চট্টগ্রামের একটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগি গ্রামে। ৯ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন বলা যায়।
আড়াই বছর ধরে স্বল্প খরচে এই সেবা নিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। কিন্তু গত ৪ জানুয়ারি সেখানে হঠাৎ করে ডায়ালাইসিস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
৬ জানুয়ারি হাসপাতালে সেবা নিতে এসে এ খবর শুনতে পেয়ে মাথায় বাজ পড়ে তার। যদিও অনেক চেষ্টার পর সেদিন ডায়ালাইসিস করাতে পেরেছিলেন তিনি। তবে ৫ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সিরিয়ালে থাকা অসংখ্য রোগী।
রফিকুল ইসলাম জানান, ডায়ালাইসিস করতে এখানে খরচ পড়ে এক হাজার ৫৩০ টাকা। বাইরে করাতে গেলে যা ১০ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। যা এখানকার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। এত টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করা তার পক্ষে সম্ভব না বলে জানান তিনি।
শুধু রফিকুল ইসলাম নন, ডায়ালাইসিস করার অপেক্ষায় ছিলেন আরও ২০ থেকে ২১ জন রোগী।
তাদের মধ্যে ৭২ বছরের আবুল কাসেম বলেন, ‘১১ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছি। এতদিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে এটি করতে। তবে তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অল্প টাকায় ডায়ালাইসিস করে আসছি। এখন হঠাৎ করে এটি বন্ধ হওয়াতে আবারও অনেক টাকা খরচ করতে হবে। তাই খুব বিপদে পড়েছি।’
বোয়ালখালী উপজেলার রঘুনাথ দত্ত বলেন, ‘প্রতিমাসে ৮ থেকে ৯ বার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ধারদেনা করে খরচ মেটাই। এখানে দরিদ্র কোটায় প্রতিবার ডায়ালাইসিসে খরচ দিতে হয় ৫১০ টাকা।
‘এখন সেবাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে শঙ্কায় আছি। কারণ বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো এত টাকা আমার নেই।’
এ সময় ডায়ালাইসিসের জন্য অপেক্ষায় থাকা অনেক রোগী জানান, এখানে অনেক দরিদ্র রোগী আছেন, যারা নামমাত্র টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন। তাই এখানে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হলে চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে হাজারো কিডনি রোগী মারা যাবে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় চালু করা হয় ৩১ বেডের স্যান্ডর ডায়ালাইসিস কেন্দ্র। সেখানে হাসপাতালের ২০ শয্যার রোগীরা ছাড়াও রেফার করা বাইরের রোগীদেরও ডায়ালাইসিস হয়।
তবে কাঁচামাল ও সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস কার্যক্রম ৫ জানুয়ারি থেকে বন্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে রোগীদের প্রতি অনুরোধ জানায় তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আফতাব উল ইসলাম বলেন, ‘স্যান্ডরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্থ দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ না করায় সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
‘আমার জানা মতে প্রায় চার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সেবা চালিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
কিন্তু ভিন্ন কথা জানিয়েছেন ডায়ালাইসিস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. হিমেল আচার্য। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১৫০ রোগী ডায়ালাইসিস করাতে আসেন। মাসে এই সংখ্যা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার।
‘এ সেবায় গত দুই বছরে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বকেয়া। স্বাস্থ্য বিভাগ টাকা পরিশোধের জন্য ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চাওয়ায় সেবা সীমিত চালু রাখা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির আরও ১৩ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তারা বৃহস্পতিবার টেকনাফের নাফ নদীতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি জানান, পরবর্তীতে কোস্টগার্ড উক্ত বিজিপি সদস্যদেরকে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে বিজিপির মোট ২৭৪ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ জন রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপির এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ জনে।
ছয় বছর বয়সী লামিয়া শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায়।
এর আগে ১২ তারিখ ভোর চারটার দিকে ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে দগ্ধ হন একই পরিবারের ছয়জন। পরে তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভর্তি করানো হয়।
ওই দিন দগ্ধ হয়েছিলেন মেহেরুন্নেসা (৬৫), সূর্যবানু (৩০), লিজা আক্তার (১৮), লামিয়া (৭), সুজন (৮), মোহাম্মদ লিটন (৫২)।
