নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যর্থতার কারণে নগরবাসী এবার পরিবর্তন চায় বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।
শনিবার দুপুরে বন্দরের রূপালী, আমিন, সোনাকান্দা এলাকায় গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তৈমূর বলেন, ‘১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটিতে পরিবর্তনের হাওয়া বইবে। ১৮ বছর ধরে মেয়র আইভীর ব্যর্থতার কারণে নগরবাসী এবার ঐক্যবদ্ধ। তারা এখন পরিবর্তন চায়।
‘সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর একসঙ্গে করতে না পারা। বন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, অথচ বাসিন্দারা অবহেলিত। আগের মেয়র নারায়ণগঞ্জ-বন্দর যাতায়াতে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু করতে পারেনি। আমি নির্বাচিত হলে শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্যানেল ও সেতু করে দেব।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আইভীকে উদ্দেশ করে তৈমূর বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে সরকার পারে না, জনগণ নেমে গেছে। ভোটকেন্দ্র দখল করবেন, এজেন্ট বের করে দেবেন, সেই দিন শীতলক্ষ্যা নদীতে বসে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে কোনো উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়নি। মণ্ডলপাড়ায় তিন বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। শুরু করা কোনো কাজই শেষ হচ্ছে না। প্রতি বছরই বাজেট হচ্ছে এবং কাজের আকার বড় হচ্ছে।
‘বর্তমান সিটি করপোরেশন কয়েকজন ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ মুক্তি চায়।’
এ নির্বাচনে বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত নেই জানিয়ে তৈমূর বলেন, ‘নির্বাচন থেকে আমাকে বসানোর কথা নদীতে ফালাইয়া দেন। আমি এখন দলের প্রার্থী না, জনগণের প্রার্থী।
১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোট।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন হবে।
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটির সবশেষ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভি। বর্তমান সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৫৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এতে ৫৯ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় এজাহারভুক্ত প্রথম সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
খুলনার সদর থানায় শনিবার রাতে এসআই অজিত কুমার দাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন খুলনার রূপসা উপজেলার যুগিহাটি গ্রামের ২৩ বছর বয়সী ইশারাত ইসলাম, দিঘলিয়া উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের ৪৭ বছর বয়সী শেখ কামাল উদ্দিন, মহানগরীর রুপসা স্ট্যান্ড রোডের ৩৫ বছর বয়সী মো. জালাল হোসেন, রূপসা উপজেলার চর রুপসা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মো. রাজু শেখ, মহানগরীর খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়ি গেট এলাকার ৪৬ বছর বয়সী আব্দুল হাই রুমি, ৩৪ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন জসিম ও ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রাম গ্রামের ৩২ বছর বয়সী মিজানুর রহমান। তাদের কাছ থেকে ১৫ টুকরো ভাঙা ইটের খণ্ড, ৯টি কাঠের আছাড়ি ও ৭টি লোহার রড জব্দ দেখানো হয়েছে।
মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহির।
এজাহারে বলা হয়, শনিবার বিকেল ৩টায় খুলনা থানাধীন কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। আকস্মিকভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, কাঠের বাতা, ইট-পাটকেল, দেশীয় অস্ত্র ও বাঁশের লাঠি নিয়ে মিছিলসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে জনমনে ভীতি, দোকানপাট ভাঙচুর করতে উদ্যত হন। তারা যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চরম মারমুখী অবস্থায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেন। ওই সময় তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করে গুরুতর ও সাধারণ জখম করেন। সে সময় সরকারি অস্ত্র ও জানমাল রক্ষার্থে তাদের ওপর ১৪টি লং সেল গ্যাস গান, ৬টি শর্ট সেল গ্যাস গান, ৩০টি শর্টগানের রাবার বুলেট, ৫টি সিসা বুলেট ও তিনটি গ্রেনেড ফায়ার করে পুলিশ।
এজাহার অনুযায়ী, বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় সেখানে দায়িত্বরত এসআই মো. সাইদুর রহমান, মো. আব্দুল হাই, মো. অলিয়ার রহমান, সনজিত কর্মকার, মো. শান্তিরাম পাল, মো. আব্দুস সালাম, মো. শাকিম হোসেন, মো. রিপন শেখ, নায়েক তুহিন ও এসএএফ মো. শাহিন রক্তাক্ত জখম হন।
শনিবার দুপুরে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল বিএনপির।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করতে বেলা ১১টা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ উপস্থিত হতে থাকে। দুপুর ২টার দিকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করলে পুলিশ হঠাৎ করে লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে ঘাটভোগ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ কবির শেখ, রূপসা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রুবেল মীর, বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব বাহাদুর মুন্সী, ডুমুরিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তামিম মোল্লা, খুলনা জেলা যুবদলের সাজু হাওলাদার, খুলনা জেলা ছাত্রদলের মনিরুজ্জামান নয়ন হাওলাদার, ইয়াসিন, ফিরোজ মাহমুদ, ইসমাইল হোসেন, ইবাদুল হক রুবায়েত, ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তিসহ ১৫ থেকে ২০ গুরুতর আহত হয়েছেন।’
মিলটন আরও বলেন, ‘শনিবারের এ কর্মসূচির আগে ২৪ ঘণ্টায় ১৬ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে, কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দমন-নিপীড়ন করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
