× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
If Omicron is handled the economy will run great
google_news print-icon

ওমিক্রন সামাল দেয়া গেলে দুর্দান্ত ছুটবে অর্থনীতি

ওমিক্রন-সামাল-দেয়া-গেলে-দুর্দান্ত-ছুটবে-অর্থনীতি
করোনা মহামারির মধ্যেও দেশে আমদানি-রপ্তানি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল, করোনা কমে আসায় তা আগের চেয়ে বেড়েছে। ফাইল ছবি
অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারির ধকল সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে। প্রধান সূচকগুলো সবই ইতিবাচক ধারায়। ভয় এখন শুধু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে। এটাকে সামাল দেয়া গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই শেষ হয়ে গেল আরও একটি বছর। এই বছরেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ, পেয়েছে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত ঘোষণা।

সব মিলিয়ে কেমন গেল ২০২১ সাল? কেমন ছিল অর্থনীতির হালচাল? ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে কেমন? কেমন যাবে নতুন বছর ২০২২? সামনে চ্যালেঞ্জগুলোই বা কী?

এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা।

মহামারির ধকল সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফেরায় স্বস্তির কথা শুনিয়েছেন তারা। প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙালেও এখনও সহনীয় পর্যায়েই আছে।

ভয় এখন শুধু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে। এটাকে সামাল দেয়া গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না; দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- এমনটাই মনে করেন সবাই।

২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের বাঁক বদলের বছর; একটি বিশেষ বছর। নতুন উদ্যমে ৫০ বছরের সাহসী অর্জনকে সাক্ষী করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করার বছর। এই বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়ে যাবে।

২০২২ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। একই সময় রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটবে মেট্রোরেল। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে ততদিনে। এই টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।

ওমিক্রন সামাল দেয়া গেলে দুর্দান্ত ছুটবে অর্থনীতি
দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে এই বছরে; ২০২৩ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। তবে বাংলাদেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা এখনও রয়েই গেছে। ইতিবাচক খবরে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

রাজনৈতিক স্থিতির সঙ্গে মহামারির খাদ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট: করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকে সঙ্গী করে ২০২১ সালে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ। তবে বছরের শেষ দিকে এসে করোনার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

আর এ কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্ভাবাস নিয়ে সব সময় ‘রক্ষণশীল’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগের হিসাব থেকে সরে এসে বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন অবশ্য এই ঘুরে দাঁড়ানোর পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন এ দেশের তৃণমূলের অদম্য মানুষকে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অদ্ভুত এক অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। বিশেষ করে তৃণমূলের অদম্য মানুষগুলো কোনো কিছুতেই দমে যায় না। কোভিড-১৯ মোকাবিলা তারই প্রমাণ। সরকারের নীতিসহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির মানুষ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমানও আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, নতুন বছর হবে সময়কে অতিক্রম করার, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বছর।

কিন্তু স্বস্তি নেই; আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। করোনার নতুন ধরনের ভয় নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২২।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই; ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে অর্থনীতি ফের নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’

তবে আশার কথা হলো, পৌনে দুই বছরের মহামারি যতটা বিপদে বাংলাদেশকে ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপে তা অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো গেছে। দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বিদায়ী বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মহামারিতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সে কারণেই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সবাই আমাদের প্রশংসা করছে। ২০২২ সাল থেকে শুরু হবে আমাদের নতুন পথচলা।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও দেশের মানুষ ভালো আছে। ভালো আছে অর্থনীতি। নতুন বছরে আরও ভালো হবে।’

বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া

বিদায়ী বছরে অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল রপ্তানি খাত। মহামারির মধ্যেও বেড়ে চলেছে এই সূচক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গতি আরও বেড়েছে। মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আর্থিক বছর ধরে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের ছয় মাস, জুলাই-ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের ছয় মাস, জানুয়ারি-জুন) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকেই এসেছে ৮২ শতাংশের মতো।

