২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত হঠাৎ বাড়ল।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভাইরাসটিতে সাতজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ে নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৫০৯ জন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
দেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জনের দেহে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭০ জনের।
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ২৫ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন এক দিনে ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল সরকার।
শনাক্তের এই সংখ্যাও গত ১৩ অক্টোবর বা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫১১ জন।
পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় যত জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২.২৫ শতাংশের মধ্যে ভাইরাসটির উপস্থিতি দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগেও ধারাবাহিকভাবে এক শতাংশের মধ্যে ছিল। সম্প্রতি তা ২ শতাংশ ছাড়ায়। বুধবার ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ২.২৭ শতাংশ।
২০২০ সালের মার্চে দেশে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসটি দুইবার ব্যাপক আকারে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। প্রথমবার প্রায় ১১ মাস মানুষকে ভোগানোর পর মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ ফেব্রুয়ারি।
তত দিনে মারা যায় ৮ হাজার ১৬১ জন। শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৫ জন।
তবে নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মার্চের শেষেই আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে দেশে। এই পরিস্থিতি চলে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। ৪ অক্টোবর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ ছিল আরও প্রাণঘাতী। যেদিন এই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে, সেদিন পর্যন্ত দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৫৯১ জনে। সেদিন পর্যন্ত শনাক্ত ছিল ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৮ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে হলে কোনো দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
তবে ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলা আর প্রতিবেশী ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ আছে দেশে। এরই মধ্যে দেশেও বেশ কয়েকজনের শরীরে ওমিক্রন ধরা পড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫২টি ল্যাবে ২২ হাজার ৬৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তির চারজন পুরুষ, তিনজন নারী। তাদের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব একজন, ষাটোর্ধ্ব ছয়। মারা যাওয়া ব্যক্তির পাঁচজন ঢাকার বাসিন্দা। বাকি দুইজন চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর।
গত এক দিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৯৫ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮১১ জন। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় দেশে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন রোগী।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৫ জন।
নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫১৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩৫১ জন ডেঙ্গু রোগী।
চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১ হাজার ৭৯ জন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সারা দেশে ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন। একই সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪৮ জন রোগী।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন ও রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন।
একই সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চলতি বছরে ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে হাসপাতালে এসেছেন ১৮ হাজার ৫৮৯ জন। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ শতাংশ নারী।
আর শনিবার সকাল পর্যন্ত সবশেষ তিনজনসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ১০৬ জন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর জেরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করেছে ওই রোগীর স্বজনরা। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাংচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘোষণা দেয়া হয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার সময় সিসিউতে ভর্তি থাকা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আবদুল আজিজ নামের এক রোগী মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই রোগীর মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তারা হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সজীব কাজিকে মারধর করেন। চালানো হয় ভাংচুর।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহিদুল মোস্তফা জানান, সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরও কয়েক যুবক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ভাংচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার নানা সরঞ্জাম।
মারধরে আহত চিকিৎসক সজীব কাজীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক চিকিৎসক সজীবকে ধরে মারধর করছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যান। হামলাকারীদের মধ্যে দুজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের এই দুই যুবক মারা যাওয়া রোগীর স্বজন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চিকিৎসককে মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন তারা। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসক-ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর কর্মচারীরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, ‘যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোনো স্টাফই কাজে ফিরবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তারপর সেবা।’
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, ‘গেল তিন মাস কোনো ধরনের বেতন পাইনি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের ওপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে কিভাবে কাজ করবো আমরা?’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (প্রশাসন) ডা. জি. আর. এম জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে আলোচনায় বসেছেন চিকিৎসক-নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈঠকটিতে সিদ্ধান্ত না এলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে পারেন হাসপাতালে দায়িত্বরতরা।’
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়কালে হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
চলতি বছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মোট ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৩৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে দেশের হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
