সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুম ও তার সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিনত আল-হুসেইনের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত। এ জন্য প্রিন্সেস হায়া সব মিলিয়ে ৫০ কোটি পাউন্ডের ( ৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা) সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।
বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত করে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের আইনি জগতের ইতিহাসে একে বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিয়েবিচ্ছেদের মামলা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৭ বছরের প্রিন্সেস হায়া জর্ডানের সাবেক বাদশাহ হুসেইন বিন-তালালের মেয়ে। ৭২ বছরের ধনকুবের রশিদ আল-মাখতুমের ছয় স্ত্রীর মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম। দুই সন্তান নিয়ে ২০১৯ সালে দুবাই ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান প্রিন্সেস হায়া। তিনি এখন যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সুরিতে একটি বিলাসবহুল বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট জানিয়েছে, বিয়েবিচ্ছেদের জন্য প্রিন্সেস হায়াকে ২৫ কোটি ১৫ লাখ পাউন্ড দিতে হবে দুবাই শাসককে। এ ছাড়া লন্ডনে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কেনসিংটন প্রাসাদের পাশের একটি বিলাসবহুল বাড়ি ও সুরির বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে হায়ার হাতে।
আদালত রায় দিয়েছে, দুবাইয়ের এই শাসকের ঘরে প্রিন্সেস হায়ার দুই সন্তানের প্রত্যেককে প্রতি বছর ৫৬ লাখ পাউন্ড দিতে হবে এবং তা ২৯ কোটি পাউন্ডের একটি গ্যারান্টি দিয়ে সুরক্ষিত করা থাকবে।
তাদের দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বয়স ১৪ বছর ও ছেলের বয়স ৯ বছর।
এ ছাড়া রায়ে প্রিন্সেসের নিরাপত্তার ব্যয়, ছুটি কাটানোর খরচ, একজন নার্স ও আয়ার বেতন, আবাসনের খরচ, পরিবারের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং তার পালিত ঘোড়া ও অন্যান্য প্রাণীর খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রিন্সেস হায়া তার এক ব্রিটিশ দেহরক্ষী সাবেক সেনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানার পর শেখ মোহাম্মদ ‘তুমি বেঁচে ছিলে, তুমি মরে গেছো’ নামে একটি কবিতা প্রকাশ করেন, যাতে তাকে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
জীবন সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রিন্সেস হায়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ভিন্নমতের কারণে রশিদ আল-মাখতুম তার দুই মেয়ে শেখ লতিফা ও শেখ শামসাকে জোরপূর্বক আটকে রেখেছেন। বিয়েবিচ্ছেদের পর তার ভাগ্যেও এমন কিছু ঘটতে পারে। এমনকি দুবাই ছাড়ার পরও তাকে এবং তার সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়েছেন রশিদ আল-মাখতুম।
শেখ মোহাম্মদ শুধু দুবাইয়ের ধনাঢ্য শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ঘোড়দৌড়ের জগতেও রেসের ঘোড়ার একজন প্রভাবশালী মালিক।
আরও পড়ুন:রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এক নিমেষে বন্ধ করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। দেশটির এক সিদ্ধান্তেই ‘সঙ্গে সঙ্গে’ যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতদিন কেন সেটা ঘটল না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।
পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সৌদি আরবের কী করা উচিত, সেটাও বলে দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, সৌদি আরব ও তেল রপ্তানিকারী অন্য দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া। তা হলেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে।
আল জাজিরার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভা চলছে। সেখানেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ফোরামের ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, তেল রপ্তানিকারী দেশগুলো যে এখনও তেলের দাম কমায়নি, তাতে তিনি বিস্মিত।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল সৌদিসহ অন্যদের।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের সদস্যদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি ও ওপেকের সবাইকে আমি বলব, তেলের দাম কমান। আপনাদের এটা করতেই হবে।
‘সত্যি কথা বলতে, এখনও যে এটা করা হয়নি, তাতে আমি অবাক। তেলের দাম কমলে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘খনিজ তেলের দাম এখন অনেক বেশি। তাই যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে আপনাদের তেলের দাম কমাতে হবে।
‘যা হচ্ছে, তার জন্য ওই দেশগুলো অনেকাংশে দায়ী। এত মানুষ মারা যাচ্ছে! তেলের দাম কমার পর আমি সুদের হারও কমাতে বলব।’
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর প্রায় তিন বছর ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত।
দীর্ঘ এ সময়ে দুই পক্ষের পাল্টা হামলায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলে আসছেন ট্রাম্প।
