দেশে ধানের জিন পরিবর্তনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষকরা। তাদের এই সফলতার মূলে রয়েছে ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ পদ্ধতির ব্যবহার। এটি মূলত ফসলের জিন পরিবর্তনের আধুনিক ও বিতর্কমুক্ত একটি প্রযুক্তি।
ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ পদ্ধতিতে সুগন্ধি এবং মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং (কারেন্ট পোকা) প্রতিরোধী জিন ঢুকিয়ে মিলবে ধানের নতুন জাত।
ব্রি সূত্র জানিয়েছে, ফসলের জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ইনট্রুডাকশন, ক্রসিং ও সিলেকশন, হাইব্রিডাইজেশন, মিউটেশন ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। পরে জেনেটিক্যাল মডিফাইড ক্রপস (জিএমও) প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়। কিন্তু এসব প্রযুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে সারাবিশ্বে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এদিক থেকে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তিটি আধুনিক এবং বিতর্কমুক্ত। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জার্মানির বিজ্ঞানী ইমান্যুায়েল চার্পেনিয়ার ও আমেরিকার জেনিফার দোদনা। এরপর থেকেই ফসলের জাত উন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি।
২০২০ সালের শুরুতে ব্রি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কীটত্ত্ববিদ ড. মো. পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সম্প্রতি তারা সফলও হয়েছেন। সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে তারা ধানের ২৪টি গাছ পান। তারপর থেকেই উজ্জিবিত ব্রি’র বিজ্ঞানীরা।
কীটত্ত্ববিদ ড. পান্না আলী বলেন, ‘সুগন্ধি চাল এবং মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। কারণ প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে সুগন্ধি চালের ফলন অনেক কম। এ কারণে আমাদের দেশের কৃষকরাও সুগন্ধি ধানের জাত চাষ করতে চায় না।’
তবে তিনি জানান, সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে এই চালের রয়েছে বিশাল বাজার। তা ছাড়া মাজরা ও কারেন্ট পোকার কারণে কৃষকরা প্রায় ১০-১৮ ভাগ ফলন হারান। এই পোকা দমনে কৃষকদের প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব চিন্তা থেকেই সুগন্ধি চাল এবং পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা।
এ অবস্থায় দেশে বহুল চাষকৃত ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৮৯ ও ব্রি ধান ৯২ জাতের ধানে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য ঢুকানো হয়। সেই সঙ্গে জিন পরিবর্তন করে মাজরা পোকা ও বাদামি ঘাসফড়িং প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রবেশ করানো হয়।
ড. পান্না আলী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ২৪টি গাছ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ধানের শীষগুলো পাকতে শুরু করেছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বীজ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এ সফলতায় আমারা দারুণ আনন্দিত ও উজ্জিবীত।’
গবেষক দলটির প্রধান আরও বলেন, ‘ধানে BADH2 জিন সক্রিয় থাকলে এসিটাইল-১ পাইরোলিন (2AP) উৎপাদন ব্যাহত করে সুগন্ধি তৈরীতে বাধা দেয়। সব ধানেই সুগন্ধি বৈশিষ্ট আছে কিন্তু BADH2 জিন থাকার কারণে সুগন্ধি বৈশিষ্ট প্রকাশিত হতে পারে না।’
তিনি জানান, ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতিতে জিনটি নিষ্ক্রিয় করে অধিক ফলনশীল যে কোনো ধানের জাতে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা যায়। একই পদ্ধতিতে ধান গাছে সেরোটোনিন উৎপাদনে বাধা দিয়ে পোকা প্রতিরোধী ধানের জাতও উৎপন্ন করা যায়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রি উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন প্রকার ধানের ১০৬টি জাত উদ্ভাবন করেছে। তবে মুজিববর্ষে এসে তাদের সফলতার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত। এটি ব্রি’র একটি যুগান্তকারী সফলতা।
আরও পড়ুন:শস্যভাণ্ডার-খ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ গাছের ডগায় দুলছে সোনালি ধান। এসব ধানের অধিকাংশই জিরাশাইল ও কাটারিভোগসহ অন্যান্য জাতের। আর এই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মাঝে ১৯০ বিঘা জমিতে ফলেছে ভিন্ন জাতের ধান।
স্থানীয় ৪০ জন কৃষক বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি-১০২, ১০৪ ও ১০৫ চাষাবাদ করেছে। ব্রি রাজশাহী অঞ্চল থেকে পার্টনার প্রকল্পের অর্থায়নে এসব ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে।
