দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে প্রথমেই দলের বিতর্কিতদের ছেঁটে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলকে অধিক সক্রিয় করে তুলতে পরিবর্তন আসছে সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে। একই সঙ্গে দলের ত্যাগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সামনে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
গুঞ্জন আছে মন্ত্রিসভা থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ারও। বিতর্কিত আমলাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আসন্ন জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও বার্তা থাকছে।
সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক সূত্র, সিনিয়র মন্ত্রী, দায়িত্বশীল সিনিয়র আমলা ও আওয়ামী লীগ নেতা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন কমপক্ষে চারজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি তারা দলীয় পদ থেকেও বাদ পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিমধ্যে তিনি কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিবকে মন্ত্রিসভা ও একনেক বৈঠকে সতর্ক করেছেন। তাতেও সংবিত না ফেরায় তারা বাদ পড়ছেন দায়িত্বশীল পদ থেকে।
সূত্র মতে, বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন কমপক্ষে চারজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি তারা দলীয় পদ থেকেও বাদ পড়তে পারেন।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন
সম্প্রতি মন্ত্রিসভা থেকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ বাদ পড়ার পর নতুন করে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন শুরু হয়।
বর্তমান মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে তিন বছর পার করেছে এই মন্ত্রিসভা। এরপর থেকে এতে খুব বড় ধরনের রদবদল আসেনি। এক দফায় কেবল কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হয়েছিল। সেই রদবদলে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় দফায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর ওই মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছিল। আর শেষ পর্যায়ে মন্ত্রিসভায় ড. শামসুল আলমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।
বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন সময় মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদলের কথা আলোচনায় এলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীদেরকে সুযোগ দিয়ে তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মুরাদের ঘটনার পর যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে তাতে মন্ত্রিসভার রদবদল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যে নির্বাচনি অঙ্গীকার তা পূরণের তাগিদ অনুভব করছে সরকার। অনেক মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অনেক মন্ত্রী রুটিন কাজও ঠিকমতো করতে পারছেন না। সবাই তাকিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন!
নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসার খবর ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওই দায়িত্ব কে পাচ্ছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেবার সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সমর্থন করেন সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোশাররফ হোসেন। পরে কাউন্সিলররা তা গ্রহণ করেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তা সমর্থন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর গঠিত কমিটিতেও দলের শীর্ষ দুই পদে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
তবে এবার সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন দেখছেন দল ও সরকারের অনেকেই। এ জন্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের শারীরিক অসুস্থতাকে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যান্য পদেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে করোনা মহামারিতে অনেক দায়িত্বশীল নেতা ও সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে পদ শূন্য হওয়া এবং অভিজ্ঞদের মধ্যে বয়সজনিত নিয়মিত অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন তারা।
অন্যদিকে দলে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বড় বড় পদে থাকা বেশকিছু নেতাকে সরিয়ে ত্যাগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের সামনে আনার কথা বলছেন অনেকে। আওয়ামী লীগ সভাপতিরও তেমনটাই ইচ্ছা বলে জানাচ্ছে দলীয় সূত্র।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করতে দুর্নীতিবিরোধী যে সংগ্রাম করছি আমরা তা বাস্তবায়নের পথে আছি। দুর্নীতি-সংশ্লিষ্ট কেউ যেন আমাদের দলে ঢুকতে না পারেন এবং যারা ঢুকে পড়েছেন তাদের বের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমরা এটা করছি। যারা বিতর্কিত, অজনপ্রিয়, মাদক-সম্রাট ও মাদকসেবী, যারা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, আইন ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, যারা সাম্প্রদায়িক তাদেরও আমরা দল থেকে বের করে দেয়ার কাজ শুরু করেছি।’
তৃণমূলে সুশাসনের নির্দেশনা আসছে
ঢাকায় আগামী ১৮ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর পর এই সম্মেলন হচ্ছে। এবারের সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের ওপর তৃণমূলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কঠোর নির্দেশনা আসতে যাচ্ছে।
সচিবালয় সূত্র জানায়, ডিসি সম্মেলনের যাবতীয় নথিপত্র ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের প্রতি সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের নির্দেশনা থাকছে।
