টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বরে কিছুটা বেড়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ২০২১ সালের শেষ মাসে ১৬৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা, যা আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে সাড়ে ৭ কোটি ডলার বা ৫ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি (২২.০৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।
এই অঙ্ক বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর আগে এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে – ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বর মাসে ১৬২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ফলে সব মিলিয়ে ২০২১ সালে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে – ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে এসেছিল ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ হাজার ২৩ কোটি (১০.২৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১ হাজার ২৯৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২৭০ কোটি ডলার বা ২০ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে একটা ভিন্ন পেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছিল। যার কাছে যা জমানো টাকা ছিল পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় অবৈধ পথে (হুন্ডি) কোনো রেমিট্যান্স আসেনি; সব এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। সে কারণেই গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
‘এরই মধ্যে দুটি সুসংবাদ এসেছে। তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে; ফের শ্রমিক যাবে সেখানে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। আরেকটি সুখবর হচ্ছে, সরকার ১ জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমার বিশ্বাস জানুয়ারি থেকেই বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মে মাসে তা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে ওঠে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় জুড়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে এসেছে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
নভেম্বর মাসে আসে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। নতুন বছরের শুরু থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রিজার্ভ ৪৬.০৩ বিলিয়ন ডলার
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি রিজার্ভও কমছিল, নেমে এসেছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফনের কারণে সেই রিজার্ভ ৪৬ বিলিয় ডলার ছাড়িয়েছে।
রোববার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার হিসেবে বর্তমানের এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
গত ৪ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা ছিল সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বেশ কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। একের পর এক রেকর্ড হয়। করোনাকালে আমদানিতে ধীরগতি আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সূচক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তবে চলতি মাসের (জানুয়ারি) এই সপ্তাহেই আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ফের কমে যাবে।
দুই মাস পর পর আকুর দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও একই হারে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৭ টাকা লিটার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে তুলনামূলক কম রেমিট্যান্স এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতে সুবাতাস বইছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাতদিনে দেশে এসেছে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ডলার।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে উঠা-নামার প্রবণতা দেখা গেছে। গত জুনে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ডলারে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের পালে ফের হাওয়া লাগতে শুরু করে।
আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২২ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এরপর অক্টোবরে (২৩৯ কোটি ডলার) ফের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা নভেম্বরেও (২১৯ কোটি ডলার) অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও দপ্তরগুলোকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করতে না পারলে সংস্কার ব্যর্থ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যতদিন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও দপ্তরগুলোতে রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত সংস্কৃতি তৈরি না হবে, ততদিন দুদক বা অন্য দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের সফলতা আসবে না।’
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য দুর্নীতিবিরোধী চেতনাকে ধারণ করতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আমলাতন্ত্রের প্রতি আহ্বান জানান।
