গর্ভধারণের সঠিক ও কার্যকর উপায় বলতে গেলে নানা রহস্যে ঘেরা। ফলে গর্ভধারণে সক্ষম নারীও অনেক সময় জটিলতায় ভুগতে পারেন। আবার খাদ্যাভ্যাসসহ কিছু শারীরিক কারণেও বিলম্বিত হতে পারে গর্ভধারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার আগে জানতে হবে নিজের শরীরকে। যত্ন নিতে হবে শরীরের। এ ছাড়া কিছু অভ্যাস মেনে চললে গর্ভধারণের জটিলতা অনেকটাই কমে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনস রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের কৃত্রিম প্রজনন শাখার পরিচালক ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোনের মতে, গর্ভধারণে আগ্রহী নারীর জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিজের শরীর, বিশেষত ঋতুচক্রকে জানা।
পাভোন বলেন, ‘ঋতুচক্রের বিরতি কত দিনের সেটা সবার আগে জানা দরকার। এতে করে নারী তার যৌন মিলনের সময় নির্দিষ্ট করতে পারবেন ও গর্ভধারণের চেষ্টা চালাতে পারবেন।’
বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে ১০টি সহায়ক কৌশলের কথা বলা হয়েছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য বাংলায় প্রকাশ করা হচ্ছে কৌশলগুলো।
১. ঋতুচক্রের পুনরাবৃত্তির তথ্য সংরক্ষণ
সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক নারীর প্রতি মাসে তার পিরিয়ডের প্রথম দিনটির তারিখ লক্ষ রাখা উচিত। প্রতি মাসেই সমান দিনে পিরিয়ড শুরু হলে তা নিয়মিত বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এর হেরফের হলে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হয়। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালেন্ডারে এ তথ্যের ভিত্তিতে নারীর ওভুলেশন কখন হচ্ছে, তা অনেকটা সঠিকভাবে অনুমান করা যায়। ওভুলেশন হচ্ছে নারীর ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম নিঃসরণ। ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর সেটি ফেলোপিয়ান টিউবের নিচের দিকে চলে যায়, আর সেখানেই শুক্রাণু কোষ এই ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।
ঋতুচক্রের পুরো বিষয়টি হিসাবে রাখতে গ্লোওভুলেশনের মতো বেশ কিছু পিরিয়ড ট্র্যাকার অ্যাপ অনলাইনে পাওয়া যায়। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। অন্যদিকে নারী দেহে প্রবেশের পর পুরুষের শুক্রাণু পাঁচ দিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে।
২. ওভুলেশনের দিকে দৃষ্টি রাখা
ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোন বলছেন, ‘সাধারণত পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ আগে একজন নারীর ওভুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশ্য যাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র ব্যাহত হয়, তাদের ওভুলেশনের সময় নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে সাধারণত পরবর্তী পিরিয়ডের আগের ১২ থেকে ১৬ দিন আগে এটি ঘটতে পারে।’
নেচার জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ঋতুচক্রের দৈর্ঘ্য নারীভেদে আলাদা হতে পারে। সেই সঙ্গে নারীর রজঃশীল থাকার বছরগুলোর বিভিন্ন সময়ে ওভুলেশনের সময় ও দৈর্ঘ্যও বদলে যেতে পারে। এ কারণে ওভুলেশনের সময়কে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে নারীর গর্ভধারণ সহজ হয়। মাসের কোন সময়টি গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, সেটি বের করার অনেক উপায় আছে।
ওভুলেশন প্রেডিকশন কিটের সাহায্যে নারীর কখন ওভুলেশন হচ্ছে, সেটা অনুমান করার ঝামেলা কমে যায়। ওষুধের দোকানে বিক্রি হওয়া এ কিটগুলো মূত্রে লিউটেনাইজিং হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে। প্রতি মাসে ওভুলেশনের সময় এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু নির্গত করতে প্রস্তুত করে। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পজিটিভ ফল আসার পরের তিন দিন কোনো দম্পতির যৌন মিলনের মাধ্যমে গর্ভধারণের জন্য সেরা সময়।
ওভুলেশন কখন হবে সেটা বের করার আরেকটি উপায় হচ্ছে সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মার দিকে খেয়াল রাখা। এই প্রক্রিয়ায় নারীর যৌনাঙ্গে শ্লেষ্মার পরিমাণ ও ধরন নিয়মিত পরীক্ষা করতে হয়।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও মার্চ অফ ডাইমসের মতে, ওভুলেশনের ঠিক আগে যখন একজন নারী সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থায় থাকেন, তখন শ্লেষ্মার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পাতলা, স্বচ্ছ ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা এভাবে পিচ্ছিল হয়ে শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে। ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, যেসব নারী ছয় মাসে নিয়মিত নিজেদের সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা পরখ করেন তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা ২.৩ ভাগ বেশি।
ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালের মতে, শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণও ওভুলেশন পর্যবেক্ষণের অন্যতম পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে বিছানা ছাড়ার আগে নির্দিষ্ট সময়ে দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে এবং প্রতিদিনের তাপমাত্রার চার্ট করতে হবে। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের মতে, নারীর ডিম্বাশয় ডিম্বাণু ছাড়ার প্রস্তুতির সময় দেহের তাপমাত্রা হালকা কমে যায়। এ সময় দেহের গড় তাপমাত্রা থাকে ৯৭ থেকে ৯৭.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৬.১ থেকে ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মধ্যে। ডিম্বাণু ছেড়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও বেশ কয়েক দিন সে অবস্থায় থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ওভুলেশনের পরপর একজন নারীর দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৭.৬ থেকে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬.৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হতে পারে। তারা বলছে, ওভুলেশনের পর ডিম্বাণু ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকে।
