পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্ট ও গ্রাহকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকম-এর কাছে পাবে ৪৭০ কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৫ টাকা। এই টাকা পরিশোধের আগেই বিভিন্ন হিসাব থেকে ধামাকা শপিং ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন চিশতী তুলে নিয়েছেন ১২৯ কোটি ৭৬ লাখ ৪৩২ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ধামাকা শপিংয়ের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ধামাকা শপিং ডটকম-এর বিভিন্ন হিসাব ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট সেকশন, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিডেটের মহাখালী শাখা, সিটি ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখা, সফটওয়্যার শপ লিমিডেট এবং বিকাশ লিমিটেডের হিসাবপত্র পর্যালোচনা করে এই তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম।
বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ সদস্যের পরিদর্শক দলকে এই পরিদর্শন কাজে সহায়তা দেয় ধামাকা শপিংসহ এর মাদার প্রতিষ্ঠানের আরও ছয় কর্মকর্তা। সাত পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপসহ এ সম্পর্কিত মোট ১৪৫ পৃষ্ঠার তৈরি করা বিস্তারিত প্রতিবেদন সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাহুল হক স্বাক্ষরিত পরিদর্শন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লোভনীয় বিভিন্ন ডিসকাউন্টের অফারে ব্যবসা ছিল ধামাকা শপিং ডটকমের। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক কম হওয়াতে শেষ পর্যন্ত মূলধনই খুইয়ে বসে ধামাকা। এতে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ভারসাম্যে মোট ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি ধরা পড়েছে।
কারা ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ডিসকাউন্টের সুবিধাভোগী সেটিও উঠে এসেছে পরিদর্শক দলের তদন্ত প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ‘কিছু সংখ্যক গ্রাহকই দফায় দফায় এই ডিসকাউন্ট সুবিধায় পণ্য কেনার সুযোগ ভোগ করেছেন, যারা ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিভ অফিসার সিরাজুল ইসলামসহ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, এই প্রতিবেদন গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। মন্ত্রণালয় এখন এই প্রতিবেদনের তথ্য ধরেই এগোচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, শুধু ধামাকা শপিংয়েই সীমাবদ্ধ নয় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। আরও আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশেষ পরিদর্শন কাজ শেষ করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মন্ত্রণালয় সেগুলোও খতিয়ে দেখে করণীয় ঠিক করবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ধামাকার সঙ্গে গ্রাহকের লেনদেন হয়েছে মোট ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা। গ্রাহকের ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪টি ক্রয়াদেশের বিপরীতে এই পরিমাণ লেনদেন হয়। এর মধ্যে ধামাকা শপিং ডটকম কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২টি ক্রয়াদেশের অনুকূলে পণ্য সরবরাহ করেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকা।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, অগ্রিম টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি এমন ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি ক্রয়াদেশের পরিমাণ ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা। এটি গ্রাহকের অনুকূলে ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের অপরিশোধিত বকেয়া দায়।
অপরদিকে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন মার্চেন্টের সঙ্গে ধামাকা শপিংয়ের পণ্য সরবরাহ বাবদ মোট লেনদেন হয়েছে ৭২৪ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৫৫৪ টাকার, তবে ধামাকা কর্তৃপক্ষ ওই সব পণ্য বিভিন্ন হারে ডিসকাউন্ট অফারে বিক্রি করেছে মাত্র ৪০২ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৬ টাকায়। এভাবে ক্রেতা টানতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক লেনদেনে ৩২২ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৫৮ টাকার ঘাটতি পড়েছে।
তবে এর মধ্যেই মার্চেন্টদের পণ্য সরবরাহের বিপরীতে বকেয়া মোট ৫৫৭ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ২১১ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রক্রিয়ায় ধামাকা শপিং কর্তৃপক্ষের কাছে মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনও অপরিশোধিত বকেয়া রয়ে গেছে ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হিসাব থেকে জসীম উদ্দিন চিশতি যে ১২৯ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নিয়েছেন, তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানের নামে তুলে নেন ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩১ হাজার ১৪২ টাকা এবং সফটওয়্যার কেনার নামে স্থানান্তর করেছেন ২০ কোটি টাকা।
এর বাইরে চিশতি নিজেও ধামাকা শপিং থেকে ৮৪ কোটি ১০ লাখ ২৯০ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেন, যা তিনি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোনো সমন্বয় করেননি।
দেশে একের পর এক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর গত ২৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখে ধামাকাসহ ৯টি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হালনাগাদ তথ্য চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ, চলতি ও স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক কোনো অর্থ অন্যত্র সরিয়ে থাকলে তার তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ধামাকা শপিংয়ের বিষয়ে এই সরেজমিন বিশেষ পরিদর্শন চালায়।
