প্রণোদনার প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণে নয়ছয় করেছে বেসরকারি এবি ব্যাংক লিমিটেড। মন্দ ঋণ থাকার পরও সেই প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছাড় করেছে ব্যাংক।
এ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ওই অর্থ দিয়ে পরিশোধ করেছে আগের ঋণ। গ্রাহকের ঋণ আদায় ওভারডিউ থাকার পরও তাদের নামেই ছাড় হয়েছে টাকা। মাসে কমপক্ষে একবার ঋণগ্রহীতা গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও সেটা পালন করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন নানা অনিয়মের চিত্র।
করোনা মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিশেষ সুবিধায় জোগান দেয়া হয় অর্থ। তবে সেই অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে হরহামেশাই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় এবি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এবি ব্যাংক ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, প্রণোদনার ঋণ বণ্টনের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা দরকার। তিনি বলেন, সঠিক ব্যক্তি নির্বাচন এবং অর্থ ব্যবহারের দিকটি তদারকি করতে হবে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুশাসনের অভাবের কারণেই অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ ওঠে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন
এবি ব্যাংকের প্রণোদনার ঋণের সদ্ব্যবহার যাচাই করতে সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ১২ আগস্ট প্রথম ধাপে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পরে ২৯ আগস্ট শাখা পর্যায়ে পরিদর্শন শুরু হয়। প্রধান কার্যালয়সহ উত্তরা, মতিঝিল, প্রিন্সিপাল শাখা, কারওয়ান বাজার, কাকরাইলসহ মোট পাঁচটি শাখায় ১৭টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিদর্শন পরিচালনা করা হয়। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এবি ব্যাংক ৩৪ জন ঋণগ্রহীতাকে ২৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
যে ১৭ প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম
এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে গত বছর ৫ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ঋণের ২২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। ৫ জানুয়ারি ৮ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের পর গ্রাহক টাকা তার ওডি হিসেবে স্থানান্তর করে। ওই দিন ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার এলসি দায় শোধ করে।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ঋণের ১ কোটি টাকা ছাড়ের পর ওই দিন গ্রাহক আবার ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার এলসি দায় শোধ করেন।
১৯ জানুয়ারি ১ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের পর একইভাবে গ্রাহক ২ কোটি ৫ লাখ টাকার এলসি দায় শোধ করে।
ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি আরও ১ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের পর সেই টাকা গ্রাহক ২৭ জানুয়ারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হিসেবে স্থানান্তর করে। এভাবে একের পর এক ঋণের টাকা দিয়ে গ্রাহক ব্যাংকের বিভিন্ন দায় শোধ করেছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, এ ঋণ দিয়ে অন্য কোনো ঋণ শোধ করা যাবে না।
একই শাখায় বাংলা ফিড মিলকে দেয়া হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ। হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঋণ পেয়েই গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে পুরো টাকা একটি চেকের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করে। টাকা উঠানোর পর গ্রাহক কী কাজে সেই অর্থ ব্যবহার করেছেন বা আদৌ অর্থের সদ্ব্যবহার করেছেন কিনা তার কোনো প্রমাণ ব্যাংকের শাখা সংরক্ষণ করেনি।
আবার একই শাখা থেকে নিট এশিয়া লিমিটেডকে দেয়া হয় ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঋণ। এ ঋণের পুরো টাকা তিন ধাপে আরেকটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে গ্রাহক। ফলে সেই টাকা গ্রাহক কী করেছে, ব্যাংকের শাখায় তার কোনো প্রমাণ নেই।
প্রিন্সিপাল শাখা থেকেই রহিম টেক্সটাইল মিলসকে দেয়া হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ। ঋণ পাওয়ার তিন দিন পর গ্রাহক পুরো টাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে স্থানান্তর করে। পরে সেই টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, ব্যাংক সেটা জানে না।
ব্যাংকের উত্তরা শাখা থেকে আলেমা টেক্সটাইল লিমিটেডকে ১০ কোটি ৪১ লাখ টাকার ঋণ গ্রাহকের ওভারড্রাফট হিসেবে দেয়া হয়েছে। ওভারড্রাফট ঋণের সীমা ছিল ৫ কোটি টাকা। ঋণ দেয়ার আগে স্থিতি ছিল ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ঋণ স্থানান্তরের পরে স্থিতি দাঁড়ায় ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গ্রাহকের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় ঋণের অর্থ দিয়ে গ্রাহক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদি লোন ও এলসি সমন্বয় করেছেন বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ ঋণ দায় ওভারডিউ এবং মন্দমানের ঋণ (কু-ঋণ) থাকার পরও গ্রাহককে প্রণোদনার ঋণ দেয়া হয়েছে।
এ ঋণ প্রস্তাবের সময় গ্রাহকের গ্রুপভিত্তিক ফান্ডেড ঋণ ছিল ৩৩ কোটি ও নন-ফান্ডেড ঋণ ছিল ১৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জামানত ছিল ৯৪ কোটি টাকা।
একই শাখা থেকে মিম ডিজাইন লিমিটেডকে দেয়া হয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ। ঋণ পাওয়ার দুই দিন পরই গ্রাহক ঋণের টাকা নগদ উত্তোলন করে এবং একই দিন ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করে। পরবর্তী সময়ে অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা জমা করা হয়, যা দিয়ে বিভিন্ন টাইমে লোন ও এলসির দায় শোধ করেছে গ্রাহক।
গ্রাহক অতি চতুরতায় প্রণোদনার ঋণ দিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন ঋণ শোধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, প্রণোদনার ঋণ নিয়ে অন্য কোনো ঋণ শোধ না করার যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
