বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন। টানা তিন মেয়াদে এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত দুই মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
সংসদ নির্বাচনগুলোর ভোটের হিসাব সাক্ষ্য দেয়, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই দুই এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি ঘটেছে।
গত রোববার সিলেটের এই দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে মাত্র সাতটিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি ১৩ ইউপির মধ্যে তিনটিতে জামানত হারিয়েছেন নৌকার প্রার্থী। অন্যদিকে চারটি ইউনিয়নে জয়ী হয়েছেন জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
চলমান ইউপি নির্বাচনে আগের তিন দফায় এতসংখ্যক জামায়াত নেতা সিলেটের কোথাও বিজয়ী হতে পারেননি।
অনেক ইউনিয়নে জামায়াতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত নেতা এম আব্দুর রহিম। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ৪৭৮ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। প্রকাশ্যে তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়ে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগও হারিয়েছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে কী করে চারটি ইউনিয়নে জয়ী হলেন জামায়াত নেতারা?
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণে এখানে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াত। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় অনেকে বলছেন, প্রকাশ্যে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও গ্রামগঞ্জে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত। অন্য দলগুলোর রাজনৈতিব কার্যক্রম খুব একটা না থাকার সুযোগে তৃণমূলে শক্তি সঞ্চয় করছে ধর্মভিত্তিক দলটি।
ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামাতে না পারার খেসারতও আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ইউপি নির্বাচনের এই ফলকে সন্তোষজনক বলেই মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘২০টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং পাঁচটিতে বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছেন। সে হিসাবে ১২টি ইউপিতেই কিন্তু আমাদের লোকেরা জিতেছেন।
‘যেসব ইউনিয়নে জামায়াত প্রার্থীরা জিতেছেন সেগুলোয় ‘এন্টি-আওয়ামী ভোট’ সব এক হয়ে গিয়েছিল। বিএনপিসহ প্রতিক্রিয়াশীল সব ভোট তারা পেয়েছে। ফলে এককভাবে জামায়াত জিতেছে এটা বলা যাবে না।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক ভাগে বিভক্ত। স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) নুরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও ছিলেন। টানা তিন মেয়াদের এমপিও তিনি। তবে এলাকায় তার অবস্থান অনেকটাই নড়বড়ে।
নাহিদ মন্ত্রী থাকার সময়েই গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। গত সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেটের প্রভাবশালী নেতা সারোয়ার হোসেন।
এই এলাকায় আওয়ামী লীগ নাহিদ ও সারোয়ার গ্রুপে বিভক্ত। এ ছাড়া আছে উপদলীয় কোন্দল। বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব নাহিদ বিরোধী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। গোলাপগঞ্জেও রয়েছে এমন উপদলীয় কোন্দল। ইউপি নির্বাচনে এই কোন্দলের প্রভাব পড়েছে।
গোলাপগঞ্জের এক স্কুলশিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগ বহু ধারায় বিভক্ত। নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে অনেক নেতা জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। ফলে এই দুই উপজেলা জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।
গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আব্দুল করিম খান। নির্বাচনে ২৩ হাজার ভোটের মধ্যে সাকল্যে তিনি পেয়েছেন ১৩৯ ভোট। স্বভাবতই হারিয়েছেন জামানত।
এই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য দলের কোন্দলকে দায়ী করে আব্দুল করিম খান বলেন, ‘দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে ছিল না। যারা ছিল তারা শুধু লোক দেখানোর জন্য ছিল। দলের নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থাকলে জয়ী না হলেও সম্মানজনক সংখ্যার ভোট পেতাম।
সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা ও গোলাপগঞ্জ আমুড়া এলাকার বাসিন্দা ফজলুর রহমান জসিম বলেন, ‘অনেক জায়গায় দলের বিরোধের কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছেন। দুই উপজেলায়ই আওয়ামী লীগে কোন্দল রয়েছে। কিছু ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়েও ভুল ছিল।’
গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে না হলেও উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করেছেন। দলেও বিভক্তি রয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলে।
গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব
গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত গোলাপগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহেল আহমদকে। সেবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন এই পৌরসভার সাবেক দুই মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তারা। নির্বাচনে হারতে হয় নৌকার প্রার্থীকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দলের চেয়েও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব প্রবল। এখানে চৌধুরী, তালকুদার ও কিরান- এই তিন গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাবেল, পাপলু ও রুহেল এই তিন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর সেই দ্বন্দ্বের জের ধরেই মেয়র পদে প্রার্থী হন তারা তিনজন।
একই ধরনের গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও। এখানে যেকোনো নির্বাচনেই গোষ্ঠিভিত্তিক দ্বন্দ্ব আরও প্রবল হয়ে ওঠে। এবারের ইউপি নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের ভোট গোষ্ঠীভিত্তিক ভাগ হয়ে যায়। আর এর সুযোগ নেয় জামায়াত।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান নিউজবাংলাকে বলেন, এই দুই উপজেলায় আঞ্চলিকতা ও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রবল। আর এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে ভোটে।
নাসির উদ্দিনেরও বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলায়। নিজ এলাকার গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন জানিয়ে এ নেতা বলেন, ‘আগের থেকে অনেকটা কমিয়ে এনেছি। তার পরও কিছুটা রয়ে গেছে। আর এখানকার ভোট যতটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের লড়াই; তারচেয়েও বেশি গোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক লড়াই।’
প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ভুল’
বিয়ানীবাজারের তিলপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমাদ উদ্দিন ৯২০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫১৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির সাবেক সহসম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
তিলপাড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিবেকানন্দ দাস। তা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি। এই বিদ্রোহী ২ হাজার ৭২৬ ভোট পেয়ে মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূল থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেকানন্দ দাসের নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্র থেকে নৌকা দেয়া হয় এমাদ উদ্দিনকে। দুই উপজেলায় তৃণমূলের পছন্দের অন্তত পাঁচ প্রার্থী কেন্দ্রে গিয়ে ছিটকে পড়েন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড নানা কিছু হিসাব-নিকাশ করেই মনোনয়ন দেয়। দলের প্রতি কার কী অবদান, আগে কেউ বিদ্রোহী হয়েছিলেন কি না- এসব এবার বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে তৃণমূলের ভোটে এগিয়ে থেকেও কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন পাননি।
আগে থেকেই জামায়াতের আস্তানা
গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে। অন্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোরও ভোট রয়েছে এখানে।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে প্রার্থী করেছিল চারদলীয় জোট। গত নির্বাচনেও ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে নানা হিসাব-নিকাশে সেবার মনোনয়ন পাননি হাবিব।
এখানকার ধর্মভিত্তিক গোষ্টীর ভোট টানতে ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদের বদলে খেলাফত মজলিশের নেতা প্রয়াত প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম ঘোষণা করে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছিলেন এই হাবীবুর রহমান।
বিয়ানীবাজারের স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ফরিদ আল মামুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত জিতে আসছে।
জেলা যুবলীগ নেতা ফজলুর রহমান জসিম বলেন, এখানকার কিছু এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত-বিএনপির দখলে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও তাদের এই দুর্গ ভাঙতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ফলে আগামীতেও এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, এখানকার অনেক ইউনিয়নে জামায়াত-বিএনপি আগে থেকেই শক্তিশালী। আমরা তাদের ভোটব্যাংকে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
মন্তব্য