ময়মনসিংহে ট্রেনে পাথর ছোড়ায় একজনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ময়মনসিংহের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারকের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
শান্ত মিয়ার নামে শুক্রবার দুপুরে মামলা হয়। এর আগে তাকে নগরীর নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শান্ত নগরীর কৃষ্টপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার হারুন মিয়ার ছেলে।
কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের দিকে ট্রেন যাওয়ার পথে পাথর নিক্ষেপ করা হয়- এমন তথ্য আসে আমাদের কাছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ফেসবুকে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ছবি ভাইরাল হয়।
‘এর পর পাথর নিক্ষেপকারীকে ধরতে তৎপর হয় পুলিশ। বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান করে তাকে চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ওসি বলেন, ‘শান্ত মিয়ার নামে শুক্রবার দুপুরে মামলা দিয়ে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পাথর নিক্ষেপকারী আর কেউ থাকলে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় হরতাল সমর্থনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মশাল মিছিল থেকে গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ সময় ফতুল্লা থানা স্বেচ্চাসেবক দলের সদস্য সচিবকে আটক করে পুলিশ।
ফতুল্লার পঞ্চবটী মুক্তারপুর সড়কের ভুলাইল এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ফতু্ল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, রাত আটটার দিকে বিসিক সড়কের ভুলাইল এলাকা থেকে মশাল মিছিল বের করে থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতা-কর্মী। মশাল মিছিল থেকে হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা একটি তেলবাহী ট্রাকসহ তিনটি যানবাহন ভাংচুর করে।
মিছিল থেকে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয় এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় নেতা-কর্মীরা। এ সময় রাস্তার পাশের কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়।
খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ধাওয়া করে ফতুল্লা থানা স্বেচ্চাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদকে আটক করে।
ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, ‘মশাল মিছিলসহ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকে ভাংচুর করা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ধাওয়া করে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবকে আটক করেছে। যারা হরতালের নামে সড়কে নাশকতা চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও তা নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর রোষের শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে ক্ষেপে যান তিনি। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সাংবাদিকদের।
বিপুল পরিমাণ নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন করতেই তিনি প্রশ্নকারী ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক রাকিব উদ্দিনকে ঘুষি দেন। এসময় তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর শুরু করেন সংসদ সদস্যের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় তারা মাছরাঙা টেলিভিশনের মাইক্রোফোন ও ট্রাইপড আছড়ে ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি আরও কয়েকজন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
মারধরের শিকার সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী ৫ জনের বেশি নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি অনেক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আসেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় আমার ওপর হামলা করেন এবং মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে ফেলে দেন। তিনি আমাকে পরবর্তীতে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে সাংবাদিকরা মৌখিক অভিযোগ দিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে এই বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগসাপেক্ষে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভুক্তভোগী সাংবাদিককে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন এ কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান, দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করাসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পর আবারও ‘নৌকা ভাগিয়ে নিয়ে’ আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন বিতর্কত এই নেতা।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাদারীপুর-৩ ও বরিশাল-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস।
মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর এবং বিকেলে বরিশালে মনোনয়নপত্র জমা দেন এ শিল্পী।
রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-৩ আসনে প্রার্থিতার জন্য গত ২৭ নভেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নকুল কুমার বিশ্বাস। ২৯ নভেম্বর তিনি বরিশাল-২ আসনের জন্যে মনোনয়নপত্র নেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নকুল কুমার বিশ্বাস জানান, দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভক্ত-অনুরাগীদের অনুরোধে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে সুখে-দুঃখে ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মানুষের পাশে থাকবেন। বিগত দিনেও তিনি এলাকার জন্যে নিবেদিত ছিলেন; আগামীতেও থাকবেন।
