ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে দুই গারো কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলার পাঁচ দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, আসামিরা কেউ বাড়িতে না থাকায় তারা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
হালুয়াঘাট থানায় গত ৩০ ডিসেম্বর ওই দুই কিশোরীর একজনের বাবা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নে গত ২৮ ডিসেম্বর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় ওই দুই প্রতিবেশী কিশোরী। রাতে ফেরার পথে কয়েকজন তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানতে পারেন।
এরপর একজনের বাবা ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন উপজেলার কচুয়াকুড়া গ্রামের সোলায়মান হোসেন রিয়াদ, মো. শরীফ, এজাহার হোসেন, কাটাবাড়ি গ্রামের রমজান আলী, মো. কাউছার, মো. আছাদুল, শরিফুল ইসলাম, মো. মিজান, মো. রুকন ও মো. মামুন।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান খান বলেন, ‘আসামিদের বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’
এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে গাজীরভিটা ইউনিয়নে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন গারো সম্প্রদায়ের শতাধিক নারী-পুরুষ।
মানববন্ধনে গারো ছাত্র সংগঠনের সভাপতি জেমস রেমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও পুলিশ এখনও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ জন্য গারো সম্প্রদায়ের মানুষ হতাশ। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর বাউফলে ছুরিকাঘাতে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শিক্ষার্থী।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকূল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, ইন্দ্রকূল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হামলায় নিহত হয়েছেন দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন। তিনি জানান, মরদেহ শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৭টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালে মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। নিহতরা হলো ১৬ বছর বয়সী নাফিস মোস্তফা আনসারী ও ১৫ বছরের মো. মারুফ হোসেন। হামলায় আহত হয়েছে ১৫ বছরের আরেক শিক্ষার্থী ফুজাযেল হোসেন সিয়াম।
আহত সিয়াম জানায়, ইন্দ্রকূল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল বুধবার। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিল সবাই। স্কুলের পাশে ব্রিজের ওপর আসলে গায়ে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নবম শ্রেণির রায়হান, সৈকত, হাসিবুল এবং তাদের বন্ধু নাঈম (১) ও নাঈম (২) সহ আরও কয়েকজন মিলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিস, মারুফ ও সিয়ামের ওপর ছুরিকাঘাত করে।
সিয়াম জানায়, এতে নাফিস ও মারুফ গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শেবাচিমে পৌঁছার পর চিকিৎসারত অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, ঘটনা শুনেছি। নাফিস ও মারুফ দুইজন শিক্ষার্থী বরিশাল হাসপাতালে মারা গেছে। আর সিয়াম বাউফল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরাজুল ইসলাম জানান, নাফিস ও মারুফের পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত থাকায় তাদেরকে বরিশালে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া সিয়ামের উরুতেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
বাউফল থানার ওসি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছে। নিহত থমচু বম রামথার পাড়ার কারবারি। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১১টার দিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম রামথার কারবারি পাড়ায় জুমে যাচ্ছিলেন থমচু বম ও তার ছেলে। এ সময় সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা লাশ উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘রামথারপাড়া এলাকা থেকে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
‘কাইলগো বিয়ালে যেইরহম কলসের কান্দায় দেওই বরছে এই রহম যদি আবারো দেওই নামে তয় মোগো খ্যাতের তরমুজ সব পইচ্যা যাইবে। এই তিনডা মাস দিনেরে দিন রাইতেরে রাইত কই নায়, খালি খ্যাতের পিছে খাটছি। আর কয়ডা দিন গ্যালেও তরমুজ কাইট্টা আডে উডাইতে পারতাম। হঠাত দেওইডা নাইম্মা মোগে সাড়ে সর্বনাশ করছে। এই ক্ষতি ক্যামনে কাডাইয়া উডমু মোরা।’
ভারি বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমার পর বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী এলাকার তরমুজ চাষী ফজলুল হক এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বরগুনাসহ উপকূলে টানা তিন ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয়। এতে জেলার সব তরমুজ ক্ষেতেই পানি জমে যায়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমলে আটঘাঁট বেঁধে ক্ষেতে নামেন চাষিরা। সেচ পাম্প দিয়ে রাতভর প্রচেষ্টায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের চেষ্টা চালান তারা।
বুধবার সকালে বরগুনা সদরের হেউলীবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টানা ভারি বর্ষণে তরমুজের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এতে পচন ধরার পাশাপাশি তরমুজ পরিপক্ব হওয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তরমুজ চাষী রেজাউল করিম বলেন, ‘মুই প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ লাগাইছি। দেওইতে সব খ্যাতই তলাইয়া গ্যাছে। কেবল তরমুজটা পোক্ত অইয়া ওডা শুরু হরছেলে। বেডের মাডি ভিজা, এই তরমুজে পঁচন ধইর্যা নষ্ট অইয়া যাইতে।’
