প্রায় প্রতি সপ্তাহের শুরুতে পতনের ধারা থেকে বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আবারও সূচকের বড় পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন কিছুটা বাড়লেও এক দিনে তিন শ কোম্পানির দরপতনে বাজার ঘিরে যে হতাশা আছে, তা আরও বড় হলো।
গত ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর এ নিয়ে ১২ কর্মদিবসের মধ্যে ১০ দিনই সূচকের পতন দেখল পুঁজিবাজার। এই কয় দিনে সূচক পড়ল ৪১৯ পয়েন্ট।
রোববার লেনদেনের শুরুর প্রথম তিন মিনিটেই কেবল সূচক বেড়েছিল। কিন্তু এরপর কেবলই পড়েছে। বেলা ২ টা ৮ মিনিটে এক পর্যায়ে সূচক পড়ে যায় ৯২ পয়েন্ট। তবে সেখান থেকে ২০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করে লেনদেন শেষ হয়।
৭২ পয়েন্ট হারিয়ে সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৬২৯ পয়েন্ট। গত ৯ আগস্ট সূচক ছিল এর চেয়ে এক পয়েন্ট কম।
আগের দিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত উল ইসলাম বিনিয়োগকারীদেরকে আতঙ্কিত না হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দেন। বলেন, এখন শেয়ার বিক্রির নয়, কেনার সময়। আর সবাই মিলে শেয়ার কেনা শুরু করলেই বাজার আরও ঘুরে দাঁড়াবে।
কিন্তু সেটি হয়নি। বড় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ার না কিনে পর্যবেক্ষণে থাকছেন- এ বিষয়টি স্পষ্ট। মাস তিনেক আগে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ লেনদেন হতো, সেটিও হচ্ছে না এখন।
দিন শেষে লেনদেন আগের দিন বৃহস্পতিবারের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও সেটি নয় শ কোটি টাকাও ছাড়াতে পারেনি।
দিন শেষে দর কমেছে ৩০০ কোম্পানির শেয়ারের। দর বেড়েছে ৪৭টির আর দর ধরে রাখতে পারে ৩১টি কোম্পানি।
২০২০ সালের মাঝামাঝি শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পুঁজিবাজার এক দশকের মন্দাভাব কাটিয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত টানা উত্থানের পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাজার সংশোধনে প্রায় ৯০০ পয়েন্ট সূচক কমে।
দৈনিক লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার ঘর থেকে নেমে আসে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে।
৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরেক দফা উত্থানে সূচক বাড়ে প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট। নিয়মিত লেনদেন হতে থাকে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
তবে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধন শুরু হয়। এর মধ্যেও একটি নতুন প্রবণতা দেখা দেয়। সংশোধনে স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদরে পতন হলেও বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর দর বাড়ার কারণে সূচক বাড়তে থাকে।
পুঁজিবাজারে এই দরপতনের পেছনে বাজার নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতভিন্নতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বাজারে ব্যাংকের যে বিনিয়োগসীমা, সেটি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে নাকি বাজার মূল্যে বিবেচনা হবে, বন্ডে বিনিয়োগ এই সীমার ভেতরে থাকবে, না কি বাইরে থাকবে- এই বিষয়ে একমত হতে পারছে না দুই পক্ষ।
গত ৩০ নভেম্বর দুই পক্ষের বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা না হওয়ার পর ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে আরও একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে আরও একটি আলোচনার কথা জানানো হয়। চলতি মাসে বা আগামী জানুয়ারির শুরুতে বৈঠক শেষে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে জানানো হয়।
তবে সেদিনের আলোচনায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। তবে এই পতনের মধ্যেও পরের বৈঠক কবে হবে-সে বিষয়ে কোনো কিছুই বলছে না মন্ত্রণালয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বিএসইসি।
সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় যেসব কোম্পানি
এমন কোনো খাত নেই, যেটি দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়নি। তবে বিমায় পতন তুলনামূলক কিছুটা কম। লেনদেনেও সেরা ছিল এই খাত। বেশ কয়েক মাস পরে এই চিত্র দেখা গেছে পুঁজিবাজারে।
লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে কাগজ ও প্রকাশনা খাত। প্রথমবারের মতো এই ঘটনাটি দেখা গেল গত এক বছরে।
অক্টোবর ও নভেম্বরে আগ্রহ ফিরে পেলেও ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর এখন পড়তির দিকে, পাশাপাশি কমছে লেনদেন। ৬০ কোটি টাকার কম শেয়ার হাতবদল হয়েছে এই খাতে।
সূচক পতনের তালিকায় সবার ওপরে ছিল রবি। ৪.২১ শতাংশ দর কমার পর ১১.৭১ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে কোম্পানিটি।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওয়ালটন, যার ১.৩৩ শতাংশ দরপতনে সূছক কমেছে ৭ পয়েন্ট। একই পরিমাণ সূচক কমিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো। কোম্পানিটির দর কমেছে ১.৩৭ শতাংশ।