ওমিক্রন সামাল দেয়া গেলে দুর্দান্ত ছুটবে অর্থনীতি
মহামারির সময়েও বেড়েছে রপ্তানি। ফাইল ছবি

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে যদি ৪ বিলিয়ন ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২১ সালে মোট রপ্তানি আয় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে, যা হবে ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি সহিদুল্লাহ আজিম নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘ভয় এখন আমাদের একটাই– ওমিক্রন। যদি এটা তেমন বাধা হয়ে না দেখা দেয়, তাহলে আগামী চার-পাঁচ বছর রপ্তানি আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, এখন আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি; দামও বেশ ভালো পাচ্ছি।’

আমদানিতেও জোয়ার বইছে

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির বন্যা বইতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। গত অর্থবছরে ৬৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে ২৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ বেশি।

ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে আরও উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ৮১০ কোটি ৭০ লাখ (৮. ১০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।

বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিপুল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে ৭৪২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল; যা ছিল এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৯২ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে দেশে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে গড়ে ৭ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে দেশে।

হোঁচটের পরও ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

গত কয়েক মাস ধরে টানা কমলেও বিদায়ী বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি (২২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাবে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি।

এর আগে মহামারির মধ্যেও এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে; ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর) ১৪৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১.৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা।

ওমিক্রন সামাল দেয়া গেলে দুর্দান্ত ছুটবে অর্থনীতি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই আসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে দেশে। তা হলেই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকের অঙ্ক ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত (প্রায় ৬ মাস) ১ হাজার ৩ কোটি ৮০ লাখ (১০.০৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬০ লাখ (১২.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে দেশে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছিল। যার কাছে যা জমানো টাকা ছিল, পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় অবৈধ পথে (হুন্ডি) কোনো রেমিট্যান্স আসেনি; সব এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। সে কারণেই গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

‘এরই মধ্যে একটি সুসংবাদ এসেছে। তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে; ফের শ্রমিক যাবে সেখানে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমার বিশ্বাস, জানুয়ারি থেকেই বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’

রাজস্ব আদায়ের গতিও ভালো

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।

মূল্যস্ফীতি নিয়েই বড় উদ্বেগ

জানুয়ারিতে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু হয়। পরের ছয় মাস কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি টানা বেড়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। করোনার ধকল কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে কাজ হারানো মানুষও কাজ পেতে শুরু করেছেন। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে।

ওমিক্রন সামাল দেয়া গেলে দুর্দান্ত ছুটবে অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতিতে হোঁচট খেয়েছে দেশ। ফাইল ছবি

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিই এখন বড় উদ্বেগ। বেশ কয়েক বছর ধরে এই সূচক সহনীয় ছিল। এটার লাগাম টেনে ধরাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’

জিডিপিতে হোঁচট

ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জন করা বাংলাদেশ করোনার ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে নেমে আসে। ২০২০২১ অর্থবছরে তা খানিকটা বেড়ে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে উঠেছে বলে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জোর দিয়ে বলছেন, ‘অর্থনীতি করোনার আগের আবস্থায় ফিরে আসছে। এবার লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে।’

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আইএমএফ বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ । আর এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে।

মাথাপিছু আয় বেড়েছে

নতুন ভিত্তিবছরের (২০১৫-১৬) হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে; বেড়েছে ৩২৭ ডলার। ডলারের বর্তমান বাজার অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে ২৯ হাজার ৪৩০ টাকা।

তবে মনে রাখতে হবে, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়।

দুই অঙ্কের ঘরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি

তলানিতে নামার পর বেশ ভালোই গতিতে ফিরেছে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ। টানা ছয় মাস ধরে বাড়তে বাড়তে দুই বছর পর নভেম্বরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট, ১০ শতাংশের ওপরে) ঘরে পৌঁছে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরেছে।

নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি অক্টোবরের চেয়ে দশমিক ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠেছে।

এর অর্থ হলো, গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এই নভেম্বরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।

