সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার যুগ্ম সম্পাদক ও নিউজবাংলার গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি পিয়ারুল ইসলামের নামে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে।
প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার উদ্যোগে রোববার দুপুরে জেলার নাট্য সংস্থার সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে জেলার ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, সহদপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সালাম আশেকি, প্রচার সম্পাদক জান্নাতুন নাঈম, পলাশবাড়ী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রতন, ফুলছড়ি উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক জামিরুল ইসলাম সম্রাট, কার্যকরী সদস্য শাজাহান সিরাজসহ নিহত ছকুর পরিবারের সদস্যরা।
প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘রিকশাচালক ছকু হত্যার ঘটনাটি জেলায় আলোচিত। সেই মামলার আসামিরা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরে উল্টো হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আসামিরা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সাংবাদিকসহ কয়েকজনের নামে মামলা করেছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন বলেন, ‘এ মামলাটি ফের তদন্ত করতে হবে। নতুবা বিচার বিভাগীয় তদন্তে আনতে হবে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে সাংবাদিককে হয়রানি মেনে নেয়া হবে না।’
নিহত রিকশাচালক ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হককে গ্রাম ছাড়া করার পর তিনি অন্য একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। মানববন্ধনে মোজাম্মেলের আশ্রয়দাতা কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘পিবিআই মোজাম্মেলকে ডাকছিল। আমি আর কয়েকজন তার কাছে গেছি। সব শোনার পর ওই পুলিশ (তদন্তকারী কর্মকর্তা) হামার কাছে মন্টু (টাকা) চাইছিল ১৫ হাজার। আমি কছি; সত্যের পথে ফাঁসিতে যাতে রাজি আছি। কিন্তু ঘুষ দিব না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পিবিআই কছিল; মন্টু দিলে মামলা থাকি সব নাম কাটা যাবে। কিন্তু আমি তা দেই নাই। পরে বুঝনো, সেই তেকনে এমাক আসামি করছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ দিল না পিবিআই পুলিশ। এটা দেশত (দেশে) কোন বিচের হলো।’
এ ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার পক্ষ থেকে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে গত জুনে ছকু মিয়া নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয় নির্যাতনে। নিহতের ছেলে মোজাম্মেল হক মামলায় অভিযোগ করেন, স্থানীয় দাদনকারবারির ছয় ভাই ১৫ মে হাত-পা বেঁধে রাতভর পিটিয়ে তার বাবার হাত-পা ও দাঁত ভেঙে দেয়।
অভিযোগে বলা হয়, ওই দাদনকারবারিদের সঙ্গে ছকু মিয়ার দাদনের টাকা নিয়ে পুরোনো বিরোধ ছিল। ছকুর ছেলে মোজাম্মেলের সঙ্গে দাদনকারবারি মন্টু মিয়ার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক জানতে পেরে মন্টু তার ভাইদের নিয়ে ছকুকে রাতভর নির্যাতন করে।
আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া রাতভর ছকুকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে কোনো চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে পরদিন ১৬ মে দিনভর তাকে জিম্মি করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
এক সপ্তাহ পর দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ জে এম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ‘ছেলের প্রেমের খেসারত’ হিসেবে ছকু মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই টাকার জন্য ছকুর একমাত্র ঘরটিও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন দাদনকারবারিরা। এরপর তাকে ভিটে ছাড়া করা হয়। পরে ছকু মিয়া আশ্রয় নেন গাজীপুরের শ্রীপুরে ছেলের বাসার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জুন মৃত্যু হয় তার।
পরে ছকুর ছেলে মোজাম্মেল বাবা হত্যার মামলা করতে চাইলে থানায় তার মামলা নেয়া হয়নি। উল্টো মোজাম্মেল ও তার বোনকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে ওই ছয় ভাই।
