গর্ভধারণের সঠিক ও কার্যকর উপায় বলতে গেলে নানা রহস্যে ঘেরা। ফলে গর্ভধারণে সক্ষম নারীও অনেক সময় জটিলতায় ভুগতে পারেন। আবার খাদ্যাভ্যাসসহ কিছু শারীরিক কারণেও বিলম্বিত হতে পারে গর্ভধারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার আগে জানতে হবে নিজের শরীরকে। যত্ন নিতে হবে শরীরের। এ ছাড়া কিছু অভ্যাস মেনে চললে গর্ভধারণের জটিলতা অনেকটাই কমে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনস রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের কৃত্রিম প্রজনন শাখার পরিচালক ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোনের মতে, গর্ভধারণে আগ্রহী নারীর জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো নিজের শরীর, বিশেষত ঋতুচক্রকে জানা।
পাভোন বলেন, ‘ঋতুচক্রের বিরতি কত দিনের সেটা সবার আগে জানা দরকার। এতে করে নারী তার যৌন মিলনের সময় নির্দিষ্ট করতে পারবেন ও গর্ভধারণের চেষ্টা চালাতে পারবেন।’
বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে ১০টি সহায়ক কৌশলের কথা বলা হয়েছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য বাংলায় প্রকাশ করা হচ্ছে কৌশলগুলো।
১. ঋতুচক্রের পুনরাবৃত্তির তথ্য সংরক্ষণ
সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক নারীর প্রতি মাসে তার পিরিয়ডের প্রথম দিনটির তারিখ লক্ষ রাখা উচিত। প্রতি মাসেই সমান দিনে পিরিয়ড শুরু হলে তা নিয়মিত বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এর হেরফের হলে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হয়। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালেন্ডারে এ তথ্যের ভিত্তিতে নারীর ওভুলেশন কখন হচ্ছে, তা অনেকটা সঠিকভাবে অনুমান করা যায়। ওভুলেশন হচ্ছে নারীর ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম নিঃসরণ। ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর সেটি ফেলোপিয়ান টিউবের নিচের দিকে চলে যায়, আর সেখানেই শুক্রাণু কোষ এই ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।
ঋতুচক্রের পুরো বিষয়টি হিসাবে রাখতে গ্লোওভুলেশনের মতো বেশ কিছু পিরিয়ড ট্র্যাকার অ্যাপ অনলাইনে পাওয়া যায়। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। অন্যদিকে নারী দেহে প্রবেশের পর পুরুষের শুক্রাণু পাঁচ দিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে।
২. ওভুলেশনের দিকে দৃষ্টি রাখা
ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোন বলছেন, ‘সাধারণত পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ আগে একজন নারীর ওভুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশ্য যাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র ব্যাহত হয়, তাদের ওভুলেশনের সময় নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে সাধারণত পরবর্তী পিরিয়ডের আগের ১২ থেকে ১৬ দিন আগে এটি ঘটতে পারে।’
নেচার জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা যায়, ঋতুচক্রের দৈর্ঘ্য নারীভেদে আলাদা হতে পারে। সেই সঙ্গে নারীর রজঃশীল থাকার বছরগুলোর বিভিন্ন সময়ে ওভুলেশনের সময় ও দৈর্ঘ্যও বদলে যেতে পারে। এ কারণে ওভুলেশনের সময়কে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে নারীর গর্ভধারণ সহজ হয়। মাসের কোন সময়টি গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, সেটি বের করার অনেক উপায় আছে।
ওভুলেশন প্রেডিকশন কিটের সাহায্যে নারীর কখন ওভুলেশন হচ্ছে, সেটা অনুমান করার ঝামেলা কমে যায়। ওষুধের দোকানে বিক্রি হওয়া এ কিটগুলো মূত্রে লিউটেনাইজিং হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে। প্রতি মাসে ওভুলেশনের সময় এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু নির্গত করতে প্রস্তুত করে। আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পজিটিভ ফল আসার পরের তিন দিন কোনো দম্পতির যৌন মিলনের মাধ্যমে গর্ভধারণের জন্য সেরা সময়।
ওভুলেশন কখন হবে সেটা বের করার আরেকটি উপায় হচ্ছে সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মার দিকে খেয়াল রাখা। এই প্রক্রিয়ায় নারীর যৌনাঙ্গে শ্লেষ্মার পরিমাণ ও ধরন নিয়মিত পরীক্ষা করতে হয়।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও মার্চ অফ ডাইমসের মতে, ওভুলেশনের ঠিক আগে যখন একজন নারী সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থায় থাকেন, তখন শ্লেষ্মার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পাতলা, স্বচ্ছ ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা এভাবে পিচ্ছিল হয়ে শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে। ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, যেসব নারী ছয় মাসে নিয়মিত নিজেদের সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা পরখ করেন তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা ২.৩ ভাগ বেশি।
ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালের মতে, শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণও ওভুলেশন পর্যবেক্ষণের অন্যতম পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে বিছানা ছাড়ার আগে নির্দিষ্ট সময়ে দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে এবং প্রতিদিনের তাপমাত্রার চার্ট করতে হবে। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের মতে, নারীর ডিম্বাশয় ডিম্বাণু ছাড়ার প্রস্তুতির সময় দেহের তাপমাত্রা হালকা কমে যায়। এ সময় দেহের গড় তাপমাত্রা থাকে ৯৭ থেকে ৯৭.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৬.১ থেকে ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মধ্যে। ডিম্বাণু ছেড়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও বেশ কয়েক দিন সে অবস্থায় থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ওভুলেশনের পরপর একজন নারীর দেহের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৭.৬ থেকে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬.৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হতে পারে। তারা বলছে, ওভুলেশনের পর ডিম্বাণু ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকে।
ওভুলেশনের সময় দেহের মূল তাপমাত্রা খুব কম মাত্রায় পরিবর্তিত হয় বলে ডিজিটাল থার্মোমিটার বা বিশেষ বেজাল থার্মোমিটার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. ফার্টাইল উইন্ডোর সময় বিকল্প দিনে যৌন মিলন
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফার্টিলিটি উইন্ডো (ডিম্বাণু নিগর্ত হওয়ার প্রস্তুতি ও নির্গত হওয়ার পরে কার্যকর থাকার সময়) সাধারণত ছয় দিনের। ওভুলেশনের দিন এবং এর আগের পাঁচ দিন। প্রতি মাসে একজন নারী এই সময়টাতেই জন্মদানে সবচেয়ে বেশি সক্ষম বা উর্বর থাকেন।
অনেক নারী গর্ভধারণের সঠিক সময় জানতে ফার্টিলিটি-ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। তবে বিএমজে সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক রিভিউ অনুযায়ী, এই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কতটুকু নিখুঁত সেটা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি জার্নালে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৫০টি প্রচলিত ফার্টিলিটি ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ পরখ করে দেখেছেন। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই অ্যাপ ও সাইটগুলো প্রায়ই উদ্ভট ফল দিচ্ছিল। অনেক ফার্টিলিটি উইন্ডোর দিন-তারিখ একেবারে ভুলভাবে জানাচ্ছিল।
পাভোন বলেন, ‘ফার্টিলিটি উইন্ডোর সময়ে প্রতিদিন যৌন মিলনে অংশ নেয়া দম্পতিদের গর্ভধারণের হারে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। এই হার ৩৭ শতাংশ। ফার্টিলিটি উইন্ডোর বাইরে অন্য দিনগুলোতে যৌন মিলনে অংশ নেয়াদের ক্ষেত্রে এ হার ৩৩ শতাংশ।
পাভোনের মতে, মাসজুড়ে নিয়মিত যৌন মিলনে অংশ নিলেই বরং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের শত শত গর্ভধারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত অ্যাপ ঘেঁটে দেখেছেন। এসব অ্যাপের তথ্য ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কানাডার জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে। অ্যাপগুলোর ৩১টিতে ভুলভ্রান্তির ছড়াছড়ি ছিল। তবে কয়েকটি বেশ কার্যকর। এর মধ্যে সেরা তিনটি অ্যাপ হচ্ছে:
গ্লো.ওভুলেশন অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Glow.Ovulation & Period Tracker)
ফার্টিলিটি ফ্রেন্ড এফএফ অ্যাপ (Fertility Friend FF App)
ক্লু: হেলথ অ্যান্ড পিরিয়ড ট্র্যাকার (Clue: Health & Period Tracker)
গর্ভধারণ নিয়ে প্রচলিত অনেক মিথ রয়েছে। তবে এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া বেশ কঠিন। যেমন- অনেকে মনে করেন যৌন মিলনের সময় বিশেষ কোনো পজিশন সন্তান ধারণের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। পাভোন বলেন, যৌন মিলনের পর একজন নারীর নির্দিষ্ট সময় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার সঙ্গে তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধিরও কোনো সংযোগ নেই।
পাভোন অবশ্য বলেছেন, পানিভিত্তিক কিছু ভ্যাজিনাল লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়, যা শুক্রাণুর সচলতাকে আটকে দিতে পারে। তার পরামর্শ, লুব্রিকেন্ট প্রয়োজন হলে অ্যাস্ট্রোগ্লাইড বা কে-ওয়াই জেলির বদলে প্রি-সিড ব্যবহার করা।
৪. দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
একজন নারীর ওজন তার গর্ভধারণের সামর্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বা অনেক কম ওজন গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। পাভোন বলছেন, সাধারণ বডি মাস ইনডেক্সের (বিএমআই) একজন নারীর চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের নারীর গর্ভধারণে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগতে পারে। আর যেসব নারীর ওজন অনেক কম তাদের ক্ষেত্রে চার গুণ সময় লাগতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে তা অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন তৈরি করে। এটি ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকদের দাবি, যেসব দম্পতির দুজনই অতিরিক্ত ওজনের এবং যাদের বিএমআই অন্তত ৩৫ (বিএমআই অনুযায়ী ২৫-২৯.৯ পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন ও ৩০ এর বেশি স্থূলকায় বা ওবিস ধরা হয়) তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ দম্পতির চেয়ে ৫৫ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত সময় বেশি লেগেছে।
