রেটিং সহ এই গাড়িটিতে আরও রয়েছে ৭টি এয়ারব্যাগ, ভেন্টিলেটেড ফ্রন্ট সিট ও সর্বাধুনিক অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেমের (এডিএএস) মতো উন্নত নিরাপত্তা ফিচার।
নতুন আপগ্রেডেড বিওয়াইডি অ্যাটো ৩-তে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। এর রি-ডিজাইন করা প্রিমিয়াম থমাস ব্ল্যাক ইন্টেরিয়র সহ ভেন্টিলেডেড ফ্রন্ট সিট স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে, এর নতুন কালো রঙের হেডলাইট, ১৮ ইঞ্চি টায়ার সহ বোল্ড রিম ডিজাইন ও স্পোর্টিয়ার স্টাইলিং এক্সটেরিয়রকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আপডেটেড এই ভার্সনটিতে আরও রয়েছে সমৃদ্ধ ১২ভি লো-ভোল্টেজ লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি।
ক্রেতারা এখন দুটি ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে গাড়িটি পছন্দ করার সুযোগ পাবেন। একটা হলো স্ট্যান্ডার্ড রেঞ্জ ভার্সন; মাত্র ৪৯.৯০ লাখ টাকা দামের এই গাড়িটি একবার সম্পূর্ণ চার্জে ৩৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম। আরেকটি হলো এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ ভার্সন; মাত্র ৫৫.৯০ লাখ টাকা দামের এই গাড়িটি একবার চার্জে ৪২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম। এই আপগ্রেডের সাথে সমন্বয় করে বিওয়াইডি বাংলাদেশ বিস্তৃত ওয়ারেন্টি পলিসি নিয়ে এসেছে। যেখানে ট্র্যাকশন ব্যাটারির জন্য ৮ বছর বা ১,৬০,০০০ কিলোমিটার, মোটর ও মোটর কন্ট্রোলারের জন্য ৮ বছর বা ১,৫০,০০০ কিলোমিটার ও পুরো গাড়ির জন্য ৬ বছর বা ১,৫০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওয়ারেন্টি পাবেন ক্রেতারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিজি রানার বিডি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। এছাড়াও, আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিওয়াইডি বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ নওশের, হেড অব সেলস ফাহমিদ ফেরদৌস প্রমুখ। আনুষ্ঠানিক উন্মোচনের আগে অতিথিদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি, উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন বিওয়াইডি বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ডিজিটাল ম্যানেজার শাহনুমা শারমিন।
এ বিষয়ে বিওয়াইডি বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ নওশের বলেন, “বাংলাদেশ ইলেকট্রিক ভেহিকল গাড়ি ব্যবহারে প্রস্তুত। একইসাথে, বিওয়াইডি বাংলাদেশ সারাদেশে চার্জিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অংশীদার, স্টেকহোল্ডার ও নীতিনির্ধারকদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিওয়াইডিতে আমরা বিশ্বাস করি, দেশে ইলেকট্রিক ভেহিকলের ব্যবহার বাড়াতে চার্জিং স্টেশন আরও সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য লাইভ ডেমো ও ইন্টারেকটিভ সেশনের ব্যবস্থা করেন বিওয়াইডি বিশেষজ্ঞরা। ফলে, নতুন এই বিওয়াইডি অ্যাটো ৩ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পান অতিথিরা। এর মাধ্যমে টেকসই ও জ্বালানি সাশ্রয়ী স্মার্ট ড্রাইভিং সল্যুশনের দিকে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিওয়াইডি বাংলাদেশ।
২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিওয়াইডি বাংলাদেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘অ্যাটো ৩ উইক’, যেখানে অতিথিরা আপগ্রেডেড অ্যাটো ৩-এর অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।
বিশ্বজুড়ে ব্যবসার ধরন বদলে দিচ্ছে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ভিত্তিক সেবা ও বিবিধ পণ্য। আগে ব্যবসা মানেই উৎপাদন, ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এবং সেলস বুঝালেও এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ছাড়া আধুনিক ব্যবসা কল্পনাই করা যায় না। তাই প্রতিটি ব্যবসা ডিজিটাল রূপান্তরের পথে হাঁটছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইওটি সার্ভিসগুলো। বাজারে এ ধরনের সল্যুশনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইওটি কনসালটেন্সি কেন্দ্রিক সেবা চালু করেছে ‘সার্ভিসিং২৪’।
