সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোববার বিকেল ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারই সন্তান আফজাল এইচ খান।
টি এইচ খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দেশবরেণ্য ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি দেশের প্রবীণতম আইনজীবী ছিলেন।
বিচারপতি টি এইচ খানের প্রকৃত নাম মো. তাফাজ্জাল হোসেন খান। তিনি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৩ সালের জুলাই থেকে আবার আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন টি এইচ খান। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেপ্তার হন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় তিনি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পদে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৯২ সালে টি এইচ খান সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে বিচারপতি টি এইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকার্য পরিচালনা করেন।
১৯৪০ সালে বিচারপতি টি এইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্সে ভর্তি হন।
১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন।
আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টি এইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের মতো করে চালাতে চায়। দেশের রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্রের সদিচ্ছার অভাবে পুলিশ বাহিনীর পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এসব কথা বলেছেন।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শহীদুল হক। নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইটিতে স্থান পাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের রুলিং পার্টি- তারা মনে করে পুলিশ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। তারা চায় তারা যা বলবে পুলিশ তাই করবে। এমপি চান তিনি যা বলবেন থানার ওসি সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কাজ করা খুবই কঠিন।
‘রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে আমি মাথানত করিনি। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হইনি। তবে আমার মতো তো সবাই পারবে না। এজন্য একটা সিস্টেম চালু করা উচিত যাতে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।’
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ বিচারব্যবস্থার একটি বড় অংশ। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম কখনও কার্যকর হবে না। পুলিশকে স্বাধীনতা দিতে হবে। জুডিশিয়াল সার্ভিস দিতে হলে আইনের পরিবর্তন জরুরি।
‘আমি দায়িত্বে থাকার সময় উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হয়নি। সেটা হয়নি আমলাদের কারণে। আর এটি হোক তা রাজনীতিকরা তো চাইবেনই না। রাজনীতিক ও আমলাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে সুশাসন কথাটা স্লোগানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’
পুলিশের এই সাবেক প্রধান আরও বলেন, ‘পুলিশকে অনেক বৈরী পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয়। সবাই পুলিশের সেবা চায়। কিন্তু কেউই পুলিশকে পছন্দ করে না। পুলিশকে বুঝতে হলে পুলিশের কাছে যেতে হবে। পুলিশকে আস্থায় নিতে হবে। সেসঙ্গে পুলিশকেও ঔপনিবেশিক মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব কবি ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ও সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সময়োপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এরপর আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এয়ার ভাইস মার্শাল মো. নজরুল ইসলাম।
সাক্ষাৎকালে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন উপাচার্যরা।
বিশ্বায়নের এই যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে দেশের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
‘গতানুগতিক কারিকুলামে বর্তমান যুগের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সময়োপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সব স্তরে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধের নির্দেশ দেন আবদুল হামিদ।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব সংযুক্ত ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী মারা যায়নি। তবে এই সময়ে শনাক্ত হয়েছে ২৮ জন, যার ২০ জনই ঢাকা বিভাগের।
শনিবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে মৃত্যু সংবাদ না দেয়ায় মোট মৃত্যু ২৯ হাজার ১৩০ জনেই আছে।
আর এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৭ জনে।
শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৩৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের শরীরে ভাইরাসটি ধরা পড়ে। পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের নতুন হার শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে, গত এক দিনে সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯১ জন। এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ২ হাজার ২০৭ জন সুস্থ হয়েছেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনে ভর করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসে। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যায় যে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দেশে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। এরপর দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রবেশ করে দেশ। ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণেও আসে তুলনামূলক দ্রুত।
আরও পড়ুন:প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের সাফল্যের কারণে দেশের মানুষ চাইলে এখন তিন বেলা মাংস খেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার ‘প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নয়ন ও সম্ভাবনা: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় যোগ দিয়ে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প এবং পরিপ্রেক্ষিতের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করে ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরাম।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এখন মানুষ চাইলে তিন বেলাও মাংস খেতে পারে।’
প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘এই খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এর উপকারভোগী আমরা সবাই। এ খাতে উৎপাদন না হলে দেশে খাদ্য ও পুষ্টির সংকট তৈরি হবে। ‘এই খাত পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বেকারদের স্বাবলম্বী করে, উদ্যোক্তা তৈরি করে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করে। খাবারের একটি বড় যোগান আসে মাংস, দুধ ও ডিম থেকে। তাই এ খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন। সৃজনশীলতা নিয়ে এগিয়ে গেলে এ খাতে ভালো কিছু করা সম্ভব।’
