× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
The sergeants fathers motorcycle was in the opposite direction
google_news print-icon

সেই সার্জেন্টের বাবার মোটরসাইকেল ছিল ‘উল্টোপথে’

দুর্ঘটনা
ইউলুপে উল্টোপথে ঢোকা মনোরঞ্জন হাজংয়ের মোটরসাইকেলের সঙ্গে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত মোটরসাইকেল (মাঝে)। ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেয়া
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা, রাস্তার ইউলুপের অবস্থান বিশ্লেষণ এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেই রাতে ইউলুপে উল্টোপথে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করেন মনোরঞ্জন হাজং।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর মামলা না নেয়ার ঘটনায় তৈরি হয় ব্যাপক সমালোচনা।

অভিযোগ ওঠে, মনোরঞ্জনের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়া প্রাইভেট কারের চালক সাঈদ হাসানকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করলেও বিচারপতির ছেলে হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পর গত ১৬ ডিসেম্বর মহুয়ার মামলা গ্রহণ করে বনানী থানা। সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮ ও ১২৫ ধারায় এই মামলায় গাড়ির চালকসহ অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়।

এর পর পরই জানা যায়, মহুয়া মামলা করার দুদিন আগে তার বাবার বিরুদ্ধেই একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই বিচারপতির ছেলে। এই জিডি নিয়েও চলছে সমালোচনা।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপে গত ২ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা, রাস্তার ইউলুপের অবস্থান বিশ্লেষণ এবং তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেই রাতে ইউলুপে উল্টোপথে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করেন মনোরঞ্জন হাজং। থেমে থেমে তিনি এগোনোর সময় ইউলুপের নির্ধারিত দিক থেকে ঢোকা সাঈদ হাসানের বিএমডব্লিউ প্রাইভেট কারটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মারাত্মক আহত হন মনোরঞ্জন।

বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পর তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এরপর অবস্থা অবনতি হলে নেয়া হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে তিনি এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বিএমডব্লিউ প্রাইভেট কারটিতে চালকের আসনে ছিলেন বিচারপতি রেজাউল হাসানের ছেলে সাঈদ হাসান। গাড়িটিতে আরও ছিলেন সাঈদ হাসানের স্ত্রী অন্তরা সাঈদ ও রোয়াদ রহমান নামে একজন।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়িসংলগ্ন এলাকায় দুটি ইউলুপ রয়েছে। প্রথমটি দিয়ে মহাখালী থেকে আসা গাড়িগুলো ঘুরে আবার মহাখালীর দিকে যেতে পারে। এর কয়েক শ গজ দূরের দ্বিতীয় ইউটার্ন দিয়ে বনানী থেকে আসা গাড়িগুলো ঘুরে আবার বনানী বা বিমানবন্দরের দিকে যায়।

সেই সার্জেন্টের বাবার মোটরসাইকেল ছিল ‘উল্টোপথে’
বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িসংলগ্ন রাস্তার এই ইউলুপে দুর্ঘটনাটি ঘটে

২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে দ্বিতীয় ইউটার্নে, যেটি দিয়ে বনানীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলো ঘুরে ফের বনানীর দিকে যেতে পারে।

এ ঘটনায় বনানী থানায় মহুয়া যে মামলা করেছেন, সেখানে তিনি বলেন, তার বাবা মহাখালীর দিক থেকে চেয়ারম্যানবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এই অভিমুখে চলাচলকারী যানবাহনের ইউটার্ন নিতে আলোচিত ইউলুপটি ব্যবহার করার কথা নয়। তবে দুর্ঘটনার পর মনোরঞ্জনের মোটরসাইকেলটি সেখান থেকেই উদ্ধার করে পুলিশ।

রোববার ওই ইউলুপে গিয়ে দেখা যায়, এর উল্টো দিক দিয়ে ঢোকার পর বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে ডান পাশে মনোরঞ্জনের মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনায় পড়ার চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। সড়ক ডিভাইডারে রয়েছে ঘষা খাওয়ার দাগ।

ঘটনাস্থলের চিত্র বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, বিচারপতি রেজাউল হাসানের ছেলে সাঈদ হাসানের গাড়ি বনানীর দিক থেকে এসে ওই ইউলুপের বাম লেন ব্যবহার করে ইউটার্ন নিচ্ছিল। এ সময় উল্টোদিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে গাড়িটির সংঘর্ষ হয়।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, রাত ২টার দিকে উল্টোপথে ইউলুপে একটি মোটরসাইকেল প্রবেশ করে। এটি চালাচ্ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং। তিনি থেমে থেমে সামনে এগোচ্ছিলেন।

মোটরসাইকেলটি ইউলুপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু আগে উত্তর দিক দিয়ে ছুটে আসা প্রাইভেট কার বাম পাশ থেকে ধাক্কা দেয়।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করা গাড়িটি লাল রঙের বিএমডব্লিউ, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫৪৯০৬। ঘটনার পর ধারণ করা অন্য একটি ভিডিওতে বনানী থানা পুলিশের এক সদস্যকে প্রাইভেট কারের চালকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর পরই বনানী থানা পুলিশ গাড়ির চালক ও অন্য দুই যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তখনই জানতে পারি চালক একজন বিচারপতির ছেলে। এরপর ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে আটক চালককে ছেড়ে দেয়া হয়।’

দুর্ঘটনার ১৪ দিন পর বনানী থানা ‘অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের’ বিরুদ্ধে মহুয়ার মামলা গ্রহণ করে। তবে মনোরঞ্জন হাজংয়ের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তারা প্রথমে যে মামলার আবেদন করেছিলেন, সেখানে তিনজনের নাম উল্লেখ ছিল।

মামলা নিতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরই আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তবে যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। আমরা যাচাই-বাছাই করে মামলা নিয়েছি।’

যাচাই করে কী পাওয়া গেছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করেছি। মধ্যরাতে মনোরঞ্জন হাজং মোটরসাইকেলে উল্টোপথে এসে চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপের ওখানে দাঁড়ান। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। আমরা মামলা নিয়েছি।’

সেই সার্জেন্টের বাবার মোটরসাইকেল ছিল ‘উল্টোপথে’
বাবা মনোরঞ্জন হাজংয়ের সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। ছবি: সংগৃহীত

গাড়ির আরোহীদের পরিচয় জানার পরও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাম না থাকলেও সমস্যা নেই। তদন্তে সবই উঠে আসবে।’

অন্যদিকে মহুয়ার মামলা নেয়ার দুদিন আগে (১৪ ডিসেম্বর) বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালকের আসনে থাকা সাঈদ হাসান। এর তদন্ত করছেন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর গাজী।

দুর্ঘটনার বিষয়ে বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসানের কোনো বক্তব্য নিতে পারেনি নিউজবাংলা। তবে সাঈদ হাসান সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, তিনি ২ ডিসেম্বর রাতে চেয়ারম্যানবাড়ির ইউলুপে ঢোকার পর উল্টো দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল সামনে পড়ে যায়। মোটরসাইকেলটি তার গাড়ির বনেটের বাম পাশের হেডলাইট বরাবর ধাক্কা খায়। এই দুর্ঘটনার ফলে বিএমডব্লিউ গাড়িটি ইউলুপের প্রাচীরে লেগে যায়।