সম্মেলনে চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনেও দিকনির্দেশনা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সরকার-সংশ্লিষ্টরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালো। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। তবে এটা যেন কেবল কথার কথা না হয়। কেবল যেন স্লোগানে আবদ্ধ না থাকে।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স- স্লোগানটা বাস্তবায়নে সুশাসন অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানবাধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কার্যক্রমে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধকে নির্বাচনি চাপ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি বা নির্বাচনে আমাদেরকে সবার আগে দেশের জনগণের ওপরই নির্ভর করা উচিত।’
কারা নেতৃত্ব দেবেন নির্বাচনি মাঠে
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এইচ টি ইমামকে বলা হতো আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণের প্রাণভোমরা। প্রচলিত আছে, নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন সাজানো থেকে শুরু করে জয়ের কৌশল ঠিক করতেন তিনি। সাবেক এই আমলার মৃত্যু দলের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
তবে একাধিক সূত্র জানায়, আগামীতে এইচ টি ইমামের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে তূলনামূলক কম আলোচিত একজনকে। তিনি দায়িত্ব সামলাবেন একটি টিম হিসেবে। ফলে নির্বাচনের মাঠে কৌশল নির্ধারণ ও জয় বের আনতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীলরা।
সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার গভর্নমেন্ট নয়, গভর্নেন্সকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনি কৌশল ঠিক করছে সরকার। ফলে কে এতে লিড দেবে সেটা বড় কিছু নয়। হয়তো ছোটখাটো অবয়বের কেউই নেতৃত্ব দেবেন। তবে ফলটা খারাপ হবে না।
‘ইতিমধ্যে প্রশাসন ও সচিবালয় গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। বিতর্কিত, কর্তৃত্ববাদী, আত্মপ্রচারমুখী ও স্বার্থপর শ্রেণির কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দায়িত্বে আনা হবে।’
বিদেশি শক্তির প্রভাব বলয় ভেঙে নির্বাচন
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যে কাজ শুরু করছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় নতুন বছর ও বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়নে টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা উল্লেখ করে আরো সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
তবে আগামী নির্বাচন অতটা সহজ হবে না বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট একটি মহল। তারা এ ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তির প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। সম্প্রতি পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞাকে এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোমেসি উইং ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপ এরই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরার নির্দেশনাও একটি কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ অবশ্য এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধকে নির্বাচনি চাপ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। কারণ ওরা বলুক আর না-ই বলুক, আমরা নিজেরাই তো জানি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এতে আমেরিকা কী বলল, তাতে কী আসে যায়! তাদের বলায় সব হলে তো এতদিনে অনেক কিছুই হতো; বা বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হতো না।’
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বা নির্বাচনে আমাদেরকে সবার আগে দেশের জনগণের ওপরই নির্ভর করা উচিত। আর জনগণ বলতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন বাহিনী, সংগঠন, দল-উপদল যা আছে, তারাই নির্বাচন সম্পর্কে ভালো জানে। এই স্টেক হোল্ডাররাই ঠিক করবে নির্বাচন কেমন হবে। কারা ক্ষমতায় আসবে।
‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল। একটি দেশের বয়স ৫০, রাতারাতি এখানে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমরা কিন্তু ভারত বা আমেরিকায়ও খারাপ নির্বাচন দেখি। আমাদের এখানে যত পরিবর্তন এসেছে, তা জনগণের হাতেই হয়েছে। শুনতে হয়তো ভালো লাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কিন্তু এ দেশের সব পরিবর্তন কিন্তু এসেছে জনগণের হাত ধরে। এখানে কিন্তু ওয়াশিংটন বা দিল্লি কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।’
আরও পড়ুন:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় যোগ দেয়নি জামায়েতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি। বিএনপি ও এনসিপির মাঝে জামায়াতের জন্য সংরক্ষিত আসনটি মধ্যাহ্নভোজের আগ পর্যন্ত ছিল ফাঁকা।
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়ায় নানা রাজনৈতিক দল নানা মত দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, কমিশনের বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াতের বনিবনা না হওয়ায় মঙ্গলবারের আলোচনায় তারা যোগ দেননি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন জামায়াত আলোচনায় যোগ দেয়নি সেই উত্তর কমিশনই ভালো দিতে পারবে।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি জামায়াত আজকের বৈঠক প্রতীকী বয়কট করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচ্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে জামায়াত হয়তো একমত হতে পারেনি। তাই আলোচনায় অংশ নেয়নি।’
জামায়াতের আলোচনায় যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে আজকের আলোচনায় জামায়াতের থাকা উচিত ছিল। তারা এই আলোচনা বয়কট করেছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি। যদি মধ্যাহ্নভোজের পরেও জামায়াত আলোচনায় না আসে তাহলে পুরো ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমরা বেশিরভাগ বিষয়েই একমত হয়েছি। কিন্তু নারীদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষিত ১০০ আসন রাখার প্রয়োজন দেখি না। নারীর ক্ষমতায়ন আমরাও চাই, কিন্তু কোনো বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না।’
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করছে, নারী আসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় আলোচনার প্রথম পর্যায়ে জামায়াত যোগ দেয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
মন্তব্য