মাদারীপুর জেলাসহ পাশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকার ১৫৭ যুবক লিবিয়ার একটি জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন করছেন। দালালের হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত এখন তাদের পরিবার। টাকা গেলেও ফিরে পেতে চান প্রিয়জন ও স্বজনদের।
অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। মাদারীপুর জেলাজুড়ে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু অর্থ নয়, প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেক যুবককে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথমে চক্রের সদস্যরা ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে আগ্রহী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে সেখানে তুলে দেয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। পরিবার মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হয় চক্রের হাতে।
যারা টাকা দেয়, দালালরা তাদের ছাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকা বা ট্রলারে তুলে দেয়। নৌকাডুবিতে অনেকের সলিলসমাধি হচ্ছে সাগরে। ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ ইতালির তীরে পৌঁছালেও বেশির ভাগই হয় লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে জেলখানায় বন্দি হয়, নতুবা নৌকাডুবিতে প্রাণ দেয়।
যারা কারারুদ্ধ হয়, তাদের ছাড়িয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে দালালরা পরিবারের কাছ থেকে আরেক দফা অর্থ হাতিয়ে নেয়। এভাবেই দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি, সোনাদানা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিরীহ পরিবারগুলো।
প্রায় এক বছর আগে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় মাদারীপুরসহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও শরীয়তপুরের নড়িয়ার দুই শতাধিক যুবক। স্থানীয় বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তারা প্রথমে লিবিয়ায় পৌঁছায়।
এরপর তাদের তুলে দেওয়া হয় লিবিয়ায় থাকা অন্য দালালদের হাতে। সেখানে শুরু হয় নির্যাতন। তাদের নৌকায় (গেম) করে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে পারিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় আরও ৪-৫ লাখ টাকা। তারপর দালালরা ভুক্তভোগীদের নৌকায় তুলে দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর লিবিয়ার মাফিয়াদের দিয়ে আটক করানো হয় তাদের।
পরে ছাড়ানোর নাম করে আবার ৪-৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় দেশে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে। সন্তান বা স্বজনকে বাঁচাতে এভাবে তিন দফা দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয় প্রতিটি পরিবার।
সর্বশেষ তিন মাস আগে নৌপথে ইতালিতে পাড়ি দেওয়ার পথে কোস্টগার্ডের কাছে ধরা পড়ে যায় দুই শতাধিক যুবক। পরে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় লিবিয়ার ‘আল-জাহারা খামছাখামছিল ৫৫’ নামক কারাগারে।
এসব যুবক এখন জেলখানায় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য লিবিয়ার স্থানীয় দালালদের টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত এখন পরিবারগুলো। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিটি পরিবারকে ইতিমধ্যে গুনতে হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
কোনো উপায় না থাকায় স্বজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়ে ভুক্তভোগী ১৫৭ পরিবার মাদারীপুর প্রেস ক্লাব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক দফা মানববন্ধন করেছে। কারারুদ্ধদের মধ্যে ১২০ জন মাদারীপুর জেলার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, এ যুবকদের ইতালিতে নেওয়ার জন্য লিবিয়ায় অবস্থানরত দালাল চক্রের মূলহোতা সোহেল নামের এক ব্যক্তি তাদের থেকে টাকা নেন। পরে ভুক্তভোগীরা ধরা পড়লে তাদের ছাড়ানোর জন্য সোহেল পরিবারের কাছ থেকে আবার টাকা নেন। কয়েক দফায় তিনি প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সোহেলের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নগরপুর উপজেলার কনোরা এলাকায়। সোহেলের সহযোগী হিসেবে কনোরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আফজাল হোসেন টাকা সংগ্রহ করেন বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদারীপুরসহ পাশের জেলাগুলোয় এখনও সক্রিয় বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী দালালদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার কুমারের ট্যাক এলাকার আম্বিয়া বেগম, সদর মিঠাপুর এলাকার আলমগীর মুন্সী, সদর পেয়ারপুর ইউনিয়নের বরাইল বাড়ি এলাকার সবুজ মিঞা, রাজৈর মহিষমারি এলাকার সজীব, রাজৈর বলগ্রাম এলাকার মাসুদ ও মিরাজ মাদবর, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রফিক মাতবর। এ রকম শত শত দালাল নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তবে এসব বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের চাপে পড়ে ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। অভিযুক্তদের পরিবারের সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কিছুই জানেন বলে দাবি করেন। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে অনেকে ঘরে তালা দিয়ে উধাও হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর চরমুগিরা কুমারেরট্যাক এলাকায় মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত সাবেক নারী ইউপি সদস্য আম্বিয়া বেগমকে পাওয়া যায় তার বাড়িতে।
