নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চার থেকে পাঁচজন যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম দেয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে সেই নামগুলো প্রকাশ করতে রাজি হননি দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সোমবার সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টার সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। এর মধ্যে একটি হলো নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা, আরেকটি হলো আইন করা না গেলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করা। তৃতীয়ত, সেটিও সম্ভব না হলে সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশন গঠন। আর সে জন্যই কয়েকটি নাম দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে এই আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হলো।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৭ সালে এই কমিশন দায়িত্ব নেয়। সে সময়ও রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমেই কমিশন গঠন করেছিলেন।
২০১২ সালে রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও রাষ্ট্রপতির সংলাপের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল।
এই দুটি কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আপত্তি আছে। এবার দলটি রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সংলাপ শুরুর দিন এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অংশ নিলেও আগামী নির্বাচনের জন্য আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে। এই সরকার গঠনের পর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছে তারা। তবে এই কমিশন ও সরকারের কোনো রূপরেখা তারা এখনও দেয়নি।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অন্য নেতারা হলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।
দুই ঘণ্টা পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা যে তিনটি প্রস্তাব করেছি তার একটি হলো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করা।’
সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে এখনও কোনো আইন হয়নি। জাপা নেতা বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসরণে একটি আইন করা দরকার।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি একজন যোগ্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কীভাবে করা হবে, সেটা নির্বাচন কমিশন আইনে সুষ্ঠু ব্যাখ্যা থাকতে হবে; যাতে করে ওই গাইডলাইন নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সে রকম ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করতে পারেন।’
জাপা নেতা জানান, তারা রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, কেবল নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে এই বিষয়টি সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। এ জন্য আমরা মনে করি, সংবিধানের এই বিধানটিকে একটি আইনের আওতায় আনা উচিত। এর পর তারা যদি এ আইন না মানেন, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। তাদের কী ধরনের শাস্তি হবে সেটাও সুস্পষ্টভাবে সেখানে উল্লেখ থাকতে হবে। তাহলে নির্বাচন কমিশন এই শক্তির বলে নির্বাহী বিভাগকে যেকোনো বিষয়ে বাধ্য করতে পারবে।’
সরকার আইন করতে চাইলে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি সহযোগিতা করবে বলেও জানান জি এম কাদের।
নির্বাচন কমিশনের যে মেয়াদ আছে, বাকি সময়ে আইন করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মনে করি সম্ভব। তবে সরকার যদি মনে করে সম্ভব নয়, তাহলে সম্ভব নয়।’
বিকল্প হিসেবে আরেকটি প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান জাপা নেতা। বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে সংসদ অধিবেশনে এটিকে অনুমোদন করা যেতে পারে।’
যদি অধ্যাদেশও জারি করা না যায় এবং নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা হয়, সে ক্ষেত্রে কিছু ‘যোগ্য ও নিরপেক্ষ’ ব্যক্তির তালিকা দেয়ার কথাও জানান জি এম কাদের।
তারা কারা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা প্রকাশ করব না। ...আমরা চার থেকে পাঁচজনের নামের তালিকা দিয়েছি। তারপরও আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আপনি যদি যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিজেই নিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সাজেশন থাকছে।’
রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন- এমন প্রশ্নে জাপা নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রস্তাবগুলো শুনেছেন এবং সেগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।'
রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তার অধীনে ভোটে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব না, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সবাইকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এসবি ইমিগ্রেশনের বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল/ট্রানজিট ভিসা আবেদনে অনলাইন অ্যাপ উদ্বোধন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সহজীকরণ ও পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জটিলতা/অভিযোগ ৯৯৯-এ জানানোর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জাতিসংঘ র্যাব-বিলুপ্তির প্রস্তাব দিয়েছে। বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষার মধ্যে থাকা, ডিজিএফআইকে কেবল সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ও আনসারের ওপর থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ না রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে অবস্থান জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা প্রস্তাব তারা দিয়েছে। আমরা সবাই বসবো। বসার পর আমাদের যা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত), সেটা আমরা জানাব।
‘তাদের এই তদন্তের বিষয়ে আমরা তো সবাই স্বাগত জানিয়েছি। তারা একটা ভালো কাজ করেছে। আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।
জেনেভায় বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।
এতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, মারণাস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আরও পড়ুন:সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৪৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
এতে জানানো হয়, দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যান, এ বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্যসমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট-২০২৫-এ যোগ দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত সোয়া ১১টায় তিনি সেখানে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুবাইয়ে স্বাগত জানান।
ড. আহমেদ বেলহৌল আল ফালাসি ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গত এক দশক ধরে দুবাইয়ে হয়ে আসা আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সমাদৃত এই সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত করেন।
উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহযোগিতা বিনিময়সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ওই সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী খাসেফ আল হামৌদি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি বুধবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এ কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করবে।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বুধবার এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কমিশনের সহসভাপতি করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। অন্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশনের কার্যপরিধির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে।
‘কমিশনের মেয়াদ হবে কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ৬ মাস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন:বিচার বিবেচনা ছাড়া হুটহাট কাউকে জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর রাজারবাগে মঙ্গলবার দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার এজাহার সুন্দর করে লিখেন, তথ্য দিন। গত ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। তা না হলে এ পদে থাকার কোনো মানে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পতিত সরকার ও তার দোসররা লাখ লাখ টাকায় দেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মবতন্ত্র ভয়াবহ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সব বিভাগ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ২০২৪ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম, যা আগের বছরে ছিল দশম।
১০০ স্কোরের মধ্যে ২৩ পেয়েছে বাংলাদেশ। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান।
ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এর আগে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম ছিল। সে বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪।
সংবাদ সম্মেলনের টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন,
‘দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২৩। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান। তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে।’
দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৪ প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সিপিআই-২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছর স্কোর বিবেচনায় উচ্চক্রম (ভালো থেকে খারাপ) অনুসারে দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৪তম।
‘দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে রয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের এ বছরের নিম্ন স্কোর ও অবস্থান প্রমাণ করে যে, বিগত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। এর প্রভাবে যথেচ্ছ লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি হয়েছে।’
টিআইর সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৪ সালে স্কোর বিবেচনায় বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮-এর মধ্যে আবর্তিত ছিল। ২০২৩ সালে এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪ সালে আরও এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে।
সিপিআই স্কোরের ২০১২ থেকে ২০২৪ মেয়াদে প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৪, ২৭ ও ২৮।
নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, তিনবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম।
বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর এ সূচক প্রকাশ করছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য