স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২২ জন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে একজন সর্বোচ্চ সাড়ে সাত বছর এবং একজন সর্বনিম্ন এক মাস দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন আবার এই পদে ছিলেন দুই মেয়াদে। এদের একজন আবার নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাষ্ট্রপতি হয়ে ভোট শেষে আবার পদে ফিরে যান। পাঁচ বছর পর তিনি আবার রাষ্ট্রপতি হন।
দুজন প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দুটি জাতীয় নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।
দুজন প্রধান বিচারপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন, যাদের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। তিনি পদে থাকার সময় দেশের বাইরে ছুটিতে গিয়ে আর ফেরেননি। পরে তার অনুপস্থিতিতেই বিচারের রায় হয়।
৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া দ্বাদশ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। একই দিন বৃহস্পতিবার নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
নতুন প্রধান বিচারপতি শপথ নেবেন শুক্রবার।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি শপথ নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঠিক এক বছর পর।
তিনি ছিলেন আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি ১৯৭২-এর ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনিই প্রথম প্রধান বিচারপতি, যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৫-এর ৬ নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বিতীয় প্রধান বিচারপতি হন সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন ১৯৭৫ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে ১৯৭৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
তৃতীয় প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৮-এর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮২ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।
চতুর্থ প্রধান বিচারপতি ফজলে কাদেরী মোহাম্মদ আবদুল মুনিম সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রধান বিচারপতি হন ১৯৮২ সালের ১২ এপ্রিল। পদে ছিলেন ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর। অর্থাৎ ৭ বছর ৭ মাস।
পঞ্চম প্রধান বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী ছিলেন ১৯৮৯ সালের ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ তার মেয়াদ ছিল কেবল এক মাস।
ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯০-এর ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেন। নির্বাচন শেষে আবার তিনি তার আগের পদে ফিরে যান। তার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানও সংশোধন করতে হয়েছিল।
তার নেতৃত্বে নির্বাচনে জিতে বিএনপি ৯ বছর পর সরকারে ফেরে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাহাবুদ্দিন আহমেদকে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। সে সময় তিনি পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
সপ্তম প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা প্রথম ব্যক্তি।
তিনি ১৯৯৫-এর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জুনের জাতীয় নির্বাচনে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। ওই নির্বাচনে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরে।
দেশের অষ্টম প্রধান বিচারপতি এ টি এম আফজাল দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৫-এর ১ মে থেকে ১৯৯৯ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।
নবম প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৯ সালের ১ জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দশম বিচারপতি লতিফুর রহমান ছিলেন ২০০০-এর ১ জানুয়ারি থেকে ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
তবে ২০০৬ সালে আরেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের প্রধান উপদেষ্টা হতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক গোলযোগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জারি হয় জরুরি অবস্থা।
সে সময় বিধান ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন সবশেষ দায়িত্ব পালন করা প্রধান বিচারপতি। কিন্তু কে এম হাসান এককালে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বলে আওয়ামী লীগ তাকে মেনে নিতে রাজি ছিল না।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা নেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আট বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল হয়। এর ফলে প্রধান বিচারপতির পদটি নিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণের বিষয়টি বাতিল হয়ে যায়।
একাদশ প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ২০০১-এর ১ মার্চ থেকে ২০০২ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বাদশ প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী দায়িত্বে ছিলেন ২০০২-এর ১৮ জুন থেকে ২০০৩ সালের ২২ জুন পর্যন্ত।
ক্রয়োদশ প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান ছিলেন ২০০৩-এর ২৩ জুন থেকে ২০০৪ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
চতুর্দশ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন ২০০৪-এর ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।
পঞ্চদশ প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ২০০৭-এর ১ মার্চ থেকে ২০০৮ সালের ৩১ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
ষোড়শ প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন ২০০৮-এর ১ জুন থেকে ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সপ্তদশ প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম ২০০৯-এর ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।
অষ্টাদশ প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীম দায়িত্বে ছিলেন ২০১০-এর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ঊনবিংশ প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ২০১০-এর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। তার দায়িত্বে থাকার সময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়।
বিংশতম প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন দায়িত্বে ছিলেন ২০১১-এর ১৮ মে থেকে ২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।
একবিংশতম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। তিনি ২০১৫-এর ১৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় দেন। পদত্যাগের আগে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর তিনি দেশের বাইরে যান। ফেরার কথা ছিল নভেম্বরে।
ওই বছরের ২ অক্টোবর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। এরপর ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানের অনুমতি চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন।
ফেরার কথা ছিল যেদিন, তার পরদিনই তিনি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় গত ৯ নভেম্বর তার ১১ বছরের সাজা ও ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা হয়। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলবে বলে তাকে কারাগারে থাকতে হবে সাত বছর।
সিনহা পদত্যাগ করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। ২০১৭-এর ১২ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের পর তিনিও পদত্যাগ করেন। সে সময় ধারণা করা হয়, তাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব না দেয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন। পৌনে তিন বছরের কিছু বেশি সময় তিনি দায়িত্ব পালন করলেন।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য