অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে কিলোমিটারের বদলে কিছু দূর পরপর একটি নির্ধারিত দূরত্বের হিসাব করে ওয়েবিল নামে কৌশল বন্ধ হয়নি। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ায় এ বিষয়টি আবার সামনে আসার পর পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছিল, ঢাকায় কোনো বাস ওয়েবিলে চলবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি বাসও ওয়েবিল ছাড়া চলছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ, কোথাও কোথাও তিন গুণ আদায় চলছে এই সুযোগে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস ভাড়া হবে কিলোমিটার হিসাবে। প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২ টাকা ৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৫ পয়সা। তবে একজন যেটুকু দূরত্বেই যান না কেন, রাজধানীতে বড় বাসে তাকে ১০ টাকা আর মিনিবাসে দিতে হবে ৮ টাকা।
অর্থাৎ কোনো যাত্রী যদি ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার যান, তাহলে তার কাছ থেকে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। এরপর প্রতি কিলোমিটারে যোগ হওয়ার কথা ২ টাকা ১৫ পয়সা।
ঢাকার বাস চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে পরীক্ষামূলক চালু হওয়া ঢাকা নগর পরিবহনে এভাবেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এই সেবা চালু হওয়ার পর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত রুটটি চালু হওয়ার পর এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের বাস ভাড়া দিতে হচ্ছে কম।
কিন্তু অন্য কোনো রুটে এই ব্যবস্থা নেই। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ওয়েবিল বসিয়ে এক ওয়েবিল থেকে পরের ওয়েবিল পর্যন্ত পুরো পথের ভাড়া নেয়া হয় যাত্রীর কাছ থেকে।
যেমন- এয়ারপোর্ট পরিবহনের বাসে করে কেউ যদি কারওয়ান বাজার নামেন, তাহলে তাকে সেখানে থাকা ওয়েবিলের ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ২০০ গজ দূরে বাংলামোটর নামলেই তাকে দিতে হয় গুলিস্তানের ভাড়া।
গাজীপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত চলা প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ওয়েবিল বসিয়েছে সাতরাস্তা মোড়ের আগে। কেউ যদি মগবাজার নামতে চান, তাহলে সাতরাস্তা ওয়েবিল থেকে সদরঘাট ওয়েবিল পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকার পুরোটাই দিতে হয়। অথচ মগবাজার ওয়্যারলেস থেকেও বাসটি যাত্রী তোলে এবং সদরঘাট পর্যন্ত ভাড়া নেয় ২০ টাকাই।
ঢাকা শহরে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের নানা কৌশলের মধ্যে ওয়েবিল চালু হতে থাকে ২০১৭ সালে। প্রথমে কয়েকটি রুটে এবং পরে সব কটি রুটেই এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় হতে থাকে।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত ৭ নভেম্বর বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা আসার ফলে ওয়েবিলের নামে যাত্রী ঠকানোর এ বিষয়টি আবার সামনে আসে। দেখা যায়, ভাড়া বাড়িয়ে যত টাকা করা হয়েছে, আগে থেকেই ওয়েবিলের সুযোগে তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছিল। ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে এর পর থেকে আদায় হতে থাকে নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক বেশি।
গত ১০ নভেম্বর বাস মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘কোনো ধরনের সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের মাধ্যমে কোনো বাস চলবে না। আমরা তিন দিন সময় দেব, এরপর কোনো গেটলক ও সিটিং সার্ভিসের বাস চললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরের দিন সড়ক পরিবহন সচিব মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে আপাতত আর্থিক জরিমানা ও বাড়তি ভাড়ার টাকা যাত্রীদের ফেরত দেয়া হচ্ছে। এর পরও বাড়তি ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা ওই বাসকে ডাম্প করাসহ রুট পারমিট বাতিল করব।’
তারও দুই দিন আগে গত ৯ নভেম্বর বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিলের কোনো অনুমতি নেই। এগুলো পুরোই অবৈধ। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন।’
কিন্তু অতীতের নানা ঘোষণার মতো এসব ঘোষণাও ফেলনা হয়ে গেছে। ওয়েবিলের নামে যাত্রীদের পকেট কাটছে বাসগুলো।
ওয়েবিল কী
একটি নির্ধারিত টার্মিনাল বা স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার পর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকার থাকেন। যারা ওই পয়েন্ট পর্যন্ত কতজন যাত্রী বাসে রয়েছে তার একটা হিসাব কাগজে লিখে রাখেন। এই কাগজের শিটটি নিয়ে চলেন চালকরা। প্রতিটি পয়েন্টে হিসাবটা লিখে দেন চেকাররা।
ওয়েবিল নামে এই শিটটি থাকলে কত যাত্রী একটি বাসে চলাচল করেছে এবং কত টাকা ভাড়া উঠেছে তার একটি কাছাকাছি হিসাব পাওয়া যায় বলে দাবি মালিকদের।
যেভাবে বাড়তি ভাড়া আদায়
ওয়েবিল কোথায় বসানো হবে, সেটি একান্তই বাস কোম্পানির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। যেমন মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী হয়ে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলা স্বাধীন পরিবহন ফার্মগেট থেকে রামপুরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কে তিনটি ওয়েবিল বসিয়ে প্রতি ওয়েবিলের জন্য ১০ টাকা করে ৩০ টাকা আদায় করছে। অথচ এই রুটের ভাড়া হওয়া উচিত ১৩ টাকা।
