শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নওগাঁয় ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের।
ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দেরি না করে কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে রোগীকে।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সোমবার গিয়ে দেখা যায়, সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। বেড সংকটের কারণে শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতেও অসুস্থদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিন বছরের মেয়ে সাদিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদিগুন গ্রামের সাইদুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। বেড না থাকায় তাকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
সদর উপজেলার বনানীপাড়া মহল্লার মোহন আলী বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আমার ১৬ মাস বয়সী মেয়ে তানজিলাকে রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করি। তবে শিশু ওয়ার্ডে বেড পাইনি। যার কারণে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এই ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে শুয়ে সে আরও কষ্ট পাচ্ছে।’
সদর উপজেলার চুনিয়াগাড়ী গ্রামের মাহবুব আলম বলেন, ‘আমার দুই বছরের ছেলের জ্বর হয়েছে। তিন দিন থেকে ভর্তি আছে শিশু ওয়ার্ডে। ডাক্তাররা বলছেন, ঠান্ডাজনিত কারণে জ্বর হয়েছে। প্রতিদিনই এখানে অনেক শিশু ভর্তি হচ্ছে।’
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারহানা আক্তার বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় অনেক শিশুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এমনকি এক বেডে ২-৩ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২৫টি বেডের বিপরীতে ৪০ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। তাদের সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক উজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন ডায়রিয়া এবং ১৫ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে।’
স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধের সরবরাহ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
নওগাঁর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গেল কয়েক দিনে চার শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
‘হাত-পায়ে মোজা পরাতে হবে। আবার ঘামে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন কাজে সবশেষ স্লিপারটিও বসে গেছে। একইসঙ্গে শেষে হয়েছে অবশিষ্ট থাকা ৭ মিটার অংশের ঢালাই কাজ। এর মধ্য দিয়ে বুধবার বিকেলে ইফতারের আগ মুহূর্তে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের অপেক্ষা।
সবশেষ স্লিপার ও ঢালাই কাজের মধ্য দিয়ে সেতুর দু’পাশের ভায়াডাক্ট ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হয়। এ কাজ সম্পন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ৪ এপ্রিল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে।
রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত রেলসংযোগ প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো যানবাহন চালু রেখে সেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বুধবার কাজ শেষ হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।
ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ জানান, সবশেষ স্লিপারটি বসানোর পর ৭ মিটারের কংক্রিটিং করা হয়েছে। তা শক্ত হতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। এরপরই সেতুর রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেন চলার উপযোগী রেললাইন স্থাপনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবজাল হোসেন বলেন, ‘সেতু উদ্বোধনের পর কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। সব নকশা চূড়ান্ত করে গত বছরের নভেম্বরে মূল সেতুতে রেললাইনের কাজ শুরু হয়। ৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হলো।
‘ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৬৮ ভাগ। সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। আমরা আশাবাদী, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রকল্পের যে মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
প্রকৌশলীরা জানান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দু’পাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকি সবই কংক্রিটের তৈরি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দু’পাশের স্টেশন নির্মাণও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নিরীহ কৃষককে পুলিশের বুটের লাথি ও লাঠিপেটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরী বাজারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে কুমরী গ্রামের শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
