দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাঁটার জন্য ঢাকার ফুটপাতগুলোতে বসানো বিশেষ টাইলস তেমন কাজে লাগে না। ভাঙাচোরা ফুটপাত, হকারের দখল আর নানারকম প্রতিবন্ধকের কারণে এ আয়োজন পণ্ড হয়ে যায়। লোকজনও খুব একটা জানে না, এসব টাইলসের গুরুত্ব কী। তারা এগুলোকে শুধুই নান্দনিক ডিজাইন মনে করে।
নগরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে লাল রঙের টাইলসের মাঝে হলুদ রঙের টাইলস বসানো হয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাঁটার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। বিশেষ করে প্রধান সড়কের ফুটপাতগুলোয় এটি দেখা যায়।
২০১৫ সালে এই বিশেষ টাইলস ফুটপাতে বসানোর উদ্যোগ নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পরে দুই সিটি করপোরেশনই এই টাইলস বসানো শুরু করে। এখনও এ প্রকল্প এখনও চলমান।
হলুদ টাইলসগুলো অমসৃণ, যাতে ঢেউখেলানো উঁচু ধার (রিলিফ) থাকে। এর ফলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা স্পর্শের অনুভূতির সাহায্য এই টাইলস বরাবর হেঁটে যেতে পারেন। আবার ফুটপাত যেখানে ঢালু, সেখানে টাইলসে ঢেউখেলানো রিলিফের বদলে গোলাকার বৃত্তের রিলিফ রয়েছে। এটি থাকলে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বুঝতে পারেন, এখানে ফুটপাত নেমে গেছে। এতে তিনি সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বা অন্যের সাহায্য নিয়ে গন্তব্য ঠিক করবেন।
রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, অনেক জায়গায় ফুটপাতে এই হলুদ টাইলস ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় কোনো টাইলসই নেই। আবার কোথাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে এখনও টাইলসই বসানো হয়নি।
ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো, ফুটপাতে যেখানে-সেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি, টেলিফোনের খুঁটি, গাছসহ অনেক প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ পথচারী জানেন না, ফুটপাতে এই বিশেষ টাইলসের তাৎপর্য কী।
নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সুলতান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টাইলস বসানোয় আমাদের উপকার হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় ফুটপাত ভাঙা, রাস্তায় গাছপালা আর দোকানের দৌরাত্ম্যে ঝামেলা হয়। পরিচিত জায়গার বাইরে গেলে পড়ে যাই, হাত-পা ছিঁড়ে যায়। অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও এই টাইলসের ব্যবহার জানেন না।’
এই টাইলসের ওপরে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন যেসব হকার, এগুলোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই কোনো।
এ রকমই এক হকারের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার ফুটপাতে। তিনি বলেন, ‘এই টাইলস তো মনে হয় এমনিতেই বসাইছে। কেন বসাইছে জানি না।’
তাকে যখন বলা হয়, তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের জায়গায় দোকান বসিয়েছেন, তখন তিনি কোনো উত্তর দেননি।
যেভাবে শুরু এই বিশেষ ব্যবস্থার
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান ভিজুয়ালি ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটির (ভিপস) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নিজেও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
নিউজবাংলাকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই উদ্যোগটা এসেছিল উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যখন মেয়র ছিলেন, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আমরা তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলাম। পরে দুই সিটি করপোরেশনেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
‘আমরা যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছি, তারা রাস্তায় চলার সময় যেন টাইলস ধরে চলতে পারি, এটাই উদ্দেশ্য। প্রথম দিকে সঠিক নিয়ম ধরেই যাত্রাটা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতা শুরু হয়। অনেক জায়গায় নিয়ম মানে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ফুটপাতের সাইড দিয়ে যাব, নাকি মাঝ দিয়ে যাব, কোথায় থামব- এ টাইলস আমাদের একটা গাইডলাইন দেবে। মূল কালার থেকে ব্রাইট করে এই টাইলসের রং হলুদ করা হয়। হলুদ টাইলস রাতেও ফুটে ওঠে। এই হলুদ টাইলসে সোজা লাইন। এর মানে সামনে চলো।
‘গোল ডটের টাইলস বসানো হয়েছে থামার জায়গায়। এই টাইলস বিল্ডিংয়ের গেট, বাস স্টপসহ বিভিন্ন থামার জায়গা বোঝায়। এই জায়গায় থেমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি ডানে নাকি বামে যাব।’
