নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপের আমন্ত্রণ এখনও বিএনপি পায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিঠি পেলে এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর বনানীতে মঙ্গলবার রাতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অর্পণের আয়োজনে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে তিনি এ কথা জানান।
ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সংলাপের কোনো চিঠি এখনও পায়নি বিএনপি। চিঠি পেলে আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, মহাসচিবের ব্যক্তিগত সহকারী ও কৃষক দল নেতা মো. ইউনুস আলী উপস্থিত ছিলেন।
ইসি গঠনে সংলাপ
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে উদ্যোগী হয় বঙ্গভবন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
বঙ্গভবনে সোমবার বিকেলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দিন জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংলাপের সময় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হলো। তবে আগের দুই সংলাপে দেশের প্রধান সব দলকে পাওয়া গেলেও এবার বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়।
এবারের আলোচনায় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আপত্তি আছে। দলটি এবার রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে। সংলাপ শুরুর দিন এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে ‘স্মার্টলি লুটপাটের’ বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য একইসঙ্গে বলেছেন, এই বাজেট সরকার দিচ্ছে, না আইএমএফ দিচ্ছে তা-ও দেখার বিষয়। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সরকারকে বাজেট দিতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর বিকেলে রাজধানীর বনানীর নিজ বাড়িতে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করছেন উল্লেখ করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমির খসরু। বলেন, ‘এ ধরনের একটা সরকার দেশের জন্য কী ধরনের বাজেট দেবে তা বোঝাই যাচ্ছে। বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া শুনতেও রাজি নয় তারা।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘সরকার লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে প্রচার করছে। অথচ দেশে রিজার্ভে টাকা নেই।
‘বাজেটের আকার বাড়ছে ঋণের ওপর দাঁড়িয়ে এবং তা করা হচ্ছে সরকারের লুটপাটের সুবিধার জন্য। গত ৭ বছরে ৫২ শতাংশ ঋণ বেড়েছে। সরকার ঋণ নিয়ে ঘি খাচ্ছে। এই ঘি খাওয়ার টাকা বাংলাদেশের জনগণকে শোধ করতে হবে।
‘দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলো থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, দেশের বাইরে থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়া হচ্ছে, এই ঋণের ভার আগামী প্রজন্মকে নিতে হবে।’
করের খাত বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এই সরকার তাদের অর্থনীতির যে মডেল তৈরি করছে, সেখানে ট্যাক্সের পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষ এখন ঋণ করে চলছে, তাদের জমা শেষ হয়ে গেছে, তারা নিয়মিত খাদ্যতালিকা সীমিত করছে।
‘অথচ জনগণের ট্যাক্সের এই টাকায় তারা যে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চালু করেছে, তারা লাভবান হচ্ছে। এই টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, পুরো চাপটা পড়ছে জনগণের ওপর। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়াবে।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয়। আইএমএফ যে গাইডলাইন দিচ্ছে তাতে তো সুনিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে কী কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কী কারণে আজ নিম্ন পর্যায়ে এসে নেমেছে।
‘এসব কারেক্ট করার জন্য আইএমএফের যে শর্ত, সেই শর্ত মেনে চলছে সরকার। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে বাজেট দিতে হবে। আবার তার বাইরে যদি অব্যাহতভাবে লুটপাটের অর্থনীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চলতে থাকে, সেটা অন্য কথা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিপদে আছে। আইএমএফের শর্ত না মানলে বাজেট সাপোর্ট থাকে না। আবার আইএমএফের শর্ত মানলে তাদের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সরকার অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেখান থেকে বের হতে হলে এটার রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদ, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহিতা থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে জনগণের চিন্তার প্রতিফলন, রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন। আজ যেখানে অবৈধ দখলদার সরকার বসে আছে, তাদের বাজেটে তো রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না; সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না। তাদের নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গত ৩০ বছরে যে স্থিতিশীলতা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম সেটা এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এটা করা হয়েছে একটা দলীয় চিন্তার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তৈরি করে।’
কেউ কেউ বলছেন, সরকার নির্বাচনী ব্যয়ের বাজেট দিচ্ছে। নতুন কোনো সরকার এলে তাদের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জ হবে।- এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘বাজেটে বড় বড় অঙ্ক দিচ্ছে, আর বাংলাদেশের মানুষকে অবকাঠামোর কথা বলছে। কিন্তু ৯ মাসে বাজেটের ৩৬ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। আর বড় বড় অবকাঠামোতে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে জন্যই তো আজকে ডলার সংকট, ব্যাংকে টাকা নেই, শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, যে জন্য তারা (সরকার) আইএমএফের কাছে ধার করছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে ধার করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়েও কুলাতে পারছে না। সুতরাং এখান থেকে বের হতে হলে একটা অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার হতে হবে, জবাবদিহির সরকার হতে হবে।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে নির্বাচনমুখী বাজেট বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলটি মনে করে, এই বাজেট বাস্তবসম্মত নয়। সরকার-সংশ্লিষ্টরা এই বাজেটকে পুঁজি করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি বাজেট করা হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি যে নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনমুখী বাজেট করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করলেও রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটাকে আমরা বাস্তবসম্মত বাজেট বলে মনে করছি না। বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাড়ানোর কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার এর অ্যাডভান্টেজ (বাড়তি সুবিধা) পাবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার খুব অল্পই অর্জিত হয়েছে। তারপরও নতুন বাজেটে চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটা অর্জিত হবে না।
‘বাকি থাকে অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বিদেশি ঋণ। এখন যে পরিস্থিতি ইচ্ছা করলেই যে বিদেশি ঋণ পাবে বা অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে পারবে তা তো নয়। কাজেই আলটিমেটলি বাজেটটা ওয়ার্কঅ্যাবল হবে না, এটা আমাদের ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সব কিছুর ওপর পরোক্ষ করা আরোপ করা হয়েছে। যেগুলো অনেক মানুষ, সাধারণ মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা আরও বেশি ওপরের দিকে যাবে।
