বিক্রয়মূল্যের তথ্য গোপন করে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর ইসলামপুরে ক্ল্যাসিকাল হোমটেক্স বিপণন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট গোয়েন্দারা।
অভিযানের পর বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৪১ কোটি টাকার বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। এতে প্রায় ৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকার ইসলামপুর রোডের জাহাঙ্গীর টাওয়ারে ক্ল্যাসিকাল হোমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মূল কার্যালয়। সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি শাখা রয়েছে। এরা মূলত বেডশিট, কম্ফোর্টার, কম্বল ও অন্যান্য হোম টেক্সটাইল সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করে থাকে।
আইন অনুযায়ী, পোশাকের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। ক্ল্যাসিকাল হোমটেক্স ভুয়া চালান ইস্যু করে বিক্রির তথ্য গোপন করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে চালানো অভিযানের সময় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রির তথ্য গোপন করে ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের কোতোয়ালি বিভাগের আরমানিটোলা ভ্যাট সার্কেলে কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মাসিক রিটার্নে প্রকৃত বিক্রির তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
দেখা গেছে, সেবাদানের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির মূল্যতালিকা নেই। এ ছাড়া ভ্যাট চালান এবং সেবার বিপরীতে তারা তথ্য সংরক্ষণ করে না। ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০০ কোটি ৬৭ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। অথচ ভ্যাট অফিসে মাসিক রিটার্নে সর্বমোট ৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিক্রি দেখানো হয়।
রিটার্নে দেয়া তথ্য ও প্রকৃত বিক্রির পার্থক্য পাওয়া যায় প্রায় ১৪১ কোটি টাকা। বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। যথাসময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ায় ২ শতাংশ হারে সুদ বাবদ ভ্যাট আসে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয় ৬ কোটি টাকা।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এ অবস্থা সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নোয়াপাড়াসহ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশেরও একই হাল।
এ ছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পর্যন্ত দুই লেনের সড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়কের এই দুরাবস্থায় বিশেষ করে পণ্যবোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে যানবাহনের গতি কমেছে এবং ঘন ঘন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যানজটের ভোগান্তি এবং ধুলাদূষণ যাত্রীদের জন্য প্রতিদিনের অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার একটি বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মহাসড়কের বাইরে কুমিল্লার অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কও বেহাল।
৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক খানাখন্দে পূর্ণ ও সরু হওয়ায় চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য ভ্রমণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে।
যাত্রী ও চালকদের ওপর প্রভাব
কুমিল্লা বাসমালিক সমিতির সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘কুমিল্লায় মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালক-যাত্রী উভয়কেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিনিবাস চালক আবুল হোসেন প্রতিদিনের ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সরু রাস্তা, ভারী যানবাহন এবং গর্ত সব মিলিয়ে চালকদের জন্য একটি নিয়মিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মুজাফফরগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাঁদপুর অংশে যাতায়াত অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারি বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা ১৫ দিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের বৃহত্তম বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগকারী প্রধান সড়ক হিসেবে কাজ করে।
মহাসড়কটি গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষির মতো শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকে সহজতর করে, যা আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এ রুট দিয়ে পরিচালিত হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে শুধু সড়ক নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হবে না, দেশের অর্থনৈতিক গতিও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন:স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে মসুর ডাল, খোলা সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, এলএনজি, সার এবং ক্রুড ও পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম তেল কিনবে সরকার।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে বুধবার দুপুরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলাদা তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপার অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্ট বলেন, ‘আমরা তাড়াতাড়ি প্রসেস করে, যৌক্তিক যে জিনিসগুলো ক্রয় করা প্রয়োজন, সেগুলো অনুমোদন দিয়ে থাকি। আজকে আমরা বিভিন্ন ধরনের সার কেনার অনুমোদন দিয়েছি। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে নবম, দশম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাঠ্যবই আমরা শিগগিরই চাচ্ছি। জানুয়ারির মধ্যে আমরা পাঠ্যবই করে ফেলতে বলেছি। চেষ্টা করবে, তবে জানুয়ারির মধ্যে হয়তো সবগুলো করে ফেলতে পারবে না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, খোলাবাজারে বিক্রয় কর্মসূচির জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল, ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল ও ১ লাখ ১০ হাজার লিটার পাম অয়েল কিনবে ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।
রাজশাহীর নাবিল নবা ফুডস লিমিটেড থেকে টিসিবির জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা ৯৭ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে সয়াবিন তেল কেনা হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে ১৪০ টাকা। ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
