পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্ট ও গ্রাহকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকম-এর কাছে পাবে ৪৭০ কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৫ টাকা। এই টাকা পরিশোধের আগেই বিভিন্ন হিসাব থেকে ধামাকা শপিং ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন চিশতী তুলে নিয়েছেন ১২৯ কোটি ৭৬ লাখ ৪৩২ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ধামাকা শপিংয়ের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ধামাকা শপিং ডটকম-এর বিভিন্ন হিসাব ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট সেকশন, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিডেটের মহাখালী শাখা, সিটি ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখা, সফটওয়্যার শপ লিমিডেট এবং বিকাশ লিমিটেডের হিসাবপত্র পর্যালোচনা করে এই তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম।
বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ সদস্যের পরিদর্শক দলকে এই পরিদর্শন কাজে সহায়তা দেয় ধামাকা শপিংসহ এর মাদার প্রতিষ্ঠানের আরও ছয় কর্মকর্তা। সাত পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপসহ এ সম্পর্কিত মোট ১৪৫ পৃষ্ঠার তৈরি করা বিস্তারিত প্রতিবেদন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাহুল হক স্বাক্ষরিত পরিদর্শন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লোভনীয় বিভিন্ন ডিসকাউন্টের অফারে ব্যবসা ছিল ধামাকা শপিং ডটকমের। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক কম হওয়াতে শেষ পর্যন্ত মূলধনই খুইয়ে বসে ধামাকা। এতে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ভারসাম্যে মোট ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি ধরা পড়েছে।
কারা ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ডিসকাউন্টের সুবিধাভোগী সেটিও উঠে এসেছে পরিদর্শক দলের তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ‘কিছু সংখ্যক গ্রাহকই দফায় দফায় এই ডিসকাউন্ট সুবিধায় পণ্য কেনার সুযোগ ভোগ করেছেন, যারা ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিভ অফিসার সিরাজুল ইসলামসহ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, এই প্রতিবেদন গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মন্ত্রণালয় এখন এই প্রতিবেদনের তথ্য ধরেই এগোচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, শুধু ধামাকা শপিংয়েই সীমাবদ্ধ নয় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। আরও আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশেষ পরিদর্শন কাজ শেষ করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রণালয় সেগুলোও খতিয়ে দেখে করণীয় ঠিক করবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ধামাকার সঙ্গে গ্রাহকের লেনদেন হয়েছে মোট ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা। গ্রাহকের ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে এই পরিমাণ লেনদেন হয়। এর মধ্যে ধামাকা শপিং ডটকম কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২টি ক্রয়াদেশের অনুকূলে পণ্য সরবরাহ করেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকা।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, অগ্রিম টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি এমন ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি ক্রয়াদেশের পরিমাণ ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা। এটি গ্রাহকের অনুকূলে ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের অপরিশোধিত বকেয়া দায়।
অপরদিকে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্টের সঙ্গে ধামাকা শপিংয়ের পণ্য সরবরাহ বাবদ মোট লেনদেন হয়েছে ৭২৪ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৫৫৪ টাকার, তবে ধামাকা কর্তৃপক্ষ ওই সব পণ্য বিভিন্ন হারে ডিসকাউন্ট অফারে বিক্রি করেছে মাত্র ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকায়। এভাবে ক্রেতা টানতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক লেনদেনে ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি পড়েছে।
তবে এর মধ্যেই মার্চেন্টদের পণ্য সরবরাহের বিপরীতে বকেয়া মোট ৫৫৭ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ২১১ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রক্রিয়ায় ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের কাছে মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনও অপরিশোধিত বকেয়া রয়ে গেছে ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হিসাব থেকে জসীম উদ্দিন চিশতি যে ১২৯ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নিয়েছেন, তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানের নামে তুলে নেন ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩১ হাজার ১৪২ টাকা এবং সফটওয়্যার কেনার নামে স্থানান্তর করেছেন ২০ কোটি টাকা।