এ ঘটনায় আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষবেড় এলাকার নলা বিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হন সিরাজ উদ্দিন। পুলিশের বুটের লাথি ও লাঠিপেটায় তার বাম পায়ের ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। এছাড়াও তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এক পর্যায়ে চিৎকার শুনে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।
গুরুতর আহত ৪৫ বছর বয়সী কৃষক সিরাজ উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা আশ্রাব আলী এই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
সিরাজের ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন জানান, নলা বিলে মাছের খাদ পাহারা দিয়ে তার ভাই বাড়ি ফেরার পথে এএসআই নুরুল হকসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা জুয়াড়ি অপবাদ দিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে এএসআই নুরুল হক তার বাম উরুতে লাথি মারেন। এতে তার উরুর হাড় ভেঙে যায়। পরে মাটিতে পড়ে থাকা সিরাজে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরেন ওই এএসআই। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরাও সিরাজকে মারধর করেন। সিরাজের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পুলিশের ওই সদস্যরা সটকে পড়েন। সিরাজ ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রিয়াজ উদ্দিন আরও জানান, এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। পরে বুধবার দুপুরে তিনি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক জানিয়েছেন যে তার আঘাতগুলো গুরুতর। অপারেশন লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তিনটা কন্যা সন্তান নিয়ে এমনিতেই ভালভাবে চলতে পারছি না। যে মানুষটার উপার্জনে সংসার চলে তাকে পুলিশ অযথা মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। এমন বর্বরোচিত হামলার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মস্তুফা বলেন, ‘সিরাজ উদ্দিন খুব ভালো লোক। আর কেউ কোনো অপরাধ করলে পুলিশ তাকে আটক করতে পারে। কিন্তু তার শরীরে এভাবে আঘাত করতে পারে না। আমি ঘটনাটি শুনে ওই পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ফোন করি। ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ফোন কেটে দেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, তিনি সেখানে যাননি।
মামলার আইনজীবী মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় সিরাজ উদ্দিনের ছোট ভাই আহুতিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক নূরুল হকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচজনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জের ৩ নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক পার্থ ভদ্র মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, মামলা হওয়ার পর তিনি বিষয়টি জেনেছেন। এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লোহিত্য, আমার পাপ হরণ করো’ মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা পাপমুক্তির বাসনায় লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে অংশ নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ অষ্টমী স্নানোৎসব। দুদিনব্যাপী এ উৎসবে নদের ১৮টি ঘাটে ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছে উৎসব উদযাপন পরিষদ। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ,নেপাল ও ভুটান থেকে পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে যোগ দিয়েছেন।
শুক্ল তিথি অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৭ মিনিটে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমীর স্নানোৎসব। দু’দিনব্যাপী এই উৎসব ঘিরে লাখো পুণ্যার্থীর পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা।
ভারতের কলকাতা থেকে আগত পুণ্যার্থী জ্যাতি রানী বলেন, ‘তীর্থযাত্রীরা লাঙ্গলবন্দে আসেন পাপ মোচনের জন্য। একই বাসনা নিয়ে বহুদূর থেকে এখানে ছুটে এসেছি। আয়োজনের সব কিছুই সুন্দর। তবে যানজট আর বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের লাল মোহন চন্দ বলেন, ‘যানজট পার করে হলেও পরিবারের সবাই আসতে পেরেছি। তবে বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে স্নান করার ইচ্ছে ছিলো বহু বছরের। জীবনে যত পাপ আছে তা থেকে মুক্তি পেতে প্রার্থনা জানিয়েছি মহাভাগ ব্রহ্মপুত্রের কাছে।’
নারায়ণগঞ্জের পালপাড়া থেকে আগত প্রাপ্তি সাহা বলেন, ‘পুরো পরিবার নিয়ে স্নান করেছি রাজ ঘাটে। প্রার্থনা করেছি- ভালো থাকুক সবাই। মঙ্গল হোক দেশ ও জাতির।’
মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পূবালী রায় বলেন, ‘একে হলো বৃষ্টি, তার ওপর সড়কে যানজট। তাই ট্রলার পথই আমরা বেছে নিয়েছি। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের ৫০টির বেশি নৌযান এসেছে লাঙ্গলবন্দে। প্রতি বছরই আমরা এখানে আসি। তবে গেল কয়েক বছর করোনা মহামারির কারণে বড় পরিসরে উৎসব হয়নি। এবার অনেক মানুষ এসেছে। তাই ট্রলার ঘাটে ভিড়তেও সময় লেগেছে। তবুও ভালো লাগছে স্নান সম্পন্ন করতে পেরে।’