পিএলওএস ওয়ান জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, বিএমআই বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট সময়সীমায় নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে আসে। গবেষকরা চীনের সন্তান গ্রহণে ইচ্ছুক ৫০ হাজার দম্পতির ওপর করা এক গবেষণার ডেটা ঘেঁটে এ তথ্য পেয়েছেন।
অ্যান্ড্রোলজিয়া জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষের ওবিসিটি বা স্থূল দেহের জন্য হরমোন উৎপাদনের জন্য নিয়োজিত এন্ডোক্রিন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা ও ঘণত্ব কমে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়ে নারীর গর্ভধারণের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন হসপিটালস অ্যান্ড ক্লিনিকস অথরিটি জানিয়েছে, যেসব নারীর ওজন অনেক কম (বিএমআই ১৮ এর নিচে) তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৫. গর্ভাবস্থার আগে ভিটামিন খাওয়া
যেসব নারী গর্ভধারণের চেষ্টায় আছেন তাদের ভিটামিন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পাভোন। এতে করে গর্ভাবস্থায় দেহের উপযোগী ভিটামিন তিনি আগে থেকেই চিহ্নিত করতে পারবেন।
পাভোন প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন খেতে বলেন। তবে তাতে ন্যূনতম ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড থাকতে হবে। এটি এক ধরনের বি-ভিটামিন, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড মজবুত করতে সহায়তা করে।
জন্মের সময় শিশুর কোনো ধরনের ত্রুটি এড়াতে গর্ভধারণের অন্তত এক মাস আগে থেকে নারীদের প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে বলে দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করাটা ভালো। এর কারণ, নিউরাল টিউব যা গর্ভধারণের তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে পরিণত হয়। ওই সময়ে অধিকাংশ নারী বুঝতেও পারেন না যে তিনি গর্ভবতী।
৬. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যতালিকা না থাকলেও, স্বাস্থ্যকর খাবার একজন নারীর দেহে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে সুষম অবস্থা বজায় রেখে গর্ভধারণে সহায়তা করে। এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, সুষম প্রোটিন, বার্লি-ওটমিল জাতীয় হোল গ্রেইন, দুগ্ধজাত পণ্য ও চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
ফলিক এসিডযুক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পাশাপাশি একজন নারী সবুজ শাক-সবজি, ব্রকোলি, ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত রুটি ও সিরিয়াল, বিনস, লেবু জাতীয় ফল ও কমলার রস খেতে পারেন।
মেয়ো ক্লিনিকের মতে, গর্ভধারণের প্রক্রিয়া শুরুর সময় পারদের উচ্চ মাত্রা সমৃদ্ধ মাছ কম খাওয়া উচিত। এর কারণ পারদ গর্ভবতী নারীর রক্ত প্রবাহে মিশে যেতে পারে, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পারদযুক্ত খাদ্য গ্রহণ নারী ও পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনতে পারে।
কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থায় নারীদের ক্যাফিন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গর্ভবতী নারী যদি ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন (দুই কাপ কফির কম) পান করেন তাহলে গর্ভের সন্তানের কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ২০২০ সালে বিএমজে এভিডেন্স বেজড মেডিসিনের রিভিউ গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারী বা সন্তান গ্রহণের ইচ্ছুক নারীদের জন্য ক্যাফিনের কোনো নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রা নেই।
৭. কঠিন বা ভারী ব্যায়াম কমানো
২০২০ সালের মার্চে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালের প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিদিনের শারীরিক সক্রিয়তা একজন নারীর দেহকে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত করে। এতে করে তাদের জন্মদান ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যাও কমিয়ে দেয়।
তবে লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, যে সব নারী অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন বা নিয়মিত ভারী কাজ করেন তাদের ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
যে সব নারী ভারী ব্যায়াম করেন তাদের রজঃচক্রে ব্যাঘাত ঘটতে দেখেছেন চিকিৎসকেরা। লাইভসায়েন্সকে পাভোন বলেন, নারী গর্ভধারণ করতে চাইলে ব্যায়ামের পরিমাণ কমাতে হবে।
৮. বয়স বাড়লে কমে উর্বরতা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বা উর্বরতা কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকা ডিম্বাণু ও মান কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস, ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লক ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। যে কারণে উর্বরতা কমে যেতে পারে।