জিডিতে সাঈদ লেখেন, ‘আমার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়নি বা পেছন থেকে ধাক্কা দেয়নি। বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে ইউলুপে ঢুকে মোটরসাইকেলের আরোহী বরং আমার গাড়ির বাম পাশের হেডলাইট বরাবর লাগিয়ে দেন। এতে আমি প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই।’

তিনি সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার পর সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা মনোরঞ্জন হাজংয়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। একাধিকবার আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গাড়িটি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণে আমরা ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমি ও আমার স্ত্রী এই ঘটনার ভিকটিম। কেবল প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণে এর দায় আমার নয়।’

আরও পড়ুন:
‘মহুয়ার মামলায় গাফিলতি হলে গণ-আদালত গঠনের হুঁশিয়ারি’
সার্জেন্ট মহুয়ার মামলায় নজর রাখছে ডিবি
সেই সার্জেন্টের বাবার বিরুদ্ধে জিডি বিচারপতির ছেলের
অবশেষে সেই সার্জেন্টের মামলা নিল বনানী থানা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The police commissioner built a blackmail empire across Khulna

খুলনায় চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়েছিলেন পুলিশ কমিশনার

খুলনায় চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়েছিলেন পুলিশ কমিশনার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদ্য সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত
খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোজাম্মেল হক চাঁদা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দিতেন ওসি-ডিসিদের। তিনি দুর্নীতিবাজ সহকর্মীদের খুলনায় এনে সংগঠিত করেন চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য। আর ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ পেতে তার প্রধান অস্ত্র ছিল চাটুকারিতা। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এই পুলিশ কর্মকর্তার অপরাধের বিচারের দাবি উঠেছে জোরেশোরে।

খুলনার বুকে মোজ্জামেল হক ছিলেন যেন এক অদৃশ্য সম্রাট, যার অধীনে গড়ে উঠেছিল চাঁদাবাজির এক অভিজাত সাম্রাজ্য। শহরের প্রতিটি কোণ- আবাসিক হোটেল, বাসস্ট্যান্ড, স্বর্ণ পাচার, জুয়ার আসর, ক্লাব, এমনকি পরিবহন ব্যবস্থাতেও ছিল তার নেটওয়ার্কের শক্তিশালী হাত।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) শীর্ষ পদটিতে বসে টাকার নেশায় বুঁদ হয়ে কমিশনার মোজাম্মেল হক প্রতি মাসে চাঁদা আদায়ের টার্গেট বেঁধে দিতেন থানার ওসি-ডিসিদের। বিশ্বস্ত দুর্নীতিবাজ সহকর্মীদের খুলনায় এনে, ধীরে ধীরে এই সংগঠিত চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

চাঁদাবাজির এই সাম্রাজ্য থেকে প্রতি মাসে খুলনার পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা পড়ত বিপুল পরিমাণ অর্থ, যার অংশবিশেষ ভাগ-বাটোয়ারা হতো স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে।

রাজনৈতিক সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত- সময়মতো সব দলের চাটুকারিতাও চালিয়ে গেছেন ওই দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা। ‘জয় বাংলা’ থেকে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’- সব স্লোগানই নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর খুলনার পুলিশ কমিশনারের সেই ক্ষমতার দম্ভ ধূলিসাৎ হয়েছে। টাকার মোহে অন্ধ মোজ্জামেল হককে অবশেষে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের বিদায়ের পর খুলনার সুশীল সমাজ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা এখন দাবি জানাচ্ছেন, মোজ্জামেল হকের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হোক।

টার্গেট নির্ধারণ করে চাঁদা আদায়

কেএমপির পরিদর্শক পদমর্যাদার চারজন কর্মকতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাসে খুলনা সদর থানা থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দেন কমিশনার। এছাড়া অন্য সাতটি থানায় প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা করে মোট ২১ লাখ টাকা আদায়ের মাত্রা নির্ধারণ করে দেন তিনি।

মাসিক তিন লাখ টাকা জমা দিতে না পারায় ১০ মাস আগে এক থানার ওসিকে বিএনপির অনুসারী আখ্যা দিয়ে বদলি করে দেন কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল।

ওই ওসি বলেন, ‘আমাকে জমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে বলা হয়েছিল। তবে তিন লাখ টাকা বৈধভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে এই পুলিশ কমিশনারের আন্ডারে আর চাকরি করা সম্ভব ছিল না।

‘আমার ডেপুটি কমিশনার ভালো ছিলেন। তিনি আমাকে সেইভ করার চেষ্টা করেন। পরে কমিশনার আমাকে বদলি করে দিয়ে নতুন এক ওসিকে এনে সেই থানায় বসান।’

পরিদর্শকরা জানান, কমিশনারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস ছিল পরিবহন খাত। নগর ট্রাফিক বিভাগকে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এই টাকা আদায় করার জন্য শহরের ইজিবাইকগুলো থেকে মাসিক চাঁদা আদায় শুরু করেছিলেন সার্জেটরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেট বলেন, ‘খুলনা শহরে প্রচুর সংখ্যক ইজিবাইক রয়েছে। এই কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ইজিবাইক থেকে মাসিক চাঁদা আদায়ের নির্দেশ দেন। কিভাবে আদায় করতে হবে, সেই দিকনির্দেশনাও দিয়ে দেন তিনি।

‘ইজিবাইকগুলো নিয়ম না মেনে কোথাও পার্কিং করলে এক হাজার ৫০০ থেকে দু’হাজার টাকা করে জরিমানা করতে বলেন। তবে যদি কোনো ইজিবাইক মাসিক তিন হাজার টাকা করে সার্জেন্টদের পরিশোধ করতো, তবে সেই মাসে অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য তাকে কোন মামলা দেয়া হতো না।’

তিনি বলেন, ‘মাসিক চাঁদা দেয়া ইজি বাইকগুলোকে কোনো টোকেন বা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হতো না। বরং চালকদের নামের তালিকা করে সার্জেন্টরা এই হিসাব রাখতেন। মাসিক চাঁদার টাকা আদায় করা হতো বিকাশের মাধ্যমে।’

থানার ওসিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি কেএমপির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকেও টাকার ভাগ নিতেন কমিশনার।

এর পাশাপাশি নগর ডিসি অফিসেও তার চাঁদা আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে বিশেষ মূল্যবান কোনো কিছু জব্দ করতে পারলে ওই টাকার ভাগ নিতেন কমিশনার।

এছাড়াও, পুলিশ লাইনের মেস থেকে মাসিক দুই লাখ, রেশন স্টোর থেকে এক লাখ ও কেএমপির গাড়িগুলোর জন্য প্রতি মাসে ইস্যুকৃত জ্বালানি তেল খাত থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করতেন মোজাম্মেল হক। নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে প্রতিটি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য কমিশনারকে ২০০ টাকা করে দিতে হতো।

ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের এনে দল গঠন

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাত্র কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পুরো নগর পুলিশ জিম্মি ছিল। কেএমপিতে যোগদানের পর নিজের বিশ্বস্ত সব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি খুলনায় বদলি করে নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন খালিশপুর থানার বর্তমান ওসি আনোয়ার হোসেন, যিনি পুলিশ কমিশনারের নিজ জেলা পাবনার সন্তান।

পরিদর্শকরা জানান, ওসি আনোয়ারের দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন অপরাধে পর যেসব ওসি ও এসআইর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাফ পেয়ে যাওয়ার উপায় বের করে দেয়া।

