করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই শেষ হয়ে গেল আরও একটি বছর। এই বছরেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ, পেয়েছে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত ঘোষণা।
সব মিলিয়ে কেমন গেল ২০২১ সাল? কেমন ছিল অর্থনীতির হালচাল? ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে কেমন? কেমন যাবে নতুন বছর ২০২২? সামনে চ্যালেঞ্জগুলোই বা কী?
এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা।
মহামারির ধকল সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফেরায় স্বস্তির কথা শুনিয়েছেন তারা। প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙালেও এখনও সহনীয় পর্যায়েই আছে।
ভয় এখন শুধু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে। এটাকে সামাল দেয়া গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না; দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- এমনটাই মনে করেন সবাই।
২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের বাঁক বদলের বছর; একটি বিশেষ বছর। নতুন উদ্যমে ৫০ বছরের সাহসী অর্জনকে সাক্ষী করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করার বছর। এই বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়ে যাবে।
২০২২ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। একই সময় রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটবে মেট্রোরেল। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে ততদিনে। এই টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে এই বছরে; ২০২৩ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। তবে বাংলাদেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা এখনও রয়েই গেছে। ইতিবাচক খবরে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজনৈতিক স্থিতির সঙ্গে মহামারির খাদ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট: করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকে সঙ্গী করে ২০২১ সালে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ। তবে বছরের শেষ দিকে এসে করোনার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
আর এ কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্ভাবাস নিয়ে সব সময় ‘রক্ষণশীল’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগের হিসাব থেকে সরে এসে বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন অবশ্য এই ঘুরে দাঁড়ানোর পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন এ দেশের তৃণমূলের অদম্য মানুষকে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অদ্ভুত এক অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। বিশেষ করে তৃণমূলের অদম্য মানুষগুলো কোনো কিছুতেই দমে যায় না। কোভিড-১৯ মোকাবিলা তারই প্রমাণ। সরকারের নীতিসহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির মানুষ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমানও আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, নতুন বছর হবে সময়কে অতিক্রম করার, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বছর।
কিন্তু স্বস্তি নেই; আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। করোনার নতুন ধরনের ভয় নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২২।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই; ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে অর্থনীতি ফের নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’
তবে আশার কথা হলো, পৌনে দুই বছরের মহামারি যতটা বিপদে বাংলাদেশকে ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপে তা অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো গেছে। দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিদায়ী বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মহামারিতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সে কারণেই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সবাই আমাদের প্রশংসা করছে। ২০২২ সাল থেকে শুরু হবে আমাদের নতুন পথচলা।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও দেশের মানুষ ভালো আছে। ভালো আছে অর্থনীতি। নতুন বছরে আরও ভালো হবে।’
বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া
বিদায়ী বছরে অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল রপ্তানি খাত। মহামারির মধ্যেও বেড়ে চলেছে এই সূচক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গতি আরও বেড়েছে। মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আর্থিক বছর ধরে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের ছয় মাস, জুলাই-ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের ছয় মাস, জানুয়ারি-জুন) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকেই এসেছে ৮২ শতাংশের মতো।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে যদি ৪ বিলিয়ন ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২১ সালে মোট রপ্তানি আয় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে, যা হবে ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি।
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি সহিদুল্লাহ আজিম নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘ভয় এখন আমাদের একটাই– ওমিক্রন। যদি এটা তেমন বাধা হয়ে না দেখা দেয়, তাহলে আগামী চার-পাঁচ বছর রপ্তানি আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, এখন আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি; দামও বেশ ভালো পাচ্ছি।’
আমদানিতেও জোয়ার বইছে
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির বন্যা বইতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। গত অর্থবছরে ৬৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে ২৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ বেশি।
ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে আরও উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ৮১০ কোটি ৭০ লাখ (৮. ১০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিপুল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে ৭৪২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল; যা ছিল এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৯২ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে দেশে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে গড়ে ৭ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে দেশে।
হোঁচটের পরও ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স
গত কয়েক মাস ধরে টানা কমলেও বিদায়ী বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি (২২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাবে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি।