এর বাইরে চিশতি নিজেও ধামাকা শপিং থেকে ৮৪ কোটি ১০ লাখ ২৯০ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন, যা তিনি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোনো সমন্বয় করেননি।
দেশে একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গত ২৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখে ধামাকাসহ ৯টি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হালনাগাদ তথ্য চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ, চলতি ও স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক কোনো অর্থ অন্যত্র সরিয়ে থাকলে তার তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ধামাকা শপিংয়ের বিষয়ে এই সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন চালায়।
আরও যারা সুবিধাভোগী
মার্চেন্ট বা পাওনাদার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে দুটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। তারা দেখতে পেয়েছে, মার্চেন্টদের পাওনা ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার মধ্যে এই দুটি হিসাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ ধামাকা শপিং থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ বিক্রেতারা পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে গ্রাহকের নগদ ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।
অর্থাৎ কাগুজে ক্রয়-বিক্রয় হলেও কোনো পণ্য বিনিময় হয়নি। কিছু সংখ্যক গ্রাহক দফায় দফায় বিক্রেতাদের কাছ থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে অর্থ পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত ডিসকাউন্ট সুবিধা ভোগ করেছেন। ওই সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলেও মত দেয় তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুবিধাভোগী গ্রাহকের একজন হলেন মো. সেলিম হোসেন। তার বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই। ধামাকা শপিং, পণ্যের পরিবর্তে অর্থ হস্তান্তরকারী অসাধু বিক্রেতা এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় আনা গেলে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন আরও সহজ হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসারসহ (সিওও) ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
যেসব হিসাবে গ্রাহকের ৭০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ
অনলাইনে পণ্য সরবরাহের আশ্বাসে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ধামাকা যে ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা অগ্রিম নিয়েছে, তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও গেটওয়েতে জমা হয়। এর মধ্যে সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (পিএসও) হিসাবে জমা পড়ে ৪৫২ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৭২৮ টাকা।
এ ছাড়া বিকাশে (এমএফএস) ২৮ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৫ টাকা, ওকেওয়ালেট (এমএফএস) ২৪ হাজার ১০৪ টাকা, নগদ-এর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৮ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের গেটওয়ে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৮ টাকা. সিটি ব্যাংকের গেটওয়ে ৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৩২ হাজার ৫ টাকা, ম্যানুয়াল অ্যাডমিনে (চেক/ব্যাংক হিসাবে জমা) ৬০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১০ টাকা জমা হয়।
এভাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ গ্রাহক থেকে সংগহকৃত মোট অর্থের পরিমাণ ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
ধামাকার নিবন্ধিত গ্রাহক ও মার্চেন্ট কত
ধামাকা শপিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৯। অপরদিকে নিবন্ধিত মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৮৯। মোট ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪। ক্রয়াদেশের বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধিত মোট মূল্য ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে এমন ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২। গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি এমন ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি। ধামাকা শপিংয়ের কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা।
যেভাবে ই-কমার্সে প্রবেশ ধামাকা শপিং ডটকমের
ধামাকা শপিং ডটকম মূলত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক কোম্পানির ডিজিটাল কমার্স/ই-কমার্স ব্যবসা। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে ২০১৫ সালে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের নিবন্ধিত (সি-১২১৪১৫/১৫) একটি কোম্পানি, যার পরিশোধিত মূলধন ১০ লাখ টাকা মাত্র।
২০১৫ সালে টেলিকম ও সফটওয়্যার সম্পর্কিত ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোম্পানিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে কোম্পানি টেলিকম ও সফটওয়্যার ব্যবসার পাশাপাশি ধামাকা শপিং ডটকম নামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে।