টিসিবির জন্য পাম অয়েলও কেনা হবে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকেই। ১ কোটি ১০ লাখ লিটার খোলা পাম অয়েলের প্রতি লিটার ১৩০ টাকা দরে মোট ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করবে বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।
৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি এমএমবিটিইউ ১৫.০২ ডলারে এলএনজি সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড।
এ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি) থেকে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ৩৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ লাখ টন মুরবান ক্রুড পেট্রোলিয়াম (এএলসি) আমদানি করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে।
ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড, ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর অ্যান্ড কোং ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি ১৬৪ লাখ টাকা।
প্রস্তাবে পেট্রোলিয়ামের পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
সৌদি আরবের এসএবিআইসি এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ২২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকায় জেএসসি ফরিন ইকোনমিক করপোরেশন ‘প্রোডিন্টর্গ’ থেকে ৩০ হাজার টন এমওপি সার, মরক্কোর ওসিপি থেকে ২৮০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার এবং মরক্কো থেকে ২৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মূল্যে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানি করবে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহের জন্য বিভিন্ন সরবরাহকারীকে চুক্তি প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য ৬০ কোটি ডলারের নীতি-ভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই অর্থ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের দক্ষতা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র-সংস্কারের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের মতো কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিবি এ তথ্য জানিয়েছে।
এডিবির আঞ্চলিক প্রধান অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন-পরবর্তী উন্নয়ন তহবিলের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে এডিবি এই ঋণের আবেদনে দ্রুত সাড়া দিয়েছে। এই সংস্কারগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়।’
এডিবির এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশের কর ও মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঋণ বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা কার্যকর করতে সাহায্য করবে। এই কর্মসূচিতে ডিজিটালাইজেশন ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, কর প্রণোদনা ও অব্যাহতির যুক্তিসংগতকরণ এবং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই ঋণ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক পরিবেশ সহজ করা এবং সমতাভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করছে।
এদিকে বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা সহজ করতে একটি অনলাইন একীভূত প্ল্যাটফর্মে ১৩০টিরও বেশি সেবা চালু করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুশাসন ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণের উন্নয়ন এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজতর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত একশ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিবি একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, সোমবার বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, লেনদেন তলব করার জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
চিঠিতে তলব করা ব্যক্তিদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা কোথায় ও কীভাবে এসেছে, পরে ওই টাকা কোথায় খরচ হয়েছে এবং নগদে উত্তোলন করা হয়েছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং তার বোন শেখ রেহানা একজন ট্রাস্টি।
এ ছাড়া এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বা ট্রাস্টের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর বা জমা হয়েছে, তাদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ সচল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, এখন থেকে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদিত এডিপি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের হার বাড়াতে পারব বলে আশা করছি।’
সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী যেকোনো দিক থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা অনিয়ম হয়। এর ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছে। এতে বাস্তবায়নের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করব। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব ভালো প্রকল্পের কথা ভাবছি এবং যেগুলো নতুন প্রকল্প পরিচালক পেয়েছে, সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে।’
গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র আট শতাংশ বাস্তবায়ন করে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের রেকর্ড গড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বাজেট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকায়।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও একই হারে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫৭ টাকা লিটার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে তুলনামূলক কম রেমিট্যান্স এলেও ডিসেম্বরের শুরুতেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতে সুবাতাস বইছে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাতদিনে দেশে এসেছে ৬১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি ডলার।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে উঠা-নামার প্রবণতা দেখা গেছে। গত জুনে ২৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ডলারে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সের পালে ফের হাওয়া লাগতে শুরু করে।
আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২২ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এরপর অক্টোবরে (২৩৯ কোটি ডলার) ফের রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে, যা নভেম্বরেও (২১৯ কোটি ডলার) অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে ফের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য