গত এক বছরে শতকরা হিসেবে সবয়েয়ে বেশি শেয়ারদর বাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে সূচক কমেছে ৩.৯২ পয়েন্ট। টানা পতনের মধ্যে থাকা কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ১.৯৯ শতাংশ।
এছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউনিলিভার, রেনাটা ও ওরিয়ন ফার্মার দর পতনও সূচক কমাতে প্রধান ভূমিকায় ছিল।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ৩৯.৭৫ পয়েন্ট।
বিপরীতে ৩.৭৫ শতাংশ দর বৃদ্ধির কারণে সূচকে সবচেয়ে বেশি ১.৪৬ পয়েন্ট যোগ করেছে বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনজিনজার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১.৪৪ পয়েন্ট যোগ করেছে বিকন ফার্মা। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১.৭১ শতাংশ।
লভ্যাংশ ঘোষণার পর ১২.৩৫ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া ১.৩৯ পয়েন্ট যোগ করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এ ছাড়া আইসিবি, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি, এটলাস, এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, এনভয় টেক্সটাইল ও ডেফোডিল কম্পিউটার্সের দর বৃদ্ধির কারণেও সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ হয়েছে।
তবে এই কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবেই খুব বেশি পয়েন্ট যোগ করতে পারেনি। ১০টি কোম্পানি মিলিয়ে সূচকে যোগ করতে পেরেছে কেবল ৬.৯৭ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানি
লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে কারণে মূল্য বৃদ্ধির সীমা না থাকার দিন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ারদর বেড়েছে ১২.৩৪ শতাংশ। কোম্পানিটির এদিন ৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকার ৯১ লাখ ৭০ হাজার ৬০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গত বছর লভ্যাংশ ছিল এক টাকা। তবে বিনিয়োগকারীরা চমৎকৃত হয়েছেন কোম্পানির আয়ে। গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে এই বছরে।
২০২১ সালে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৪ টাকা ৭১ পয়সা। আগের বছরে যা ছিল ২ টাকা ৭২ পয়সা। আবার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৮ পয়সা।
এই একটি কোম্পানি ছাড়া আর কোনো কোম্পানির দর দিনের সর্বোচ্চ সীমায় দেখা যায়নি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৮৩ শতাংশ।
আগের দিন ১০ টাকা ২০ পয়সা দরের বিক্রি হওয়া শেয়ার দর পৌঁছে ১০ টাকা ৯০ পয়সায়। ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লেনদেনে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ড্যাফোডিল কম্পিউটারের শেয়ার দর ৫.৪১ শতাংশ, জিল বাংলা সুগার মিলের দর ৫ শতাংশ, এটলাস বাংলাদেশের দর ৪.৭৪ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.৩১ শতাংশ বেড়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলের দর ৩.৭৫৮ শতাংশ, রেকিট বেনকিনজারের দর ৩.৭৫ শতাংশ, সিলকো ফার্মার দর ৩.২৬ শতাংশ এবং তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল ৩.১৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও চারটি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৬টির দর ২ শতাংশের বেশি, ৬ টির দর এক শতাংশের বেশি বেড়েছে।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
দর পতনে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে ছিল ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস। এই কোম্পানিটির লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণায় বিনিয়োগকারীরা খুশি হতে পারেনি।
কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১৪ টাকা নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। এই লভ্যাংশ ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ। তারপরেও কোম্পানিটি ৫০৩ টাকা ৯০ পয়সা বা ১৫.১৬ শতাংশ দর হারিয়েছে লভ্যাংশ সংক্রান্ত আরও উচ্চাশার কারণে।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন এক কোটি টাকারও কম। আগামী এক বছরের মধ্যে সেটি ৩০ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা আছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বোনাস শেয়ার আশা করেছিল। এই প্রত্যাশায় গত ৬ মাসে শেয়ারদর তিন গুণ হয়ে গিয়েছিল।
কোম্পানিটির ৪৪ হাজার ৬৪৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৯১ শতাংশ দর হারিয়েছে ফু ওয়াং ফুডস। ৯০ লাখ ১৩ হাজার টাকায় ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭১৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাপোলো ইস্পাতের দর ৬.৭৪ শতাংশ, চতুর্থ অবস্থানে থাকা স্টাইলক্রাফটের দর ৬.৬৯ শতাংশ ও পঞ্চম অবস্থানে থাকা লিব্রা ইনফিউশনের দর কমেছে ৬.১৩ শতাংশ।
