নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যে সংলাপ শুরু করেছেন, তাতে বিএনপির অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তকে ‘খারাপ খবর’ বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তবে বিএনপি ২০১৮ সালের মতো আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেবে বলে মনে করেন তিনি। এর আগে দলটি ‘পানি ঘোলা করবে’ বলেও মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়।
কাদের বলেন, ‘বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপে আসবে না জানিয়েছে। এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য খারাপ খবর।’
নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপে না এলেও বিএনপি ভোট থেকে দূরে থাকবে না বলেও মনে করেন কাদের। বলেন, ‘গাধা যেমন পানি ঘোলা করে খায়, বিএনপিও পানি ঘোলা করে নির্বাচনে আসবে।’
২০১৩ সালে রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এবং ২০১৮ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি সংলাপের যে উদ্যোগ নেন, তাতে যোগ দিয়েছিল বিএনপি। তবে এই দুই কমিশনের অধীনে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলটির প্রবল আপত্তি আছে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। আর নতুন যে কমিশন গঠন হবে, সেটিই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। আর এই কমিশন গঠনে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয়বারের মতো সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি প্রথম দিন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বসার দিন রিজভী এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেন। দুদিন পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা সংলাপে যোগ দেয়ার চিঠি পাননি। পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে গত ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, সংলাপকে ‘সং’-এর আলাপ বলে আবার কটাক্ষ করেন। ‘সং’ মাসে ‘জোকার’- এই বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
গত ২৭ ডিসেম্বরে বিএনপির আরেক মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী এক আলোচনায় বলেন ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংলাপের কথা বলেন, কীসের সংলাপ? কী নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন? এই নির্বাচন কমিশন তো আপনারাই গঠন করেছিলেন। যার প্রতিফলন দেখছি, জনপদের পর জনপদ, বিভিন্ন ইউনিয়নে রক্ত ঝরছে। গতকালও তিনজন নিহত হয়েছে। এই হচ্ছে তাদের চালচিত্র।’
বিএনপি আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না আসার ঘোষণা রয়েছে তাদের। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দেয়নি। তবে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র পরিচয়ে লড়ছেন। বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে, দলটির নেতারা একই জেলায় একই প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন। কোথাও কোথাও সেই প্রতীক না পেলে বিকল্প হিসেবে যে প্রতীক তারা বেছে নিচ্ছেন, সেখানেও বেশ কয়েকজন নিচ্ছেন নির্দিষ্ট একটি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) ভোটে আশার উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এটা হলো তাদের এজেন্ডা। কারণ, তারা জানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অর্জনে জনগণের ভোটে বিএনপি জয়লাভ করতে পারবে না।’
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার বিষয়ে সংলাপে অনেক রাজনৈতিক দল যে প্রস্তাব দিয়েছে সে বিষয়ে কাদের বলেন, ‘এবারই আইনটা হতো, মহামারির কারণে সম্ভব হয়নি, এবার না হলে আগামীবার হবে।
‘এবার সময় একেবারেই হাতে নেই। এই সময়ে আইন করার মতো পরিস্থিতি একেবারেই ছিল না।’
সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘সার্চ কমিটি গঠন, যেটা এবার হচ্ছে, গতবারও হয়েছে, সেটাও আইনের বাইরে নয়, নিয়মের বাইরে নয়, সংবিধানের বাইরে নয়।’
নারায়ণগঞ্জে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী জিতবেন বলেও আশা করেন কাদের। বলেন, ‘আমরা গত দুই নির্বাচনে আমরা নারায়ণগঞ্জে জয়লাভ করেছি, এবারও জয়লাভের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। জনমতের সমর্থনের পাল্লা আমাদের প্রার্থীর দিকেই ভারী।’
রাজধানী লাগোয়া শহরটিতে দলের ভেতর কোনো রকম দ্বন্দ্ব থাকা চলবে না-সেটি আবার জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘দল করলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। নিজেদের মধ্যে ছোটখাট কিছু হয়ে থাকলে সেটা নিরসন হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুচিত রায় নন্দি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেল জুনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন ‘গণসংহতি আন্দোলন’। দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর (চ্যাপটার ৬এ) বিধানবলে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। দলটির প্রতীক ‘মাথাল’। নিবন্ধন নম্বর ৫৩।
নির্বাচন কমিশনের সচিব শফিউল আজিম মঙ্গলবার গণসংহতি আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে দলটির নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর করেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশনে দেয়া রায় ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ চ্যাপ্টার ৬এ-এর বিধান অনুযায়ী গণসংহতি আন্দোলনকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চেয়ে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করে গণসংহতি আন্দোলন। তবে ইসি থেকে তা অগ্রাহ্য হওয়ায় গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক মো. জোনায়েদ সাকি হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল আবেদন করেন। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর কমিশন তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগের আগে বিদায়ী হাবিবুল আওয়াল কমিশন আপিল না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে নির্বাচন কমিশনের করা আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একই দিনে দলটির বিষয়ে কারও কোনও দাবি-আপত্তি রয়েছে কিনা, সেজন্য ছয় দিনের সময় দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব। গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ছিল তার শেষ সময়।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দুপুর বেড়া আড়াইটার দিকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর ১২টা থেকেই স্লোগান দিতে দিতে দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এর আগে বুধবার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী শাসনবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। পরে সমাবেশের তারিখ পিছিয়ে মঙ্গলবার নির্ধারণ করা হয়।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকার বেশিদিন থাকলে জনগণ তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘একটি জরিপে বলা হয়েছে- ৮০ শতাংশ লোক চায় যে যতদিন খুশি এই সরকার থাকবে। জানি না এই কথা তারা কোথা থেকে পেল, কীভাবে পেল। কিন্তু জনগণ এটা কোনোদিনই মেনে নেবে না।’
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।
ওই জরিপের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি পত্রিকার নাম বলছি না। একটা জরিপের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে। এই জরিপ কারা করেছে আমি ঠিক বলতে পারব না। এ ধরনের কথা, রিপোর্ট আমার মনে হয় ভেবেচিন্তে করা উচিত। যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখতে বেশ কিছু সংগঠন ও গোষ্ঠী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একেবারেই পরিবর্তন করে দেবে। সব সংস্কার তারাই করে দেবে। তাহলে তো জনগণের দরকার নেই, পার্লামেন্টের দরকার নেই।’
নতুন দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে সুযোগ তৈরি করেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার, আমাদের ব্যবস্থাকে জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে নিয়ে আসার। সেটা কি নস্যাৎ করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে?
