অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে কিলোমিটারের বদলে কিছু দূর পরপর একটি নির্ধারিত দূরত্বের হিসাব করে ওয়েবিল নামে কৌশল বন্ধ হয়নি। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ায় এ বিষয়টি আবার সামনে আসার পর পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছিল, ঢাকায় কোনো বাস ওয়েবিলে চলবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি বাসও ওয়েবিল ছাড়া চলছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ, কোথাও কোথাও তিন গুণ আদায় চলছে এই সুযোগে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস ভাড়া হবে কিলোমিটার হিসাবে। প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২ টাকা ৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সা। তবে একজন যেটুকু দূরত্বেই যান না কেন, রাজধানীতে বড় বাসে তাকে ১০ টাকা আর মিনিবাসে দিতে হবে ৮ টাকা।
অর্থাৎ কোনো যাত্রী যদি ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার যান, তাহলে তার কাছ থেকে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারে যোগ হওয়ার কথা ২ টাকা ১৫ পয়সা।
ঢাকার বাস চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে পরীক্ষামূলক চালু হওয়া ঢাকা নগর পরিবহনে এভাবেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এই সেবা চালু হওয়ার পর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত রুটটি চালু হওয়ার পর এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের বাস ভাড়া দিতে হচ্ছে কম।
কিন্তু অন্য কোনো রুটে এই ব্যবস্থা নেই। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ওয়েবিল বসিয়ে এক ওয়েবিল থেকে পরের ওয়েবিল পর্যন্ত পুরো পথের ভাড়া নেয়া হয় যাত্রীর কাছ থেকে।
যেমন- এয়ারপোর্ট পরিবহনের বাসে করে কেউ যদি কারওয়ান বাজার নামেন, তাহলে তাকে সেখানে থাকা ওয়েবিলের ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ২০০ গজ দূরে বাংলামোটর নামলেই তাকে দিতে হয় গুলিস্তানের ভাড়া।
গাজীপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত চলা প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ওয়েবিল বসিয়েছে সাতরাস্তা মোড়ের আগে। কেউ যদি মগবাজার নামতে চান, তাহলে সাতরাস্তা ওয়েবিল থেকে সদরঘাট ওয়েবিল পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকার পুরোটাই দিতে হয়। অথচ মগবাজার ওয়্যারলেস থেকেও বাসটি যাত্রী তোলে এবং সদরঘাট পর্যন্ত ভাড়া নেয় ২০ টাকাই।
ঢাকা শহরে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের নানা কৌশলের মধ্যে ওয়েবিল চালু হতে থাকে ২০১৭ সালে। প্রথমে কয়েকটি রুটে এবং পরে সব কটি রুটেই এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় হতে থাকে।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত ৭ নভেম্বর বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসার ফলে ওয়েবিলের নামে যাত্রী ঠকানোর এ বিষয়টি আবার সামনে আসে। দেখা যায়, ভাড়া বাড়িয়ে যত টাকা করা হয়েছে, আগে থেকেই ওয়েবিলের সুযোগে তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছিল। ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে এর পর থেকে আদায় হতে থাকে নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি।
গত ১০ নভেম্বর বাস মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘কোনো ধরনের সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের মাধ্যমে কোনো বাস চলবে না। আমরা তিন দিন সময় দেব, এরপর কোনো গেটলক ও সিটিং সার্ভিসের বাস চললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরের দিন সড়ক পরিবহন সচিব মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে আপাতত আর্থিক জরিমানা ও বাড়তি ভাড়ার টাকা যাত্রীদের ফেরত দেয়া হচ্ছে। এর পরও বাড়তি ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা ওই বাসকে ডাম্প করাসহ রুট পারমিট বাতিল করব।’
তারও দুই দিন আগে গত ৯ নভেম্বর বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিলের কোনো অনুমতি নেই। এগুলো পুরোই অবৈধ। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন।’
কিন্তু অতীতের নানা ঘোষণার মতো এসব ঘোষণাও ফেলনা হয়ে গেছে। ওয়েবিলের নামে যাত্রীদের পকেট কাটছে বাসগুলো।
ওয়েবিল কী