এছাড়া থানার ওসিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান ও বিশেষ শাখার এএসআই মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বর্তমানে কমিশনারের বাংলোর দায়িত্বে রয়েছেন এএসআই মো. আব্দুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আদায়ের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ‘এসবের সাথে আমি জড়িত ছিলাম না।’

অন্যদিকে ওসি আনোয়ার বলেন, ‘আমি মোবাইলে এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না।’

কমিশনারকে বিএনপির ‘গণদুশমন’ আখ্যা ও ছাত্রদের বয়কট

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মিলে খুলনার যে পুলিশ সদস্যরা নানাভাবে প্রতারণা ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, তাদের ‘গণদুশমন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ৭ আগস্ট একটি তালিকা প্রকাশ করে মহানগর বিএনপি। ওই তালিকায় নাম ছিল কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হকের।

এ প্রসঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘কেএমপি কমিশনার ছাত্র-জনতার বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সহায়তা করেছিলেন।’

এরপর ৮ আগস্ট কেএমপির সম্মেলন কক্ষে শিক্ষাথীদের তোপের মুখে পড়েন কমিশনার মোজ্জামেল হক।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আল মুজাহিদ আকাশ। তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে কেন আপনারা আমাদের ওপর গুলি চালালেন? ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর আপনারা কে? কার নির্দেশে আপনারা আমাদের ওপর গুলি চালালেন?’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তানভীর বলেন, ‘আপনার মতো পুলিশ কমিশনারকে আমরা খুলনাতে চাই না। আপনি আমাদের নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছেন।’

সেই সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান কমিশনার মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন এগুলো করতে হয়েছিল তা এই সরকারের অধীনে চাকরিতে থাকলে তোমরা বুঝতে। এ নিয়ে আমি তোমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’

‘জয়বাংলা’ থেকে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান

জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ২০২৩ সালের ১৬ এক প্রজ্ঞাপনে মোজাম্মেল হককে কেএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। খুলনায় যোগদান করেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একইসঙ্গে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন। কমিশনার যে কোনো সভায় যোগ দিয়ে তাদের পা ছুয়ে সালাম করতেন, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ বেশ জোরেশোরেই উচ্চারণ করতেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, ‘এই পুলিশ কমিশনার খুলনায় যোগদানের পর বিএনপির কোনো নেতা রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে তিনি নিয়মিত বিএনপির নেতাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছিলেন। প্রতিনিয়ত গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার করাটা যেন তার নেশা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনার মোজাম্মেল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাদের পা ছুঁয়ে সালাম করতেন। পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে নেয়া টাকার একটা অংশ তিনি ওই নেতাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন।’

তবে ৫ আগস্ট সরকার পতদের পর কমিশনার মোজ্জামেল হক মিশে যান বিএনপি নেতাদের সঙ্গে। তাদের নানা সভায় অংশ নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়া শুরু করেন। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রশংসা শুরু করেন।

কমিশনার মোজাম্মেল হক ৮ আগস্ট ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কেএমপিতে দাওয়াত দেন বিএনপি নেতাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় কমিশনারকে সংশোধন হতে হুঁশিয়ারি দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তানভীর বলেন, ‘আপনারা এতদিন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন৷ এখন আরেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে আমাদের সভা করার জন্য ডেকেছেন।

‘আপনাদের চাটুকারিতা কমে নাই। আমরা আপনাদের মতো চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তাদের চাই না। আপনারা নিজ বিভাগের মধ্যে সংস্কার করেন। চাটুকারিতা বাদ দেন।’

তদন্তের দাবি সুশীল সমাজের

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হককে ২৭ আগস্ট সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই রাতেই তিনি খুলনা ছেড়ে চলে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে তার অন্যায় কর্মকাণ্ডের জন্য শুধু বাধ্যতামূলক অবসর নয়, তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি সুশীল সমাজের।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনা শাখার সভাপতি কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘পুলিশের যে পর্যায়ের কর্মকর্তা হোক না কেন, তাকে শুধু অবসরে পাঠালে হবে না। অন্যায়ের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

‘রাষ্ট্রে শাসন ফিরে এসেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্র থেকে জনগণের রাষ্ট্র হয়েছে। এতদিন যারা অন্যায় করেছে, তদন্ত করে তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The arbitrariness of the two frauds pushed Farmers Bank to ruin
ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতী

দুই জালিয়াতের স্বেচ্ছাচারিতা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় ফারমার্স ব্যাংককে

দুই জালিয়াতের স্বেচ্ছাচারিতা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় ফারমার্স ব্যাংককে ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতী। কোলাজ: নিউজবাংলা
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ অনুমোদন, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে মূল্যায়ন না করা, অনুমোদনের আগেই ঋণের টাকা সরবরাহ, গ্রাহকের হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, ঋণ দিতে কমিশন বাণিজ্য এবং শেয়ার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ম খা আলমগীরের বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মে এই জালিয়াতকে সহায়তা করেছেন ব্যাংকটির ইসি কমিটির চেয়ারম্যান আরেক জালিয়াত মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতী।

‘জন্মদাতার হাতেই সন্তানের ভবিষ্যৎ ভস্মীভূত’- ঠিক এমনটাই ঘটেছে চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ভাগ্যলিপিতে। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান আলমগীর নিজেই ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেন।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ অনুমোদন, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে মূল্যায়ন না করা, অনুমোদনের আগেই ঋণের টাকা সরবরাহ, গ্রাহকের হিসাব থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে নেয়া, ঋণ দিতে বিপুল অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য এবং শেয়ার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে ম খা আলমগীরের বিরুদ্ধে।

আর এসব অপকর্মে এই জালিয়াতকে সহায়তা করেছেন ব্যাংকটির ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতী। তিনি নিজেও তার পরিবারের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দিতে ব্যাংকটিকে ব্যবহার করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে ফারমার্স ব্যাংকের এই দুই কুশীলবের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠে আসে। এমনকি ২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও ব্যাংকটিকে ধ্বংসে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে।

এ বিষয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘লুটপাটে ফারমার্স ব্যাংক শেষ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠাতারাই ব্যাংকটিকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সালে ব্যাংকের গুলশান শাখা কর্তৃক তনুজ করপোরেশনের বিপরীতে বড় অঙ্কের একটি ঋণ ক্রেডিট কমিটির সুপারিশ ছাড়া এবং পর্ষদ বা ইসি কমিটির অনুমোদন ছাড়াই মঞ্জুর ও বিতরণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে অনিয়ম হয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ম খা আলমগীর, তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম এবং ওই শাখার ব্যবস্থাপক এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এ ছাড়া গুলশান শাখায় কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ‘সেংশন লেটার’ বা অনুমতি পত্র ছাড়াই শুধু চেয়ারম্যানের সুপারিশে বড় বড় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে গুলশান শাখাসহ বেশ কয়েকটি শাখা থেকে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টে ৪০ কোটি, ১২ কোটি ৪৫ লাখ, ৯ কোটি ১৫ লাখ, ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রদান করা হলেও কোনোটির ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা কমিটি ‘লোন সেংশন’ করেনি।

