ছোট-বড় ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী নিয়ে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর আয়তনের দেশের বড় হাওর হাকালুকি। বর্ষায় নদী-খাল প্লাবিত হয়ে এই হাওর ২৩ হাজার হেক্টরের বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়। শুকনা মৌসুমে যেন মরুভূমি। তখন শুরু হয় এর অন্যতম ঐতিহ্য ‘বাথান’ (গবাদিপশুর রাখালি) ব্যবসা।
কিছুদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ পেশায় জড়িতরা। গো-খাদ্য সংকট, বাথানে পর্যাপ্ত গবাদিপশু না পাওয়া, চোরের উপদ্রব এবং সংগৃহীত দুধ বাজারজাত করার সমস্যাসহ নানা প্রতিকূলতায় একসময়ের পুঁজিহীন লাভজনক এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। গত দুই দশকে হাকালুকিতে কমেছে অর্ধেকেরও বেশি বাথান।
হাকালুকি এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রতিবছর শুকনা মৌসুমে হাকালুকি তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার গৃহস্থ তাদের গবাদি পশুর খাবার নিয়ে সংকটে পড়েন। হাওরে গো-খাদ্যের উর্বর ভূমি থাকায় সেখানকার খোলা প্রান্তরে গরু-মহিষ পাঠিয়ে দেন মালিকরা। এ জন্য বাথান থেকে গবাদিপশু ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এগুলোর মালিকরা খুশি হয়ে পাঁচ শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত দেন।
আর দুধেল গাভীর জন্য মালিকদের টাকা দিতে হয় না। প্রতিটি ছোট বাথানে ২০০ থেকে ৪০০ এবং বড় বাথানে ৫০০ থেকে ৮০০ গরু-মহিষ রাখা হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বাথানে থাকা গরু-মহিষ থেকে দুধ ও গোবর সংগ্রহ করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ছোট বাথানে ৭-৮ জন, বড় বাথানে ১০ থেকে ১২ জন লোক মাসিক পারিশ্রমিকে কাজ করেন।
প্রতিদিন সকালে বাথানের কাজে নিয়োজিত রাখালরা গাভী থেকে দুধ দোয়ানোর পর গরু-মহিষ সারা দিন বিস্তীর্ণ হাওরে চড়ে বেড়ায়। সন্ধ্যা হলে আবার নির্দিষ্ট স্থানে এনে গবাদি পশুগুলো বেঁধে রাখেন। হাওরে রাত কাটানো কষ্টকর হলেও সেখানে তাঁবু টাঙিয়ে থাকেন। এতে এই মৌসুমে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
প্রতিটি বাথানে থাকা গাভী থেকে দৈনিক ৭০-৮০ লিটার থেকে দেড় শ লিটার পর্যন্ত সংগৃহীত দুধ আশপাশের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ছানা তৈরির জন্য বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়। এভাবেই হাওরের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় এ ব্যবসা চলে আসছিল যুগের পর যুগ, সম্প্রতি যাতে ভাটার টান লেগেছে।
হাওরে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। বাথানে প্রয়োজনীয় গবাদিপশুও আর আসছে না। যে দুধ সংগ্রহ করা হয়, তা বাজারজাত করতে সমস্যা হয়। ‘বাথান’ ব্যবসায় সেই রমরমা নেই। এ পেশায় জড়িতরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
হাওরের কালাপানি, ফুটবিল, টেকুনা, চকিয়া, নাগুয়া বিল এলাকায় ১৫টির বেশি ছোট-বড় বাথান রয়েছে।
বাথানের গবাদিপশু চরানোয় ব্যস্ত শ্রমিক (রাখাল) কয়েছ মিয়া, তানভীর, মাজিদ আলী, ছমর মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বর্ষাকালে কেউ নৌকায় বালু-ইট পরিবহন, কেউ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আশ্বিন-কার্তিক মাস থেকে চৈত্র-বৈশাখ পর্যন্ত শুধু বিল ছাড়া হাওরে পানি থাকে না। তখন রোজগারের জন্য বাথানের গরু-মহিষ হাওরে চরানো, পরিচর্যা, দুধ দোয়ানো ও রাতে পাহারা দিতে হয়। এ জন্য তারা কাজ অনুযায়ী মাসে কেউ ১০ হাজার টাকা, কেউ ৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান।
তারা বলেন, বিল ও জলাশয়ের তীরে প্রচুর ঘাস থাকে। কিন্তু বিলের ইজারাদারদের ও ক্ষেতের মালিকদের নিষেধের কারণে হাওরে আগের মতো গরু-মহিষ চরানো যায় না। এ ছাড়া বিল ও জলাশয়ের পাশে পাখি শিকারিদের ফেলে রাখা বিষটোপের কারণে গরু-মহিষ চরিয়ে ঘাস খাওয়ানো যায় না, ঘাস কেটে এনে খাওয়াতে হয়। এটি কষ্টসাধ্য।
কালাপানি, টেকুনা ও নাগুয়া বিল এলাকায় থাকা বাথানের মালিক অশোক মিয়া, হীরা মিয়া, লয়েছ আহমদ ও তুহিন আলী জানান, কুলাউড়া জুড়ীর বিভিন্ন গ্রামের লোকজন তাদের গরু-মহিষ বাথানে দিয়ে যান। গত ৭-৮ বছর ধরে বাথানের সংখ্যা কমেছে। গরু-মহিষের সংখ্যাও কমেছে অনেক।
