নিজের জন্য চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন, শত কষ্ট, আঘাত, বাধা সয়েও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান তিনি।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স’ পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্পাদিত ‘শেখ হাসিনা বিমুগ্ধ বিস্ময়’ নামের একটি গ্রন্থ তুলে ধরা হয়। চন্দ্রাবতী অ্যাকাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটিতে স্থান পেয়েছে ৭৫ লেখকের ৭৫টি প্রবন্ধ ও ৭৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র।
বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমার জন্য বই, আমার জন্মদিন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোনো কিছু চাই না। আমার জন্য কিছু করা হোক, সেটাও আমার কামনা না। আমি জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।’
৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মমতার কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ভারাক্রান্ত গলায় তিনি বলেন, ‘আমি তো আমার বাবা-মা সব হারিয়েছি, কিন্তু আমি একটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত কষ্ট, যত আঘাত, বাধা আসুক; যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বলে, মঙ্গা বলে দেশে কিছু থাকবে না।’
‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে’- এটাকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্য স্থির রেখে আমার পথ চলা। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ একদিন উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই হচ্ছে আমাদের বড় অর্জন। বাংলাদেশকে আমরা সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
বঙ্গবন্ধুর দেয়া পররাষ্ট্রনীতি মেনেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। তা ছাড়া, সমগ্র বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বাহিনীতে অবদান রেখে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন খুব সফলভাবে বাংলাদেশে আয়োজন করেছি এবং সুদূরপ্রসারী ঢাকা ঘোষণা আমরা গ্রহণ করেছি।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি সামনে এনে পৃথিবীর প্রতিটি জনপদের মানুষের শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত, মিয়ানমারের নিপীড়িত, নির্যাতিত যে মানুষগুলো, রোহিঙ্গা, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা আশা করি বিশ্বের সব মানুষের মানবাধিকার এবং শান্তি যেন রক্ষা পায়। এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা আমরা কামনা করি।’
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতাবাদী কূটনীতিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরস্মরণীয় করতে রাখতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে প্রথবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করেছে সরকার।
এবার সম্মাননা পেয়েছেন ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ আল মোহাম্মদ মেহরি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম (অব.)।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পদক বিজয়ী দুই কূটনীতিককে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাক্তন মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের দুই দেশ এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সরকারের আমলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের অভিযাত্রায় তিনি অত্যন্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
এই পদক প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের কূটনীতিকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কূটনীতিকগণও তাদের স্ব-স্ব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন শিখরে উন্নীত করতে উৎসাহিত হবেন।
‘আমরা চাই সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকুক। আমাদের আর্থসামাজিক উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর গুলশানে শনিবার ‘জাতিসংঘ হাউস’ উদ্বোধন করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
সকালে এ উদ্বোধন শেষে ভবনটি পরিদর্শন করেন মহাসচিব।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা জানায়, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন গুতেরেস।
তিনি জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। পরে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ণ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অনুষ্ঠান শেষে দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে একটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেবেন গুতেরেস।
এ বৈঠক শেষে তরুণ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। রবিবার সকালে ঢাকা ছাড়বেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
রাজধানীর গুলশানে শনিবার সকালে জাতিসংঘের নতুন ভবনে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন।
গুতেরেস আজ জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি ভবন পরিদর্শন করেন।
গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন।
ওই সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হবে রবিবার।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ করে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ।
আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী ও মোহাম্মদ শিশির মনির।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে শনিবার দেখা যায়, এটি রায়ের জন্য রবিবারের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের পানিবণ্টন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ মামলায় আরও পাঁচ শিক্ষার্থীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০), যিনি পলাতক, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২), যিনি পলাতক এবং মুজতবা রাফিদ (২১), যিনি পলাতক।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)।
বিচারিক আদালতের রায় খতিয়ে দেখতে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এটাকেই ডেথ রেফারেন্স বলা হয়।
পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেন।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশে সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তে (১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে) বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কঠিন হুমকির মুখে পড়বে।
ডব্লিউএফপির মতে, তহবিল সংকটের কারণে বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেকে আনার ফলে শরণার্থীদের জীবনধারণের ন্যূনতম সীমার নিচে ঠেলে দেবে, যা অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
খাদ্য সহায়তা বরাদ্দের এ মারাত্মক হ্রাসের কারণে নারী ও কিশোরীরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মা, কিশোরী ও শিশুরা ইতোমধ্যেই তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তুলতে পারে।
খাদ্য ঘাটতির চাপ পারিবারিক সহিংসতা এবং শোষণসহ জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলবে।
এ চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যাপ্ত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (এসআরএইচআর) পরিষেবার বিঘ্নের আশঙ্কা। এতে নারী ও কিশোরীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য রেশন কমানোর খবরে এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং এতে অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি নারী ও কিশোরীদের বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। তারা প্রায়ই এ ধরনের অস্থিতিশীলতার সবচেয়ে বেশি শিকার হন। উপরন্তু আন্তর্জাতিক কমিউনিটির তহবিল ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যর্থতা মানবিক সংস্থাগুলোকে শরণার্থীদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতে বাধ্য করেছে।
অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পূর্ণ খাদ্য রেশন পুনরুদ্ধার করতে এবং নারী ও কিশোরীদের অগ্রাধিকার দিয়ে জেন্ডার-সংবেদনশীল সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানাই। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় টেকসই প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে।
‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব যখন এই সংকটের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, তখন আমরা ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থীর, বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় দ্রুত এবং সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের আহ্বান জানাই।’
আরও পড়ুন:জরুরি অবতরণের সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দুই পাইলট বৈমানিক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোল্লা মোহাম্মদ তহিদুল হাসান ও স্কোয়াড্রন লিডার আহমদ মুসা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিমান বাহিনীর গ্রোব-১২০টিপি প্রশিক্ষণ বিমানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে যশোর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বিমানটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান থেকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে।
‘প্রশিক্ষণ বিমানটির দুজন পাইলট নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমান বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।’
যশোর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিক অবতরণের সময় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ভূমিতে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং হয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। দুই পাইলট অক্ষত আছেন। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে রানওয়ে ক্লিয়ার করা হয়।’
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে থাকা আলামত জব্দের অনুমতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আইসিটির তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন এ আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এসএম মইনুল করিম।
ব্যারিস্টার মইনুল করিম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের জিম্মায় আগের মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে আলামতগুলো আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জব্দের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
তিনি জানান, এর আগে এ হত্যা মামলায় রংপুরে এসে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। আলামত জব্দের অনুমতির মাধ্যমে মামলার তদন্তে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো। প্রয়োজনে জব্দকৃত আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করে শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলামত জব্দের আবেদনের পক্ষে তারা বলেছেন। এর মাধ্যমে এ মামলার তদন্ত গতি পাবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন তাজহাট থানায় মামলা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভূষণ রায়। এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পরে ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০ থেকে ৩৫ জনের অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করে মামলা করেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই মো. রমজান আলী।
পরে তিনি সম্পূরক এজাহারে আরও সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন।
মামলা দুটির তদন্ত করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। কিন্তু মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কক্সবাজার সফরে যাবেন। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করার পাশাপাশি আরও কিছু কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
মন্তব্য