পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসার পর টানা দরপতনের মধ্যে প্রথমবারের মতো পর পর দুই দিন বাড়ল সূচক। কিছুটা বেড়েছে লেনদেনও। তবে তা এক হাজার কোটি টাকার নিচেই রয়ে গেছে।
বছর শেষ হতে বাকি আর তিন কর্মদিবস। এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ার কেনা শুরু করেনি। বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে।
গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় এবারও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার লেনদেন শুরু হয় বড় পতনের মধ্য দিয়ে। সেদিন ৭২ পয়েন্ট সূচক হারালেও সোমবার বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার তা বাড়ে আরও ৭৩ পয়েন্ট।
নিঃসন্দেহে বাজারের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদেরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
রোববার লেনদেনের শুরুর পর শেষ পর্যন্ত সূচক ক্রমেই যেভাবে পড়েছিল, তার বিপরীত চিত্র দেখা গেল দুই দিন পর। লেনদেনের শুরুতে সূচক যতটা বাড়ে, বেলা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ে আরও বেশি। শেষ সময়ে উঠে আরও উচ্চতায়।
গত ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে আবার বৈঠক করে দৃশ্যমান একটি ঘোষণা আসবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বরের থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন এক মাস চলার পর শুরু হয় পতন। সে সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে মতভিন্নতার বিষয়টি সামনে আসে। বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার মধ্যে থাকবে কি না, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের ক্রয়মূল্যে না কি বাজার মূল্যে হবে- এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে দুই সংস্থা। সঙ্গে আরও বেশি কিছু ইস্যু চলে আসে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেক আদেশ দিয়ে জানায়, ব্যাংকের ইস্যু করা পারপেচুয়াল বন্ড দিয়ে ব্যাসেল-থ্রি এর শর্ত পূরণ হবে না।
দুই সংস্থার মধ্যে এই মতবিরোধের বিষয়টি সামনে আসার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে। এর মধ্যে গত ৩০ নভেম্বর দুই পক্ষের বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসার কথা জানায় বিএসইসি। পরদিন সূচক দেয় লাফ। কিন্তু সেই রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ছড়ায় আতঙ্ক। পরদিন সকালে বড় পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় লেনদেন। সেদিনই অর্থ মন্ত্রণালয় দুই পক্ষকে বৈঠকে ডাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়, আর এরপর হারানো সূচক পুনরুদ্ধার করে বড় বড় উত্থান।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সেই বৈঠক শেষে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আবার পর আবার শুরু হয় পতন। সোমবার পর্যন্ত ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন কেবল সূচক বাড়ে। কমে বাকি ১০ দিন।
সেই বৈঠক শেষে গত ৯ ডিসেস্বর ৩২ পয়েন্ট আর ১৫ ডিসেম্বর ৩২ পয়েন্ট এবং ২১ ডিসেম্বর সূচক বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। বাকি প্রতি দিনই সূচক কমে।
ফলে সোমবার সূচক বাড়লেও তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠার মতো কিছু দেখেনি। এর মধ্যে মঙ্গলবার লেনদেন শুরুই হয় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে। বেলা সোয়া ১০টা পর্যন্ত বাড়ে ৩৯ পয়েন্ট। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে কমে আরও ১৬ পয়েন্ট। এরপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে সূচক বেড়েছে তত বেশি।
বেলা আড়াইটা বাজার চার মিনিট আগে সূচক বাড়ে আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়েন্ট। পরের চার মিনিটে সমন্বয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত ৭ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। সোমবার হাতবদল হয়েছিল ৭৪৫ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি বেড়ে হয়েছে ৮৭২ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার টাকা।
বেড়েছে ২৮৬টি কোম্পানির শেয়ারদর। বিপরীতে কমেছে ৬৯টির। অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর।
সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বস্ত্র খাতে। টানা সংশোধনের মধ্যে হাতে গোড়া দুই একটি ছাড়া বাকিগুলোর দাম বেড়েছে। ভালো দিন গেছে ব্যাংক, আর্থিক, বিমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও ওষুধ এবং রসায়ন খাতেও।
লেনদেনে সেরা বিমা খাত। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে বিবিধ, ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র।
উত্থানের নেপথ্যে যেসব কোম্পানি
সূচক বৃদ্ধিতে সূচক সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি। শেয়ারদর ২.১৫ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ১০.২২ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭.০৬ পয়েন্ট বাড়িয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১.৪৫ শতাংশ।
লাফার্জ হোলসিম, রবি, পাওয়ারগ্রিড, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন, আইএফআইসি ব্যাংক, বিএসআরএম স্টিল ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।
এই ১০ টি কোম্পানির কারণেই সূচকে যোগ হয়েছে ৩১.০৫ পয়েন্ট।
বিপরীতে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণ সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটি ২.৫৭ শতাংশ দর হারানোর কারণে সূচক কমেছে ৪.৮৩ পয়েন্ট।
ইউনিলিভার, রেকিড বেনকিনজার, বার্জার পেইন্টস, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা, এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সও সূচক কমিয়েছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ৯.৫৪ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় বস্ত্রের প্রাধান্য
বেশ কয়েক মাস পর এই চিত্র দেখা গেল পুঁজিবাজারে। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির ৬টিই এই একটি খাতের। গত তিন মাসের দরপতনে এই খাতটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দর। ৩৮ টাকার শেয়ার বেড়ে বেড়ে হয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৭৩ লাখ ১২ হাজার, হাতবদল হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৪ পয়সা।
সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অভাবনীয় আয়ের তথ্য জানানোর পর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণার পর রোববার ১২ শতাংশের বেশি এবং পরের দুই দিনে আরও ২০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ল।