দগ্ধদের বাড়ির কেয়ারটেকার মো. সিফাত জানিয়েছিলেন, মশার কয়েল জ্বালাতে গেলে ঘরের মধ্যে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হন।
ঘটনার পরদিন শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মারা যান দগ্ধ ৬৫ বছর বয়সী মেহেরুন্নেছা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত সোয়া সাতটার দিকে মারা যান লিটনের স্ত্রী সূর্যবানু। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মারা যান লিটন।
বতর্মানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রাণ হারানো লিটন ও সূর্য বানুর দুই সন্তান লিজা (১৮), ও সুজন (৮)।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মিরপুরের ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ছয়জন বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছিল। আজ সকালের দিকে লামিয়া নামে এক শিশু মারা যায়। তার শরীরে ৫৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।’
তিনি জানান, বর্তমানে চিকিৎসাধীন দুইজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে তালাবদ্ধ একটি ফার্নিচারের গোডাউনে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন তিনজন।
আশুলিয়ার কুরগাঁও আমতলা এলাকার মো. শামসুদ্দি্নের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ তিনজনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা হলেন গোডাউনের ম্যানেজার মো. সুমন (৩০) ও প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া বৃদ্ধা মাজেদা বেগম (৫৫)। দগ্ধ আরেকজন ফার্নিচার কিনতে আসা ক্রেতা, যার বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সায়েম মাসুম বলেন, ‘(বৃহস্পতিবার) বিকেলে আমরা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ওখানে গিয়ে দেখি, ততক্ষণে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। মূলত একটি আবাসিক ভবনে একটি ফার্নিচারের গোডাউন ভাড়া দিয়েছিল মালিক। বিকেলে ওই গোডাউন খুলে একজন ক্রেতাকে ফার্নিচার দেখাতে নিয়ে যান দোকানের ম্যানেজার সুমন।
‘এ সময় কোনোভাবে আগুনের স্পর্শে গোডাউনের মধ্যে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। তখন গোডাউনে থাকা দুইজনকে দেখতে গিয়ে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া এক বৃদ্ধা দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।’
বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে ফার্নিচারের গুদামটি বন্ধ থাকায় ভেতরে গ্যাস জমেছিল। ওই কক্ষে তিতাসের আবাসিক সংযোগসহ রান্নার চুলাও ছিল। সম্ভবত ওই গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে জমা গ্যাসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় বুধবার দুপুরে সিমেন্টবাহী ট্রাকের চাপায় ১৪ জন নিহত হন। ওই সময় সড়কের পাশে বসে ভিক্ষা করছিলেন ৪৫ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনিও।
শহিদুলের বাড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী হেনারা বেগম স্বামী হারানোর শোকে কাতর। দুই বছর বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার মাইয়ারে এতিম কইরা আমার স্বামী মইরা গ্যাছে। ওষুধের দোকানে টাকা পাইবে, আমি হেই টাকা কেমনে দিমু। আমি কী খামু, কেমনে মনুরে খাওয়ামু।’
কিছুক্ষণ পরেই আবার ভুলে যাচ্ছেন স্বামীর মৃত্যুর কথা।
শহীদুলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুটি পা অচল থাকায় কোনো কাজ করতে পারতেন না শহিদুল। ৮ বছর বয়স থেকে ঝালকাঠির গাবখান ফেরিঘাটে ভিক্ষা করা শুরু করেন তিনি। বছর দশেক আগে ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেছারাবাদ গ্রামের শ্রমিক আশ্রাফ আলির মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে হেনারাকে বিয়ে করে শহিদুল সংসার জীবন শুরু করেন।
শহীদুলের ভাইয়েরা জানান, সরকার থেকে পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ভিক্ষা করে যে টাকা আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকম চলতো শহিদুলের। তিন ভাইয়ের মধ্যে শহিদুল বড়। বাকি দুই ছোট ভাই সাইদুল খান এবং সাদ্দাম খান পৃথক সংসার করেন। তারা দুজনেই গাবখান সেতুর টোল প্লাজার কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
গাবখান সেতুর টোল প্লাজার পাশে বসে অন্যদিনের মতো বুধবার ভিক্ষা করছিলেন শহিদুল। দুপুর পৌনে দুইটায় নিয়তির কাছে হেরে যান তিনি। সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক চাপা দেয় শহিদুলকে। আহত অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঘণ্টাখানেক পর তার মৃত্যু হয়।
ছোট ভাই সাদ্দাম বলেন, ‘আমি বুধবার টোলের ডিউটি শেষ করে দুপুরে বাড়ি এসে গোসলে যাই। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড় দিয়ে টোলের সামনে গিয়ে দেখি, আমার ভাই ট্র্রাকের নিচে চাপা পড়ে আছে। স্থানীয়রা তাকে ট্রাকের নিচ থেকে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিমে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা চিকিৎসার চালায়। কিছুক্ষণ পরেই ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যায়।’
