কয়েক জেলায় সংঘর্ষ ও ৬ প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট।
এ ধাপে বুধবার ভোট হয়েছে দেশের ৭০৮টি ইউপিতে। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসতে থাকে সংঘর্ষের খবর।
মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও চাঁদপুরে ভোটের সময় সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সবশেষ দুজনের প্রাণহানির খবর এসেছে চাঁদপুর থেকে। জেলার কচুয়া ও হাইমচরের দুই কেন্দ্রে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ওই দুইজন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মিলন মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, দুপুরের দিকে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকায় এবং কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছে।
কচুয়ায় নিহত যুবকের নাম শরীফ হোসেন; তার বাড়ি হাতিরবন্ধ গ্রামে। দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সেখান থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
আর হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে জানান এসপি। ধারণা করা হচ্ছে ওই যুবক বহিরাগত।
গাইবান্ধার সাঘাটায় একটি কেন্দ্রের পাশে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থককে হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে বুধবার পৌনে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবু তাহের। তার বাড়ি ওই ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামে।
ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) ইলিয়াস জিকো।
নিহতের বাবা ওমর আলী জানান, ভোট চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে মেম্বার প্রার্থী আইজল মিয়ার সমর্থক আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী রাসেল আহমেদের সমর্থকদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে আবু তাহেরকে একা পেয়ে রাসেলের সমর্থকরা হাঁসুয়া দিয়ে হত্যা করে।
ওমর আরও জানান, স্থানীয়রা রাসেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গেলে পথেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ পরে রাস্তা থেকেই ফিরিয়ে ঘটনাস্থলে নেয়া হয়েছে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘আমার জানা মতে জুম্মারবাড়ির একটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনি সহিংসতায় আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
জুম্মাবাড়ির আরেক কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই প্রার্থীসহ ৩ জন আহত হন। ঘটনার পর থেকে কেন্দ্রটিতে ভোট বন্ধ থাকে।
সাঘাটার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের দহিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মিলন জানান, ভোট চলাকালে মেম্বার প্রার্থী আবদুল গণি ও তার কর্মীরা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। সে সময় প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর কবীরের সমর্থকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউপিতে এবার ভোট হয়েছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে জাকির হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রামেশ্বরপুর জাইগুনি গ্রামে দুপুরে এ সংঘর্ষ হয়। সে সময় আহত জাকিরকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ৩৫ বছরের জাকিরের বাড়ি গাবতলীর রামেশ্বরপুর গ্রামে।
এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম।
পঞ্চম ধাপে গাবতলীর ৯টি ইউনিয়নে হয়েছে ভোট।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
ওই কেন্দ্রে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ৫০ বছর বয়সী ওই নারীর নাম ছলেমন খাতুন। তার বাড়ি বাচামারা গ্রামে।
শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ওই কেন্দ্রে সংঘর্ষ বাধে। এর মধ্যে পড়ে ওই নারী প্রাণ হারান। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন, কোনোভাবে আঘাত পেয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে।
তবে সংঘর্ষ হলেও ওই কেন্দ্রে ভোট হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।
এ ছাড়া জেলার দৌলতপুরের বাঘুটিয়া এবং চরকাটারী ইউনিয়নে কুয়াশার কারণে সরঞ্জাম নদীপথে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ভোট শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান জানান, বাঘুটিয়া এবং চরকাটারী ইউনিয়ন দুটি যমুনা নদীর ওপারে, যার ফলে নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে যেতে হয়। ভোরে কুয়াশার কারণে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ভোটের সরঞ্জাম পাঠাতে দেরি হয় বলে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ভোট শুরু হয়।
হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কামারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হওয়ায় দুপুরে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল ভোট।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিগার সুলতানা চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে হয়েছে ভোট।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় আরেক প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহরা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম অংকর দত্ত। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের সমর্থক বলে জানা গেছে।
নিউজবাংলাকে অংকরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাতরী ইউনিয়নে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনা ভোটকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হয়েছে। এখনও বিস্তারিত জানি না। যতটুকু জেনেছি, আপেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
হাসপাতালের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অংকর দত্ত নামের ওই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে বড় কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। স্বজনরা প্রতিপক্ষের কিল-ঘুষিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন।’
মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন এএসআই।