আগে হাওরের কুলাউড়া ও জুড়ী অংশে ৬০-৭০টি বাথান ছিল। আগে একেকটি বাথানের জন্য ৩০০ থেকে ৭০০ গরু-মহিষ পাওয়া যেত। প্রতিদিন ৬০-৭০ লিটার থেকে ১০০ লিটারের বেশি দুধ সংগ্রহ করা যেত।
এখন বড় একেকটি বাথানে খুব বেশি হলে ৩০০ থেকে ৪০০ গরু-মহিষ আছে। দিনে বড়জোর ২৫ থেকে ৩০ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
বাথান মালিকরা জানান, অনেক বাথানে ৫-৬ জন মিলে গরু-মহিষ এনে নিজেরাই দেখাশোনা করতেন। আবার কেউ কেউ বেতন দিয়ে ৭-৮ জন লোক রেখে বাথানের গরু-মহিষ দেখাশোনা করতেন। বছরের ৫ থেকে ৬ মাস এ ব্যবসায় ভালোই লাভ হতো।
হাওরে এখন খরা বেড়েছে। যখন-তখন বজ্রবৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে থাকা গরু-মহিষ অসুস্থ হয়ে যায়। তখন চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বাথান কমে যাওয়ায় রাতে চোরের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এতে মালিকরা তাদের গরু-মহিষ আর বাথানে দিতে চান না। আগে একটি বাথানে ৫-৬ জন রাখাল কাজ করতেন, কিন্তু এখন গরু-মহিষ কমে যাওয়ায় ৩-৪ জনের বেতন চালানো অনেক কষ্টসাধ্য। তাই অনেকে বাথান ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা ডা. গোলাম মোহাম্মদ মেহেদী বলেন, ‘আগে হাওর ও আশপাশের এলাকায় গবাদিপশু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি রায়হান আহমদ চিকিৎসা দিতেন। উনি মারা যাওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য। লোকবল সংকট ও যাতায়াত কষ্টসাধ্য হওয়ায় যখন-তখন হাওরে গিয়ে বাথানের অসুস্থ গবাদিপশুর চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। তবু আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
‘হাওরে গো-খাদ্য সংকট, যেখানে-সেখানে শিকারিদের ফেলে রাখা বিষটোপ খেয়ে ও শেড (ছাউনি) ছাড়া খোলা আকাশের নিচে থাকায় গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে যায়। অনেক মালিক এখন আর তাদের গরু-মহিষ বাথানে দিতে চান না। এ জন্য হয়তো বাথানের আগ্রহ কমে যাচ্ছে অনেকের।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের দখলে থাকা পাঁচ একরের বেশি জায়গা উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
রোববার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৩১ জন শ্রমিক নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমিটরির সামনে লাউয়াছড়ার জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে বন বিভাগ।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান, রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বনবিভাগ জানায়, জায়গাটি দখল করে রেখেছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ। ২০১৮ সাল থেকে বন বিভাগ বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও আব্দুস শহীদের দখল থেকে বনের ওই জমি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা জায়গাটি উদ্ধার করেছি। এখানে পাঁচ একরের বেশি জায়গা বেদখল হয়ে ছিল। সেখানে কিছু জায়গায় লেবু গাছ আর কিছু জায়গা ফাঁকা পড়ে ছিলো। আমরা সেই জায়গাগুলোতে বন্যপ্রাণীর উপযোগী গাছের চারা লাগিয়েছি।’
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
সোমবার ভোরে উখিয়ার জামতলী ও কুতুপালং লাল পাহাড়ে এই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন।
নিহতদের একজন হলেন উখিয়ার ১৫ নম্বর জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-৮ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল বশর। অপরজনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ওসি শামীম হোসেন জানান, সোমবার ভোরে উখিয়ার জামতলী লাল পাহাড় ক্যাম্পে আরসা ও আরএসওর দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়৷ পাল্টা-পাল্টি গোলাগুলি চলে বেশ কিছুক্ষণ। পরে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থল তল্লাশির সময় দুই রোহিঙ্গার মরদেহ পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস।
সোমবার সকাল ১০টায় ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে জুলুস শুরু হয়।
এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ।
জুলুস বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর বামে মোড় নিয়ে বিবির হাট থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ফিরে আসবে। এ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এছাড়া নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শুলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হয়েছে।
এর আগে ফজরের নামাজের পর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, জিপে করে আলমগীর খানকাহতে আসতে শুরু করেন ভক্তরা। অনেকেই দীর্ঘপথ হেঁটে জুলুসে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন। সমস্বরে ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে অংশ নিয়েছেন শিশু থেকে বৃদ্ধরাও। সকাল সাড়ে ৯টার দিকেই সুন্নিয়া মাদরাসা, বিবিরহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট এলাকা হয়ে পড়ে লোকে লোকারণ্য।
এদিকে জুলুস উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। নগরীর মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তোরণ। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও রয়েছে। বসেছে খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রীর অস্থায়ী দোকান।
বিভিন্ন মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। জুলুসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
জশনে জুলুস মিডিয়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) তিনশ’ প্রশিক্ষিত সদস্য এবার জুলুসের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটির কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
জশনে জুলুসের আয়োজক প্রতিষ্ঠান আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের তথ্য অনুযায়ী, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া এই জশনে জুলুস চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবীর জুলুসে এত বিশাল জমায়েত আর কোথাও হয় না।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জুডিশিয়াল ক্যু করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরানোর ষড়যন্ত্র থেকে ছাত্র-জনতা রক্ষা করেছে। ফ্যাসিবাদের বিদেশি বন্ধুরা প্রতি-বিপ্লবের ইন্ধন দিচ্ছে।’
সোমবার মুন্সীগঞ্জ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন সম্মেলন এবং গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারকে অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নানা দাবি তোলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ১৫ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন? দেশের মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও তাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে। হিন্দু ভাইদের আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।’
নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে জামায়াত যৌক্তিক সময় দিতে রাজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে তা না খুব শর্ট না খুব লং। ফ্যাসিবাদের পেতাত্মারা অনেক ক্ষেত্রে এখনও রয়েছে। তাই একটা নির্বাচন দিতে ন্যূনতম যতটুকু সংস্কার দরকার তা করতে হবে। রাতের ভোট দিনে আর হতে দেবে না বাংলাদেশের মানুষ।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘তাদের কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে। স্বৈরশাসক থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঈদের আনন্দ করেছে। কিন্তু শহীদদের পরিবারগুলো ঘরের কোণায় কান্নায় জর্জরিত ছিলো।