ওভুলেশনের সময় দেহের মূল তাপমাত্রা খুব কম মাত্রায় পরিবর্তিত হয় বলে ডিজিটাল থার্মোমিটার বা বিশেষ বেজাল থার্মোমিটার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. ফার্টাইল উইন্ডোর সময় বিকল্প দিনে যৌন মিলন
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফার্টিলিটি উইন্ডো (ডিম্বাণু নিগর্ত হওয়ার প্রস্তুতি ও নির্গত হওয়ার পরে কার্যকর থাকার সময়) সাধারণত ছয় দিনের। ওভুলেশনের দিন এবং এর আগের পাঁচ দিন। প্রতি মাসে একজন নারী এই সময়টাতেই জন্মদানে সবচেয়ে বেশি সক্ষম বা উর্বর থাকেন।
অনেক নারী গর্ভধারণের সঠিক সময় জানতে ফার্টিলিটি-ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। তবে বিএমজে সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক রিভিউ অনুযায়ী, এই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কতটুকু নিখুঁত সেটা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি জার্নালে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৫০টি প্রচলিত ফার্টিলিটি ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ পরখ করে দেখেছেন। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই অ্যাপ ও সাইটগুলো প্রায়ই উদ্ভট ফল দিচ্ছিল। অনেক ফার্টিলিটি উইন্ডোর দিন-তারিখ একেবারে ভুলভাবে জানাচ্ছিল।
পাভোন বলেন, ‘ফার্টিলিটি উইন্ডোর সময়ে প্রতিদিন যৌন মিলনে অংশ নেয়া দম্পতিদের গর্ভধারণের হারে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। এই হার ৩৭ শতাংশ। ফার্টিলিটি উইন্ডোর বাইরে অন্য দিনগুলোতে যৌন মিলনে অংশ নেয়াদের ক্ষেত্রে এ হার ৩৩ শতাংশ।
পাভোনের মতে, মাসজুড়ে নিয়মিত যৌন মিলনে অংশ নিলেই বরং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের শত শত গর্ভধারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত অ্যাপ ঘেঁটে দেখেছেন। এসব অ্যাপের তথ্য ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কানাডার জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে। অ্যাপগুলোর ৩১টিতে ভুলভ্রান্তির ছড়াছড়ি ছিল। তবে কয়েকটি বেশ কার্যকর। এর মধ্যে সেরা তিনটি অ্যাপ হচ্ছে:
গ্লো.ওভুলেশন অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Glow.Ovulation & Period Tracker)
ফার্টিলিটি ফ্রেন্ড এফএফ অ্যাপ (Fertility Friend FF App)
ক্লু: হেলথ অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Clue: Health & Period Tracker)
গর্ভধারণ নিয়ে প্রচলিত অনেক মিথ রয়েছে। তবে এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া বেশ কঠিন। যেমন- অনেকে মনে করেন যৌন মিলনের সময় বিশেষ কোনো পজিশন সন্তান ধারণের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। পাভোন বলেন, যৌন মিলনের পর একজন নারীর নির্দিষ্ট সময় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার সঙ্গে তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধিরও কোনো সংযোগ নেই।
পাভোন অবশ্য বলেছেন, পানিভিত্তিক কিছু ভ্যাজিনাল লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়, যা শুক্রাণুর সচলতাকে আটকে দিতে পারে। তার পরামর্শ, লুব্রিকেন্ট প্রয়োজন হলে অ্যাস্ট্রোগ্লাইড বা কে-ওয়াই জেলির বদলে প্রি-সিড ব্যবহার করা।
৪. দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
একজন নারীর ওজন তার গর্ভধারণের সামর্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বা অনেক কম ওজন গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। পাভোন বলছেন, সাধারণ বডি মাস ইনডেক্সের (বিএমআই) একজন নারীর চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের নারীর গর্ভধারণে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগতে পারে। আর যেসব নারীর ওজন অনেক কম তাদের ক্ষেত্রে চার গুণ সময় লাগতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে তা অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন তৈরি করে। এটি ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকদের দাবি, যেসব দম্পতির দুজনই অতিরিক্ত ওজনের এবং যাদের বিএমআই অন্তত ৩৫ (বিএমআই অনুযায়ী ২৫-২৯.৯ পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন ও ৩০ এর বেশি স্থূলকায় বা ওবিস ধরা হয়) তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ দম্পতির চেয়ে ৫৫ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত সময় বেশি লেগেছে।
পিএলওএস ওয়ান জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, বিএমআই বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট সময়সীমায় নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে আসে। গবেষকরা চীনের সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক ৫০ হাজার দম্পতির ওপর করা এক গবেষণার ডেটা ঘেঁটে এ তথ্য পেয়েছেন।
অ্যান্ড্রোলজিয়া জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষের ওবিসিটি বা স্থূল দেহের জন্য হরমোন উৎপাদনের জন্য নিয়োজিত এন্ডোক্রিন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা ও ঘণত্ব কমে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়ে নারীর গর্ভধারণের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন হসপিটালস অ্যান্ড ক্লিনিকস অথরিটি জানিয়েছে, যেসব নারীর ওজন অনেক কম (বিএমআই ১৮ এর নিচে) তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৫. গর্ভাবস্থার আগে ভিটামিন খাওয়া
যেসব নারী গর্ভধারণের চেষ্টায় আছেন তাদের ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পাভোন। এতে করে গর্ভাবস্থায় দেহের উপযোগী ভিটামিন তিনি আগে থেকেই চিহ্নিত করতে পারবেন।
