দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে দেশটির রাজধানী মালে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুধবার দুপুরে সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উড্ডয়নের কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং।
প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করবে।’
বিমানটি স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় মালে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এ সময় বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে।
এদিন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চুক্তিতে সই করবেন।
ওই সময় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বন্দি বিনিময় এবং দ্বৈত কর পরিহারসহ দুটি চুক্তি ও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে আছে, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাবিজ্ঞান (নবায়ন) এবং দুই দেশের যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বিশেষঞ্জ চিকিৎসক নিয়োগ চুক্তি নবায়ন করারও কথা রয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দেবে বাংলাদেশ।
আনুষ্ঠানিকতা ও চুক্তি সই শেষে গণমাধ্যমের সামনে যৌথ বিবৃতি দেবেন দুই নেতা।
সফরকালে দেশটির রাজধানী মালের হোটেল জিনে অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম, পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ এবং প্রধান বিচারপতি উজ আহমেদ মুতাসিম আদনান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মালদ্বীপের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডির আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজেও যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার মালেতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনাতেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সংবর্ধনায় তার ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশকে ঋণ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। তিনি বলেছেন, ‘জরুরি সংস্কার, বন্যা মোকাবিলা, উন্নত বায়ুর মান এবং স্বাস্থ্যের জন্য চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার নতুন অর্থায়ন করতে পারে।’
মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি নতুন এই সহায়তার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডায় সহায়তা করার জন্য চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে ঋণ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘ব্যাংকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রয়োজনে সহায়তা করবে। আমরা আপনাকে যত তাড়াতাড়ি এবং যত বেশি সম্ভব সমর্থন করতে চাই।’
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘নতুন প্রতিশ্রুতি ছাড়াও বাংলাদেশের সব উন্নয়ন সহযোগীকে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাটি বিদ্যমান প্রোগ্রামগুলোতে আরও প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত দেবে কি না তা পুনর্বিবেচনা করবে।’
সেক বলেন, ‘বিদ্যমান প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা হলে চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহজ শর্তে যে ঋণ ও অনুদান দেবে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি চিফ বলেন, ‘সংস্কারগুলো সম্পন্ন হওয়া বাংলাদেশ এবং প্রতি বছর শ্রমবাজারে যোগ দেয়া ২০ লাখ মানুষসহ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি হেডকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কারে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের শিথিলতা প্রয়োজন এবং ১৫ বছরের চরম অপশাসনের পর নতুন যাত্রায় সহায়তা করতে হবে।
‘এই ভগ্নদশা থেকে আমাদের নতুন কাঠামো তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের অংশ হোন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের সময় দুর্নীতিবাজদের বাংলাদেশ থেকে চুরি করা কোটি কোটি ডলারের সম্পদ পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংককে কারিগরি সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘চুরি যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি আপনাদের আছে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশেরও বিশ্বব্যাংকের দক্ষতার প্রয়োজন হবে।’
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি চিফ চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকটি বাংলাদেশকে ডেটা স্বচ্ছতা, ডেটা সম্পূর্ণতা, কর সংগ্রহে ডিজিটালাইজেশন এবং আর্থিক খাতের সংস্কারেও সহায়তা করতে চায়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করা এবং বড় ধরনের সংস্কার করার এই সুযোগ হারাতে পারে না। এই সুযোগ একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে আসবে না।’
আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘ঢাকার দেয়ালে তরুণদের আঁকা দেয়ালচিত্র ও ম্যুরাল দেখে আমি মুগ্ধ। আমার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে এমন দৃশ্য কোথাও দেখিনি।’
আরও পড়ুন:মাদকের গডফাদারদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওই নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বাহক নয়, মাদকের সঙ্গে জড়িত বড় বড় গডফাদারদের ধরতে হবে। চলমান যৌথ অভিযানে এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং দৈনিক অগ্রগতির রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।’
এ বিষয়ে সাফল্যের ওপর নির্ভর করে অধিদপ্তরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি না কমাতে পারলে এ সরকারের সাফল্য আসবে না।
তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মাদক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনে। তাই মাদক নির্মূলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিকতার পরিবর্তন করে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। যেভাবেই হোক মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
যেসব অভিযান পরিচালনার সময় হামলার আশঙ্কা রযেছে, সেখানে পুলিশসহ অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন:নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সহযোগিতা করতে জার্মানি আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ইউরো দেবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা জানান, চলতি বছর ১৫ মিলিয়ন (দেড় কোটি) ইউরো পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টারের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এ খাতে উভয় দেশই বেসরকারি খাত, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অ্যাকাডেমিয়া ও সুশীল সমাজের মতো নন স্টেট অ্যাক্টরদের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় এবং সহযোগিতার প্রচার করবে।’
সচিবালয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ সহযোগিতায় ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী এবং যুবকদেরও সম্পৃক্ত করা হবে, যা বহু স্টেকহোল্ডার পদ্ধতিকে উৎসাহিত করবে।’
উপদেষ্টা পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে জার্মানির অব্যাহত সহায়তার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
