নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপির না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই বলছে বিএনপি। ২০১৫ সালের ব্যর্থ আন্দোলনের পর প্রথমবারের মতো টানা ৯ দিনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। প্রতিটি কর্মসূচিতেই জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিএনপির সাম্প্রতিক এই কর্মসূচির প্রধান দাবি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া।
তবে নেতারা নিউজবাংলাকে বলছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের আবার দলের কর্মসূচিতে আনা হচ্ছে।
বিএনপির নেতা ও মাঠের কর্মীদের তথ্য বলছে, দলটির এই সক্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে একটি অনুসঙ্গ হচ্ছে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি পদক্ষেপ। বাহিনী হিসেবে র্যাব ও এর ছয় কর্মকর্তা ও পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিএনপি বিশেষভাবে আগ্রহী হয়েছে।
দলটি মনে করে, তারা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যে আন্দোলন করেছিল, সে সময় সরকার যে কঠোর ভূমিকা নিয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে এসে তারা তা পারবে না।
২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এবং পরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা কয়েক মাস বিএনপির আন্দোলনে সহিংসতা ছিল ব্যাপক। সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও ছিল কঠোর। বিএনপির অভিযোগ, সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের অনেক নেতা-কর্মীকে তুলে নেয়া হয়েছে, যাদের সিংহভাগই পরে আর ফেরেনি, অনেককে গুলি করা হয়েছে। এতে কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যা ক্রমেই কমেছে। এর পর্যায়ে ২০১৫ সালে বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে যায়। তখন থেকেই বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে আর যাচ্ছে না দলটি।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পর নেতারা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধন এবার কিছুটা হলেও আলগা থাকবে। আর এই ধারণায় সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণও বেশি দেখা যাচ্ছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোজাসাপ্টাই বলেছেন, তাদের এখন যে কর্মসূচি সেটি বৃহত্তর আন্দোলনের ওয়ার্মআপ।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন খেলার আগে ফুটবলাররা ওয়ার্মআপ করে। ঠিক তেমনি সারা দেশে আন্দোলনের ওয়ার্মাপ শুরু হয়েছে। যতদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত না হয় এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত এ আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। আন্দোলন থামবে না।‘
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পরে বিএনপি জোরালো কর্মসূচি শুরু করে ২০১২ সালের শেষের দিকে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিলের পরও দলটি এই ধরনের সরকারের দাবি করতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার থাকে অটল।
দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের মধ্যে শুরু হয় সহিংস আন্দোলন। পেট্রল বোমা, সড়ক কেটে দেয়া, রেললাইন উপড়ানো, পুলিশের গুলিসহ নানা ঘটনার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি এবং মিত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়াই হয় ভোট।
এই ধরনের একতরফা নির্বাচন এর আগেও দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ভোটের পর সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ টিকতে পারেননি দুই বছর, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার টিকতে পারেনি তিন মাসও।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর টিকে থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যখন জাতীয় নির্বাচন দেয়, তার আগে আগে বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিয়েও মাঠে নামেনি। বরং তারা ২০ দলীয় জোটের বাইরে আরও একটি জোট গঠন করে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে ওই জোট এবং ২০ দলীয় জোট সম্মিলিতভাবে ভোটে গিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে গিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করে তারা। ভোট শেষে ফলাফল মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েও পরে সংসদে যায়।
এবার আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি সামনে এনেছে বিএনপি। বলছে, এই সরকার ছাড়া তারা ভোটে যাবে না। এর অংশ হিসেবেই নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপির জেলা সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগমের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। হবিগঞ্জে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান ছাড়তে চাননি।
লালমনিরহাটেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশ গুলি ছুড়লেও তারা জমায়েত ছাড়তে চাননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবুর করে ছিলাম। সবুরে মেওয়া ফলে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনও বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা ইসলাম একই ইঙ্গিত করে বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি এখন সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। এখন লড়াই হবে সামনাসামনি। চুপ থাকার দিন শেষ। দমিয়ে রাখা যাবে না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তরুণরা এগিয়ে গিয়েছিল। আমাদের দলে এখন তরুণ নেতৃত্ব। এবার আর দমানো যাবে না।’
বিএনপির নির্দেশনা এরই মধ্যে সহযোগী সংগঠনকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনের অন্যতম শক্তি যুবদল ও ছাত্রদল। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে যেকোনো নির্দেশের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ছাত্রলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান শ্যামল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এক দফা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। সাংগঠনিকভাবেও আমরা দলটিকে একটি কাঠামোতে নিয়ে এসেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনের সাইরেন শুনতে পাবেন।’
জেলা পর্যায়ের যে সমাবেশ, বিক্ষোভ সেটিকে ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে আছি। এই আন্দোলনের বারুদ ওপরে ওঠার, আন্দোলন তুঙ্গে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেই গণ-আন্দোলনে যাব। এখন আর নেতাকর্মীরা মার খায় না, তারা রুখে দাঁড়ায়।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা আন্দোলন হুট করে হয় না। আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছি। হাজারটা সংলাপ হলেও সেটা করতে দেবে না। তাই আমাদের কাছে রাস্তা একটাই। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন।’
সংঘর্ষে পিছপা নয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করে বিএনপি, যা চলে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচিতে বিএনপির জমায়েত ও মনোভাবে এটা স্পষ্ট যে আগামী দিনের রাজনীতিতে রাজপথে তাদের উপস্থিতি থাকবে সরব।
টানা ৯ দিন দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরে এসব দলের স্থায়ী কমিটি, সিনিয়র নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রথম দিন ডিসেম্বর হবিগঞ্জের শায়েস্তানগরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরাও সমবেত হন।
