২০০৮ সাল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তখন কারাবন্দি। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবু তখন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন এই সভাপতি।
এর আগের নির্বাচনগুলোতেও কামরানের এই জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। ১৯৭২ সালে ছাত্রাবস্থায়ই নির্বাচিত হয়েছিলেন জনপ্রতিনিধি।
কেন কামরান এত জনপ্রিয়? ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সেবার কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রয়াত সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরুকে।
জবাবে শীরু বলেছিলেন, ‘কামরানকে কেউ আগে সালাম দিতে পারে না। তিনিই সবাইকে আগে সালাম দেন। সিলেটের লোকজন রাস্তাঘাটের উন্নয়নের চাইতে ভালো ব্যবহার ও সম্মান চান। কামরান সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন এবং সবাইকে সম্মান দেখান। এ কারণে সিলেটবাসীও তাকে পছন্দ করেন।’
এই ‘ভালো ব্যবহার’ দিয়েই টানা প্রায় ১৭ বছর সিলেট সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কামরান।
‘এই শহরের প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান’, সমর্থকরা এমন স্লোগানও দিতেন। যদিও ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সবশেষ দুটি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হারতে হয় কামরানকে।
তবে ভোটের মারপ্যাঁচে হেরে গেলেও কামরান যে নগরবাসীর কাছে ‘প্রিয় নাম’ হয়েই ছিলেন তা আরেকবার বোঝা যায় তার মৃত্যুর পর।
গত বছরের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামরান। তার মৃত্যু খবর দলমত-নির্বিশেষে সিলেটের সব মানুষকেই শোকাহত করে। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে তার জানাজায় নামে মানুষের ঢল।
কামরানের মৃত্যুর দেড় বছর পেরিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি বছর দেড়েক। তবে এরই মধ্যে সিলেটে শুরু হয়েছে নির্বাচনি আলোচনা। বিশেষত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগে কামরানের বিকল্প কে হতে পারেন এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দলটির একাধিক নেতাই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী।
সিলেট সিটির আগের সবকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরান ছিলেন অনেকটা ‘অটো চয়েস’। এবার কামরান নেই। ফলে আওয়ামী লীগকে খুঁজতে হচ্ছে নতুন প্রার্থী। তুমুল জনপ্রিয় কামরানের উৎকৃষ্ট বিকল্প কে হতে পারেন তা নিয়ে দলীয় ফোরামেও চলছে আলোচনা।
তবে এখন পর্যন্ত কামরানের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।
ক্ষমতাসীন দলে সিলেটের এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কামরান ভাইয়ের মাঠ পর্যায়ে যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল, তা অন্য কারো নেই। তার কোনো বিকল্প নেই। তিনি দীর্ঘদিন জনপ্রিতিনিধি থেকে এ গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন, অন্য কারও পক্ষে রাতারাতি এটা করা সম্ভবও নয়।’
কামরানের বিকল্প নেই, তবু সিটি নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এমনটাই জানালেন নাদেল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী সংকট আছে। তবে দলীয় হাইকমান্ডে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। বিভিন্ন জরিপে যিনি এগিয়ে আছেন তাকেই দল থেকে প্রার্থিতা দেয়া হবে।’
সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে কামরানকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
দলীয় কোন্দল থাকলেও এবারও বিএনপি থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধরা হচ্ছে। নগরে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে। ফলে আরিফের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
নির্বাচনের এখনও বছর দেড়েক বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এখনই মাঠে নেমে পড়েছেন দলটির অনেক নেতা। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের মাঠ প্রস্তুত করার কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
এদের মধ্যে শিপলু ছাড়া বাকি তিনজনই গত সিটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঁচ নেতার নাম প্রস্তাব করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা ছিলেন- মহানগরের তৎকালীন সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আলওয়ার আলাওর, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও তৎকালীন শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। তবে দল থেকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহের কথা জানিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় আমি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলাম। তখনও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমি জনগণের সেবা করতে চাই।’
এই নির্বাচনে কামরানের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংগঠন নেতা বানায়। কামরান ভাইকে সংগঠনই তৈরি করেছিল। দায়িত্ব পেলে আমিও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।’
বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে জনবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে জাকির বলেন, ‘তিনি জনবিরোধী কাজ করছেন। পানির বিল বাড়িয়ে দিয়েছেন, গাছ কাটছেন। প্রকল্পবাজি করছেন। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব মেয়র চায়।’
গত নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। এবারও মেয়র পদে লড়তে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আসাদ উদ্দিন বলেন, ‘এবারও দলের মনোনয়ন চাইব। আমি সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছি। দলের মূল্যায়ন করলে আমি সফল হতে পারব।’
নগরের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে জানিয়ে আসাদ বলেন, ‘নগরের বর্ধিত অংশের সঙ্গেও আমার ভালো যোগাযোগ আছে। নিয়মিতই আমি এসব এলাকায় যাতায়াত করছি।’
আগামী নির্বাচনে কামরানের অভাব সম্পর্কে আসাদ বলেন, ‘কামরান আমাদের প্রবীণ নেতা, জনপ্রিয় নেতা। তার অভাব তো সকলেই অনুভব করবে। আমরাও করি। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব ফেলবে না।’
আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরানপুত্র আরমান আহমদ শিপলুর নামও আলোচিত হচ্ছে। কামরান বেঁচে থাকতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন শিপলু। এখন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
শিপলু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সিলেটের মানুষের সঙ্গে আমার পরিবারের আত্মার সম্পর্ক। আমার বাবা সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী ছিলেন। আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার বাবার মতো সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে কাছে থাকার চেষ্টা করছি। সুযোগ পেলে আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
গত নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। নগরের ২০নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর। এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচিত হচ্ছে।
আজাদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। যুক্তরাজ্য যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আশা করছি সবকিছু বিবেচনা করে দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভোল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
আটক তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী। তাদের তিনজনেরই বাড়ি পাবনা জেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
আরও আসছে…
আরও পড়ুন:
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মন্তব্য