অধিদফতর আরও জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ৬৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, ৯৩৮ জন। বাকি ৭২৬ জন অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে শিশুসহ তিনজন। মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। তাদের বয়স ১১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৯৫ জন।
এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৩ রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২০৭ জন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪০৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ২৫২ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯২, খুলনায় ১৫ ও ময়মনসিংহে আটজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ২০৭ জন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। এ সময় মারা যাওয়া ৯৫ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএমওসহ ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে মেডিক্যাল কলেজের একদল শিক্ষার্থী মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে বহির্বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন ১৭ জন।
অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা চিকিৎসকরা বুধবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেননি। এতে সকাল থেকে চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। বিশেষ করে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসক না পেয়ে অনেক রোগী দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে গেছেন। অনেকে আবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি চিকিৎসক সেবা দিয়ে থাকেন। গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।
ষাটোর্ধ্ব কাকলী আক্তারের বাড়ি ডুমুরিয়ায়। এক মাস আগে বহির্বিভাগের চিকিৎসক সুমন রায়ের পরামর্শ নিয়েছিলেন তিনি। বুধবার ছিল ফলোআপ। ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কাকলী বলেন, ‘এভাবে চিকিৎসকদের ওপর নির্যাতন হলে তাদের সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকবে কিভাবে? যদি কেউ কোনো অন্যায় করে তবে রাষ্ট্রের আইনে শাস্তি পাবে। খেয়াল-খুশিমতো কেউ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে না।’
সুমন রায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও)। তিনি বহির্বিভাগের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী দেখেন। অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় বুধবার তিনি চেম্বারে আসেননি।
মোবাইল ফোনে কথা হলে সুমন রায় বলেন, ‘গতকাল যেভাবে মারমুখী ভূমিকায় আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আজ হাসপাতালে যাইনি। নিজেদের সম্মান যদি না থাকে তাহলে চিকিৎসা সেবা দেব কীভাবে।’
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামানকে চাপ দিয়ে দুটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এর একটি ছিল আক্তারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র ও অন্যটি ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার।
এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ চিকিৎসক আবার কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও নন। এছাড়াও তাদের মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকই বহির্বিভাগে রোগী দেখেন।
উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কখনও আওয়ামী লীগ বা স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি তা দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। সরকারি চাকরি ছাড়া কোনোদিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন রেকর্ড নেই।
‘বরং আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বার বার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। সততার কারণে প্রমোশন দেয়নি। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। অথচ আমাকে তারা জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজ থেকে মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এনে আমাকে নানারকম হুমকি দিল। অন্যায়ভাবে কাগজে স্বাক্ষরও করিয়ে নিল। আর যে ৪১ জন চিকিৎসককে তিনি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেন, তারা হাসপালতে না এলে চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেন, ‘উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। কেন তাকে পদত্যাগ করানো হল সে বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অবগত নন।’
অভিযোগ রয়েছে, ‘ডা. মোস্তফা কামাল বরাবরই কিছুটা উগ্র স্বভাবের। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডা. মোস্তফা কামাল নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তড়িৎ কান্তি ঘোষকে রড দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনার পর তার বিষয়ে সাধারণ চিকিৎসদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়। তিনি সেই সুযোগ নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে সঙ্গে রেখে মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটান তিনি।
কেন চাপ দিয়ে পদত্যাগ ও চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করানো হল- এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডা. মোস্তফা কামালকে বার বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতিসহ আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। সে সুবাদে বুধবার থেকে রুটিন অনুযায়ী পুরোদমে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। একইসঙ্গে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
চিকিৎসকদের পক্ষে ঢাকা মেডিক্যালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আবদুল আহাদ বলেন, ‘এখন থেকে সারা দেশের সব হাসপাতালে আগের মতো পূর্ণ সেবা চালু থাকবে। আজ বিকেলে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে তাদের (চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী) পক্ষ থেকে উত্থাপিত চারটি দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এসব দাবির বিষয়ে সচিব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের সেবা চালুর ঘোষণা দিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস টেকনোলজির (বিইইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
চিকিৎসার অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে দীপ্তর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঢামেক অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধর করে। এ সময় নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের আহত হন।
একই রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে কুপিয়ে আহত করে। এ হামলায় একজন মারা যান। এ ঘটনার পরপরই নিরাপত্তার দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা চাপাতিসহ চারজনকে আটক করে নিয়ে যান।
ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করে।
এসব ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতিতে যান মেডিক্যালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। একই দাবিতে সারা দেশে চিকিৎসা না দিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে শত শত রোগী দুর্ভোগে পড়েন। পরদিন রোববার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য