এসব ধান বিশেষ করে জিরাশাইল ধানের চেয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা ও খরাসহিষ্ণু। জিরাশাইলের ফলন যেখানে বিঘাপ্রতি ২৪-২৬ মণ, সেখানে উন্নত জাতের এই ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ২৬ থেকে ৩০ মণ। বিঘাতে ৩ থেকে ৪ মণ ফলন বেশি। চালও সরু, জিংকসমৃদ্ধ এবং সুগন্ধি চালের মতো। এর জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এই ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে।
আমাদানিনির্ভরতা কমিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ফসল পেতে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি। তারই অংশ হিসেবে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস পালিত হয়েছে সোমবার।
নিয়ামতপুর উপজেলার পারইল গ্রামের মাঠে এদিন দুপুরে ব্রি রাজশাহী অঞ্চল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শস্য কর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।
এছাড়া কৃষকদের মাঝে এই জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়াতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
রাজশাহী ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফজলুল ইসলাম হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদুল ফারুক, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ অন্যরা দেন।
আবাদে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ
জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। চাল সরু হওয়ায় বাজারে এই ধানের দাম বেশি। আবার ফলনও বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ মণ বেশি। এসব কারণে স্থানীয় কৃষকরা ব্রি উদ্ভাবিত এই নতুন জাতের ধান আবাদে ব্যাপকভাবে আগ্রহী।
কৃষক আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের আবাদ করতাম। তবে এ বছর ১০ বিঘা জমিতে নতুন জাতের ব্রি-১০২ ধান আবাদ করেছি। খরচ ও পরিচর্যা অন্যান্য জাতের ধানের মতোই। আশা করছি বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৩ মণ ফলন পাবো।’
কৃষক ইফরেখারুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন জাতের ধান চাষাবাদে সাধারণত কৃষকদের অনীহা থাকে। কারণ কোনো কারণে ফলন বিপর্যয় হলে কৃষকের মাথায় হাত। তারপরও নতুন জাতের ধান আবাদ সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। স্থানীয় অন্য কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেকেই এই নতুন জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
‘শুরুতে আমরা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগাতে অল্প পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করেছি। এখন অনেকেই এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব জাতের জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।’
কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নতুন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলন দেখছি ভাল হয়েছে। রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম। আবার ঝড়-বাতাসে ধানগাছ হেলে পড়ছে না। কারণ বাতাসে হেলে পড়লে ফলন কম হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই জাতের ধান আবাদে কোনো সমস্যা দেখছি না। পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ সরবরাহ করা গেলে আমাদের মতো অনেক কৃষক এই ধান চাষাবাদ করবে এবং লাভবান হতে পারবে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে জমিতে চারা রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর কৃষকদের হাড়ভাড়া পরিশ্রমে মিলেছে কাঙ্খিত ফলন।
‘উত্তরাঞ্চলের মধ্যে নওগাঁ জেলা শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। স্থানীয় কৃষকরা যেসব জিরাশাইল ধানের আবাদ করছেন তার বিকল্প হতে পারে এই চার জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ধানের তুলনায় এই জাতের ধানগাছের উচ্চতা বেশি এবং ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ে না। দুর্যোগ মোকাবেলা ও খরাসহিষ্ণু। আগামীতে এই জাত আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছি। গোখাদ্য হিসেবে এই ধানগাছের খড় কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দেবে।’