দলীয়করণ, আমলাতন্ত্র, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচারের কারণে দুদক দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সাঁড়াশি বা শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুদককে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক।
চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন, রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হলো দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম ও দুদক সংস্কার। প্রশাসন সংস্কার কাজও চলছে।
‘এবার বিশেষ প্রেক্ষিতে দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। এটি হচ্ছে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুদকের পাশাপাশি রাষ্ট্র কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে নির্বাচনের মাধ্যমে, তাদের কাছে যেন একটা অবকাঠামো তৈরি হয়, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান অব্যাহত রাখার জন্য।’
অনুষ্ঠানে টিআইবির উপসমন্বয়ক জাফর সাদিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এ সময় দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৪ দফা দাবি জানায় টিআইবি। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের নিয়োগ, পদায়ন, বদলিসহ বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে অবিলম্বে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী তৈরিতে এর ব্যবস্থাপনা কর্মকাঠামো পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ফাঁকা বুলির সংস্কৃতি পরিহার করে সব প্রকার, বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির বিচারহীনতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:বিশ্বের বৃহত্তম পিৎজা ব্র্যান্ড ডোমিনো’জ পিৎজার ব্যবসায়িক যাত্রার ৬৪ বছর উদযাপন করা হবে সোমবার।
প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডোমিনো’জ পিৎজা তাদের ব্যবসার ৬৪ বছরের অসাধারণ যাত্রা উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল পিৎজাপ্রেমীদের জন্য ডোমিনো’জ পিৎজার ৩৬টি রেস্টুরেন্টে ৩৬টির বেশি পিৎজার ওপর ৩৬% আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
‘ক্রেতাগণ এই অফার উপভোগ করতে পারবেন ডোমিনো’জ পিৎজার অ্যাপ (অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরে উপলব্ধ) অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করে। অফারটি ডাইন-ইন, টেকঅ্যাওয়ে এবং ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ উদযাপন শুধু একটি অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক অসাধারণ যাত্রার ৬৪ বছরে পদার্পণ উদযাপন, যা শুরু হয়েছিল একজন ব্যক্তির স্বপ্ন দিয়ে।
শুরুর গল্প
এই গল্প শুরু হয় ১৯৬০ সালে, যখন টম মোনাহ্যান ও তার ভাই জেমস ৯০০ ডলারে মিশিগানের সিল্যান্টিতে একটি ছোট পিৎজা রেস্টুরেন্ট ডোমিনিক’স পিৎজা কিনে নেন। খাবারের ব্যবসায় কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এবং সামান্য কিছু মূলধন নিয়ে টম শুরুতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। কিছুদিন পর তার ভাই ব্যবসা ছেড়ে চলে যান এবং টম একাই রেস্টুরেন্ট চালাতে থাকেন।
টম প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং নিজে ডেলিভারিও দিতেন।
এক বছরের মধ্যে টম ব্যবহৃত একটি ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ির বিনিময়ে তার ভাইয়ের শেয়ার কিনে কোম্পানির সম্পূর্ণ মালিকানা লাভ করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই ডোমিনো’জ পিৎজার সাধারণ স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বৈশ্বিক পিৎজা সাম্রাজ্যে পরিণত হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
টমের লক্ষ্য ছিল একটি পিৎজা ব্রান্ড তৈরি করা, যা শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং সেবার জন্যও পরিচিত হবে। তিনি গরম ও ফ্রেশ পিৎজা ডেলিভারি নিশ্চিত করার দিকে জোর দেন, যা সেই সময়ে এক বিপ্লবী ধারণা ছিল।
১৯৬৫ সালে তিনি ব্যবসার নাম বদলে ‘ডোমিনো’জ পিৎজা’ রাখেন। ডোমিনো'জ-এর লোগোর তিনটি ডট তখনকার তিনটি রেস্টুরেন্টকে নির্দেশ করত এবং তার পরিকল্পনা ছিল ভবিষ্যতে নতুন রেস্টুরেন্ট যোগ হলে লোগোতে একটি ডট বাড়ানো হবে। তবে দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে এটি আর সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ডোমিনো’জ পিৎজা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন গ্রাহকদের নিকট লক্ষাধিক পিৎজা পরিবেশন করে।
বাংলাদেশে ডোমিনো’জ পিৎজা
ডোমিনো’জ পিৎজা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে।
সম্প্রতি মিরপুরের সনি স্কয়ারে নিজেদের ৩৬তম রেস্টুরেন্ট খুলে শাখার সংখ্যার দিক দিয়ে রাজধানীর সর্ববৃহৎ রেস্টুরেন্ট চেইনে পরিণত হয়েছে ডোমিনো’জ পিৎজা।
আরও পড়ুন:বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, জ্বালানি খাতে প্রতি বছর প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সে হিসাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দেশের মানুষের মাথাপিছু ভর্তুকির হার প্রায় ৩ হাজার টাকা।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮ দশমিক ৫৫ টাকা দিলেও সরকার তা ১২ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনে থাকে। এলএনজি আমদানিতে প্রতি ইউনিট ৭০ টাকা খরচ পড়লেও শিল্প খাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে। মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়।’
