চট্টগ্রামে দুটি মন্দিরসহ চারটি ভবন হেলে পড়ার পর নির্ঘুম রাত পার করেছেন ভবনের বাসিন্দারা। নিজেদের জিনিসপত্রের ওপর নজর রাখতে ভবন ছেড়ে কেউ কোথাও যাননি।
আবাসিক ভবন দুটির মালিকদের একজন রিপন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই ভবন মিলে মোট ১৭ পরিবার। রাতে আমাদের স্থানীয় স্কুলে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন কাউন্সিলর সাহেব, কিন্তু আমরা চলে গেলে আমাদের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা সবাই এখানে ছিলাম, এখন ধীরে ধীরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যাচ্ছি। সারা রাত কেউ ঘুমায়নি।’
চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকায় সোমবার দুপুরে চারটি ভবন হেলে পড়ে। কর্ণফুলী নদীর শাখা গুলজার খালে খননকাজ শুরুর পর ভবনগুলো হেলে পড়েছে বলে জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি বহুতল ভবন ও দুটি মন্দির।
বন্দর নগরীর সদরঘাট থানার পার্বতী পুকুর পার এলাকায় সোমবার দুপুর ১টার দিকে প্রথমে একটি ভবন হেলে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে মাটি দেবে গিয়ে আরও তিনটি ভবন হেলে পড়ে। ঝুঁকিতে রয়েছে খালপারের আরও একাধিক ভবন।
হেলে পড়া চার ভবনের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বিতল ও একটি চারতলা ভবন। এর মধ্যে লোকনাথ মন্দির ও জগন্নাথ মন্দির ভবনও দুটিও হেলে পড়েছে। ভবনগুলোর স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় ফাটল।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক কুতুব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। ভবনের বাসিন্দারা ভবনে না থাকলেও ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাচ্ছিলেন না। তারা জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
‘তবে এখন অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাসায় চলে যাচ্ছেন। আমরা তাদের ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। আর পরিস্থিতি আগের মতোই আছে, তবে চারতলা ভবনটি আগের চেয়ে আরেকটু দূরে সরে গেছে।’
চারটি ভবন হেলে যাওয়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ওই এলাকার গুলজার খাল খননকে দুষছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজটা সেনাবাহিনীর অধীনে হচ্ছে, তাই তারা ভালো বলতে পারবেন।
‘তবে খাল খননের সময় বিল্ডিং হেলে পড়বে মানে, খালের ওপর তো বিল্ডিং থাকার কথা না। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ভবন থাকার কথা। খালের ওপর ভবন থাকলে তো তা অবৈধ, সেসব বিষয়েও একটু খোঁজ নেয়া দরকার।’
সিডিএর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রিপন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আমরা সাত ভাই, আমাদের জমি অল্প অল্প করে। ভবন দুটির একটি ২০০৫ সালে ও অন্যটি ২০১৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। আমরা ভবন তৈরির সময় সিডিএর অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের শর্তানুযায়ী ৮ ফুট রাস্তা না থাকায় তারা অনুমতি দেয়নি। এখন আমরা মানুষজন বেশি, সেখানে তো ৮ ফুট রাস্তা হবে না।’
স্থানীয়রা জানান, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালটি খনন করছে সিডিএ। গত বছর খনন শুরুর কিছুদিন পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
ওই বছরের মার্চেও খালপারের একটি ভবন হেলে পড়েছিল। পরে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তখনও সংশ্লিষ্ট খালপারের ভবন মালিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে খনন কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন।
এ বছর কিছুদিন আগে ফের কাজ শুরু করে সিডিএ। রোববার রাতেও কাজ চলছে ওই এলাকায়। এরপর সোমবার দুপুরে মাটি দেবে গিয়ে হেলে পড়তে শুরু করে কয়েকটি ভবন।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হেলে পড়া আবাসিক ভবনগুলো থেকে ইতিমধ্যে সরে গেছেন কিছু বাসিন্দা। তবে অনেকেই তাৎক্ষণিক ভবন ছাড়তে রাজি হননি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিধসে একাধিক ভবন ধসে পড়তে পারে।
হেলে পড়া চারতলা ভবনের মালিক রিপন দাশ জানান, গত বছর খাল খনন শুরুর পরই তার ভবন কিছুটা হেলে পড়েছিল। ওই সময় অভিযোগও দেন তিনি। তবে কর্তৃপক্ষ তখন কোনো সাড়া দেয়নি।
স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, এটি অনেক পুরোনো খাল। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এটিতে খননকাজ করছে সিডিএ। হেলে পড়া ভবনগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:গভীর নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সুন্দরবনসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে এক হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার। ফলে আপাতত সাগরে মাছ শিকার বন্ধ। এ অবস্থায় ভরা মৌসুমে ইলিশ আহরণে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
ত্তাল সাগরে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় সাগরে টিকতে না পারায় এসব ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালসহ বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শনিবার দিনভর বাগেরহাটে ৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে মোংলা আবহাওয়া অফিস। বাগেরহাটে থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়া।
সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া কারণে মোংলা বন্দরের জেটি ও পশুর চ্যানেলের আউটার বারে অবস্থানরত সব বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য উঠা-নামার কাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মৎস্য আহরণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা এখন মাছ ধরা নিয়ে সাগরে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ইলিশ আহরণে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়।
সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ২৩ জুলাই। ওই সময় প্রথম সাগরে রওনা হয়েই টানা এক সপ্তাহের দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়েছে জেলেদের।
গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে চলতি সপ্তাহে দু’দফা নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে বঙ্গোপসাগর। উত্তাল ঢেউয়ে সাগরে কোনো ট্রলার নামতে পারছে না। ফের বন্ধ হয়ে গেছে ইলিশ আহরণ।
বর্তমানে বাগেরহাটের হাজারের বেশি ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গত দেড় মাসে তিন দফা দুর্যোগে পড়ে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলের মহাজন ও আড়ৎদাররা।
শনিবার দুপুরে শরণখোলার মৎস্য আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, নিম্নচাপের কারণে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সাগরে জাল ফেলতে পারেনি জেলেরা। মাঝখানে দু’দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা ট্রলারগুলো সাগরে ছুটে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে ফের হানা দিয়েছে গভীর নিম্নচাপ। ফলে শুক্রবার ভোর থেকে আবারও সব ফিশিং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসে।
গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলো বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মেহের আলীর চর এবং বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ঘাট, শরণখোলা, রায়েন্দা, মোংলা ও রামপাল ঘাটে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘একের পর এক দুর্যোগের কারণে সাগরে জাল ফেলা যাচ্ছে না। প্রতি ট্রিপে একেকটি ট্রলারে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় অধিকাংশ মালিক-মহাজনের চালান খোয়াতে হচ্ছে। এমনিতেই এ বছর প্রত্যেক আড়ৎদার ও মহাজন লাখ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছে।’
আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘ইলিশের যখন ভরা মৌসুম তখনই ৬৫ দিন থাকে নিষেধাজ্ঞা। এর পর আবার অক্টোবর মাসে শুরু হবে ইলিশের প্রজনন মাস। তখন ২২ দিন দেশের সব নদী ও সমুদ্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফলে ছয় মাসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাস চলে যায় নিষেধাজ্ঞায়। বাকি সময় দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগর-নদীতে ঠিকমতো জাল ফেলা যায় না। ফলে একদিকে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে মহাজনরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত লাখ লাখ জেলে চরম সংকটে পতিত হচ্ছে।’
আড়ৎদার, ট্রলার মালিক সর্বোপরি জেলেদের দুর্দশা বিবেচনা করে তাদের স্বার্থে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আর না দেয়ার দাবি জানান এই ফিশিং ট্রলার মালিক নেতা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘প্রকল্প বিলাস বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মাতারবাড়ি প্রকল্প থেকে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হচ্ছে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্র বন্দর, শিল্প-কারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প থেকে সরকার সরে আসবে। ছোট প্রকল্পে মনোযোগী হবে সরকার, যাতে তা মানুষের কাজে আসে।
ফাওজুল কবির খান জানান, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনের জন্য মাত্র ৩০ দিনের কয়লা মজুদ আছে। খুব শিগগির এ সংকটের সমাধান করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর আগে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজারে পৌঁছান। পরে তিনি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যান। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন শেষে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দর ও এসটিএম প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার আশুলিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে শনিবার ভোরে রাজধানী ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা পুলিশ।
শনিবার তাকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আবু তাহের মিয়া সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ভুক্তভোগী মো. রবিউল সানি বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪ নং এজাহারনামীয় আসামি হলেন সাফি।
এ মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসির সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান, সাবেক সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সিলেটে একেবারেই কোণঠাসা ছিলো বিএনপি। হামলা-মামলায় জর্জরিত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজপথে কর্মসূচিতেও আসত বাধা। মামলা-গ্রেপ্তারের ভয়ে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে পদধারী নেতারাও থাকতেন অনুপস্থিত।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এসব প্রতিবন্ধকতা কেটেছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মী-সমর্থকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন কারাবন্দি নেতারা। ফলে দীর্ঘদিন পর সিলেটে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামীকাল রোববার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। বিকেলে নগরে শোভাযাত্রা ও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
ইতোমধ্যে কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট জেলা, মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এই সমাবেশে নেতা-কর্মীদের বড় জমায়েত ঘটাতে চায় দলটি।
শেখ হাসিনার পতনের সিলেটে বিএনপির এটিই প্রথম সমাবেশ।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে চায় দলটি। এছাড়া মাঠ নিজেদের দখলে রাখাও লক্ষ্য। সমাবেশ থেকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবি জানানো হতে পারে।
