পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্ট ও গ্রাহকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকম-এর কাছে পাবে ৪৭০ কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৫ টাকা। এই টাকা পরিশোধের আগেই বিভিন্ন হিসাব থেকে ধামাকা শপিং ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন চিশতী তুলে নিয়েছেন ১২৯ কোটি ৭৬ লাখ ৪৩২ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ধামাকা শপিংয়ের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ধামাকা শপিং ডটকম-এর বিভিন্ন হিসাব ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট সেকশন, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিডেটের মহাখালী শাখা, সিটি ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখা, সফটওয়্যার শপ লিমিডেট এবং বিকাশ লিমিটেডের হিসাবপত্র পর্যালোচনা করে এই তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম।
বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ সদস্যের পরিদর্শক দলকে এই পরিদর্শন কাজে সহায়তা দেয় ধামাকা শপিংসহ এর মাদার প্রতিষ্ঠানের আরও ছয় কর্মকর্তা। সাত পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপসহ এ সম্পর্কিত মোট ১৪৫ পৃষ্ঠার তৈরি করা বিস্তারিত প্রতিবেদন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাহুল হক স্বাক্ষরিত পরিদর্শন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লোভনীয় বিভিন্ন ডিসকাউন্টের অফারে ব্যবসা ছিল ধামাকা শপিং ডটকমের। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক কম হওয়াতে শেষ পর্যন্ত মূলধনই খুইয়ে বসে ধামাকা। এতে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ভারসাম্যে মোট ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি ধরা পড়েছে।
কারা ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ডিসকাউন্টের সুবিধাভোগী সেটিও উঠে এসেছে পরিদর্শক দলের তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ‘কিছু সংখ্যক গ্রাহকই দফায় দফায় এই ডিসকাউন্ট সুবিধায় পণ্য কেনার সুযোগ ভোগ করেছেন, যারা ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিভ অফিসার সিরাজুল ইসলামসহ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, এই প্রতিবেদন গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মন্ত্রণালয় এখন এই প্রতিবেদনের তথ্য ধরেই এগোচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, শুধু ধামাকা শপিংয়েই সীমাবদ্ধ নয় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। আরও আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশেষ পরিদর্শন কাজ শেষ করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রণালয় সেগুলোও খতিয়ে দেখে করণীয় ঠিক করবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ধামাকার সঙ্গে গ্রাহকের লেনদেন হয়েছে মোট ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা। গ্রাহকের ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে এই পরিমাণ লেনদেন হয়। এর মধ্যে ধামাকা শপিং ডটকম কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২টি ক্রয়াদেশের অনুকূলে পণ্য সরবরাহ করেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকা।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, অগ্রিম টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি এমন ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি ক্রয়াদেশের পরিমাণ ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা। এটি গ্রাহকের অনুকূলে ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের অপরিশোধিত বকেয়া দায়।
অপরদিকে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্টের সঙ্গে ধামাকা শপিংয়ের পণ্য সরবরাহ বাবদ মোট লেনদেন হয়েছে ৭২৪ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৫৫৪ টাকার, তবে ধামাকা কর্তৃপক্ষ ওই সব পণ্য বিভিন্ন হারে ডিসকাউন্ট অফারে বিক্রি করেছে মাত্র ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকায়। এভাবে ক্রেতা টানতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক লেনদেনে ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি পড়েছে।
তবে এর মধ্যেই মার্চেন্টদের পণ্য সরবরাহের বিপরীতে বকেয়া মোট ৫৫৭ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ২১১ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রক্রিয়ায় ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের কাছে মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনও অপরিশোধিত বকেয়া রয়ে গেছে ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হিসাব থেকে জসীম উদ্দিন চিশতি যে ১২৯ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নিয়েছেন, তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানের নামে তুলে নেন ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩১ হাজার ১৪২ টাকা এবং সফটওয়্যার কেনার নামে স্থানান্তর করেছেন ২০ কোটি টাকা।
এর বাইরে চিশতি নিজেও ধামাকা শপিং থেকে ৮৪ কোটি ১০ লাখ ২৯০ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন, যা তিনি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোনো সমন্বয় করেননি।
দেশে একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গত ২৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখে ধামাকাসহ ৯টি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হালনাগাদ তথ্য চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ, চলতি ও স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক কোনো অর্থ অন্যত্র সরিয়ে থাকলে তার তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ধামাকা শপিংয়ের বিষয়ে এই সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন চালায়।
আরও যারা সুবিধাভোগী
মার্চেন্ট বা পাওনাদার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে দুটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। তারা দেখতে পেয়েছে, মার্চেন্টদের পাওনা ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার মধ্যে এই দুটি হিসাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ ধামাকা শপিং থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ বিক্রেতারা পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে গ্রাহকের নগদ ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।
অর্থাৎ কাগুজে ক্রয়-বিক্রয় হলেও কোনো পণ্য বিনিময় হয়নি। কিছু সংখ্যক গ্রাহক দফায় দফায় বিক্রেতাদের কাছ থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে অর্থ পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত ডিসকাউন্ট সুবিধা ভোগ করেছেন। ওই সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলেও মত দেয় তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুবিধাভোগী গ্রাহকের একজন হলেন মো. সেলিম হোসেন। তার বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই। ধামাকা শপিং, পণ্যের পরিবর্তে অর্থ হস্তান্তরকারী অসাধু বিক্রেতা এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় আনা গেলে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন আরও সহজ হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসারসহ (সিওও) ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
যেসব হিসাবে গ্রাহকের ৭০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ
অনলাইনে পণ্য সরবরাহের আশ্বাসে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ধামাকা যে ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা অগ্রিম নিয়েছে, তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও গেটওয়েতে জমা হয়। এর মধ্যে সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (পিএসও) হিসাবে জমা পড়ে ৪৫২ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৭২৮ টাকা।
