নানা আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০২১ সাল পার করল ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। হেফাজতের তাণ্ডব, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল খেলা ঘিরে জেলাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন, নৌকাডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা, বিয়েতে টক দই পরিবেশনকে কেন্দ্র করে বরপক্ষের হাতে কনের পিতা খুন ছিল অন্যতম আলোচিত ঘটনা।
এ ছাড়া মাকে মারধর করায় ছেলের হাতে বাবা খুন, জুমার নামাজে খুতবা পড়াকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ, ঘরজামাই ডাকাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, খুনের মামলা আপষ না করায় পাল্টা খুনের ঘটনা তোলপাড় তুলেছিল দেশে।
হেফাজতের তাণ্ডব: মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, সার্কিট হাউস, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃসদন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মৎস্য অফিস, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়সহ অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
তিন দিন ধরে চলা হামলায় নিহত হন ১৫ জন, আহত ৮০ পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ। এসব ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ৫৬টি মামলা হয়। প্রায় ৩৮ হাজার আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হন ৬৫ জন। তাদের অনেকেই এখন জামিনে আছেন।
তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন সংস্কার করতে সময় লাগে আট মাস। গত ১৩ নভেম্বর থেকে স্বাভাবিক হয় স্টেশনের কার্যক্রম।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ ঘিরে জেলাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন: কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গত ১১ জুলাই জেলাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর আগে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করে পুলিশ। খোলা জায়গায় বড় টিভি স্ক্রিনে, ছাদে, ক্লাব কিংবা চায়ের দোকানে নিষিদ্ধ করা হয় খেলা দেখা। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয় দেশজুড়ে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও শিরোনাম হয় এটি।
নৌকাডুবিতে ২৩ জনের প্রাণহানি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইস্কার বিলে ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় নৌকাডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়।
৭০ বছর পর হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়া: ২৫ সেপ্টেম্বর হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর একমাত্র ছেলে কুদ্দুস মিয়া ওরফে কুদ্দস মুন্সীকে ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পান বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা। ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফাবাত গ্রামে কন্যা ঝর্ণা বেগমের বাড়িতে মা-ছেলের মিলন হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ১০২ বছর বয়সী মা মঙ্গলের নেছা। ছেলে কুদ্দুস মুন্সির বয়স এখন ৮০।
ঘরজামাই ডাকাকে কেন্দ্র করে দুই দলের সংঘর্ষ: ১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় ‘ঘরজামাই’ ডাকাকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার আটলা গ্রামে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
ছেলের হাতে বাবা খুন: মাকে মারধর করায় গত ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় ছেলে পিত্তিরাজের ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবা আবু কাউছার।
পিতা-পুত্রসহ তিনজন নিহত: গত ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের সাদেক মিয়া, তার ছেলে রুবেল মিয়া ও পাবেল মিয়া।
বরপক্ষের হাতে কনের বাবা খুন: গত ৬ অক্টোবর কসবায় বিয়েতে টক দই পরিবেশন করায় বরপক্ষের হামলায় কনের পিতা ইকবাল হোসেন নিহত হন। ইকবাল উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গণকমুড়া গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের ছেলে।
খুতবা পড়াকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের সংঘর্ষ: জুমার নামাজে খুতবা পড়াকে কেন্দ্র করে ৩ ডিসেম্বর পৌর এলাকার ভাদুঘর খাদেমপাড়ার মসজিদে দুপক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন।
খুনের মামলা আপষ না করায় জোড়া খুন: খুনের মামলা আপষ না করায় গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের এরশাদুল হক নামে এক যুবক ও তার সহযোগী বাদল সরকার।
ফ্রিজ কিনে লাখপতি: ১৬ জুলাই ‘মিলিয়নিয়ার ও অসংখ্য লাখপতি’ শীর্ষক সুবিধার আওতায় ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে একটি ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার জেতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়া পৌর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনির হোসেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি: করোনাভাইরাসের কারণে বছরজুড়েই আতঙ্কে ছিল জেলাবাসী। কোভিডে জেলায় ১৮০ জনের মৃত্যু হয়।
জেলাজুড়ে ৫৯ খুন: পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাজুড়ে ৫৯টি খুন হয়। এ ছাড়া ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ৩৭৮টি মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রাম - গোমড়া ও কান্দুলীর বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা এক যুগ এবং কান্দুলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা গত ৬ বছর ধরে কুরবানীর মাংস পায়নি। তবে এবার ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের উদ্যোগে এই দুটি গ্রামের মানুষ কোরবানির মাংস পেয়েছে।