পাভোন প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন খেতে বলেন। তবে তাতে ন্যূনতম ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড থাকতে হবে। এটি এক ধরনের বি-ভিটামিন, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড মজবুত করতে সহায়তা করে।
জন্মের সময় শিশুর কোনো ধরনের ত্রুটি এড়াতে গর্ভধারণের অন্তত এক মাস আগে থেকে নারীদের প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে বলে দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করাটা ভালো। এর কারণ, নিউরাল টিউব যা গর্ভধারণের তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে পরিণত হয়। ওই সময়ে অধিকাংশ নারী বুঝতেও পারেন না যে তিনি গর্ভবতী।
৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যতালিকা না থাকলেও, স্বাস্থ্যকর খাবার একজন নারীর দেহে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে সুষম অবস্থা বজায় রেখে গর্ভধারণে সহায়তা করে। এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, সুষম প্রোটিন, বার্লি-ওটমিল জাতীয় হোল গ্রেইন, দুগ্ধজাত পণ্য ও চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
ফলিক এসিডযুক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পাশাপাশি একজন নারী সবুজ শাক-সবজি, ব্রকোলি, ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত রুটি ও সিরিয়াল, বিনস, লেবু জাতীয় ফল ও কমলার রস খেতে পারেন।
মেয়ো ক্লিনিকের মতে, গর্ভধারণের প্রক্রিয়া শুরুর সময় পারদের উচ্চ মাত্রা সমৃদ্ধ মাছ কম খাওয়া উচিত। এর কারণ পারদ গর্ভবতী নারীর রক্ত প্রবাহে মিশে যেতে পারে, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পারদযুক্ত খাদ্য গ্রহণ নারী ও পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনতে পারে।
কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থায় নারীদের ক্যাফিন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গর্ভবতী নারী যদি ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন (দুই কাপ কফির কম) পান করেন তাহলে গর্ভের সন্তানের কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ২০২০ সালে বিএমজে এভিডেন্স বেজড মেডিসিনের রিভিউ গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারী বা সন্তান গ্রহণের ইচ্ছুক নারীদের জন্য ক্যাফিনের কোনো নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রা নেই।
৭. কঠিন বা ভারী ব্যায়াম কমানো
২০২০ সালের মার্চে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালের প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিদিনের শারীরিক সক্রিয়তা একজন নারীর দেহকে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত করে। এতে করে তাদের জন্মদান ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যাও কমিয়ে দেয়।
তবে লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, যে সব নারী অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন বা নিয়মিত ভারী কাজ করেন তাদের ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
যে সব নারী ভারী ব্যায়াম করেন তাদের রজঃচক্রে ব্যাঘাত ঘটতে দেখেছেন চিকিৎসকেরা। লাইভসায়েন্সকে পাভোন বলেন, নারী গর্ভধারণ করতে চাইলে ব্যায়ামের পরিমাণ কমাতে হবে।
৮. বয়স বাড়লে কমে উর্বরতা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বা উর্বরতা কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকা ডিম্বাণু ও মান কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস, ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লক ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। যে কারণে উর্বরতা কমে যেতে পারে।
পাভোন বলেন, ‘৩০ বছরের পর নারীদের জন্মদান ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৭ বছরের পর তা আরও কমে যায় এবং ৪০ এর পর তা অনেকখানি হ্রাস পায়।‘
হ্রাস পাওয়ার অর্থ গর্ভধারণে বেশি সময় লাগতে পারে।
৯. ধূমপান ও মদ্যপানে ক্ষতি
ধূমপানের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমেরিকান সোসাইটি অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, সিগারেটের নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো রাসায়নিক নারীর ডিম্বাণু নষ্ট হওয়ার হারকে ত্বরান্বিত করে।
মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান নারীর ডিম্বাশয়ের জীর্ণতা তৈরি করে এবং দ্রুত এর ডিম্বাণুকে নিঃশেষ করে দেয়। ২০২০ সালে রিপ্রোডাকটিভ বায়োলজি অ্যান্ড এন্ডক্রাইনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জন্মদান ক্ষমতা হ্রাসের সঙ্গে ধূমপানের যোগাযোগ রয়েছে।
বিএমজে জার্নালে ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, নারীদের সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোক (পরোক্ষ ধূমপান) থেকেও দূরে থাকা উচিত। পরোক্ষ ধূমপানও গর্ভধারণের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থা বা গর্ভ ধারণ প্রক্রিয়ায় থাকার সময় মারিজুয়ানা গ্রহণ থেকেও বিরত থাকা উচিত।
গর্ভধারণের ইচ্ছা থাকলে মদ্যপানে ইস্তফা দেয়াটি নিরাপদ। তবে, ২০০৯ সালে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে ১,৭০৮ জন নারীকে নিয়ে ডেনিশ বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বিজ্ঞানীদের দাবি, পাঁচ বছর ধরে চলা তাদের গবেষণায় নিয়মিত মদ্যপান, অত্যাধিক মদ্যপান ও জন্মদানের ক্ষমতার মধ্যে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক নারী গর্ভাবস্থায়, গর্ভধারণের ঠিক আগে বা যখন তারাও জানেন না যে গর্ভধারণ করতে যাচ্ছেন সে সময় মদ্যপান করেন।
দ্য আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজির মতে, মাঝারি মাত্রায় মদ্যপান (দিনে ১-২ বার) বা বেশি মদ্যপান (দিনে দুই বা ততোধিকবার মদ্যপান) একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পাভোনও একমত এ বিষয়ে। তার মতে, গর্ভধারণের পর নিরাপদ মাত্রায় মদ্যপান বলে কিছু নেই।
১০. কখন সাহায্য লাগবে সেটা জানুন