উত্থানের তৃতীয় দিনে শেয়ার দর ৬১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ টাকা ১০ পয়সা। এ নিয়ে তিন দিনে শেয়ারদর ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়ল ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের আরেক কোম্পানি হামিদ ফেব্রিক্সের দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ।
আরও তিনটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি। এগুলো হচ্ছে ঢাকা ডাইং, সালভো ক্যামিকেল এবং আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
আট শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। এগুলোর মধ্যে আইসিবি ইমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৮.৬৯ শতাংশ এবং ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ শতাংশ।
দশম অবস্থানে থাকা আমান কটনের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৭১ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার ২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা।
আরও তিনটি কোম্পানির দর ছয় শতাংশের বেশি, ১৪টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ২৪টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৩৭টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৪৮টির দর ২ শতাংশের বেশি, ৯৪টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
এই তালিকার শীর্ষে ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, যার দর কমেছে ৪.৪৭ শতাংশ। ১২৩ টাকার শেয়ার নেমে এসেছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এএমসিএল প্রাণ এর দর কমেছে ৩.৭৪ শতাংশ। এছাড়া ইস্টার্ন ক্যাবলসের দর কমেছে ৩.৬০ শতাংশ। ৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মোট ৬ হাজার ৫৬৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.৫০ শতাংশ। ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার হাতবদল হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৭৬৭টি শেয়ার।
ফার্মা এইডের দর ৩.৩৯ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর ৩.২৪ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি ৩.১২ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের দর ৩.০৩ শতাংশ কমেছে।
নবম স্থানে থাকা কে অ্যান্ড কিউয়ের দর ২.৯০ শতাংশ এবং দশম অবস্থানে থাকা এটলাস বাংলাদেশ দর হারিয়েছে ২.৬৩ শতাংশ।
আরও ৯টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৩টির দর এক শতাংশের বেশি কমেছে।
লেনদেনে শীর্ষ ১০
শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডে লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৮টি ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯১টি শেয়ার।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা সোনালী পেপারের লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, হাতবদল হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৬টি শেয়ার।
২১ কোটি ২৯ লাখ টাকায় ওয়ান ব্যাংকে হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ২১ হাজার ১৪০টি শেয়ার। ১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকায় ফরচুন সুজে হাতবদল হয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৬টি শেয়ার।
এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মায় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বিকন ফার্মায় ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলে ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
আরও পড়ুন:
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহ মোটেই ভালো কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের পতনের পর নববর্ষের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কার্যদিবসেও বড় পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দেশের উভয় পুঁজিবাজার। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। মন্দাবস্থা চলছে বাকি দুই সূচকেও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১০ এবং বাছাইকৃত শেয়ারের ব্লু-চিপ সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগের দরপতন হয়েছে। আজ ৯৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসেবে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন ক্যাটাগরিতেই প্রধান্য পেয়েছে দর কমা কোম্পানির সংখ্যা। বিশেষ করে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১১টির এবং কমেছে ৬৭টির; আর লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির।
লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। মাত্র ৭টি কোম্পানির ইউনিটের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টির।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে আজ ২৬টি কোম্পানির মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে মারিকো বাংলাদেশ।
ডিএসইতে সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। সারা দিনে মোট ৪৪৬ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, গতদিন যার পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা।
৯.৯৪ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় আছে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। ১৪২.৯০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়ে দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৭.১০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯.৯৬ শতাংশ দর হারিয়ে আজ একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে খান ব্রাদার্সের। প্রতিটি শেয়ার ১৩৪.৫০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে ১২১.১০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বড় পতন
.ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সারা দিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট।
লেনদেন অংশ নেওয়া ২১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
সূচকের পাশাপাশি সিএসইতি আজ লেনদেনও কমেছে। গত কার্যদিবসে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
এদিন ৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে আর্থিক মূল্যে শীর্ষ শেয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড। অপরদিকে ৯.৭৭ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য