‘অনেকে আহত হয়েছে। কে হাত-কেউ কেউ চোখ হারিয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের ঘোষণা যেন মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ না থাকে। শহীদের কাছে আমরা ঋণী। সেই ঋণ আমাদেরকে শোধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাতজনের পরিবারকে জামায়াতের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আ. জ. ম রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মো. সাইফুল আলম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল জব্বার ও ইসলামী ছাত্রশিবির মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:নানা ধরনের সবজির মধ্যে বিশেষ একটি জায়গা দখল করে আছে ‘কাঁকরোল’। আর ব্যাপকভাবে এই সবজির চাষ হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম গোমড়ায়। গ্রামটিতে বসবাসকারী সবাই বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন, যার মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। তাই গোমড়া গ্রামটি এখন ‘কাঁকরোল গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুর। এখানে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘গোমড়া’। এই গ্রামের চারশ’ একর জমিতে প্রায় ১২শ’ কৃষক কাঁকরোল চাষকে তাদের জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরজমিনে জানা যায়, এই এলাকায় কয়েক বছর আগেও পানি ও বিদুতের অভাবে বহু জমি পতিত ছিলো। এখন এ দুটি সুবিধা পাওয়ায় আর পতিত পড়ে থাকছে না এসব জমি। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে গ্রামের প্রায় সবাই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করছেন।
শরৎ ঋতুর এই সময়টাতে পুরো এলাকার সবজির ক্ষেত কাঁকরোলে ছেয়ে গেছে। যদিও এসব ক্ষেতে গরম ও শীতের আগাম সবজি বেশি আবাদ করেন স্থানীয়রা। এখানকার উৎপাদিত সবজির মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
গোমড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে এই এলাকায় পানির জন্য প্রায় সব জমিই পতিত থাকতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ আসায় পানি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আবাদের আওতায় এসেছে অনেক জমি।
‘আমরা মৌসুমভিত্তিক সবজির আবাদ করে থাকি। আমরা এখন সবজির মধ্যে কাঁকরোল লাগিয়েছি। সবজি আবাদ করে এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।’
কৃষক হরমুজ আলী বলেন, ‘এটা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় আমরা সবজির আবাদই করি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোল লাগাইছি। আমি এবার কাঁকরোল বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হয়েছি। পোলাপানের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পাঁচ সদস্যের সংসার চলছে এই সবজি আবাদ করেই।’
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। আগে কী যে কষ্ট করছি! মানষের জমিতে সারাদিন কাম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাইছি। কোনো কোনোদিন কামও পাইতাম না। এই টাকা নিয়া বাজার করবার গেলে কষ্ট হইছে। এখন বাড়ির পাশে রহমত ভাইয়ের জমিন বাগি (বর্গা) নিয়া শুরু করছি কাঁকরোলের চাষ। এখন আল্লাহর রহমতে নিজেরা ভালা আছি।’
তবে স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ রয়েছে গ্রামের রাস্তা-ঘাট কাঁচা নিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এদিকে কাঁচা রাস্তা হওয়ায় আমরা সবজি বাজারে তুলতে পারি না। নিলেও খরচ অনেক পড়ে যাওয়ায় লাভ কম হয়। সময়মতো বাজারে না নেয়ায় সঠিক দামও পাই না। আমরা কৃষকরা অবহেলিত।’
কৃষক খাইরুল বলেন, ‘এই এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা করলে আমাদের খুব উপকার হবে। আমরা কৃষকরা সবজি আবাদ করে দামটা বেশি পাইতাম। খারাপ রাস্তায় সব গাড়ি সহজে আসবার চায় না। আসলেও ভাড়া বেশি পইড়া যায়। এজন্য লাভটা কম হয়।’
যেভাবে চাষ
কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে, যা দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। মার্চ ও এপ্রিলে এই সবজির চাষ করা হয়। চারা গজানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। কাঁকরোল লতানো গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। তাই বাগানে দু’ধরনের গাছ না থাকলে পরাগায়ন ও ফলন কম হয়।
চাষে খরচ ও লাভ কেমন
কৃষকেরা বলছেন, কাঁকরোল চাষে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় খরচ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়ে থাকে।
কাঁকরোলের উপকারিতা