এর আগে মহামারির মধ্যেও এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে; ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর) ১৪৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১.৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে দেশে। তা হলেই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকের অঙ্ক ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত (প্রায় ৬ মাস) ১ হাজার ৩ কোটি ৮০ লাখ (১০.০৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬০ লাখ (১২.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে দেশে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছিল। যার কাছে যা জমানো টাকা ছিল, পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় অবৈধ পথে (হুন্ডি) কোনো রেমিট্যান্স আসেনি; সব এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। সে কারণেই গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
‘এরই মধ্যে একটি সুসংবাদ এসেছে। তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে; ফের শ্রমিক যাবে সেখানে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমার বিশ্বাস, জানুয়ারি থেকেই বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
রাজস্ব আদায়ের গতিও ভালো
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
মূল্যস্ফীতি নিয়েই বড় উদ্বেগ
জানুয়ারিতে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু হয়। পরের ছয় মাস কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি টানা বেড়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। করোনার ধকল কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে কাজ হারানো মানুষও কাজ পেতে শুরু করেছেন। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে।
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিই এখন বড় উদ্বেগ। বেশ কয়েক বছর ধরে এই সূচক সহনীয় ছিল। এটার লাগাম টেনে ধরাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’
জিডিপিতে হোঁচট
ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জন করা বাংলাদেশ করোনার ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে নেমে আসে। ২০২০২১ অর্থবছরে তা খানিকটা বেড়ে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে উঠেছে বলে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জোর দিয়ে বলছেন, ‘অর্থনীতি করোনার আগের আবস্থায় ফিরে আসছে। এবার লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে।’
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আইএমএফ বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ । আর এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে।
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
নতুন ভিত্তিবছরের (২০১৫-১৬) হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে; বেড়েছে ৩২৭ ডলার। ডলারের বর্তমান বাজার অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে ২৯ হাজার ৪৩০ টাকা।
তবে মনে রাখতে হবে, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়।
দুই অঙ্কের ঘরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি
তলানিতে নামার পর বেশ ভালোই গতিতে ফিরেছে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ। টানা ছয় মাস ধরে বাড়তে বাড়তে দুই বছর পর নভেম্বরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট, ১০ শতাংশের ওপরে) ঘরে পৌঁছে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরেছে।
নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি অক্টোবরের চেয়ে দশমিক ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠেছে।
এর অর্থ হলো, গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এই নভেম্বরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
আগের মাস অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এর পর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নভেম্বরে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।
তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচক।
লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলার।
অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
আমদানি বাড়ায় আর রেমিট্যান্স কমায় এই ঘাটতি বলে জানিয়েছেন আহসান মনসুর।
বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে সরকার
বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহায়তা পাচ্ছে সরকার। এতে করোনা মহামারিকালেও সরকারকে অর্থসংকটে পড়তে হয়নি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশের অনুকূলে ৩০৮ কোটি ৯৫ লাখ (৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে দাতারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এ হিসাবে এই চার মাসে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
সমৃদ্ধির স্বীকৃতি পাওয়ার বছর
ছয় বছর আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। ২০১৫ সালে প্রথম এই প্রত্যাশার পারদ ওপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু সে বছর তিনটি সূচকের মধ্যে একটিতে মান অর্জন করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আশায় গুড়ে বালি।
তিন বছর পর ২০১৮ সালে জাতিসংঘের পরবর্তী মূল্যায়নে তিনটি সূচকের সব কটিতেই মান অর্জন করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। এরপর আরও তিন বছর কেটে যায়। অবশেষে ২০২১ সালের শুরুর দিকে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে। তারা ঠিক করে দেয়, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশ সম্পর্কে সিডিপির সুপারিশ গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি হলো এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আরেক ধাপ উত্তরণ। আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে ২০২১ সালেই অন্যতম বড় স্বীকৃতি মিলল। এটি সমৃদ্ধির স্বীকৃতি।
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান কোথায় বা এই মুহূর্তে কোন কোন দেশের কাতারে আছে, তা দেখা যাক। সোজা কথায় উগান্ডা, কিরিবাতি, হাইতি, টুভালু, জিবুতি, গিনির মতো দেশের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হয় বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে ২০২৬ সালে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাতারে থাকবে বাংলাদেশ।
আরেক সুখবর
বছরের শেষ দিকে এসে আরেকটা সুখবর পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলেছে, অর্থনৈতিক বিকাশের চলতি ধারা বহাল থাকলে ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম।
সিইবিআর তাদের সবশেষ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২২’ নামের এই প্রতিবেদনটি ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতি বছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।