পাভোন বলেন, ‘৩০ বছরের পর নারীদের জন্মদান ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৭ বছরের পর তা আরও কমে যায় এবং ৪০ এর পর তা অনেকখানি হ্রাস পায়।‘
হ্রাস পাওয়ার অর্থ গর্ভধারণে বেশি সময় লাগতে পারে।
৯. ধূমপান ও মদ্যপানে ক্ষতি
ধূমপানের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমেরিকান সোসাইটি অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, সিগারেটের নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো রাসায়নিক নারীর ডিম্বাণু নষ্ট হওয়ার হারকে ত্বরান্বিত করে।
মেয়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান নারীর ডিম্বাশয়ের জীর্ণতা তৈরি করে এবং দ্রুত এর ডিম্বাণুকে নিঃশেষ করে দেয়। ২০২০ সালে রিপ্রোডাকটিভ বায়োলজি অ্যান্ড এন্ডক্রাইনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, জন্মদান ক্ষমতা হ্রাসের সঙ্গে ধূমপানের যোগাযোগ রয়েছে।
বিএমজে জার্নালে ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, নারীদের সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোক (পরোক্ষ ধূমপান) থেকেও দূরে থাকা উচিত। পরোক্ষ ধূমপানও গর্ভধারণের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থা বা গর্ভ ধারণ প্রক্রিয়ায় থাকার সময় মারিজুয়ানা গ্রহণ থেকেও বিরত থাকা উচিত।
গর্ভধারণের ইচ্ছা থাকলে মদ্যপানে ইস্তফা দেয়াটি নিরাপদ। তবে, ২০০৯ সালে হিউম্যান রিপ্রোডাকশন জার্নালে ১,৭০৮ জন নারীকে নিয়ে ডেনিশ বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বিজ্ঞানীদের দাবি, পাঁচ বছর ধরে চলা তাদের গবেষণায় নিয়মিত মদ্যপান, অত্যাধিক মদ্যপান ও জন্মদানের ক্ষমতার মধ্যে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজিতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক নারী গর্ভাবস্থায়, গর্ভধারণের ঠিক আগে বা যখন তারাও জানেন না যে গর্ভধারণ করতে যাচ্ছেন সে সময় মদ্যপান করেন।
দ্য আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজির মতে, মাঝারি মাত্রায় মদ্যপান (দিনে ১-২ বার) বা বেশি মদ্যপান (দিনে দুই বা ততোধিকবার মদ্যপান) একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পাভোনও একমত এ বিষয়ে। তার মতে, গর্ভধারণের পর নিরাপদ মাত্রায় মদ্যপান বলে কিছু নেই।
১০. কখন সাহায্য লাগবে সেটা জানুন
পাভোন বলেন, ‘নারীর বয়স ৩৫ বছরের ওপরে হলে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পর ছয় মাসের মধ্যে সন্তানসম্ভবা না হলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।’
পাভোনের মতে, যে সব নারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে, তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত যৌন সম্পর্কের পরেও গর্ভধারণ করতে না পারলে তার সঙ্গীর বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা করানো উচিত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে করণীয়
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত সমস্যা। নারীর বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ এটি। আমেরিকায় প্রজননক্ষম ৬-১২ শতাংশ নারী এ রোগে ভোগেন।
পিসিওএস চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসকেরা নিচের তিনটি লক্ষণের অন্তত দুটি খোঁজার চেষ্টা করেন:
ওভুলেশন হ্রাস পাওয়ায় পিরিয়ড না হওয়া অথবা অনিয়মিত হওয়া।
সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি পুরুষ হরমোনের কারণে মুখে ও শরীরে পশমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট হওয়া।
নারীরা কেন এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিষ্কার নন। তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ে অনেকের মধ্যে সমস্যগুলো ধরা পড়ে।
পিসিওএসজনিত বন্ধ্যাত্ব ও ওজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। থেরাপিউডিক অ্যাডভান্সেস ইন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়, পিসিওএসে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ নারী অতিরিক্ত ওজন বা ওবিসিটিতে ভুগছেন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে সক্ষম।
মেটফরমিন ও লেট্রোজোলের মতো অনেকগুলো ওষুধ ওভুলেশনে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ইনসুলিনের মাত্রা উচ্চ হলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ওভুলেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং। আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের তথ্য অনুসারে, এ পদ্ধতিতে একজন সার্জন বাড়তি হরমোন কমাতে ডিম্বাশয়ে ছোট কয়েকটি ফুটো করে দেন। তবে রোগীকে পুরো অজ্ঞান করে করা এ সার্জারি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। অনেক সময় এতে ডিম্বাশয়ের ক্ষতি হতে পারে, যা হিতে বিপরীত ফল ডেকে আনতে পারে।
বিকল্প পদ্ধতিগুলো কাজ না করলে চিকিৎসকেরা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (টেস্ট টিউব বা এ ধরনের কোনো পদ্ধতিতে গর্ভধারণ) করার অনুমোদন দেন।
এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্তদের গর্ভধারণ