রাষ্ট্রদূত ট্রস্টার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সমর্থনে জার্মানির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং পরিবেশ রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জার্মানির দক্ষতার কথাও তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানি উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ নদী পরিষ্কার, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প, সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাব্য সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বৈঠকে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য আরও উপায় অন্বেষণ করার জন্য একটি চুক্তি হয়।
আরও পড়ুন:জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজমল হোসেন খাদেমের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি সোমবার রাত পৌনে একটার দিকে প্রাণ হারান।
রাজধানীর বনানী মসজিদ প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তার দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
আজমল হোসেন খাদেমের মৃত্যুতে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ এবং সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন মহল থেকে দেশে যে সাংবিধানিক শূন্যতার কথা বলা হচ্ছে তা ভুয়া বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও সাহিত্যিক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, দেশের সংকট সাংবিধানিক নয়; রাজনৈতিক।
সোমবার মহাখালীতে ‘সংস্কার ও নির্বাচন: নাগরিক ও রাজনৈতিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এমনটা দাবি করেন। এই সভার আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও নৈতিক সমাজ’।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা সবাই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে। আপনারা সাংবিধানিক শূন্যতার যে ধুয়া দিচ্ছেন তা ভুয়া। আমাদের দেশের সংকট সাংবিধানিক নয়। আমাদের সংকট রাজনৈতিক। আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। এজন্য এই দুরবস্থা। এর মধ্যে সংবিধানের কোনো ব্যাপার নেই।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে ইন্ডিয়ার প্রভাবে আমাদের রাষ্ট্র গঠনই করতে দেয়া হয়নি। আমাদের সামনে ৬ দফা ছিলো। কিন্তু সেখান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ঢুকিয়ে দেয়া হলো। সেগুলো তো ছয় দফায় ছিলো না।
‘ধর্মীয় নিরপেক্ষতার প্রবেশ মানেই ইসলামবিরোধী রাজনীতি। গণতন্ত্র মানেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি। তাহলে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বলার দরকার নেই।’
নৈতিক সমাজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ম স আ আমিন বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই সংস্কার। তার মধ্যে রাজনীতি সংস্কারও আমরা ধরেছি। কোনো সরকারই সব সংস্কার করে যেতে পারবে না। কিন্তু আমরা চাই তারা যেন ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে যায়।
‘এই সংস্কারের সঙ্গে আপামর জনগণকে আমাদের ঐকমত্যে নিয়ে আসতে হবে, যেন ১০-১৫ বছর সময় লাগলেও ফলপ্রসূ হয় এই আত্মত্যাগ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘১৯৭২-১৯৭৫ এর সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিলো দুর্নীতি। জিয়াউর রহমান আসার পর দুর্নীতি নিয়ে এমনভাবে প্রচার করা হলো যেখানে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে সবাই খারাপ, শুধু জিয়াউর রহমান ভাল।’
তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘সংবিধান নতুনভাবে প্রণয়ন করতে চাইলে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। কাদের সমন্বয়ে গঠন হবে খোলাসা করতে না পারলে এ সমস্যা নিরোধ হবে না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করুন।’
সাবেক সচিব কাসেম মাসুম বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেজন্য আমাদের আগে সংস্কার করে পরে নির্বাচন করতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘অনেকেই বলছেন যে পুরনোরা বাদ, আমরা নতুন নেতৃত্ব পেয়ে গেছি। এভাবে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব? যাদের ওপর জনগণ আস্থা রেখেছিল তারা তো ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়ে গেছে।’
বিদ্যুৎ খাতে ‘ইনডেমনিটি’ দিয়ে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে এ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনার লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি।
ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বোর্ড রুমে সোমবার কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য জানান। এর আগে এই কমিটির সদস্যরা প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়েই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। পরে এই কমিটি সরকারের কাছে করণীয় বা সুপারিশ জমা দেবে। তবে এখন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিই প্রথম কাজ হিসেবে হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ বিধানের আওতায় চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও পিডিবির কাছে থাকা তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে জাতীয় কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।
কমিটির পরবর্তী বৈঠক আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে কমিটির সদস্য বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশের সাবেক সিওও আলী আশফাক, ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এফসিএ), বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ও ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল’ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিসমূহ পর্যালোচনার লক্ষ্যে ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইলিশ ও সার চোরাচালানের ঝুঁকির রয়েছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। আর এই চোরাচালান রোধে কোস্টগার্ডকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদর দপ্তরে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাবিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজস্ব চাহিদা বিবেচনায় সরকার এ বছর ভারতে ইলিশ রপ্তানি করছে না। তাছাড়া বিদ্যমান ডলার সংকটের মধ্যেও সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ সার আমদানির মাধ্যমে জোগান অব্যাহত রেখেছে।
‘এই প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইলিশ ও সার চোরাচালানের ঝুঁকি রয়েছে। তাই কোস্টগার্ডের মূল দায়িত্বের অংশ হিসেবে সমুদ্র ও নৌ-পথে ইলিশ, সারসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে নৈতিকতার ক্ষেত্রে স্খলন দেখা দিলেও কেবল কোস্টগার্ড নৈতিকতা বিচ্যুত হয়নি এবং অর্পিত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।’
কোস্টগার্ড সদস্যদেরকে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে তাদের অতীত ঐতিহ্য ও সম্মান সমুন্নত রেখে অস্ত্রসহ বিভিন্ন ক্রয় ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি এ সময় কোস্টগার্ডের আবাসন, জনবল, অস্ত্র এবং টহল ও উদ্ধারকারী নৌ-যান ক্রয় ও সংগ্রহসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য