গোমড়া গুচ্ছগ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা আঙ্গুরী বেগম (৭০) বলেন, ‘১২ বছর ধরে আমরা কোরবানির মাংসের স্বাদ পাইনি। এবার রক্তসৈনিক ফাউন্ডেশন আমাদের জন্য গরু দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন।’
গুচ্ছগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেক গরিব মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারে না। এই উদ্যোগ আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা সংগঠনটির কাছে কৃতজ্ঞ।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের দুঃস্থ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে সবাইকে কোরবানির মাংসের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আমাদের বিভাগীয় কমিশনার স্যারও গোসত পাঠাচ্ছেন। যদি কোনো অসহায় মানুষ কোরবানির মাংস না পেয়ে থাকে, আমরা নিশ্চিত করব যেন তারা গোসত পায়।’
পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রক্তসৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন সংগঠনটি বিষয়টি নজরে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। সংগঠনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি গরু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে কান্দুলী গুচ্ছগ্রামে শাহ অলি উল্লাহ ইসলাম সেন্টার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে এবং অরফান শেল্টার ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ৬ বছর ধরে এই গ্রামে কুরবানীর মাংস বণ্টন হয়নি। এবার দাতাদের সহযোগিতায় গ্রামবাসী মাংস পেয়ে খুশি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন পর কুরবানীর মাংস পেয়ে আনন্দিত। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত না হয়।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় বেনাপোল চেকপোষ্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাচ্ছিদের। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরনের (Sub variant), কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশসমুহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সমুহে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনার উপসর্গ আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইসহ শরীরের তাপমাত্রা মাফতে দেখা গেছে।
ভারত ফেরত যাত্রী পরিতোষ মন্ডল জানান, দশদিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশের মতো ভারতের কোথাও করোনা বা ওমিক্রনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।
ভারত ফেরত যাত্রী সীমা রানি বলেন, একমাস চিকিৎসার পর আজ দেশে ফিরে আসলাম। ভারতের কোথাও নতুন করে করোনার প্রভাব ছড়িয়েছে শুনিনি। দেশে আসার পর দেখছি করোনার পরীক্ষা করছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ভারতের কিছু কিছু স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরন (Sub variant) সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে করোনার এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপধারার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় বেনাপোল চেকপোষ্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাচ্ছিদের। জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরনের (Sub variant), কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশসমুহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সমুহে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ জুন রোগ নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনার উপসর্গ আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইসহ শরীরের তাপমাত্রা মাফতে দেখা গেছে।
ভারত ফেরত যাত্রী পরিতোষ মন্ডল জানান, দশদিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশের মতো ভারতের কোথাও করোনা বা ওমিক্রনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।
ভারত ফেরত যাত্রী সীমা রানি বলেন, একমাস চিকিৎসার পর আজ দেশে ফিরে আসলাম। ভারতের কোথাও নতুন করে করোনার প্রভাব ছড়িয়েছে শুনিনি। দেশে আসার পর দেখছি করোনার পরীক্ষা করছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, ভারতে জেনেটিক সিকুয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ভারতের কিছু কিছু স্থানে ওমিক্রন ধরনের (variant) LF.7, XFG, JN.I and NB.1.8.1 উপধরন (Sub variant) সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে করোনার এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপধারার উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
টানা ছয়দিন বৃষ্টির পর বুধবার সকাল থেকে তা কিছুটা কমায় হাটমুখো হয়েছেন ক্রেতারা। তবে এর মাঝেও থেমে থেমে চলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভোগাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
কাদা আর গরুর হাটের আবর্জনা মাড়িয়ে হাটগুলোতে চলছে দরদাম। জমে উঠেছে বেচাকেনাও। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি।
বুধবার বিকালে নগরীর বিবিরহাট গরুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এই হাটে বেশিরভাগ গরু এসেছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও গরু নিয়ে হাটে এসেছেন ব্যাপারিরা।