নকুল কুমার বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সংগীত অনুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তার বাবা নাম সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং মা মঙ্গলী দেবী। মাত্র ৮ বছর বয়সে যাত্রার দলে শিল্পী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। সেই থেকে যাত্রাসহ গ্রাম ও শহরাঞ্চলে অনেক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছেন তিনি।
গানের পাশাপাশি তিনি সেতার, তবলা, বাঁশি, সরোদসহ নানারকম বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী। হারমোনিয়াম বাজানোতে রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা।
বাংলাদেশ বেতারে যন্ত্র ও সংগীতশিল্পী হিসেবে চাকরি করেছেন অনেক দিন, তবে ক্যারিয়ারে তার সেরা সুযোগটি আসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ইত্যাদিতে গান পরিবেশনের সুবাদেই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নকুল কুমার বিশ্বাস জানান, তার পূর্বপুরুষ হরনাথ বাইন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের এমপি। বরিশালের সাতলা গ্রামে সাবেক এ সংসদ সদস্যের একটি বাড়ি আছে। এ কারণে বরিশাল ও মাদারীপুর দুই জায়গা থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন:আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর গত ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। সেই হিসাবে বুধবার (২৯ নভেম্বর) পর্যন্ত টানেল যুগে এক মাস পাড়ি দিয়েছে দেশ। এই এক মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৭টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু টানেল পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। এসব যানের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ২১ হাজার টাকা।
২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টির বেশি যান চলাচলের কথা এ টানেল দিয়ে। তাছাড়া সম্ভাব্য যান চলাচলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আদায় করা টোল থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ১২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। টানেল উদ্বোধনের পরবর্তী ৫০ বছরে শূন্য দশমিক ১৬৬ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে টানেল চালুর পর সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, গেল এক মাসে গড়ে দৈনিক ৫ হাজার ৬৫২টি যান বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে চলাচল করেছে। আর টোল হিসেবে দৈনিক গড়ে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ১০০ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যান চলাচলের সংখ্যা ও লক্ষ্যমাত্রার এত বিশাল তারতম্যে টানেল থেকে সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই এক মাসে টানেল দিয়ে যেসব যান চলাচল করেছে তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত। এখনও টানেল দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো রুটের গণপরিবহন চালু হয়নি। তাছাড়া দূরপাল্লার অনেক বাস এখনও শাহ-আমানত সেতু দিয়ে কর্ণফুলি পাড়ি দিচ্ছে। ফলে বঙ্গবন্ধু টানেলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে চলাচলকারী সব যানবাহনের চাপ পড়ছে না।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা বলেন, ‘টানেল দিয়ে এখনও পুরোপুরি বাণিজ্যিক যান চলাচল শুরু হয়নি। কারণ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি।’
অন্যদিকে টানেলের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া প্রতি ৫ বছর পর পর টানেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে টানেল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে খরচ হবে আরও ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার।
টানেল নির্মাণে ব্যয় করা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই শতাংশ সুদে বাংলাদেশকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় চীন। ২০২৫ সাল থেকে টানেলের আয় দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করবে সরকার। কিন্তু বর্তমানে যে হারে টোল আদায় হচ্ছে তা চলতে থাকলে বছরে আয় হবে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা, যা প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলারের সমান। এমন পরিস্থিতিতে টানেলের আয় দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ব্যয় মেটানোই কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
তবে ২০১৩ সালের সমীক্ষায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন নানা শিল্প কারখানা চালু হওয়ার বিষয়টি হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। এমনকি দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন শিল্প কারখানাগুলোও তাদের কার্যক্রম এখনও পুরোদমে চালু করেনি। এসবের কারণে শুরুতে তুলনামূলক কম যান চলাচলকে অনেকটা কাঙ্ক্ষিত হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে টানেলের প্রভাবে আনোয়ারা-পটিয়া এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়ন ও বছরে অন্তত ১৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের কথা সমীক্ষায় বলা হলেও এখনও তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও টানেলের পুরোপুরি সুফল পেতে এখন থেকেই চট্টগ্রামে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে মহাপরিকল্পনা সাজানোর কথা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডিজে অনেক কিছু দেখা যায়, কিন্তু ইনিশিয়ালি (প্রাথমিক অবস্থায়) এত গাড়ি হবে না। কারণ গাড়ি ওদিকে কী জন্য যাবে? ওখানে কী এমন ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে যে গাড়ি যাবে? ওদিক থেকে কেনই বা গাড়ি আসবে? ওখানে তো সেই ডেভেলপমেন্টটা (উন্নয়ন) এখনও হয়নি। কাজেই টানেল দিয়ে এত তাড়াতাড়ি গাড়ি যাবে না। বিষয়টা হলো যে, ওই দিকে গাড়ি জেনারেট করার মতো তো সেরকম ডেভেলপমেন্ট হয়নি। ওরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ঠিক আছে, কিন্তু সেদিকে যদি শিল্পায়ন না হয় তাহলে তো গাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
