সালটা ১৯৭১। ডিসেম্বরের ১৬। বাঙালির বিজয়ের সকাল।
চারদিক থেকে তখন ভেসে আসছে বিজয়ের বার্তা। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন বীর যোদ্ধারা। হতোদ্যম
পাকিস্তানিরা প্রস্তুতি নিচ্ছে আত্মসমর্পণের। ৯ মাসের রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধ শেষ। সবখানেই বিজয় উল্লাস। নতুন পাওয়া স্বাধীনতার সুখে সবাই বাঁধনহারা।
বিজয়ের এই সকালে বিমান থেকে একটি মর্টার শেল এসে পড়ে সিলেট শহরের মণিপুরী রাজবাড়ী এলাকার একটি বাসায়।
যুদ্ধের সময়ে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন ডা. দিগেন্দ্র চন্দ এন্দের পরিবার। বিজয়ের খবর শুনতে ঘরের একটি কক্ষে রেডিওকে ঘিরে বসেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বোমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যান সবাই। প্রাণ হারান এই পরিবারের ৯ জন।
কোনো বিমান থেকে ফেলা বোমায় শহীদ হন এই ৯ জন, নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই কারো কাছে। তবে অনেকের ধারণা, ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান থেকেই পড়েছিল লক্ষভ্রষ্ট মর্টার শেলটি।
শহীদ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও দাবি এমন। পাশের পাকিস্তানি ক্যাম্প লক্ষ্য করে ছোড়া ভারতীয় মিত্র বাহিনীর মর্টার শেলেই ৯ জন প্রাণ হারান বলে মনে করেন তারা।
যার বোমাতেই এ বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে থাকুক, তারা সবাই যুদ্ধের শিকার। তবে এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই এই শহীদদের। কোনো তালিকায়ও নাম নেই তাদের। বিজয় উল্লাসের নিচে চাপা পড়ে যায় এই পরিবারের কান্না। চাপা পড়ে যান শহীদেরা।
এমনকি যে স্থানে সমাহিত করা হয়েছিল এই শহীদদের, সেই স্থানটি সংরক্ষণেরও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই। সমাধিস্থলে এখন গড়ে উঠেছে দোকানপাট।
বিজয় দিবসে বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিনটি দিগেন্দ্র চন্দ এন্দের পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যক্তিগত বিষাদের। ৫০ বছরেও স্বীকৃতি না পাওয়ার আফসোসেরও।
শহীদ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দের নাতি প্রতীক এন্দ সিলেটের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। একাত্তরেই জন্ম তার। ডিসেম্বরে বয়স ছিল মাত্র এক মাস। বাবা পার্থ শখা এন্দের মুখে শুনেছেন পারিবারিক সেই ট্র্যাজেডি। পার্থ শাখাও আহত হয়েছিলেন সেদিন।
বাবার মুখে শোনা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতীক এন্দ জানান, ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ ছিলেন সিলেট পৌরসভার চিকিৎসক। একাত্তরের আগেই তিনি অবসরে চলে যান। তবে যুদ্ধকালীন অনেককে সেবা দিয়েছেন। তিনি পরিবার নিয়ে মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এন্দ বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবারের নারী সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পার্শ্ববর্তী মণিপুরী রাজবাড়ী এলাকার একটি বাসায় সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেন। তখন ওই বাসায় থাকতেন দাদার বন্ধু আব্দুর রহমান চৌধুরী।’
বাবার মুখে শোনা ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে প্রতীক এন্দ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের সকালে সব দিক থেকে বিজয়ের খবর ভেসে আসছে। আমার দাদা ঘরের সবাইকে নিয়ে রেডিওতে এসব খবর শুনছিলেন। সকাল তখন প্রায় ৯টা। এমন সময় বিমান থেকে মর্টার শেলটি এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ, তার স্ত্রী সুরুচি বালা এন্দ এবং আত্মীয় প্রকৌশলী গোপেশ দাস। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যান দিগেন্দ্র চন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র দিব্যেন্দু এন্দ, মেয়ে শিখা এন্দ এবং দিব্যেন্দু এন্দের ছেলে অপু এন্দ।’