একই বছরের ১৮ অক্টোবর ৪০ কোটি টাকার ঋণ বর্ধিতকরণের জন্য চেয়ারম্যান ও এমডি ফরমাল সুপারিশ করলেও তার আগেই ঋণটি প্রদান করা হয়। সেখানে কোনো প্রকার ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পরিদর্শন প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই গুলশান শাখায় তনুজ করপোরেশনের মেয়াদি ঋণের হিসাব থেকে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রাহকের চলতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। একই দিনে এ হিসাব থেকে ৪২ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন এবং অবশিষ্ট ৮০ লাখ টাকা পে-অর্ডার হিসেবে স্থানান্তর করতে পিও ইস্যু করা হয়।

একদিন পর ২০ জুলাই পে-অর্ডারটি বাতিল করে পার্কিং হিসেবে (টিওএস) স্থানান্তর করা হয়। ওইদিনেই আবার তা থেকে ১৮ লাখ টাকা এবং ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। এর একটিতে ম খা আলমগীরের নাম এবং অন্যটিতে বাবুল চিশতীর নাম উল্লেখ রয়েছে। এভাবে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে নিজস্ব প্রয়োজনে পে-অর্ডার করে অনিয়ম/জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ম খা আলমীগ ও বাবুল চিশতী।

ব্যাংকের গুলশান শাখার ৩টি ঋণ (তনুজ করপোরেশন, জাহান ট্রেডার্স এবং এস২আরএস করপোরেশন) হিসাবের অনুকূলে বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশ অর্থেরই প্রকৃত সুবিধাভোগী সাবেক পর্ষদ চেয়ারম্যান ম খা আলমগীর এবং অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতী।

এ ছাড়া ওই তিন গ্রাহকের বিভিন্ন ঋণ হিসাব থেকে ম খা আলমগীর এবং বাবুল চিশতী কর্তৃক ব্যাংকের অন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের থেকে শেয়ার কেনার জন্য একাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরও করা হয়। এ ক্ষেত্রে সন্দেহজনক বেশ কিছু লেনদেনের তথ্য পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল। এ ছাড়া শাখার গ্রাহক এডিএম ডাইং অ্যান্ড ওয়াশিং এবং সাবাবা অ্যাপারেলসের অনুকূলে বিতরণকৃত মোট ৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী ওয়েলটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুল হক চিশতী (শামীম চিশতী)। তিনি সম্পর্কে বাবুল চিশতীর ভাই। ছেলে রাশেদুল হক চিশতীও এমন সুবিধা নিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, যেসব কোম্পানিকে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হতো, বেশিরভাগের ব্যাংক হিসাব তার কিছুদিন আগে করা। অর্থাৎ ঋণ নেওয়ার জন্যই হিসাব খোলা হয়েছে।

কাগজে-কলমে নানা রকমের ব্যবসার কথা বলা হলেও ঋণ নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সিংহভাগ টাকা তোলা হতো নগদে। অর্থাৎ সেই টাকা কার অ্যাকাউন্টে বা কোথায় যাচ্ছে তা কেউ বলতে পারবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করেন, এভাবে প্রচুর টাকা দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর দুটি অ্যাকাউন্টে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ট্রান্সফার করা হয়েছিল মোটা অঙ্কের অর্থ। প্রথমটির নামে দেখা যায়, ফারিব অটো রাইস মিলস, দ্বিতীয়টির নাম এসএনডি। তাদের দুটি হিসাবে স্থানান্তর করা হয় যথাক্রমে ৬ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার ও ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। অবাক করা বিষয় হলো- এ দুটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২৭ নভেম্বর। অর্থাৎ যেদিন অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সেদিনই ঋণের টাকা স্থানান্তর করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, বড় ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে বাবুল চিশতীর ভাই ও তার ছেলের কয়েকটি কোম্পানি ছিল- যেসব কোম্পানির নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া হয় ফারমার্স ব্যাংক থেকে। শুধু তা-ই নয়, ভুয়া ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে মোটা কমিশনের বিনিময়ে বড় অঙ্কের লোন দিতেও কার্পণ্য করত না এই চক্র।

এসব ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দুদকে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করা হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় ম খা আলমগীর। অবশ্য ২০১৮ সালে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, বাবুল চিশতী ও রাশেদুল হক চিশতী ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে ফারমার্স ব্যাংক থেকে কৌশলে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন:
ম খা আর বাবুল চিশতী যেভাবে লুটপাট করে ফারমার্স ব্যাংক
ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Rohingyas are coming through Teknaf border with brokers

সীমান্তের অরক্ষিত জায়গা দিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা

সীমান্তের অরক্ষিত জায়গা দিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা টেকনাফ-উখিয়ার ক্যাম্পে দালালের আশ্রয়ে রয়েছেন মঙ্গলবার রাতে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন। ছবি: নিউজবাংলা
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও সীমান্তের ফাঁক-ফোকর দিয়ে রোহিঙ্গাদের এপারে নিয়ে আসছে দালালরা। মঙ্গলবার রাতেও ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে কড়া নজরদারি। সীমান্ত এলাকায় কড়া পাহারা বসিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এতোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরও মিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গারা আবার অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ড কার্যত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পুরোপুরি ঠেকাতে পারছে না।

বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামান্যই। রোহিঙ্গা বোঝাই অনেক নৌকাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতের বেলায় কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি।

শাহপরীর দ্বীপ বিওপির কোম্পানি কমান্ডার আব্দুর রহমান বাহার এমনটা দাবি করলেও বস্তুত মঙ্গলবার রাতেও ২০ জনের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা এখন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

অনুপ্রবেশকারী মোশাররফ, এরশাদ, রাজু আক্তার, মরিয়ম বেগম, সমজিদা, রফিক, মকবুল হোসেন, জিয়া উদ্দিনসহ আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মগদের সশস্ত্র বাহিনী আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চড়াও হয়েছে।

আরাকান আর্মি গ্রামে প্রবেশ করে এক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গ্রামটি খালি করতে বলে। গ্রাম না ছাড়লে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত না হলে পুরুষদের হত্যা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় প্রাণের ভয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। ওপারে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় তাদের মতো আরও অনেকে এপারে চলে আসার পথ খুঁজছে।

অনুপ্রবেশকারী মোশাররফ জানান, মংডুর নলবাইন্যা ও মেরোংলা এলাকায় সোমবার তাণ্ডব চালিয়ে আরাকান আর্মি ২০টি ঘরে আগুন দিয়েছে। এ সময় তাদের গুলিতে ১০ জন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। অনেকে মারাও গেছে। প্রাণে বাঁচাতে তারা নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

জান্তা বাহিনী আগে এসব এলাকায় তাণ্ডব করেনি। এখন মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি বেশি নির্যাতন করছে আরাকান আর্মি। তাদের দলে যোগ না দিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। নইলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে।

আরেক অনুপ্রবেশকারী এরশাদ বলেন, ‘আরাকান আর্মি ১৫টি গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের মদদ দিচ্ছে বলে নাটক করছে। তারা এখন রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে নতুন নতুন এলাকা বেছে নিচ্ছে।

‘ওদিকে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের এলাকায় এসে যুদ্ধ শুরু করলে তখন আমাদের গ্রামকে লক্ষ্য করে মিয়ানমার বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এতে আমরা দুই পক্ষ থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। নারী-শিশু ও বৃদ্ধ নিহত হচ্ছে।’