রেজাউল জানান, ভারী বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যে ক্ষেতের ২৫ ভাগ তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। আরও দু-একদিন বৃষ্টি থাকলে দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। একই অবস্থা এই এলাকার হাজার হাজার চাষির তরমুজ ক্ষেতের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বরগুনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশাবাদ ছিল হেক্টরপ্রতি ৪০ টন ফলন হবে।
কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা অনুসারে বরগুনায় তরমুজের ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী, বুড়িরচর, নলটোনা ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে।
এছাড়া আমতলী উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তরমুজের আবাদ হয়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে ওইসব এলাকার তরমুজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘ভারী বর্ষণে বরগুনার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্রায় শত কোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি না বেশিরভাগ তরমুজ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমরা কৃষকদের সেচে সহযোগিতাসহ এ অবস্থায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ। সেখানে বলা হয়েছে, ইমাদ পরিবহনটি মেয়াদোত্তীর্ণ, চালকের মধ্যম যান চলাচলের লাইসেন্স থাকলেও চালিয়েছে ভারী যানবাহন। বৃষ্টিভেজা সড়কে বেপারোয়া গতিতে গাড়ি চালানোই দুর্ঘটনার কারণ।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এসব তথ্য তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা। এ সময় ওই এক্সপ্রেসওয়ে দুঘর্টনা রোধে ১৪টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
তবে কাগজে-কলমেই তদন্ত প্রতিবেদন না রেখে বাস্তবায়নের দাবি যাত্রী-চালকদের। আর প্রশাসনও দুঘর্টনারোধে কঠোর ভূমিকার আশ্বাস দিচ্ছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘বেপরোয়া গতির কারণে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ইমাদ পরিবহনটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। শুধু তাই নয়, পরিবহনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি। তারপরেও সদর্পে চলছিল ইমাদ পরিবহন। এ কারণে গত ১৯ মার্চ সকাল ৮টায় মাদারীপুরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।
‘এ ছাড়া চালকের পেশাদার লাইসেন্স মধ্যম থাকলেও চালিয়েছেন ভারী যান। অন্যদিকে দুঘর্টনার দিন বৃষ্টিভেজা রাস্তা থাকার কারণে চালকের অসচেতনার কারণে দুঘর্টনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, চালক ও সংশ্লিষ্ট সকলের লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সকল বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করতে হবে, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতিসম্পূর্ণ গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান করতে হবে, গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে করা, এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেইল স্থাপন করতে হবে। এই রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেন ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ছাড়াও মহাসড়কে চলাচলকারী সকল পরিবহনের হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত ডেটাবেইজ রাখতে হবে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্যে লোকবল ও টহল গাড়ি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে রাতে, ভোরে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতি অপেক্ষাকৃত কম রাখতে হবে। দুঘর্টনা কমাতে সড়ক ও মহাসড়কের সিটি টিভি, ট্র্যাকার, অনলইন মনিটরিং জোরদার করতে হবে।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা, কমিটির সদস্য মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন।
গত রোববার ভোর ৪টার দিকে খুলনার ফুলতলা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পরে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটির চালক সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে বাসটি ছিটকে পড়ে যায়।
এরপর এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের দেয়ালের সঙ্গে সজোড়ে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক জাহিদ হাসান, তার সহকারী ইউসূফসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার জন্য ১২ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজসহ আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিবচর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে ইমাদ পরিবহন লিমিটেড কোম্পানির মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের নামে একটি মামলাটি করেছেন।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান তিনি।
৪০ বছর বয়সী মো. শাহজাহান খানের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এতে দগ্ধসহ কয়েকজন আহত হন পরে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলে শাজাহান খান কে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের (আই সি ইউ) তে ভর্তি রাখা হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ শাজাহান খান চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আইসিইউতে মারা যান। তার শরীরের ৬০ শতাংশ দগ্ধ ছিল।’
সম্প্রতি সভা করে কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসনে কান্দিরপাড় থেকে দেশওয়ালী পট্টি পর্যন্ত সড়কে রিকশা, ইজিবাই ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে ফিডার ও সংযোগ সড়কে চাপ বেড়েছে। আগের তুলনায় যানজট বেড়েছে। বেড়েছে ভোগান্তি। বিশেষ করে অফিস সময়ে যানজটে থমকে যায় পুরো কুমিল্লা নগরী।