বলাই বাহুল্য যে- বর্তমানে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ডেটার ব্যবহার সর্বত্র। গ্রাহক ও ব্যবসার বৃহৎ ডেটা ভাণ্ডার কাজে লাগিয়ে এআই এবং আইওটি বিভিন্ন প্রযুক্তি ডিভাইস ও সিস্টেমকে রিয়েল-টাইমে মনিটর করে স্মার্ট ডিসিশন নেওয়া, ব্যবসার বিকাশ, অধিক মুনাফা অর্জনে সাহায্য করছে।
তবে একটি প্রতিষ্ঠান চাইলেই এআই এবং আইওটি বিষয়ক সেবার পূর্ণ বেনিফিট নিতে পারে না বরং কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। যেমন- ডেটা সংগ্রহ ও ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা অর্জন, সঠিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক) তৈরি, কর্মীদের ডিজিটাল স্কিল উন্নয়ন, সাইবার সিকিউরিটি আপগ্রেড ইত্যাদি।
ব্যবসায়িক ডিজিটালাইজেশনে ইতিবাচক দিক অনেক। কাস্টমার বিহেভিয়ার থেকে শুরু করে প্রোডাকশন প্ল্যান, সবকিছুতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া, অটোমেশনের মাধ্যমে অল্প জনবল দিয়েই বড় আকারের কাজ সম্পন্ন ইত্যাদি করা সম্ভব। এতে খরচ সাশ্রয় হয় – ম্যানুয়াল ত্রুটি কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে, সিকিউরিটি শক্তিশালী হয় এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ সহজ হয়। সবমিলিয়ে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত হবার পাশাপাশি গ্রাহক পান নিরবচ্ছিন্ন সেবা।
‘সার্ভিসিং২৪’ এর নতুন চালু এই করা সেবা- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন পরিকল্পনা তৈরি, এআই-ভিত্তিক ডেটা অ্যানালাইসিস ও অটোমেশন গড়ে তোলা, আইওটি ইন্টিগ্রেশন এর মাধ্যমে সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্ককে স্মার্টভাবে সংযুক্ত করা, সাইবার সিকিউরিটি শক্তিশালী করা, ক্লাউড ও হাইব্রিড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যানেজমেন্ট সহজ করা, রিয়েল-টাইমে সিস্টেম ট্র্যাক করা এবং দ্রুত সাপোর্ট ও সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে সাহায্য করবে।
এ সম্পর্কে সার্ভিসিং২৪-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসির ফিরোজ বলেন, “এআই এবং আইওটি কনসালটেন্সি সেবার মাধ্যমে আমরা আমাদের গ্রাহকদের ব্যবসার পরিধি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারব বলে আশা করি। এতে তাদের খরচ কমে যাবে, মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যবসা হয়ে উঠবে ফিউচার-রেডি ও প্রতিযোগিতামূলক। নতুন নতুন সেবার মাধ্যমে আমরা সবসময় গ্রাহকদের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ‘ব্ল্যাক হোল’ আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) থেকে প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে তারা জানান, এমন একটি ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, যার জন্ম হতে পারে বিগ ব্যাংয়ের মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময় পরে।
এটি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে এটিই হবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন ব্ল্যাক হোল বা সম্ভবত ‘প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল’ বা আদিম ব্ল্যাক হোলের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ। এই ধরনের ব্ল্যাক হোল বিজ্ঞানীদের মধ্যে বহু দশক ধরে বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে।
আমরা জানি, ব্ল্যাক হোল সাধারণভাবে তৈরি হয় বৃহৎ তারার বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা ঘটনার মাধ্যমে। তবে প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোলের ধারণা বলে, এই ব্ল্যাক হোলগুলো জন্ম নিয়েছিল মহাবিস্ফোরণের পর পরই, এমন সময়ে যখন কোনো তারা বা গ্যালাক্সি গঠিত হয়নি।
এই ব্ল্যাক হোলগুলো আধুনিক ব্ল্যাক হোলের তুলনায় অনেক ছোট হতে পারে, কোনো গ্রহ বা এমনকি একটি পরমাণুর সমান আকারেরও।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘মহাবিশ্বের শুরুর দিকে যদি কিছু অঞ্চলে পদার্থ অন্য অংশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ঘনভাবে জমা হয়ে থাকত, সেখান থেকেই এমন ব্ল্যাক হোলের জন্ম হতে পারে।’