টানেল দিয়ে যান চলাচল কম হওয়ার কারণ হিসেবে টোলের তুলনামূলক বেশি হারকেও দোষেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওইদিকে যেহেতু আপনার কাজ নাই, আপনি তো যাচ্ছেন না বা যাবেন না। আর ওই দিকে কাজ থাকলেও আপনি এখন কোন দিক দিয়ে যাবেন? আপনি টানেল দিয়ে গেলে আপনার টোল দিতে হবে কত, আর শাহ আমানত ব্রিজ দিয়ে গেলে টোল দিতে হবে কত? এগুলো তো টাকা, এই চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে টাকার হিসেব তো করবেই জনসাধারণ।
‘যাদের কাঁচা টাকা আছে, গাড়ি আছে, তারা যাবে। বাস গেলে তো বাসে অনেক টোল নেয়, সাধারণ মানুষ তো বাসে যাবে না। একটা ৩০ সিটের বাস গেলেও তো ৩০০ টাকা টোল নেয়। মানে প্রতি জনের ঘাড়ে দশ টাকা করে বেশি পড়বে। তাহলে বাসচালকও তো যাত্রী পাবে না। সাধারণ মানুষ কেন অতিরিক্ত টাকা পে (পরিশোধ) করবে? এতদিন যেগুলো গেছে প্রথম প্রথম, এগুলো তো সব টুরিস্ট বাস। ফিজিবিলিটি স্টাডিজে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, এ অঞ্চলে ওই রকম যানবাহন হতে আরও অনেক বছর সময় লাগবে।’
‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টোল আদায় না হলে স্বপ্নের এ টানেল অনেকটা হাতি পোষার মতো হবে’ জানিয়ে টানেলের সুফল পেতে এর দু’পাশে পরিকল্পিত নগরায়নের পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘আর এখন টোল টেক্সট যদি না পাই, এগুলো আমাদের জন্য হোয়াইট এলিফ্যান্ট (শ্বেতহস্তী) হয়ে যাবে।
‘টানেল হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই। দু’পাশেই শিল্পায়ন করতে হবে; পরিকল্পিত নগরায়ন, টার্মিনাল- এগুলোর সবই করতে হবে। এখন সেগুলো এই পরিস্থিতিতে কবে হবে তার কোন ঠিক নেই।’
অবকাঠামো ও অবস্থানগত কারণে টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি হবে বলে জানান এ নগর পরিকল্পনাবিদ।
তার সুরে সুর মেলালেন আরেক নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামকে ঘিরে আগামীর বাংলাদেশকে মাথায় রেখে এখন থেকেই মহাপরিকল্পনা সাজাতে হবে যাতে এই অঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল, আবাসিক এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। এখানে এসবের উপাদানগুলোও রয়েছে। এ কাজগুলো করলে টানেল ব্যবহারে পণ্যবাহী যানবাহনের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনও বাড়বে।’
গত ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে খোলে দেশের দখিনা দুয়ার। দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এটাই প্রথম টানেল।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং টানেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
টানেলটি নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ধরা হলে ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।
আরও পড়ুন:সিলেটে নির্বাচনি প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আচরণবিধি ভেঙে শোডাউন করেন প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পাশপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল করে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীরা মনোনয়পত্র জমার সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসানের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ভিড় করেন প্রার্থীরা। সকালেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।
বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ওই সময় শফিকুর রহমানের সমর্থকদের নৌকা মার্কার সমর্থনে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্লোগান দিতে দেখা যায়। শফিকুর রহমান ও মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনন্ত ২০ নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
দুপুরে মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করেন তিনি।
শোডাউন দেয়ার কথা অস্বীকার করে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগেই এখানে জড়ো হয়েছিলেন। আমি মাত্র চার-পাঁচজন নেতা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। বাকি যারা এসেছেন, তাদের আমি নিয়ে আসিনি।’
শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও। তিনি সিলেট-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দুপুরে রিটার্নি কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানকালে তার সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী অর্ধশতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া মনোনয়পত্র জমা দেন দুপুরে। তিনিও শতাধিক নেতা-কর্মীসহ মিছিল নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ ব্যাপারে ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো শোডাউন নিয়ে আসিনি। আমাকে দেখে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়ে কিছু স্লোগান দিয়েছেন, তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে কয়েকজন নেতা নিয়েই আমি প্রবেশ করি।’
সিলেট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। দুপুরে তিনি শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।