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে প্রতিযোগিতা না থাকা এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে আমাদের অধিক মূল্যে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। আমাদের চার হাজার এমএমসিএফটি গ্যাস প্রয়োজন। অথচ রয়েছে তিন হাজারেরও কম।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তেল আমদানিতে উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম দামে পাওয়া গেছে। এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে আইপিপির পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে।
‘পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে। সরকারি কিছু সংস্থা যেমন- বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে। এই জমিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে এ ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করা হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ব্যবহারিক হবে না। বরং এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা অধিক কার্যকর। বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি করতে হয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে জ্বালানি স্বনির্ভর করা ও জ্বালানির মূল্য হ্রাসে নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নূরুল আক্তার, আইএফডিএল বাংলাদেশ পার্টনার ব্যারিস্টার শাহওয়ার জামাল নিজাম এবং বিএসআরএমের হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি।
আরও পড়ুন:‘বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসহযোগিতা করলে আমরা একা ক্ষতিগ্রস্ত হবো না, ভারতও হবে। ভারত আমাদের বিনা পয়সায় কিছু দেয় না, টাকার বিনিময়ে দেয়। কাজেই তারা যদি রপ্তানি বন্ধ করে তাহলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এর সঙ্গে দু’দেশের লাখ-লাখ লোক জড়িত।’
নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেছেন।
শনিবার দুপুরে ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে তারা রপ্তানি বন্ধ করবে বলে আমার মনে হয় না। তবে যা হচ্ছে তা সবই রাজনৈতিক।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা প্রশ্নের সুরে বলেন, ‘কখনও কি শুনেছেন যে সব পলিটিক্যাল পার্টি এক জায়গায় বসে কথা বলেছে। আজ হোক কাল হোক রাজনীতিবিদরা দেশ চালাবেন। সে জায়গাতে যদি রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐকমত্য না হয় তাহলে জাতীয় যে পথ নির্ধারণ করার কথা সেটা তখন এলোমেলো হয়ে যায়। একদল একরকম বলবে, আরেক দল সেটা অপোজ করবে। এখন সবাই একত্রে বসেছেন- এটা একটা বড় অর্জন। এটা একটা উদাহরণ হয়েছে।’
পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ভোমরার কার্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংকটের বিষয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এক হাজার ১০০ কোটি টাকার চলমান উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হলে ভোমরা স্থলবন্দর তার কার্যক্রম পুরোদমে চালাতে পারবে।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি আবু হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খানসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন এর আগে ভোমরা স্থল বন্দরের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মাইলফলক সৃষ্টিতে ডায়াবেটিসজনিত চ্যালেঞ্জগুলোকে অতিক্রম করার বড় উদ্যোগ নিয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।
গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর অভিজাত ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে হওয়া এমলিনো এক্সিমপ্লিফাই ট্রায়ালের সাফল্যের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদেরও জানানো হয় শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
এ আয়োজনে দেশের খ্যাতনামা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
তারা জানান, এমলিনো বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে কিডনি রক্ষার কাজও করে থাকে।
ওই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ.কে আজাদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সফল এ ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ডা. মির্জা শরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ডা. মো. হাফিজুর রহমান, প্রফেসর ডা. মো. আবদুল জলিল আনসারী ও প্রফেসর ডা. অজিত কুমার পাল।
সম্মানিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন প্রফেসর ডা. মো. ফিরোজ আমিন, ডা. শাহজাদা সেলিম, ডা. ফারিয়া আফসানা এবং ডা. এম. সাইফুদ্দিনসহ অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় কার্যকর ও সময়োপযোগী ওষুধ মানুষের হাতে তুলে দিতে দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে। এমলিনো এক্সিমপ্লিফাই ট্রায়াল সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য