এই টাইলস বসাতেও অনেক জায়গায় ভুল করা হয়েছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় মোটরসাইকেলও ফুটপাতে উঠে যায়। তা ছাড়া মানুষ চলতে চলতে ঘষায় ঘষায় বেশির ভাগ জায়গায় হলুদ রং খুঁজে পাওয়া যায় না। সোজা লাইন (রিলিফ) সমান হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মানুষ নিজেদের মতো করে লাল টাইলস বসিয়েছে। প্রথম দিকে বছরখানেক নিয়মগুলো ভালোভাবেই যাচ্ছিল। এখন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাচ্ছে।’
ফুটপাতের প্রতিবন্ধকতা
ভিজুয়ালি ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটির (ভিপস) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ড্রেনের ওপর দিয়েই ফুটপাত করেছে। এই ড্রেনের ঢাকনার ওপরে কোনো টাইলস নাই। অনেক জায়গায় ঢাকনা ফাঁকা। অভিযোগ আছে, এই ঢাকনায় ছড়ি ঢুকে গিয়ে ছড়ি ভেঙে গেছে। এই ফাঁকে অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পা ঢুকে গিয়ে স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায়। অনেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পান, অনেকে সামনে উঁচু-নিচু দেখে আতঙ্কিত হন।
‘অনেক জায়গায় ড্রেনের ঢাকনার মুখ খোলা থাকে। ময়লা উঠিয়ে পাশে রেখে দিয়েছে। রমনা পার্ক, গুলশান, মহাখালীসহ অনেক জায়গায় দেখেছি প্রতিবন্ধীদের হাঁটার লাইনে গাছ। তার মানে সোজাসুজি গেলে আমার গাছের সঙ্গে বাড়ি খেতে হবে। আবার এই গাছকে এড়িয়ে গেলে আমাকে লাইনচ্যুত হতে হবে।
‘রাস্তায় অনেক জায়গায় মোটরসাইকেল ঠেকানোর জন্য মাঝখানে রড বসিয়ে দিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, এ সব প্রতিবন্ধকতা তুলে দিতে। পুলিশদের আমরা বোঝাতে পারি নাই। আবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন যারা করে, তাদের কথা হচ্ছে গাছ কাটা যাবে না। গাছ না কাটলে টাইলস ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে দেবেন। ওইটা কিন্তু আর করা হয় নাই। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় টাইলসই বসায়নি।’
প্রচার না থাকায় সঠিক ব্যবহার নেই
টাইলস কেন দেয়া হয়েছে, এটার উদ্দেশ্য কী- এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো প্রচারাভিযান নেই।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটাকে তারা (সিটি করপোরেশন) পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট হিসেবে নিয়েছে। তবে ক্যাম্পেইন ওভাবে করে নাই। এ ছাড়া হকার বসে হাঁটার জায়গা নষ্ট করে রাখে অথবা দখল করে রাখে। নোংরা কাদা তো আছেই।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাই ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে ফলের ঝুড়িতে পা দিয়েছে। তখন লোকজন তো পারলে তাকে মারে। তার হাঁটার জায়গায় বসে তাকেই মারতে যাচ্ছে।’
কী বলছে সিটি করপোরেশন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে যতগুলো প্রজেক্ট ঢাকা শহরে আমরা বাস্তবায়ন করি, সবই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ফুটপাতে বিশেষ ধরনের টাইলস ব্যবহার করেছি। এই কর্মসূচি এখনও চালু। যেখানেই আমরা রাস্তাঘাটে উন্নয়নের কাজ করি, সেখানেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ টাইলস বসানো হয়।
‘যেখানে এগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলো সংস্কারের কাজও চলমান। তবে যেখানে রাস্তা ভেঙে ফেলতে হবে বা যেখানে নতুন করে রাস্তা তৈরি করা হবে– সেসব জায়গায় ভাঙা টাইলস এখনও সংস্কার করা হয়নি।’
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য দেয়া বিশেষ টাইলসের লাইনে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন বুথ ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে এই প্রতিবন্ধকতার যেন সম্মুখীন হতে না হয়, সে নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকবে না। এটা অনেকটা কারেকশানও করে ফেলেছি আমরা।
‘এ ছাড়া গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি আমরা রাস্তা থেকে একটা স্পেশাল অ্যারেজমেন্টে অপসারণ করছি। তবে অনেক প্রাচীন গাছ আসলে কাটা যায় না। গাছ কাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই গাছগুলো রেখে আমরা এমনভাবে নকশা করছি, যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনায়াসে চলতে পারে।’
ফুটপাতে হকারদের দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৯ হাজার মানুষ বসবাস করে। যদি এক-দুই হাজার মানুষ থাকত, তাহলে ঢাকা শহর অন্যরকম হতো। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে বেদখল না হয় ফুটপাত।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দিকটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ জন্য ৯৬ কিলোমিটারের বেশি ফুটপাতে টাইলস স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১১ কিলোমিটার নতুন রাস্তায় এসব টাইলস বসানো হবে। যেসব জায়গায় টাইলস ভেঙে গেছে, সেগুলো নতুন করে ঠিক করা হচ্ছে। ফুটপাতে ড্রেনের ঢাকনা অনেক সময় চুরি হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য