এ ছাড়া বিকাশে (এমএফএস) ২৮ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৫ টাকা, ওকেওয়ালেট (এমএফএস) ২৪ হাজার ১০৪ টাকা, নগদ-এর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৮ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের গেটওয়ে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৮ টাকা. সিটি ব্যাংকের গেটওয়ে ৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৩২ হাজার ৫ টাকা, ম্যানুয়াল অ্যাডমিনে (চেক/ব্যাংক হিসাবে জমা) ৬০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১০ টাকা জমা হয়।
এভাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ গ্রাহক থেকে সংগহকৃত মোট অর্থের পরিমাণ ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
ধামাকার নিবন্ধিত গ্রাহক ও মার্চেন্ট কত
ধামাকা শপিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৯। অপরদিকে নিবন্ধিত মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৮৯। মোট ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪। ক্রয়াদেশের বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধিত মোট মূল্য ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে এমন ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২। গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি এমন ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি। ধামাকা শপিংয়ের কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা।
যেভাবে ই-কমার্সে প্রবেশ ধামাকা শপিং ডটকমের
ধামাকা শপিং ডটকম মূলত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক কোম্পানির ডিজিটাল কমার্স/ই-কমার্স ব্যবসা। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে ২০১৫ সালে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের নিবন্ধিত (সি-১২১৪১৫/১৫) একটি কোম্পানি, যার পরিশোধিত মূলধন ১০ লাখ টাকা মাত্র।
২০১৫ সালে টেলিকম ও সফটওয়্যার সম্পর্কিত ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোম্পানিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে কোম্পানি টেলিকম ও সফটওয়্যার ব্যবসার পাশাপাশি ধামাকা শপিং ডটকম নামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে।
এই ডিজিটাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৫১-৫২ গ্রিন ডেল্টা এইমস টাওয়ার, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১২১২ তে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
নিবন্ধনকালীন কোম্পানির পরিচালক ছিলেন সাইদা খানম এবং মো. মাইনুল হাসান। সর্বশেষ মোহাম্মদ মুজতবা আলী পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতী এবং সাইদা রোকসানা খানম স্বামী-স্ত্রী।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিডেট মাইক্রো ট্রেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, এই গ্রুপের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিডেট, মাইক্রো ট্রেড ফুড বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিএক্স লিমিটেড।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি জসিম উদ্দিন চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যরা মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায়ও যুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন:কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানান।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এমন ধরনের ২০টিরও বেশি চিঠি গেছে বিশ্বের নানা দেশের নেতার কাছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই হুমকিতে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
একইসঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকো উভয়ই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছে, যাতে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পুরোনো (নাফটা) বাতিল করে ইউএসএমসিএ চালু করা হয়। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এর পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা। তবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প নানা দেশে শুল্ক আরোপ করে পর্যালোচনার প্রক্রিয়াই অস্থির করে তুলেছেন।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় কানাডা ও মেক্সিকোর বহু পণ্যের ওপর। কানাডার জ্বালানির ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী এ দুই দেশকে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
তবে পরবর্তীতে ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দেন, যার ফলে বড় পরিসরের পণ্য শুল্কমুক্ত হয়।
বৃহস্পতিবারের চিঠিটি এমন এক সময় এলো, যখন ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হচ্ছিল। এমনকি এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
গত ৬ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউসে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরের মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনেও আবার দেখা হয় দুই নেতার। সম্মেলনে ট্রাম্পকে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান বিশ্বনেতারা।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কানাডা যে কর আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ট্রাম্প আলোচনার টেবিল ত্যাগ করলেও পরে আবার আলোচনা শুরুর পথ খুলে যায়।
অন্যদিকে, এনবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যেসব দেশকে এখনো এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়নি, তাদের ওপরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। সেটিও কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
তিনি জানান, ব্রাজিলের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যদি এর আগেই কোনো সমঝোতা না হয়।
এনবিসি’কে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের উদ্দেশে চিঠি পাঠানো হবে ‘আজ বা আগামীকাল (শুক্রবার)’।
এদিকে, ট্রাম্পের হুমকির পর বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।
খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’
পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন (আঙ্কটাড) অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিকিতা এএফপিকে জানিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ‘নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ইঙ্গিত, এইসব বিষয় ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে আঙ্কটাড।
নিকিতা বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৫ এপ্রিল শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্যের মজুত করে ফেলায় আমদানির বড় এই বৃদ্ধিটি ঘটেছে।
আঙ্কটাডর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেবা বাণিজ্যই ছিল প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে উন্নত অর্থনীতি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো করেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে থাকা প্রবণতাকে উল্টে দিয়েছে।’
এই পরিবর্তনের পেছনে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানিতে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে।’ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমদানি দুই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার ব্যাপক শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা উল্লেখ করেছেন, তা ‘গত চার প্রান্তিকে আরও গভীর হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর ঘাটতি রয়েছে এবং চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাণিজ্য বিভাজনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে আঙ্কটাড জানিয়েছে এখনও স্থিতিস্থাপকতার লক্ষণ রয়ে গেছে। যদিও তা ‘নীতিগত স্পষ্টতা, ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরবরাহ লাইনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
মন্তব্য