সীতাকুণ্ড থেকে আগত পুরোহিত কৃষ্ণ কুমার সাহা জানান, হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রীয় পুরানমতে, হিন্দু দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে গোসল করে পাপমুক্ত হন। লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পানিকে বহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন সমভূমিতে। পৌরাণিক এ কাহিনীকে স্মরণ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসে মহাতীর্থ অষ্টমীতে লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে তীর্থযাত্রীরা পুণ্য লাভের আশায় জড়ো হন।
দু’দিনব্যাপী স্নান উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের নির্বাহী সদস্য শিখন চন্দ সরকার। তিনি বলেন, ‘এ বছর দশ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে লাঙ্গলবন্দে। সব রকম আয়োজন সফল হওয়ায় খুশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। কোনো ধরনেন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবার শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হচ্ছে উৎসব। তবে পুণ্যার্থী বেশি হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট লেগে যায়। মহাসড়কের যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।
আরও পড়ুন:বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙতে অভিযান চালিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনটি নির্মানের অভিযোগে বুধবার এই অভিযান চালানো হয়। ভবন মালিকের দাবি, বিনা নোটিশে সিটি করপোরেশন বুলডোজার নিয়ে ভবনটি ভাঙতে এসেছে।
এদিকে ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রোড ইন্সপেক্টরের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রুঢ় আচরণেরও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নগরীর নতুন বাজারের টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় ভবনটি ভাঙতে আসে সিটি করপোরেশন। তবে ভবন মালিককে কিছু সময় দিয়ে বুলডোজার তার ভবনের সামনেই রেখে দেন করপোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা।
রোড ইন্সপেক্টর রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ভবনটির প্ল্যান রয়েছে ছয়তলার। প্ল্যানে গ্যারেজও রয়েছে। কিন্তু ভবনটি অনিয়মের মাধ্যমে সাততলা করা হয়েছে এবং গ্যারেজ রাখা হয়নি। এ কারণে ভবন মালিককে একাধিক বার নোটিশ দিলেও কোনো জবাব মেলেনি।
‘সবশেষ বুধবার এই বাড়িতে এসে নোটিশ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া নেয়া হয়। ভবন মালিক আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজারের বাসিন্দা এবং বরিশাল পৌরসভার টানা ১৮ বছর কমিশনার পদে দায়িত্বে থাকা শাহজাহান হাওলাদারকে ভবনটির ব্যাপারে গত ৬, ২০ ও ২৭ মার্চ চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি করপোরেশনকে। তাছাড়া নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদিত প্ল্যান করপোরেশনে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি তা করেননি।
ভবনটির মালিক বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা আগে কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি। এখানে বুলডোজার নিয়ে আসার ৩০ মিনিট আগে প্ল্যান বহির্ভূতভাবে ভবন তৈরির কথা জানিয়ে আমাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে।’
এদিকে বুধবার বিকেলে শ্রমিক লীগ নেতার ভবন ভাঙার প্রস্তুতির আগেই নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে গুপ্ত কর্নার মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়া অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
ভবন ভাঙার কার্যক্রম না করে বুলডোজার শাহজাহান হাওলাদারের বাড়ির সামনে রেখে দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে বুলডোজারটিও সরিয়ে নেয়া হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি, বরিশাল নগরী থেকে বিভিন্ন রুটে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা চলাচলে চাঁদাবাজি নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা শাহজাহান হাওলাদারের সঙ্গে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বন্দ্ব হয়। মেয়র নিজ ফেসবুক পেজে লাইভে এসেও শাহজাহান হাওলাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কথা বলেন থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের সঙ্গে নিজ বাসায় আলোচনার সময়। ওই বিষয়কে কেন্দ্র করেই শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া নেয় সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার উদ্ধার হয়েছে শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ। আর বস্তাবন্দি এই মরদেহ প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসত অভিযুক্ত রুবেল। লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে সে খড়কুটো দিয়ে ওই বস্তা ঢেকে রাখত নিয়মিত।