এই ‘আদিম’ ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব যদি সত্য হয়, তাহলে তা শুধু আমাদের ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে ধারণা পাল্টাবে না, পুরো মহাবিশ্বের বিবর্তন নিয়েই ভাবনার ধারা বদলে দেবে।
নতুন এই আবিষ্কারটি উঠে এসেছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিদ রোবার্তো মাইওলিনো-র নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা থেকে। তিনি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান–কে বলেন, ‘এই ব্ল্যাক হোলটি প্রায় নগ্ন। এর চারপাশে কোনো গ্যালাক্সির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এটি প্রচলিত তত্ত্বগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে।’
তবে গবেষকেরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারা ব্ল্যাক হোলটিকে সরাসরি বিগ ব্যাংয়ের মুহূর্তে দেখেননি। বরং, তারা এটি দেখতে পেয়েছেন বিগ ব্যাংয়ের আনুমানিক ৭০ কোটি বছর পরের অবস্থায়—যা তুলনামূলকভাবে খুবই প্রাচীন।
এই প্রাচীন ব্ল্যাক হোলটির অবস্থান পাওয়া গেছে ‘QSO1’ নামের একটি ‘ছোট লাল বিন্দুতে’। এটি এমন এক ধরনের বস্তু, যেগুলো প্রথম শনাক্ত হয় জেমস ওয়েব চালু হওয়ার পর। এদের দেখা যায় মহাবিশ্বের সেই সময় থেকে, যখন তার বয়স ছিল ১০০ বছরেরও কম।
বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, এই লাল বিন্দুগুলো আসলে কী। কেউ বলেন, এটি ক্ষুদ্র, ঘন গ্যালাক্সি হতে পারে। আবার কারও মতে, এগুলো সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল, যেগুলো আশপাশের পদার্থ গ্রাস করছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং-এর মাধ্যমে QSO 1 এর পদার্থের গতির একটি ঘূর্ণন-বক্রতা (rotation curve) নিরূপণ করতে সক্ষম হন। সেখান থেকে হিসাব করে দেখা যায়, এর কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের ভর প্রায় ৫ কোটি সৌর ভর—অর্থাৎ সূর্যের ভরের ৫০ লাখ গুণ!
বিস্ময়করভাবে, এর আশপাশের বস্তুর চেয়ে এই ব্ল্যাক হোলটির ভর দ্বিগুণ বেশি। মাইওলিনো বলেন, ‘আমাদের ছায়াপথে মহাবিশ্বে (যেমন: মিল্কিওয়ে), কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সির তুলনায় প্রায় হাজার গুণ ছোট। তবে এখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র।’
মাইওলিনোর পূর্ববর্তী এক গবেষণায় দেখা গেছে, QSO 1 এর আশপাশের পদার্থে কেবল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আছে—মহাবিশ্বের প্রথম দিকের মৌল উপাদান। ভারী মৌলগুলো তারার বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছিল অনেক পরে।
তাই আশপাশে যদি কোনো গ্যালাক্সির অস্তিত্ব না থাকে, আর কেবল আদিম মৌল থাকে, তবে ধারণা করা যায় এই ব্ল্যাক হোলটি গঠিত হয়েছে গ্যালাক্সির আগে—যা প্রচলিত তত্ত্বে আগে কখনো শোনা যায়নি।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিদ অ্যান্ড্রু পন্টজেন অবশ্য সাবধান করে বলেছেন, ‘এখনো এটা কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। গবেষকেরা নতুন ডেটা ব্যবহার করে প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোলের ব্যাখ্যাকে জোরালো করছেন, তবে এটি পরোক্ষ যুক্তির ওপর দাঁড়ানো।’
পন্টজেন আশাবাদী যে, আগামী দশকে পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ শনাক্তকরণ যন্ত্রসমূহ সারা মহাবিশ্ব জুড়ে ব্ল্যাক হোল খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। আর এভাবে বিতর্কের অবসান ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘দশ বছর পর আমরা হয়তো নিশ্চিতভাবে জানতে পারব, আদিম ব্ল্যাক হোল আসলেই আছে কি না।’
ঢাকা, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো তাদের আল্টিমেট ডিউরেবিলিটি চ্যাম্পিয়ন স্মার্টফোন অপো এ৫ এর নতুন ৮ জিবি + ১২৮ জিবি ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। আগের ভ্যারিয়েন্টে ব্যবহারকারীদের অনন্য সাড়া পেয়ে অসাধারণ শক্তি, দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা ও চমৎকার পারফরম্যান্সের নতুন এই সংস্করণটি নিয়ে আসা হয়। ডিভাইসটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২১,৯৯০ টাকা মাত্র; এবং এটি দেশের সকল অনুমোদিত অপো স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।