এই ডিজিটাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৫১-৫২ গ্রিন ডেল্টা এইমস টাওয়ার, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১২১২ তে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
নিবন্ধনকালীন কোম্পানির পরিচালক ছিলেন সাইদা খানম এবং মো. মাইনুল হাসান। সর্বশেষ মোহাম্মদ মুজতবা আলী পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতী এবং সাইদা রোকসানা খানম স্বামী-স্ত্রী।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিডেট মাইক্রো ট্রেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, এই গ্রুপের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিডেট, মাইক্রো ট্রেড ফুড বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিএক্স লিমিটেড।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি জসিম উদ্দিন চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যরা মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায়ও যুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন:স্টারকম বাংলাদেশ “স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা – সামারাইজ, জাস্ট লাইক দ্যাট!” ক্যাম্পেইনের জন্য ডিজিটাল ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যের ক্রিয়েটিভপুল ২০২৫ পুরস্কার পেয়েছে।
স্টারকম বাংলাদেশ যা গ্লোবাল স্টারকম নেটওয়ার্ক এবং বিটপী গ্রুপের একটি অংশ, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন এজেন্সি যা মিডিয়া প্ল্যানিং, বায়িং ও ৩৬০° মার্কেটিং সলিউশ্যনের জন্য সুপরিচিত।
এ বিষয়ে স্টারকম বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সারাহ আলী বলেন, "এই পুরস্কারটি বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এটি শুধু আমাদের টিমের সৃজনশীলতাকে নয়, বরং শক্তিশালী গল্প বলার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতাকে প্রমাণ করে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি যে বাংলাদেশ বিশ্বমানের ডিজিটাল উদ্ভাবন করতে পারে যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।"
বিজয়ী ক্যাম্পেইনটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা এর এআই ফিচার প্রদর্শনের জন্য ইন্টারঅ্যাকটিভ ব্যানার বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা সংবাদ প্রতিবেদনগুলোর ৬০ শব্দের রিয়েল-টাইম সারাংশ দেখানো হয়।
এই ক্যাম্পেইনটি একটি সহজ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছিল -“সংবাদের মূল বিষয়বস্তু কি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে? বলেন স্টারকম বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া ডিরেক্টর রবিউল হাসান সজিব। তিনি আরও জনান “এই পদ্ধতি ব্যাবহারের মাধ্যমে আমরা সৃজনশীল ভাবে ফোনটির বিশেষ ফিচারগুলো গ্রাহকের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছি, এবং দেখিয়েছি ফোনটির উল্লেখযোগ্য এআই পাওয়ারড রিয়েল টাইম সামারাইজেশন এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহার।“
স্টারকম বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আহমেদুন ফায়েজ, বলেন “আমরা কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু পুরষ্কার জিতেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা। এই পুরস্কারটি আমাদের প্রথম অর্জন এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে এমন অনেক পুরস্কার আমরা অর্জন করতে চাই।“
ক্রিয়েটিভপুল একটি আন্তর্জাতিক ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি নেটওয়ার্ক যারা সারা বিশ্বের এজেন্সি, ব্র্যান্ড এবং দক্ষ পেশাদারদের একত্রিত করে তাদের এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে। প্রতি বছর এই ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি বিজ্ঞাপন, ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পুরস্কার প্রদান করে থাকে। কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি ক্রিয়েটিভপুলের এই আয়োজন উদ্ভাবন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বিশ্বব্যাপী পরিচিতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয় বিশেষজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এবং সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমে।
ডিজিটাল ক্যাটাগরিতে এই বিজয়ী ক্যাম্পেইন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন ঃ https://creativepool.com/annual/2025/winners/