‘মানুষের আয় কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। বাজেটে কল্যাণমুখী কিছু দেখছি না। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব- এ তিন শ্রেণির বেঁচে থাকার জন্য বাজেটে প্রভিশন থাকার দরকার ছিল। কিন্তু তা রাখা হয়নি। এ কারণে এটাকে জনবান্ধব বাজেট বলা যাচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় অনেক বাড়ানো হয়েছে। অথচ উন্নয়ন ব্যয় অনেক কম। পরিচালন ব্যয় আগে যা ছিল সেটাই অনেক বেশি ছিল। পরিচালন ব্যয় খুব খোলামেলা জিনিস। যেখানে-সেখানে অর্থ ব্যয় করা যায়। হয়তো নির্বাচন সামনে রেখে সরকারে জড়িতরা এটার অ্যাডভান্টেজ নেবেন। এটা অর্থ দিয়ে ইলেকশন পার করার একটা পলিসি হতে পারে।’
আরও পড়ুন:২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ছাত্রলীগ।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা হয়।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণমুখী বাজেট দেয়ায় কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান বক্তারা।
বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৫তম বাজেট পেশ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ।
গুলিস্তান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়ে আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের সেখানেই শেষ হয়।
বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
ছাত্রলীগ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল বের করে।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন:মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সরিয়ে অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাতীয় সংসদের স্পিকারের দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। দলের পক্ষে বৃহস্পতিবার ওই চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন আরেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে জানান, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিটি বৃহস্পতিবার স্পিকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এটি পার্টির রেজুলেশন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফখরুল ইমাম ময়মনসিংহ-৮ আসর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সৎ ও সজ্জন হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এছাড়া জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে দলাদলির অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
রাঙ্গা এক সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন। মহাজোট সরকারে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে- রংপুরে মিল্ক ভিটার জমি দখল, সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য এমনকি জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পেছনে কলকাঠি নাড়েন তিনি।
জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে রাঙ্গার বিরুদ্ধে। দল থেকে বহিষ্কারের পর প্রকাশ্যেই দল ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি। পরে ক্ষমা চাইলেও দল তাকে ফিরিয়ে নেয়নি।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল ইমাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতিমণ্ডলীর সবশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। মশিউর রহমান রাঙ্গা এখন আর দলের কেউ নন। তাই তিনি সংসদে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন নাা। দলের সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি রেজুলেশনও হয়েছে। সেই চিঠিটিই স্পিকারকে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেন।
সংসদ থেকে বের হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাজেটটা এমনভাবে করা হয়েছে যে, মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে এ বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ জন্য এটাকে জনবান্ধব বলছি।’
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমোদনক্রমে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বাড়তি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে ইসির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় তা প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে ইসির জন্য বরাদ্দ (সংশোধিত বাজেট) রয়েছে ১ হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
নির্বাচন কমিশনের জন্য নতুন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশই ব্যয় হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কিছু স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন হবে।
নির্বাচন কমিশনের এজন্য এটি একটি মহাযজ্ঞ বলা যায়। আর এই ভোট আয়োজনে ব্যয়ের অংকটাও থাকবে বিশাল। এছাড়াও রয়েছে- ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ৯টি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন, ৪৫৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং সংসদ ও স্থানীয় সরকারের উপনির্বাচন।
কমিশনের ব্যয়ের আরও বেশকিছু খাত রয়েছে। সেসবের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ, উন্নত মানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সের নিচে নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধন ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যতম।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতো বাকি চার মহানগরেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে হারলেও বাকি চারটিতে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দলটি। নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান দলের নেতারা।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দলের একটি অংশের অহসযোগিতায় গাজীপুরে পরাজয় হলেও বাকি চার মহানগরের নির্বাচনে সব দুর্বলতা কাটিয়ে জয় নিয়ে ঘরে ফিরবে আওয়ামী লীগ, তবে জয়-পরাজয় থেকেও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ওপর নজর রাখবেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। চার সিটিতে দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয় যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
‘এই নির্বাচন যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য আমরা দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন মহাযজ্ঞ চলছে, তাতে মানুষ অকৃতজ্ঞ হবে না এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরই বিজয়ী করবে।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। এ নির্বাচনের কয়েক মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগে সিটি নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতির বিষয়টিও আমলে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইইউসহ অনেক দেশ ও জোট বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে। এসব রাষ্ট্রের পরামর্শ আমলে নিয়ে সরকারও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশে-বিদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন। এর মডেল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে দেখানো হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন বাকি চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধু নৈমিত্তিক কাজ করে যাবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে।’
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বেশ গুরুত্ব বহন করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটির ভোটে জয়-পরাজয় সরকার ও দলের জনপ্রিয়তার ওপর প্রভাব ফেলবে। হেরে গেলে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে বলেও আওয়ামী শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। তাই সিটির এ নির্বাচনে কোনো বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চলছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আগামী ১২ জুন হবে খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। ২১ জুন ভোটগ্রহণ হবে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আবারও দলীয় প্রার্থী। সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য