× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Miniket There is no rice there is rice
google_news print-icon

মিনিকেট: ধান নেই, চাল আছে

মিনিকেট-ধান-নেই-চাল-আছে
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষক দল সম্প্রতি দেশের ১০টি জেলা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। ধান যেহেতু নেই, এ নামে কোনো চালেরও অস্তিত্ব আসলে নেই। কোন কোন জাতের সরু ধানকে রাইস মিলে চকচকে করে পলিশ করে মিনিকেট নামে বাজারজাত করা হচ্ছে, সেটিও তারা শনাক্ত করেছে। বাজারে ‘মিনিকেট’ নামটা কোথা থেকে এলো, খোঁজার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বাজারে ‘মিনিকেট’ নামে যে চাল বিক্রি হয়, সেগুলো কোনোটাই মিনিকেট নয়। কারণ এ নামে কোনো ধান নেই। ভিন্ন ভিন্ন ধানের সরু চালকে বাজারে ‘মিনিকেট’ নাম দিয়ে বিক্রি করেন পরিবেশকরা। কেননা ‘মিনিকেট’ শব্দটি ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষক দল দেশের ১০টি জেলা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তাদের গবেষণা সমীক্ষার প্রতিবেদনে এটি বলা হয়েছে।

দেশে প্রায় আড়াই দশক ধরে ‘মিনিকেট’ নামে চাল বাজারজাত হচ্ছে। বাজারে চালু ধারণা হলো, এটি একটি বিশেষ জাতের চাল, যা দেখতে চিকন, ফর্সা এবং চকচকে। ফলে অনেক ভোক্তা বাড়তি খরচ দিয়ে হলেও কিনে খেয়েছেন মিনিকেট নামের চিকন চাল।

গবেষক দলের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘বাস্তবতা হলো- বিশ্বের কোথাও মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। বিজ্ঞানীরা এ নামে কোনো ধান আবিষ্কার করেননি। দেশেও মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই। তাই এ জাতের ধান উৎপাদনও হয় না। যেখানে ধান হিসেবে মিনিকেটের অস্তিত্বই নেই, সেখানে একই নামে চাল থাকার প্রশ্ন ওঠে না।’

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে বা বিক্রি হচ্ছে, তা আদৌ মিনিকেট নয়। মূলত বিআর-২৬, বিআর-২৮, বিআর-৩৩, ব্রি-৪৩, ৪৮ থেকে ৯৮ পর্যন্ত উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান এবং কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, আইআর-৫০, জাম্বু ও কাজললতা ধানের চালকে মিনিকেট চাল হিসেবে চালানো হচ্ছে। এসব ধানের চালকে মিল পর্যায়ে গ্রেডিং ও মিক্সড গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে পলিশ করে চকচকে করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিনিকেট কোনো জাত নয়, এটি একটি ব্র্যান্ড নাম। এ নামে বিভিন্ন চালকে ব্র্যান্ডিং করছেন অটোরাইস মিলাররা। তা করা হচ্ছে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেশি ক্রেতা টানতে এবং বাড়তি মুনাফা করতে।

গবেষণা প্রতিবেদনের এ তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় দেশে চাল প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খানের কাছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি সত্য- মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই।’

তিনি বলেন, ‘আসলে নাজিরশাইল (নাজিরশাহী), জিরাশাইল, শম্পা কাটারিসহ ব্রির বিভিন্ন জাতের ধানকে স্থানীয় পর্যায়ের মিলগুলো প্রসেস করে যে চাল পায়, তাকেই মিনিকেট বলে চালান মিলাররা।’

মিনিকেট: ধান নেই, চাল আছে

এটি করার কারণ জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের রুচিবোধে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দেশে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তারা মোটা চালের পরিবর্তে চিকন চালে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে চিকন চালের চাহিদা। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা আছে। চালকে প্রসেস করে মিনিকেট করা হচ্ছে। এখন এই চাল ভোক্তারা খাবেন কি খাবেন না– সে সিদ্ধান্ত ভোক্তাকেই নিতে হবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত এ সমীক্ষাটি চালানো হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলায়। এ সমীক্ষাটি তত্ত্বাবধান করেন খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম। গবেষক দল মাঠপর্যায়ে প্রান্তিক কৃষক, খামার মালিক, মিলার, মিল শ্রমিক, বিক্রেতা, ভোক্তা, কৃষিবিদ সবার সঙ্গে কথা বলেছে। দেশে কত জাতের ধান এবং কোন এলাকায় কোন জাতের ধান বেশি উৎপাদন হয়, সেগুলো কোথায় যায় এবং কী হয় সবদিক খতিয়ে দেখেছে গবেষক দল।