দেশে ক্যাশলেস লেনদেনের সম্প্রসারণ ও গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ’ কর্মসূচি। লিড ব্যাংক হিসেবে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাজশাহী কারা ট্রেইনিং একাডেমি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন ব্যবসায়ী, গ্রাহক, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ। দুদিনব্যাপী চলা এই কর্মসূচিতে সেমিনার, আলোচনা, প্রদর্শনী ও প্রচারণার মাধ্যমে বিশেষ করে বাংলা কিউআর-এর ব্যবহার ও অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধা তুলে ধরা হয়, যা ক্যাশ-টু-ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গঠনের মাধ্যমে ক্যাশলেস বাংলাদেশ কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন খান, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক মো. শরাফত উল্লাহ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক রাফেজা আক্তার কান্তা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন।
দুদিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে ডিজিটাল লেনদেনের নানান দিক নিয়ে সেশন পরিচালনার পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা, ক্যাম্পেইন ও রোড-শো অনুষ্ঠিত হবে। গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ও সুবিধাজনক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিকাশে ক্যাশলেস লেনদেনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন উদ্যোগের প্রশংসা জানিয়ে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এই উদ্যোগে লিড ব্যাংক হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের অংশগ্রহণ দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিকাশে ব্যাংকটির প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৯১টি শাখা, ১০০টি উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১২১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
আলিবাবা.কম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বি-টু-বি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে ২৪তম টেক্সটেক বাংলাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক এক্সপোতে । সিইএমএস-গ্লোবাল ইউএসএ আয়োজিত এই মেলায় আলিবাবা.কম- এর বুথে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারকদের যারা ডিজিটাল ট্রেডের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ খুঁজছে।
আলিবাবা.কম-এর গ্লোবাল পটেনশিয়াল মার্কেটস বিভাগের প্রধান ফনসেল ল্যান বলেন, “টেক্সটেক বাংলাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক এক্সপোতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সক্রিয় উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তারা ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিশীল।” আমাদের লক্ষ্য হলো এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন টুলস, নির্দেশনা এবং বিশ্বব্যাপী এক্সপোজার দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্ত করে তাদের ব্যবসাকে আরও বড় ও সফল করার সুযোগ করে দেয়া।“
এক্সপো চলাকালীন সময়ে দর্শনার্থীরা মূলত মেম্বারশিপ প্যাকেজ, খরচ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভেরিফিকেশন সময়সূচি এবং কার্যকরীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে কীভাবে পণ্য উপস্থাপন করতে হয় সে বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছেন। অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিশ্বস্ত ক্রেতা খুঁজে পাওয়া, সক্রিয় বাজারে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থা ও লজিস্টিকস সলিউশনের মত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য।
এই বিষয়ে পাই সোর্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, "আমরা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে এবং ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে আলিবাবা.কম এর সফল ও স্বতন্ত্র সহায়তা পেয়েছি। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি দৃঢ় বৈশ্বিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছি।" ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, পাই সোর্সিং লিমিটেড একটি বাংলাদেশ-ভিত্তিক অন্যতম পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক কোম্পানি।
২৪তম টেক্সটেক বাংলাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক এক্সপো আবারও প্রমাণ করেছে যে এটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এক্সপোতে ৩৫টিরও বেশি দেশ থেকে ২৫ হাজারের অধিক শিল্প পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যাপারেল রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এই এক্সপোতে আরো শক্তিশালী হয়েছে। আলিবাবা. কম –এর এই সফল অংশগ্রহণ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য নতুন পথ তৈরি করেছে।
এওয়ার্ড উইনিং পোভা সিরিজ বাংলাদেশে নিয়ে আসছে নতুন ৫জি স্মার্টফোন অভিজ্ঞতা
বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি ব্র্যান্ড টেকনো, সর্বদা তাদের ডিভাইসে নতুনত্ব নিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। যা ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন বুঝে তাদের জীবনকে সহজ করে। এখন ব্র্যান্ডটির বহুল প্রতীক্ষিত পোভা সিরিজ বাংলাদেশে আসছে, যেটি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই সিরিজটি দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য উন্নতমানের পারফরম্যান্স, অত্যাধুনিক ফিচার এবং গেম-চেঞ্জিং প্রযুক্তি নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
