নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে সার্চ কমিটির কোনো নাম প্রস্তাব করেনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।
রোববার প্রায় এক ঘণ্টা বঙ্গভবনে সংলাপ শেষে বের হয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে দলটির কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনে কোনো নাম চাননি। তাই আমরাও কোনো নাম প্রস্তাব করিনি।’
এর আগে বিকেল ৪টায় আইভি আহমেদের নেতৃত্বে মোট সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে সংলাপে যায়।
দলের অন্য সদস্যরা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, কাজী সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আহমেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পার্থ সারথি চক্রবর্তী ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৃষি অনিল চক্রবর্তী।
এর আগে ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরু হয়।
সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘সার্চ কমিটি গঠনের আমাদের কাছে কোনো নামও চায়নি। তাই আমরাও কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। আমরা মনে করি সীমিত সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি করা সম্ভব নয়।’
এই সময় দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আজকে সংলাপের বিষয় ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে সংলাপ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে বির্তক সেটি নিরসন করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়ে সময় পাচ্ছি না, এক ধরনের কথা। আর আইনের উদ্যোগ না দিয়ে সময় পাচ্ছি না, এটা আরেক ধরণের কথা। আমরা মনে করি আইন প্রণয়নে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
আপনার কি তাহলে সার্চ কমিটির বিপক্ষে জানতে চাইলে আইভি আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলছি, আইন করতে হবে। সার্চ কমিটির পক্ষে না বিপক্ষে সেই বিষয়টি সংলাপে আসেনি।’
সার্চ কমিটি হলে ন্যাপ সেটি মানবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন হবে তখন বোঝা যাবে।’
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, সংলাপে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে ন্যাপ।
ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন করার জন্য আমরা বলেছি।’
বিকল্প কোনো প্রস্তাব দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ভোটাধিকারের জন্য আমরা সবাই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারি। সেখানে যেন কোনো মন্ত্রী-এমপি প্রভাব খাটাতে না পারে। এই ধরনের প্রস্তাবগুলো আমরা দিয়েছি।’
আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন হলে ন্যাপ সেটি মেনে নিবে কি না জানতে চাইলে আইভি আহমেদ বলেন, ‘এটা যখন কমিশন গঠন হবে, তখনকার বিষয়। তখন ইসি কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, জনগণ ভোট দিতে যেতে পারছে কি না, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারছে কি না, সেটার ওপর নির্ভর করছে।’
আপনাদের প্রস্তাবের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কী বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মহানাম্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আপনারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। ফলে আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে থেকে জনগণের যে দাবি, আপনাদের যে দাবি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
আইভি আহমেদ বলেন, ‘এখন উনি কতটুকু করবেন, সেটা আমরা ভবিষ্যতে দেখব, বুঝব। এর আগে তো কিছু বলব না।’
লিখিত বক্তব্যে আইভি আহমেদ বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি গঠন করে। ২০১৩ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিনের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সাহেবের সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠন হয়।
‘২০১৮ সালে একই পদ্ধতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ.কে.এম নুরুল হুদার অধীনের জাতীয় নির্বাচন এবং এরপরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে যথেচ্ছ টাকার ব্যবহার, অস্ত্রের মহড়া, ভোটকেন্দ্রের বুথ দখল ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন এসব অঘটনের প্রতিকারের বিষয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে,
# পবিত্র সংবিধানকে যথাযথ অনুসরণ করা প্রয়োজন। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে একটি আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের নির্দেশনা দেয়া আছে। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে আমরা সংবিধান অনুযায়ী আইন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
# নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ, নির্মোহ, সৎ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়োগ দিতে হবে।
# নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহারকারী, যথেচ্ছ টাকা ও অস্ত্র এবং পেশীশক্তি ব্যবহারকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।
# নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও প্রচারণায় অংশ নেয়া বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনকালীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
# নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও অধিকতর শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। কমিশনকে নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রদবদল প্রয়োজনে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা ও সাংবিধানিক আইন প্রয়োগের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
# নির্বাচন কমিশনের কৃতকর্ম ও ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
# স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। শনিবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপের পর জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর ছয় প্রতিনিধিসহ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের পর দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কিছু মৌলিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ৯ অক্টোবর দলীয়ভাবে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি। তারা এসেছে দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবে, আমরা সে বিষয়ে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য কিছু মৌলিক বিষয়ের সংস্কার করতেই হবে। কী কী বিষয়ে তারা সংস্কার করবে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংস্কারের জন্য সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা আশা করছি এই যৌক্তিক সময়টা নাতিদীর্ঘ হবে না।’
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘আগামী ৯ অক্টোবর আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে উন্মুক্ত করব। আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরব- কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে।’