রাজু আক্তার নামের এক নারী বলেন, মংডু সুএজাতে আমাদের গ্রামে মগবাগি ঢুকে আছে। আমরা বেশি কষ্টে ছিলাম। আমাদের নির্যাতন করতেছে। আমরা ঘরবাড়ি ফেলে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলাম।

‘আমাদের এলাকার দুজন তাদের বাড়িঘর দেখতে গেছিল। আরাকান আর্মি তাদের গলা কেটে হত্যা করেছে। আমরা আসার আগেও হত্যা করছে তিনজনকে। তাই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে চুরি করে চলে আসি। পথে আমার স্বামীকে গুলি করে আরাকান বাহিনী। টাকা ও গয়না যা ছিল সব লুট করে নিয়েছে তারা।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমান্তে বিজিবি ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকি আছে এক থেকে দুই কিলোমিটার পর পর। চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু এক চৌকি থেকে অন্য চৌকি দেখা যায় না। আঁকাবাঁকা নদীর তীর ধরে গড়ে ওঠা কিছু সড়ক অংশ কিংবা উপকূলীয় প্যারাবন থাকায় দৃষ্টিসীমা খুব বেশি দূরে যায় না। এ কারণে কোথায় কোন সময় রোহিঙ্গাদের নৌকা ভিড়ছে তা বিজিবি সদস্যরা সহজে বুঝতে পারেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার কল করলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সবসময় চেষ্টা আছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। অনেক রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়েছে ইতোমধ্যে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে কঠোর নজরদারি রেখেছে। তারপরও ফাঁকফোকর দিয়ে দালালের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। সেসব দালালকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

টেকনাফ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, টেকনাফ উপজেলার সঙ্গে নদীপথে মিয়ানমারের ৫৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান থাকলেও অসংখ্য ফাঁকফোকর থাকায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সহজেই অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তাই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের টহল আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তে সক্রিয় দালালগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে তিন হাজার ৩৫৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে (স্বদেশে) ফেরত পাঠায় বিজিবি। তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯টি শিশু ও ১৭৫৭ জন পুরুষ। আর তিন রোহিঙ্গাকে থানা পুলিশে দেয়া হয়।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন চালায়। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। আগে আসা রোহিঙ্গাসহ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ঠাঁই হয় উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে।

আরও পড়ুন:
সেন্টমার্টিনে অনুপ্রবেশ ৩১ রোহিঙ্গা দুই বিজিপির
রাখাইনে সংঘাত, সীমান্তে ফের জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গারা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Porter to millionaire PSC driver Abed Ali

কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলী

কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলী মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে বানানো অট্টালিকায় ঝুলছে আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামের ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালকের চাকরি করলেও এলাকায় তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। চড়তেন দামি গাড়িতে। তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন একাধিক দামি গাড়িতে।

জীবিকার তাগিদে মাত্র আট বছর বয়সে পাড়ি জমান ঢাকায়। সদরঘাটে শুরু করেন কুলির কাজ। রাতে থাকার মতো জায়গা না থাকায় ঘুমিয়েছেন ফুটপাতে। এর ফাঁকেই গাড়ি চালানো শেখেন। এক পর্যায়ে বাগিয়ে নেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) গাড়িচালকের চাকরি।

ব্যস, আবেদ আলী ঘুরাতে থাকেন তার ‘ভাগ্যের চাকা’। নানা ফন্দি-ফিকিরে কামিয়ে নেন বিপুল অর্থ। সঙ্গে ক্ষমতাও।

তবে শেষরক্ষা হয়নি। পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা ধরা পড়েছেন পুলিশের অপরাধ তদ্ত বিভাগ-সিআইডির জালে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকেসহ মোট ১৭জনকে।

করিৎকর্মা আবেদ আলী পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত- সম্প্রতি মিডিয়ায় এমন খবর প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে তার নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে।

কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলী
মাদারীপুরে সরকারি জায়গা দখল করে আবেদ আলী নির্মাণ করছেন মার্কেট ও গরুর খামার। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষি কাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আবেদ আলী এলাকার মানুষের কাছে নিজেকে পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। চড়তেন দামি গাড়িতে। তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না যে তিনি সামান্য বেতনভুক্ত একজন গাড়িচালক।

ঢাকায় আবেদ আলী রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করে আসছিলেন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলে-ফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি এক সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে সিয়াম বলেন, ‘আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন আট বছর তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন।’

কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলী
পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। ফাইল ছবি

আবেদ আলী নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

সরেজমিনে জানা যায়, পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। কিন্তু এলাকার মানুষ তার এই পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে একশ’ পরিবারের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন তিনি। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে।

আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই নতুন, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন।

স্থানীয় আব্দুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘তিনি এলাকায় এলে মানুষকে দায়-খয়রাত করতেন। তার সঙ্গে আমাদেরও ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি যে এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তা আমাদের ভাবনায়ও ছিল না। আমরা এলাকাবাসী হতবাক! আমরা চাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীর বিচার হোক।’

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘যারা অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রশ্ন ফাঁস করে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার কারণে তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’

এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জনের মধ্যে সৈয়দ আবেদ আলী ছাড়াও রয়েছেন পিএসসি’র ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী।

বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির ও নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান।

সংঘবদ্ধ চক্রটি বিপিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন ফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠত।

চক্রটি ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে টাকা কামানোর মওকা হিসেবে বেছে নেয়। এই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করতে ছদ্মবেশ ধারণ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিম। ছদ্মবেশী এক নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থীকে তুলে দেয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর ৫ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি পাঠানো হয় পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।

চক্রটির প্রধান বিপিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘উপ-পরিচালক মো. আবু জাফরের মাধ্যমে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে শুক্রবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। তিনি বড় কর্মকর্তাদের ট্রাঙ্ক থেকে পরীক্ষার আগের দিন আমাকে প্রশ্ন সরবরাহ করেন। আমি এটাও জানি যে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করা হয়।’

প্রকাশিত সংবাদে বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচনায় আসেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। সোমবার দুপুর থেকে বাবা ও ছেলের নানা কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

আরও পড়ুন:
পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস: সেই গাড়িচালক আবেদ আলীসহ গ্রেপ্তার ১৭

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Kishoreganj Chhatra League president in sugar smuggling ring

চিনি চোরাচালান চক্রে কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ সভাপতি

চিনি চোরাচালান চক্রে কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন (ডানে) ও নাজমুল হীরা। ছবি: সংগৃহীত
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বিরুদ্ধে চোরাচালানে সম্পৃক্ততা ছাড়াও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। আর চোরাচালান চক্রে জড়িত রয়েছে তার অনুসারীরাও।

ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি এনে দেশে বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার স্বজন নাজমুল হীরার বিরুদ্ধে। হীরা নিজেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। সুমন-হীরা একা নন, তাদের অনুসারীরাও এই অপকর্মে জড়িয়েছেন। এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে।

সম্প্রতি চোরাচালানের চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠ একজন আনেন বলে খবর চাউর হয়। অথচ মামলার আসামি করা হয় ছাত্রলীগের অন্য এক নেতাকে। ওই নেতার দাবি- চোরাই চিনিবোঝাই ট্রাক ধরিয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।

দেশে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৪০ টাকা হলেও ভারতে দাম ৫০ রুপির মতো। ফলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনেকে চিনি নিয়ে এসে অবৈধভাবে দেশে বিক্রি করেন। সম্প্রতি সিলেট ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চিনি চোরাকারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।

