সীমানা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ২১ বছর পর যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়ায় কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের মধ্যে উৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিতিও ছিল অনেক।
রোববার সকাল ৮টা থেকে অনুষ্ঠিত ভোটের প্রথম ৬ ঘণ্টায় গড়ে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে। একটানা ভোট হয়েছে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়ায় ভোটদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের জোয়ার দেখা গেছে। একই সঙ্গে তাদের বাড়তি আগ্রহও দেখা গেছে। তাই কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় জমে ভোটারদের। নির্বাচন ঘিরে পৌরসভাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
সকাল থেকে পৌরসভার একাধিক ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। ভোটে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ইভিএমে ভোট হওয়ায় তরুণ ভোটারদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ দেখা গেছে।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং অফিসার শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর এই নির্বাচন হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।’
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘সকাল থেকেই ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দেন। তবে ইভিএমে ভোট দিতে বয়স্কদের কিছুটা দেরি হলেও তরুণদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।’
কৃর্তিপুর খাদেমুন ইনসান কেন্দ্রে মো. তৈয়ব নামে এক ভোটার জানান, ব্যালটে ভোট দেয়ার চেয়ে ইভিএমে ভোট দেয়ার মজা আলাদা। খুব দ্রুত তারা ভোট দিতে পেরেছেন।
রেশমা নামে আরেক ভোটার জানান, ভোট দিতে গিয়ে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। কোনো বাধা ছাড়াই তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর ভোট হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেই উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হবে।’
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা পৌরসভায় মোট ভোটার ২৫ হাজার ৯৩৯ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৮২ জন পুরুষ এবং ১৩ হাজার ৪৫৭ জন নারী।
ইভিএম পদ্ধতিতে ১৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬৬ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়াার্ডে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পৌরসভা তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ৪ এপ্রিল উপজেলা সদরের ৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঝিকরগাছা পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। তখন নবগঠিত পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০০১ সালের ২ এপ্রিল ঝিকরগাছা পৌরসভায় প্রথম নির্বাচন হয়। তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল।
২০০৬ সালের প্রথম দিকে পৌরসভার সীমানা বাড়ানো হয়। এতে সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর, ফারাসাতপুর, পদ্মপুকুর পানিসারা ইউনিয়নের পুরন্দপুর, কাউরিয়া ও গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর ও বামনআলী গ্রামের অংশবিশেষ পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
অভিযোগ আছে, এসব অঞ্চল বিএনপির ভোটার অধ্যুষিত হওয়ায় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিএনপি সরকার এ অঞ্চলকে পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু এসব অঞ্চল প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত না হতে এলাকাবাসী কর্মসূচি পালন করে।
একপর্যায়ে কাউরিয়া গ্রামের শাহিনুর রহমান, বামনআলী গ্রামের শাহাদৎ হোসেন ও মল্লিকপুর গ্রামের সাইফুজ্জামান পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত না হতে হাইকোর্টে আলাদা তিনটি রিট করেন। আর এতেই আটকে যায় ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচন। ২০০৬ সালের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা স্থগিত করে হাইকোর্ট।
এরপর দুই দশক পর গত ৩০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। সে ঘোষণা অনুযায়ী রোববার ঝিকরগাছায় ভোটগ্রহণ চলছে।
আরও পড়ুন:বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম একটি সড়কে প্রাইভেটকার উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় জেলা জজ কোর্টের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী নূরুল আমিন বলেন, ‘লঞ্চঘাটের দিক থেকে নীল রঙের প্রাইভেটকারটি দ্রুতগতিতে কাকলীর মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় ফজললু জজ কোর্টের সামনে স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার সময় ব্রেক ফেল করে উল্টে যায় গাড়িটি।’