এভাবে মাঠপর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষক দল একমত হয়েছে, দেশে মিনিকেট নামে আদতে কোনো ধান নেই।

প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়, মিনিকেট চাল নিয়ে দেশে যা হচ্ছে, তার পুরোটাই মিথ্যা প্রচারণা। ভোক্তারা সেটি বুঝতেও পারছেন না। বাজারজাতকারীরা ভোক্তাকে অন্ধকারে রেখে প্রচলিত মিথ্যাকেই বাস্তবে ব্যাপক মাত্রায় বিশ্বাসযোগ্যতায় রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। এতে মিনিকেট চালের ব্যবসা চলছে রমরমা। প্রতি কেজি চালে দিতে হচ্ছে বাড়তি দাম। এতে পকেট কাটা যাচ্ছে ক্রেতার। অথচ ওই চালের ভাত খেয়ে ভোক্তার উপকার তো হচ্ছে না, বরং আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দেশে মোট ১৯ হাজার ৭৩৪টি চালকল আছে। এর মধ্যে ছোট পরিসরে আন্তজেলা বাণিজ্য পরিচালনাকারী সহস্রাধিক চালকল বিভিন্ন চিকন জাতের ধানকে চাল বানিয়ে মিনিকেট ব্র্যান্ড নাম দিয়ে বাজারে ছাড়ে। এ বাণিজ্যে অটোরাইস মিলারদের দাপট এখন দেশব্যাপী। এখন মিলারদের নামেও মিনিকেট ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। বিশেষ করে রশিদ, মোজাম্মেল, বিশ্বাস, সাকি, ডলফিন, জোড়া কবুতরসহ আরও অনেক ব্র্যান্ড বাজারে মিনিকেট চাল সরবরাহ করে আসছে।

চাল পরিচিত হবে ধানের নামে

খাদ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই গবেষণা প্রতিবেদন জোরালোভাবে বলেছে, যেহেতু মিনিকেট চাল অস্তিত্বহীন, তাই এ নামে চাল বাজারজাতকরণও অবৈধ। এ ধরনের ব্র্যান্ডিং দেশে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে হবে।

মিনিকেট নাম ব্যবহার বন্ধ হলে চিকন চালের বিকল্প কীভাবে পূরণ করা হবে তারও একটা সমাধান প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক উৎসের মাধ্যমেই চাল চিকন করার ওপর জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষকের সরাসরি উৎপাদিত ‍চিকন ধানকেই চাল বানিয়ে এই ধানের নামেই তা ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক আবিষ্কৃত অন্তত ১৫টি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধানবীজ (চিকন) সারা দেশে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে ওই সব ধানের উৎপাদন বাড়ানোরও ব্যাপক কর্মসূচি নিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএডিসি) উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

সুপারিশে দাবি করা হয়, এ প্রক্রিয়ায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে চিকন ধানের ব্যাপক মাত্রায় উৎপাদন সম্ভব হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী চিকন চালের শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে।

সুপারিশে মাঠের উৎপাদিত ধান মিলপর্যায়ে কোন মাত্রায় ছাঁটা হবে, সে বিষয়েও একটি নীতিমালা এবং তা বাস্তবায়নে মিলগুলোয় পরিদর্শন ও উৎপাদন তদারকি বাড়ানোর কথা বলা হয়।

মিনিকেট: ধান নেই, চাল আছে

এর পাশাপাশি চাল আকারে বাজারজাতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মিলার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সব বস্তায় ধানের জাত বা নাম লেখা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশও করা হয়।

সরকারের দায়িত্বশীলরা যা বলছেন

এ গবেষণার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এখন সরকারও জোরালোভাবে দাবি করছে মিনিকেট নামে ধান যেহেতু নেই, এ নামে চাল হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘মূলত চিকন বা সরু জিরাশাইল, শম্পা কাটারি ধান থেকে পাওয়া চালকে মিনিকেট বলা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বিআর-২৮, বিআর-২৯ ধান থেকে উৎপাদিত চালকেও মিনিকেট বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর আমরাও মিনিকেটই খুঁজছি।’

খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, “‘মিনিকেট’ আদৌ কোনো ধান-চালের নাম নয়। এটা একটা ব্র্যান্ড নেম। বিভিন্ন জাতের ধান কেটে যে চালই উৎপাদন করা হচ্ছে, সে চালকেই মিলাররা নাম দিচ্ছে মিনিকেট।”

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিআর-২৬, বিআর-২৮, বিআর-৩৩, ব্রি-৪৩, ৪৩, ৪৮ থেকে ৯৮ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান রয়েছে। দেশে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টনের যে ধান উৎপাদন হয়, তার উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে এই হাইব্রিড ধান। কিন্তু এত এত ধান মাঠে উৎপাদন হলেও তা আমরা বাজারে দেখতে পাই না। আবার যা দেখছি, তা তো মাঠে ফলাতে দেখছি না। অর্থাৎ বিষয়টি এখানেই স্পষ্ট যে ব্রি উদ্ভাবিত মাঠপর্যায়ের ধানকে সংগ্রহের পর মিলপর্যায়ে প্রসেস করে পাওয়া চালকে মিনিকেট বলে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।’

ব্রির ফলিত গবেষণা বিভাগের প্রধান গবেষক ড. মো. হুমায়ূন কবীর নিউজবাংলাকে জানান, মিনিকেট চালের ব্র্যান্ডিং বন্ধে করণীয় অনেক কিছু আছে। তবে সময় বেশি লাগলেও সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ব্রির আবিষ্কৃত অন্তত ১৫টি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধানবীজ (চিকন) সারা দেশে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ওই সব ধানের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া।’

মিনিকেট নামটা এলো কোথা থেকে

মিনিকেট নামে যদি কোনো ধান না-ই থেকে থাকে, তাহলে চালের বাজারে ‘মিনিকেট’ শব্দটা এলো কোথা থেকে? কারা দিল এ নাম?

দেশে ধান-চাল নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়। তবে মোটাদাগে সংখ্যাগরিষ্ঠদের বক্তব্য হলো মূলত স্থানীয় কৃষক ও মিলাররাই দেশে ‘মিনিকেট’ নামটির প্রচলন শুরু করে।

মিনিকেট: ধান নেই, চাল আছে

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, “মিনিকেট হলো মূলত চালের একটা ‘নিক নেম’। ভালো মানের চালকে আলাদাভাবে ব্র্যান্ডিং করতে স্থানীয় পর্যায়ের কিছু কৃষক ও মিল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ১৯৯০ সাল থেকে এই মিনিকেট নাম ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে ভারতের চিকন ধান হিসেবে পরিচিত ‘শতাব্দী’ ধানের বীজ কোনো একভাবে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার পর স্থানীয় উৎপাদন শুরু হলে ওই চালের পরিচিতি গড়ে উঠেছিল ‘মিনিকেট’ নামে।”

ব্রির ফলিত গবেষণা বিভাগের প্রধান গবেষক ড. মো. হুমায়ূন কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, “১৯৯৫ সালের দিকে ভারতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ওই সময় সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের নতুন উদ্ভাবিত ‘শতাব্দী’ জাতের ধানবীজ ছোট ছোট প্যাকেটে করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ শুরু করে। ওই কর্মসূচিতে ধানবীজের সঙ্গে বালাইনাশকসহ আরও কিছু কৃষি উপকরণ (কিট) দেয়া হতো। এ কারণে প্যাকেটটির নাম রাখা হয় ‘মিনি কিটস’। এই প্যাকেটগুলো কোনো একভাবে বাংলাদেশের কৃষকদের হাতেও এসেছিল। আর এখানে কৃষকদের মুখে মুখে ‘মিনি কিটস’ হয়ে দাঁড়ায় ‘মিনিকেট’। ‘শতাব্দী’ ধান থেকে উৎপাদিত চাল বাজারে আসতে থাকে ‘মিনিকেট’ নামে।”

ডেনমার্কভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশি খাদ্য গবেষক ড. মো. নাহিদুল ইসলামের সাম্প্রতিক এক গবেষণাতেও একই কথা বলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘মিনিকেট’ শব্দটা এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘মিনি’ ও ‘কিট’ থেকে। মিনিকেট আদতে কোনো ধানের ভ্যারাইটি নয়। এটি হচ্ছে এক ধরনের কর্মসূচি, যেখানে ভারত সরকার মিনি প্যাকেট অর্থাৎ দুই কেজি ধানের বীজের প্যাকেট কৃষকদের উপহার হিসেবে দিত। নতুন কোনো ধানের জাত আবিষ্কৃত হলে সেটা কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে এই পদ্ধতির ভূমিকা অপরিহার্য।

