সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা শেফালি মুণ্ডা এ বছর এসএসসি পাস করেছে। একই বাগান থেকে আরও তিনজন পাস করেছে মাধ্যমিকে।
শেফালি মুণ্ডার বাবা সজল মুণ্ডার ভীষণ উচ্ছ্বসিত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে তো আমাদের মধ্যে কেউ তেমন পড়ালেখা করত না। বাগানে পড়ালেখার সুযোগও তেমন ছিল না। এখন পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে। খেয়ে না খেয়ে হলেও সবাই ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা যাতে চা-শ্রমিকের এই অভিশপ্ত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। বাগানের পাশে একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ায় সুযোগও বেড়েছে।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের পাথরশ্রমিক আজমত আলী। তার ছেলেও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
আজমত বলেন, ‘পড়ালেখার গুরুত্ব এখন আমরা বুঝতে পারছি। নিজেরা পড়ালেখা না করে জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি। বাচ্চাদের জীবনও যাতে নষ্ট না হয় তাই তাদের সাধ্যমতো পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করছি।’
শিক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই পিছিয়ে সিলেট। দেশের মধ্যে শিক্ষার হারেও সবচেয়ে তলানিতে অবস্থান এই বিভাগের। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলগুলোতেও সিলেটের অবস্থান থাকে পেছনের দিকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের। সরকারের পক্ষ থেকেও সিলেটের শিক্ষার হার বাড়াতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এতে মিলছে সাফল্যও।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) ফলাফলে সিলেট বোর্ডে ৯৬.৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, গত এক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
প্রবাসমুখিতা, ভৌগোলিক সমস্যা, দারিদ্র্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের সংকটসহ নানা কারণে সিলেটের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কথা আলোচনায় আছে।
দেশের চা-বাগানগুলোরে বেশির ভাগ সিলেট অঞ্চলে। সামান্য মজুরিতে কাজ করেন চা-শ্রমিকরা। ফলে দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান সিলেটের প্রায় ৩ লাখ চা-শ্রমিকের। বাগান এলাকায় তেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নেই। ফলে চা-শ্রমিকের সন্তানেরাও পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষায়।
পাথরশ্রমিকসহ বিভিন্ন দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যেও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ ছিল কম।
বিভাগের বিশাল অঞ্চলজুড়ে হাওর। এর মধ্যে হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। সেখানে দারিদ্র্যের আঘাত আছে। এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও নাজুক। রয়েছে শিক্ষকের সংকট। এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা আছে।
শিক্ষায় সিলেটের পশ্চাৎপদতা সম্পর্কে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের প্রবাসমুখিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এখনো এখানকার বেশির ভাগ তরুণের প্রধান স্বপ্ন কোনো রকমে বিদেশে যাওয়া, বিশেষত ইংল্যান্ডে। ফলে লেখাপড়া শেষ না করেই অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আবার মেধাবীদের অনেকেও উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যাচ্ছে।
‘এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার অভাবও উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। দেশে চাকরির সংকট রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা নিয়েও অনেকে চাকরি পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকার যোগাযোগ সমস্যা, হাওর ও চা-বাগানবেষ্টিত এলাকার দারিদ্র্য এবং অনীহার কারণেও শিক্ষায় সিলেট পিছিয়ে আছে।
তবে মোড় যে ঘুরছে, সেটিও স্পষ্ট হচ্ছে। এসএসসিতে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার প্রতি ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৯৭.২৯ জন।
সুনামগঞ্জের সরকারি সতিশ চন্দ্র (এসসি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মুহাম্মদ মাসহুদ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার প্রতি আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। হাওর এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাও আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই শিক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। এই সম্মিলিতি প্রচেষ্টার ফসল এবারের ফলাফল।’
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্যও এখন পড়ালেখার প্রয়োজন উল্লেখ করে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা আদনান আহমদ বলেন, ‘এখন আর আগের মতো যে কেউই বিদেশ যেতে পারছে না। বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকায় শিক্ষিত ও দক্ষ লোকদের কদর বেশি। ফলে বিদেশ যাওয়ার জন্যও পড়ালেখায় আগ্রহ বেড়েছে।’
অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক শুধাংশু তালুকদার বলেন, ‘এখন সব অভিভাবকই চান তাদের সন্তানদের ভালো লেখাপড়া করাতে। যিনি দরিদ্র, নিজে পড়ালেখার সুযোগ পাননি, তিনিও তার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে চান। নিজেদের সাধ্যমতো শিক্ষায় বিনিয়োগ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে। এসব কারণে ধীরে ধীরে সিলেটের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।’
আট বছরে পরীক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ
শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের এই পরিবর্তনের চিত্র পাওয়া যায় গত ৯ বছরের এসএসসির ফলাফল আর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর তথ্যেও।
২০১৩ সালে এ বোর্ডে ৫৮ হাজার ৫০৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮৮.৯৬ শতাংশ। আট বছরের ব্যবধানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
২০১৪ সালে ৬৮ হাজার ৮৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৮৯.২৩ শতাংশ।
২০১৫ সালে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭২ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী। পাস করে ৮১.৮২ শতাংশ।
২০১৬ সালে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন। পাসের হার ছিল ৮৪.৭৭ শতাংশ।
২০১৭ সালে ৯৩ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৮০.২৬ শতাংশ।
২০১৮ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাসের হার ছিল ৭০.৪২ শতাংশ।
২০১৯ সালে পরীক্ষায় বসে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭১ জন। পাসের হার ছিল ৭০.৮৩।
২০২০ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০৪ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭৮.৭৯ শতাংশ।
আর এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৬.৭৮ শতংশ।
এই সময়ে সারা দেশেই পরীক্ষার্থী বেড়েছে। কিন্তু দ্বিগুণ হয়ে যায়নি।
কী বলছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা
সরকারের নানা উদ্যোগের কারণেও সিলেটে শিক্ষার চিত্রে পরিবর্তন আসছে বলে মনে করেন ভাষাসৈনিক ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আব্দুল আজিজ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা, ভৌগোলিক অবস্থান, পাহাড়, টিলা, হাওর, চা-বাগান পরিবেষ্টিত অঞ্চলে দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে ছিল সিলেট। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বাড়ানোসহ সরকারের নানা উদ্যোগে এখন এসব সমস্যা ছাপিয়ে শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে সিলেট।’
একই মত সিলেট এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দেরও। এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এখন উপজেলা পর্যায়ের অনেক কলেজেও অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। নতুন নতুন কলেজ হচ্ছে এবং তরুণদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহও বাড়ছে। আগামী ১০ বছর পর এসবের সুফল পাওয়া যাবে।’
পাসের হারকেই সবকিছু মানতে রাজি নন তারা
তবে পাসের হার বাড়া আর শিক্ষার অগ্রগতি এক নয় বলে মনে করেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন আহমদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের চেয়ে শিক্ষার আগ্রহ বেড়েছে। অভিভবকরা সচেতন হয়েছেন। এগুলো যেমন সত্য, তেমনি পাসের হার বাড়ার সঙ্গে শিক্ষার অগ্রগতি মেলানো যাবে না। শিক্ষার মান বাড়ছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। তার জন্য আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’
শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গণিত ও ইংরেজিতে ফেল করে। এবার এই দুই বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে পাসের হারে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কান্তি পাল বলেন, ‘বেশির ভাগ শিক্ষার্থী থাকে মানবিক বিভাগে। এ বছর সে সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ হাজার। এবার মানবিকে পাসের হার প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে।’
তবে এবারের পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ মেধা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না বলে মনে করেন সিলেটের মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। এই শিক্ষাবিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার যে সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে তা দিয়ে মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে এটা সত্য, এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এখন শিক্ষার মান বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।’
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য