ঋণ প্রস্তাবের সময় ওই গ্রাহকের মোট ঋণ দায়ের ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ওভারডিউ ছিল। সিআইবি রিপোর্টে এ দায় সাবস্ট্যান্ডার্ড (এসএমএ) মান এবং ঋণ নথিতে ঘাটতি ছিল।
ভি অ্যান্ড আর ফ্যাশন লিমিটেডকে মতিঝিল শাখা থেকে ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়। ঋণ পাওয়ার দিনই গ্রাহক ওই টাকা দিয়ে ২ কোটি টাকার টাইম লোন সমন্বয় ও এলসি দায় শোধ করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পরের দিন ৯৫ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকে স্থানান্তর করে এবং এই টাকা দিয়েও বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ করে। ঋণ প্রস্তাবের সময় গ্রাহকের সীমাতিরিক্ত ঋণ থাকার পরও তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে নেট ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি লিমিটেডকে দেয়া হয় ১০ কোটি ৮ লাখ টাকার ঋণ। ঋণের পুরো টাকা গ্রাহক ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে আল-আরাফাহ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ও ইউনাউটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে স্থানান্তর করে।
সিআইবি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রাহকের দায় সাবস্ট্যান্ডার্ড মান এবং বিপুল ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পরও ঋণ দেয়া হয়েছে।
একই শাখা থেকে নেট ওয়ার্ল্ড বিডি লিমিটেডকে দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ। ঋণ পাওয়ার পরপরই গ্রাহক পুরো টাকা আল-আরাফাহ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে। পরবর্তী সময়ে প্রায় এক সপ্তাহ পর ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ওই দুই ব্যাংকসহ এসআইবিএল থেকে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এবি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় স্থানান্তর করা হয়। এখানেও গ্রাহকের বিপুল ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পরও ঋণ দেয়া হয়েছে।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিম্পল সল্যুশন (প্রা.) লিমিটেডকে একই শাখা থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়। একইভাবে ঋণ ছাড়ের পর গ্রাহক পুরো টাকা আল-আরাফাহ ব্যাংকে স্থানান্তর করে। পরবর্তীকালে গ্রাহকের সহযোগী হিসাব থেকে সমপরিমাণ টাকা কারওয়ান বাজার শাখায় স্থানান্তর করা হয়। এখানে গ্রাহক তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন টাইম লোন ও এলসি দায় শোধ করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
কারওয়ান বাজার শাখা থেকে আরও অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ শাখা থেকে সেট ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেডকে দেয়া হয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ। একইভাবে ঋণের টাকা গ্রাহক এসআইবিএল ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে এবং পরবর্তী সময়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে এবি ব্যাংকের শাখায় আবার স্থানান্তর করে।
একই শাখা থেকে ইবিডি লিমিটেড পেয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ। একইভাবে ওয়ার্ল্ড রানার এক্সপ্রেস লিমিটেডকে দেয়া হয় ৬০ লাখ টাকা। সি চেইন লজিস্টিককে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রণোদনার অর্থ দেয়া হয়। তিনটি প্রতিষ্ঠানই ঋণের টাকা তুলে আল আরাফাহ ব্যাংকে স্থানান্তর করে। পরে ওই টাকা কোন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা ব্যাংকের শাখা জানে না।
কাকরাইল শাখা থেকে ১২ কোটি টাকা ঋণ পায় টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। ঋণ ছাড়ের পরপরই গ্রাহক ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা তার এসওডি হিসাবে স্থানান্তর করে। অবশিষ্ট টাকা গ্রাহক ব্যাংকের বিভিন্ন ফোর্সড ঋণ সমন্বয় করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ
ঋণ মঞ্জুরকালীন সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্টে বলা হয়েছে, মন্দ ঋণ থাকার পরও গ্রাহককে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেয়া হয়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা এবং ব্যাংক কোম্পানি ১৯৯১-এর ২৭ (কক)(৩) ধারার লঙ্ঘন।
১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানই প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অর্থ নিয়ে তার নিজের অথবা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পূর্বের ঋণ পরিশোধ করেছে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় ওভারডিউ থাকার পরও তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের অনুমোদনপত্রের শর্তানুসারে ঋণ তদারকির অংশ হিসেবে মাসে কমপক্ষে একবার গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের উল্লেখ থাকলেও কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রেই তা পালন করা হয়নি।
ঋণ বিতরণের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি।
গ্রাহক অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রণোদনার ঋণের অর্থ সহায়তা পেয়েছে কি না, তা শাখা কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়নি।
যা বলছে এবি ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য সঠিক নয় বলে মনে করেন এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারিক আফজাল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অবজারভেশন ডকুমেন্টেড নয়। এ তথ্য সঠিক নয়। কারণ সিআইবি রিপোর্টে খেলাপি বা মন্দ মান থাকলে সেই গ্রাহককে ঋণ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
প্রণোদনা ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রণোদনার ঋণ নিয়ে অনেক ব্যাংক এমন ধরনের কাজ করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে এসেছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা অপব্যবহার বা সঠিক ব্যবহার হয়নি এমন প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রণোদনার ঋণের বিপরীতে দেয়া সুবিধা বাতিল করা হবে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য