মাদারীপুর জেলাসহ পাশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকার ১৫৭ যুবক লিবিয়ার একটি জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন করছেন। দালালের হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত এখন তাদের পরিবার। টাকা গেলেও ফিরে পেতে চান প্রিয়জন ও স্বজনদের।
অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। মাদারীপুর জেলাজুড়ে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু অর্থ নয়, প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেক যুবককে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথমে চক্রের সদস্যরা ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে আগ্রহী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে সেখানে তুলে দেয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। পরিবার মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হয় চক্রের হাতে।
যারা টাকা দেয়, দালালরা তাদের ছাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকা বা ট্রলারে তুলে দেয়। নৌকাডুবিতে অনেকের সলিলসমাধি হচ্ছে সাগরে। ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ ইতালির তীরে পৌঁছালেও বেশির ভাগই হয় লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে জেলখানায় বন্দি হয়, নতুবা নৌকাডুবিতে প্রাণ দেয়।
যারা কারারুদ্ধ হয়, তাদের ছাড়িয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে দালালরা পরিবারের কাছ থেকে আরেক দফা অর্থ হাতিয়ে নেয়। এভাবেই দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি, সোনাদানা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিরীহ পরিবারগুলো।
প্রায় এক বছর আগে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় মাদারীপুরসহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও শরীয়তপুরের নড়িয়ার দুই শতাধিক যুবক। স্থানীয় বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা প্রথমে লিবিয়ায় পৌঁছায়।
এরপর তাদের তুলে দেওয়া হয় লিবিয়ায় থাকা অন্য দালালদের হাতে। সেখানে শুরু হয় নির্যাতন। তাদের নৌকায় (গেম) করে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে পারিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় আরও ৪-৫ লাখ টাকা। তারপর দালালরা ভুক্তভোগীদের নৌকায় তুলে দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর লিবিয়ার মাফিয়াদের দিয়ে আটক করানো হয় তাদের।
পরে ছাড়ানোর নাম করে আবার ৪-৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় দেশে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে। সন্তান বা স্বজনকে বাঁচাতে এভাবে তিন দফা দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয় প্রতিটি পরিবার।
সর্বশেষ তিন মাস আগে নৌপথে ইতালিতে পাড়ি দেওয়ার পথে কোস্টগার্ডের কাছে ধরা পড়ে যায় দুই শতাধিক যুবক। পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় লিবিয়ার ‘আল-জাহারা খামছাখামছিল ৫৫’ নামক কারাগারে।
এসব যুবক এখন জেলখানায় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য লিবিয়ার স্থানীয় দালালদের টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত এখন পরিবারগুলো। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিটি পরিবারকে ইতিমধ্যে গুনতে হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
কোনো উপায় না থাকায় স্বজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়ে ভুক্তভোগী ১৫৭ পরিবার মাদারীপুর প্রেস ক্লাব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক দফা মানববন্ধন করেছে। কারারুদ্ধদের মধ্যে ১২০ জন মাদারীপুর জেলার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, এ যুবকদের ইতালিতে নেওয়ার জন্য লিবিয়ায় অবস্থানরত দালাল চক্রের মূলহোতা সোহেল নামের এক ব্যক্তি তাদের থেকে টাকা নেন। পরে ভুক্তভোগীরা ধরা পড়লে তাদের ছাড়ানোর জন্য সোহেল পরিবারের কাছ থেকে আবার টাকা নেন। কয়েক দফায় তিনি প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সোহেলের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নগরপুর উপজেলার কনোরা এলাকায়। সোহেলের সহযোগী হিসেবে কনোরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আফজাল হোসেন টাকা সংগ্রহ করেন বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদারীপুরসহ পাশের জেলাগুলোয় এখনও সক্রিয় বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী দালালদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার কুমারের ট্যাক এলাকার আম্বিয়া বেগম, সদর মিঠাপুর এলাকার আলমগীর মুন্সী, সদর পেয়ারপুর ইউনিয়নের বরাইল বাড়ি এলাকার সবুজ মিঞা, রাজৈর মহিষমারি এলাকার সজীব, রাজৈর বলগ্রাম এলাকার মাসুদ ও মিরাজ মাদবর, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রফিক মাতবর। এ রকম শত শত দালাল নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তবে এসব বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের চাপে পড়ে ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। অভিযুক্তদের পরিবারের সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কিছুই জানেন বলে দাবি করেন। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে অনেকে ঘরে তালা দিয়ে উধাও হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর চরমুগিরা কুমারেরট্যাক এলাকায় মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত সাবেক নারী ইউপি সদস্য আম্বিয়া বেগমকে পাওয়া যায় তার বাড়িতে।