এই পরিবহনের চেকিং পয়েন্ট রয়েছে খামাড়বাড়ি, মগবাজার, আবুল হোটেল, বনশ্রী ও ডেমরা। এক চেকিং পয়েন্ট থেকে আরেক চেকিং পয়েন্টে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে নিচ্ছে তারা। যদিও মিনিবাস হিসেবে এই পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা ৮ টাকা।
এই ২ টাকা বাড়তি নেয়ার পাশাপাশি চেকিং পয়েন্ট থেকে কিছু দূর আগের একটি স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠলে দূরত্ব যতই হোক, তাকে গুনতে হয় ২০ টাকা।
ওয়েবিল সিস্টেম চালু থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাধীন পরিবহনের একজন চালক পারভেজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব চালক, হেলপার এক না। মালিক যাতে টাকাটা সঠিকভাবে পান সে জন্য ওয়েবিল।’
মিরপুর-১ থেকে বনশ্রী চলাচলকারী আলিফ পরিবহনের নাজমুল নামে একজন যাত্রী জানান, কাজীপাড়া থেকে গুলশান পর্যন্ত ওয়েবিলে বাড়া ঠিক হয়েছে ২৫ টাকা। মহাখালী নামলেও একই ভাড়া দিতে হয়। অথচ এই পথের দূরত্ব ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা।
লাব্বায়েক, প্রভাতী বনশ্রী, তরঙ্গ, ঠিকানা, বিহঙ্গ, রাইদা, শেকড় পরিবহনেও এই ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা গেছে।
এসব বাসে বিআরটিএ নির্ধারিত বাস ভাড়ার চার্টগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে এ নিয়ে ঝগড়া করে স্পষ্টত ক্লান্ত হয়ে গেছেন যাত্রীরা।
ব্যবস্থা নিচ্ছি: এনায়েত উল্যাহ
এই নৈরাজ্য ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবালংলাকে বলেন, ‘ওয়েবিলের বন্ধের চেষ্টা করছি। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত কেন বাস মালিকরা মানছেন না তা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং’য়ের কথা জানিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
একই প্রশ্ন রাখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. ফখরুল ইসলামের কাছে। তিনিও দেন গতানুগতিক জবাব। বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। যারা অমান্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি স্বীকার করেন বাড়তি ভাড়া আদায় পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বলেন, ‘অধিকাংশ বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায় না। চালক ও কন্ডাক্টরা ছিঁড়ে গেছে, হারিয়ে গেছে এসব অজুহাত দেখায়।’
কিছু বাসের রুট পারমিট বাতিলের উদ্যোগ
সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলার কাছে স্বীকার করেন, বাস ভাড়ার বিষয়টি শৃঙ্খলায় ফেরেনি।
তিনি বলেন, ‘তাদের কোনোভাবেই নিয়মের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাধান হচ্ছে না। আমরা কিছু বাসের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটাও প্রক্রিয়াধীন।’
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের দাবি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ কমছে। তিনি বলেন, ‘নিয়মিতই আমাদের আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে। তারা প্রথম দিকে দৈনিক গড়ে ৪০টির মতো বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেতেন এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো। এখন সেটা কমতে কমতে ৯ থেকে ১০টিতে ঠেকেছে।’
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (টিসিএ) উদ্যোগে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু ও সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা নানা ক্ষেত্রে আজ নির্যাতিত। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেন তাদেরকে আমরা মননশীল মনে করি। কিন্তু তারা যখন মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন তারা সমাজে কী বার্তা দেন?
নারকীয় এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বোসহ হামলায় জড়িত সবাইকে শিল্পী সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে আরও অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিনোদন বিটের সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বোর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারজন।
তদন্ত কমিটি
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ জন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
দশজনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি কাজের জন্য বুধবার তিন ঘণ্টা রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় গ্যাস থাকবে না।
এদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, যেসব এলাকায় সব শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে সেগুলো হলো- শনির আখড়া, বড়ইতলা, ছাপড়া মসজিদ, দনিয়া, জুরাইন, ধোলাইরপাড় ও কদমতলী।
আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে চাপ কম থাকতে পারে জানিয়ে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিতাস গ্যাস।
রাজধানীর সদরঘাটের শ্যামবাজার ঘাটে একটি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ওই আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এমভি বাঙালি নামের লঞ্চটিতে কোনো যাত্রী ছিল না।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানিয়েছেন, দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চারটি ইউনিট। পরে যোগ দেয় আরও একটি ইউনিট।
তিনি জানান, দুপুর পৌনে ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। লঞ্চটির তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত। আগুনের কারণ ও বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, লঞ্চটি নোঙর করা ছিল। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য