বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন। টানা তিন মেয়াদে এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত দুই মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
সংসদ নির্বাচনগুলোর ভোটের হিসাব সাক্ষ্য দেয়, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই দুই এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি ঘটেছে।
গত রোববার সিলেটের এই দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে মাত্র সাতটিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি ১৩ ইউপির মধ্যে তিনটিতে জামানত হারিয়েছেন নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে চারটি ইউনিয়নে জয়ী হয়েছেন জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
চলমান ইউপি নির্বাচনে আগের তিন দফায় এতসংখ্যক জামায়াত নেতা সিলেটের কোথাও বিজয়ী হতে পারেননি।
অনেক ইউনিয়নে জামায়াতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত নেতা এম আব্দুর রহিম। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ৪৭৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। প্রকাশ্যে তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়ে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগও হারিয়েছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে কী করে চারটি ইউনিয়নে জয়ী হলেন জামায়াত নেতারা?
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণে এখানে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াত। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় অনেকে বলছেন, প্রকাশ্যে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও গ্রামগঞ্জে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। অন্য দলগুলোর রাজনৈতিব কার্যক্রম খুব একটা না থাকার সুযোগে তৃণমূলে শক্তি সঞ্চয় করছে ধর্মভিত্তিক দলটি।
ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামাতে না পারার খেসারতও আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ইউপি নির্বাচনের এই ফলকে সন্তোষজনক বলেই মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘২০টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং পাঁচটিতে বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছেন। সে হিসাবে ১২টি ইউপিতেই কিন্তু আমাদের লোকেরা জিতেছেন।
‘যেসব ইউনিয়নে জামায়াত প্রার্থীরা জিতেছেন সেগুলোয় ‘এন্টি-আওয়ামী ভোট’ সব এক হয়ে গিয়েছিল। বিএনপিসহ প্রতিক্রিয়াশীল সব ভোট তারা পেয়েছে। ফলে এককভাবে জামায়াত জিতেছে এটা বলা যাবে না।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক ভাগে বিভক্ত। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নুরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও ছিলেন। টানা তিন মেয়াদের এমপিও তিনি। তবে এলাকায় তার অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে।
নাহিদ মন্ত্রী থাকার সময়েই গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। গত সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেটের প্রভাবশালী নেতা সারোয়ার হোসেন।
এই এলাকায় আওয়ামী লীগ নাহিদ ও সারোয়ার গ্রুপে বিভক্ত। এ ছাড়া আছে উপদলীয় কোন্দল। বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব নাহিদ বিরোধী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। গোলাপগঞ্জেও রয়েছে এমন উপদলীয় কোন্দল। ইউপি নির্বাচনে এই কোন্দলের প্রভাব পড়েছে।
গোলাপগঞ্জের এক স্কুলশিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগ বহু ধারায় বিভক্ত। নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে অনেক নেতা জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। ফলে এই দুই উপজেলা জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।
গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আব্দুল করিম খান। নির্বাচনে ২৩ হাজার ভোটের মধ্যে সাকল্যে তিনি পেয়েছেন ১৩৯ ভোট। স্বভাবতই হারিয়েছেন জামানত।
এই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য দলের কোন্দলকে দায়ী করে আব্দুল করিম খান বলেন, ‘দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে ছিল না। যারা ছিল তারা শুধু লোক দেখানোর জন্য ছিল। দলের নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থাকলে জয়ী না হলেও সম্মানজনক সংখ্যার ভোট পেতাম।
সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা ও গোলাপগঞ্জ আমুড়া এলাকার বাসিন্দা ফজলুর রহমান জসিম বলেন, ‘অনেক জায়গায় দলের বিরোধের কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছেন। দুই উপজেলায়ই আওয়ামী লীগে কোন্দল রয়েছে। কিছু ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়েও ভুল ছিল।’
গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে না হলেও উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করেছেন। দলেও বিভক্তি রয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলে।
গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব
গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহেল আহমদকে। সেবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন এই পৌরসভার সাবেক দুই মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তারা। নির্বাচনে হারতে হয় নৌকার প্রার্থীকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দলের চেয়েও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব প্রবল। এখানে চৌধুরী, তালকুদার ও কিরান- এই তিন গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাবেল, পাপলু ও রুহেল এই তিন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর সেই দ্বন্দ্বের জের ধরেই মেয়র পদে প্রার্থী হন তারা তিনজন।