তার মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে ওই এলাকার ১৪ জন যুবক বর্তমানে লিবিয়ার জেলে আটক থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে লিবিয়া যাওয়ার জন্য কেউ টাকা দেয়নি। আমি শুধু আমার বোনজামাইকে পাঠানোর জন্য টাকা নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
শুধু লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার নামেই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে ইতালি যাওয়ার নামেও চলছে দালালদের প্রতারণা। চলতি বছরের ৩ আগস্ট মাদারীপুরের পাঁচ যুবককে রোমানিয়ায় আটকে রেখে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা করে দাবি করেছিল একটি দালাল চক্র।
ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করলেও পরে দালালদের সঙ্গে সমঝোতা হলে মামলা তুলে নেন তারা। সংগত কারণেই দালালচক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
মাদারীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিদেশে যেতে নিয়মিত প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও মামলা করতে আগ্রহ দেখায় না অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরিবার। আবার মামলা করলেও পরে সমঝোতা করে নেয় তারা।
সম্প্রতি মানব পাচার আইনে মামলা করার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে জেলায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয় দুটি। পরের বছর হয় মাত্র একটি। এ দুই বছরে কেউ গ্রেপ্তার হননি। ২০১৯ সালে তিনটি মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার হন। পরের বছর মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১টিতে, আর গ্রেপ্তার হন ৩৫ জন।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু গ্রেপ্তারের কিছু দিন পর অধিকাংশই জামিনে বের হয়ে আবার মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।
দালালদের প্রলোভনে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছেন মাদারীপুর জেলার অনেক যুবক। কেউ কেউ অবৈধভাবে বিদেশ গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেক যুবক নিখোঁজ আছেন বছরের পর বছর ধরে। পরিবারের লোকজন এখনও তাদের পথ চেয়ে বসে আছেন।
গত বছরের ১৬ মে ৮৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া সীমান্তে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ৩৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত উদ্ধার করে। পরে জনা যায়, ৩৩ জনের মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন মাদারীপুরের। ওই নৌকায় থাকা মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের নয়ারচর গ্রামের সেন্টু মণ্ডলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব হোসেন বলেন, ‘সাগর পাড়ি দিতে ঝুঁকি আছে, এ কথা জেনেও সবাই যায়। সবাই দালালের প্রলোভনে পড়ে সব ভুলে যায়। পরে দালালরা তাদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দেয় পুরো পরিবারকে।’
লিবিয়ার জেলখানায় বন্দি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বলগ্রামের বাসিন্দা সামিউলের মা রেবা বেগম বলেন, ‘বলগ্রাম এলাকার মিরাজ নামে এক দালালের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার “গেম করানোর” জন্য শিপন নামে এক দালালকে টাকা দিই। এ পর্যন্ত আমার ১৫ লাখ টাকা গেছে। এখন আমি আমার ছেলে সামিউলকে জেল থেকে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
মাদারীপুর সদর রাজারহাট এলাকার লিমা বেগমের স্বামী সুজন মাতুব্বর বন্দি রয়েছেন লিবিয়ার একটি কারাগারে। লিমা বেগম বলেন, ‘আমরা মোশারফ নামে এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাঠিয়েছি আমার স্বামী সুজন মাতুব্বরকে।
ইতালি যাওয়ার পথে তিনবার পুলিশের কাছে ধরা খাইছেন তিনি। তিনবারই অনেক টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়ানো লাগছে। এখনও তিনি জেলে আছেন। আমি আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ইতালি যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি মাদারীপুর জেলায়। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের কাছে আসেন পরিবারের লোকজন। এর বাইরে সাধারণত কেউ অভিযোগ করেন না। তবে পুলিশ নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মামলা করার জন্য উৎসাহী করা হয়।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমরা দালাল চক্রের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। লিবিয়ায় যারা বন্দি আছে, তাদের অধিকাংশই অবৈধ পথে সেখানে গিয়েছে। তার পরও তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা করছি। তাদের স্বজনরা লিখিত দিয়েছেন।
‘প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী করা যায়। কেউ যাতে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সবাইকে সচেতন করছি। আমরা দালালদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য