জার্মানিতে বোনকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে দুই আফগান ভাইয়ের বিরুদ্ধে। পাশ্চাত্য ধাঁচে বোনের চলাফেরা পছন্দ ছিল না বলেই তারা ওই খুনটি করেন।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভিযুক্ত দুই আফগান ভাই সাইয়েদ ও সিয়াদের বয়স যথাক্রমে ২৬ ও ২২ বছর। গত ২৩ জুলাই তারা তাদের ৩৪ বছর বয়সী বড় বোন মরিয়মকে বার্লিনের একটি স্থানে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন।
দেখা করতে গেলে মরিয়মকে তারা শ্বাসরোধ করে ও গলা কেটে হত্যা করেন। পরে মরিয়মের মরদেহটি তারা কেটে টুকরো টুকরো করেন।
জার্মান বিচারকরা জানিয়েছেন, দুই সন্তানের জননী মরিয়মকে কেটে কয়েক টুকরো করার পর একটি ব্যাগের ভেতর ঢুকান তার ভাইয়েরা। পরে একটি ট্যাক্সিতে করে রেল স্টেশনে নিয়ে যান।
সিসিটিভি ফুটেজেও বার্লিনের সুদক্রুজ স্টেশনে সাইয়েদ ও সিয়াদকে কালো রঙের একটি বড় ব্যাগ ধরাধরি করে ট্রেনে তুলতে দেখা গেছে। ওই ব্যাগটি তারা প্রিমার্ক নামে একটি রিটেইল শপ থেকে ৬০ ইউরো দিয়ে কিনেছিলেন।
ব্যাগটি নিয়ে প্রথমে জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশে যান সাইয়েদ ও সিয়াদ। পরে তারা ওই প্রদেশের হলজকির্চেন এলাকার কাছাকাছি একটি ঘন জঙ্গলে গাড়ি চালিয়ে ব্যাগটিকে নিয়ে যান। ওই জঙ্গলেরই একটি গর্ত থেকে মাটি খুঁড়ে মরিয়মের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, মাথা ও ঘাড়ে মারাত্মক আঘাতের ফলেই মরিয়মের মৃত্যু ঘটেছে।
বিচারকরা দাবি করেছেন, পশ্চিমাদের মতো চলাফেরা করার শাস্তি দিতেই বড় বোনকে খুন করেছেন দুই আফগান ভাই। কারণ নারীদের সম্পর্কে তাদের যে প্রাচীণ ধ্যান ধারণা, তার সঙ্গে বোনের চলাফেরায় অনেক পার্থক্য ছিল। তারা এটাকে পরিবারের সম্মান হানীর বিষয় মনে করেছিল।
১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল মরিয়মের। কিন্তু তিনি তার অত্যাচারী স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তার ১০ বছরের এক কন্যা ও ১৩ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
স্বামীর সঙ্গে বোনের বিচ্ছেদ ও নতুন সম্পর্কের বিষয়টিকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি সাইয়েদ ও সিয়াদ। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন মরিয়ম। এটি জানার পর থেকে মরিয়মকে হিজাব ব্যবহারের জন্য তারা চাপ দিতে থাকেন।
তারা যে ব্যাগটি বহন করছিল তার মধ্যে কী ছিল- তা নিয়ে দুই ভাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সিয়াদ বলেছেন, ব্যাগের ভেতরে বক্সিং গ্লাভস আর ডাম্বেল ছিল। অন্যদিকে সাইয়েদ দাবি করেছেন, ব্যাগে কাপড়-চোপড় ও ভারি ধরনের কিছু বস্তু ছিল। তবে, তদন্তকারীরা নিশ্চিত ওই ব্যাগে করে তারা তাদের বোনের মরদেহই বহন করছিলেন।
জার্মানিতে মরিয়মের ঘনিষ্টজনরা দাবি করেছেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি মৃত্যু আতঙ্কে ছিলেন। ভাইয়েরা চাইতো তার সঙ্গে যেন অন্য কারো কোনো যোগাযোগ না থাকে।
গত ৩ আগস্ট থেকে কয়েদখানায় আছেন সাইয়েদ ও সিয়াদ। অভিযোগ প্রমাণীত হলে তাদের যাজ্জীবন হতে পারে।
আরও পড়ুন:গা হিম করা শীতে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ফ্লোর ম্যাট্রেস তোশকে পা রেখে গুটিসুটি হয়ে বসে ছিল শাহ ইব্রাহিম শাহিনের কম বয়সী সন্তানেরা। তাদের পাশে ছিলেন প্রাপ্তবয়স্করা, যাদের গায়ে ছিল উলের জামা।
ছোট্ট ঘরে এমন চিত্র দেখা যায় উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাগলানে।
এবারের মৌসুমে বাগলানের মতো অনেক প্রদেশেই অস্বাভাবিক শীত অনুভব করছেন বাসিন্দারা। রাজধানী কাবুলে তাপমাত্রা কমে হিমাঙ্কের ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শৈত্যপ্রবাহে দেশজুড়ে ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বাগলানে গত কয়েক দিনের মধ্যে শুক্রবার তাপমাত্রা একটু বেড়েছিল। তাও সেটি ছিল হিমাঙ্কের ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ সন্তানসহ ১৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে ঘর গরম রাখার সামগ্রী কেনার অবস্থায় নেই শাহিন। এ পরিবারে উষ্ণতা ছড়ানোর একমাত্র উপায় পরস্পরের গা ঘেঁষে থাকা।
পেশায় ট্যাক্সিচালক শাহিন প্রায় এক বছর ধরে বেকার। শীতে জমে যাওয়া ঘরে বসে ৫৪ বছর বয়সী এ ব্যক্তি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের একটি মাত্র বুখারি (ঐতিহ্যবাহী কয়লাচালিত হিটার)। শীতের শুরুতে আমরা কিছু কয়লা কিনেছিলাম, কিন্তু এমন আবহাওয়ায় আমাদের জোগান প্রায় শেষ এবং নতুন করে কেনার সামর্থ্যও নেই।’
আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার ১৮ মাসের বেশি সময়েও অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে। এখনও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এ সরকার ব্যাপক দারিদ্র্য ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।
১০ সন্তানের জনক শাহিন যখন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ঠিক সে সময়ে পরিবারের সদস্যের অসুস্থতা তাকে মারাত্মক ঋণে ফেলে দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় ট্যাক্সি চালাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি জোগানো সম্ভব হবে না তার পক্ষে।
সংসার কেমন চলছে, তার বিবরণ দিয়ে শাহিন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করে, তবে তারা দৈনিক দেড় শ আফগানির বেশি রোজগার করতে পারে না, যা দিনের খাবার কেনার জন্যও যথেষ্ট নয়। কয়েক মাস ধরে আমরা ফল বা মাংস ছুঁয়ে দেখিনি।’
হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে বাগলানে তীব্র শীত নতুন নয়, যেখানে তুষারপাতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়ে, যা হতে পারে চাষাবাদের সহায়ক।
এ নিয়ে শাহিন বলেন, ‘আমরা খুশি যে তুষার পড়ছে। এটা আল্লাহর দান, যা কুয়ায় কাজে লাগবে এবং কৃষকদের উপকারে আসবে, তবে তাপমাত্রা কমতে থাকার মধ্যে কীভাবে নিজেদের গা গরম রাখব, তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন আমরা।’
বাগলানের পার্শ্ববর্তী সামানগান প্রদেশেও তীব্র শীত দেখছেন বাসিন্দারা। সেখানে দুই সন্তানের জননী ২৫ বছর বয়সী এক নারী আছেন উভয় সংকটে। তাকে কয়লা বা খাবারের যেকোনো একটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মারিয়াম (ছদ্মনাম) নামের ওই নারী আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা কাঠ ও কয়লা কিনলে খাবার কিনতে পারব না। আমার স্বামী যে অর্থ পাঠায়, তা মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্যও যথেষ্ট নয়।’
তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারের সাবেক সেনা। তিনি পালিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে কাজ নিয়েছেন।
তালেবানের প্রতিশোধের ভয়ে আসল নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করা নারী বলেন, ‘কাবুলের পতনের পর তালেবান আমার স্বামীকে খুঁজেছে, যার ফলে তাকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে যেতে হয়েছে। সে সময় কিছুদিন আমরা তার সঞ্চয়ের ওপর চলেছি। এরপর চলেছি দানের ওপর। কাজ থাকলে তিনি টাকা পাঠান, কিন্তু এ শীতে আমরা একটি বুখারি কিনতে পারছি না।’
মারিয়াম আরও বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি শীত দেখেছি এবারের শীত মৌসুমে। খাবার কিংবা হিটার ছাড়া কীভাবে এটি পার করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
আরও পড়ুন:নারীর ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা তালেবানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির মুখমাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খামা প্রেসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ শনিবার একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসলামিক আইনের ওপরে নির্ভর করেই ইসলামিক শাসন জারি থাকবে। নারীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করাটা কখনোই সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে না।’
গত ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে তালেবান। এরপর দেশটিতে এনজিওতে নারীদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে দেশটিতে বিক্ষোভও করেন নারীরা।
নারীদের ওপর এসব বিধিনিষেধ আরোপ করায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার সীমিত প্রবেশাধিকারের কারণে ১২ মাসে দেশটির আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) অবিলম্বে আফগানিস্তানে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবারের এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কাবুলের পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বাহিনীটি এ হামলাকে ‘কাপুরোষচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
কাবুলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে চালানো এ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।