তার মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে ওই এলাকার ১৪ জন যুবক বর্তমানে লিবিয়ার জেলে আটক থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে লিবিয়া যাওয়ার জন্য কেউ টাকা দেয়নি। আমি শুধু আমার বোনজামাইকে পাঠানোর জন্য টাকা নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
শুধু লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার নামেই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে ইতালি যাওয়ার নামেও চলছে দালালদের প্রতারণা। চলতি বছরের ৩ আগস্ট মাদারীপুরের পাঁচ যুবককে রোমানিয়ায় আটকে রেখে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা করে দাবি করেছিল একটি দালাল চক্র।
ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করলেও পরে দালালদের সঙ্গে সমঝোতা হলে মামলা তুলে নেন তারা। সংগত কারণেই দালালচক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
মাদারীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিদেশে যেতে নিয়মিত প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও মামলা করতে আগ্রহ দেখায় না অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরিবার। আবার মামলা করলেও পরে সমঝোতা করে নেয় তারা।
সম্প্রতি মানব পাচার আইনে মামলা করার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে জেলায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয় দুটি। পরের বছর হয় মাত্র একটি। এ দুই বছরে কেউ গ্রেপ্তার হননি। ২০১৯ সালে তিনটি মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার হন। পরের বছর মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১টিতে, আর গ্রেপ্তার হন ৩৫ জন।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু গ্রেপ্তারের কিছু দিন পর অধিকাংশই জামিনে বের হয়ে আবার মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।
দালালদের প্রলোভনে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছেন মাদারীপুর জেলার অনেক যুবক। কেউ কেউ অবৈধভাবে বিদেশ গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেক যুবক নিখোঁজ আছেন বছরের পর বছর ধরে। পরিবারের লোকজন এখনও তাদের পথ চেয়ে বসে আছেন।
গত বছরের ১৬ মে ৮৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া সীমান্তে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ৩৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত উদ্ধার করে। পরে জনা যায়, ৩৩ জনের মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন মাদারীপুরের। ওই নৌকায় থাকা মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের নয়ারচর গ্রামের সেন্টু মণ্ডলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব হোসেন বলেন, ‘সাগর পাড়ি দিতে ঝুঁকি আছে, এ কথা জেনেও সবাই যায়। সবাই দালালের প্রলোভনে পড়ে সব ভুলে যায়। পরে দালালরা তাদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দেয় পুরো পরিবারকে।’
লিবিয়ার জেলখানায় বন্দি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বলগ্রামের বাসিন্দা সামিউলের মা রেবা বেগম বলেন, ‘বলগ্রাম এলাকার মিরাজ নামে এক দালালের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার “গেম করানোর” জন্য শিপন নামে এক দালালকে টাকা দিই। এ পর্যন্ত আমার ১৫ লাখ টাকা গেছে। এখন আমি আমার ছেলে সামিউলকে জেল থেকে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই।’
মাদারীপুর সদর রাজারহাট এলাকার লিমা বেগমের স্বামী সুজন মাতুব্বর বন্দি রয়েছেন লিবিয়ার একটি কারাগারে। লিমা বেগম বলেন, ‘আমরা মোশারফ নামে এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পাঠিয়েছি আমার স্বামী সুজন মাতুব্বরকে।
ইতালি যাওয়ার পথে তিনবার পুলিশের কাছে ধরা খাইছেন তিনি। তিনবারই অনেক টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়ানো লাগছে। এখনও তিনি জেলে আছেন। আমি আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘ইতালি যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি মাদারীপুর জেলায়। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের কাছে আসেন পরিবারের লোকজন। এর বাইরে সাধারণত কেউ অভিযোগ করেন না। তবে পুলিশ নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মামলা করার জন্য উৎসাহী করা হয়।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমরা দালাল চক্রের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। লিবিয়ায় যারা বন্দি আছে, তাদের অধিকাংশই অবৈধ পথে সেখানে গিয়েছে। তার পরও তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা করছি। তাদের স্বজনরা লিখিত দিয়েছেন।
‘প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দেখা যাক কী করা যায়। কেউ যাতে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সবাইকে সচেতন করছি। আমরা দালালদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