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘খাদ্য ঘাটতি মেটানোসহ আমদানিনির্ভরতা কমাতে কম সময়ে অধিক সফল উৎপাদন করতে ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধান আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতে সক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত এই জাত স্থানীয় জিরাশাইল ধানের চেয়ে বিঘা প্রতি ৩-৪ মণ ফলন বেশি। বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এবং ব্রি ধান ১০২ উচ্চ ফলনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ। এছাড়া ব্রি-১০৪ সুগন্ধি ও বাসমতি আকারে। এটা পোলাও/বিরিয়ানির চাল হিসেবে রপ্তানি করা যাবে এবং স্থানীয় জিরাশাইলের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যাবে।
আর ব্রি-১০৫ ডায়াবেটিক রাইস হিসেবে চাষাবাদ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ভাত খাওয়ার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।
আরও পড়ুন:টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করে সাড়া ফেলে দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এই সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেয়া হয় ‘পিপীলিকা’। তবে গত তিন বছর ধরে থমকে আছে এর কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ সংকটে সার্চ ইঞ্জিনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেবল সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ই নয়, একই অবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’-এরও। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও তা একপ্রকার নিস্ক্রিয়। দ্রুত ক্যানসার শনাক্তের সম্ভাবনাময় ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ ডিভাইসটিও অর্থ সংকটে আটকে গেছে। করোনা মহামারি এবং অর্থ ও জনবলের অভাবে এগোতে পারেনি বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’।
দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তেত্রিশ বছর আগে সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কিছু উদ্ভাবন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গত কয়েক বছর ধরেই নেই নতুন কোনো উদ্ভাবন। এমনকি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে আছে পুরনোগুলোও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তারা গবেষণা, উদ্ভাবনসহ সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে এখন কোনো উৎসাহ দেয়া হয় না।
পিপীলিকা
২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল ১১ জন ডেভেলপার মিলে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। পিপীলিকার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন মো. রুহুল আমীন সজীব।
শাবির আইআইসিটি বিভাগ জানায়, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ সংক্রান্ত কিছু সার্ভিস গ্রহণের বিনিময়ে সরকারের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম থেকে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ টাকা দেয়া হয়। শেষ কিস্তির (৯ম কিস্তি) ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৩ টাকা পিপীলিকাকে পরিশোধের আগেই সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই অর্থ সংকটে পিপীলিকা বন্ধ রয়েছে।
আগের মতো ৫-৬ জন পূর্ণকালীন আইটি/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করানোর জন্য মাসিক ৩-৪ লাখ টাকা অনুদান পেলে পিপীলিকার উন্নয়ন কাজ চলমান রাখা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে টিম লিডার মো. রুহুল আমীন সজীব বলেন, ‘আমি এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত নই।’
শাবির আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রজেক্টের ফান্ডিং আসত সরকারের কাছে থেকে। ২০২০ সাল থেকে আমাদের প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট সবকিছু সঠিক সময়ে পাঠালেও কোনো অর্থ পাইনি। সর্বশেষ আমাদের প্রায় ২২ লাখ টাকা আটকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া তো আমরা গবেষক ও কর্মচারীদের কাজ করাতে পারি না। আমরা যতটুকু সম্ভব দিয়েছি। তবুও তাদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের আর টাকা দেয়া হয়নি। আবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সাপোর্ট না পাওয়ায় কারণে বর্তমানে তা বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও এটুআইয়ের পিডিসহ সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের সব রিসোর্স আছে। সরকারের কাছে থেকে আবার সাপোর্ট পেলে আমরা তা সচল করতে পারব।’
এটুআই প্রোগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, “যতটুকু মনে পড়ে ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইঞ্জিনটা যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মানের হয়নি। এজন্য ফান্ডিং বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান পিডি ভালো বলতে পারবেন।’