পোভা সিরিজ সম্প্রতি তাদের ডিজাইনের জন্য নিউ ইয়র্ক প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যাওয়ার্ডসে গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড এবং লন্ডন ডিজাইন অ্যাওয়ার্ডসে প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। এই সিরিজের একটি মডেলকে বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ফোন হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
নতুন পোভা সিরিজটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন এটি ব্যবহারকারীদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ, অত্যাধুনিক ডিজাইন এবং হাই পারফরম্যান্স সরবরাহ করতে পারে।
রবি আজিয়াটা এবং গ্রামীণফোনের বাণিজ্যিকভাবে ৫জি সেবা চালুর মাধ্যমে এ বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ৫জি যুগে প্রবেশ করেছে। এই যাত্রাকে সম্পূর্ণ করতে টেকনো তাদের এই সিরিজ নিয়ে প্রস্তুত, যা একটি সম্পূর্ণ ৫জি লাইনআপ এবং পরবর্তী প্রজন্মের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি।
যদিও টেকনো আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চিং ডেট নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে ধারনা করা হচ্ছে শীগ্রই সম্পূর্ণ লাইনআপের বিস্তারিত ঘোষণা আসবে। আরও আপডেটের জন্য সামাজিক মাধ্যমে টেকনো বাংলাদেশ ফলো করুন এবং ভিজিট করুন ঃ www.tecno-mobile.com/bd
বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫” ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি), ঢাকায় শেষ হয়েছে। এ প্রদর্শনীতে প্রিমিয়ার ব্যাংক একটি প্যাভিলিয়ন স্থাপন করে (হল-২, স্টল ৭৫ ও ৭৬)। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাবুর হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর অতিরিক্ত সচিব ও উইং প্রধান মিরানা মাহরুখ।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁদের স্বাগত জানান প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আরিফুর রহমান; স্বতন্ত্র পরিচালক ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন; ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আবু জাফর; প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদ সিকান্দার; অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গুলশান শাখার প্রধান নাসিম সিকান্দার; ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার সৈয়দ আবুল হাশেম, FCA, FCMA; ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বনানী শাখার প্রধান অমলেন্দু রায়সহ ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের হাই-টেক পণ্য উৎপাদন খাতে অনন্য এক মাইলফলক অর্জিত হলো। দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন প্রথমবারের মতো আমেরিকাতে রপ্তানি শুরু করলো মাদারবোর্ড (পিসিবি ও পিসিবিএ)। ওয়ালটনের তৈরি বিশ্বমানের এই মাদারবোর্ড ব্যবহৃত হবে আমেরিকায় তৈরি অত্যাধুনিক সক্রিয় গানশট শনাক্তকরণ এবং জরুরি উদ্ধারকাজ পরিচালনা সিস্টেমের সিকিউরিটি ডিভাইসে। মানুষের জীবন রক্ষাকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জামে ওয়ালটন হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হওয়া বাংলাদেশের হাই-টেক পণ্য উৎপাদন খাতের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও সম্মানের। আমেরিকাতে মাদারবোর্ড রপ্তানির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বমানের বাংলাদেশি প্রযুক্তিপণ্যের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলো ওয়ালটন।
এই উপলক্ষ্যে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে জানানো হয়, বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করা ওয়ালটন প্রাথমিকভাবে আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশে অবস্থিত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন (ঝঅঋঊচজঙ ঞবপযহড়ষড়মরবং ওহপ.) এর অনুকূলে প্রায় ২,৫০০ পিসেরও বেশি মাদারবোর্ড রপ্তানি করছে, যা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি টাকার সমপরিমাণ। জরুরি অবস্থায় আমেরিকার স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষের জীবন রক্ষায় কার্যকর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরবরাহে সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশনের ব্যাপক সুনাম ও অবদান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ডিভাইসে এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশের ওয়ালটনের হার্ডওয়্যার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একমাত্র পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। মাদারবোর্ড হিসেবে পরিচিত প্রযুক্তিপণ্যের অন্যতম প্রধান যন্ত্রাংশ ওয়ালটনের পিসিবিএ দিয়ে তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ নিরাপত্তা