অন্ধকার ঘরে চৌকির ওপর বসে আছে ১৫ বছর বয়সী রিয়াজ। গলায় শেকল পরিয়ে ঝুলানো বড় তালা। শেকলের অন্য প্রাপ্ত চৌকির সঙ্গে প্যাঁচানো। কোনোভাবে যেন শেকল খুলে বা চৌকি ভেঙে বাইরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করেছে পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে এভাবেই শেকলবন্দি রিয়াজ। মাঝে-মধ্যে বাবা ও মায়ের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার সুযোগ মিললেও ছাড়া মেলে না এই কিশোরের।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে মা নার্গিস খাতুন ও বাবা লিটন হোসেনের সঙ্গে এভাবেই দিন কাটছে ছেলেটির।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাত বছর আগে শহরের আরাপপুর এলাকায় থাকা অবস্থায় কিছু বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে চুরি করা শুরু করে রিয়াজ। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই চুরি করে সে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরসহ আশপাশের জেলাতে গিয়েও সে চুরি করেছে।
চুরি করা অনেকটা নেশার মতো রিয়াজের কাছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ওকে বাড়িতে দিয়ে গেলেও তার চুরি বন্ধ হয়নি। নানা স্থান থেকে একের পর এক অভিযোগ পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বাবা-মা। উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তানকে শেকলে তালাবদ্ধ করে রাখা শুরু করেন তারা। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ তিনটি বছর। তারপরও সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায় রিয়াজ। আবারও জড়িয়ে পড়ে চুরি ঘটনায়।
লিটন হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ সুযোগ পেলেই চুরি করে। চুরি করাটা যেন ওর নেশা। উপায় না পেয়ে বাবা হয়েও তিন বছর ধরে সন্তানকে গলায় শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। কী করব বলেন! যেখানে যায় সেখান থেকেই চুরি করে।
‘আমরা উপায় না পেয়ে বেঁধে রেখেছি। কতবার পুলিশ এসে বাড়িতে দিয়ে গেছে। কত ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো সমাধান হচ্ছে না।’
মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান। বড় সন্তান মেয়ে। ছেলেকে এভাবে রাখতে আমার খুব খুবই কষ্ট। আমি কিচ্ছু চাই না। শুধু চাই ও পড়াশোনা করুক। অন্য ছেলেদের মতো খেলা করুক, ঘুরে বেড়াক।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক কোনো সমস্যার কারণে রিয়াজ এমন কাজ বার বার করছে। নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘কয়েকটি কারণে শিশু রিয়াজ একই কাজ বার বার করছে। পরিবারে যদি এমন কেউ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকত তাহলে এমনটা হতে পারে।
‘ওর মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মোটিভেশন দিলে ছেলেটির এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ, তবে রাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, আরও কটা দিন এভাবেই তা চলবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এতে গরম তেমন একটা কমবে না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হওয়ারও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়ার খবরে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এর ফলে ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে সোমবার চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশজুড়ের রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার আগেও গত ১৯ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেয়া হয়। অ্যালার্ট থাকবে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত।
টানা কদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, বরিশালেও প্রচণ্ড গরম। সোমবার খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে সহোদর দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালীতে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়কে মানববন্ধন করে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে।
মধুখালী থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের পাইলট স্কুলের সামনে থেকে নওপাড়া পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ ডুমাইনের ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মধুখালীতে তারা গাছের গুড়ি ফেলে সড়কে বসে পড়ে।
এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে জানান ওসি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা পাওয়া গেছে। স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধান উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নওরোজ মিয়াসহ এলাকার তিনজন কৃষক চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নতমানের নতুন একটি জাত। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাতটি সর্বাধিক লম্বা ও সরু। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। বিদেশ থেকে যে বাসমতি চাল আমদানি করা হয় এটাও অবিকল সেই চালের মতো। এজন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।
