করোনা মহামারির কারণে গত বছর তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না ছাত্রলীগের। তবে বছরজুড়ে নানা রকম বিতর্ক আর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংগঠনের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর বিরক্ত। বিভিন্ন জেলায় সম্মেলন না করে কেন্দ্র থেকে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করে কেটেছে সংগঠনটির পুরো বছর। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন চান।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয়া হয় ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই। এর প্রায় এক বছর পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরপর সংগঠনের দায়িত্ব নেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ দুজনকেই ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এ দুজনের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ।
প্রেস রিলিজ কমিটি
ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমিটি দেয়ার কথা বললেও সে বিষয়টি মানেননি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ‘প্রেস রিলিজ’-এর মাধ্যমে তারা কমিটি দিয়েছেন। সে বিষয়টি করতে আওয়ামী লীগ থেকে তাদের বারবার নিষেধ করা হয়েছে।
এভাবে কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে। এ কারণে কয়েকটি জায়গায় এভাবে কমিটি করার পর বিক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব। সিলেট জেলা কমিটি ও মহানগর কমিটি, ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ও ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটি হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়েছে ওই সব জায়গার সংগঠনের একটি অংশ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় যোগ্য নেতারা বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাচ্ছেন সংগঠন থেকে। তাই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগ্য নেতাকে সংগঠনের দায়িত্বে আনা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুরো সংগঠনকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছেন। তারা যেখানে কমিটি দিয়েছেন, সেখানে মাদকাসক্ত, নারী নির্যাতন মামলার আসামি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির-রাজাকার সন্তানদের স্থান দেয়া হয়েছে। শীর্ষ দুই নেতা নিজেদের ইচ্ছামতোই কমিটিগুলো দিচ্ছেন। আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতেন।
‘কী এমন আলাদিনের চেরাগ তারা পেয়ে গেছেন যে এখন দামি গাড়ি, দামি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছেন? এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই কি তারা সংগঠনের সম্মেলন না চেয়ে বরাবরের মতো ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থাকতে চান?’
সম্মেলন কবে, এটাই আলোচনা
ছাত্রলীগের এখন আলোচনার মূল বিষয় সম্মেলন। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনের দাবি তুলছেন। তারা চান, চলতি বছরেই যেন সম্মেলন হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বলা হয়েছে, দুই বছর পর পর হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সে হিসাবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ২০২১ সালে ৩১ জুলাই। সবাই তাকিয়ে আছে সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে।
কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার অভিযোগ, তাদের সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে।
তাদের দাবি, ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন করার বিষয়ে মতামত জানাবেন তারা।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সেই গঠনতন্ত্র মেনে চলছেন না। তারা ছাত্রলীগকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন, যেটা সংগঠনের জন্য অশুভসংকেত।
‘সম্মেলন দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার অবহিত করার পরেও তারা আমাদের কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না, মধুর ক্যান্টিনে আমাদের মুখোমুখি হলে তারা আমাদের এড়িয়ে চলেন। আমরা তাদের দুজনকে বলেছি, আপনারা সম্মেলনের বিষয়ে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন, তারপর তিনি যে সময় নির্ধারণ করে দিবেন, সে সময় সম্মেলন হোক।’
কেন্দ্রীয় ও জেলায় বিতর্কিতরা
কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জেলায় যে কমিটিগুলো করেছেন, সেখানে স্থান পেয়েছেন বিতর্কিতরা। তাদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া ৬৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধে বয়স উত্তীর্ণ হওয়া ও বিবাহিত হওয়া ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, মারামারি ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, যশোর, নড়াইল, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, সিলেট জেলা, মহানগরসহ বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটে যে কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তাতে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সাত মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নাজমুল ইসলামকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, এখানে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। আর ময়মনসিংহ জেলা কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সংগঠনটির অনেক নেতা।
এসব বিষয় নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরে করোনা মহামারির প্রকোপে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক জায়গায় সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছিল। তবে এখন আবার কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রলীগকে আবার সংগঠিত করতে আমরা দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছি। জেলা ইউনিট মিলিয়ে ৩৫টির মতো কমিটি করা হয়েছে।’