বর্তমান পিডি (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমার জানা নাই। এটা আসলে কী অবস্থায় আছে, খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করব।’
একুশে বাংলা কি-বোর্ড
কি-বোর্ড নিজেই বুঝে ফেলবে ব্যবহারকারী কী লিখতে চাইছেন- ২০১৮ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এমন কি-বোর্ড কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এর নাম দেয়া হয় ‘একুশে বাংলা কিবোর্ড’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের পাশাপাশি দ্রুত টাইপিং ও স্পর্শ করে লেখার ব্যবস্থা রয়েছে এ কি-বোর্ডে। ফলে টাইপ না জানলেও যে কেউ সহজেই বাংলা টাইপিং শিখতে পারে এর মাধ্যমে।
২০২০ সালে কি-বোর্ডটির উদ্ভাবক তৎকালীন শাবির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বিদেশে চলে গেলে সেটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে এই প্রজেক্টের কোনো আপডেট নেই। আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে আর কোনো কাজ করা হয়নি।’
ননলিনিয়ার অপটিকস
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবনেও রয়েছে শাবিপ্রবির সাফল্য। অল্প খরচে ও কম সময়ে ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে দাবি ছিল উদ্ভাবকদের।
হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেসময়কার অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসার শনাক্তকরণের এ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন, মনজ কান্তি বিশ্বাস ও এনামুল হক।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ফান্ডিংসহ অনেক সমস্যা আছে। মূলত ফান্ডিংয়ের জন্য আমরা আটকে গেছি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট শিগগিরিই চালু হবে। সম্ভবত পিডি নিয়োগ হয়ে গেছে। ওটা হলেই আমরাও ফান্ড পেয়ে যাব।
‘বর্তমানে আপগ্রেডের কাজ চলছে। ফান্ডিং পেলে আমরা ক্লিনিক্যালি ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে এটাকে সর্বসাধারণের ব্যবহাপযোগী করে তোলা। হেকাপের আওতায় কাজটি চলছিল, পরে হিট আসার কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রজেক্ট পেলে আমরা বাকি কাজ করে ফেলতে পারব।’
প্রকল্পটি একেবারে বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ আমাদের মতো করে চলছে।’
রোবট রিবো
২০১১ সাল থেকে শাবির তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব উদ্যোগে ১১ জনের একটি দল রোবট নিয়ে কাজ শুরু করে।
২০১৫ সালে বার্ষিক সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি রোবোসাস্টকে মানবসদৃশ রোবট তৈরির করতে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। দলটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবসদৃশ রোবট তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘রিবো’।
রোবটটি ২৪ ডিগ্রি কোণে স্বাধীনভাবে ঘুরতে, নাচতে, মুখের অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ, হ্যান্ডশেক, হাত উপর-নিচে তোলা, বাংলায় কথা বলা, এমনকি নিজের নামও বলতে পারত। বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত।
রোবটটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া শাবির সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।
দলের সদস্য মেহেদী হাসান রূপক বলেন, ‘আমরা ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছিলাম। সেখানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফান্ডিং করবেন। আমরা তখন উনাকে একটা আবেদনপত্রও দিয়েছিলাম। পরে করোনা ও জনবল সংকটে আর এগোতে পারিনি। এর মধ্যে আমাদেরও পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এই উদ্ভাবনগুলোর বর্তমান অবস্থার বিষয়ে আমি খোঁজখবর নেব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আমরা কথা বলব।’
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
সম্প্রতি ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের আগুনে নারী ও শিশুসহ চারজন নিহতের ঘটনা নাড়া দেয় পুরো দেশকে। এ ছাড়াও গত কয়েক মাসে ট্রেনে আগুন, ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া এবং অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বহুবার।
এসব দুর্ঘটনা রোধের উদ্দেশ্যে ‘ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেছে চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট মাল্টিমিডিয়া মডেল স্কুলের ছাত্র জাহিদ হাসান জিহাদ।