একই ধরনের গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও। এখানে যেকোনো নির্বাচনেই গোষ্ঠিভিত্তিক দ্বন্দ্ব আরও প্রবল হয়ে ওঠে। এবারের ইউপি নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ভোট গোষ্ঠীভিত্তিক ভাগ হয়ে যায়। আর এর সুযোগ নেয় জামায়াত।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান নিউজবাংলাকে বলেন, এই দুই উপজেলায় আঞ্চলিকতা ও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রবল। আর এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে ভোটে।
নাসির উদ্দিনেরও বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলায়। নিজ এলাকার গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন জানিয়ে এ নেতা বলেন, ‘আগের থেকে অনেকটা কমিয়ে এনেছি। তার পরও কিছুটা রয়ে গেছে। আর এখানকার ভোট যতটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের লড়াই; তারচেয়েও বেশি গোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক লড়াই।’
প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ভুল’
বিয়ানীবাজারের তিলপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমাদ উদ্দিন ৯২০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫১৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির সাবেক সহসম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
তিলপাড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিবেকানন্দ দাস। তা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি। এই বিদ্রোহী ২ হাজার ৭২৬ ভোট পেয়ে মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূল থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেকানন্দ দাসের নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্র থেকে নৌকা দেয়া হয় এমাদ উদ্দিনকে। দুই উপজেলায় তৃণমূলের পছন্দের অন্তত পাঁচ প্রার্থী কেন্দ্রে গিয়ে ছিটকে পড়েন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড নানা কিছু হিসাব-নিকাশ করেই মনোনয়ন দেয়। দলের প্রতি কার কী অবদান, আগে কেউ বিদ্রোহী হয়েছিলেন কি না- এসব এবার বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে তৃণমূলের ভোটে এগিয়ে থেকেও কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন পাননি।
আগে থেকেই জামায়াতের আস্তানা
গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে। অন্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোরও ভোট রয়েছে এখানে।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে প্রার্থী করেছিল চারদলীয় জোট। গত নির্বাচনেও ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে নানা হিসাব-নিকাশে সেবার মনোনয়ন পাননি হাবিব।
এখানকার ধর্মভিত্তিক গোষ্টীর ভোট টানতে ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদের বদলে খেলাফত মজলিশের নেতা প্রয়াত প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম ঘোষণা করে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছিলেন এই হাবীবুর রহমান।
বিয়ানীবাজারের স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ফরিদ আল মামুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত জিতে আসছে।
জেলা যুবলীগ নেতা ফজলুর রহমান জসিম বলেন, এখানকার কিছু এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত-বিএনপির দখলে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও তাদের এই দুর্গ ভাঙতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ফলে আগামীতেও এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, এখানকার অনেক ইউনিয়নে জামায়াত-বিএনপি আগে থেকেই শক্তিশালী। আমরা তাদের ভোটব্যাংকে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন:ময়লা-আবর্জনা আর অবৈধ দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ জারিরদোনা শাখা খালটি। এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব ও প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার অংশে জারিরদোনা খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় বহু দোকানপাট ও বহুতল ভবন। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই খালের পানি বাধাগ্রস্ত করে ইচ্ছামতো সরু পুল, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন অবৈধ দোকানপাট। এ ছাড়া এলাকার কিছু প্রভাবশালী বাজারের আবর্জনা দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খালটি ভর্তি করে ফেলেছেন। যাতে করে পরে সময় সুযোগ বুঝে ওই স্থান দখলে নেওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানান, চরফলকন, চরলরেন্স, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিকাজ এ খালের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানি সংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়, তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনজনিত সমস্যায় সয়াবিন, ধান, মরিচ, বাদাম ও সবজীসহ বিভিন্ন ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্তমান এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা চলছে। খালটি দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জীবনযাত্রা চরম দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের। বন্যার পানি না নামার কারণ হিসেবে খাল দখলকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাজিরহাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নূর সেলিম বলেন, জারিরদোনা শাখা খালটির সংযোগ সরাসরি মেঘনা নদীর সঙ্গে। আশির দশক পর্যন্ত এ খালটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবেই বিবেচিত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যেও এর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ওই সময়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাতায়াত করা ছিল দুর্সাধ্য। এমনকি ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এ অঞ্চলের সড়ক পথই ছিল না।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৮০ দখলবাজের কবজা থেকে খালটি উদ্ধার করতে উচ্ছেদের আদেশ হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তারা খাল উদ্ধারে গড়িমসি করে সময় পার করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, পিএস জরিপে হাজিরহাট বাজার অংশে খালের প্রশস্ততা ছিল গড়ে প্রায় ৩২ ফুট। বর্তমান আরএস জরিপে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ ফুটে। কিন্তু কিছু ইমারত (ভবন) এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই সব অংশে খালের প্রশস্ততা বর্তমানে ২ থেকে ৩ ফুটের বেশি নেই।
হাজিরহাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাছান বলেন, ‘এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে খালটি সংস্কার করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা একান্ত জরুরি। পুরো খাল দখল করে যারা ইমারত তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে খালটি দখলমুক্ত করা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাত হুসাইন বলেন, ‘জারিরদোনা খাল দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে আদেশ হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ জামান বলেন, খালটি সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জলঢাকায় ইজারাবিহীন খাসে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারে গরু-ছাগল ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারের পশুরহাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু ক্রেতার কাছ থেকে রশীদ ফি ৬০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদাসহ গরু প্রতি মোট ৮০০ টাকা আদায় করছেন হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ হাট-বাজারে প্রশাসনের কাউকে দেখা না গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক হাট বাজারের অফিসে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তারা হলেন গোলনা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কাঁঠালী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মীরগঞ্জ হাট-বাজারের টোল আদায়ের মুল দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে হাটে এসেছি। তারা আমাদের চাপে ফেলে হাটের টোল আদায় করছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। সংবাদকর্মীদের দেখে হাট-বাজারের থাকা ক্রেতা বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, গত ৩টা হাটে শুধু গরু ক্রেতার কাছে রশীদের ফি বাবদ ৬০০ টাকা নিয়েছেন। আর যারা গরু বিক্রেতা ছিলাম আমাদের কাছ তেকে কোন প্রকার চাঁদা নেয়নি। কিন্তু আজকের হাটে গরু ক্রেতার কাছে রশীদের মাধ্যমে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছে বিধি পরিপন্থি অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। হাটের লোকজন আমাদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। একপর্যায়ে একদল লোক দৌড়ে এসে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রোশমুলক গালমন্দ করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা এবং হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন।
লোকমুখে জানা যায়, তারা উপজেলা বিএনপির একাংশ একটি গ্রুপের বাহিনী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বাংলা ১৪৩২ সালে উপজেলার ২৬টি হাট ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৭টি হাটের দরপত্র জমা হলে বিধিমোতাবেক দরপত্র দর দাতাদের মধ্যে হাট-বাজার গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ৯টি হাটের কোন দরপত্র জমা না হওয়ায় হাট-বাজার গুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। খাস খতিয়ানে যাওয়া হাট-বাজার গুলো হলো, মীরগঞ্জ হাট-বাজার, পাঠানপাড়া হাট-বাজার, হলদিবাড়ী নালারপাড় হাট-বাজার, হলদিবাড়ী জয়বাংলা হাট-বাজার, নবাবগঞ্জ হাট-বাজার, ডিয়াবাড়ী হাট-বাজার, বালারপুকুর চৌধুরীর হাট-বাজার, হরিশ্চন্দ্রপাঠ হাট-বাজর, খুটামারা রহমানিয়া হাট-বাজার ইত্যাদি। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন তাদের নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাট-বাজারের টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, লিখিতভাবে কাউকে হাট-বাজার দেওয়া হয়নি। কিন্তু খাস খতিয়ানের হাট-বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল আদায়ের কোন এখতিয়ার নেই। যদি এরকম কোনো প্রমাণ আপনারা দিতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোরের শার্শা উপজেলায় ১০টি সোনার বারসহ শুভ ঘোষ (৩৫) নামে যুবককে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
আটক শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জের সুনীল ঘোষের ছেলে।
পুলিশ জানায়, পুলিশের একটি দল বাঁগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে শুভ ঘোষ নামে এক যুবককে আটক করে। পরে তার দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের পকেট থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। স্বর্ণের বারগুলো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জ থেকে বাঁগআচড়ায় আসে।
এছাড়া জব্দ করা স্বর্ণের ওজন এক কেজি ১৯২ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানায় পুলিশ।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যুবকের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আদালতে সোর্পদ করা হবে। স্বর্ণের বারগুলো ট্রেজারি শাখায় জমা দেওয়া হবে।’
বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা মামলায় ইলিয়াস পহলান নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইলিয়াস পহলান (৩৪) বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রঞ্জু আরা শিপু, আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসান হাবীব স্বপন। আইনজীবী রঞ্জু আরা শিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ওই নারী তার মেয়ে তাইফা (৩) ও ছেলে হাফিজুলকে (১০) নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন ওই নারী। এ সময় তাইফা ও হাফিজুলের ঘুম ভেঙে গেলে ইলিয়াস ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই কুপিয়ে আহত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজুল নিহত হয়, আর বরিশালে নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু তাইফা।
তবে গুরুতর আহত ওই নারী দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরই ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ইলয়াস পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী তাকে সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে ওবাইদুর রহমান (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার মধুপুর নামক স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ।
নিহত ওবাইদুর মহেশপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের হানেফ মন্ডলের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, গতরাতে মহেশপুর উপজেলার গোপালপর গ্রামে ৭ থেকে ৮ জন লোক অবৈধভাবে ভারতে যায়। রাত দেড়টার দিকে তারা বিএসএসএফের সামনে পড়ে। সেসময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন তারা পালিয়ে আবারো বাংলাদেশের ভিতরে চলে আসে। কিন্তু ওবাইদুর রহমানসহ দু’জন আসতে পারেনি। ওবাইদুর রহমানকে বিএসএফ ধরে ফেলে। বিএসএফ তাকে বস্তায় জড়িয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে গুলি করে হত্যা করে।
সকালে ভারতের অভ্যন্তরে মধুপুর নামক স্থানে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। ওই লাশটি ওবাইদুর রহমানের হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। লাশটি ভারতের বাগদা থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। আরেকজনের খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ওমর আলী জানান, খবর পেয়ে তিনি ওবাইদুরের বাড়িতে যান। বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করছেন। তিনি জানান, রাত ১টার দিকে ওপারে গোলগুলির শব্দ শুনেছে গ্রামবাসী। এতে ধারণা করা হচ্ছে ওবাইদুরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
যাদবপুর ইউনিয়নের মেম্বর বাবুল হোসেন জানান, তিনিও সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির সংবাদ শুনেছেন। এ ঘটনার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে গোপালপুর গ্রামের ওবাইদুর নিখোঁজ রয়েছেন। ওপারে পড়ে থাকা লাশটি ওবাইদুরের হতে পারে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা জানান, ভারতের অভ্যন্তরে একজনের লাশ পড়ে আছে বলে আমি বিজিবির মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
বিজিবির যাদবপুর বিওপির কমান্ডার হাবিলদার মফিজুল ইসলাম জানান, লোকমুখে তিনি এমন খবর পেয়ে সীমান্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তবে এখনো কোনো পরিবার তাদের দপ্তরে অভিযোগ করেনি।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম জানান, রবিবার সাকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ভারতের মধুপর বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ফোন করে তাকে জানিয়েছে, ভারতের সীমানার মধ্যে একটি লাশ পড়ে আছে। সেটা বাংলাদেশি না ভারতীয় বোঝা যাচ্ছে না। ভারতের বাগদা থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে হত্যা করে ইছামিত নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। ১৯ দিন পার হলেও তার লাশ এখনো বিএসএফ ফেরৎ দেয়নি। নিহত ওয়াসিম বাঘাডাঙ্গা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে।
ওয়াসিমের ভাই মেহেদী হাসান দাবি করেন, গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিমসহ কয়েকজন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যায়। ভারত থেকে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের ধাওয়া করলে মহেশপুরের সলেমানপুর গ্রামের আব্দুস সোবহান, কাঞ্চনপুর গ্রামের রাজু, শাাবুদ্দিন, মানিক ও বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ ফিরে আসলেও তার ভাই বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। তাকে নির্যাতনে হত্যার পর লাশ ইছামতি নদীতে ফেলে দেয়। বিজিবি লাশ ফেরৎ চাইলেও ভিসা ও আইনি জটিলতার কারণে ১৯ দিনেও লাশ ফেরৎ পায়নি পরিবার।
ভারতীয় পুলিশ বিজিবিকে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে লাশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ভারতে গিয়ে লাশ শনাক্ত করার সক্ষমতা ওয়াসিমের পরিবারের নেই বলে জানা গেছে।
অপহরণের সাতদিন পর মুক্তি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী। তবে বুধবার (২৩ এপ্রিল) তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে একদিন পর বৃহস্পতিবার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী বর্তমানে তাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বার্তা সংস্থা ইউএনবি বলেন, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিবৃতি দিয়েছে যে তারা তাদের সংগঠনের শিক্ষার্থীদের ফিরে পেয়েছে। আমরা ওই ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারে সাথে যোগাযোগ করেছি। তারাও নিজেদের পরিবার সদস্যদের ফিরে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাহলে এখন মোটামুটি ধরে ধরে নেওয়া যায় যে ওই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পরিবারের হেফাজতে আছেন।’
বিজু উৎসব উদ্যাপন শেষে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাদের বহন করা অটোরিকশার চালককে অজ্ঞাতনামা স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ওই সময় ছেড়ে দিয়েছিল।
পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে জেএসএস–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
মন্তব্য