একই অভিযোগ এবার কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও। তাদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে।

সুমনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

অনেক আগে থেকেই সুমন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শহরের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়, টাকার বিনিময়ে উপজেলা কমিটির অনুমোদনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ এনেছেন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই।

দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম আসার পর সুমন বেশ বিত্তশালী হয়ে গেছেন। তার নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িতে বিলাস আর খরচের ছাপ স্পষ্ট।

স্থনীয়রা জানান, শহরের একাধিক এলাকায় জমি কিনেছেন মোল্লা সুমন। এর একটি জমির দামই নাকি কোটি টাকার বেশি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্ত বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

চিনি চোরাচালান চক্রে কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ সভাপতি
চিনি চোরাচালান নিয়ে হোয়াটঅ্যাপে মোল্লা সুমনের বার্তা আদান-প্রদানের স্ক্রিনশট।

চোরাই চিনির ট্রাক ধরিয়ে দিয়ে মামলার আসামি

গত ১৪ জুন শুক্রবার সকালে ভারতীয় অবৈধ চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ। এ ঘটনায় ট্রাকটির চালক ও সহযোগীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা হয়। মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে আছেন শহরের মনিপুরঘাট এলাকার রাতুল মিয়া ও পূর্ব তারাপাশা এলাকার মো. রাজিব। তারা ট্রাকের চালক ও সহযোগী।

অন্য দুজনের একজন হলেন মো. জনি, যিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হীরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অপরজন হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল জুবায়েদ খান নিয়াজ।

নিয়াজের দাবি, ট্রাকটি ধরিয়ে দিতে তিনিই পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন।

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জেলা শহরের তালতলা এলাকা থেকে চিনিভর্তি ট্রাকটি আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাকটি আটক করেন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মনির।

সে সময় থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চোরাই চিনি কারবারে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হীরা দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। ছাত্রলীগ নেতা নিয়াজ তাকে ধরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেন। তিনিই পুলিশকে চিনিবোঝাই ট্রাক আসার বিষয়ে তথ্য দেন।

তথ্য পেয়ে শহরের বড়বাজার এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। কিন্তু নাজমুল হীরা ও তার সহযোগীরা ট্রাকটিকে শহরের মোরগমহলে নিয়ে যান। সেখানে নিয়াজ ও তার অনুসারীরা অবস্থান নিলে হীরা ও তার সহযোগীরা সটকে পড়েন। আর চালক দ্রুতগতিতে ট্রাকটি নিয়ে শহরের তালতলা এলাকায় চলে যান।

তালতলা থেকে নিয়াজের সহযোগিতায় চালক ও সহযোগীসহ ট্রাকটিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সেদিন চোরাচালানটি ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে হীরা ঘুষের প্রস্তাব দেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

অথচ মামলার পর দেখা যায়, আসামির তালিকায় মোল্লা সুমন ও নাজমুল হীরার নাম নেই। পরিবর্তে সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জনি নামের এক যুবককে মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশকে সহযোগিতা করে আসামি হয়েছেন নিয়াজও।

পুলিশ জানায়, ট্রাকটি এনেছিলেন জনি; তার আশ্রয়দাতা হলেন নাজমুল হীরা। ট্রাকটি যখন হীরার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখনই সহযোগিতার জন্য এসআই রুহুল আমিনকে ফোন করেন তিনি। হীরা জানান, নিয়াজ তাদের ট্রাকটি নিয়ে গেছেন। আর নিয়াজের কাছ থেকে ট্রাকটি উদ্ধারের উদ্দেশ্যেই ঘুষের প্রস্তাব দেয়া হয়।

তাহলে নিয়াজ কীভাবে আসামি হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে দুজনের নাম দেয়া হয়েছে।’

‘নিয়াজ তো বলেছেন, তিনি সেদিন পুলিশকে সহযোগিতা করতে গিয়েছিলেন’- সাংবাদিকের এই মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্তে যদি কারও সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায়, তবে তাকে মামলা থেকে বাদ দেয়ারও সুযোগ রয়েছে।’

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘যারা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

চোরাকারবারীদের সঙ্গে সুমনের বার্তা ভাইরাল

ভারতীয় অবৈধ চিনিবোঝাই ট্রাকটি আটকের পর চোরাকারবারীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন যেসব বার্তা আদান-প্রদান করেছেন, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বার্তা আদান-প্রদানের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সুমন নিয়মিত খোঁজ রাখছেন কয়টা গাড়ি শহরে প্রবেশ করেছে এবং তাকে কী পরিমাণ টাকা দিতে হবে।

একটি বার্তায় সুমন লেখেন, ‘কত করে কত দিনের দিছস?’ জবাবে তাকে বলা হয়, ‘ছয় দিনের ১০ করে।’ উত্তরে সুমন লেখেন, ‘তোরে না বলছি প্রতিদিন ১৫ করে দিতে?’

আরেকটি মেসেজে সুমন জানতে চেয়েছেন, ‘সকালে গাড়ি কয়টা এসেছে?’ জবাব আসে, ‘ওইদিকে ঝামেলা। কালকে দুইটা আসবে।’

সুমন ও হীরার প্রতিদিনের বখরা

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কিশোরগঞ্জ বড়বাজারের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি ট্রাক বড়বাজারে প্রবেশ করত। কখনও আবার ৭টা থেকে ৮টাও আসত। রাস্তায় ঝামেলা থাকলে ট্রাক আসা বন্ধ রাখতেন তারা।

এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন যদি ২০ হাজার টাকা পান, তাহলে মাসে ছয় লাখেরও বেশি টাকা সুমনের ভাগে যুক্ত হয়েছে। বছরে সে হিসাবটা কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যায়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের সঙ্গে একবার ফোনে সংক্ষিপ্ত কথা হয়। চিনির ট্রাক আটকের ঘটনায় সে সময় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ঘটনায় যদি আমার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। এতে তো কোনো সমস্যা নেই!’

তবে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।

সুমন বলেন, ‘যারা চোরাই কারবারের জড়িত, তারা মূলত নামধারী ছাত্রলীগ। তারা কোনো পদ-পদবিতে না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ থাকে না।’

স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে বার বার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হীরার দাবি, মেসেজের স্ক্রিনশটগুলো সুমনের নয়।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলো বানানো যায়। তাছাড়া মেসেজের কোথাও কি লেখা আছে যে, কিসের গাড়ি? বৈধ চিনির গাড়ি, নাকি অবৈধ চিনির গাড়ি?’