পাভোন বলেন, ‘নারীর বয়স ৩৫ বছরের ওপরে হলে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পর ছয় মাসের মধ্যে সন্তানসম্ভবা না হলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।’
পাভোনের মতে, যে সব নারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে, তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পরেও গর্ভধারণ করতে না পারলে তার সঙ্গীর বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে করণীয়
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত সমস্যা। নারীর বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ এটি। আমেরিকায় প্রজননক্ষম ৬-১২ শতাংশ নারী এ রোগে ভোগেন।
পিসিওএস চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসকেরা নিচের তিনটি লক্ষণের অন্তত দুটি খোঁজার চেষ্টা করেন:
ওভুলেশন হ্রাস পাওয়ায় পিরিয়ড না হওয়া অথবা অনিয়মিত হওয়া।
সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি পুরুষ হরমোনের কারণে মুখে ও শরীরে পশমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট হওয়া।
নারীরা কেন এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিষ্কার নন। তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ে অনেকের মধ্যে সমস্যগুলো ধরা পড়ে।
পিসিওএসজনিত বন্ধ্যাত্ব ও ওজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। থেরাপিউডিক অ্যাডভান্সেস ইন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়, পিসিওএসে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ নারী অতিরিক্ত ওজন বা ওবিসিটিতে ভুগছেন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে সক্ষম।
মেটফরমিন ও লেট্রোজোলের মতো অনেকগুলো ওষুধ ওভুলেশনে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ইনসুলিনের মাত্রা উচ্চ হলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ওভুলেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং। আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের তথ্য অনুসারে, এ পদ্ধতিতে একজন সার্জন বাড়তি হরমোন কমাতে ডিম্বাশয়ে ছোট কয়েকটি ফুটো করে দেন। তবে রোগীকে পুরো অজ্ঞান করে করা এ সার্জারি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। অনেক সময় এতে ডিম্বাশয়ের ক্ষতি হতে পারে, যা হিতে বিপরীত ফল ডেকে আনতে পারে।
বিকল্প পদ্ধতিগুলো কাজ না করলে চিকিৎসকেরা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (টেস্ট টিউব বা এ ধরনের কোনো পদ্ধতিতে গর্ভধারণ) করার অনুমোদন দেন।
এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্তদের গর্ভধারণ
প্রজননতন্ত্রের আরেকটি রোগ এনডোমেট্রিওসিস। আমেরিকায় প্রতি ১০ জন নারীর একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে জরায়ুতে পাওয়া টিস্যু নারীর ডিম্বাশয় বা ফেলোপিয়ান টিউবেও তৈরি হতে শুরু করে।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৃদু এনডোমেট্রিওসিসও প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে তা নারীর শ্রোণি অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফেলোপিয়ান টিউবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
এনডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীর পক্ষেও গর্ভধারণ করা সম্ভব। আর একবার গর্ভবতী হলে এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নন এমন নারীর সঙ্গে তার গর্ভাবস্থার কোনো পার্থক্য নেই।
যুক্তরাজ্যের এনডোমেট্রিওসিস সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসায় প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না। আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের মতে, এই ওষুধগুলোর মাধ্যমে রোগীর হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে করে তার জরায়ুর টিস্যুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং নতুন টিস্যু তৈরিতেও বাধা সৃষ্টি করে। তবে ওষুধগুলো হরমোনের ওপর নির্ভরশীল বলে (এগুলো সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ, ওভুলেশন পদ্ধতিকে আটকে দেয়া বা অ্যাস্ট্রোজেনের পরিমানকে কমানোর ওষুধ) এটি নারীর গর্ভধারণে বাধা দেয়।
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, একেক নারীর ওপর এনডোমেট্রিওসিস একেকভাবে প্রভাব ফেলে। যে কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের গবেষণাটিতে দেখা গেছে, এনডোমেট্রিয়াল ও স্কার টিস্যু সার্জারি করে আপসারণ করলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়তে পারে এবং এনডোমেট্রিওসিসের ব্যথা দূর করতে পারে।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যান্য পদ্ধতি যেমন, আইভিএফ, ওভুলেশন ঘটানো, কৃত্রিম ইনসেমিনেশন ও নারীর ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করে ডিম্বাণু উৎপন্ন করার অন্য প্রক্রিয়াগুলো একজন এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নারীকে গর্ভধারণে সহায়তা করতে পারে।
তবে বিষয়টি এনডোমেট্রিওসিসের তীব্রতা, নারীর বয়স ও প্রজনন সংক্রান্ত অন্যান্য কোনো জটিলতা আছে কি না তার ওপর নির্ভরশীল। এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর চিকিৎসায় চিন্তার বিষয় হচ্ছে এর মাধ্যমে অনেক সময় ডিম্বাশয় বাড়তি উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এতে একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় এবং একাধিক সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে সেবার মান উন্নয়নে বিটিআরসি নতুন কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা অনুমোদন করেছে। বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি এই বেঞ্চমার্ক সম্প্রতি কমিশন বৈঠকে মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন এবং আইএসপি সেবাদাতাদের জন্য পাস হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ফোরজি নেটওয়ার্কে সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতি ১০ এমবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে। তদারকির জন্য বিটিআরসি প্রতি মাসে নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্স ও হেলথ চেক করবে, যা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন কিউওএস নীতিমালায় অপারেটরদের মাসিক রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এসব সূচক মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অ্যাক্সেসিবিলিটি, রিটেইনেবিলিটি এবং নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রিটি। সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা ৫০টি সেল আলাদা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে দুর্বল এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত ও সমাধান করা যায়।