এর বাজারমূল্যও বেশ ভালো জানিয়ে সূত্র আরও জানায়, উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। তবে ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধান রপ্তানিও করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। এই প্রথম নতুন জাতের বিনা ধান-২৫ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি ধান ধরেছে।
‘অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা ধান-২৫ জাতে শীষ প্রতি ধানের পরিমাণও বেশি। চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় নিজেকে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলছে বলে মনে হচ্ছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।’
ঝিনাইদহ জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন। আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন ও মহেশপুর উপজেলা টিআই হুসাইনসহ আনসার সদস্যরা তাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
সংবাদকর্মীরা জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার অফিসে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন সেখানে গেলে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ। এক পর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন এক নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন সোহাগ।
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অন্য আসনার সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন। আমাকে সেখানে এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়। পরে মোবাইলে সহকর্মীদের ফোন করলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি ওই কর্মকর্তাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু ঘটেনি। সে প্রথমে পরিচয় না দেয়ায় তাকে রুমের মধ্যে বসিয়ে রেখেছিলাম। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।
বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।
জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।
‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’
আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’
কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’
প্রান্তিক জনগণের যাতায়াত সুবিধা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে আসছে না সরকারের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাড়িয়ে আছে সেটি।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডারস এবং মেসার্স কহিনুর এন্টাইপ্রাইজ। সংযোগ সড়ক ছাড়াই ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথমার্ধে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০ কোটি থাকলেও পরবর্তীতে সংযোগ সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের আরও পাঁচ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর সেতু ও সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় উন্নয়নকাজের ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৪৫৪ হাজার টাকা। তবে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবহারোপযোগী হয়নি সেতুটি।
স্থানীয় মির্জাপুর এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ দেখে ভাবছিলাম, আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে, কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা না থাকায় আমরা কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারি না। আগের মতো নৌকায় করেই খেতের ফসল আনতে হচ্ছে। আমাগো মনের আশা মনেই রইল। তাহলে সরকার এত টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করল কেন?’
আরেক কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সেতুর পাশে আমার দেড় শতাংশ কৃষিজমি আছে। সেতুর রাস্তার জন্য আমার জমি নিতে চাইছে। এলাকার মানুষের ভালোর জন্য আমার জমি দিতে চাইছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে খালি শুনতেছি, আমাগো জমি অধিগ্রহণ করা হবে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমিতে আগের মতো ইরি ধানের আবাদ করছি।’
স্থানীয় বালিয়াবাধা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের পর একদিনের জন্যও কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারে নাই। সেতুটি ব্যবহার করতে পারলে সেতুর আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো।
‘সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় আমাদের ও আশপাশের এলাকার মানুষকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করবে সরকার।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার জমির মালিকদের বাধার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের জায়গা বুঝে পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আর সংযোগ সড়কের কাজ করতে আমাদের সময় লাগবে ৪-৫ মাস। আমরা যত দ্রুত পারব, তত দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ভূমি জটিলতা কেটে যাবে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছে।’
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মানিকগঞ্জ ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর এল এ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুত ভূমির মালিকদের তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য