মন্ত্রণালয়ের বাইরে থাকা গাড়িচালক জামশেদ কারিমি বলেন, ‘ আমি হামলাকারীকে দেখেছি, যিনি নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন।’
ইতালিভিত্তিক সংস্থা ইমার্জেন্সি এনজিওর প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের কাছে ৪০ জনের বেশি আহত মানুষকে আনা হয়েছে।
একটি টেলিগ্রাম পোস্টে আইএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে কূটনৈতিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সময় চীনা একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ছিল, তবে আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর অফিস এএফপিকে জানিয়েছে, হামলার সময় সেখানে কোনো বিদেশি ছিলেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিলেও দৃশ্যত অস্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।
আফগানিস্তানজুড়ে একের পর এক হামলা চলছেই। এসব হামলার বেশিরভাগেরই দায় স্বীকার করে নিয়েছে আইএস।
আরও পড়ুন:আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি কে হয়েছেন তা এখনও অস্পষ্ট বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এমনটি জানান বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে, গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তাদের হামলায় নিহত হন জাওয়াহিরি। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে আল-কায়েদার প্রধান নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির প্রধান হন তিনি। এর পর থেকে জাওয়াহিরি পলাতক ছিলেন।
জাওয়াহিরির মৃত্যুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টারটেরোরিজম সেন্টারের পরিচালক ক্রিস্টিন আবিজাইদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সংগঠনটি নিজেদের সুবিধার জন্যই পরবর্তী উত্তরসূরির নাম প্রকাশ করছে না।’
যুক্তরাষ্ট্র জাওয়াহিরিকে হত্যার দাবি করলেও আল-কায়েদার পক্ষ থেকে এখনও নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হয়নি, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিসরীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক সদস্য ও আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতা সাইফ আল-আদেল গোষ্ঠীটির পরবর্তী প্রধান হতে পারেন।
সাইফ আল-আদেলকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাকে ধরিয়ে দিতে কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।
সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করার সময় আফগানিস্তানে ২৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের তোপে পড়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আফগান সরকার বলেছে, তালেবান নয়, বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছিলেন হ্যারি।
আত্মজীবনীমূলক ‘স্পেয়ার’ নামের বইতে হ্যারি আফগানিস্তানে ২৫ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আগামী ১০ জানুয়ারি প্রকাশ হতে যাচ্ছে বইটি।
প্রিন্স হ্যারি জানিয়েছেন, ওই ২৫ জনকে তার কাছে মানুষ মনে হয়নি; ‘দাবার ঘুঁটি ’ মনে হয়েছে। তাদের তিনি দাবার বোর্ড থেকে কেবল সরিয়ে দিয়েছেন।
এ নিয়ে তালেবান নেতা আনাস হাক্কানি শুক্রবার আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই সময় হেলমান্দে কোনো তালেবান সদস্য নিহত হননি। এটা স্পষ্ট যে, তিনি সাধারণ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছেন।
‘আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের অনেক যুদ্ধাপরাধের একটি মাত্র গল্প বলেছেন হ্যারি। এটি পশ্চিমাদের অপরাধের পুরো চিত্র নয়।’
এর আগে টুইটে আনাস হাক্কানি লেখেন, ‘হ্যারি যাদের হত্যা করেছেন তারা দাবার ঘুঁটি নয়; তারা মানুষ। আপনি সত্য বলেছেন, সাধারণ আফগান মানুষজন আপনাদের সেনা, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দাবার ঘুঁটি ছিল, কিন্তু আপনারা সেই খেলায় হেরেছেন।’
প্রিন্স হ্যারির সমালোচনা করে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি বলেন, ‘আমাদের দেশে পশ্চিমা দখলদারিত্ব সত্যিই মানব ইতিহাসে একটি বিশ্রী মুহূর্ত।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার আফগানি।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি সেনা বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। রোববার এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাত দিয়ে চীনা সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন জানিয়েছে, এ বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল নাফি তাকোর রয়টার্সকে বলেন, ‘রোববার সকালে কাবুলের সেনা বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণে আমাদের অনেক নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিলেও দৃশ্যত অস্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।
