সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা শেফালি মুণ্ডা এ বছর এসএসসি পাস করেছে। একই বাগান থেকে আরও তিনজন পাস করেছে মাধ্যমিকে।
শেফালি মুণ্ডার বাবা সজল মুণ্ডার ভীষণ উচ্ছ্বসিত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে তো আমাদের মধ্যে কেউ তেমন পড়ালেখা করত না। বাগানে পড়ালেখার সুযোগও তেমন ছিল না। এখন পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে। খেয়ে না খেয়ে হলেও সবাই ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা যাতে চা-শ্রমিকের এই অভিশপ্ত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। বাগানের পাশে একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ায় সুযোগও বেড়েছে।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের পাথরশ্রমিক আজমত আলী। তার ছেলেও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
আজমত বলেন, ‘পড়ালেখার গুরুত্ব এখন আমরা বুঝতে পারছি। নিজেরা পড়ালেখা না করে জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি। বাচ্চাদের জীবনও যাতে নষ্ট না হয় তাই তাদের সাধ্যমতো পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করছি।’
শিক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই পিছিয়ে সিলেট। দেশের মধ্যে শিক্ষার হারেও সবচেয়ে তলানিতে অবস্থান এই বিভাগের। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলগুলোতেও সিলেটের অবস্থান থাকে পেছনের দিকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের। সরকারের পক্ষ থেকেও সিলেটের শিক্ষার হার বাড়াতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এতে মিলছে সাফল্যও।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) ফলাফলে সিলেট বোর্ডে ৯৬.৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, গত এক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
প্রবাসমুখিতা, ভৌগোলিক সমস্যা, দারিদ্র্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সংকটসহ নানা কারণে সিলেটের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কথা আলোচনায় আছে।
দেশের চা-বাগানগুলোরে বেশির ভাগ সিলেট অঞ্চলে। সামান্য মজুরিতে কাজ করেন চা-শ্রমিকরা। ফলে দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান সিলেটের প্রায় ৩ লাখ চা-শ্রমিকের। বাগান এলাকায় তেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নেই। ফলে চা-শ্রমিকের সন্তানেরাও পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষায়।
পাথরশ্রমিকসহ বিভিন্ন দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যেও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ ছিল কম।
বিভাগের বিশাল অঞ্চলজুড়ে হাওর। এর মধ্যে হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। সেখানে দারিদ্র্যের আঘাত আছে। এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও নাজুক। রয়েছে শিক্ষকের সংকট। এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা আছে।
শিক্ষায় সিলেটের পশ্চাৎপদতা সম্পর্কে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের প্রবাসমুখিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এখনো এখানকার বেশির ভাগ তরুণের প্রধান স্বপ্ন কোনো রকমে বিদেশে যাওয়া, বিশেষত ইংল্যান্ডে। ফলে লেখাপড়া শেষ না করেই অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আবার মেধাবীদের অনেকেও উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যাচ্ছে।
‘এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার অভাবও উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। দেশে চাকরির সংকট রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা নিয়েও অনেকে চাকরি পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকার যোগাযোগ সমস্যা, হাওর ও চা-বাগানবেষ্টিত এলাকার দারিদ্র্য এবং অনীহার কারণেও শিক্ষায় সিলেট পিছিয়ে আছে।
তবে মোড় যে ঘুরছে, সেটিও স্পষ্ট হচ্ছে। এসএসসিতে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার প্রতি ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৯৭.২৯ জন।
সুনামগঞ্জের সরকারি সতিশ চন্দ্র (এসসি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মুহাম্মদ মাসহুদ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার প্রতি আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। হাওর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই শিক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। এই সম্মিলিতি প্রচেষ্টার ফসল এবারের ফলাফল।’
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্যও এখন পড়ালেখার প্রয়োজন উল্লেখ করে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা আদনান আহমদ বলেন, ‘এখন আর আগের মতো যে কেউই বিদেশ যেতে পারছে না। বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকায় শিক্ষিত ও দক্ষ লোকদের কদর বেশি। ফলে বিদেশ যাওয়ার জন্যও পড়ালেখায় আগ্রহ বেড়েছে।’
অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক শুধাংশু তালুকদার বলেন, ‘এখন সব অভিভাবকই চান তাদের সন্তানদের ভালো লেখাপড়া করাতে। যিনি দরিদ্র, নিজে পড়ালেখার সুযোগ পাননি, তিনিও তার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে চান। নিজেদের সাধ্যমতো শিক্ষায় বিনিয়োগ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে। এসব কারণে ধীরে ধীরে সিলেটের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।’
আট বছরে পরীক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ
শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের এই পরিবর্তনের চিত্র পাওয়া যায় গত ৯ বছরের এসএসসির ফলাফল আর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর তথ্যেও।
২০১৩ সালে এ বোর্ডে ৫৮ হাজার ৫০৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮৮.৯৬ শতাংশ। আট বছরের ব্যবধানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
২০১৪ সালে ৬৮ হাজার ৮৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৮৯.২৩ শতাংশ।
২০১৫ সালে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭২ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী। পাস করে ৮১.৮২ শতাংশ।
২০১৬ সালে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন। পাসের হার ছিল ৮৪.৭৭ শতাংশ।
২০১৭ সালে ৯৩ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮০.২৬ শতাংশ।
২০১৮ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাসের হার ছিল ৭০.৪২ শতাংশ।
২০১৯ সালে পরীক্ষায় বসে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭১ জন। পাসের হার ছিল ৭০.৮৩।
২০২০ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০৪ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭৮.৭৯ শতাংশ।
আর এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৬.৭৮ শতংশ।
এই সময়ে সারা দেশেই পরীক্ষার্থী বেড়েছে। কিন্তু দ্বিগুণ হয়ে যায়নি।
কী বলছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা
সরকারের নানা উদ্যোগের কারণেও সিলেটে শিক্ষার চিত্রে পরিবর্তন আসছে বলে মনে করেন ভাষাসৈনিক ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আব্দুল আজিজ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা, ভৌগোলিক অবস্থান, পাহাড়, টিলা, হাওর, চা-বাগান পরিবেষ্টিত অঞ্চলে দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে ছিল সিলেট। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বাড়ানোসহ সরকারের নানা উদ্যোগে এখন এসব সমস্যা ছাপিয়ে শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে সিলেট।’
একই মত সিলেট এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দেরও। এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এখন উপজেলা পর্যায়ের অনেক কলেজেও অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। নতুন নতুন কলেজ হচ্ছে এবং তরুণদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহও বাড়ছে। আগামী ১০ বছর পর এসবের সুফল পাওয়া যাবে।’
পাসের হারকেই সবকিছু মানতে রাজি নন তারা
তবে পাসের হার বাড়া আর শিক্ষার অগ্রগতি এক নয় বলে মনে করেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন আহমদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের চেয়ে শিক্ষার আগ্রহ বেড়েছে। অভিভবকরা সচেতন হয়েছেন। এগুলো যেমন সত্য, তেমনি পাসের হার বাড়ার সঙ্গে শিক্ষার অগ্রগতি মেলানো যাবে না। শিক্ষার মান বাড়ছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। তার জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’
শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গণিত ও ইংরেজিতে ফেল করে। এবার এই দুই বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে পাসের হারে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কান্তি পাল বলেন, ‘বেশির ভাগ শিক্ষার্থী থাকে মানবিক বিভাগে। এ বছর সে সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ হাজার। এবার মানবিকে পাসের হার প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে।’
তবে এবারের পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ মেধা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না বলে মনে করেন সিলেটের মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। এই শিক্ষাবিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার যে সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে তা দিয়ে মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে এটা সত্য, এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এখন শিক্ষার মান বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।’
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য