সংস্থাটি বলছে, ১৫ বছর পর ২০৩৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আড়াই গুণের বেশি বেড়ে ৮৮৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার ৩২৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সিইবিআর। এবার ১৯১টি দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তারা। এ বছর বাংলাদেশের বিষয়ে তারা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হবে না।
সিইবিআর বলছে, চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হবে ৪১তম। আর অর্থনীতির এই গতিশীলতা ধরে রাখা গেলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪তম, ২০৩১ সালে ২৯তম এবং ২০৩৬ সালে হবে ২৪তম।
২০২২ থেকে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৯১টি দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন বছরে পরামর্শ
গত বছর এবং নতুন বছরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতি সামাল দেওয়া গেছে। কোভিডের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। কিছুটা মচকে গেছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া আছে। অবশ্য বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুদিন থাকবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সব সময় খারাপ।
‘অন্যদিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে অসামঞ্জস্য আছে। আমদানি বেশি হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ যা বেড়েছিল, তা থাকেনি। বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমতে পারে।
‘মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য আছে। ডলারের মূল্য ব্যাংকে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। আর খোলাবাজারে তা ৯১-৯২ টাকা। পার্থক্য অনেক বেশি। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। অবশ্য রাজস্ব আদায় কম হলে সরকার খরচ কমিয়ে সামাল দিতে পারে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি করোনার আগের পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু লক্ষ্য বেশি থাকায় এবারও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রাজস্ব অর্জিত হবে না।
‘ফলে সরকারকে উন্নয়ন খরচ কমাতেই হবে, যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন খরচ কমালে মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমবে। এ ছাড়া সামনে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে সামনে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের শিল্পখাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসরণ করছে দেশের সুপারব্র্যান্ড ও টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। জিরো কার্বন নিঃসরণ, সাশ্রয়ী জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্লিন ও গ্রিন এনার্জি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভাসমান (ফ্লোটিং) সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ওয়ালটন। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের শিল্পখাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথে আরেকটি নতুন মাইলফলক।
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সের জলাশয়ের ওপর স্থাপন করা হয়েছে এই ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফ্লোটিং সোলার প্রজেক্ট, যা দেশের বেসরকারি খাতে নির্মিত সবচেয়ে বড় ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে স্থাপিত ২.৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে জলাশয়ের ওপর ০.৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্যানেল ভাসমানভাবে স্থাপন করা হয়েছিল।
ওয়ালটনের এনভায়রনমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন,
“ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ালটন নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের টেকসই শিল্পোন্নয়ন প্রকৃতি ও প্রযুক্তির ভারসাম্যের মাধ্যমেই সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, জলাশয়ের ওপর স্থাপিত এই প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না, বরং মাছ চাষ, ভূমি সংরক্ষণ, পানির বাষ্পীভবন হ্রাস ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ বা আংশিক উৎপাদনে থাকলে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজু জানান, প্রকল্পে ব্যবহৃত ফ্লোটিং স্ট্রাকচারগুলো ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, যা পানি ও জলজ প্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্যানেলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত না হয়। এই সিস্টেম আগামী ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকবে।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, ফুটপাত ও খালি জায়গায় ১০ মেগাওয়াট সৌর শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিল্পপ্রক্রিয়ায় পানি সাশ্রয় ও পুনঃব্যবহারের জন্য ইটিপি’র মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত পানির প্রায় ৭৫ শতাংশ নিরাপদভাবে পুনঃব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার ও আপসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য হ্রাস ও সম্পদের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করছে ওয়ালটন।
এসব কার্যক্রমের ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৯১১,৮২৩ মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস এবং সামগ্রিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট ১০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ালটন শুধু পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণই করেনি, বরং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই শিল্প ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছে।
জেবি/এসডি
ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম (DMF) দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”, যা বাংলাদেশের অনুপ্রেরণাদায়ক সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মী ও উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি জানাতে একটি মহোৎসব।
এই মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে সাংবাদিকতা, উদ্ভাবন ও মিডিয়ার সৃজনশীলতায় অসামান্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানো হয়, যাদের কাজ সমাজে স্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার ও ডিএমএফ এর সাধারণ সম্পাদক রায়হান রবিন। তিনি বলেন, ডিএমএফ-এর এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল সাংবাদিকতার নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পেশাদারিত্ব ও উদ্ভাবনের মান উন্নয়ন করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”-এর জুরি বোর্ডের সদস্যরা, যারা দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের সম্পাদনা ও ডিজিটাল নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্য