আফগানিস্তানজুড়ে একের পর এক হামলা চলছেই।
গত বছরের অক্টোবরে আফগানিস্তানের সামানগান প্রদেশের আয়বাকে একটি স্কুলে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হন। ওই মাসেই দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংলগ্ন একটি মসজিদে হামলায় চারজন নিহত হন।
এর আগে মে মাসে মাজার-ই-শরিফ এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত হন।
এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে তালেবানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ওপর তালেবানের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করে আলোচনায় চলে এসেছেন ১৮ বছরের এক কিশোরী। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তালেবানরক্ষীদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে রোববার একাই প্রতিবাদ করেন মারওয়া নামের এই কিশোরী।
মারওয়া বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথমবারের মতো এত গর্বিত এবং শক্তিশালী বোধ করেছি। কারণ আমি তাদের (তালেবান) বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি এবং ঈশ্বর আমাদের যে অধিকার দিয়েছে সে অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবান। ক্ষমতায় এসেই নারী আন্দোলনকারী দলের নেতাদের আটক করা শুরু করে তারা। সেই থেকে দেশটিতে নারী-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ আসতে আসতে কমে যায়।
শুরুতে নারীদের অধিকারে আঘাত আসবে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সময়ের সঙ্গে সে অবস্থান থেকে সরে আসে তালেবান। প্রথমে নারীদের সরকারে নেয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তালেবান। তারপর নারীদের হাই স্কুল বন্ধ করে দেয়।
গত সপ্তাহে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিষিদ্ধ করে আফগানিস্তানের কট্টর শাসকরা। এর কয়েকদিন পর শনিবার এনজিও-তে নিষিদ্ধ হন আফগান নারীরা।
এমন প্রেক্ষপটে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যথেষ্ট কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আছে সামাজিক হেনস্তার ভয়ও। তবে এসব কিছুই টলাতে পারেনি মারওয়াকে।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বার থেকে মাত্র মিটার দূরে একটি প্লেকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মারওয়া। দূরে একটি গাড়ি থেকে এই দৃশ্য ভিডিও করেন মারওয়ার বোন।
নারী অধিকারের উপর সর্বশেষ আক্রমনের জন্য বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। শত বাধা উপেক্ষা করে এ পদক্ষেপের প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিল কিছু নারী। তবে সরকার তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে মোতায়েন তালেবান রক্ষীদের সামনে রোবাবার মারওয়া যে প্ল্যাকার্ড উঁচু করে ছিল তাতে লেখা-‘ইকরা’। এটি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ ‘পড়ুন’।
মারওয়া বলেন, ‘তারা (তালেবান রক্ষী) আমাকে অনেক আজেবাজে কথা বলছিল। তবে আমি শান্ত ছিলাম।
‘আমি একজন অবিবাহিত আফগান মেয়ের ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিলাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজনও যে প্রতিবাদ করতে পারে সেটাই দেখাতে চেয়েছিলাম। যখন আমার অন্য বোনেরা (নারী শিক্ষার্থীরা) দেখবে যে একটি অবিবাহিত মেয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তখন তা তাদের প্রেরণা যোগাবে।’
শুধু শিক্ষা বা চাকরি ক্ষেত্রেই না। পার্ক, জিম এবং খোলা জায়গায় গোসলেও নিষেধ করা হয়েছে নারীদের।
তালেবান বলছে, নারীরা হিজাবসহ কঠোর ইসলামিক ড্রেস কোড পালন করছে না বলেই এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দেয়া হচ্ছে।
আফগানিস্তান এখন নারীদের জন্য কারাগারে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মারওয়া।
তিনি বলেন, ‘আমি বন্দী হতে চাই না। আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে, যা অর্জন করতে চাই। তাই প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য