প্রজননতন্ত্রের আরেকটি রোগ এনডোমেট্রিওসিস। আমেরিকায় প্রতি ১০ জন নারীর একজন এই রোগে আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে জরায়ুতে পাওয়া টিস্যু নারীর ডিম্বাশয় বা ফেলোপিয়ান টিউবেও তৈরি হতে শুরু করে।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মৃদু এনডোমেট্রিওসিসও প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে তা নারীর শ্রোণি অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফেলোপিয়ান টিউবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
এনডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীর পক্ষেও গর্ভধারণ করা সম্ভব। আর একবার গর্ভবতী হলে এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নন এমন নারীর সঙ্গে তার গর্ভাবস্থার কোনো পার্থক্য নেই।
যুক্তরাজ্যের এনডোমেট্রিওসিস সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসায় প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না। আমেরিকার দাতব্য স্বাস্থ্য সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের মতে, এই ওষুধগুলোর মাধ্যমে রোগীর হরমোন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে করে তার জরায়ুর টিস্যুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং নতুন টিস্যু তৈরিতেও বাধা সৃষ্টি করে। তবে ওষুধগুলো হরমোনের ওপর নির্ভরশীল বলে (এগুলো সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ, ওভুলেশন পদ্ধতিকে আটকে দেয়া বা অ্যাস্ট্রোজেনের পরিমানকে কমানোর ওষুধ) এটি নারীর গর্ভধারণে বাধা দেয়।
আমেরিকান সোসাইটি ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের মতে, একেক নারীর ওপর এনডোমেট্রিওসিস একেকভাবে প্রভাব ফেলে। যে কারণে চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি অফ ইন্ডিয়ার করা ২০১৫ সালের গবেষণাটিতে দেখা গেছে, এনডোমেট্রিয়াল ও স্কার টিস্যু সার্জারি করে আপসারণ করলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়তে পারে এবং এনডোমেট্রিওসিসের ব্যথা দূর করতে পারে।
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যান্য পদ্ধতি যেমন, আইভিএফ, ওভুলেশন ঘটানো, কৃত্রিম ইনসেমিনেশন ও নারীর ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করে ডিম্বাণু উৎপন্ন করার অন্য প্রক্রিয়াগুলো একজন এনডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত নারীকে গর্ভধারণে সহায়তা করতে পারে।
তবে বিষয়টি এনডোমেট্রিওসিসের তীব্রতা, নারীর বয়স ও প্রজনন সংক্রান্ত অন্যান্য কোনো জটিলতা আছে কি না তার ওপর নির্ভরশীল। এনডোমেট্রিওসিস ইউকের মতে, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর চিকিৎসায় চিন্তার বিষয় হচ্ছে এর মাধ্যমে অনেক সময় ডিম্বাশয় বাড়তি উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এতে একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় এবং একাধিক সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:সংবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তুকে ভবিষ্যতে কম গুরুত্ব দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুকে খবর প্রচার বন্ধ করবে মেটা। গত বছর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
ফেসবুকে ২০১৯ সালে চালু হওয়া নিউজ ট্যাবটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ছোট ও স্থানীয় প্রকাশনার শিরোনামগুলোও ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করেছে।
মেটা বলছে, ব্যবহারকারীরা সংবাদ নিবন্ধের লিংক দেখতে সক্ষম হবেন। সংবাদ সংস্থাগুলো তাদের লেখা ও ওয়েবসাইট লিঙ্ক পোস্ট ও প্রচার করতে পারবে, যেমন অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা ফেসবুকে করতে পারে।
ভুল তথ্য কীভাবে ছড়ানো হয় এবং এটি রাজনৈতিক মেরুকরণে অবদান রাখে কি না, তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পর মেটা তার প্ল্যাটফর্মগুলোতে সংবাদ ও রাজনৈতিক উপাদান কমানোর চেষ্টার পর এই পরিবর্তন আসছে।
মেটার মুখপাত্র ড্যানি লিভার বলেছেন, ‘এই পরিবর্তন গ্রাহকের ফলো করা অ্যাকাউন্টের পোস্টে প্রভাব ফেলবে না। এটি সিস্টেমের সুপারিশগুলোকে প্রভাবিত করবে এবং ব্যবহারকারীরা যদি আরও চায়, তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
‘ঘোষণাটি এমন সময় আসছে, যখন ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল যে, আমরা কীভাবে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো পরিচালনা করি তার উপর ভিত্তি করে।’
মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিউজ ট্যাবে এই পরিবর্তন তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক এবং ভুল তথ্যের পর্যালোচনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভুল তথ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েই গেছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা চলছে।