‘যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, এই সরকার যাদের দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে যখন বলেন নতুন দল তৈরি করতে হবে, তখন বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। যদি বলেন নতুন দল তৈরি করতে হবে, তাহলে জনগণ কী করে বুঝবে যে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন?’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এ সময় আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
আরও পড়ুন:বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে এখনও বিপুলসংখ্যক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। আর সেসব অস্ত্র এখন জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ইউনিয়নের চক আকাশতারা গ্রামে সোমবার ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বগুড়ায় শহীদ কমর উদ্দিন খান, শাকিল হোসেন ও জিল্লুর রহমানের পরিবারের হাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে এই অনুদান হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সংগঠনের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জমান তালুকদার লালু, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, জাসাস নেতা জাহেদুল আলম হিটু, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও অস্ত্র ব্যবহারের খবর পাচ্ছি।
‘গণম্যধমে খবর এসেছে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও লাইসেন্স বাতিল হওয়া এক হাজার ৮৮৮টি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। কেন এখনও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি?’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া গণভবন থেকে এসএসএফের অনেক আধুনিক অস্ত্র খোয়া গেছে। এগুলো উদ্ধার করতে না পারলে জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকেরা লাখ লাখ কোটি কালো টাকা নিয়ে বসে আছে। দেশের নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ১৮.৩৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৭.৬০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাকি টাকা আছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হাতে; তাদের ব্যবসায়ীদের হাতে। এ টাকা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেটি আমরা গোপালগঞ্জে দেখলাম।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শুনলাম শেখ হাসিনা সীমান্তের কাছাকাছি আছেন। তিনি দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এ খবর পেয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আবারও রক্তাক্ত পথ বেছে নিয়েছে। তার প্রভুরা বাংলাদেশে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির জন্য বসে আছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে আরো রক্ত ঝরবে, আরও গণহত্যা হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জুডিশিয়াল ক্যু করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরানোর ষড়যন্ত্র থেকে ছাত্র-জনতা রক্ষা করেছে। ফ্যাসিবাদের বিদেশি বন্ধুরা প্রতি-বিপ্লবের ইন্ধন দিচ্ছে।’
সোমবার মুন্সীগঞ্জ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন সম্মেলন এবং গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নানা দাবি তোলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ১৫ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন? দেশের মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও তাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে। হিন্দু ভাইদের আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।’
নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে জামায়াত যৌক্তিক সময় দিতে রাজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তা না খুব শর্ট না খুব লং। ফ্যাসিবাদের পেতাত্মারা অনেক ক্ষেত্রে এখনও রয়েছে। তাই একটা নির্বাচন দিতে ন্যূনতম যতটুকু সংস্কার দরকার তা করতে হবে। রাতের ভোট দিনে আর হতে দেবে না বাংলাদেশের মানুষ।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘তাদের কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে। স্বৈরশাসক থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঈদের আনন্দ করেছে। কিন্তু শহীদদের পরিবারগুলো ঘরের কোণায় কান্নায় জর্জরিত ছিলো।
‘অনেকে আহত হয়েছে। কে হাত-কেউ কেউ চোখ হারিয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের ঘোষণা যেন মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ না থাকে। শহীদের কাছে আমরা ঋণী। সেই ঋণ আমাদেরকে শোধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাতজনের পরিবারকে জামায়াতের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আ. জ. ম রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মো. সাইফুল আলম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল জব্বার ও ইসলামী ছাত্রশিবির মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনা তার বাবার মৃত্যুর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, প্রতিশোধের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগের নেতাদের রেখে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।
রোববার ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার আয়োজনে এক গণসমাবেশে মামুনুল হক একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতারাই শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়া যায় সেই চিন্তা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন।’
মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা তার পরিবারের কাউকে রাজনীতিতে আনেননি। কারণ দেশের মানুষের ওপর তার কোনো আস্থা ছিলো না। তার চিন্তায়ই ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন।
‘প্রতিশোধের রাজনীতি করে দেশটাকে ধ্বংস করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিলোনা। তিনি দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আরেক দেশকে ট্রানজিট দিয়ে দেন। কারণ তিনি এ দেশের উন্নতি চাননি। দেশটাকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করাই ছিলো হাসিনার রাজনীতি।’
বাংলাদেশ খেলাফল মজলিস ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাঈদ আহমদ সাঈফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা এনামুল হক মূসা।
বক্তব্য শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ৪২২ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
‘বাকশালের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দেশের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, “সেই ধারাবাহিকতায়, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম করে। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘জুলাই গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন মানুষ, যার মাঝে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
“দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।”
অভ্যুত্থানে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘বস্তুত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ ১ হাজার ৫৫১ জন। গুম ৪২৩ জন (সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন)। আসামি ৬০ লক্ষ এবং মামলা দেড় লক্ষ। এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়; বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।
‘আমরা বিশ্বাস করি, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল—গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী—তাদের সকলের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সকল শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য