তিনি জানান, দুর্ঘটনার সময় প্রাইভেটকারটিতে চালক ছাড়া কেউ ছিলেন না। পরে গাড়ির মালিক ঝালকাঠি জেলা সমাজসেবা প্রবেশন কর্মকর্তা সাদিয়া আয়েশা ঘটনাস্থলে আসেন। তবে দুর্ঘটনাকবলিত ওই গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রাইভেটকারটির চালক মো. সাগর বলেন, কিভাবে গাড়ি উল্টে গেল বুঝতে পারছি না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময় ওই লেনে যান চলাচল বন্ধ ছিল। উল্টে যাওয়া প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি পৌর খেয়াঘাট এলাকার তরুণ সিরাজুল ইসলাম। দেড় বছর ধরে পালন করছেন ঘোড়া। ঘোড়দৌড় আর গাড়ি চালানোর জন্য তার আস্তাবলে রয়েছে ছয়টি তরতাজা ঘোড়া। যার দুটি দিয়ে চালান গাড়ি, যা তার আয়ের অন্যতম উৎস। আর দুটি দিয়ে গ্রাম্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা করেন সিরাজুল।
তার ঘোড়ার গাড়ি ঝালকাঠিতে বেশ জনপ্রিয়। বিয়ে, শো-ডাউন, ঘুরতে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে পয়সা রোজগার করেন সিরাজুল।
গাড়ি টানার জন্য পালন করা তার দুটি ঘোড়ার একটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিরাজুল।
তার অভিযোগ, তার সঙ্গে কথাকাটাকাটির একটা পর্যায়ে আস্তাবলের পাশে বাস করা নজরুল তার ঘোড়া হত্যার হুমকি দেয়। পরে তার একটি ঘোড়া বিষপ্রয়োগ ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়।
সিরাজুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে ঘোড়াগুলো রাখতাম। তার পাশেই নজরুল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শুক্রবার রাতে আমার সাথে তর্ক হয়। তখন নজরুল আমাকে ধমক দিয়ে বলেছে, আমাকে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা করতে দিবে না, কী করে ঘোড়া পালি সেটা সে দেখিয়ে দেবে।’
সিরাজুল আরও বলেন, ‘শনিবার সকালে ঘোড়া দুটো শিশুপার্কের মাঠে বেঁধে রেখে বাসায় যাই। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘোড়া আনতে গিয়ে দেখি একটি ঘোড়া মৃত অবস্থায় মাঠে পড়ে আছে। দেখি ঘোড়াটির শরীরে পেটানো ও পায়ের রগ কাটার চিহ্ন।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় পশু চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে পারিনি।’
সিরাজুলের দাবি, তার ঘোড়াকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যা করেছে নজরুল।
শনিবার বিকেলে প্রাণি হত্যার বিচারের দাবিতে মৃত ঘোড়া ভ্যানে তুলে সদর থানায় নিয়ে যান সিরাজুল। তিনি পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন।
বলেন, নজরুল ইসলাম তার ঘোড়া হত্যা করেছেন।
পরে সদর থানা পুলিশের পরামর্শে সন্ধ্যা ৬টায় ঘোড়াটিকে পৌর কসাইখানা সংলগ্ন সুগন্ধা নদীর পাড়ে মাটিচাপা দেন সিরাজুল।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে সিরাজুলের ঘোড়া রাখার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘরটির পাশেই অভিযুক্ত নজরুলের একটি গোয়ালঘর রয়েছে। প্রায়ই গরুর দড়ি না পেয়ে সিরাজুলকে দোষারোপ করতেন নজরুল।
ঘোড়া হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোড়ার মৃত্যু সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।’
ঝালকাঠি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সিরাজুলকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি, অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে ঘোড়ার ময়নাতদন্ত করতে হবে।’
আরও পড়ুন:এক বিধবাকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে- ১০ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
নাটোরের সিংড়ায় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটলেও শনিবার তা ভাইরাল হয়। পরে শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে অভিযুক্ত আইয়ুব আলীকে আটক করেছে পুলিশ।
সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলার বেলোয়া গ্রামের এক বিধবা বাড়ির পাশ্ববর্তী এক দোকানে সেমাই কিনতে যায়। এ সময় একই গ্রামের অছিমদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে আইয়ুব আলীর সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আইয়ুব ওই নারীকে অশ্লীল গালিগালাজের পাশাপাশি লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আইয়ুব ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
এ ঘটনায় ১০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এলে শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বেলোয়া গ্রাম থেকে আইয়ুব আলীকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ পরিদর্শক আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আইয়ুব আলী ওই বিধবাকে উত্যক্ত করতেন। এর প্রতিবাদ করায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় আইয়ুবকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
আরও পড়ুন:নরসিংদীতে নবজাতকসহ প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে মেরী স্টোপস ক্লিনিকের ম্যানেজারসহ দুজনকে।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে শহরের বাসাইল এলাকার ক্লিনিকটিতে শনিবার দুপুরে ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা।
পুলিশ ও রোগীর স্বজনরা জানান, শহরের শালিধা এলাকার হান্নান মিয়ার স্ত্রী সালেহা বেগমকে শুক্রবার ভর্তি করা হয় মেরী স্টোপস ক্লিনিকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলেনা হালিম রিপোর্ট দেখেই দ্রুত সিজার করার পরামর্শ দেন। প্রসূতি ও তার স্বজনরা রাজি না হলে চিকিৎসক তাদের জানান দেরি করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।