জেলা পর্যায়ে কমিটিতে অনেক বিতর্কিতের স্থান পাওয়া নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্মেলন ছাড়া একটি জেলায় কমিটি করার সময় আমরা নেতাদের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত বিশ্লেষণ করেছি। খোঁজখবর নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। জেলা কমিটি করতে গেলে ৫ থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে। আমরা আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করি। সে ক্ষেত্রে আমরা দুজনের বেশি কাউকে খুশি করতে পারি না। যারা নেতৃত্বে আসতে পারে না, তাদের তো নানা বিষয়ে আপত্তি থাকেই।’
তিনি বলেন, ‘যোগ্যতার বাইরে গিয়ে কাউকে নেতা বানানো হয়নি।’
গত বছর কেন এত প্রেস রিলিজ কমিটি দেওয়া হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারণ হলো করোনা মহামারির কারণে সম্মেলন করা গেল না। তবে আমরা এখন সম্মেলনের মধ্য দিয়েই কমিটি করছি। তবে ওই সময় (করোনার মধ্যে) অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন কমিটিই আমরা করেছি। আমরা যেহেতু জানি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে পারব না।’
ছাত্রলীগের আগামী সম্মেলন কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ১৯৮১ সাল থেকে সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই সম্মেলন হচ্ছে। তিনি আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু এটা তিনি (শেখ হাসিনা) ছাড়া কেউ আসলে জানেন না।’
সাংগঠনিক নেত্রীকে সম্মেলনের কথা জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার মধ্যে সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছি প্রায় ছয় মাস আগেই। তখন সম্মেলন করার মতো কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবকের মাধ্যমেই দলীয় সম্মেলন হবে। তিনি যখন চাইবেন তখনই হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি নেতারা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এমনকি জনগণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা করছে।’
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বোধগম্য হয় না যে আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে, জনকল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি নির্ধারণ করে। তাই জনগণকে হাতিয়ার করে নয়, জনকল্যাণের রাজনীতি করে জনগণের মন জয় করেই তাদেরকে ক্ষমতায় যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণবিরোধী রাজনীতি করে আসছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে তারা শাসন-শোষণ ও অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিল। সন্ত্রাস ও উগ্র-জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তারা সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ। দলটি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধ্যগ্রন্ত করার লক্ষ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
‘সংসদ নির্বাচন বানচালের নামেও তারা অগ্নি-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। আর দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ নিলে বিএনপি নেতারা সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালান।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
‘সরকার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন:পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন ভবনে মাঠ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ প্রধানের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সচিব বলেন, ‘প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ জেলায় কী সমস্যা আছে তা বলেছেন। পার্বত্য জেলাগুলোতে যেখানে হেলিকপ্টার সাপোর্ট দেয়া হয়, সেখানে তিনদিনের পরিবর্তে পাঁচদিনের সম্মানী ভাতা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা বলেছেন। কমিশন তাতে সম্মত হয়েছে।
‘পার্বত্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকরা বলেছেন যে ভোটের দিন সকালে ব্যালট গেলে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হবে। কমিশন সেটা বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। মূলত মাঠ প্রশাসনে যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ইউপি চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন বিষয়টি নিয়ে আপিল করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আদেশের কপি এখনও আমরা পাইনি। পেলে আপিল করা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলায় জেলায় কোর কমিটি মিটিং করে জানালে সে অনুযায়ী অতিরিক্ত ফোর্স দেয়া হবে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা যেভাবে নিরপেক্ষতা, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।’
জাহাংগীর আলম বলেন, ‘কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জের কথা বলেননি। তারা বলেছেন- স্থানীয় নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে তাই সেখানে প্রতিযোগিতাটা বেশি হবে। এজন্য তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেছেন। সহিংসতার আশঙ্কা করেননি। এ বিষয়টা গোয়েন্দা রিপোর্টে থাকে। কোথাও কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পার্বত্য জেলার উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।’
নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব খাটানো নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘আচরণবিধি যাতে সবাই যথাযথভাবে প্রতিপালন করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন। কমিশনও আশ্বস্ত করেছে যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চার ধাপে দেশের পৌনে পাঁচ শ’ উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়া নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিএনপির ৬৪ জন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সহ-সভাপতি সাদেক আলী, উত্তর চট্টগ্রামের চিকনন্দী ইউনিয়নের সহকারী আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা জহুরুল আলম ও কক্সবাজার জেলা মৎস্যজীবী দলের নেতা এম হান্নান মিয়াকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