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গলবার আয়োজিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলায় ফার্স্ট মাল্টিমিডিয়া মডেল স্কুলের স্টলে ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম এবং এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবট প্রদর্শন করে জাহিদ।
সিকিউরিটি সিস্টেমটি সম্পর্কে জানতে কথা হয় জাহিদের সঙ্গে।
সে বলে, ‘বর্তমানে হরতাল-অবরোধের সময় ট্রেনে আগুন দেয়া, ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক। যদি কোনো দুর্গম জায়গায় ট্রেনে আগুন লাগে তাহলে ওই মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে যদি তাৎক্ষণিক আগুন না নেভানো যায় তাহলে পুরো ট্রেনে আগুন লেগে যাবে।’
জাহিদ বলে, ‘এই সিস্টেম আগুন লাগা প্রতিরোধ করবে। ট্রেনের প্রতিটি বগিতে থাকা ওয়াশরুমের পানিকে কাজে লাগিয়ে ট্রেনে লাগা আগুন নেভানো সম্ভব। ট্রেনের কোনো বগিতে যখনই আগুন লাগবে, সেই মুহূর্তে ফায়ার ডিটেকশন সেন্সর অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে এবং পুরো ট্রেনে পানি ছড়িয়ে গিয়ে আগুন নিভে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে অ্যালার্ম বেজে উঠবে এবং ট্রেন থেমে যাবে।’
এতে শত শত মানুষের প্রাণ ও কোটি টাকার সম্পদ বাঁচবে বলে জানায় জাহিদ।
জাহিদ এ সিস্টেম সম্পর্কে আরও জানায়, দেশে ট্রেন লাইন অনেক সময় গ্রাম কিংবা বাজারের ভেতর দিয়ে যায়। এই সিস্টেমে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা বাজারের ভেতর যে রেললাইন রয়েছে তার ৫০০ মিটার পরপর পোলের ব্যবস্থা আছে। যেখানে ট্রেন আসার ৫০০ মিটার আগে থেকেই সেই পোলগুলোতে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
এ ছাড়াও এ সিস্টেমে ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া মাত্রই ট্রেন চালক সংকেত পাবেন এবং ট্রেন নিজে থেকেই থেমে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন লাইন ঠিক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলবে না।
ইংরেজি-বাংলায় কথা বলা রোবট সম্পর্কে জাহিদ বলে, ‘আমরা দীর্ঘ সাত মাসের প্রচেষ্টায় এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবটটি তৈরি করতে পেরেছি। এ রোবটটি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় কথা বলে। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো প্রয়োজনে রোবটটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
জাহিদের উদ্ভাবন সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘জাহিদ হাসান জিহাদ খুব ছোট থেকেই ছোটো-খাটো বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে আসছে। আমাদের স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবে বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম এবং এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবট তৈরি করেছে সে।’
দামুড়হুদা উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার রাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী জিহাদের এমন উদ্ভাবনে আমি মুগ্ধ। তার উদ্ভাবন দেখে অন্য শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হবে। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকসানা মিতাও জাহিদের এ উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন:ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (সিইউবি) ক্লাব ইলেক্ট্রো এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের যৌথ আয়োজনে তিন দিনের রোবোফেস্ট সংস্করণ আলফা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিইউবিতে।
সোমবার বিকেলে সিইউবি চত্বরের লেভেল-৯ এ সিইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রধান অতিথি হিসেবে শাহনুল হাসান খান ফেস্টের উদ্বোধন করেন। এটি চলবে বুধবার পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আক্তার হোসেন।
ফেস্টে সভাপতিত্ব করেন ইইই-এর প্রধান, সিআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. এমডি শাহরুখ আদনান খান। ক্লাব ইলেক্ট্রোর উপদেষ্টা মো. আমানত হোসেন, সহউপদেষ্টা মো. সাদরিবুল হাসান ও মো. নাসিম তাজ ফ্যাকাল্টি, সকল ইইই অনুষদ ফেস্টের আয়োজক ছিলেন।
প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে তেল-গ্যাস উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।
স্বল্প খরচে মাটি দিয়ে অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন করতে সফল হয়েছেন তিনি। পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য প্লাস্টিককে তরল জ্বালানিতে রূপান্তরের গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে গবেষণায় তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন।
গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রথমে মাটি থেকে সিলিকা অ্যালুমিনা ভেঙে ক্যাটালিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই ক্যাটালিস্ট দিয়ে প্লাস্টিককে ভেঙে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন জাতীয় জ্বালানি তেল তৈরি করেছি। এই জ্বালানি তেল দিয়ে ছোট ও মাঝারি নৌকার ইঞ্জিনও চালনা করা সম্ভব। এ ছাড়া জেনারেটরের মাধ্যমে এ জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে থাকে। এসব পরিবেশের জন্য হুমকি এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এই প্লাস্টিক পলিথিন ধুয়ে পরিষ্কার করে জ্বালানি উৎপাদনের উপযোগী করা সম্ভব। মাটি ও প্লাস্টিক দুটি উপাদানই আমাদের হাতের কাছে পাওয়া যায়। এতে করে খুব অল্প খরচে সরকার চাইলে জ্বালানি সংকটের এই সময়ে তেল উৎপাদন করতে পারবে।’
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘এই জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। কারণ জ্বালানির বেশির ভাগ অংশ ডিজেল, পেট্রল ও কেরোসিন থেকে আসে। সরকারের কাছ থেকে গবেষণার জন্য বড় আকারের তহবিল পেলে বড় আকারে উৎপাদনের জন্য একটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারব। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক-পলিথিন রয়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী এবং অন্যান্য নদী ও খাল থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তা ডিজেল, পেট্রল ও কেরোসিনে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাবও কমে যাবে।’
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যাবে বলে দাবি গবেষকদের। বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের মাধমে দূষণ কাটিয়ে বর্জ্য প্লাস্টিককে জ্বালানিতে রূপান্তর করে এর সংকটও মোকাবেলা করা যাবে। এই জ্বালানিকে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন করা যাবে বলে জানান এই অধ্যাপক।
গবেষণা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তহবিল বা বাজেট পেলে বড় আকারে গবেষণা করার চেষ্টা করব।’
গবেষণা প্রকল্পটি ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ইনঅর্গানিক কেমিস্ট্রি, ওয়াইলি’ নামের একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একক ব্যবহারের বর্জ্য পলিথিনকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে পরিবেশ রক্ষা করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফীস আহমেদ, ড. জয়ন্ত কুমার সাহা এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত চন্দ্র রায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান ও জুনায়েদ মাহমুদ শুভ গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।
নারীর হাতে থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে নাক তৈরি করে তা সফলভাবে তার মুখমণ্ডলে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফ্রান্সের এক দল চিকিৎসক এমন অসাধ্য সাধন করেছেন। ক্যানসারের চিকিৎসায় নাকসহ মুখের একাংশ হারিয়েছিলেন ওই নারী।
ন্যাজাল ক্যাভিটি ক্যানসারে আক্রান্ত দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর তুলুজের বাসিন্দা ওই নারী ২০১৩ সালে রেডিওথেরাপি ও ক্যামোথেরাপি নেয়ার সময় তার নাক হারান। তখন নাকের স্থানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এর পর প্রায় এক দশক তিনি নাক ছাড়াই দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন।
একপর্যায়ে চিকিৎসকদল তার হাতে কৃত্রিম নাক তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রোসথেটিক পদ্ধতির মাধ্যমে এই নাক তৈরিতে কয়েকবার তারা ব্যর্থও হয়েছিলেন।
তুলুজ ইউনিভার্সিটি হসপিটালের বিশেষজ্ঞরা ওই নারীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে থ্রি-ডি ফরম্যাটে অবয়ব তৈরি করে তা গজানোর জন্য স্থাপন করা হয় তার বাম হাতে। সেটি ধীরে ধীরে নাকের আকৃতি পায়। দুই মাসের মধ্যে এটি প্রতিস্থাপনের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়।
তুলুজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কৃত্রিমভাবে তৈরি করা অঙ্গটি সফলভাবে প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারে অধ্যাপক অ্যাগনেস ডুপ্রেট-বোরিস এবং ডা. বেঞ্জামিন ভাইরেল নেতৃত্ব দেন। জটিল এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নাকের সঙ্গে শরীরের রক্তনালীর সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়েছে কৃত্রিম নাকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য