তারা নিকটাত্মীয়

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের আপন ভাগ্নে এই নাজমুল হীরা। তবে তাদের চলাফেরাটা বন্ধুর মতো। সুমনের ‘ডান হাত’ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত হীরা।

তাদের ঘনিষ্ঠরা জানান, সুমনের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ হীরাই করে থাকেন।

হীরার বাড়ি নেত্রকোণার মদন উপজেলার ফেকনী গ্রামে হলেও শৈশব থেকেই তার বেড়ে ওঠা মামার বাড়িতে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ একাধিক মামলা রয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ভারতীয় অবৈধ পণ্যভর্তি ট্রাকগুলো শহরে প্রবেশ করার আগে হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হীরা ‘সবুজ সংকেত’ দিলেই সেগুলো রওনা হয়।

তারা জানান, হীরা ও তার অনুসারীদের মোটরসাইকেল পাহারায় সেসব ট্রাক শহরের বড়বাজারে প্রবেশ করে। ট্রাকগুলো আনলোড হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা। রাস্তায় কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে ছাড়িয়ে আনার কাজটাও তারাই করে থাকেন।

তবে নাজমুল হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেন, ‘এ ঘটনায় যদি আমার সম্পৃক্ততা থাকত, তবে আরও আগেই শুনতেন। এগুলো মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে।’

তার দাবি, চোরাচালানে পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে।

অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি

শহরের বিভিন্ন সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে।

সংগঠনের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, ‘এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে জেলা ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজি হয় না। স্ট্যান্ডগুলোতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার অনুসারীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের অত্যাচার ও মামলার হুমকি দেয়া হয়।’

তার দাবি, শহরের একরামপুর ও পুরানথানা- এ দুটি সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন হীরা।

তিনি জানান, সিএনজি অটো স্ট্যান্ডের জায়গা মালিকপক্ষ ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের কাছ থেকে দৈনিক ভিক্তিতে ভাড়া নিয়েছেন নাজমুল হীরা। একেক দিন একেক লোককে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ করে অটোরিকশা থেকে প্রতি ট্রিপে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে থাকেন তিনি।

প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি অটোরিকশা পুরানথানা ও একরামপুর থেকে চামটাঘাট ও বালিখলায় যায়। একরামপুর থেকে কিছু অটোরিকশা ভৈরব এবং গাজীপুরেও যায়। সে হিসাবে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ অটোরিকশা চলে।

প্রতিদিন এভাবে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়, যা মাসে দাঁড়ায় চার লাখ টাকার মতো।

কমিটি গঠনে বাণিজ্য

২০২২ সালের ৫ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ।

পরদিন সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ। তারা জানায়- বিবাহিত, অছাত্র, বয়সোত্তীর্ণ ও মাদকাসক্তদের কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়েছে।

টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ এনে হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে।

একইদিন পাকুন্দিয়াতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে ছাত্রলীগের একাংশ। তাদের অনেকেই ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নেন।

সেসময় পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আরমিন দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার কথা বলে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হন।

তিনি বলেছিলেন, ‘বিবাহিত, অছাত্র, মাদকাসক্ত, বয়সোত্তীর্ণ, বিএনপি-জামায়াত পরিবার থেকে উঠে আসা সুবিধাবাদীদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে নেয়া হয়েছে। এটা উপজেলা ছাত্রলীগের কাঠমোকে দুর্বল করে দেয়ার চূড়ান্ত ষড়যন্ত্র।’

এ বিষয়ে তখন মৌনতা অবলম্বন করেন মোল্লা সুমন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিন সদস্যের জেলা কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

কমিটিতে আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনকে সভাপতি, ফয়েজ ওমান খান সাধারণ সম্পাদক ও লুৎফর রহমান নয়নকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। সেই কমিটি পার করে চারটি বছর। শুরু থেকেই এই কমিটিকে মানতে নারাজ ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।

জেলা ছাত্রলীগ নেতা হয়েও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ

চার বছর আগে অর্থকষ্টে ভুগতেন সুমন। জেলা ছাত্রলীগে পদ বাগানোর পর থেকেই তার অর্থকষ্ট অর্থের প্রাচুর্যে রূপ নেয়। এখন তিনি বিপুল সম্পদের মালিক।

সুমনের বাড়ি সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নে হলেও বর্তমানে থাকেন শহরের বয়লা এলাকায়। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পরই একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণে হাত দেন তিনি। সেই বাড়িটির নির্মাণ কাজ বর্তমানে শেষ হয়েছে।

বয়লা এলাকা ছাড়াও সদর উপজেলার বৌলাই, নাকভাঙ্গা এলাকাতেও তিনি জমি কিনেছেন বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফোন করে এবং একাধিকবার মেসেজ পাঠিয়েও মোল্লা সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন:
ববির আবাসিক হলে ছাত্রলীগের ভাঙচুর মারধরের অভিযোগ
সংঘর্ষের ঘটনায় শাবি ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী হল থেকে বহিষ্কার
রাবিতে শিক্ষার্থীকে মারধর করে হলছাড়া, অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
ছাত্রলীগের সহসভাপতির নামে গরু ছিনতাইয়ের মামলা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The Rohingya camp is burning again and again in the fire of sabotage

‘নাশকতার’ আগুনে বারবার জ্বলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

‘নাশকতার’ আগুনে বারবার জ্বলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প টেকনাফে ভয়াবহ আগুনে জ্বলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি
অভিযোগ উঠেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের এরা জিম্মি করে রেখেছে বহুদিন ধরে। বিশেষত ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় উগ্রবাদী ‘আলেকিন’ গোষ্ঠীর দুগ্রুপের বিরোধের জের ধরে এসব আগুনের ঘটনা ঘটছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। এসব আগুনের ঘটনায় বড় ধরনের প্রাণহানির মতো ঘটনা না ঘটলেও সার্বিক বিচারে ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। বারবার নিঃস্ব হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলো৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে শিশুরা। বই-খাতা, স্কুলের পোশাকসহ বাসস্থান যেমন পুড়ছে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বারবার আগুন লাগার নেপথ্য কারণ কেবলই কি অসাবধানতা? এমন প্রশ্নে ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য- দুই-একটি ক্ষেত্রে অসাবধানতা আগুনের কারণ হতে পারে। তবে বার বার আগুন লাগার পেছনে কোনো নাশকতামূলক তৎপরতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এবং তাদের সুপারিশ কখনও আলোর মুখ দেখে না।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, ‘বলা হচ্ছে যে শিবিরে বার বার অসাবধানতায় আগুন লাগছে। তবে এর পেছনে কোনো নাশকতামূলক তৎপরতা রয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও এখন সাধারণ রোহিঙ্গাদের মুখে মুখে।’

তারা বলছেন, প্রতিবছর শিবিরগুলোতে গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর পুনরাবৃত্তি রোধে মাইকিং আর মহড়া ছাড়া সংশ্লিষ্টদের খুব বেশি জোরালো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

অভিযোগ উঠেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের এরা জিম্মি করে রেখেছে বহুদিন ধরে। বিশেষত ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় উগ্রবাদী ‘আলেকিন’ গোষ্ঠীর দুগ্রুপের বিরোধের জের ধরে এসব আগুনের ঘটনা ঘটছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের সময় বিস্ফোরকের গন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি কোনো দাহ্য পদার্থের মতো আগুনের ফুলকি বহুদূর থেকে ক্যাম্পের এক একটি স্থানে ছুটে আসতেও দেখা গেছে। স্থানীয়রা দাবি করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পে বার বার আগুন লাগাচ্ছে এই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আবারও আগুন লেগেছে। শনিবার (১ জুন) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই আগুনের ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনাকে সব সময়ই ‘নাশকতা’ বলে উল্লেখ করছে রোহিঙ্গারা। এতো ঘিঞ্জি এলাকায় কীভাবে আগুন দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় সে প্রশ্নও থেকে যায়।

রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা খিন মং বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদিন বা দুদিনের ব্যবধানে কেন বার বার আগুন লাগছে- এমন প্রশ্ন সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রায় সবার মাঝেই। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভাবাচ্ছে।