আরও পড়ুন:স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে, তবে এ বৃষ্টিতে শহরটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা আরব আমিরাতের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত বন্যায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার খবর পাইনি।’
ইসরাইলে ইরানের হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়ার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ বাধলে তো সবারই ক্ষতি। তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে, তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’
সমাবর্তন উৎসবে সভাপতির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানবিক মানুষ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বান জানান।
এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বরেণ্য ইতিহাসবিদ, লেখক এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মেসবাহ উদ্দিন আহমদ এবং ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আলমগীর।
এ ছাড়াও সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রধান উপদেষ্টা এমপি শফিউল আলম চৌধুরী এবং ট্রাস্টের চেয়ারপারসন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শামীম আহমদ। সমাবর্তন উৎসব শুরু হয় মহান জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর নিতাই চন্দ্র চন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সংগ্রামে সন্ধিৎসু ও দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে মানসম্মত ধীমান শিক্ষার্থী সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনসহ নানান নিরীক্ষাধর্মী কর্মযজ্ঞে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে এ মহাযজ্ঞে কৃতিত্বের ছাপ রাখবে।’
সমাবর্তনে ফল ২০০৯ থেকে স্প্রিং ২০২১ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগের মোট ৬ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট সনদ অর্জন করেন। এ ছাড়াও চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান, ডিন এবং স্পেশাল অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে এ অনুষ্ঠানে পদক প্রদান করা হয়।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে পারিবারিক গাছ থেকে পাড়া নারকেল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে নারীসহ আটজন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে সেলিম মিয়া নামে গুরুতর আহত একজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সেলিম মিয়ার ভাই মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুই দফা সংঘর্ষে আটজন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে নিজেদের পারিবারিক গাছ থেকে নারকেল পাড়েন সেলিম। সেই নারকেল অপর তিন ভাই মজনু মিয়া, ফজলুর রহমান ও আজিজুল হকের বাসায় ভাগ করে দেন, তবে ভাগ কম বেশি হওয়ায় কারণে ভাতিজারা সেলিমের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে সেলিমকে তারা মারধর করে সামান্য আহত করেন।
এ ঘটনায় ওই রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরদিন সকালে সেলিম দোকানে গেলে তার হাতে ও পিঠে ক্ষুরের আঘাতে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আহত সেলিমের পক্ষের লোকজন জানায়, অপর তিন ভাই ও ভাতিজারা মিলে সেলিম ও তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ও শ্যালিকার ওপর হামলা চালান।
এদিকে সেলিমের বড় ভাই ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে নারকেল নিয়ে ভাতিজারা সেলিমকে কিছুটা হেনস্তা করে। আমরা রাতে বিষয়টা সমাধান করব ভেবেছি, কিন্তু রাতে বড়কাশিয়া থেকে সেলিমের আত্মীয়রা এসে বাড়িতে ঢুকে নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষুর ও রামদা দিয়ে কোপানো শুরু করে। এতে আমাদের পক্ষের চারজন গুরুতর আহত হয়। ক্ষুরের আঘাতে রাজিমুলের পেট বের হয়ে গেছে। হাত কেটেছে একজনের।
‘নিজেদের লোকজনের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আমাদের ঘরের ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে মারধর করতে গেলে তারা ঘরের দরজা লাগিয়ে ফেলে। সেলিম ছাড়া অন্যদের মারধরের ঘটনা সাজানো। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকেও মামলার আবেদন করা হচ্ছে।’
এদিকে রাতের ঘটনায় সেলিম মিয়া বাদী হয়ে মজনু মিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পরে সকালে মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলায় মজনু মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য