কাঁকরোল অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি৷ এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে৷ কাঁকরোলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না; ত্বককে করে উজ্জ্বল। এছাড়া কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার জানান, পাহাড়ের পাদদেশে কাঁকরোলের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। সবজি চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই সবজি কৃষক সরাসরি ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছে। সবজির মান ভালো হওয়ায় কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো।
‘আমি মনে করি অন্যান্য কৃষি উদ্যোক্তা জমি ফেলে না রেখে মৌসুমভিত্তিক সবজি আবাদ করলে অবশ্যই লাভবান হবে। এ বছর এই উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোলের আবাদ হয়েছে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুলশী গ্রামের শতবর্ষী অচিন বৃক্ষটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। গাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বৃক্ষপ্রেমিরা ছুটে আসতেন। শনিবার রাতে ঝড়ে গাছটি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশী নামক স্থানে উঁচু ঢিবিতে শতবর্ষী গাছটি ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এই গাছে ফলের স্বাদ অনেকটা ক্ষিরের মতো। তাই স্থানীয়রা এই বৃক্ষের নাম দিয়েছিল ‘খিরির গাছ’।
আর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অচেনা এই গাছটির নামকরণ করা হয় ‘বৃক্ষ মানিক’।
গাছটিতে ফল ধরলেও সেই ফলের বীজ থেকে কোনো চারা জন্মানো সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেও এটির কোনো বংশবিস্তার হয়নি। ফলে জন্ম নেয়ার পর থেকে একাই শত শত বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাছটি।
সবচেয়ে প্রাচীন এই বৃক্ষ ইতোমধ্যে নাটোর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। গাছটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৫০ ফুট। গাছটি বিভিন্ন গবেষকও পরিদর্শন করেছেন। বিরল প্রজাতির এই গাছের সংখ্যা দেশে হাতেগোনা তিন থেকে চারটি রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান হোসেন বলেন, “এই গাছের বয়স কত তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। তারা ছোটবেলা থেকেই এ গাছটি দেখছেন। তার বাবাও দেখেছেন। তবে গাছটির বয়স অনেক হবে।
“জ্যৈষ্ঠ মাসে আঙ্গুর ফলের মতো ফল ধরে। খেতেও খুব সুস্বাদু। ফলের ঘ্রাণ খিরের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা গাছটির নাম ‘খিরির গাছ’ রেখেছিল। এ গাছটি দেখতে বহু দূর থেকে মানুষ আসতেন। অনেকে এখানে এসে মানতও করতেন।”
হাবিবুর রহমান নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই গাছটি একইরকম দেখেছি। আসলে এটির সঠিক বয়স কেউ জানে না। বাবা-দাদারা গল্প করেন। তারাও ছোট বেলা থেকেই গাছটি দেখেছেন।
‘তবে গাছটি বিশাল, যা খুব কমই দেখা যায়। অনেকে পরিবার নিয়ে দেখতে আসতেন গাছটি। গাছটি ভেঙে পড়ায় পুরো গ্রামের মানুষ বেদনাহত হয়েছেন। তারা স্বজন হারানোর মতো বেদনা অনুভব করছেন।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল বাবু ও দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ চারজনকে আটক করেছে জনতা। সূত্র: ইউএনবি
রোববার রাতে সীমান্ত এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে ধোবাউড়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে।
পুলিশ জানায়, রাতে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার জন্য তিনজন যাত্রী নিয়ে একটি প্রাইভেটকারের চালক ধোবাউড়া সীমান্তে আসেন। স্থানীয় জনতা টের পেয়ে একাত্তর টেলিভিশনের এমডি মোজাম্মেল হক বাবু, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান ও সেলিম নামে প্রাইভেটকারের চালককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। আটক চারজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চান মিয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে দেননি।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে স্ত্রী-কন্যাসহ ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য