জামালপুর থেকে তিনদিন আগে এই হাটে আসা বিক্রেতা সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২২টা গরু নিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত চাইরটা বেচছি। লোকজন দাম বলে কম।
“দুই লাখ ২০ হাজার টাকা একটা গরুর দাম চাইলাম। কাস্টমাররা ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত বলছে। এই দামে গরু বেচা সম্ভব না। আরেকটু বাড়তি পেলে বিক্রি করতাম।”
তবে পাল্টা অভিযোগ ক্রেতাদের; বলছেন- বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না; ঈদের আগের দুই দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় বিক্রেতারা।
এই হাট থেকে দেড় লাখ টাকায় একটি গরু কিনে ফেরার পথে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, “গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব বেশি না।
“বাজারে অনেক গরু আছে। আজকে একটা কিনলাম। কালকে বাজার দেখে আরেকটা কিনব।”
বুধবার নগরীর আতুরার ডিপো থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা আকবর হোসেন বলেন, “একটার সময় হাটে আসছি। ৩ ঘণ্টা ঘুরে বেশ কয়েকটা গরু দেখলাম। বাজারে গরু আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ব্যাপারিরা দাম ছাড়ছে না।
“তারা মনে করছে কাল-পরশু দুইদিন সময় হাতে আছে। আমরাও অপেক্ষা করব। কালকে দেখেশুনে কিনব।”
বুধবার দুপুরে গিয়ে নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানি পশুর হাট সাগরিকা গরুর বাজারেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছে ব্যাপারিরা।
সাগরিকা গরুর বাজারে কুষ্টিয়া থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে আসা সিরাজুল আলম বলেন, “চারদিন হলো আসছি। আমাদের বেশিরভাগই বড় গরু। বৃষ্টি বেশি থাকায় এতদিন হাটে লোকজন আসেনি।
“কালকে আর আজকে মিলে মাঝারি সাইজের ৫টা গরু বেচছি। বড় গরুর পার্টি আজকে কেবল আসা শুরু করছে। তারা দর দেখতেছে। কালকে থেকে হয়ত কিনবে।”
সাগরিকা গরু বাজারের হাসিল গ্রহণকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “হাটে প্রচুর গরু আছে। এতদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় লোকজন খুব একটা আসেনি। আজকে আসতেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে। শহরের লোকজন কোরবানের ২-৩ দিন আগেই গরু কেনে।
“আমাদের হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিমও আছে। এখন পর্যন্ত সব ভালোভাবে চলছে।”
বিবিরহাট গরু বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুধবার বিকালে একটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। হাটের বাইরেও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
এ হাটে গরুর চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি দল কাজ করছে।
এই দলের সদস্য সুব্রমনিয়ম বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দূর-দূরান্ত থেকে গরুগুলো দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে করে এখানে আনা হয়। পাশাপাশি গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি পড়েছে।
“একারণে কিছু কিছু গরুর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এরকম গরু চিহ্নিত হলে জ্বরের ওষুধ ও অ্যান্টি হিস্টামিন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে গত ২৯ মে বিবিরহাটে এসেছেন আবদুস সামাদ ও তার সঙ্গীরা। সেখানে গরুগুলোর পাশেই খালি জায়গায় নিজেদের জন্য খাবার রান্নার কাজও চলছিল।
আবদুস সামাদ বলেন, “এতদিন বৃষ্টিতে খুব কষ্ট পাইছি। কালকে থেকে বিক্রি শুরু হইছে। আজ পর্যন্ত ১১টা গরু বিক্রি করছি। বাকি গরু আশা করি, কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।”
হাটের বাইরে গরু সাজানোর গলার মালা বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রেতা মো. শফিও খুশি বেচাকেনা জমে ওঠায়। দেড়শ থেকে তিনশ টাকার মধ্যে মালা বিক্রি করছেন তিনি।
গরুর সাজসজ্জা সামগ্রী বিক্রেতা মো. শফি বলেন, “গতকাল প্রায় ১০ হাজার টাকার মাল বেচেছি। আজকেও বিক্রি ভালো। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে মানুষ হাটে কম আসে।”
বিবিরহাট বাজার লাগোয়া বাইরের গলিতে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় একটি ছাগল কেনা হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মো. কামাল বলেন, “বাড়ি যাবার পথে ছাগল কিনে নিলাম। গরু কিনব গ্রামে খামারির বাড়ি থেকে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর সংখ্যা মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। সে হিসাবে জেলায় এবার ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০ হাজারের বেশি গরু এসেছে আজকে পর্যন্ত। আরো আসতে পারে। কাজেই এবার গরুর স্বল্পতা হবে না।
“গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম সামান্য বেড়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। হাটগুলোতে বিক্রিও শুরু হয়েছে। হাটে আসা গরু-মহিষে তেমন কোনো রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়নি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪ সালে জেলায় কোরবানি হয়েছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে উন্নত জাতের ঘাস চাষ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খামারীকে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর ‘‘শীর্ষক” প্রকল্পেরে আওতায় দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে প্রতি ইউনিয়নে ২জন করে নির্বাচিত ২৮ জন খামারীকে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ প্রর্দশনী প্লট স্থাপন বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি এ বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারীদের প্রদান করেন জনপ্রতি ৪৪০০ টাকা। এতে খামারিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের খামারী ময়না খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কত টাকা বরাদ্দ সেটা ঠিক জানিনা, তবে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে মোট ৮৮০০ টাকা আমাকে দিয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের খামারী জোয়াদুর রহমানসহ একাধিক খামারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বরাদ্দ ৫০০০ টাকা থাকলেও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে ৮৮০০ টাকা সকলকে দিয়েছে। কেন কম দিলো সেটা আমরা জানিনা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কমিউনিটি এক্সট্রেনশন এজেন্ট শাহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা স্যার যা বলেছে আমি তাই করেছি, আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ মাহমুদুল ইসলাম খামারীদের প্রাপ্য অর্থ কম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অডিট ও মাঠ পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য টাকা কম দেয়া হয়েছে। এসকল খরচ তো আমি পকেট থেকে দেবনা। তাই খামারীদের ৬০০ টাকা করে কম দেয়া হয়েছে। আপনি অফিসে আসেন কথা বলি।
ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা উজানি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। এতে করে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী দুটির চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বইছে ১৩ দশমিক ৬২ মিটার উচ্চতায়। যেখানে বিপৎসীমা হচ্ছে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। অমলশিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বইছে ১৭ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ১৩ দশমিক ৫১ মিটার উচ্চতায় বইছে, যেখানে বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৪৬ মিটার ওপরে রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছে ৯ দশমিক ৭৯ মিটার উচ্চতায় যা বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৩৪ মিটার বেশি।
পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উজানের ঢলের প্রভাব বেশি পড়ছে সীমান্তবর্তী পয়েন্টগুলোতে।
এদিকে, জেলার ধলাই নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—সারি, ডাউকি ও সারি-গোয়াইন নদ-নদীর পানি কমতির দিকে আছে।
জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ভারতের দিক থেকে হঠাৎ করে ঢল নামায় কুশিয়ারা নদীর পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। নদীর পাড়ঘেঁষে অনেক ঘরবাড়ি আছে, এখনই পানি না নামলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্লাবিত হওয়ার ভয় আছে। আগে থেকে যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। নিচু এলাকা ও প্লাবনপ্রবণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। প্রত্যন্ত ও প্লাবনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় প্রায়ই বাঘ চলে আসে। সম্প্রতি এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাই লোকালয়ে বাঘের প্রবেশ রুখতে বাঘ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ অংশ ঘেরা রয়েছে জালের বেড়া দিয়ে। তবে বহু অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। আবার বেশ কিছু জায়গায় এখনও দেওয়া হয়নি জালের বেড়া। এবার বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বাঘের প্রবেশ থেকে বাসিন্দাদের সুরক্ষিত করতে পুরনো নেট পরিবর্তন করে নতুন নেট লাগানো হবে। একইসঙ্গে, এখনও পর্যন্ত যেসব এলাকা অরক্ষিত রয়েছে সেগুলি প্রথমবার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে।
বাঘ প্রকল্পের দুটি রেঞ্জে ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে জালের বেড়া রয়েছে। এই পুরো এলাকা জুড়ে নতুন জাল লাগানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন আধিকারিকরা। জুলাইয়ের শেষ থেকে তাঁরা এই কাজ করতে চাইছেন। সে বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন আধিকারিকরা। এই অবস্থায় কথাটা যার প্রয়োজন? কত খরচ পড়বে? তার হিসেবে চলছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বন বিভাগের কাছে প্রস্তাব দেবেন আধিকারিকরা। এবিষয়ে বাঘ প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, এ নিয়ে এখনও পরিকল্পনা চলছে। জুলাইয়ের শেষ থেকে এই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে সুন্দরবনে। যার ফলে বিভিন্ন অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আর সেই সুযোগে বার বার লোকালয়ে এসে পড়ে বাঘ। তাছাড়া, বহুদিন ধরে নতুন জল লাগানো হয়নি। অনেক জায়গায় জলের বেড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এসব কারণেই নতুন জাল লাগাতে উদ্যোগী হয়েছেন বা প্রকল্পের আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, বিশেষ করে গত বছর সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলিতে বাঘের আনাগোনা বেড়েছিল। এইসবের কারণে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সে কথা মাথায় রেখেই ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় কোনও বনাঞ্চল রাখতে চাইছেন না আধিকারিকরা। তাই বাসিন্দাদের সুরক্ষায় যাতে কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত জালের বেড়ার সুযোগে বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ না করতে পারে তারজন্য নতুন জল টাঙানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন বাঘ প্রকল্পের আধিকারিকরা।
মন্তব্য