ডিভাইস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে। এই ডিভাইস তাৎক্ষণিক অবৈধ শুটিং সনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, সতর্কীকরণ ও দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করায় সহযোগিতা করবে। এটি অডিও এবং ভিজ্যুয়াল সংকেতের মাধ্যমে সতর্ক করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিপদ থেকে দ্রুততার সাথে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে এবং হুমকির প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে আরো ছিলেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নিশাত তাসনিম শুচি এবং রবি আজিয়াটার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সেনটেকের এমডি ও সিইও আদিল হোসেন নোবেল। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট পল এল একারট (চধঁষ খ. ঊপশবৎঃ)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, যে দেশে সিলিকন ভ্যালী আছে, সেই দেশে আমরা মাদারবোর্ড রপ্তানি করছি। নিঃসন্দেহে এটি ওয়ালটন এবং বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
তিনি জানান, পিসিবি এবং পিসিবিএ গ্লোবাল মার্কেট প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী ৫-৬ বছরে গ্লোবাল মার্কেট আরো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে। আমেরিকায় পিসিবিএ রপ্তানির মধ্য দিয়ে এই বিশাল গ্লোবাল মার্কেটে যাত্রা শুরু করেছে ওয়ালটন। প্রযুক্তি পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগি সক্ষমতায় এগিয়ে যেতে ওয়ালটনকে হার্ডওয়্যার ডিভাইসের পাশাপাশি এআই প্রযুক্তি ভিত্তিক সফটওয়্যার পণ্য, নেটওয়ার্কিং ও সাইবার সিকিউরিটি ডিভাইস তৈরির মাধ্যমে এক শক্তিশালী ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও উন্নত দেশ আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে মাদারবোর্ডের মতো উন্নত প্রযুক্তি পণ্য আমদানি করছে। এটা শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়; বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গর্বের এবং ঐতিহাসিক সাফল্য।
আমেরিকার সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট পল এল একারট বলেন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে ওয়ালটন ইনোভেশন, কোয়ালিটি ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওয়ালটন প্রতিটি পণ্যের ডিজাইন, নতুন উদ্ভাবন এবং উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি ওয়ালটনকে অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটন বিশ্ববাজারে সম্মানজনক স্থান করে নিয়েছে। ওয়ালটনের কাছ থেকে বিশ্বমানের মাদারবোর্ড নিতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। ওয়ালটনের মাদারবোর্ড নিঃসন্দেহে আমাদের সিকিউরিটি ডিভাইসের মান আরো অনেক বৃদ্ধি করবে।
বাংলাদেশকে প্রযুক্তিপণ্যের হাব হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করায় তিনি ওয়ালটনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সিকিউরিটি ডিভাইসসহ টেকসই প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রেও ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমেরিকার এই উদ্যোক্তা উল্লেখ করেন ।
এস এম রেজাউল আলম বলেন, আমরা নিজস্ব প্রোডাকশন প্ল্যান্টে বিশ্বমানের পিসিবি ও পিসিবিএ তৈরি করছি যা ওয়ালটনের পণ্যসমূহে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বাজারেও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি উদোক্তাদের জন্য পিসিবি ও পিসিবিএ সরবরাহ করে আসছে ওয়ালটন। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান দেশ গ্রিসেও সাফল্যের সাথে ১০ হাজার পিসেরও বেশি পিসিবি ও পিসিবিএ রপ্তানি সম্পন্ন করেছে ওয়ালটন। বাংলাদেশেই উন্নতমানের পিসিবি ও পিসিবিএ উৎপাদনের ফলে একদিকে যেমন সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা, সেইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে দেশীয় উদ্যোক্তাগণ পাচ্ছেন তাদের চাহিদামত পণ্য। পাশাপাশি অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের মতো পিসিবি ও পিসিবিএ রপ্তানি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে ওয়ালটন।
তিনি জানান, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে একীভূত হচ্ছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতের শীর্ষ এই দুই প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণে দেশে ব্যাপক আকারে ইলেকট্রিক বাইক এবং লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে যাওয়া সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে নতুন বাজারে আসা ওয়ালটনের দুই মডেলের পরিবেশবান্ধব তাকিওন ইলেকট্রিক বাইক বা ই-বাইকও উন্মোচন করেন অতিথিরা। আধুনিক ডিজাইন, শক্তিশালী মোটর, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং মাত্র ১০-১৫ পয়সা খরচে প্রতি কিলোমিটারে চলার সুবিধাযুক্ত ওয়ালটনের নতুন এই ই-বাইকগুলো নগর ও গ্রামীণ জীবনের স্মার্ট ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত সঙ্গী হয়ে উঠবে।
মন্তব্য