বুধবার দুপুরে ডবলমুরিং এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার (এসপি, চট্টগ্রাম মেট্রো) নাঈমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন (২১ মার্চ) রাত ৯টার পর আখির মরদেহ বস্তাবন্দি করে সবজির ভ্যানে করে ত্রিফল দিয়ে ঢেকে মুরগি ফার্ম এলাকার ডোবায় ফেলে আসে রুবেল। রাত ১০টার দিকে আঁখির পরিহিত স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালায় ফেলে দেয় সে। ডোবায় মরদেহ ফেলে আসার পর থেকে রুবেল প্রতিদিন মরদেহের অবস্থা দেখে আসত এবং লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে খড়কুটো দিয়ে ঢেকে দিত।’
২১ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার বাসা থেকে আরবি পড়তে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনি। নিখোঁজের ৮ দিন পর বুধবার ভোরে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকার একটি জলাশয় থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে সবজি বিক্রেতা রুবেলকে আটক করে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে নাঈমা সুলতানা জানান, পাহাড়তলী থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি ও আঁখি মনির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৩ মার্চ ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। সিসিটিভি ফুটেজ ও শিশুটির স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রুবেলকে শনাক্ত করে তারা৷
‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুবেলকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল আঁখি মনিকে বিড়ালছানার প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খালি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতেই মঙ্গলবার ভোরে আঁখি মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আটক রুবেলের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে পাহাড়তলী থানার মুরগি ফার্ম বাজারের পাশে আলমতারা পুকুর এলাকার ডোবার আবর্জনায় চটের বস্তায় বাঁধা অবস্থায় শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহে কালো রঙের একটি গেঞ্জি ছাড়া আর কোনো কাপড় ছিল না। পরবর্তীতে আটক রুবেলের তথ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাহাড়তলীর পোর্ট কানেকটিং রোডে কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পাশের নালা থেকে শিশুটির স্যান্ডেল, পায়জামা ও হিজাব উদ্ধার করা হয়।
‘তিন মাস আগে স্বামী আবুল হাশেমের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ হওয়ায় আঁখি মনিকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে মায়ের বাসায় ওঠেন বিবি ফাতেমা। মেয়েকে স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তিনি।’
পিবিআই এসপি জানান, সবজি বিক্রির সুবাদে আঁখি মনির নানী বিবি খাদিজার সঙ্গে পরিচয় ছিল রুবেলের। মাস তিনেক আগে একটি বিড়ালছানা ধরতে গিয়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লাগে আঁখি মনির। তখন শিশুটির সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। সব সময় রুবেলের কাছে বিড়ালছানা চাইতো আঁখি, রুবেলও বোনের বাসা থেকে আঁখিকে বিড়ালছানা এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ঘটনার আগের দিন, ২০ মার্চ এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিড়ালছানা আনতে রুবেলের বাসায় যায় আঁখি। ওইদিন বেলা ১১টায় সবজি বিক্রির সময় নিজেদের বাসার নিচে রুবেলের সঙ্গে কথা হয় আঁখির। সে সময় বিকেলে বিড়ালছানা দেয়ার কথা বলে আঁখিকে পার্শ্ববর্তী একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলে রুবেল।
বিকেলে আঁখি ওই নির্দিষ্ট স্থানে গেলেও রুবেলের দেখা না পেয়ে ফিরে আসে সে। পরদিন স্কুলের সামনে রুবেলকে দেখে বিড়ালছানার কথা জিজ্ঞেস করে সে। ওই সময় স্কুল শেষে আঁখিকে আগের নির্ধারিত স্থানে যেতে বলে রুবেল। স্কুল শেষে আঁখি পোশাক পরিবর্তন করে হিজাব পরে নির্ধারিত স্থানে যায়। হিজাব পরায় শুরুতে রুবেল চিনতে না পারলেও আঁখির ডাকে চিনতে পারে৷ তখন আঁখিকে কৌশলে রুবেল তার ফুফুর ভবনের চতুর্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় আঁখি চিৎকার করলে গলাটিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে রুবেল।
রুবেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
আয়নী হত্যার ঘটনায় আটক সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নূর ই খোদা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর পিবিআই রুবেলকে আদালতে হাজির করলে তিনি শিশুটিকে হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
আঁখি হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সহপাঠীদের মানববন্ধন
চট্টগ্রামে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তের বিচার দাবিতে বুধবার মানববন্ধন করেছে ওর সহপাঠীরা। আয়নীর স্কুল সরাইপাড়া হাজি আব্দুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানববন্ধনে যোগ দেন অভিভাবকরাও।
বুধবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সাগরিকা মোড় এলাকায় এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত রুবেলের ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের অভিবাবক এবং শিক্ষকরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত সবজি বিক্রেতা রুবেলের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আঁখি মনির সহপাঠী সুমাইয়া আক্তার সানজিদার বাবা মো. সেলিম বলেন, ‘এক সময় আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিল। কিছুদিন আগে আমরা বাসা চেঞ্জ করে একটু দূরে চলে গেছি। বাচ্চাটি আমার মেয়ের সঙ্গে হাজী আব্দুল আলী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। দুজনের বন্ধুত্বও ছিল। ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।’
বর্ষা ও আয়াতের পথ ধরে আয়নী আঁখি
আবিদা সুলতানা আয়নী হত্যাকাণ্ডের আগে চট্টগ্রামে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে নিখোঁজের পর দুটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হয় ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিন দিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়। সে সময় আয়াতের ওই মৃত্যুর ঘটনাও নাড়া দেয় সবাইকে।
ধর্ষণ মামলার বাদীকে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে সংসার শুরু করায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে ধর্ষণের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার বুধবার এই অব্যাহতির আদেশ দেন।
এর আগে ১৩ মার্চ একই আদালত বাদীকে বিয়ের শর্তে আরজুকে জামিন দিয়েছিল। সে অনুযায়ী বাদীকে বিয়ে করেন আসামি।
গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর সঙ্গে প্রথম স্বামীর বিয়েবিচ্ছেদ হয়। সে সময় ওই নারী একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। স্বজনরা তাকে ফের বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে চাচার মাধ্যমে আসামি আরজুর সঙ্গে পরিচয় হয় বাদীর। আরজু নিয়মিত ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে একপর্যায়ে সফল হন। আরজু তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। একাকীত্বের অবসান ঘটাতে নতুন সংসার শুরু করতে চান তিনি। ওই নারী আরজুর প্রেমে পড়ে তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই দম্পতির একটি মেয়ে সন্তান হয়। এ সন্তান গর্ভে আসার সময় থেকে আরজু বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে ভ্রূণ নষ্ট করার চেষ্টা করেন। ওই নারীর দৃঢ়তায় তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, সন্তান হওয়ার পর আরজুর আচার-আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি ওই নারীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার কথা বলে ওই নারীর বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং নারীর জমানো ৮ লাখ টাকা নিলেও ফ্ল্যাট কিনে দেননি আরজু। তিনি টাকাও ফেরত দেননি।
পরে খোঁজ নিয়ে ওই নারী জানতে পারেন, আরজুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। তার ঘরে মেয়েসন্তান আছে এবং স্ত্রীর সঙ্গেই থাকেন তিনি।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আসামি বাদীর কাছে ফারুক হোসেন নামে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন তিনি। আরজু কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। একপর্যায়ে বাদীর সঙ্গে বিয়ে এবং তার ঔরসের সন্তানকে সরাসরি অস্বীকার করেন তিনি।
মামলার তদন্তে বাদীর মেয়ে সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে ওই সন্তান বাদীর গর্ভজাত এবং আরজু তার জন্মদাতা বলে তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আবাসিক হোটেল থেকে হাসপাতালে নেয়া এক তরুণীকে মৃত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
নিকলী সদরের ‘হাওর প্যারাডাইজ’ হোটেল থেকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে তরুণীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
২২ বছর বয়সী ওই তরুণীর নাম তামান্না আক্তার। তিনি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম জগন্নাথপুর এলাকার ওয়াহিদ মিয়ার মেয়ে।
এ ঘটনায় আটক ২৯ বছর বয়সী হুয়ামুন কবীরের বাড়ী কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা গ্রামে।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিকলী উপজেলা কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তনুশ্রী সাহা বলেন, ‘বেলা সোয়া ১১টার দিকে স্বামী পরিচয়ে হুমায়ুন কবীর নামে একজন হাসপাতালে তরুণীকে নিয়ে আসেন। তার সঙ্গে আরেকজন লোক ছিল। তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষের নাকি অন্য কেউ বলতে পারছি না, তবে এই যুবতীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ এসে মরদেহ নিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে হাওর প্যারাডাইজ হোটেল কর্তৃপক্ষের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ জানান, গত ২৫ মার্চ হুমায়ুন কবীর ও তামান্না আক্তার স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হাওর প্যারাডাইজ হোটেলের ৬০৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। তরুণীর গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় স্বামী পরিচয় দেয়া হুমায়ুন কবীরকে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য