আরও পড়ুন:একপশলা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরী। জলাবদ্ধতার কারণে শনিবার চরম দুর্ভোগে পড়েন জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ মানুষ।
এদিক সকাল ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত বৃষ্টিতে চকবাজার, মুরাদপুর, হালিশহর,সঙ্গীত-হামজারবাগ, বহদ্দারহাটসহ বন্দর নগরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
সকাল ১০ টায় নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম নামের একজন। তিনি বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়। চালকরা গাড়ি চলানো বন্ধ করে দেন। সড়কে গাড়ি কম থাকে। সেই সুযোগে যেসব গাড়ি চলাচল করে, সেসবে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এখানে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এখনও কোনো গাড়ি পাইনি। তাছাড়া অনেক মানুষ আমার মত গাড়ি না পেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। ‘
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিজন কুমার বলেন, ‘এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে সেটা সিজনাল, মৌসুমী বায়ু প্রবাহের কারণে এটা হচ্ছে। আট দিন আগে থেকেই এই বৃষ্টিপাত নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার একাধিক প্রকল্প চলমান থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি কোনোটিই। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসীরা।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছর ধরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ করছে তিনটি সরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হাতে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্পে এরইমধ্যে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি বড় প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণও সিডিএর হাতে। দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। তারপরও বর্ষা মৌসুমে এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।
এসব প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পেতে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক লম্বা স্টোরি। তবে যেটা বলা যায়, তা হলো প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে তবেই এর সুফলতা পাওয়া যাবে।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগটি সঠিক নয় জানিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগটির বিষয়ে হাসপাতাল ও ডাক্তারের কোনো প্রকার দায় নেই জানিয়ে হাসপাতালে গণমাধ্যমের কাছে শনিবার একটি অঙ্গিকারনামা পাঠিয়েছেন প্রসূতির শ্বশর ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গেন্দু মোল্লার হাটের রফিক মোল্যা।
এর আগে গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রফিক মোল্যা তার পুত্রবধূকে নিয়ে শহরের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন। সেখানে রাতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন পুত্রবধূ। অস্ত্রোপচারের সময় রোগী ও সন্তানকে বাঁচাতে প্রসূতির পরিবারের সম্মতিতে তার জরায়ু কেটে ফেলেন ডাক্তার। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফরিদপুরে ‘ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলার অভিযোগ’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
যা ভুল বলে অঙ্গিকারনামায় রফিক মোল্লা বলেন, ‘আমি গ্রামের সহজ সরল কৃষক। আমার পুত্রবধূর অস্ত্রোপচারের পর তার জরায়ু অপসারণের বিষয়টিকে একটি মহল ভুলভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করে। আমি অন্যের প্ররোচনায় বিষয়টি প্রথমে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলে তারা সংবাদ প্রকাশ করে। এর ফলে হাসপাতালের সুনামের যে ক্ষতি হয়েছে এজন্য আমি জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদকর্মীরা সংবাদে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য নেননি। তাদের বক্তব্য নিলে আমার ভুল তথ্য উপস্থাপনের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এখন আমার পুত্রবধূ ও নাতি সুস্থ আছে। এ হাসপাতালেই তারা চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই, আমি অন্যের প্ররোচনায় পরে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলাম, আমি ক্ষমা চাই।’
অস্ত্রোপচারের পূর্বে বন্ড সই করা রফিকের জামাতা সোহান শরীফ বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পূর্বে আমিই স্বাক্ষর করি। অস্ত্রোপচার চলার সময় ওটি রুম থেকে কয়েকবার রোগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাই রক্ত জোগাড় করতে বলেন। কিন্তু আমরা না বুঝেই ডাক্তারকে দোষারোপ করতে থাকি।’
ওই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রসূতি মা রিক্তা বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তান সুস্থ আছি। কোথায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। শুধু এটুকু জানি জীবনের চেয়ে বড় মূল্যবান কিছু নেই।’
প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন ডা. কল্যাণ কুমার সাহা ৷ তিনি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার চেম্বার ও ওটি করেন। তিনি মূলত ঢাকার পিজি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার।
ডা. কল্যাণ কুমার সাহা বলেন, ‘ওটিতে নেবার পর রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। মা ও সন্তানের মধ্যে একজনকে বাঁচানোর অবস্থা তৈরি হয়। তখনও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। কাকে বাঁচাবো মতামত নিই। এরপর অস্ত্রোপচার সঠিক হয়। একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্তান সুস্থ ছিল। কিন্তু তখনও মায়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তখনও আমরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি ও দ্রুত রক্ত জোগাড় করতে বলি। একপর্যায়ে মাকে বাঁচাতে তার জরায়ু কাটতে বাধ্য হই। এখন মা ও সন্তান সুস্থ আছেন। এখানে ভুল অস্ত্রোপচার কোথায় বলুন?’