আরও যারা সুবিধাভোগী
মার্চেন্ট বা পাওনাদার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে দুটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। তারা দেখতে পেয়েছে, মার্চেন্টদের পাওনা ১৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টাকার মধ্যে এই দুটি হিসাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ ধামাকা শপিং থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ বিক্রেতারা পণ্য সরবরাহের পরিবর্তে গ্রাহকের নগদ ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।
অর্থাৎ কাগুজে ক্রয়-বিক্রয় হলেও কোনো পণ্য বিনিময় হয়নি। কিছু সংখ্যক গ্রাহক দফায় দফায় বিক্রেতাদের কাছ থেকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে অর্থ পেয়েছেন, যারা প্রাথমিকভাবে ধামাকা শপিং কর্তৃক প্রদত্ত ডিসকাউন্ট সুবিধা ভোগ করেছেন। ওই সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ধামাকা শপিং বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলেও মত দেয় তদন্ত দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুবিধাভোগী গ্রাহকের একজন হলেন মো. সেলিম হোসেন। তার বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিরাজুল ইসলামের আপন ভাই। ধামাকা শপিং, পণ্যের পরিবর্তে অর্থ হস্তান্তরকারী অসাধু বিক্রেতা এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় আনা গেলে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন আরও সহজ হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
ধামাকা শপিংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসারসহ (সিওও) ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
যেসব হিসাবে গ্রাহকের ৭০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ
অনলাইনে পণ্য সরবরাহের আশ্বাসে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ধামাকা যে ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা অগ্রিম নিয়েছে, তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও গেটওয়েতে জমা হয়। এর মধ্যে সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (পিএসও) হিসাবে জমা পড়ে ৪৫২ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৭২৮ টাকা।
এ ছাড়া বিকাশে (এমএফএস) ২৮ কোটি ৬৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৫ টাকা, ওকেওয়ালেট (এমএফএস) ২৪ হাজার ১০৪ টাকা, নগদ-এর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৮ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের গেটওয়ে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৮ টাকা. সিটি ব্যাংকের গেটওয়ে ৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৩২ হাজার ৫ টাকা, ম্যানুয়াল অ্যাডমিনে (চেক/ব্যাংক হিসাবে জমা) ৬০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১০ টাকা জমা হয়।
এভাবে পণ্যের অর্ডার বাবদ গ্রাহক থেকে সংগহকৃত মোট অর্থের পরিমাণ ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
ধামাকার নিবন্ধিত গ্রাহক ও মার্চেন্ট কত
ধামাকা শপিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৯। অপরদিকে নিবন্ধিত মার্চেন্ট বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৮৯। মোট ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৪। ক্রয়াদেশের বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধিত মোট মূল্য ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৫২৮ টাকা।
গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে এমন ক্রয়াদেশের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২। গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি এমন ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৬৬২টি। ধামাকা শপিংয়ের কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৩২ টাকা।
যেভাবে ই-কমার্সে প্রবেশ ধামাকা শপিং ডটকমের
ধামাকা শপিং ডটকম মূলত ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক কোম্পানির ডিজিটাল কমার্স/ই-কমার্স ব্যবসা। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে ২০১৫ সালে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের নিবন্ধিত (সি-১২১৪১৫/১৫) একটি কোম্পানি, যার পরিশোধিত মূলধন ১০ লাখ টাকা মাত্র।
২০১৫ সালে টেলিকম ও সফটওয়্যার সম্পর্কিত ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোম্পানিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে কোম্পানি টেলিকম ও সফটওয়্যার ব্যবসার পাশাপাশি ধামাকা শপিং ডটকম নামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করে।
এই ডিজিটাল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৫১-৫২ গ্রিন ডেল্টা এইমস টাওয়ার, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১২১২ তে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
নিবন্ধনকালীন কোম্পানির পরিচালক ছিলেন সাইদা খানম এবং মো. মাইনুল হাসান। সর্বশেষ মোহাম্মদ মুজতবা আলী পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতী এবং সাইদা রোকসানা খানম স্বামী-স্ত্রী।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিডেট মাইক্রো ট্রেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান, এই গ্রুপের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিডেট, মাইক্রো ট্রেড ফুড বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিএক্স লিমিটেড।
ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি জসিম উদ্দিন চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যরা মাইক্রোট্রেড গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায়ও যুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য