জেলার বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ করলডেঙ্গা ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে এক ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি।
দক্ষিণ করোলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই প্রার্থীর নাম মহরম আলী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন জানান, মহরম আলীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এএসআই আলাউদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, মহরমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রথমে শোনা গেলেও শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
আহলা করোলডাঙ্গা ইউনিয়নের লুদি শিকদার পাড়া এলাকায় বুধবার সকাল ৭টার দিকে নৌকা ও বিএনপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনকেও চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তার নাম আবদুল্লাহ আল হারুণ রিপন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজবাংলাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় রিপনের মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়ে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।’
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার ২৪ ইউপিতে হয়েছে ভোট।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমকর্মীদের অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
ওই কেন্দ্রের ব্যালটবাক্স ছিনতাই করা হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে কেন্দ্রের বাইরে থাকা সংবাদমাধ্যমকর্মীদের মোটরসাইকেলে। নারী আনসার সদস্যরদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে হামলাকারীরা কারা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শিকদার অভিযোগ করেছেন, চশমার প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন ব্যাপারীর সমর্থকরাই এ হামলা চালিয়েছেন।
২২ নং দুলুখণ্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করে জানান, দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে ফাঁকা গুলি করে, তবে তারা পিছু না হটায় একপর্যায়ে গুলি শেষ হয়ে যায়। তখন হামলাকারীরা কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়ে গেছে।
শরীয়তপুরের দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে এ ধাপে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়নের হাছেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি ও গোলাগুলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশসহ আহত হয়েছেন ৯ জন। এ ঘটনার পর স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রটি।
গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তার পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আতাউর রহমান ঘটনাটি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সংঘর্ষে দেয়া আগুনে পুলিশের একটি পিকআপ ও তিনটি মোটরসাইকেল পুড়েছে। আনসারদের বহন করা একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্রসহ আশেপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ভোটারসহ আহত সাধারণ লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন বকশীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম সম্রাট, ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহিম, কনস্টেবল আব্দুল আলিম, মো. শাহজাহান, আব্দুল মজিদ ও আনসার সদস্য আব্দুল আলিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে দুপুর ১২টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোয়ার হোসেন হকের এজেন্টদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ খবর বাইরে ছড়িয়ে পড়লে লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষ জড়ায় তাদের কর্মীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনমুন জাহান লিজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোলা সদরের পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘার হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। দুপুরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর কেন্দ্রটিতে ভোট নেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান মোহাম্মাদ সায়েক এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
ব্যালট পেপার ছিনতাই ও দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গাজীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টা ভোট বন্ধ ছিল। এ সময় কেন্দ্রের বুথ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাওরাইদ মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ১টার দিকে ভোট ফের শুরু হয়।
এ ঘটনায় সাধারণ ভোটাররা ভোট স্থগিত চেয়ে বিক্ষোভও করেন। পরে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
গাজীপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না রহমান যুথী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বক্সে ঢুকানো হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। কারণ সেগুলোর পেছনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর বা সিল নেই। এসব ব্যালট বাতিল করা হবে।’
বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলেছে পঞ্চম ধাপের ৭০৮টি ইউপির ভোট। এর মধ্যে ৪০টিতে ভোট হয়েছে ইভিএমে; বাকিগুলোতে ব্যালটে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, তিনটি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আছেন ৩ হাজার ২৭৪, সংরক্ষিত আসনে ৭ হাজার ৯৫০ ও সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ২৩৩ জন।
তবে ৭০৮ ইউপির মধ্যে বিভিন্ন পদে আগেই ১৯৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান পদের ৪৮, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের ৩৩ ও সাধারণ সদস্য পদের ১১২ জন।
ইউপি নির্বাচনে গত চার ধাপে দেশের বেশ কিছু এলাকায় সহিংসতা হয়েছে। ভোটের আগে, ভোটের দিন ও পরে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোকের প্রাণহানির তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। পঞ্চম ধাপেও অনেক এলাকায় ভোটের আগেই গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য