জানতে চাইলে শোডাউন করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনি আচরণবিধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আচরণবিধি মেনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি চার থেকে পাঁচজন নেতা-কর্মী নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল আহসান বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে ব্যস্ত। এখানে কেউ শোডাউন করেননি, তবে বাইরে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা খেয়াল করিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনের জন্য ৫৩ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন- এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর মেলেনি অধিকাংশ প্রার্থীদের কাছ থেকে।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ৬ জন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনীতিতে পূর্ব পরিচয় রয়েছে; বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।
খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রমানিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ এবং জাকের পারর্টি মো. আজিজুর রহমান।
এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনৈতিক অঙ্গনে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন।
এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখবো বলে আশাবাদী।’
তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রমানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো যৌক্তিক উত্তর মেলেনি। আর জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়ন জমা দিয়েছি।’
অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনও রাজনৈতিক ময়দানে দেখা যায়নি।
কেন প্রার্থী হয়েছেন- প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’
খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্গলাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।
এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনবারের সংসদ সদস্য ও দুইবারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে এ আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন মোট ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিরুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয় নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দারা বলেন, ‘এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নামও কখনো শোনেনিনি বলে জানিয়েছেন এলাকার ভোটাররা।
খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আখতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।
এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা স্থানীয় ভোটারদের। তবে বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ভোটাররা রাজনৈতিকভাবে তাদের চেনেন না।
খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোট ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন তিনি। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল।
ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে খুব ভালোভাবে পরিচিত জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীরা একেবারেই নতুন মুখ।
মো. শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘আমার সমমান জনপ্রিয় কোনো প্রার্থী এই আসনে নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজ দলের ভোট পাবেন কি না- তা নিয়েই সন্দেহ আছে। এবার নির্বাচনে খেলা হবে। আমি চমক দেখিয়ে দেব।’
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধামন্ত্রী মাঠ যাচাই করেই আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ৫৯ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। জমা দিয়েছেন ৫৩ জন। মনোনয়নপত্রগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বৈধ প্রার্থীদের তালিকা নির্দিষ্ট তারিখে ঘোষণা করা হবে।
বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুর পর ওই সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে মরদেহ দাফনে বাধা হয়ে দাঁড়ান ৫ মেয়ে। ৩১ ঘণ্টা এমনভাবে বাড়ির উঠানে মরদেহ পড়ে থাকার পরে প্রশাসনে খবর দেন প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ এসে মেয়েদের আশ্বস্ত করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে লাশের দফন হয়।
মৃত ওই হতভাগ্যের নাম সাকাত গাজী। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সাকাত গাজী কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ছেলে মামুন গাজী তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে থাকাকালে মামুন বাবার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। বুধবার ভোর ৪টার দিকে খুমেক হাসপাতালে মারা যান সাকাত গাজী।
তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে সটকে পড়েন মামুন। সকাল ৮টার দিকে মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে আসে। পরে স্থানীয়রা মরদেহ দাফন করার ব্যবস্থা করতে গেলে মামুনের পাঁচ বোন তাতে বাঁধা দেন। এরপর থেকে থানা পুলিশ ওই বাড়িতে না যাওয়া পর্যন্ত মরদেহ ওই বাড়ির ওঠানেই পড়ে ছিল।
মৃত সাকাত গাজীর মেয়ে লাবনী আক্তার জানান, তার ভাই বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে না জানিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। এ কারণে সম্পত্তির ন্যায্য ভাগের ফয়সালা পেতে তারা মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, ‘সাকাত গাজীকে বুধবার বাদ জোহর জানাজা পড়ানোর কথা ছিল। তবে তার ৫ মেয়ের বাধায় আমরা ওইদিন কিছুই করতে পারিনি।’
এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেই ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরে মেয়েদের আশ্বস্ত করে দুপুরের দিকে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছি।’
ছেলের সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মামুন যে তারা বাবার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে এটার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। কারণ মরদেহের বুড়ো আঙ্গুলে টিপসই দেয়ার ছাপ রয়েছে।’
সাকাত গাজীর নামে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
মন্তব্য