জানা যায়, রোববার বেলা ২টায় শুরু হবে শোভাযাত্রা। সেটি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য দেবেন।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে সিলেট শহরজুড়ে ছয়টি টিম প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, মহানগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলটির নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগরের দায়িত্বশীলরা কাজ করছেন।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে জেলা ও মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি সভা করেছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা-সমাবেশ সফল করতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতন্ত্রকামী দল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। এই ধারাবাহিক লড়াই ও ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণের মুখে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা। দ্রততম সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন৷ গণতন্ত্র দিবসে আমরা এসব দাবিই জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আমরা সিলেটের রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। তবে এখন ফ্যাসিস্টরা পালিয়েছে, পুলইশ নির্যাতনের ভয়ও নেই। তাই রোববারের সমাবেশে বিপুল জমায়েতের আশা করছি আমরা।’
এর আগে সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে সিলেটে বড় জমায়েত করে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে নভেম্বরে নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বড় সমাবেশ করে দলটি। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এটি ছিলো প্রায় নয় বছর পর সিলেটে বিএনপির বড় সমাবেশ। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচনের আগে সিলেটে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় কক্সবাজারে উখিয়ার ইনানী সৈকতে ভেসে এসেছে আরও দুই জেলের মরদেহ। এ নিয়ে দুদিনে পাঁচ জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী সমুদ্র সৈকতে মরদেহ দুটি ভেসে আসে বলে জানান ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রেজাউল করিম।
তাদের মধ্যে আব্দুল করিম নামের এক জেলের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আব্দুল করিম চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি বাঁশখালীর বাসিন্দা আবুল বশরের মালিকানাধীন এফবি আব্দুল ছামাদ সাহা নামের ট্রলারের জেলে ছিলেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট এবং রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ পয়েন্টে ভেসে আসা দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়। শনিবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সমিতি পাড়া পয়েন্ট থেকে অপর একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রেজাউল করিম বলেন, শনিবার দুপুরে ইনানী সৈকতে দুটি মরদেহ ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সহায়তায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
শুক্রবার সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে এফবি আব্দুল ছামাদ সাহা নামের ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।
ট্রলারটির মালিকের বরাতে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ট্রলারটিতে ১১ জন জেলে ছিল। ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ট্রলারটি ইনানী সৈকত সংলগ্ন সাগরে ডুবে যায়। এতে ৯ জন জীবিত উদ্ধার হলেও দুজন নিখোঁজ ছিলেন। মরদেহ দুটি কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় তেলের ট্যংকারে বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম ও বরকতুল্লাহ মারা গেছেন। আজ শনিবার ভোরের দিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে আল-আমিন নামে আরও একজন মারা যান। এ নিয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া জাহাঙ্গীরের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালি থানার বেতকা গ্রামে। তার বাবার নাম আবেদ আলী হাওলাদার। আর বরকতুল্লাহ বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার আলমগীর সওদাগর গ্রামে। তিনি মোহাম্মদ আইয়ুব আলীর ছেলে। তারা জাহাজ কাটার শ্রমিক ছিলেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, আজ শনিবার ভোরে বার্ন ইনস্টিটিউটে আইসিইউ-তে মারা যান দু’জন। জাহাঙ্গীর আলমের শরীরের ৭০ শতাংশ ও বরকতুল্লাহর ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
ওই বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে আবুল কাশেম ও আনোয়ার হোসেন বার্ন ইউস্টিটিউট চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির তেঁতুলতলার এসএম শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় ট্যাঙ্কি বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে আটজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসার পথেই আহমাদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এর আগে বার্ন ইনস্টিটিউটে গত রোববার খাইরুল, সোমবার হাবিব ও পরে আল-আমিন নামে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার থুমনিয়া শালবনের পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে শনিবার সকালে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত রাসেল ইসলাম সদর উপজেলার কাকডোব গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে।
এ ঘটনায় আনিছুরের বন্ধু সাহেদকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম ডন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, বন্ধুকে খুন করে রক্তাক্ত দেহ নিয়ে ঘুরছিলেন সাহেদ। পরে স্থানীয়রা আটক করে গায়ে রক্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি খুনের কথা স্বীকার করেন। পরে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে দেয় তাকে।
আটক সাহেদের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থুমনিয়া শালবাগানে দুই বন্ধু নেশা করতে আসেন। নেশা করা অবস্থায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে সাহেদ তার বন্ধু রাসেলকে ছুরি দিয়ে পেটে ও গলায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ রাতেই সাহেদকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহের সন্ধানে শালবনে যায়। অনেক খোাঁজাখুজির পরও মরদেহ না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ।
এক কৃষক শনিবার সকালে শালবনের পাশে ধানক্ষেত পরিচর্যার জন্য গিয়ে মরদেহের সন্ধান পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধানক্ষেত থেকে রাসেলের মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি খায়রুল আনাম জানান, রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক সাহেদকে চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য