তিনি প্রায়ই বলতেন, ক্ষমতায় থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধান করে ফেলতেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। বৈঠকের আয়োজন চলছে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর অবিলম্বে এ সংঘাতের সমাধান দাবি করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে বলেও হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের সঙ্গে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে এমন খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের জন্য ক্রমাগত হুমকি হিসেবেই থেকে যাচ্ছে ইরান-সমর্থিত হামাস।
যুদ্ধে একই পরিমাণ হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে আভাস দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে যায় হামাস ও ইসরায়েল। এর আগে ১৫ মাসের যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয় গাজা উপত্যকা। পুরো মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
খবরে বলা হয়, হামাসে যোগ দেওয়া নতুন সদস্যরা বয়সে তরুণ ও অপ্রশিক্ষিত। তাদের এখন শুধু নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের অফিসে যোগাযোগ করা হলে সাড়া মেলেনি।
গত ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গাজায় যতজন যোদ্ধা হারিয়েছে হামাস, ততজনই তারা নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে। এটি একটি চিরস্থায়ী বিদ্রোহ ও যুদ্ধেরই প্রস্তুতি।’
এ বিষয়ে তার কাছ থেকে আর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গাজা যুদ্ধে প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধা নিহত হন।’
হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েল।
গেল বছরের জুলাইয়ে হামাসের সামারিক শাখার প্রধান আবু ওবায়দা বলেন, ‘তারা কয়েক হাজার নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিতে সক্ষম।’
এবারের যুদ্ধে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও গাজা উপত্যকায় গভীরভাবে নিজের অবস্থান জারি রেখেছে সংগঠনটি।
গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে হামাস সেখানে নিরাপত্তা কার্যক্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি নাগরিকদের মৌলিক সেবাগুলোও তারা পুনর্বহাল করতে সক্ষম হয়।
গাজা যুদ্ধে কতজন হামাস যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন, আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের ভাষ্য, ফিলিস্তিনি এ প্রতিরোধ বাহিনীর ব্যাপক শক্তি ক্ষয় হয়েছে। সম্ভবত কয়েক হাজার যোদ্ধা খুইয়েছে তারা।
ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালান হামাস যোদ্ধারা। এতে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়াও ২৫০ ইসরায়েলিকে তারা জিম্মি করেছিল।
পরবর্তী সময়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস) জানিয়েছেন, তার দেশ আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশিত সংস্কার ‘অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’ তৈরি করতে পারে। সৌদি আরব এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বৃহস্পতিবার সকালে জানায়, দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওভাল অফিসে ফিরে আসার জন্য ট্রাম্পকে নিজের এবং বাদশাহ সালমানের অভিনন্দনবার্তা পৌঁছে দেন তিনি।
বিন সালমান বলেন, সৌদি নেতারা আমেরিকার জনগণের আরও অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ওই সময় ট্রাম্প বাদশাহ সালমান ও যুবরাজকে ধন্যবাদ জানান এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুবরাজ এমবিএস ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘অস্ত্র সরঞ্জামের একটি অংশ সৌদি আরবে তৈরি হবে। এ উদ্যোগ আমেরিকা ও সৌদি আরবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
‘উভয় দেশের জন্য ভালো বাণিজ্য, ভালো সুবিধা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এটি আমাদের নিরাপত্তাকে সহায়তা করবে।’
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদেও নিজেদের মধ্যে এ সহযোগিতা ধরে রাখতে চান তিনি।
প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে তিনি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে রিয়াদে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তরবারি নৃত্য এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সে সময় সৌদি বাদশাহ দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘কলার অব আবদুল আজিজ আল সৌদ’-এ ভূষিত করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে।
প্রথম দফার শাসনামলে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনের নিচ থেকে ২১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানায়।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উপত্যকায় ৫ হাজার নারী ও শিশুসহ ১৪ হাজার ২০০ মানুষ এখনও নিখোঁজ।
গাজা সীমান্তের কাছে গত বছরের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে কিব্বুৎজ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বেশ কিছু ইসরায়েলি বাসিন্দাকে হত্যা করেন এবং নারী-পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধসহ প্রায় ২৪০ জনকে অপহরণ করেন। সে সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিন ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় এবং উপত্যকায় বোমাবর্ষণ শুরু করে।