আহত অবস্থায় হাসপাতালে থেকে তিন দিন পর মারা যান দিগেন্দ্রের আরেক মেয়ে শিবানী এন্দ ও সাত মাসের শিশুকন্যা পম্পা এন্দ। সাত দিন পর মারা যান দিগেন্দ্রের পুত্রবধূ খনা এন্দ।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক ও শহীদ মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের তালিকা নিয়ে ড. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের সম্পাদনায় ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ। এই বইয়ে উল্লেখ রয়েছে ডা. দিগেন্দ্রের জীবনী ও তার পরিবারের আত্মদানের কথা। এ ছাড়া তাজুল মোহাম্মদের লেখা ‘সিলেটে গণহত্যা’ বইয়েও রয়েছে এ কাহিনীর উল্লেখ।
দিগেন্দ্র এন্দের পরিবারের শহীদ সদস্যদের সেদিন হিন্দু রীতিতে সমাহিত করা যায়নি। এমনটি জানিয়ে প্রতীক এন্দ বলেন, ‘তখনও তো যুদ্ধাবস্থা। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দাহ করার জন্য শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি কেউ। বিজয় দিবসের দিন ও তিন দিন পর মারা যাওয়া সাতজনকে মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় গণকবর দেওয়া হয়। সাত মাসের শিশু শম্পার মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় পানিতে। শুধু সাত দিন পর মারা যাওয়া খনা এন্দকে দাহ করা হয়েছিল।’
দিগেন্দ্র এন্দ পরিবারের সাত সদস্যকে যেখানে সমাহিত করা হয়, সেটি নগরের নয়াসড়ক এলাকার বিশ্বম্ভর আখড়ার জমি।
সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গণকবরের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই; বরং যে জায়গায় সমাহিত করা হয়েছিল, সেখানে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক স্থাপনা, দোকানপাট।
সমাধিস্থল সংরক্ষণ না করা ও শহীদদের স্বীকৃতি না মেলায় আফসোস জানিয়ে প্রতীক এন্দ বলেন, ‘আমরা আর্থিক সহায়তা চাই না। শুধু স্বীকৃতিটুকু চাই। আমার দাদাকে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাই।’
একই দাবি সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মনেরও। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর সকালে আমরা ছিলাম বিমানবন্দর এলাকায়। বিকেলে শহরে প্রবেশ করেছি। পরে এই ঘটনা শুনেছি।’
কাদের বিমান থেকে বোমা পড়েছিল, এমন প্রশ্নে ভবতোষ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর কোনো পাকিস্তানি বিমান উড়তে দেওয়া হয়নি। তার আগেই বিমানবন্দর দখলে নেওয়া হয়েছিল। ফলে মিত্রবাহিনীর বিমান থেকেই মর্টার শেল পড়ার আশঙ্কা বেশি।’
এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘কার গুলিতে মারা গেছেন, এটা বড় প্রশ্ন নয়, তারা সবাই যুদ্ধের শিকার। স্বীকৃতি ও শহীদের মর্যাদা তাদের প্রাপ্য।’
রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি। গণকবর চিহ্নিত নেই। মানুষজনও ভুলে গেছে। তাদের মৃত্যুর দিনটি স্মরণ করে না কেউ। ব্যতিক্রম শুধু কিছু তরুণ। ছাইভস্ম থেকে তারা খুঁড়ে বের করছেন ইতিহাস। কয়েক বছর ধরে তারা স্মরণ করেছেন এই শহীদদের।
এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সিলেটের নাগরিক সংগঠক আব্দুল করিম কিম। তিনি যুদ্ধের সময় দিগেন্দ্র এন্দের পরিবারকে আশ্রয় দানকারী আব্দুর রহমান চৌধুরীর ছেলে।
কিম বলেন, ‘বাবার কাছে এই ইতিহাস জানার পর আমরা এই শহীদদের স্মরণের উদ্যোগ নেই। কয়েক বছর ধরে তা নিয়মিতভাবেই করে আসছি। এ রকম একটি স্মরণ অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান উপস্থিত হয়ে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এরপর সে উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি।’
এ বছরও ১৬ ডিসেম্বর সকালে ‘বিশ্ব সিলেট সম্মিলন আয়োজক কমিটির’ উদ্যোগে ‘লেখা আছে অশ্রুজলে...’ নামে একটি স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গণকবরটি সংরক্ষণের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন:শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য