ফিক্সড ইন্টারনেট ও টেলিফোনি ক্ষেত্রে কলড্রপ সর্বাধিক ১%, কল সেটআপ সাফল্য ৯৯%-এর বেশি এবং সংযোগ সময় ৬ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
ইন্টারনেটে লোকাল ট্র্যাফিক সংযোগ সময় সর্বোচ্চ ২৫ এমএস, ডেটা হারানোর হার ১%-এর মধ্যে এবং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা ৯৯% বা তার বেশি রাখতে হবে।
গ্রাহকসেবা মানদণ্ডও কঠোর করা হয়েছে। নেটওয়ার্ক-সংক্রান্ত নয় এমন অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে সমাধান করতে হবে। গ্রাহকসেবা সেন্টারে আসা ৯০% কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং সব কল ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ এ খবর নিজেই নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘নতুন নীতিমালার মাধ্যমে অপারেটরদের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে এবং দেশের গ্রামীণ ও শহরতলিসহ সব অঞ্চলে সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।’
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিউ এনার্জি ভেহিকল (এনইভি) উৎপাদক বিওয়াইডি তাদের প্রিমিয়াম সাব-ব্র্যান্ড ইয়াংওয়াংয়ের মাধ্যমে অনন্য মাইলফলক স্থাপন করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতির রেকর্ড স্থাপন করেছে ইউ৯ ট্র্যাক সংস্করণ; জার্মানির এটিপি টেস্ট ট্র্যাকে এ মাসের শুরুতে ৪৭২.৪১ কিলোমিটার/ঘণ্টা (২৯৩.৫৪ মাইল/ঘণ্টা) গতির অনন্য মাইলফলক অর্জন কর গাড়িটি।
গাড়িটিতে বিশ্বের প্রথম বহুলভাবে উৎপাদিত ১২০০ ভোল্ট আলট্রা-হাই ভোল্টেজ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে; একইসাথে, ট্র্যাকের এক্সট্রিম অবস্থাতেও পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজ রাখতে সক্ষম এমন উদ্ভাবনী ডিজাইনের ভেহিকল থার্মাল ম্যানেজমেন্ট সল্যুশন ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির ই৪ পাওয়ারট্রেইন বিশ্বের প্রথম কোয়াড-মোটর প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ৩০,০০০ আরপিএম (রেভ্যুলুশনস পার মিনিট) হাই-পারফরম্যান্স মোটর ব্যবহার করা হয়েছে, যার প্রতিটি ৫৫৫ কিলোওয়াট পিক পাওয়ার আউটপুট উৎপন্ন করতে সক্ষম।
মোট ৩,০০০ পিএসের (হর্সপাওয়ার) চেয়েও বেশি পাওয়ার আউটপুট সহ গাড়িটি অসাধারণ পাওয়ার-টু-ওয়েট রেশিও ১,২১৭ পিএস/টি (হর্সপাওয়ার/টন) অর্জন করে, যা এই খাতের সর্বোচ্চ মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়। এই পাওয়ারট্রেইন গাড়িটিকে ১,২৮৮ হর্সপাওয়ার এবং ১,৬৮০ এনএম (নিউটন-মিটার) অব টর্ক উৎপন্ন করার সক্ষমতা প্রদান করে, যা গাড়িটিকে মাত্র ২.৩৬ সেকেন্ডে ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে পৌঁছাতে সক্ষম করে তোলে।
এর আগে গত বছর আগস্টে, ইয়াংওয়াং ইউ৯ ট্র্যাক টেস্টিংয়ের সময় ৩৭৫.১২ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে পৌঁছায় এবং অক্টোবর মাসে ৩৯১.৯৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতি অর্জন করে। রেকর্ড-ব্রেকিং এই গতিগুলো চীনের উচ্চগতি সম্পন্ন রেলের ৩৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিকেও অতিক্রম করে যায়; দ্রুতগতির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য বিমান ভ্রমণের বাইরে এটিই সবচেয়ে অনবদ্য অভিজ্ঞতা।
অসাধারণ এ অর্জন সম্পর্কে বিওয়াইডি বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ নওশের বলেন, “এটি কেবল গতির বিষয় নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে যাওয়া। এই অর্জন প্রযুক্তি ও উচ্চগতির পারফরম্যান্সের সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিওয়াইডি’র প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরে; এটি বৈশ্বিক অটোমোটিভ খাতে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।”
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে বিওয়াইডি’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/byd.com.bd ভিজিট করুন।
তরুণদের পছন্দের স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি এবার এন্ট্রি-লেভেলের সাশ্রয়ী অথচ পাওয়ারহাউজ স্মার্টফোন নোট ৭০ নিয়ে এসেছে। ডিভাইসটিতে থাকা ৬৩০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের সুবিশাল ব্যাটারি দিচ্ছে মাত্র ১ বার পূর্ণ চার্জে ২ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের সুবিধা। গত ২৪ আগস্ট থেকেই স্মার্টফোনটি সারাদেশে পাওয়া যাচ্ছে।
ডিভাইসটির সুবিশাল ব্যাটারির সাথে ১৫ ওয়াট চার্জিং সক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে, যেন সারাদিন ফোন চার্জের বিষয়ে ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত রাখা যায়। রিয়েলমি নোট ৭০ এ মিলিটারি-গ্রেড শক রেজিজট্যান্স ও আইপি৫৪ ডাস্ট অ্যান্ড ওয়াটার রেজিজট্যান্স ব্যবহার করা হয়েছে, যা একই প্রাইস রেঞ্জে থাকা অন্যান্য ফোনের তুলনায় এটিকে আরও বেশি ডিউরেবল করে তুলেছে। শক্তিশালী ব্যাটারির পাশাপাশি, মাত্র ২০১ গ্রাম ওজনের অত্যন্ত হালকা এই ডিভাইসটি ৭.৯৪ মিলিমিটারের আলট্রা-স্লিম ডিজাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে এর আগের ভার্সনের চেয়ে উন্নত, ইউনিসক টি৭২৫০ অক্টাকোর চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। একইসাথে, দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে নিয়ে আসা হয়েছে অনন্য ৬.৭৪ ইঞ্চির ডিসপ্লে।