হামলায় আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে প্রথমে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আহত আলী হোসেন বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে সাইদুল, মুহিব, সোহেলদের নেতৃত্বে আমার ওপর এই হামলা হয়েছে। এ সময় আমাকে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়।’
ভাইরাল হওয়া অপর এক ভিডিওতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করার দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হোসেনসহ আরও তিনজন ঘোড়া প্রতীক চেয়েছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের দিন বিষয়টি নিয়ে অনেক হট্টগোল হয়। একাধিক প্রার্থী হওয়ায় লটারির মাধ্যমে আলী হোসেন ঘোড়া প্রতীক পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনফর আলীর নির্দেশে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচন থেকে মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনরা সরে না দাঁড়ালে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের বলেন, ‘দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি।
‘নির্বাচন কমিশনে সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এ বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে দলে; সময়মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে।’
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাধারণ ক্ষমা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে দলীয় রণকৌশল। সেটা হতেই পারে। সেটা দলের সভাপতি নিতে পারেন। নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।’
বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকে—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির সন্ত্রাস থেকে জনগণকে রক্ষায় কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি একতরফা সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকেই যায়। জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
‘আমরা মাঠে থাকলে তারা এসব অপকর্ম করতে মানসিকভাবে চাপে থাকবে। সে জন্য আমরা কর্মসূচি দিই। বিএনপির চোরাগোপ্তা হামলা প্রতিহত করতে জনগণের স্বার্থে আমাদের কর্মসূচি থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন:দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার সকালে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ব্যাংককের ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের কথা রয়েছে।
২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে সোমবার তার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় সফর।’
তিনি বলেন, এই সফর উভয় পক্ষের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এতে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের (বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড) মধ্যে সহযোগিতার নতুন জানালা উন্মোচিত হবে।
গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন এবং জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনার অভিপ্রায়পত্রসহ বেশ কিছু সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করবে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সরকারী পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, শক্তি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সফর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি করবে।
সফরকালে হাছান বলেন, আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি ঢাকা জোরালোভাবে উত্থাপন করবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ডের প্রতি তার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করবে।
তিনি বলেন, যেহেতু থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার উভয়ই আসিয়ানভুক্ত, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
হাছান বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফরে বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট কর্মসূচি প্রচারের পাশাপাশি ভ্রমণ ও অবকাশ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বিনিময় করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতা উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন স্বাগত জানাবেন এবং তাকে একটি আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) একান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, নথিতে স্বাক্ষরে উপস্থিত থাকবেন, একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এরপর সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটি রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
সফরকালে, প্রধানমন্ত্রী রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরাক্লাওচাওয়ুহুয়া এবং রানী সুথিদা বজ্রসুধাবিমলালক্ষণের রাজকীয় দর্শকদের সঙ্গে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ এপ্রিল ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন।
একই দিনে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এবং এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
‘লিভারেজিং ডিজিটাল ইনোভেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৮০তম অধিবেশনটি টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে অঞ্চলব্যাপী সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ জোরদার করার একটি সুযোগ হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল উদ্ভাবন কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সরকারি নেতা ও মন্ত্রী এবং অন্যান্য মূল অংশীজনদের এই অধিবেশনে একত্রিত করা হবে।
মন্তব্য