হামলা, সংঘর্ষ, ভোট বর্জন, ব্যালট ছিনতাই, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোট শেষ হয়েছে। তবে এবার ভোট চলাকালে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে এবং আনন্দমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়েছে। ভোট চলাকালে প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ২৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময় আটক হয়েছেন ৬৩ জন। পাঁচজনকে শাস্তি দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এর আগের ধাপগুলোর মধ্যে বেশি প্রাণহানি ঘটে দ্বিতীয় ধাপে। নিউজবাংলার হিসাবে এই ধাপের ভোটের আগে-পরে অন্তত ১৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে শুধু নরসিংদীতেই মৃত্যু হয়েছিল সাতজনের। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতায় প্রাণ হারান ১০ জন।
সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে পৌষের শীতের মধ্যে রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় চতুর্থ ধাপের ভোট। বিরতিহীনভাবে ভোট নেয়া হয় বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা।
ভোট শুরুর আগে বিভিন্ন উপজেলায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের সারি দেখা গেছে। নারী ভোটারদেরও উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে দেখা গেছে অনেক বয়স্ক মানুষকে।
ভোট শেষের সোয়া ১ ঘণ্টা আগে মাদারীপুরের একটি কেন্দ্রে হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
ছুরির আঘাতে তার ডান হাতের তিনটি আঙুল কাটা পড়েছে। এর মধ্যে সেলাই পড়েছে দুটিতে। তাকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ইউপি নির্বাচনে ইশিবপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মামা সালাহ উদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। মামার পক্ষে বেশ কিছুদিন তিনি প্রচার চালিয়েছেন।
ভোট কারচুপিরর অভিযোগ শুনে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাংকান্দি সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান রাব্বানী। এ সময় প্রতিপক্ষ মোশারফ মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা তার ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে তাকে ছুরি দিয়ে কোপ দেয়া হয়। হামলা ঠেকাতে গিয়ে তার ডান হাতের দুটি আঙুল কেটে যায়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে মোশারফ মোল্লার লোকজন প্রকাশ্যে ভোট কেটে নেয়ার চেষ্টা করছিল। পরে আমিসহ কিছু লোক গিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে আমাকে অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়া হয়। আমি থানায় অভিযোগ করব।’
এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. সাদিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কারচুপির অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন পুলিশ নানা অজুহাতে আমার বাসায় অভিযান চালিয়েছে, আমার কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। কোনো কেন্দ্রে আমার এজেন্ট বসতে দেয়া হয়নি। এমনকি আমি নিজের ভোটও দিতে পারিনি। তাই নির্বাচন বর্জন করছি।’
তবে হুলাইন ছালেহ নূর কলেজের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সোহেল বলেন, ‘এজেন্ট বের করে দেয়ার কোনো অভিযোগ আমি পাইনি, এখনও স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন নারী এজেন্ট কেন্দ্রে আছেন।’
মেম্বার প্রার্থীর গুলিতে ফেনীর একটি কেন্দ্রের বাইরে ১১ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছেন।
সোনাগাজীর দক্ষিণ চরচান্দিয়া হোসাইনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, মেম্বার প্রার্থী ওমর ফারুক সজিবের লোকজন রোববার দুপুরে ওই কেন্দ্র দখল করতে চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন মেম্বার প্রার্থী তাকে বাধা দেন। তখন গুলি করেন তার অনুসারীরা। এতে অন্তত ১১ জন গুলিবিদ্ধ হন।
তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন ওমর ফারুক সজিব। তার দাবি, এ ঘটনায় তিনি বা তার কোনো কর্মী জড়িত নন। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় দুই পোলিং এজেন্টকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বরখাস্ত করা হয়েছে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে।
দণ্ড পাওয়া পোলিং এজেন্টরা হলেন আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল বাশার ও বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের মহসিন মিয়া। হাবিবুলকে ছয় মাসের এবং মহসিনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়ার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের উত্তর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘোড়া মার্কা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুর রহমানের পোলিং এজেন্ট হাবিবুল বাশারকে তল্লাশি করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও ১৭ হাজার টাকার একটি খাম পাওয়া যায়।
খামের ওপর লেখা নম্বরটি ভোটকেন্দ্রেটির একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বলে নিশ্চিত হন পুলিশের সদস্যরা।
আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে পোলিং এজেন্ট হাবিবুলকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অলোক কুমারকে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করেন।
বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট মহসিনকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় মহসিনের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন এবং ৩৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নবীনগর উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল সিদ্দিক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে মহসিনকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এ ছাড়া বিজয়নগরে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় একজনকে কুপিয়ে জখম করার খবর পাওয়া গেছে।
জামাল নামে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের খোদহাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ফয়সাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ১০৫ নম্বর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোটাররা বলছেন, প্রভাবশালী প্রার্থীদের এজেন্টদের ইশারায় প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যথায় তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বারবার জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়। বের করে দেয়া হয় অভিযুক্তদের।’
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ এক নৌকার এজেন্টকে আটক করা হয়েছে।
উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম।
এ সময় তার কাছ থেকে ৩৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। আটকের নাম মো. সবুজ। তার বাড়ি কেন্দ্র এলাকায়।
নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মধ্য চরশুল্লুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সেলিনা আক্তার নামে এক নারীকে আটক করা হয়েছে।
আটক সেলিনা আক্তারের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়।
রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘার তিন ইউনিয়নে ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাদের মধ্যে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে লালমনিরহাট হাতীবান্ধার গড্ডীমারী ইউনিয়নে এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছেন জেলা প্রশাসক।
প্রত্যাহার হওয়া মো. দেলোয়ার হোসেন মধ্য গড্ডীমারী লুৎফর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে।
আলুকদিয়া ইউনিয়নের জোড়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহতরা হলেন জোড়াঘাটা গ্রামের দুই ভাই রাজু আহমেদ ও রাসেল আহমেদ।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন জানান, ‘আহত দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তারা শঙ্কামুক্ত।’
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে একটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণের মধ্যেই হট্টগোল আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার ৫ নম্বর সহনাটি ইউনিয়নের ভালুকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভোটাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রটিতে হট্টগোল আর চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ভোট নেয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২ নম্বর আখানগর ইউনিয়নে ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় বাবা-মেয়েকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ইউনিয়নের ঝাড়গাঁও রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। তাদের আটকের পর উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে একজন আহত হয়েছেন।
আটক দুজন হলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাবুল ও তার মেয়ে কামরুন নাহার। তারা কোন প্রার্থীর জন্য ব্যালট ছিনতাই করতে যান, তা অবশ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
ভোটগ্রহণ শেষে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নির্বাচন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ১৫টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়েছে। আমাদের মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৯ হাজার ২২৪টি। সেই হিসাবে ভোটকেন্দ্রের তুলনায় স্থগিত ভোটকেন্দ্রের হার শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর নিয়েছি। সব মিলিয়ে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে, জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। তাই ভোটারদের উপস্থিতি আমরা ৭০ শতাংশের বেশি আশা করছি।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য