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেত্বত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির আবু তাহের মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, এম এম শামসুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অপরদিকে সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছি। এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া বিষয়ক আইন এবং সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছি।
‘ভুয়া নির্বাচনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার কথা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। বিচার বিভাগে ২০ জন বিচারপতি এখনও কাজ করছেন যারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।
‘এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের যেন জামিন দেয়া না হয়। গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সময় তাদের মতামত জানতে শনিবার বিকেল থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সংলাপে বসবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শুরু হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও কয়েকজন উপদেষ্টা অংশ নেবেন।
বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিবিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রথম দিনের সংলাপে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে।
আজকের সংলাপ রাত আটটা পর্যন্ত চলতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররে নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দেবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ নেয়া।’
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপ এটি।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলায় আসামি করায় ক্ষোভ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশুলিয়া থানা বিএনপির ওই সাধারণ সম্পাদক।
আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় শনিবার সকালে মোহাম্মদ গফুর মিয়ার নিজ বাসভবনে থানা বিএনপির পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গফুর মিয়া আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ধামসোনা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা গফুর মিয়া জানান, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আশুলিয়া থানার অন্তর্গত বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন। এসব ঘটনায় আশুলিয়া থানায় হতাহতদের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আদালত ও থানায় মামলা করা হচ্ছে। এসব মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা করা হয়েছে।
গফুর আরও জানান, জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাভার ও আশুলিয়া থানায় তার নামে আরও পাঁচটি মামলা করা হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ১৬ বছরে ৩৬টি মামলার আসামি তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় যদি কাউকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয় এবং হয়রানির শিকার হন, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে। ‘আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন এ বিষয়ে তারা খতিয়ে দেখবেন।’
আরও পড়ুন:‘বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন অভিনেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বর্ষীয়াণ এই অভিনেতার সভাপতিত্বে দল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।
নতুন দলের ৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হবে এ মাসের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’ দলের আনুষ্ঠানিক প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢালিউডের ‘সোনালি যুগ’-এর জনপ্রিয় অভিনেতা সোহেল রানা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে পড়ার সময় তিনি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৬৫ সালে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৮ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সোহেল রানা ইকবাল হলের ভিপি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্যপদ গ্রহণ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্বাচনি উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
সোহেল রানা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরপরই প্রযোজক হিসেবে পারভেজ ফিল্মস প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন।
এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণ করেন।
১৯৭৩ সালে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হুসাইনের বিখ্যাত স্পাই থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়।
অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সোহেল রানা তার ক্যারিয়ারে আজীবন সম্মাননাসহ তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
ভারতের সঙ্গে করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা অন্য দেশের সঙ্গে যেসব গোপন চুক্তি করেছেন তা প্রকাশ করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতালি, জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি। বাংলাদেশেও হবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী শহীদ পরিবারের সদস্যদের যেন সরকারি চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পক্ষে হাঁটতে শুরু করেছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানান রিজভী।
আর্থিক সহযোগিতা প্রদানকালে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আগামী শনিবার বেলা আড়াইটায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বৃহস্পতিবার বিকেলে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি শুনেছি যে শনিবার বেলা আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে এখনও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শনিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। এতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সংলাপে উপদেষ্টামণ্ডলী গঠিত ছয়টি কমিশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ নেয়া হবে, জানান শফিকুল আলম।
মন্তব্য