পানি, ধুলা বা প্রতিদিনের দুর্ঘটনা এড়িয়ে প্রতিকূল পরিবেশের জন্য আরও সক্ষম করে তুলতে অপো এ৫-এ আইপি৬৫ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিজট্যান্স ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে, যা প্রতিদিনের ব্যবহারে আপনার উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারে। অপো এ৫ ডিভাইসটির মূলে রয়েছে এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী টেকসই গঠন। এর ১৪-স্টার মিলিটারি-গ্রেড শক রেজিস্ট্যান্স হুট করে ফোন পড়ে যাওয়া বা এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে; আর এসজিএস গোল্ড সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করে উচ্চমানের বিল্ড কোয়ালিটি। ফোনটি কেবল কঠিন মুহূর্তে টিকে থাকার জন্য তৈরি করা হয়নি; বরং একইসাথে, চমৎকার পারফরম্যান্স নিশ্চিত করার জন্যও নিয়ে আসা হয়েছে।
দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্সের জন্য ডিজাইন করা এই ডিভাইসটি কোনো প্রকার ঘাটতি বা ক্ষতি ছাড়াই ৫ বছর পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে সক্ষম। এতে রয়েছে ৬০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের সুবিশাল ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট সুপারভুক ফ্ল্যাশ চার্জ প্রযুক্তি; যা মাত্র ১৯ মিনিটে ৩০% এবং ৩৬ মিনিটে ৫০% চার্জ নিশ্চিত করতে সক্ষম। ফলে, ব্যবহারকারীরা এখন আরও কম সময়ে বেশি গেমিং, স্ট্রিমিং বা কাজের সুযোগ পাবেন।
অপো এ৫ এর সর্বাধুনিক এআই ক্যামেরা সিস্টেম মোবাইল ফটোগ্রাফির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ফোনটিতে মাত্র কয়েক ট্যাপে অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু সরাতে সহায়তা করবে এআই ইরেজার ২.০; জুম বা ক্রপ করার সময় যেন কোনো ডিটেইল না হারিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে এআই ক্ল্যারিটি এনহেন্সার; পাশাপাশি, ছবি কাটা, সম্পাদনা করা বা একত্রিত করাকে আরও দ্রুত ও নিখুঁত করতে রয়েছে এআই স্মার্ট ইমেজ ম্যাটিং ২.০। এই সর্বাধুনিক এআই ফটোগ্রাফি অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে ফোনটিতে ৫০ মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিখুঁত ও ঝকঝকে ছবি ধারণ করে। একইসাথে, এতে ২ মেগাপিক্সেল ডেপথ ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে, যা পোর্ট্রেটে পেশাদার মানের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার যোগ করে। পাশাপাশি, এর ৫ মেগাপিক্সেল এআই সেলফি ক্যামেরা আরও উজ্জ্বল, নিখুঁত ও ভারসাম্যপূর্ণ সেলফি নিশ্চিত করে।
মিলিটারি-গ্রেড সক্ষমতার পাশাপাশি, স্টাইলের ক্ষেত্রেও কোনো ছাড় দেয়নি অপো এ৫ (৮ জিবি + ১২৮ জিবি)। এর ১,০০০ নিট আলট্রা-ব্রাইট ডিসপ্লে প্রখর সূর্যালোকেও চমৎকার ও প্রাণবন্ত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। অনন্য ও স্লিক এই স্মার্টফোনটি এখন মিস্ট হোয়াইট ও অরোরা গ্রিন এই দুইটি চমৎকার রঙে পাওয়া যাচ্ছে।
নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অপো বাংলাদেশ অথোরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, “অপোতে আমরা চাই, আমাদের ব্যবহারকারীরা পারফরম্যান্স বা টেকসই গুণগত মানে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়েও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ব্যবহার করুক। অপো এ৫ এর আগের ভ্যারিয়েন্টে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা এবার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ডিভাইসটি কেবল আরেকটি স্মার্টফোন নয়; এটি শক্তি ও সহনশীলতার নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে।”
কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ব্যস্ত পেশাজীবী ও প্রতিদিনের স্মার্ট ব্যবহারের জন্য একদম উপযুক্ত ডিভাইস অপো এ৫ (৮ জিবি + ১২৮ জিবি) এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২১,৯৯০ টাকায়। আরও বিস্তারিত জানতে অপো বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ facebook.com/OPPOBangladesh বা https://www.oppo.com/bd/smartphones/series-a/a5/ ভিজিট করুন।
মন্তব্য