এছাড়া তাল্লু স্পিনিংয়ের দর ৬.০৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের দর ৫.৯৫ শতাংশ, সাভার রিফ্যাক্টরিজের দর ৫.৯৩ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের দর ৫.৭৬ শতাংশ, ফার্মা এইডের দর কমেছে ৫.৪৭ শতাংশ।
সর্বোচ্চ পরিমাণ দরপতনের তালিকায় ছিল সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী আঁশ, স্টান্ডার্ড সিরামিকস, কে অ্যান্ড কিউ, কাট্টালি টেক্সটাইল, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক।
শীর্ষ ১০ ছাড়াও আরও ৭টি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১৯টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৪৯টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৫৪টির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
লেনদেনে সেরা দশ কোম্পানি
এই তালিকায় শীর্ষে ছিল সোনালী পেপার। রোববার কোম্পানিটির ১৫৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৪১টি শেয়ার।
গত ১০ কর্মদিবসে মাত্র একদিন মাত্র দর কমেছে কোম্পানিটির। বেড়েছে বাকি নয়দিন।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডে লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৪২ লাখ ২৮ হাজার ৫৫৯টি শেয়ার।
এছাড়া এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৫২ লাখ ৮৭ হাজার শেয়ার।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৯১ লাখ ৭০ হাজার ৬০টি শেয়ার।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোতে ১৩ কোটি ১ লাখ টাকা, ওয়ান ব্যাংকে ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ফরচুন সুজে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এশিয়া প্যাসিফিকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ১১ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৫ লাখ ১৬ হাজার ১৩৩টি।
আরও পড়ুন:শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহ মোটেই ভালো কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের পতনের পর নববর্ষের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কার্যদিবসেও বড় পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দেশের উভয় পুঁজিবাজার। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। মন্দাবস্থা চলছে বাকি দুই সূচকেও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১০ এবং বাছাইকৃত শেয়ারের ব্লু-চিপ সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগের দরপতন হয়েছে। আজ ৯৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসেবে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন ক্যাটাগরিতেই প্রধান্য পেয়েছে দর কমা কোম্পানির সংখ্যা। বিশেষ করে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১১টির এবং কমেছে ৬৭টির; আর লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির।
লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। মাত্র ৭টি কোম্পানির ইউনিটের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টির।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে আজ ২৬টি কোম্পানির মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে মারিকো বাংলাদেশ।
ডিএসইতে সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। সারা দিনে মোট ৪৪৬ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, গতদিন যার পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা।
৯.৯৪ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় আছে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। ১৪২.৯০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়ে দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৭.১০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯.৯৬ শতাংশ দর হারিয়ে আজ একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে খান ব্রাদার্সের। প্রতিটি শেয়ার ১৩৪.৫০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে ১২১.১০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বড় পতন
.ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সারা দিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট।
লেনদেন অংশ নেওয়া ২১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
সূচকের পাশাপাশি সিএসইতি আজ লেনদেনও কমেছে। গত কার্যদিবসে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
এদিন ৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে আর্থিক মূল্যে শীর্ষ শেয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড। অপরদিকে ৯.৭৭ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য