রিয়েলমি নোট ৭০ এ রয়েছে ১৩ মেগপিক্সেলের এআই রেয়ার ক্যামেরা ও ৫ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। এছাড়া, সবসময় আপনাকে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে পালস লাইট ফিচার। ডিভাইসে অডিও শোনার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করতে এতে ৩০০% আলট্রা ভলিউম ব্যবহার করা হয়েছে। চোখের প্রশান্তি নিশ্চিতে নিয়ে আসা হয়েছে ৯০ হার্জ আই কমফোর্ট ডিসপ্লে। এই সেগমেন্টের বাকি ফোনগুলোর তুলনায় এটির ডিসপ্লেই সবচেয়ে ব্রাইট।
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে এতে এআই নয়েজ রিডাকশন ২.০, এআই ক্লিয়ার ফেস, এআই ইমেজিং ম্যাটিং ও এআই ইরেজারের মতো সর্বাধুনিক এআই ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এতে করে এখন আরও ক্লিয়ার কল, উন্নত ছবি ও আধুনিক এডিটিং অপশন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। রিয়েলমি নোট ৭০ ডিভাইসটি দুইটি ভ্যারিয়েন্টে নিয়ে আসা হয়েছে – ৪ জিবি ও ৬৪ জিবি ডিভাইসটির দাম মাত্র ১১,৯৯৯ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য) এবং ৪ জিবি ও ১২৮ জিবি ডিভাইসটির দাম মাত্র ১২,৯৯৯ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য)
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো দেশের বাজারে এর রেনো১৩ এফ ডিভাইসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে। এই সেগমেন্টের স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির জন্য ইতোমধ্যে সাড়া জাগানো এই ডিভাইসটির দাম এখন ৩০,৯৯০ টাকা মাত্র, আগে যার দাম ছিলো ৩৪,৯৯০ টাকা।
ব্যবহারকারীদের জন্য সব জায়গায়, এমনকি পানির নিচেও নিখুঁতভাবে ছবি তোলা নিশ্চিত করার উপযোগী করে রেনো১৩ এফ ডিজাইন করা হয়েছে। এর আইপি৬৯-রেটেড ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিজট্যান্স পানির ২ মিটার নিচেও ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিখুঁত ও ঝকঝকে ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফির নিশ্চয়তা দেয়। অপোর সর্বাধুনিক এআই কালার ক্যালিব্রেশন প্রযুক্তি প্রতিটি শটেই প্রাণবন্ত টোন, নিখুঁত ফোকাস ও কনট্রাস্ট নিশ্চিত করে; ফলে, এখন অতিরিক্ত কোনো ডিভাইস ছাড়াই পানিতে কাটানো সকল মুহূর্ত স্মৃতিতে ধরে রাখা সম্ভব হবে।
প্রথাগত ফটোগ্রাফিতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে এতে এআই লাইভ ফটো ফিচার নিয়ে আসা হয়েছে, যেখানে শাটারের আগে ও পরে টাইম ক্যাপসুল ধারণ করা হয়। এতে এআই ডি-ব্লারিং, ইআইএস ও ভিজ্যুয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে শট স্ট্যাবিলাইজ করা হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মোশন বাদ দেয়া হয়; ফলে, ব্যবহারকারীর তোলা প্রতিটি মুহূর্তই হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও ন্যাচরাল। ডিভাইসটিতে এআই ক্ল্যারিটি এনহান্সার, এআই আনব্লার, এআই রিফ্লেকশন রিমুভার ও এআই ইরেজার ২.০ এর মতো শক্তিশালী টুল সহ এআই এডিটর ২.০ নিয়ে আসা হয়েছে, যা ক্রিয়েটরদের স্মার্টফোনেই পেশাদার পর্যায়ের এডিটিং সক্ষমতা নিশ্চিত করে।
পারফরম্যান্স ও কানেক্টিভিটি নিশ্চিতে অপো রেনো১৩ এফে নাইন ৩৬০ ডিগ্রি এন্টেনা, ডুয়েল-চ্যানেল ওয়াইফাই, ব্লুটুথ অ্যাক্সেলারেশন ও ওয়াইফাই পজিশনিং সহ এআই লিঙ্ক বুস্ট ২.০ নিয়ে আসা হয়েছে, যা জনবহুল বা লো-কাভারেজ এলাকাতেও শক্তিশালী ও নিরবচ্ছিন্ন সিগনাল নিশ্চিত করবে। ব্যবহারকারীরা ডকুমেন্টস অ্যাপের মতো এআই-নির্ভর প্রোডাক্টিভিটি টুল ব্যবহার করে টেক্সট সামারাইজ ও এডিট করার সুযোগ পাবেন, এআই নোটস অ্যাসিসট্যান্ট ব্যবহার করে ফরম্যাট ও এক্সপানশন করতে পারবেন; এছাড়াও, মাল্টিলিঙ্গুয়াল সাপোর্টের জন্য আপগ্রেডেড এআই টুলবক্স ২.০ ব্যবহার করতে পারবেন। একইসাথে, ও+ কানেক্ট ব্যবহার করে অপো ও আইওএস ডিভাইসে ফটো, ভিডিও ও ফাইল নিরবচ্ছিন্নভাবে শেয়ার করতে পারবেন। পাশাপাশি, অপো বিশ্বের সেই দুইটি ব্র্যান্ডের একটি যেখান থেকে ব্যবহারকারীরা টিকটক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি লাইভ ফটো আপলেড করতে পারেন।
এসমস্ত উদ্ভাবনের পাশাপাশি, রেনো১৩ এফে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট সহ ৬.৬৭ ইঞ্চি ওএলইডি ডিসপ্লে, ৪৫ ওয়াট সুপারভুক ফাস্ট চার্জিং সুবিধা সহ ৫৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের সুবিশাল ব্যাটারি এবং ৮ জিবি র্যাম (আরও ৮ জিবি বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ সহ) ও ২৫৬ জিবি রম ব্যবহার করা হয়েছে। শক্তিশালী পারফরম্যান্সের সাথে স্টাইল নিশ্চিত করতে অনন্য এই ডিভাইসটি প্লুম পার্পল ও গ্রাফাইট গ্রে-এর মতো দুইটি অনবদ্য রঙে নিয়ে আসা হয়েছে।
এ বিষয়ে অপো বাংলাদেশ অথোরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, “অপো রেনো১৩ এফ সকলের হৃদয় জয় করে নেয়ার পর আমরা এই উদ্ভাবনকে আরও বেশি সহজলভ্য করতে পেরে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। এর ফলে, আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে এআই ক্রিয়েটিভিটি, সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও মানুষের কাছে এই প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা পৌঁছে যাবে। এই সাশ্রয়, প্রযুক্তি সহজলভ্য করা এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।”
যুগান্তকারী আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি, এআই ক্রিয়েটিভিটি ফিচার ও প্রতিদিনের অনবদ্য পারফরম্যান্সের পাশাপাশি, অপো রেনো১৩ এফের মতো ডিভাইস মাত্র ৩০,৯৯০ টাকায় পাওয়া যাওয়ার এই সুযোগ টেক-প্রেমী ও ক্রিয়েটরদের জন্য বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে নতুন মানদণ্ড নিশ্চিত করেছে। আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন – https://www.oppo.com/bd/smartphones/series-reno/reno13-f-4g/।