একটি নির্ধারিত টার্মিনাল বা স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার পর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকার থাকেন। যারা ওই পয়েন্ট পর্যন্ত কতজন যাত্রী বাসে রয়েছে তার একটা হিসাব কাগজে লিখে রাখেন। এই কাগজের শিটটি নিয়ে চলেন চালকরা। প্রতিটি পয়েন্টে হিসাবটা লিখে দেন চেকাররা।
ওয়েবিল নামে এই শিটটি থাকলে কত যাত্রী একটি বাসে চলাচল করেছে এবং কত টাকা ভাড়া উঠেছে তার একটি কাছাকাছি হিসাব পাওয়া যায় বলে দাবি মালিকদের।
যেভাবে বাড়তি ভাড়া আদায়
ওয়েবিল কোথায় বসানো হবে, সেটি একান্তই বাস কোম্পানির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। যেমন মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী হয়ে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলা স্বাধীন পরিবহন ফার্মগেট থেকে রামপুরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কে তিনটি ওয়েবিল বসিয়ে প্রতি ওয়েবিলের জন্য ১০ টাকা করে ৩০ টাকা আদায় করছে। অথচ এই রুটের ভাড়া হওয়া উচিত ১৩ টাকা।
এই পরিবহনের চেকিং পয়েন্ট রয়েছে খামাড়বাড়ি, মগবাজার, আবুল হোটেল, বনশ্রী ও ডেমরা। এক চেকিং পয়েন্ট থেকে আরেক চেকিং পয়েন্টে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে নিচ্ছে তারা। যদিও মিনিবাস হিসেবে এই পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা ৮ টাকা।
এই ২ টাকা বাড়তি নেয়ার পাশাপাশি চেকিং পয়েন্ট থেকে কিছু দূর আগের একটি স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠলে দূরত্ব যতই হোক, তাকে গুনতে হয় ২০ টাকা।
ওয়েবিল সিস্টেম চালু থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাধীন পরিবহনের একজন চালক পারভেজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব চালক, হেলপার এক না। মালিক যাতে টাকাটা সঠিকভাবে পান সে জন্য ওয়েবিল।’
মিরপুর-১ থেকে বনশ্রী চলাচলকারী আলিফ পরিবহনের নাজমুল নামে একজন যাত্রী জানান, কাজীপাড়া থেকে গুলশান পর্যন্ত ওয়েবিলে বাড়া ঠিক হয়েছে ২৫ টাকা। মহাখালী নামলেও একই ভাড়া দিতে হয়। অথচ এই পথের দূরত্ব ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা।
লাব্বায়েক, প্রভাতী বনশ্রী, তরঙ্গ, ঠিকানা, বিহঙ্গ, রাইদা, শেকড় পরিবহনেও এই ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা গেছে।
এসব বাসে বিআরটিএ নির্ধারিত বাস ভাড়ার চার্টগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে এ নিয়ে ঝগড়া করে স্পষ্টত ক্লান্ত হয়ে গেছেন যাত্রীরা।
ব্যবস্থা নিচ্ছি: এনায়েত উল্যাহ
এই নৈরাজ্য ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবালংলাকে বলেন, ‘ওয়েবিলের বন্ধের চেষ্টা করছি। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত কেন বাস মালিকরা মানছেন না তা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং’য়ের কথা জানিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
একই প্রশ্ন রাখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. ফখরুল ইসলামের কাছে। তিনিও দেন গতানুগতিক জবাব। বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। যারা অমান্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি স্বীকার করেন বাড়তি ভাড়া আদায় পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বলেন, ‘অধিকাংশ বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায় না। চালক ও কন্ডাক্টরা ছিঁড়ে গেছে, হারিয়ে গেছে এসব অজুহাত দেখায়।’
কিছু বাসের রুট পারমিট বাতিলের উদ্যোগ
সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলার কাছে স্বীকার করেন, বাস ভাড়ার বিষয়টি শৃঙ্খলায় ফেরেনি।
তিনি বলেন, ‘তাদের কোনোভাবেই নিয়মের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাধান হচ্ছে না। আমরা কিছু বাসের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটাও প্রক্রিয়াধীন।’
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দাবি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ কমছে। তিনি বলেন, ‘নিয়মিতই আমাদের আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে। তারা প্রথম দিকে দৈনিক গড়ে ৪০টির মতো বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেতেন এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো। এখন সেটা কমতে কমতে ৯ থেকে ১০টিতে ঠেকেছে।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য