কর্নেল ব্রুকস স্কুল অফ পাবলিক পলিসির টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি গবেষক সারাহ ক্রেপস বলেছেন, ‘ফেসবুক নিজেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করে না, এটি চালান প্রযুক্তিবিদরা। তারপর হঠাৎ তারা এ বিষয়ে মূল্যায়ন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনীতিতে নিমজ্জিত দেখতে পান। ফলে তারা নিজেরাই শিরোনাম হয়ে ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বছর অনেকগুলো বড় নির্বাচন আসছে। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ফেসবুক রাজনীতি থেকে আরও এক ধাপ দূরে সরে যাচ্ছে। অসাবধানতাবশত নিজেরাই যাতে রাজনৈতিক শিরোনাম হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’
পয়েন্টারের মিডিয়া বিশ্লেষক রিক অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘নিউজ ট্যাবের বিলুপ্তি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য আশ্চর্যজনক নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফেসবুক ট্র্যাফিক হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলোকে দর্শকদের আকৃষ্ট করার অনুসন্ধান ও নিউজলেটারের মতো অন্যান্য উপায়গুলোতে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে।’
অ্যাডমন্ডস বলেন, ‘আমি বলব আপনি যদি খেয়াল করতেন, তাহলে আপনি দেখতে পেতেন যে, এটি আসছে। তবে এটি সংবাদ ব্যবসার জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।’
মেটা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীরা তাদের ফেসবুক ফিডে যা দেখেন, তার চেয়ে তিন শতাংশেরও কম সংবাদ তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক সংবাদ ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছর ৮০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ স্টাডি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক অন্তত মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খবর পান। ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম অন্যান্য মাধ্যমকে সেখানে ছাড়িয়ে গেছে।
পিউ জানিয়েছে, প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে তিনজন বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ফেসবুক থেকে খবর পান এবং ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বলেছেন যে, তারা নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম থেকে খবর পান। এ দুই মাধ্যমেরই মালিকানা মেটার।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের অনুসরণ করেন না, এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ট করা রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ‘সক্রিয়ভাবে’ সুপারিশ করা বন্ধ করার জন্য অ্যাপটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ফিল্টার বন্ধ করার অপশন সবসময় ইউজার সেটিংসে থাকলেও মেটা যে এই পরিবর্তন করেছে তা অনেকেই জানতেন না।
আরও পড়ুন:ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন মেটার প্ল্যাটফর্মগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব এবং অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের তথ্য গোপনে নজরদারি করছে বলে অভিযোগ করে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের বরাত দিয়ে বুধবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক ২০১৬ সালে ‘ঘোস্টবাস্টারস’ নামে একটি গোপন প্রজেক্ট চালু করেছিল যাতে স্ন্যাপচ্যাট ও এর সার্ভার ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা যায়।
স্ন্যাপচ্যাটের ভূতের (ঘোস্ট) মতো লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুক এটির নাম দিয়েছে ‘প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারস’।
আদালতের নথি অনুসারে, ঘোস্টবাস্টারস প্রজেক্টটি স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন ও ব্যবহারকারীর আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
নথিতে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করা সে সময়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক ইমেইলগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে মার্ক এমন একটি ইমেইলে বলেন, স্ন্যাপচ্যাট তাদের সিস্টেম এনক্রিপট (যে পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয় যা তথ্যের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে) করার কারণে অ্যাপটির অভ্যন্তরীণ কোনো তথ্য ফেসবুকের কাছে নেই।
তাই তাদের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে একটি নতুন উপায় বের করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মার্ক। এর জন্য একটি কাস্টম সফটওয়্যার তৈরির কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ঘোস্টবাস্টারস তৈরি করেন। পরে অ্যামাজন এবং ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রকল্পটি প্রসারিত করা হয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের তথ্য অনুসারে, ফেসবুকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের একটি দল এবং প্রায় ৪১ জন আইনজীবী প্রজেক্ট ঘোস্টবাস্টারে কাজ করেছেন, তবে ফেসবুকের কিছু কর্মী এ প্রকল্পের বিপক্ষে ছিলেন। তারা এটি নিয়ে তাদের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স তাদের নতুন স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘ম্যাগচার্জ’।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এফ-ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক আয়োজনে নতুন নোট ৪০ সিরিজ উদ্বোধন করে করে ব্র্যান্ডটি। সেই আয়োজনেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যাগনেটিক চার্জিং ফিচারের যাত্রা শুরুর কথা জানায় ইনফিনিক্স।