সংগঠনের সভাপতি ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস-এর ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,
“নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল সাংবাদিকতা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গণমাধ্যমকে আরও এগিয়ে নেওয়া এবং সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়াই এই আয়োজনের লক্ষ্য। সাংবাদিকতা পেশাকে আরও শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়ার সম্ভাবনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরাই ডিএমএফ-এর মূল উদ্দেশ্য।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. তৃণা ইসলাম (হেড অব অপারেশনস, দ্য বিজনেস ডেইলি) ও ফয়সাল তিতুমীর (সিনিয়র প্রেজেন্টার, যমুনা টেলিভিশন), যারা সজীব উপস্থাপনায় পুরো আয়োজনে প্রাণ ঢেলেছেন।
প্রধান অতিথি: জনাব শফিকুল আলম, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বিশেষ অতিথি: জনাব ফয়েজ আহমেদ, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
গেস্ট অব অনার:
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিএমএফ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া পেশাজীবীদের অন্যতম শীর্ষ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন সাংবাদিকদের একত্র করে প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল মিডিয়া ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার কাজ করছে।
জুরি বোর্ড (২০২৫)
পুরস্কারপ্রাপ্তরা (প্রফেশনাল বিভাগসমূহ)
জুরি স্পেশাল অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা
এই সম্মাননায় ডিএমএফ আবারও প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আজ শুধুমাত্র সংবাদ প্রচার নয়—এটি প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার সমন্বয়ে সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
২৬ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার,, প্রথমবারেরে মতো গেমিফিকেশন লার্নিং প্রোগ্রাম বিষয়ে একটি ইভেন্টের আয়োজন করছে GREC BD & Aemers Admission Worldwide। এই প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে বর্তমান আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে আলোচনা , চিন্তাভাবনা, দলবদ্ধ কাজ, সার্ভের মাধ্যমে এ গেমটি ডিজাইন করেছে। প্রোগ্রামে পাঁচটি ইন্টারেক্টিভ লার্নিং গেম থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করবে। প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে শেখা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা, দলগতভাবে কাজ করা এবং সমস্যা সমাধান কিভাবে করতে হয় শেখার সুযোগ পাবেন।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান এই গেম এর মাধ্যমে তাদের অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটিস বোঝা এবং ক্রিটিক্যাল সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করবে এবং উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের এই যাত্রাকে আরও সহজ করবে। এই গেমটি তৈরি করেছে কিছু মেধাবী আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী। তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও কাজের সময় যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই এটি নির্মিত। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা যদি এই গেম থেকে উপকৃত হয়, তবে আমাদের এই উদ্যোগই হবে সত্যিকারের সফলতা।
এছাড়াও এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাল্টিপল-চয়েস, ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক, ড্র্যাগ-অ্যান্ড-ড্রপ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখবে কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়, ব্যবসা ও ফাইন্যান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হয় এবং জীবন ও কর্মধারার পরিবর্তন ঘটে।
এখানে ৫০-এর অধিক শিক্ষার্থী সনদপত্র পেয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করে তাদের সাফল্য উদযাপন করেছেন। এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে অভিভাবক, অতিথি ও কমিউনিটি লিডাররাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলার মানুষের গড়ে মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫ হাজার ১৬৩ মার্কিন ডলার। এটি দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় দুই গুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছর (২০২৪–২৫) শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয়ের এমন তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বার জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালে করা জেলাভিত্তিক জিডিপির তথ্যকে ভিত্তি ধরে এ জেলার বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে। যদিও ঢাকার মাথাপিছু আয় ও জিডিপির এসব তথ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।
সর্বশেষ গত মে মাসে জাতীয় মাথাপিছু আয়ের তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এতে উঠে আসে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন (২০২৪–২৫ অর্থবছর) ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এযাবতকালের রেকর্ড। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। তবে বিবিএস বিভাগ বা জেলাভিত্তিক মাথাপিছু আয়ের হিসাব করে না।
মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।
বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার হয়। মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়।
কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ঢাকায়
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ কে এম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয় ঢাকা জেলায়। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ আসে এই জেলা থেকে। ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৭০০–এর বেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকা জেলায় অবস্থিত।
আসাদুজ্জামান জানান, দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বাস ঢাকা জেলায়। আর মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় থাকেন। ঢাকা খুবই শিল্পঘন জেলা। দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় এ জেলা থেকে। সব মিলিয়ে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) এককভাবে ৪৬ শতাংশ অবদান রাখছে ঢাকা জেলা।
ইপিআই সূচক চালু করবে ঢাকা চেম্বার
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা চেম্বার। প্রতি তিন মাস পরপর ইপিআই সূচক প্রকাশ করা হবে। এতে মূলত শিল্প ও সেবা খাতের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হবে এবং তার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