ওই সময় অবৈধভাবে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কিছু ধানের জাত বাংলাদেশে এসেছে। তখন ধানের মূল নামের পরিবর্তে ভারতীয় প্রোগ্রামের নামানুসারে বাংলাদেশে ‘মিনিকেট’ নামের প্রচলন শুরু হয়ে থাকতে পারে।

এই খাদ্য গবেষকের মতে, বাজারে ব্রাউন ও মোটা চালের চাহিদা অনেক কম থাকার কারণে এই মোটা চালকে ঘষেমেজে চকচকে ও স্লিম করতে মিল মালিকদের অতিরিক্ত দুটি যন্ত্র কিনতে হয়। বর্তমানে যেসব চাল মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত যেকোনো দেশীয় জাতের চাল।

মিনিকেট স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর

ব্রির ফলিত গবেষণা বিভাগের প্রধান গবেষক ড. মো. হুমায়ূন কবীর জানান, কেমিক্যাল মিশ্রণ ও অতিরিক্ত ছাঁটাইয়ের কারণে মিনিকেট চালে শুধু শর্করা ছাড়া অন্যান্য পুষ্টিগুণ বলে আর কিছুই থাকে না। এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চাল মানবশরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক চালে নানা মাত্রিক পুষ্টিকর উপাদান থাকে, যার সিংহভাগই থাকে চালের উপরিভাগে। ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় এটি ঝরে যায়। ভাত খাব অথচ এর আসল উপাদান থেকে বঞ্চিত হব, সেটি আমরা চাই না। জিংক ও আয়রন যদি চালে না থাকে, তাহলে আমাদের শরীরের যে ক্ষতি হবে, তার আর্থিক মূল্য অনেক।’

গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ছাঁটাইয়ের ফলে মিনিকেট নামে এই চালে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রোটিন, আঁশ– এসবের কিছুই থাকে না। শুধু থাকে কার্বোহাইড্রেট। এই চালের ভাতে অভ্যস্তদের নানা রকম অপুষ্টিজনিত রোগবালাই হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পলিশ করার কারণে মিনিকেট চালে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়। শর্করার পরিমাণ বাড়লে গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেড়ে যায়।

মিনিকেট: ধান নেই, চাল আছে

চাল থেকে প্রোটিন বা আমিষও পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম চালে আমিষ থাকে প্রায় ৬-৭ শতাংশের মতো। কিন্তু কলে ছাঁটার কারণে ১-২ শতাংশ প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ফ্যাট বা অয়েল কমে যাওয়া। অয়েল কমে যায় ৬২ শতাংশ, ক্রুড ফাইবার কমে ৪০ শতাংশ এবং অ্যাশ কমে ১১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ভিটামিন বি-১, বি-৬ প্রায় ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

থিতু হচ্ছে মিনিকেটের বাজার

নানামুখী সমালোচনার মুখে বাজারে মিনিকেট চালের আধিপত্য আর থাকছে না। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে যাচ্ছে সরকারও। আদালতও এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছে।

পুষ্টিগুণ নষ্ট করে বিভিন্ন অটোরাইস মিলে চাল ছেঁটে বাজারজাত এবং বিক্রি বন্ধ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২১ নভেম্বর রুল জারি করে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে চাল কেটে বা ছেঁটে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে বাজারজাত বা বিক্রি বন্ধে গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত। যারা এ কাজটি করছেন, হাইকোর্ট তাদের তালিকা পাঠাতেও মন্ত্রণালয়কে বলেছে।

এ ছাড়া চালের বস্তার ওপর ধানের জাতের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।

তিনি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। সচিব জানান, সাধারণভাবে ধানের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ ছাঁটাই করা যায়, নীতিমালা তৈরি ও তা মানতে বাধ্য করার মাধ্যমে চালের পলিশিং ও ওভার পলিশিং বন্ধ করা হবে। তা করা গেলে স্বাভাবিক নিয়মেই মিনিকেট ব্র্যান্ডিংয়ে ভাটা পড়বে।

বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান জানান, ‘এতেও মিনিকেটের বাজারজাত বন্ধ হবে না। কারণ তখন হয়তো বাধ্যবাধকতার কারণে ধানের নাম উল্লেখ করল, কিন্তু পাশেই লিখে দিল মিনিকেট। তাই ধান যেহেতু নেই, তাই এর বাজারজাত বন্ধ করতে হলে বস্তার গায়ে মিনিকেট লেখাই বন্ধ করতে হবে। কারণ মিলপর্যায়ে কোন কোন ধান মিক্সড করে মিনিকেট সরবরাহ করছে, তা মনিটরিংয়ের সক্ষমতা সরকারের নেই।’

আরও পড়ুন:
চাল ছেঁটে মিনিকেট নামে বিক্রি বন্ধ নয় কেন, প্রশ্ন হাইকোর্টের
সরকারি চালসহ ধরা, দৌড়ে পালালেন ইউপি সদস্য
ভিজিডির ৩৩ বস্তা চাল জব্দ, আটক ১
নারীদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের বিশেষ উদ্যোগ
ফুলপুরে সরকারি চাল জব্দ: ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Comilla celebrates Boro festival

বোরো উৎসবে মেতেছে কুমিল্লা

বোরো উৎসবে মেতেছে কুমিল্লা কুমিল্লার দেবিদ্বারে ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলা
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।

কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।

‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’

জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।

দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।

তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।

আরও পড়ুন:
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে: কৃষিমন্ত্রী
মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য: সেনাপ্রধান
ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায়
ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না: প্রধানমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The advice given by the expert to protect the mango pieces in the heat wave

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। ছবি: নিউজবাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

চলমান তাপপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের গুটি ঝরে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই এ বছর মুকুল এসেছিল কম, গাছে যে কয়টা আমের গুটি টিকে আছে, তাপদাহের প্রভাবে সেগুলোর বৃদ্ধিও ঠিকমত হচ্ছে না বলে দাবি বাগান মালিকদের। এরই মধ্যে রোদের তাপে শুকিয়ে সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

আমের গুটি যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে; প্রয়োজনে গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শও তাদের।

‘আমের রাজধানী’ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কিছুটা দেরিতেই এসেছিল মুকুল। পরিমাণেও ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশ কম। তারপরও শুরু থেকেই বাড়তি যত্নে বাগানগুলোতে মুকুল থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আম। তবে কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ভীষণ শঙ্কায় ফেলেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। গাছে থাকা আমের গুটির বৃদ্ধি ও টিকে থাকা নিয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

ছবি: নিউজবাংলা

জেলার মহারাজপুর এলাকার আম বাগান মালিক রাজন ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে আমের গুটির বড় হচ্ছে না, বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আকাশের পানি না হলে হয়? সেচ দিয়াও খুব বেশি কাজ হচ্ছে না, শ্যালো (সেচ পাম্প) যতক্ষণ চলছে ততক্ষন পানি থাকছে। বন্ধ করলেই সব তিলিকে (দ্রুত) শুষে লিছে (নিচ্ছে)।’

আম সংগঠনের নেতারাও বলছেন একই কথা। এ বছরের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চলমান তাপপ্রবাহ তাদের সেই দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে, তার ওপর মার্চ মাসে অসময়ের বৃষ্টিতে একবার মুকুল ঝরে যায়।

‘তখন বৃষ্টির দরকার ছিলো না, তাই বৃষ্টির কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল, আর এখন বৃষ্টির অভাবে গাছে যে কয়টা আমের গুটি ছিল, তাও ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন চললে ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর আম উৎপাদনের খরচ সব ক্ষেত্রেই বেড়ে গেছে। আবার এখন সেচ দেয়ার জন্য অনেকের খরচ আরও বাড়ছে। সবমিলিয়ে এ বছর খুব বেশি স্বস্তিতে নেই আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’

তবে এখনই আশাহত না হয়ে বাগানের সঠিক পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া ও তাপপ্রবাহ যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত বাগানে সেচ দেয়া, তাপমাত্রা আরও বাড়লে সকালে বা বিকেলে গাছে সরাসারি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।

বাগান মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

আরও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২.৬ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা
দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, মরছে মানুষ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি
ভারতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে পাখিরা
৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চুয়াডাঙ্গায় হাসফাঁস

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Cultivation of Philippine foreign variety MD 2 pineapple started in Comilla

ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায়

ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায় কুমিল্লায় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ফিলিপাইনের আনারসের জাত এমডি-২ চাষ শুরু হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।’

কুমিল্লা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জেলায় শুরু হয়েছে আনারসের ফিলিপাইনের একটি জাত।

এ উদ্যোগে ‍যুক্ত একজন কৃষি কর্মকর্তা জাতটির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এ বছর আনারস চাষ সফল হলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ জাতের চাষ করা হবে।

রোপণ করা চারা থেকে আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, বিদেশি আনারসের এ জাতটির নাম এমডি-২। এটির আদি নিবাস ফিলিপাইন। এর আগে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় এ জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এ আনারসের চামড়া পাতলা ও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।

‘এ আনারস দ্রুত পচে না। প্রথমবারের মতো এ বছর আমরা পুরো কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার চারা বিতরণ করেছি। জেলায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ও পাহাড় রয়েছে। ছাড়াও লালমাই পাহাড়কে টার্গেট করে আমরা চারা বিতরণ করেছি। আশা করছি কুমিল্লার মাটি ও আবহাওয়া এমডি ২ জাতের আনারস চাষে বেশ উপযোগী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলন ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর আমরা সফল হলে আমাদের আগামী বছরে আরও ব্যাপকভাবে এমডি-২ জাতের আনারস চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Harvesting of paddy started in Howar

হাওরে ধান কাটা শুরু

হাওরে ধান কাটা শুরু বৈশাখের শুরুতেই সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক অতিবৃষ্টি আর আকষ্মিক বন্যা। প্রতিবছর বৈশাখ আসার আগেই পাহাড়ি ঢল আর বন্যার আতঙ্কে থাকেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল রক্ষায় অনেক সময়ই অপরিপক্ব ধান গাছে কাস্তে চালাতে হয় তাদের।

চলতি মৌসুমে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে এক ফসলি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন দেখে বেজায় খুশি কৃষকরা। তারা আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার তারা শতভাগ ধান গোলায় তুলতে পারবেন।

কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সুনামগঞ্জে ২৬২ হেক্টর বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে। ধানগুলো বর্তমানে হাওরে কাচা-পাকা অবস্থায় রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বরদল গ্রামের কৃষক মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘আমি বিআর-৯২ ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা পানির সংকট ছিল। তবে এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলন ভালো হয়েছে। আর চার থেকে পাঁচ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আমার জমির ধান কাটা শেষ করতে পারব।’

সুনামগঞ্জ সদরের গৌরারং ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে ধান এখন পাকা ও আধপাকা অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে শিলাবৃষ্টি হলে আমরা মারা পড়বো। আশা করছি আনন্দের সঙ্গেই আমরা সব ধান ঘরে তুলতে পারব।’

শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক আজমান গণি বলেন, ‘সঠিক সময়ে হারভেস্টার মেশিন ও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে ফসল কাটা ও মাড়াই সহজ হবে। শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা না হলে খুশি মনে ধান কাটা যাবে। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া সঠিক সময়ে ঘরে ধান উঠাতে পারাটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৫ মে’র মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরামর্শের জন্য কৃষকদের পাশে রয়েছেন। হারভেস্টার মেশিনগুলো প্রস্তুত রয়েছে।

‘সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
38 and a half thousand crores allocated for the purpose of 10 percent growth in agriculture

কৃষিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

কৃষিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।

‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়। সূত্র: ইউএনবি

জিডিপিতে হ্রাস প্রবণতা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।

নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।

সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।

ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশের (জাটকা) জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Chia seed cultivation is popular in Magura

মাগুরায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ

মাগুরায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ কৃষক আক্কাস আলীর খেতে শোভা পাচ্ছে চিয়া সিড। ছবি: নিউজবাংলা
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

মাগুরা জেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবার তালিকায় চিয়া সিড এখন বেশ জনপ্রিয়।

চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। মধ্য আমেরিকায় অনেক বেশি পাওয়া যায় এ শস্য। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজও বলা হয়।

চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডম কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ফসল হিসেবেও লাভজনক।

মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়ারডাঙ্গি গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলী শুরু করেন চিয়া সিডের চাষ। গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে চিয়া সিডের চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে আরও ১৪ জন কৃষক চাষ করেছেন। আগামীতে চিয়া সিড চাষের জন্য তার নিজ এলাকাসহ আশপাশের জেলার চাষিরাও তার কাছে বীজ চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলীর মাধ্যমেই নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাষ শিখছি। পাশাপাশি নতুন ধরনের ফসলেরও চাষ হচ্ছে। তেমনি চিয়া সিড আমাদের কাছে নতুন একটি চাষ। চিয়া সিড খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। পাশাপাশি এর চাহিদা ও বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কৃষক আক্কাস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর অল্প পরিসরে চিয়া সিড চাষ করি। মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র আমাকে এ বীজ দেয়। এ বছর আমি ছাড়াও আমার এলাকার ১৪ জন চাষি চিয়া সিড করেছে।’

পুষ্টিকর ও দাম ভাল হওয়ায় আগামী বছর একশ’র উপরে চাষি চিয়া সিড চাষ করবেন বলে আশা তার।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Farmers are not getting the price of cucumber for 42 kg

৪২ কেজিতে এক মণ, তবু শসার ‘দাম পাচ্ছেন না’ কৃষক

৪২ কেজিতে এক মণ, তবু শসার ‘দাম পাচ্ছেন না’ কৃষক ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে প্রতি মণে ৪২ কেজি শসা বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়।

৪০ কেজিতে এক মণ হলেও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের হাট-বাজারগুলোতে এক মণ শসা বিক্রি করতে কৃষককে দিতে হচ্ছে ৪২ কেজি ৩০০ গ্রাম।

এতে কৃষকরা প্রতি কেজি হিসেবে পাঁচ টাকারও কম পাচ্ছে, তবে এ শসা বাজারে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে পাইকাররা।

অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে পড়ে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান ক্ষুদ্র কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, তারা এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শসা আবাদ করেন। এ সুযোগে পাইকারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করেন। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হলেও এ বছর ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শসার দাম কম পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শসা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে প্রতি বছর শসার আবাদ কমার সম্ভবনা রয়েছে।

কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়। গত বছরও অসাধু পাইকারদের জন্য অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখতে না পেরে শসা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় শসা উৎপাদন একেবারেই কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষকরা।

ধুরাইল ইউনিয়নের নাগলা বাজার এলাকার কৃষক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে শসার আবাদ করেছি। এতে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। রমজানের শুরুতে ভালো দাম পেলেও দিন যত যাচ্ছে, পাইকাররা দামও কমিয়ে দিচ্ছেন। এখন ২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’

জুগলী ইউনিয়নের জুগলী এলাকার কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, ‘৩০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। এক মণ ৪২ কেজি হিসেবে শসা কিনেন পাইকাররা। আমাদের কাছ থেকে একেবারেই কম দামে কিনে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরাও লাভবান হতে পারছি না, ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।’

পৌর বাজারে শসার পাইকার মনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, ‘এ উপজেলার শসা দূরদূরান্তের পাইকাররা ঢাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে ট্রাক কিংবা পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে আড়তে বিক্রি করেন৷ এরপর ছোট পাইকারসহ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সড়কে গাড়ির খরচসহ কয়েকটি হাত ঘুরে ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমাদের উপজেলার বাজারগুলোতে ক্রেতার চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম উঠানামা করে।’

শসা ৪২ কেজিতে এক মণ নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর যাবৎ কৃষকদের কাছ থেকে সব পাইকাররা এভাবেই কিনছে। তাই আমিও এভাবেই কিনি।’

শসার দাম সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় খুচরা শসা বিক্রেতা মোরশেদ মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও খুচরা ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে শসা বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার তারাকান্দা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট থেকেও শসা আসে।

‘পিকআপ ভর্তি করে পাইকাররা নিয়ে এসে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। তারা আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করায়, আমরাও কয়েক টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।’

হাকিমুল নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘কৃষক আর ক্রেতা সবসময় ঠকে। মূলত সিন্ডিকেট কারণেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে শসা কিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করে বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত দামে কখনোই বিক্রি করা যাবে না। বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
কাউকে এখন না খেয়ে থাকতে হয় না: কৃষিমন্ত্রী
বিএডিসির বীজ ধান ও গম এখন পাখির খাবার
পুকুরে বিলীন তিন ফসলি জমি
পাথরে ফুটেছে ফুল
মাটি ভরাটে বন্ধ সেচযন্ত্র, মুন্সীগঞ্জে ধান চাষ ব্যাহতের শঙ্কা

মন্তব্য

p
উপরে