গত ১৫ জানুয়ারি মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দিয়েছিল, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ বন্দি বিনিময়ও করেছে।
হামাস যোদ্ধারা তিন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলও ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪২ দিনে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে। গত ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
দামেস্ক থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
শারা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তিনিই (ট্রাম্প) মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার নেতা।
‘আমরা সংলাপ এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উন্মুখ।’
শারার ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদ্রোহী অভিযানের নেতৃত্ব দেয়।
১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ধ্বংসাত্মক সংঘাতের পর দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য সিরিয়ার নতুন নেতারা আর্থিক সহায়তা চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং সিরিয়ার প্রতিবেশীরাও নতুন শাসকের প্রতি ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা’ মোকাবিলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ২০১৯ সালে সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর জিহাদিদের বিতাড়িত করার সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেয় এবং হাজার হাজার সন্দেহভাজন জঙ্গি ও তাদের আত্মীয়দের বন্দি রাখা বেশ কিছু কারাগার ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
জিহাদি-বিরোধী জোটের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন:গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম দিনে কারাবন্দি ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় রোববার রাত একটার দিকে কারামুক্ত হন এসব ফিলিস্তিনি। ওই সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে, আলিঙ্গনে তাদের বরণ করেন অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিরা।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের এসব কারামুক্ত মানুষকে বরণ করতে আসেন তাদের স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমর্থকরা।
মুক্ত ফিলিস্তিনিদের বহনকারী রেড ক্রসের বাস পশ্চিম তীরের রামাল্লায় পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান হাজারো জনতা। যদিও উদযাপনের অনুমতি ছিল না ইসরায়েলের তরফ থেকে।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৬৯ নারী এবং ২১ কিশোর রয়েছে, যাদের কারও কারও বয়স ১২ বছর। তাদের সবাই পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বাসিন্দা।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হয়।
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের পাল্টা হামলা শুরুর ১৫ মাস পর রোববার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়।
আল জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি প্রতীক্ষিত তিন জিম্মির তালিকা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাস। এর পরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ইসরায়েল ও হামাস সম্মত যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, রোববার বেলা দুইটার পর তিন জিম্মি মুক্ত হবেন। জীবিত আরও চার নারী জিম্মিকে সাত দিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে।
আল জাজিরার খবরে উল্লেখ করা হয়, মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি কখন শুরু হবে, সে সংক্রান্ত খবরের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করছি যে, আজ মুক্ত হতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম ইসরায়েলি পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ছয়টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তার আগে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস রোববার মুক্ত হতে চলা জিম্মিদের তালিকা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে না।
দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দিনে যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি তিন ইসরায়েলি জিম্মি এবং ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, হাজারো ফিলিস্তিন এখন উত্তর গাজার জাবালিয়া এবং দক্ষিণ গাজার রাফাহর মতো এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেগুলোতে এতদিন তাদের যেতে দেওয়া হয়নি।
যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৬ জন আহত হয় বলে জানায় উপত্যকার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ।
হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হন। ওই দিন জিম্মি করা হয় দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে।
ওই হামলার জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৫ মাস ধরে দেশটির হামলায় কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য