ঢাকা চেম্বারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ইপিআই সূচক নির্ধারণের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন সূচক, যেমন বিসিআই, ইজ অব ডুইং বিজনেস ইনডেক্স, জিডিপি প্রভৃতি রয়েছে। তবে এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিবর্তন ও কারণগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। সরকার অনেক সময় ভূ–অর্থনৈতিক পটভূমি নীতিনির্ধারণ করে, কিন্তু হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সেগুলো সব সময় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
এমন বাস্তবতায় ইপিআই সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাসকিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সূচকে দেখা যায়, ‘দেশের অর্থনীতি ভালো করছে। কিন্তু বৈশ্বিক সূচকের কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখতে পাই, আমরা বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকে থাকি। তাই এসব সূচকের তথ্যে আত্মতুষ্টির কারণ নেই; বরং এসব সূচককে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তুলনা করে প্রকাশ করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।’
আর ইপিআই সূচকটি প্রতি মাসে প্রকাশ করা ও সূচকের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) মহাপরিচালক মো. নূরুল আলম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম আতিকুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) নওশাদ মোস্তফা, পরিচালক মো. সালিম আল মামুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিয়া রহমত আলী প্রমুখ।
ফ্রান্সের পারফরম্যান্স লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড ইএলএফ লুব্রিক্যান্টস স্থানীয় গাড়ি মেকানিকদের দক্ষতা উন্নয়নে একদিনব্যাপী বিশেষ হাইব্রিড গাড়ি সার্ভিস প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করেছে।
টোটালএনার্জিসের এই ব্র্যান্ডের উদ্যোগে কর্মশালাটি শুক্রবার রাজধানীর কন্টিনেন্টাল ওয়ার্কস লিমিটেডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের বিভিন্ন সার্ভিস ওয়ার্কশপ থেকে আসা ৫০ জন অভিজ্ঞ মেকানিক প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
কর্মশালায় হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, ইলেকট্রিক মোটর পরীক্ষা, হাইব্রিড ট্রান্সমিশন সার্ভিসিং, হাই-ভোল্টেজ নিরাপত্তা ও আধুনিক ত্রুটি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইএলএফ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য স্থানীয় মেকানিকদের আরও দক্ষ করে তোলা, যাতে তারা গাড়ির কর্মক্ষমতা বাড়াতে, মেরামতের সময় কমাতে ও গাড়ির আয়ুষ্কাল দীর্ঘ করতে পারেন।
এতে চালক ও মালিকরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও হ্রাস পাবে বলে জানায় ইএলএফ।
প্রশিক্ষণটি স্থানীয় চাহিদা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাজানো হয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল অটোমোটিভ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি ইএলএফ-এর একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোটালএনার্জিস বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বিক্রয় পরিচালক টেরি হায়াশি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ মালিক, সার্টিফায়েড মেকানিক, প্রশিক্ষক, ফ্লিট সার্ভিস ম্যানেজার, মোটরযান সাংবাদিক, ইএলএফ পরিবেশক ও অন্যান্য অংশীদাররা।
ইএলএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির প্রযুক্তি দ্রুত বদলাচ্ছে, তাই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। আজকের প্রশিক্ষণ তাদের জন্য স্বীকৃতি, যারা প্রতিদিন আমাদের সড়ক ব্যবস্থা সচল রাখছেন। পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পরিবহনের ভবিষ্যৎ গড়তে আমরা বাংলাদেশের মেকানিকদের পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।’
ইএলএফ বাংলাদেশের পরিচালক কোসুকে ইয়োশিদা বলেন, টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ মানে ভবিষ্যতের পরিবহন খাতকে শক্তিশালী করা। আমরা হাইব্রিড সার্ভিসিং জ্ঞান ও নিরাপদ কার্যাভ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে একটি টেকসই সার্ভিস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।
আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের গাড়ির জন্য স্থানীয় কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইএলএফ, যা গাড়ির সার্ভিসিং মান, নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জি টু জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি শুরু করছে।
উভয় দেশের সরকারে মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে এ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর মধ্যে চুক্তিটি সই হয়। এর আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি নোরস স্ট্রিড জাহাজটি শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে পৌঁছায়।
জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গমের মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। তবে এই প্রক্রিয়া দেশের ঘোষিত বিনিময় হার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা তারা মূল্যায়ন করবে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, “রিজার্ভের সঞ্চয়কে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে যেহেতু দেশটি এখনো পেমেন্ট ভারসাম্যের চাপের মুখে রয়েছে।”
গত শুক্রবার হংকংয়ে আয়োজিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, পেমেন্ট ভারসাম্যের দুর্বলতা হ্রাসে রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।
তিনি জানান, ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফর করবে। মিশনটি মাঠপর্যায়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। ফলাফল কী হয়, তা এখনো দেখার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেটিও আইএমএফ মূল্যায়ন করবে বলে তিনি জানান।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত মুদ্রা প্রবাহ বাড়া, ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজার থেকে ডলার কেনার কারণে।
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমদানি বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়। ওই সময় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ‘ক্রলিং পেগ’ (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা) বিনিময় হার ব্যবস্থা বজায় রাখার পর, ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার ব্যবস্থায় নমনীয়তা চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত টাকার মান ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ, বিশেষ করে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মন্তব্য