আগের মাস অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এর পর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নভেম্বরে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।

তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচক।

লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলার।

অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

আমদানি বাড়ায় আর রেমিট্যান্স কমায় এই ঘাটতি বলে জানিয়েছেন আহসান মনসুর।

বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে সরকার

বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহায়তা পাচ্ছে সরকার। এতে করোনা মহামারিকালেও সরকারকে অর্থসংকটে পড়তে হয়নি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশের অনুকূলে ৩০৮ কোটি ৯৫ লাখ (৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে দাতারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এ হিসাবে এই চার মাসে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।

সমৃদ্ধির স্বীকৃতি পাওয়ার বছর

ছয় বছর আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। ২০১৫ সালে প্রথম এই প্রত্যাশার পারদ ওপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু সে বছর তিনটি সূচকের মধ্যে একটিতে মান অর্জন করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আশায় গুড়ে বালি।

তিন বছর পর ২০১৮ সালে জাতিসংঘের পরবর্তী মূল্যায়নে তিনটি সূচকের সব কটিতেই মান অর্জন করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। এরপর আরও তিন বছর কেটে যায়। অবশেষে ২০২১ সালের শুরুর দিকে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে। তারা ঠিক করে দেয়, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।

গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশ সম্পর্কে সিডিপির সুপারিশ গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি হলো এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আরেক ধাপ উত্তরণ। আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে ২০২১ সালেই অন্যতম বড় স্বীকৃতি মিলল। এটি সমৃদ্ধির স্বীকৃতি।

এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান কোথায় বা এই মুহূর্তে কোন কোন দেশের কাতারে আছে, তা দেখা যাক। সোজা কথায় উগান্ডা, কিরিবাতি, হাইতি, টুভালু, জিবুতি, গিনির মতো দেশের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হয় বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে ২০২৬ সালে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাতারে থাকবে বাংলাদেশ।

আরেক সুখবর

বছরের শেষ দিকে এসে আরেকটা সুখবর পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলেছে, অর্থনৈতিক বিকাশের চলতি ধারা বহাল থাকলে ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম।

সিইবিআর তাদের সবশেষ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২২’ নামের এই প্রতিবেদনটি ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতি বছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।

সংস্থাটি বলছে, ১৫ বছর পর ২০৩৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আড়াই গুণের বেশি বেড়ে ৮৮৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার ৩২৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সিইবিআর। এবার ১৯১টি দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তারা। এ বছর বাংলাদেশের বিষয়ে তারা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হবে না।

সিইবিআর বলছে, চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হবে ৪১তম। আর অর্থনীতির এই গতিশীলতা ধরে রাখা গেলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪তম, ২০৩১ সালে ২৯তম এবং ২০৩৬ সালে হবে ২৪তম।

২০২২ থেকে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৯১টি দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

নতুন বছরে পরামর্শ

গত বছর এবং নতুন বছরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতি সামাল দেওয়া গেছে। কোভিডের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। কিছুটা মচকে গেছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া আছে। অবশ্য বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুদিন থাকবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সব সময় খারাপ।

‘অন্যদিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে অসামঞ্জস্য আছে। আমদানি বেশি হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ যা বেড়েছিল, তা থাকেনি। বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমতে পারে।

‘মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য আছে। ডলারের মূল্য ব্যাংকে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। আর খোলাবাজারে তা ৯১-৯২ টাকা। পার্থক্য অনেক বেশি। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। অবশ্য রাজস্ব আদায় কম হলে সরকার খরচ কমিয়ে সামাল দিতে পারে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি করোনার আগের পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু লক্ষ্য বেশি থাকায় এবারও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রাজস্ব অর্জিত হবে না।

‘ফলে সরকারকে উন্নয়ন খরচ কমাতেই হবে, যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন খরচ কমালে মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমবে। এ ছাড়া সামনে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে সামনে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’