যানজটের ভোগান্তিতে শিকার সাধারণ মানুষজন সরাসরি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস খোলার দিন সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর বাদুড়তলা, ঝাউতলা, টমসমব্রীজ, রাজগঞ্জ, পুলিশ লাইন থেকে ফৌজদারি সড়কে তীব্র যানজট হয়। রানীরবাজার ও ঠাকুরপাড়ার ফিডার রোডগুলোতে ভয়াবহ যানজটের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে নগরবাসীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নগরীর মর্ডান, ফয়জুন্নেছা ও ওয়াই ডব্লিউ সিএ স্কুল শুরুর আগে বাদুড়তলা এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিকেলে ছুটির সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, চকবাজার থেকে সরাসরি নজরুল এভিনিউ, রামঘাট, বাদুরতলা-ঝাউতলা এলাকায় যেতে না পারার কারণে রাজগঞ্জ এলাকার যানজটের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। মোঘলটুলী তিন রাস্তার মোড়ের যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কুমিল্লা হাই স্কুল শুরু এবং ছুটির সময়ে এখানকার যানজট এখন নতুন দৃশ্য। ছাতিপট্টি-রাজগঞ্জ এই এলাকায় যানজট থাকায় বিকল্প হিসেবে গাংচর-থানা রোড ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে নাগরিকরা। সরু ওই সড়কে থানা পুকুর পাড় চার রাস্তার মোড়ে একবার জটলা বেঁধে গেলে তা সারতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি সময়।
বুধবার সকালে সকাল সাড়ে ৯টায় বাদুড়তলায় যানজটে আটকে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গৃহিণী আসমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো রাস্তা নাই, যে রাস্তায় যানজট নাই। মেয়েটাকে ফয়জুন্নেছা স্কুলে দিতে গিয়ে একবার রানীর বাজার দিয়ে আসি আরেকবার বাদুরতলা দিয়া আসি। কি যে যন্ত্রণা। আগে শুনতাম ঢাকায় এমন যানজট। স্কুল কলেজ অফিসে যেতে এক ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। এখন কুমিল্লার অবস্থাও একই রকম।’
বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আশিক রহমান বলেন, ‘টমসমব্রিজ দিয়ে এসে দেখি পুরো রাস্তায় জ্যাম। ঠাকুরপাড়া দিয়ে বাইক নিয়ে এসে দেখি অলিগলিতে জ্যাম। ভাইরে কি যে যন্ত্রণা। কিছু কইতে পারি না সইতে পারি না। শুধু বসদের ধমক সহ্য করতে হয়।’
সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সামনের সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফৌজদারী এলাকার ব্যবসায়ী সিয়াম হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এই সড়কে কখনো যানজট হতে দেখি নাই। এই কয়েক দিন এই সড়কটাতে যানজট হয়। এটা সামনের দিনগুলোর জন্য ভয়াবহ অবস্থার সংকেত দিচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি করা এক কর্মচারী জানান, তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে আসেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি প্রথমে টমসমব্রীজে যানজটে আটকা পড়েন।
তিনি বলেন, ‘বিকল্প সড়ক হিসেবে ঠাকুরপাড়া দিয়ে আসতে চাইলে সেখানেও যানজটে আটকা পড়ি। তারপর রানীরবাজারে একবার যানজটে পড়ি। তারপর বাদুড়তলায় পরি। এভাবে একটা শহরে চার থেকে পাঁচবার যানজটে আটকে যাই। শুধু অফিসটা শুরুর আগে এত যানজটের শিকার হই। এই কষ্টের কথা কাউরে বলতে পারি না, কারণ সরকারি চাকরি করি।’
পরশু রমজান শুরু হবে। প্রতি বছর রমজানে কুমিল্লা নগরীতে ভ্রাম্যমান পেশাজীবির সংখ্যা বাড়ে। এতে করে সামনের দিনগুলোতে আরও তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
নগরীর যানজটের ভোগান্তি বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসন নিয়ে যে সভা হয়েছে তার অনেক সিদ্ধান্তই এখনও রেজুলেশন ভুক্ত হয় নি এবং সংশ্লিষ্টদের জানানো হয় নি। যানজট নিরসনে যারা ভূমিকা রাখতে পারে তাদের সবাইকে ওই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে কেউ কেউ ফেসবুকে লেখালেখি করছেন।’
কান্দিরপাড়ের আশেপাশের সড়কগুলোতে যানজটের নতুন ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল হক টিপু বলেন, ‘নতুন যেসব এলাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে সেসব এলাকার যানজট নিরসনে আমাদের বাড়তি জনবল লাগছে। আমরা পুলিশ লাইন্স থেকে নতুন সদস্য নিচ্ছি। আগামীতে রোজা এবং ঈদের ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে তখন কিছুটা চাপ কমবে।’
তবে কান্দিরপাড়ে থ্রিহুইলার চলাচল সিদ্ধান্তে অটল থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি মানুষ এই সিদ্ধান্তের সুফল পাবে।’
আরও পড়ুন:ভোলার বোরহানউদ্দিনে ৪০ জন কিশোরীর মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে কারাতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বোরহানউদ্দিন পৌরসভা মিলনায়তনে মঙ্গলবার বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে প্লান ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’ ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল আহমেদ প্রধান অতিথি থেকে হিসেবে উপস্থিত বিজয়ীদের মাঝে সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করেন।
জেলার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন উপজেলার ২০ জন করে ৪০ জন কিশোরী ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বরিশাল বিভাগের কারাতে এন্ড কিক বক্সিং ফেডারেশনের চিফ কোচ মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিযোগিতায় ১০ জন চ্যাম্পিয়ন, ১০ জন রানার আপ ও ২০ জন দ্বিতীয় রানার আপ হয়।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কিশোরী তাজরীন জাহানের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা দেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাপোর্ট ইন্টিগ্রেশন স্পেশালিষ্ট মো. আমির হোসেন, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনিক্যাল স্পেশালিষ্ট শহীদুল ইসলাম, সুশীলনের টিম ম্যানেজার জিয়াউল হকসহ অনেকে।
প্রশিক্ষণের বিষয়ে উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর কবিবুর রহমান জানান, পিছিয়ে পড়া কিশোরীদের সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ও নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কারাতের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য