২০০৮ সাল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তখন কারাবন্দি। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবু তখন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন এই সভাপতি।
এর আগের নির্বাচনগুলোতেও কামরানের এই জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। ১৯৭২ সালে ছাত্রাবস্থায়ই নির্বাচিত হয়েছিলেন জনপ্রতিনিধি।
কেন কামরান এত জনপ্রিয়? ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সেবার কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রয়াত সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরুকে।
জবাবে শীরু বলেছিলেন, ‘কামরানকে কেউ আগে সালাম দিতে পারে না। তিনিই সবাইকে আগে সালাম দেন। সিলেটের লোকজন রাস্তাঘাটের উন্নয়নের চাইতে ভালো ব্যবহার ও সম্মান চান। কামরান সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন এবং সবাইকে সম্মান দেখান। এ কারণে সিলেটবাসীও তাকে পছন্দ করেন।’
এই ‘ভালো ব্যবহার’ দিয়েই টানা প্রায় ১৭ বছর সিলেট সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কামরান।
‘এই শহরের প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান’, সমর্থকরা এমন স্লোগানও দিতেন। যদিও ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সবশেষ দুটি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হারতে হয় কামরানকে।
তবে ভোটের মারপ্যাঁচে হেরে গেলেও কামরান যে নগরবাসীর কাছে ‘প্রিয় নাম’ হয়েই ছিলেন তা আরেকবার বোঝা যায় তার মৃত্যুর পর।
গত বছরের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামরান। তার মৃত্যু খবর দলমত-নির্বিশেষে সিলেটের সব মানুষকেই শোকাহত করে। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে তার জানাজায় নামে মানুষের ঢল।
কামরানের মৃত্যুর দেড় বছর পেরিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি বছর দেড়েক। তবে এরই মধ্যে সিলেটে শুরু হয়েছে নির্বাচনি আলোচনা। বিশেষত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগে কামরানের বিকল্প কে হতে পারেন এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দলটির একাধিক নেতাই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী।
সিলেট সিটির আগের সবকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরান ছিলেন অনেকটা ‘অটো চয়েস’। এবার কামরান নেই। ফলে আওয়ামী লীগকে খুঁজতে হচ্ছে নতুন প্রার্থী। তুমুল জনপ্রিয় কামরানের উৎকৃষ্ট বিকল্প কে হতে পারেন তা নিয়ে দলীয় ফোরামেও চলছে আলোচনা।
তবে এখন পর্যন্ত কামরানের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।
ক্ষমতাসীন দলে সিলেটের এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কামরান ভাইয়ের মাঠ পর্যায়ে যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল, তা অন্য কারো নেই। তার কোনো বিকল্প নেই। তিনি দীর্ঘদিন জনপ্রিতিনিধি থেকে এ গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন, অন্য কারও পক্ষে রাতারাতি এটা করা সম্ভবও নয়।’
কামরানের বিকল্প নেই, তবু সিটি নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এমনটাই জানালেন নাদেল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী সংকট আছে। তবে দলীয় হাইকমান্ডে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। বিভিন্ন জরিপে যিনি এগিয়ে আছেন তাকেই দল থেকে প্রার্থিতা দেয়া হবে।’
সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে কামরানকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
দলীয় কোন্দল থাকলেও এবারও বিএনপি থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধরা হচ্ছে। নগরে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে। ফলে আরিফের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
নির্বাচনের এখনও বছর দেড়েক বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এখনই মাঠে নেমে পড়েছেন দলটির অনেক নেতা। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের মাঠ প্রস্তুত করার কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
এদের মধ্যে শিপলু ছাড়া বাকি তিনজনই গত সিটি নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঁচ নেতার নাম প্রস্তাব করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা ছিলেন- মহানগরের তৎকালীন সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আলওয়ার আলাওর, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও তৎকালীন শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। তবে দল থেকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহের কথা জানিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় আমি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলাম। তখনও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমি জনগণের সেবা করতে চাই।’
এই নির্বাচনে কামরানের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংগঠন নেতা বানায়। কামরান ভাইকে সংগঠনই তৈরি করেছিল। দায়িত্ব পেলে আমিও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।’
বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে জনবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে জাকির বলেন, ‘তিনি জনবিরোধী কাজ করছেন। পানির বিল বাড়িয়ে দিয়েছেন, গাছ কাটছেন। প্রকল্পবাজি করছেন। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব মেয়র চায়।’
গত নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। এবারও মেয়র পদে লড়তে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আসাদ উদ্দিন বলেন, ‘এবারও দলের মনোনয়ন চাইব। আমি সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছি। দলের মূল্যায়ন করলে আমি সফল হতে পারব।’
নগরের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে জানিয়ে আসাদ বলেন, ‘নগরের বর্ধিত অংশের সঙ্গেও আমার ভালো যোগাযোগ আছে। নিয়মিতই আমি এসব এলাকায় যাতায়াত করছি।’
আগামী নির্বাচনে কামরানের অভাব সম্পর্কে আসাদ বলেন, ‘কামরান আমাদের প্রবীণ নেতা, জনপ্রিয় নেতা। তার অভাব তো সকলেই অনুভব করবে। আমরাও করি। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব ফেলবে না।’
আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরানপুত্র আরমান আহমদ শিপলুর নামও আলোচিত হচ্ছে। কামরান বেঁচে থাকতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন শিপলু। এখন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
শিপলু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সিলেটের মানুষের সঙ্গে আমার পরিবারের আত্মার সম্পর্ক। আমার বাবা সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী ছিলেন। আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার বাবার মতো সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে কাছে থাকার চেষ্টা করছি। সুযোগ পেলে আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
গত নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। নগরের ২০নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর। এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচিত হচ্ছে।
আজাদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। যুক্তরাজ্য যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আশা করছি সবকিছু বিবেচনা করে দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য