প্রাণিসম্পদ খাতের এ বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের একটি লেখা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সাহস যোগায়। একটি ভালো সংবাদ থেকে মানুষ উদ্দীপ্ত হয়, উৎসাহিত হয়।’
এই খাতের সম্ভাবনার পাশাপাশি ত্রুটির কথাও গণমাধ্যমে তুলে ধরা হলে তা সরকারের জন্য সহায়ক হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
করোনা সংকটে প্রাণিসম্পদ খাতকে রক্ষায় সরকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রির ব্যবস্থা চালু করেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এতে করে উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়ে লাভবান হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি দুধ, ডিম, মাছ, মাংস বিক্রি হয়েছে। গত রমজান মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশে যতো অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলো ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে রোববারের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ না হলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক বেলাল হোসেন শনিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিভিল সার্জনদের সঙ্গে বৈঠকে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে রাজধানীতে পরিচালিত অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব মনিটরিং টিম থাকবে। আর ঢাকার বাইরে জেলা সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে এই তদারকি করা হবে।
বেলাল হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ৭২ ঘণ্টা পর অভিযান চলুক। তারপর আমরা বসে দেখব যে কতদূর হলো। সিভিল সার্জেন্ট, বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে বসে এনালাইসিস করবো- কতগুলো বন্ধ করতে পারলাম, কতগুলো রয়ে গেছে। এই পদক্ষেপের সাফল্য দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর সোমবার আমরা বসব। পরে ফাইনাল করতে পারব যে কতগুলো বন্ধ হয়েছে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশে মোট অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা এবং সেগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কাছে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন তালিকা আমাদের কাছে ওভাবে নেই। আমাদের কাছে জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা, কতগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং কতগুলো পেন্ডিং আছে এটা বলতে পারি। আবেদনই করা হয়নি এমন অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা পাওয়াটা কঠিন।’
আবেদন না করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলা কীভাবে চিহ্নিত করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, ‘জেলায় যদি রেজিস্ট্রিকৃত ৫০টি প্রতিষ্ঠান থাকে সেগুলো সম্পর্কে অধিদপ্তরে তথ্য আমরা জানি। তবে এর বাইরে যেগুলো আছে সেগুলোও আমরা ধরতে পারব। কাউন্ট করতে পারব।’
বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিভিল সার্জনদের সঙ্গে বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বেলাল হোসেন। তার মধ্যে রয়েছে-
৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এই কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়ে নবায়ন করেনি, তাদের নবায়নের জন্য একটি সময়সীমা দিতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন না করলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেস্থেশিয়া দেয়া এবং ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের লাইসেন্স দেয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
আরও পড়ুন:দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।
আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পার্শ্ববৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেসিসির বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল সোমবার।
জুনের তৃতীয় সপ্তাহে এই বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আরও সময় নিয়ে বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে চায় দুই দেশ, তবে শিগগিরই নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক শেষে গোয়াহাটিতে উপস্থিত বাংলাদেশের সংবাদকর্মীদের মোমেন বলেন, ‘আমি এখানে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। তাই আমরা মনে করি যে, আমরা সোমবারের বৈঠক পিছিয়ে দিতে পারি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসামে নদীবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কনক্লেভে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার আসামে পৌঁছান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
বৈঠকে বাংলাদেশ, আসাম ও ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন হিমন্ত ও মোমেন।
আরও পড়ুন:একুশে গানের রচয়িতা, বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায় এই সাংবাদিকের কফিনবন্দি মরদেহ। এরপর তারই রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যায়ক্রমে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, বিপ্লব বড়ুয়া শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনও। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সময় শহীদ মিনারে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি আসেনি, তারা কী ভুল করছে- এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই। গাফ্ফার ভাই আমাদের লোক। তাকে সম্মান করব না, সেটা তো হতে পারে না। গাফ্ফার চৌধুরী কেবল আওয়ামী লীগের না, আমাদের সবার।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা হয় গাফ্ফার চৌধুরীর।জানাজা পড়ান মসজিদের খতিব এমদাদা উদ্দিন। জানাজা শেষে মরহুমের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামানসহ অনেকেই অংশ নেন।
পরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাড়ে তিনটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয় গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে দাফন করা হবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে।
এর আগে যুক্তরাজ্য থেকে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহবাহী কফিন পৌঁছায়।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমানবন্দরে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার গান আমাদের উজ্জীবিত করে। এই গানের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন হাজার হাজার বছর। তিনি বিদেশ থেকেও দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তার লেখনীর মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন।’
গত ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ৮৮ বছর বয়সী গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন গাফ্ফার চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য