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মানিক চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়াতে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মতামত বা বক্তব্য নেই। একটি অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। যা আইন সমর্থন করে না।’
হাসপাতালটির চেয়ারম্যান নুর মো. মাজেদ বলেন, ‘একটি মহল আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অপপ্রচার চালানোর জন্য তাদেরকে প্ররোচনা দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করিয়েছেন। অপরদিকে রোগীর স্বজনরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছি।’
আরও পড়ুন:নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে শনিবার দুপুরে ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল শুক্রবার নওগাঁয় যাই। এ সময় আমরা জানতে পারি, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
‘যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন। সুতরাং জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তা না করে র্যাবকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ জন্য রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের নিহত হবার ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের ধারণা জন্মেছে যে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রেক্ষাপট
গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহর থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয় বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আটকের পর মস্তিষ্কে গুরুতর রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিন মারা যান বলে র্যাব দাবি করে, তবে স্বজনদের অভিযোগ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ যাবতীয় তথ্য হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে। প্রথমে রিপোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আসে, পরে তা হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জেসমিনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশু আহত হয়েছে।
শনিবার ভোররাতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ৮/ডব্লিউতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৬০ বছর বয়সী সৈয়দ আলম কুতুপালং ক্যাম্প ৮/ডব্লিউর এ/৪২ ব্লকের পচা বাজার এলাকার বাসিন্দা।
আহত ১২ বছর বয়সী শিশু তাইফুর একই ক্যাম্পের সাব ব্লক ডি/৫ এর নুরুল আমিনের ছেলে।
১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানান, শুক্রবার রাত দুইটা থেকে ক্যাম্প ৮/ডব্লিউতে থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। যা চলে শনিবার ভোর পর্যন্ত। পরবর্তীতে এপিবিএন ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে ঘটনাস্থল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত শিশুকে উদ্ধার করে ব্র্যাকের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া ওই কয়েদি হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সুহাতা গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম । তার বিরুদ্ধে ঢাকার লালবাগ থানায় একটি মামলা ছিল। সেই মামলায় তিনি কারাবাস করছিলেন।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ওবায়দুল রহমান জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে বন্দি ৪৮ বছর বয়সী ওই নারী হাজতির কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সকাল ১০ টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারাগারের আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
উদ্বোধনের আগেই সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কোনো নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে কি না তা অনুসন্ধানে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট-এমজিএসপি প্রকল্পে সিলেট সিটি করপোরেশন দেশের সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে ‘কদমতলী বাস টার্মিনাল’ নির্মাণ করে। আট একর ভূমিতে এ টার্মিনাল নির্মানে ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। গত ১৫ জানুয়ারি টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এরপর টার্মিনালের ছাদের একটি অংশে ফাটল দেখা যায়।
শনিবার বিকেলে নগর ভবনের সভা কক্ষে এ নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, তদন্ত কমিটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সিসিক মেয়র বলেন, এখনও সিসিকের কাছে এই প্রকল্পটি নির্মাণ সংস্থা হস্তান্তর করেনি। উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান বাস টার্মিনালটিতে সুযোগ-সুবিধাগুলো ঠিক আছে কি না তা পর্যবেক্ষনের জন্য পরীক্ষামূলক চালু হয়। এরই মধ্যে স্থাপনাটির একটি অংশে কিছু ত্রুটি দেখা যায়।
সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর চৌধুরীকে সমন্বয়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এলজিইডি সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার পাঁচতলা একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।
যাত্রী উঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, পর্যাপ্ত যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী, পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিক বেড, প্রার্থণা কক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এই স্থাপনায়।
এছাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম টাইপ বাংলোর স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কদমতলী বাস টার্মিনাল প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করা হয়। এই টার্মিনালের নকশা করেন স্থপতি সুব্রত দাশ, স্থপতি রবিন দে ও স্থপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য