ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বারবারিয়া ইউনিয়নের লক্ষণপুর এলাকায় বাহারি রঙের বিদেশি মাছ চাষ করছেন সাইফুল ইসলাম মিনু। মাত্র ছয়টি মাছ দিয়ে পুকুরে চাষ শুরু করে ১৫ বছরে বাণিজ্যিক পর্যায়ে উৎপাদনে গেছেন তিনি। তার উৎপাদিত রঙিন মাছ সারা দেশে বিক্রি করা হচ্ছে।
তার সাফল্য দেখে স্থানীয় মৎস্য খামারিসহ বেকার যুবকরাও রঙিন মাছ চাষে ঝুঁকছেন।
সাইফুল ইসলাম মিনুর গড়ে তোলা আল-আমিন হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ নামক খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য রঙিন মাছকে খাবার দিচ্ছেন শ্রমিকরা৷ পুকুরের কিনারায় সেগুলো দল বেঁধে ভেসে উঠছে। এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন।
কথা হয় ১৮ বছর বয়সী রিয়াদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ মূলত শৌখিন লোকজন কেনে৷ এ জন্য এ মাছের দামও বেশি। ফলে শ্রমিকদের বেতন এখানে বেশি। সে জন্যেই পাঁচ বছর আগে বর্তমান হ্যাচারিতে চাকরি নিয়েছেন। এখানে উপার্জিত টাকা দিয়ে বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছি। এখন যা বেতন পাচ্ছি, তা দিয়ে সংসারের খরচ বহন করেও টাকা আয় করতে পারছি।’
রঙিন মাছ চাষের শুরু থেকে এই হ্যাচারিতে কাজ করেন আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘আগে অন্যের ক্ষেতে-খামারে কাজ করেছি। অনেক সময় বেকার সময় পার করেছি। হ্যাচারির মালিক সাইফুল ইসলাম রঙিন মাছ সার্বক্ষণিক দেখাশোনাসহ পরিচর্যার জন্য আমাকে নিয়ে আসেন। তিনি মাছ চাষে লাভবান হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমি এখানেই কাজ করে সংসারের ভরণপোষণ করছি।’
সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন খামারি রঙিন মাছ চাষ করছেন।
জালাল উদ্দিন নামের স্থানীয় এক খামারি বলেন, ‘৩০ বছর যাবৎ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছি। অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ চাষ করলে ক্রেতা কোথায় পাব, বিদেশি মাছ চাষ করে পথের ফকির হতে হবে– এমন চিন্তাভাবনা থেকে আগ্রহ ছিল না। সাইফুল ইসলাম সাহস করে বিদেশি মাছ আমদানি করে চাষাবাদ শুরু করলে অনেকে হাসি-তামাশা করত। কিন্তু সে কারও কথায় কর্ণপাত না করে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে সফলতা পেয়েছে। এখন তার হ্যাচারি থেকে রঙিন মাছ নিয়ে আমিও চাষ করছি।’
তিনি জানান, একসময় অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ কেনার আগ্রহ কম থাকলেও বর্তমানে শৌখিন ক্রেতা প্রচুর। এ মাছের বাজার ভালো। এ জন্য লাভের পরিমাণও বেশি।
শামীম আহম্মেদ নামের এক যুবক বলেন, ‘সাধারণত বাংলা মাছ সবাই চাষ করে। দামের পরিমাণও নির্দিষ্ট। কিন্তু রঙিন মাছের দাম বেশি হলেও ভালো বিক্রি হচ্ছে। অনার্স পাস করে চাকরির পেছনে দৌড়াদৌড়ি করেও উপযুক্ত চাকরি জোটেনি। এ জন্য রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা করছি। সফল রঙিন মাছ চাষি সাইফুল ইসলামের পরামর্শ নিয়ে চাষ শুরু করব।’
সাইফুল ইসলাম মিনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৬ সালের দিকে বিভিন্ন বাংলা মাছের চাষ শুরু করেছিলাম। মাছ বিক্রি করে লাভ হলেও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারিনি। ওই সময় অ্যাকুয়ারিয়াম মাছের ক্রেতা কম থাকলেও ভালো দাম পাওয়া যেত। এমন চিন্তাভাবনা থেকে ২০০৭ সালের দিকে অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে জাপান থেকে ছয়টি কই কার্প মাছের পোনা সংগ্রহ করি। এরপর এগুলো থেকেই রেণু উৎপাদন করে পোনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।’
তিনি জানান, মাছ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে আরও ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ সংগ্রহ করা হয়। ধীরে ধীরে হ্যাচারির সংখ্যা বৃদ্ধি করে রেণু উৎপাদন করেন তিনি এবং সেগুলো প্রতিপালন করে সারা দেশে সরবরাহ করতে শুরু করেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট ও খুলনার বিভিন্ন অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানে।
মাছের দাম সম্পর্কে তিনি জানান, ছোট মাছ প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। আর আকারে একটু বড়গুলো ২ হাজার টাকা থেকে প্রতি পিস ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের ভালো রঙিন একটি মাছের দাম পড়ে ২ লাখ টাকা।
দামি মাছের ক্রেতারা দেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর। যারা রিসোর্টের শোভা বৃদ্ধিতে জলাশয়ে রঙিন মাছ রাখেন।
সাইফুল ইসলাম মিনু বলেন, ‘প্রথমে নিজে চাষ করে এর চাষ-পদ্ধতি শিখেছি। রঙিন মাছ চাষ নতুন হওয়ায় এই কাজে সহযোগিতা করার মতো কেউ ছিল না। শুরুতে মনোবলকে কাজে না লাগালে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ৫০ বিঘা জমিতে ২৬টি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। এখানে ১৫ জন নিয়মিত শ্রমিকসহ ২৫ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে দুবাই থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আমার মাছ দেখে স্যাম্পল নিয়ে গেছেন। আশা করছি, এসব মাছ দ্রুত রপ্তানি করা সম্ভব হবে। যদি আরও অনেকে বড় পরিসরে এ মাছ উৎপাদন করেন, তাহলে বাংলাদেশে এর দাম আরও কমে আসবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে মাছ আমদানির পরিবর্তে নিয়মিত রপ্তানি করা যাবে।’
কথা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) ড. মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের ভেতরের শোভা বৃদ্ধির জন্যে আমাদের দেশের মানুষের অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ পালনের শখ আছে। এ জন্য বিদেশি প্রজাতির বিভিন্ন রঙিন মাছ উৎপাদন করছেন চাষিরা। এসব মাছ কিনে নিচ্ছেন শৌখিন মানুষজন।’
তিনি জানান, দেশে সাধু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে খলিশা, বাইম, টেংরাসহ আরও কিছু রঙিন মাছ অ্যাকুয়ারিয়ামে পালন করা যায়। কিন্তু এগুলো না নিয়ে বিদেশি মাছের দিকেই ঝুঁকছেন সবাই। কারণ চাষিরা বেশি লাভের আশায় বিদেশি মাছগুলোই অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য উৎপাদন করছেন।
ড. খলিলুর রহমান জানান, দেশি রঙিন মাছ সংগ্রহ করে তারা জিংক ব্যাংকে রাখছেন। ব্যাপক পরিমাণে এসব মাছ উৎপাদন করতে ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু হয়েছে। যদি শৌখিন লোকজন দেশি রঙিন মাছ পালতে আগ্রহী হয়, তাহলে বিদেশি মাছ আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।
আরও পড়ুন:
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য