স্বজনদের অভিযোগ, সালেহা বেগমকে অনেকটা জোর করেই অপারেশনের জন্য নিয়ে যান চিকিৎসক হেলেনা। কিন্তু অপারেশনের টেবিলেই সালেহা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চিকিৎসক রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। স্বজনদের না জানিয়েই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়া হয়।
রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মা ও নবজাতককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ভুল চিকিৎসায় নরসিংদীতেই সালেহার মৃত্যু হয় এবং তা গোপন করে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয় বলে অভিযোগ তুলে স্বজন ও এলাকাবাসী শনিবার দুপুরে ক্লিনিকে হামলা চালান।
নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ক্লিনিকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ক্লিনিকের ম্যানেজারসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসূতির মৃত্যু ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে মেরী স্টোপস ক্লিনিক সংশ্লিস্ট কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় বিল থেকে হাঁসের দল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে সরাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই কৃষকের নাম আয়েন উদ্দীন। তার বয়স ৫০ বছর। তিনি শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল গ্রামের বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করেছেন নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘নিহত আয়েন উদ্দীন হাঁসের খামার রয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ির পাশে গুটিয়ার বিল থেকে হাঁসের দল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আয়েন উদ্দীন পেশায় কৃষক।’
ওসি আরও জানান, বজ্রপাতে মারা যাওয়ার কারণে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। রোববার সকালে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
আরও পড়ুন:‘বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন’ ক্যাটাগরিতে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাচ্ছেন গাজীপুরের মনিরা সুলতানা মুনমুন। তিনি আমেরিকা ফেরত নারী। এই ক্যাটাগরিতে এ বছর তিনি প্রথম হয়েছেন।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা দীপঙ্কর বরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ মে পুরস্কার পাওয়ার তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারের জন্য এ বছর ৭ ব্যক্তি ও ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার। ১৯৯৩ সাল থেকে চালু হওয়া প্রতিটি শ্রেণির পুরস্কার প্রাপ্তদের সনদপত্র এবং অর্থ দেয়া হয়।
মনিরা সুলতানা শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্ৰামের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাঁদশার স্ত্রী।
গাজীপুরের উত্তর ছায়াবিথী এলাকায় মনিরা নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন দেশি, বিদেশি উদ্ভিদের বিশাল সমারোহ। এ কাজে তাকে উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন স্বামী আকরাম হোসেন।
কীভাবে শুরু
২০১৪ সালে শখের বশে অল্প কিছু গাছ এনে ছাদে লাগিয়েছিলেন মনিরা। এরপর হঠাৎ চিন্তায় আসে কীভাবে এটিকে উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যক করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ওষুধি গাছ, সবজি, নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছ আমদানি করেন। স্বামী আকরাম হোসেন যতবার বিভিন্ন দেশে গেছেন, ততবার তার জন্য নিয়ে এসেছেন কোনো না কোনো উদ্ভিদ।
মনিরা জানান, ছাদটি পরিপূর্ণভাবে সাজিয়ে সেখান থেকে কিছু চারা বিক্রি করেছেন। এর পরেই মাথায় আসে আরও বড় পরিসরে ছাদে বিভিন্ন ওষুধি গাছ ও ফলমূলের চারা উৎপাদন করবেন। একই সঙ্গে চারা উৎপাদন, ছাদ কৃষিতে উদ্ভিদের পরিচর্যা ও অল্প জায়গায় সর্বোত্তম ব্যবহার নিয়ে লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেবেন।
তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ফেসবুকে ‘প্লান্টস ফ্রম মুন’ নামের একটি গ্রুপ খুলেন। সেই গ্রুপের সদস্য হন অসংখ্য মানুষ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে লাগলেন।
শুধু ছাদ বাগানই নয়, তিনি ছাদে মাছও চাষ করছেন। মাছ পালনের পানির হাউজ থেকে ফাইটোপ্লাংকটন মিশ্রিত পানি দেয়া হয় গাছের গোড়ায়। এতে গাছ অনেক পুষ্টি পায়।
এ ছাড়া বাড়িতে উৎপাদিত সবজির উচ্ছিষ্টাংশ বিশেষ পদ্ধতিতে জৈব সারের রূপান্তর করেন। এসব সার বাজারে পাওয়া যেকোনো সারের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বলে জানান মনিরা। অর্গানিক সবজি উৎপাদনের জন্য তিনি এগুলো গাছকে খাবার হিসেবে দেন।
কী ধরনের গাছ রয়েছে
মনিরার ছাদ বাগানে সব মিলিয়ে উদ্ভিদের সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৯টি। এর মধ্যে ওষুধি গাছ আছে ৪০ প্রজাতির। শোভাবর্ধন করা গাছ আছে ৫৬ প্রজাতির। বিশেষ প্রজাতির গাছের সংখ্যা ২৬টি। দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ আছে ৭ প্রজাতির। ফলজ গাছের সংখ্যা ৯৯টি। অন্যান্য অন্তত ১০০ প্রজাতির গাছ আছে তার ছাদে।
