তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর দেশে গত তিন সপ্তাহ আবার ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ । প্রতিদিন শনাক্ত, মৃত্যুসংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা ও প্রতিবেশী ভারতের মতো দেশে সংক্রমণের একটি নতুন ঢেউ প্রবেশ করেছে।
তারা বলছেন, আগামী দুই মাস খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যেকোনো সময় সংক্রমণ দ্বিগুণ হতে পারে। এ ছাড়া নতুন শনাক্ত হওয়া ওমিক্রন পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক করে তুলতে পারে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণের লাগাম টানা চ্যালেঞ্জ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, পরীক্ষা বিবেচনায় টানা তিন মাস করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। এই হার বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। দুই-এক দিনের মধ্যে এই হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪০ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত ২৯ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
নতুন বছরের এক সপ্তাহ সংক্রমণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। মৃত্যু বেড়ে ৪২ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়ায়। গত শনি থেকে রোববার ২৪ ঘণ্টায় ৫৫৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরপর ৩ জানুয়ারি শনাক্ত রোগী সাড়ে ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। পাশাপাশি তিন মাস পর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায় ওই ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৭৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং ৪ জনের মৃত্যু হয়।
সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় এর পরদিন মঙ্গলবার দৈনিক শনাক্ত সাড়ে ৭০০ ছাড়িয়ে যায়। শনাক্ত হার ৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়। এ সময় ৭৭৫ জন সংক্রমিত ও ৬ জনের মৃত্যু হয়। এভাবে বুধবার আরও বেড়ে সংক্রমণ প্রায় ৯০০ (৮৯২)-এর ঘরে পৌঁছে যায়। তিনজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে হাজারের ঘর ছাড়িয়েছে।
বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ হওয়ার পর তা কমতে শুরু করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। পরে ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার নামে ৫ শতাংশের নিচে। টানা দুই সপ্তাহ এই হার থাকার পর ৩ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত হয় করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেবার টানা দুই দিন সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। সেদিন শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
তবে গত বছরের মার্চের শেষে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। এক দিনে ২০০-এর বেশি মৃত্যু হতে থাকে। তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ কমে যায়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ স্বস্তিদায়ক ছিল।
তৃতীয় ঢেউয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ বাড়ছে। সে হিসাবে আমার মনে হয় আরেকটি ঢেউ (থার্ড ওয়েভ) চলে আসছে। যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্তের হার কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
‘সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের বেশি হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী আমরা এটাকে ঝুঁকি হিসেবে ধরি। এর আগে বেশি ঝুঁকি তৈরি করছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে ওমিক্রন, যা মাত্র কয়েকজনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এটি দ্রুত ছড়ায় এবং দুর্বল করে ফেলে। ফলে এই জায়গায় একটা ভয় তৈরি হয়েছে। এ জন্য আগামী দুই-তিন মাস খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বলেন, ‘বিশ্বের সব জায়গাতেই তৃতীয় ঢেউ আসছে। বাংলাদেশেও এটা হতেই পারে। তবে এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হয়নি। তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে ওমিক্রনের কথা বলা হচ্ছে। তাতে মৃত্যুহার খুবই কম। সুতরাং আরও কিছুদিন দেখতে হবে, সংক্রমণ কোথায় পৌঁছায়। তখন বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
‘এদিকে ডেল্টা ও ওমিক্রন রোধে টিকার বুস্টার ডোজের কার্যক্রম চলছে, তবুও ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এর কারণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা এখনও সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পারিনি। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। দ্রুত টিকাকরণ, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং জনসমাগম এড়ানো ছাড়া ভাইরাসটি রোধের বিকল্প কোনো উপায় নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ যেভাবে উচ্ছ্বাস নিয়ে চেলাফেরা করছে, এটা কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। মনে রাখতে হবে, আমরা এখনও সংক্রমণমুক্ত নই, সেভাবেই আমাদের চলতে হবে। সরকারের দায়িত্ব টেকনিক্যাল কমিটি যেভাবে বলে, বিজ্ঞানসম্মতভাবে সেটা মানার নির্দেশনা দেয়া। কিন্তু মানুষকে মনে রাখতে হবে, রোগটি তার, সুতরাং ব্যক্তিকেই আগে সচেতন হতে হবে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এ এস এম আলমগীর দাবি করেন, ওমিক্রন নয়, দেশে এখনও ডেল্টা ধরন প্রাধান্য বিস্তার করছে। সঙ্গে মাস্ক না পরা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাগম বাড়ায় সংক্রমণও বাড়ছে।
ডা. আলমগীর আরও বলেন, বাংলাদেশে এখনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেরই প্রাধান্য। ওমিক্রনের বিস্তার এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ওমিক্রনের দুয়েকজন লোক পাওয়া যাচ্ছে। তবে যখন ওমিক্রন পাওয়া যাবে, তখন দেখা যাবে আক্রান্ত সবাই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় একই অবস্থা। তবে আমাদের এখানেও ওমিক্রন ছড়াবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে শনাক্ত ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। এ থেকে বলা যায়, সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে এখন যারা সংক্রমিত হচ্ছে, তারা সবাই ওমিক্রনে আক্রান্ত নয়। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যে ভ্যারিয়েন্ট আসুক না কেন, সেটি কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তা সবার স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরেই নির্ভর করে। এখানে জনগণের ও সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ স্বাস্থ্যবিধি পালনের ওপরেই নির্ভর করে সংক্রমণ কতটা ছড়াবে বা কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’
আরও পড়ুন:এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
মন্তব্য