ম্যাগচার্জের মতো চার্জিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে এই প্রথম। এ প্রযুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করছে ইনফিনিক্স।
ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নোট ৪০ সিরিজের সঙ্গে আছে ইনফিনিক্সের ম্যাগকিট। এ কিটে ফোনের ব্যাককাভার হিসেবে দেয়া হয়েছে ম্যাগকেস। এর সঙ্গে আরও আছে ম্যাগনেটিক চার্জিং প্যাড ম্যাগপ্যাড এবং ম্যাগনেটিক পাওয়ার ব্যাংক ম্যাগপাওয়ার।
ইনফিনিক্সের নতুন নোট ৪০ সিরিজের নোট ৪০, নোট ৪০ প্রো, নোট ৪০ প্রো ফাইভজি এবং অত্যাধুনিক নোট ৪০ প্রো+ ফাইভজি স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যাবে ম্যাগচার্জ ফিচারটি।
এবারের সিরিজটিতে দেয়া হয়েছে ইনফিনিক্সের অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ ২.০ প্রযুক্তি, ১০০ ওয়াট পর্যন্ত মাল্টি-স্পিড ফাস্টচার্জ এবং ২০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চার্জিং মোড ব্যবহার করতে একটি কাস্টম চিপ দেয়া হয়েছে এ সিরিজের ফোনগুলোতে।
উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য নোট ৪০ সিরিজে আছে ১২০ হার্টজের প্রাণবন্ত থ্রিডি-কার্ভড অ্যামোলেড ডিসপ্লে। প্রধান ক্যামেরা হিসেবে সিরিজটিতে আছে ওআইএস সাপোর্টসহ শক্তিশালী ১০৮ মেগাপিক্সেলের সুপার-জুম ক্যামেরা সিস্টেম। এ ছাড়াও ফোনের পেছনের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের লাইটিংয়ের জন্য এতে যুক্ত করা হয়েছে অ্যাকটিভ হ্যালো লাইটিংয়ের মতো এআই প্রযুক্তি।
ইনফিনিক্সের নতুন এ স্মার্টফোন সিরিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট ডিরেক্টর উইকি নিইয়ে বলেন, ‘ইনফিনিক্স নোট ৪০ সিরিজ বাজারে আনার মাধ্যমে চার্জিং প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চার্জিংয়ের অভিজ্ঞতাকেই বদলে দেবে এই সিরিজ। ‘এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব চিপ চিতা এক্স১-এর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে অলরাউন্ড ফাস্টচার্জ। এখন এতে আছে মাল্টি-স্পিড চার্জিং এবং এক্সট্রিম টেম্পারেচার চার্জিংয়ের মতো ফিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী ম্যাগচার্জ অ্যাক্সেসরি কিট ফোন ব্যবহারকারীদের দেবে নিরবচ্ছিন্ন চার্জিং ইকোসিস্টেম। এসব অগ্রগতির ফলে ব্যবহারকারীরা সারা দিন যেকোনো পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় পাওয়ারড-আপ থাকতে পারবেন।’
গত বছর অল-রাউন্ড ফাস্টচার্জ প্রযুক্তিসহ নোট ৩০ সিরিজ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে ইনফিনিক্স। সিরিজটিতে আছে ৬৮ ওয়াটের ওয়্যারড চার্জিং এবং ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাদার বোর্ডে সরাসরি চার্জ নেয়ার জন্য এতে আছে বাইপাস চার্জিং এবং আইফোন সেভার হিসেবে পরিচিত ওয়্যারলেস রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি।
চার্জিং, লুক ও পারফরম্যান্সে অভূতপূর্ব আপডেট নিয়ে এখন বাংলাদেশের বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে নোট ৪০ সিরিজ। নতুন এ নোট সিরিজের জন্য শুরু হয়ে গেছে প্রি-বুকিংও।
আরও পড়ুন:প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী পাল্টাচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজ, শিক্ষা কিংবা বিনোদনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ল্যাপটপের ব্যবহার। আধুনিক জীবনের সব রকমের প্রয়োজন মেটাতে ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এসব ডিভাইস।
ফলে যত বেশি কাজ, তাপও উৎপন্ন হচ্ছে সেই হারে। এই তাপ কমাতে সাধারণত পোর্টেবল কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। এভাবে বাহ্যিক তাপ কমানো গেলেও ল্যাপটপের ভেতরে আটকে পড়া তাপ নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়।
তবে ল্যাপটপেই যদি একটি শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম থাকে, তাহলে বাহ্যিক কুলিং ফ্যানের আর প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছর ইনবুক সিরিজের এক্স২ ল্যাপটপ বাজারে আনে ইনফিনিক্স। এই ল্যাপটপের ভেতরে আছে আইস স্টর্ম ১.০ নামক কুলিং প্রযুক্তি। এটি ল্যাপটপে একটি আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্যে করে। আইস স্টর্ম কুলিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে মিলিটারি-গ্রেডের বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। গেমিংসহ অন্যান্য কাজ কিংবা বিনোদনের সময় যা নিঃশব্দে পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে।
ইনফিনিক্সের এই প্রযুক্তিটি ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমের গুরুত্ব তুলে ধরে। ল্যাপটপ কিংবা এর ব্যবহারকারী, উভয়ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কার্যকর কুলিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের কাজে আসে এবং এর মাধ্যমে কী কী সমস্যার সমাধান হয়?