বর্তমানে প্রযুক্তি-নির্ভর সেবায় প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু হার্ডওয়্যার ক্রয় করেই দায়িত্ব শেষ করে না, বরং সেই ডিভাইসের নিরবচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতেই বেছে নেয় অ্যানুয়াল মেইনটেন্যান্স কনট্রাক্ট (এএমসি) সেবা। এ ধরনের কনট্রাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ও অন্যান্য আইটি ডিভাইসসমূহ নিরাপদ এবং কার্যক্ষম থাকে। এই এএমসি সার্ভিসকে আরো সহজলভ্য করছে ‘সার্ভিসিং২৪ ক্লায়েন্ট’ অ্যাপ। ওয়েব ও মোবাইলভিত্তিক এই অ্যাপ সল্যুশন্সের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
সাধারণত অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিগুলোর এএমসি সেবা বেশ ব্যয়বহুল ও নির্দিষ্ট শর্তাধীন হয়। সেখানে এসএলএ, রেসপন্স টাইম, অথবা হার্ডওয়্যার রিপ্লেসমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেক সময় সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। তাছাড়া পুরোনো মডেলের ইকুইপমেন্টগুলোর জন্য স্পেয়ার পার্টস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যা সিস্টেম ডাউনটাইমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া- একই ডেটা সেন্টারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হার্ডওয়্যার থাকলে ওইএম সাধারণত কেবল তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়েই কাজ করে। এতে কো-অর্ডিনেশন প্রবলেম হয়।
আরও যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, অতিরিক্ত খরচ, দীর্ঘ ডাউনটাইম, সীমিত কভারেজ (শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড বা মডেল), স্পেয়ার পার্টস দীর্ঘ ডেলিভারি টাইম, অন-সাইট সাপোর্টে দেরি, পুরোনো মডেলের ইওএল/ইওএসএল পণ্যে সাপোর্ট না থাকা ইত্যাদি।
তাই থার্ড পার্টির সেবার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ও অন্যান্য আইটি ডিভাইসসমূহ নিরাপদ এবং কার্যক্ষম রাখতে ঝুঁকছে কোম্পানিগুলো। সার্ভিসিং২৪ এর থার্ড-পার্টি এএমসি সেবা হচ্ছে, একটি কাস্টমাইজড ও ব্যয় সাশ্রয়ী সেবা, যা শুধু হার্ডওয়্যার মেইনটেন্যান্স নয়, বরং গ্রাহকের হাতে পুরো সিস্টেমের স্মার্ট কন্ট্রোল তুলে দিচ্ছে।
এর মাধ্যমে তারা পাচ্ছেন- রিয়েল টাইম সার্ভিস ট্র্যাকিং, সার্ভিস রিপোর্ট ও এএমসি স্ট্যাটাস মনিটরিং, স্পেয়ার পার্টস রিকোয়েস্ট ও টিকিট ম্যানেজমেন্ট, দ্রুত ও সহজ ইন্টারফেস, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্ক ডিভাইসের জন্য একীভূত এএমসি সাপোর্ট।
গ্রাহকরা আরো পাবেন- ইওএল/ইওএসল, প্রোডাক্টের জন্য বিশেষায়িত সাপোর্ট ও স্পেয়ার পার্টস, দ্রুত অন-সাইট সার্ভিস — এসএলও অনুযায়ী, পার্ট রিপ্লেসমেন্ট, ট্রাবলশু্যটিং ও ফার্মওয়্যার আপডেট সহ সম্পূর্ণ কভারেজ, ২৪/৭ হেল্পডেস্ক ও টেলি-সাপোর্ট, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা সার্ভিস প্রদান, ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব টেক সল্যুশন ইত্যাদি।
পাশাপাশি সার্ভিসিং২৪ এর এই অ্যাপ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকরা খুব সহজেই টিকিট তৈরি করা থেকে শুরু করে আইটি সিস্টেমের সকল ধরনের আপডেট, রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং ও মনিটরিং—সবকিছু এক জায়গা থেকেই জানতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
এই অ্যাপভিত্তিক সেবা সম্পর্কে ‘সার্ভিসিং২৪’-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নাসির ফিরোজ বলেন, “আমাদের সার্ভিস আরো নির্বিঘ্ন করতে আমরা অ্যাপভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ সুল্যশন্স এনেছি। এতে সেবাগ্রহীতাদের আর কোনো বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হবে না। ক্লায়েন্ট ও ইউজারদের ফিডব্যাক এই অ্যাপের পরবর্তী হালনাগাদের জন্য আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি তারা এই সলুশ্যন এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।”
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড অপো এর সর্বশেষ ডিউরেবল পাওয়ারহাউজ অপো এ৫ (৬ জিবি + ১২৮ জিবি) বাংলাদেশে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। মাত্র ১৯,৯৯০ টাকার অবিশ্বাস্য মূল্যের এই ডিভাইসটি সারাদেশে অপোর অনুমোদিত স্টোরগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে। যারা একটি ডিভাইসের মধ্যে শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও অসাধারণ পারফরম্যান্স চান, তাদের জন্য এই ডিভাইসটি একদম যথার্থ হবে।
ইন্ডাস্ট্রি-সেরা ডিউরেবিলিটি হচ্ছে অপো এ৫-এর মূল বিষয়। এর পাশাপাশি, হঠাৎ ছিটে আসা পানি বা ধুলাবালি থেকে সুরক্ষিত রাখতে এতে ব্যবহৃত আইপি৬৫ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিজট্যান্স আপনার লাইফস্টাইলকে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলবে। এর ১৪-স্টার মিলিটারি-গ্রেড শক রেজিজট্যান্স ফোনটিকে হাত থেকে পড়ে যাওয়া বা কোণায় আঘাত পাওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখবে; একইসাথে, মর্যাদাপূর্ণ এসজিএস গোল্ড সার্টিফিকেশন থেকে বোঝা যায় যে, ডিভাইসটি যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য একদম উপযুক্ত। ফোনটি কেবল জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোতে আপনাকে সঙ্গ দিবে না, বরং আপনার পারফরম্যান্সকেও একইসাথে নির্ভুল ও নিশ্চিন্ত রাখবে।
এছাড়াও, ফোনটিতে ৬,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের সুবিশাল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল ৫ বছরের জন্য ধারাবাহিক পারফরম্যান্স নিশ্চিতই করবে না, এটিকে টানা ধরেও রাখবে। এর সাথে থাকা ৪৫ ওয়াটের সুপারভুক ফ্ল্যাশ চার্জের কারণে ডিভাইসটি মাত্র ১৯ মিনিটে ৩০ শতাংশ ও ৩৬ মিনিটে ৫০ শতাংশ চার্জ গ্রহণ করতে সক্ষম। ফলে, এখন গেমিং হোক বা স্ট্রিমিং, চার্জ ফুরাতে কম সময় লাগবে, অথচ চার্জ হতে সময় লাগবে খুব কম।