আরও পড়ুন:
দেশে আরও ৩ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য কঠোর নীতিমালা প্রয়োজন
১৫ বছরেই ২৪তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ
আবারও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি হলেন বারকাত
সবার অংশগ্রহণে ভোট জরুরি: রেহমান সোবহান

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The transaction on the capital market with the index decreases

সূচকের সঙ্গে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে

সূচকের সঙ্গে পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৪ জুলাই) পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১০৪ ও ১৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে ৫৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৬৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।

সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।

এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, বিচ হ্যাচারি, বিএটিবিসি, সী পার্ল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, রহিমা ফুড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার (১৪ জুলাই) ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর।

সোমবার (১৪ জুলাই) সিএসইতে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা কম। আগের দিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Bangladesh Bank bought and 1 million at the auction for the first time

প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে মার্কিন ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।

এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে।

তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে।

তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। আজ তা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রোববার অধিকাংশ ব্যাংক প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ১২৩ টাকারও বেশি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Chinas exports in June are better imports than expected by 5 percent increase

জুনে চীনের রফতানি ৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি, প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আমদানিও

জুনে চীনের রফতানি ৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি, প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আমদানিও

চীনের রপ্তানি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে গত জুন মাসে, যা পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল। এ সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমাতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।

বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুনে রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ব্লুমবার্গের করা সমীক্ষায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া, একই মাসে চীনের আমদানিও ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটিও পূর্বাভাস দেওয়া ০.৩ শতাংশের চেয়ে ভালো।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In the first 12 days of July the remittance of around Rs

জুলাই মাসের  প্রথম ১২ দিনে এল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স

জুলাই মাসের  প্রথম ১২ দিনে এল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।

এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।

এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Trump is going to implement 5 percent of the tariff on Canada products on August 7

কানাডার পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসাতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, কার্যকর ১ আগস্ট

কানাডার পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসাতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, কার্যকর ১ আগস্ট

কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানান।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এমন ধরনের ২০টিরও বেশি চিঠি গেছে বিশ্বের নানা দেশের নেতার কাছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই হুমকিতে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

একইসঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকো উভয়ই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছে, যাতে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পুরোনো (নাফটা) বাতিল করে ইউএসএমসিএ চালু করা হয়। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এর পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা। তবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প নানা দেশে শুল্ক আরোপ করে পর্যালোচনার প্রক্রিয়াই অস্থির করে তুলেছেন।

শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় কানাডা ও মেক্সিকোর বহু পণ্যের ওপর। কানাডার জ্বালানির ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।

বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী এ দুই দেশকে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।

তবে পরবর্তীতে ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দেন, যার ফলে বড় পরিসরের পণ্য শুল্কমুক্ত হয়।

বৃহস্পতিবারের চিঠিটি এমন এক সময় এলো, যখন ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হচ্ছিল। এমনকি এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

গত ৬ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউসে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরের মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনেও আবার দেখা হয় দুই নেতার। সম্মেলনে ট্রাম্পকে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান বিশ্বনেতারা।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কানাডা যে কর আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ট্রাম্প আলোচনার টেবিল ত্যাগ করলেও পরে আবার আলোচনা শুরুর পথ খুলে যায়।

অন্যদিকে, এনবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যেসব দেশকে এখনো এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়নি, তাদের ওপরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। সেটিও কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।

তিনি জানান, ব্রাজিলের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যদি এর আগেই কোনো সমঝোতা না হয়।

এনবিসি’কে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের উদ্দেশে চিঠি পাঠানো হবে ‘আজ বা আগামীকাল (শুক্রবার)’।

এদিকে, ট্রাম্পের হুমকির পর বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।

ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Jute shrimp export revenue in Khulna is around Tk 1000 crore

খুলনায় পাট-চিংড়ি রপ্তানি আয় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছর
খুলনায় পাট-চিংড়ি রপ্তানি আয় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা

খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।

ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।

মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।

খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’

পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The adviser to ensure transparency in the preparation of financial reports to increase investment

বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’

রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।

তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।

মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’

তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’

মন্তব্য

p
উপরে