পারফরম্যান্স
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে প্রথম সমস্যা হয় এর পারফরম্যান্সে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের কাজের মান ও গতি কমে যায় এবং ল্যাগ সৃষ্টি হয়। একে থার্মাল থ্রটলিং বলে। কার্যকর কুলিং সিস্টেম দ্রুত এই তাপমাত্রা কমিয়ে এনে নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত পারফরম্যান্সের লেভেল বজায় রাখতে পারে। ফলে মাল্টিটাস্কিং করা সহজ হয়, সফটওয়্যারগুলো দ্রুত কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাও ভালো হয়।
স্থায়িত্ব ও জীবনকাল
ল্যাপটপের সিপিউ ও জিপিউ’র মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশ তাপ সংবেদনশীল। সময়ের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এসব উপাদানের ক্ষতি হয়। এতে ডিভাইসের নির্ভরযোগ্যতা কমে যায় এবং জীবনকালও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। এক্ষেত্রে একটি ভালো কুলিং সিস্টেম দক্ষতার সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অকালে হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এমন সক্রিয় ব্যবস্থা ল্যাপটপের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের আর্থিক লোকসানও কমিয়ে আনে।
পরিবেশবান্ধব
তাপমাত্রা বেশি হলে ফ্যানকে আরও বেশি কাজ করতে হয়, ফলে আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবহার কমিয়ে কার্যকরভাবে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে উন্নত কুলিং সিস্টেম। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, বিদ্যুৎ বিল কমে আসে এবং পরিবেশের সুরক্ষা হয়।
স্বস্তি এবং স্বাস্থ্য
ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করা খুবই অস্বস্তিকর। বিশেষভাবে, যখন কোলের উপর রেখে ব্যবহার করতে হয় তা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় এভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, ফ্যান অতিরিক্ত শব্দ করলে তা ব্যবহারকারীর মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায়। ল্যাপটপ ঠান্ডা রেখে নিঃশব্দে কার্যক্রম বজায় রাখার মাধ্যমে এসব ঝুঁকি কমিয়ে আনে আইস স্টর্ম ১.০-এর মতো অত্যাধুনিক কুলিং সিস্টেমগুলো।
তাই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম শুধু ডিভাইসের পারফরম্যান্স ও জীবনকালের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ব্যবহারকারীর স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যও এটি জরুরি।
ইনফিনিক্সের ইনবুক সিরিজের এক্স২ এবং ওয়াই২ প্লাস ল্যাপটপ দেশজুড়ে রায়ানস, স্টারটেক ও দারাজের মতো অনুমোদিত রিটেইলারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। ১৪ থেকে ২০ মার্চ রায়ানস-এর ব্র্যান্ড উইক চলাকালীন ইনফিনিক্স ল্যাপটপ কিনলেই ক্রেতারা পাবেন একটি পাওয়ার ব্যাংক, একটি মাউস প্যাড এবং ১০০০ টাকার শপিং ভাউচার।
আরও পড়ুন:হঠাৎ করেই যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারীদের জীবনে। আচমকা বিভ্রাটে পড়ে ভীত হয়ে পড়েন অনেকে।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নন, বরং ক্ষতির মুখে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময়ও নিতে হয়েছে বেশ।
এমন অবস্থায় ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ থাকায় কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, তা নিয়ে সূত্রের বরাতে তথ্য দিয়েছে সংবাদ প্রতিদিন।
প্রতিবেদন বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বিভ্রাটে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেটা। সবমিলিয়ে ৩ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অকেজো হয়ে পড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়।
পরে অবশ্য এক্সে এসে মার্ক জাকারবার্গ জানান, সার্ভার ডাউন। সেই কারণেই কাজ করছে না মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম। তবে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।
এর পরই মাস্ককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ইলন মাস্কও অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে এক্স হ্যান্ডেলে আচমকা এত ভিড় কেন?
পাল্টা জবাব দিয়েছেন এক্সের মালিক মাস্কও। তিনি লেখেন, এই প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মেসেজ লেখা যাচ্ছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে। কারণ আমাদের সার্ভার খুব ভালো চলছে।
আরও পড়ুন:এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঠিক হয়েছে ফেসবুক। রাত দশটা ৩৫ মিনিটে লগইনের চেষ্টা করলে দেখা যায়, সচল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম বৃহৎ এ প্লাটফরমটি।
বিস্তারিত আসছে…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক হঠাৎ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা কেউ ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন না। এমনকি ফেসবুকে সক্রিয় থাকা আইডিগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর থেকে এ সমস্যার কথা জানাতে থাকেন ব্যবহারকারীরা।
প্রযুক্তি ওয়েবসাইট ডাউন ডিটেক্টরও ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যার কথা নিশ্চিত করেছে। এক্সের ট্রেন্ডিং ফিডেও ফেসবুক সার্ভার ডাউনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি মেটার আওতাধীন ইনস্টাগ্রাম ও মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ব্যবহারকারীরা জানান, হঠাৎ করেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে যায়। পরে তারা লগ ইন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুরো বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কেউ ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না। এই দুটি মাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস উভয়ই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
মেটা কিংবা ফেসবুক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।
মন্তব্য