ওষুধি গাছের মধ্যে আছে অর্জুন, আমলকি, বহেরা, হরিতকী, ঘৃতকুমারী, নিম, তুলসি, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ক্লিন স্টোমাক, চেইন অফ গ্লোরি, রুইলিয়া রেসিলিয়া, ডেইজি, কিডনি প্লান্ট, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোলমরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি পাতা প্রভৃতি।
সবজির মধ্যে আছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা, বেগুন, কাকরোল, পটল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, লাল ঢেরস, সিম, শসা, টমেটো, মরিচসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতি।
দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় জাতের মধ্যে আছে ওল্ড চন্ডাল, আগর, সিভিট, হলদু, কৃষ্ণ বট, অশোক, কর্পূর প্রভৃতি।
প্রথম পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে মনিরা বলেন, ‘ছাদ কৃষিতে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই। তাই প্রতি বছর প্রশিক্ষণ, চারা ও বীজ বিতরণসহ সেমিনার করি। আশা করি, আগামীতে কৃষিতে আমরা আরও ভালো করব।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজিম উদ্দীনের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে সোমবার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিআরডি) খুলনা বিভাগীয় পরিচালক গিয়াসউদ্দীন সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে এ দিন তদন্ত কার্যক্রম পরিচলনা করবেন। সিইও নাজিমের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণ, মাদক সেবন, হত্যার হুমকিসহ দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
চার বছর আগে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেয়া তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দীন।
চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন নাজিম উদ্দীন।
পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মাচারী জানান, যোগ দেয়ার শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য অন্তত হাফ ডজন মানুষের কাছ থেকে বিকাশ, নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নাজিম উদ্দীনের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী কাজী বিরাজ হোসেন জানান, অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করতে কমপক্ষে ৬ জনের কাছ থেকে নাজিম উদ্দীন কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। নিজ অফিসে বসে ফেনসিডিল ও মাদক সেবন করেন। পৌরসভার সরকারি গাড়িতে করে সীমান্ত থেকে প্রতিদিন মাদক এনে অফিস ও তার বাসায় পৌঁছে দিতে হতো। এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দীন পিটিয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার অস্থায়ী কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বাপ্পী জানান, তাকেসহ সাত জনকে কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছেন সিইও নাজিম। সে সঙ্গে তিনি পানি বিভাগের ২৭ জনের বেতন বন্ধ করে পৌরসভায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।
কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা আরিফুর জানান, প্রবেশ নিষিদ্ধের পর পৌরসভায় ঢুকলে দুই বছরের জেল ও জরিমানা অথবা গুলি করে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন সিইও নাজিম উদ্দীন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার লাইসেন্স শাখার কর্মচারী সোহেল জামান রুবেলের অভিযোগ, ঈদের আগে বেতন বোনাস না পেয়ে মেয়রকে জানানোর কারণে বিনা নোটিশে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতিও দিয়েছেন নাজিম উদ্দীন।
পৌরসভার মেয়র তাজকীন আহমেদ চিশতী বলেন, ‘সিইও নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে পৌরসভার অস্থায়ী কর্মচারীরা প্রমাণসহ আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি দিয়েছি।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সাতক্ষীরার উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস জানান, পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীনের দুর্নীতি গণমাধ্যমে এলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নজরে আসে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৯ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের খুলনার বিভাগীয় পরিচালক গিয়াসউদ্দীনকে দিয়ে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা সোমবার সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে বসে তদন্ত কাজ করবেন।
২০২০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেন তৎকালীন আরডিসি এই নাজিম উদ্দীন। পরে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে তার বেতন কাঠামো ষষ্ঠ থেকে সপ্তমে নামানো হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বৃদ্ধ নফু মাঝিকে কান ধরে টেনে হিঁচড়ে মারধরের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি।
মন্তব্য