শহরের প্রবেশমুখের সড়কে সমাবেশ করতে চাওয়ায় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতা-কর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ।
দুপুর দেড়টার দিকে ব্যারিকেড ভেঙে যুবদল নেতা-কর্মীরা প্রধান সড়কে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে হাতাহাতির একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা।
এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুটতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। এতে শায়েস্তানগর পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লে পিছু হটেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে আবারও এগিয়ে এসে ইট-পাটকেল ছুড়লে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৯ দিনে টানা প্রায় ৩০টি জেলায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ধারবাহিকভাবে। নেতাকর্মীদের ‘গ্রুমিং’ করার দরকার রয়েছে। সিনিয়র নেতারা সেই চেষ্টাই করছেন। আর খুব শিগগিরই গণ-আন্দোলন দেখতে পাবেন। জনগণের জোয়ার সরকার সামলাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের পাশে কী ধরনের লোকালয় গড়ে উঠবে, তার পরিকল্পনা থাকা উচিত।
ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের দেখতে গতকাল সোমবার বিকাল পাঁচটার দিকে যান রুহুল কবির রিজভী। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ অন্য নেতারা ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এ এলাকার মধ্যে প্রশিক্ষণ বিমান দিয়ে উড্ডয়ন শিখবে, এটা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়। এটা বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হতে পারে। যশোর, কক্সবাজারের মতো জায়গায় হতে পারে। সেখানে পাশে সমুদ্র আছে, বিস্তীর্ণ জায়গা আছে। কিন্তু এ ধরনের ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় প্রশিক্ষণ বিমানে প্রশিক্ষণ নেবে, এটা আমি কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছি না।’
রুহুল কবির আরও বলেন, ‘নেভিগেশন বা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আমি অবশ্যই জানব না। কিন্তু সাদা চোখে যেটা মনে হয়েছে, চারদিকে এত বাড়িঘর, মানুষ থইথই করছে, এর মধ্যে একটা প্রশিক্ষণ বিমানে প্রশিক্ষণ নিতে পারে না। এটা নিয়ে প্রশাসন, সরকারের গুরুদায়িত্ব আছে। দায়িত্বে অবহেলা করলে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন বিপন্ন হতে থাকবে।’
রিজভী বলেন, ‘বিমানবন্দরের পাশে কী ধরনের লোকালয় গড়ে উঠবে, তার পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমার মনে হয়, যেসব লোকালয় গড়ে উঠেছে, তা পরিকল্পনার অংশ নয়। এত ঘনবসতি এই এলাকায় হতে পারে না।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে জানিয়ে রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা রক্তের জোগান দেওয়াসহ অন্যান্য সহযোগিতা করছে। দলের কয়েকটি কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে তরুণদের চোখে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে।
সানেম-অ্যাকশনএইড পরিচালিত ‘যুব জরিপ-২০২৫’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে সারা দেশের আট বিভাগের ২ হাজারের বেশি পরিবারের ওপরে এ জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আনুমানিক ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। বিএনপির পড়েই আছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পাবে বলে মনে করছেন তরুণরা।
অন্যান্য ইসলামপন্থি দল, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান আরও নিচে। এছাড়াও, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারত, তবে ১৫ শতাংশ ভোট পেত বলে মনে করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা। বিএনপির প্রতি পুরুষ ভোটারদের সমর্থন নারীদের তুলনায় একটু বেশি। জামায়াতের ক্ষেত্রেও পুরুষ সমর্থন বেশি নারীর তুলনায়। অন্যদিকে, এনসিপির প্রতি নারীদের সমর্থন পুরুষদের চেয়ে বেশি, এবং শহরাঞ্চলে এই দলের জনপ্রিয়তা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি।
উল্লেখ্য, জরিপের ফল গত রোববার প্রকাশ করেছে সানেম, যা তরুণদের রাজনৈতিক ঝোঁক ও আগ্রহের একটি সময়োপযোগী প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশের তরুণদের মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশই আশাবাদী আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ ইতোমধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ তরুণ, অন্যদিকে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে অনাগ্রহী বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনীতি ও সংস্কার নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি জরিপে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে মাত্র ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত দেশের রাজনীতির হালচাল অনুসরণ করেন, ৩৯ দশমিক ০৯ শতাংশ মাঝে মাঝে করেন, আর ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এ ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না।
নারীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতি অনুসরণকারী তরুণের হারও খুব কম—পুরুষদের মধ্যে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র—পুরুষদের মধ্যে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জরিপে রাজনৈতিক দলের কার্যকারিতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট। মাত্র ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডায় দেশের প্রকৃত সমস্যার প্রতিফলন ঘটে, যেখানে ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ একেবারেই এ বিষয়ে একমত না। দেশের ৫০ শতাংশ তরুণ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি, আর বিপরীতে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মনে করেন যে দলগুলো তরুণদের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও তরুণদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন সংস্কার ছাড়াই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। তবে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। অপরদিকে, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি দেখছেন এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, কিছুই পরিবর্তন হবে না।
দেশের ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ কোনোভাবেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী না। ১১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ আছে এবং মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল নিয়ে তরুণদের প্রত্যাশা অনেকটাই আদর্শভিত্তিক। ৬০ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতা দূর করবে। ৫৪ শতাংশ চায় নিয়মিত নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক। পাশাপাশি, ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত নয়।
জরিপ পরিচালনা করা সংস্থা দুটি জানিয়েছেন, জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তরুণরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের গতিপথ, অন্তর্ভুক্তি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে কীভাবে চিন্তা করছে—তাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে জরিপটিতে। জরিপটি তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। সার্বিকভাবে, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষাগুলো আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা, যেন তা নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় এবং যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।
মন্তব্য