‘এসব অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে- এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত। কারও যোগসাজশে বা কূটচালে আগুনের ঘটনাগুলো ঘটছে কি না, তার সঠিক তদন্ত দরকার বলে মনে করছি আমরা।’

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে ৬৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালে আগুনের ঘটনা ঘটে ৮২টি। ২০২৩ সালেও ৬০টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত পাঁচ মাসে উখিয়ায় পাঁচটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। যদিও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের হিসাব অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ডের এই সংখ্যা আরও বেশি।

এ বিষয়ে কুতুপালং শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার জোবায়ের বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত করা হলেও প্রকাশ্যে আসে না তদন্ত রিপোর্ট। আর অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় নাশকতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নাশকতা- এমন অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে আশা করি।

এদিকে চলতি বছরের পাঁচ মাসে উখিয়ায় রোহিঙ্গ আশ্রয় শিবিরে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উখিয়া স্টেশনের কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আগের তুলনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমে এসেছে। তবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে ঝুপড়ি ঘর আছে। দুর্গম পাহাড়ে অবস্থানের কারণে আগুন লাগলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না।’

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আগুনের ঘটনার পর আমার কাছে যেসব খবরাখবর এসেছে তাতে মনে হচ্ছে, এগুলো পরিকল্পিত। কিভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে তা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’

এর আগে ২০২১ সালে ২২ মার্চ একই ক্যাম্পসহ পার্শ্ববর্তী তিনটি ক্যাম্পে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় আগুনে ১০ হাজারের বেশি বসতঘর পুড়ে যায়। গৃহহারা হয় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা।

এছাড়া দগ্ধ হয়ে দুই শিশুসহ ১৫ জন রোহিঙ্গা মারা যায়। ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

আরও পড়ুন:
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে, পুড়ল দুই শতাধিক ঘর
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ল অর্ধশত ঘর

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Who will stop the occupation of special land of roads and highways?

সড়ক-মহাসড়কের খাস জমি দখলের মচ্ছব, রুখবে কে?

সড়ক-মহাসড়কের খাস জমি দখলের মচ্ছব, রুখবে কে? মহাসড়কের পাশের খাস জমি দখল করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলছে অবকাঠামো নির্মাণ। কোলাজ: নিউজবাংলা
সড়ক বিভাগের জমি দিন দিন বেদখল হয়ে মোটা হচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের পকেট। এসব টাকার ভাগ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটেও যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তদের দাবি, নিয়মিত উৎকোচ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে সড়ক-মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে এভাবে দখল হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি।

অজ্ঞাত কারণে এসব দেখার কেউ নেই! এসব দখলদারি রুখবে কে?- এলাকার সচেতন মহলের মুখে মুখে ঘুরছে এ প্রশ্ন।

দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর একটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। এ ছাড়াও এ উপজেলার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক রয়েছে। এসব মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের জমি রক্ষায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের পাশে চন্দ্রা এলাকায় একটি রেস্ট হাউজ ও ধামরাই-কালিয়াকৈর-মাওনা সড়কের কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় একটি সাইট অফিস তৈরি করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তারপরও দিনের পর দিন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ হাটবাজার বসিয়ে, ফুটপাত দখল করে তাতে দোকানপাট বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন চক্রের সদস্যরা।

সড়ক-মহাসড়কের খাস জমি দখলের মচ্ছব, রুখবে কে?
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ট্রাক স্টেশন এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশের সরকারি জায়গায় থাকা পুকুর ভরাট করছে ব্যক্তিবিশেষ। ছবি: নিউজবাংলা

ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, চন্দ্রা এলাকায় সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউজের পাশেই হাটবাজার ও ফুটপাতে দোকানপাট বসিয়ে রমরমা বাণিজ্য চালানো হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা পুলিশের চোখের সামনে এসব কর্মকাণ্ড চললেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

সড়ক বিভাগের জমি দখল করে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বলেও আছে অভিযোগ।

এভাবে সড়ক বিভাগের জমি দিন দিন বেদখল হয়ে মোটা হচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের পকেট। এসব টাকার ভাগ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটেও যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তদের দাবি, নিয়মিত উৎকোচ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিন আগে থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের লতিফপুর এলাকার জোড়া ব্রিজের পাশে সড়ক বিভাগের জমিতে বিল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি দোকান নির্মাণ শুরু করেছেন। এর পাশে ট্রাক স্টেশন এলাকায় মোরশেদ আলম দুরে (সাগর) বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সড়ক বিভাগের সরকারি জমি ভরাট করেছেন।

সড়ক-মহাসড়কের খাস জমি দখলের মচ্ছব, রুখবে কে?
কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের সাইট অফিসের পাশেই সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কালিয়াকৈর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভেকু গাড়ি জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত, কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিন দুয়েক পর আবার রাতের আধাঁরে ওই জমি ভরাট হয়ে গেছে।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, অভিযোগ দিয়েই দায় সেরেছে সড়ক বিভাগ। আর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার সরকারি জমি ভরাটের মাধ্যমে দখল করেছেন সাগর।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাগর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমাদের সম্পত্তি। সড়ক বিভাগের জমি দখল করছি না। এর এক পাশের সম্পত্তি মহাসড়কে গেছে, কিন্তু এখনও রেকর্ড হয়নি। অপর পাশে মহাসড়ক থেকে অ্যাপ্রোস সড়কের জন্য আবেদন করেছি। এখানে অস্থায়ী গরুর হাট করা হবে।’

কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক বিভাগের সাইট অফিসের পাশেই একটি বড় দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সে দোকানের ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজ চালাচ্ছেন দীপংকর নামের এক ব্যক্তি।

জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এটা নির্মাণ করতেছি।’

এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দোকান মালিক বলেন, ‘আপনারা কেন আসছেন? এ বিষয়ে আপনাদের কী করার আছে?’

সড়ক-মহাসড়কের খাস জমি দখলের মচ্ছব, রুখবে কে?
ট্রাক স্টেশন এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশের সরকারি জায়গায় থাকা পুকুর ভরাটের আরেকটি চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা

প্রকাশ্যে এসব কর্মকাণ্ড চললেও সংশ্লিষ্টদের অতৎপরতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, অভিযান চালিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ বিষয়ে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী তায়েব আলম বলেন, ‘জমি ভরাট করার বিষয়ে মামলা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চিঠি লিখে ইউএনও অফিস ও থানায় পাঠানো হয়েছে।

‘সরকার পক্ষ থেকে ভরাটকারীদের নামে মামলা হবে। বিষয়টি মন্ত্রী মহোদয়ও (আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক) জানেন। এটা নিয়ে তিনবার বসা হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন বলেন, ‘ওই জমি ভরাটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে চলমান দোকানপাট নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব সমস্যা সমাধানে এ সপ্তাহেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন:
প্রাথমিক স্কুলের জমি দখল ও গাছ কাটার অভিযোগ
কর্ণফুলীতে এক বছরে ৫০ কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার
ফুটপাত থেকে সরিয়ে হকারদের খোলা মাঠে পুনর্বাসন
বনের জমি উদ্ধারে গিয়ে হামলায় কর্মকর্তা হাসপাতালে
সওজের জমিতে মেম্বারের ‘সমাজসেবা’

মন্তব্য

p
উপরে