পাশাপাশি, এআই ক্যামেরা সিস্টেমের মাধ্যমে অনবদ্য ফটোগ্রাফির সুযোগ নিয়ে এসেছে অপো এ৫। এর ৫০ মেগাপিক্সেলের মেইন ক্যামেরা নিখুঁত ও ঝকঝকে ছবি ধারণ করে, যেখানে ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ ক্যামেরা পোর্ট্রেটে প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে। একইসাথে, এর ৫ মেগাপিক্সেলের এআই সেলফি ক্যামেরা প্রতিটি শটকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে; আর এআই ইরেজার ২.০ এর মতো ফিচার, মাত্র কয়েকটি ট্যাপে ছবির অনাকাঙ্ক্ষিত অংশ সরিয়ে মুহূর্তেই এডিট করার সুযোগ দেয়।
মিলিটারি-গ্রেডের টেকসই হলেও, অপো এ৫ দেখতে বেশ স্লিক ও স্টাইলিশ। এর আলট্রা-ব্রাইট ১,০০০ নিট ডিসপ্লে প্রখর সূর্যালোকেও প্রাণবন্ত ভিজ্যুয়াল নিশ্চিত করে। মিস্ট হোয়াইট ও অরোরা গ্রিন, দুইটি অনন্য রঙে পাওয়া যাচ্ছে ডিভাইসটি। শহরে হোক বা ঘরের বাইরে, সারাদিন ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা এই স্মার্টফোনটি বেশ হালকা ও হাতে ধরতে আরামদায়ক।
অপো এ৫-এ আরও ব্যবহার করা হয়েছে ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ, যা স্মুথ মাল্টিটাস্কিং ও কনটেন্টের জন্য পর্যাপ্ত স্পেস নিশ্চিত করে। অপোর সিস্টেম-লেভেল অপটিমাইজেশনের কারণে এটি এমন একটি ডিভাইস হয়েছে যা একইসাথে, টেকসই ও নির্ভরযোগ্য।
এ বিষয়ে অপো বাংলাদেশ অথরাইজড এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেমন ইয়াং বলেন, “অপোতে আমাদের ক্রেতারা সবসময় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পান। অপো এ৫-এর মাধ্যমে, বাংলাদেশের আরও বেশি ব্যবহারকারী ডিউরেবল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন, পারফরম্যান্স বা মানের সাথে কোনোপ্রকার আপস করা ছাড়াই।”
অপো এ৫ কেবল একটি স্মার্টফোন নয়; এটি শক্তি ও সহনশীলতার সাবলীল প্রতীক। অ্যাডভেঞ্চারার হোক, বা কোনো ব্যস্ত পেশাজীবী বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর; আপনার প্রতিদিনের সাথে তালমিলিয়ে চলতেই নিয়ে আসা হয়েছে অনবদ্য এই ফোন। আরও বিস্তারিত জানতে অপো বাংলাদেশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ facebook.com/OPPOBangladesh বা ওয়েবসাইট www.oppo.com/bd ভিজিট করুন।
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন করে লক্ষ লক্ষ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। তবে প্রাণিসম্পদ খাতটি এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষ করে রোগ নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা, টিকা প্রয়োগ এবং তথ্যের অভাবে খামারিরা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এই প্রেক্ষাপটে ‘ডিজিটাল খামারি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ প্রাণিসেবায় এনেছে প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব। বাংলাভাষায় নির্মিত এই অ্যাপটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।
অ্যাপটি খামারিদের জন্য সহজবোধ্য ও চিত্রসহ তথ্য দিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। এটি একটি সচেতনতামূলক ও শিক্ষামূলক অ্যাপ, যা খামারিদের প্রযুক্তির সহায়তায় নিজের খামারের সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিতকরণ ও প্রাথমিকভাবে সমাধানে সক্ষম করে তোলে।
অ্যাপটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ভাষা ও চিত্রভিত্তিক ফিচার। যেসব খামারি লেখাপড়ায় দুর্বল, তারাও ছবির মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করতে পারবেন। এতে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির সাধারণ ও জটিল রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। প্রতিটি রোগের সাধারণ চিকিৎসা পরামর্শ ও টিকা সংক্রান্ত তথ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাপটির মাধ্যমে খামারিরা জানতে পারবেন, কোন রোগে কী লক্ষণ দেখা যায়, কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, টিকা দেওয়ার সঠিক সময় ও স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের খোঁজ। এতে প্রাণির মৃত্যু হার কমবে, চিকিৎসার খরচ বাঁচবে এবং খামারির আর্থিক ক্ষতিও হ্রাস পাবে।
অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে পশু চিকিৎসকের অভাব প্রকট। অনেক সময় দূরবর্তী হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ডিজিটাল খামারি অ্যাপে স্থানীয় চিকিৎসকের নাম-ঠিকানাসহ যোগাযোগের তথ্যও রয়েছে, যা খামারিদের জন্য একটি বড় সুবিধা। খামারিরা এখন অ্যাপে জানতে পারেন, গরুর ওলান ফোলা কেন হয়, কৃমিজনিত রোগের লক্ষণ কী কিংবা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন রোগ হলে করণীয় কী।
গুগল প্লে স্টোর হতে ‘Digital Khamari’ নামে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এরপর ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। এতে আরও যুক্ত করা হয়েছে, সচেতনতামূলক কনটেন্ট, রোগভিত্তিক চিকিৎসা নির্দেশনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক তথ্য।
অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান আরো জানান, ভবিষ্যতে অ্যাপে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল, আরও রোগভিত্তিক তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং প্রতিদিনের খামার ব্যবস্থাপনার ক্যালেন্ডার ফিচার যুক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অ্যাপটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে যাতে এটি আরও ব্যবহারবান্ধব ও কার্যকর হয়।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে তৈরি এই অ্যাপ প্রাণিসেবা খাতে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ এবং গ্রামীণ উন্নয়নের বাস্তব উদাহরণ। এটি শুধু তথ্য নয়, একটি আত্মনির্ভর খামারি তৈরির সহায়ক হাতিয়ার। সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়লে তা খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং পুষ্টি উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ, একটি সুস্থ প্রাণি শুধু একটি পরিবারের নয়, একটি জাতিরও সম্পদ।
মন্তব্য