পরবর্তী সময়ে গত ১৬ জুন ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে (সাদুল্লাপুর) মামলা করেন। মামলায় ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু, মন্টুসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। পরে আদালতের বিচারক শবনম মুস্তারী সাদুল্লাপুর থানাকে মামলা রেকর্ডভুক্ত করে ২৩ জুনের মধ্যে মরদেহ উত্তোলন ও ময়নাতদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
পুরো ঘটনায় শুরু থেকে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
আদালতের এই নির্দেশনা পাওয়ার পরই ছকু হত্যার প্রধান আসামি মন্টু মিয়ার স্ত্রী বাদী হয়ে তাদের মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গাইবান্ধা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ছকুর ছেলে মোজাম্মেল, নিউজবাংলার গাইবান্ধা প্রতিনিধিসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় সাক্ষী হন ছকু হত্যা মামলার নয় আসামি।
এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ১৫ মে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের ওই তরুণীকে মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম, তার ছোট ভাই ওয়ারেস সরকার, চাচা আসাদুল ইসলাম, একরামুল হক ও তার ছোট ভাই ইউসুপ আলী বাড়ির অদূরে একটি ব্রিজের সামনে থেকে অপহরণ করেন। পরে মোজাম্মেল তরুণীকে ঢাকার গাজীপুরে নিয়ে আটকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
গত ২৮ জুলাই মামলার আবেদনটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। প্রাথমিক তদন্ত শেষে ৪ নভেম্বর মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক পিয়ারুল ইসলাম, চাচা আসাদুল ইসলাম ও একরামুল হককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন গাইবান্ধা পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দীপংকর সরকার। প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হককে অপহরণ ও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া বাকি তিনজনকে অপহরণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
রিকশাচালক ছকু হত্যাকাণ্ডের আসামিরাই নারী নির্যাতন মামলার সাক্ষী।
এই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কোনো আলামত মেলেনি শারীরিক পরীক্ষায়। তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি এসেছে নিউজবাংলার হাতে। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার বরাত দিয়ে চিকিৎসকের মন্তব্য লেখা হয়েছে: ‘নো সাইন অফ ফোর্সফুল সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স।’
তদন্ত কর্মকর্তার কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তুলছে গ্রামবাসী। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দীপংকর সরকার তার তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া কথা উল্লেখ করলেও তিনি কোনো ঘটনার আলামত জব্দ করতে পারেননি। এ ঘটনায় ভিকটিমের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তি, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও গ্রামবাসীর জিজ্ঞাবাদের ভিত্তিতে তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার আসামি মোজাম্মেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। সে সময় মোজাম্মেলের সঙ্গে গ্রামের আরও কয়েক ব্যক্তিও পিবিআই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তদন্ত কর্মকর্তা তাদের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন এমন অভিযোগ করছেন তারা, কিন্তু ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আসামিপক্ষ কিংবা গ্রামবাসীর কোনো মতামত নেননি ওই তদন্ত কর্মকর্তা।
এ নিয়ে গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'ওই পুলিশ (তদন্তকারী কর্মকর্তা) মন্টু (টাকা) চাইছিল ১৫ হাজার। হামরা কিসক মন্টু দিমো? হামার তো অপরাধ নাই। সেই তেকনে (ঘুষ না দেয়া) ওমার ঠাই (বাদীপক্ষ) টেকা খায়া এগুলা করছে পুলিশ। এটা কোন বিচার হইলো?’
সেদিন একই গ্রামের ভ্যানচালক মধু মিয়াও যান পিবিআই অফিসে। তিনি বলেন, 'একে একে সব শুনছে। আসার আগে হাত দিয়ে টেকার ইশারা করে পুলিশ। হামরা কছি, সত্যের পথে ফাঁসি হোক। টেকা দিবের পাব না।'
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা দীপংকর সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তের সময় ভিকটিম ১৬১ ধারায় ঘটনার সত্যতা আমাদের নিশ্চিত করেছে, পরে সে আবার আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একাধিক গ্রামবাসী ও সাক্ষীর জবানবন্দি রয়েছে। আমি তদন্তে যা পেয়েছি তাই তুলে ধরেছি। বাকিটা আদালত দেখবে।’
গ্রামবাসীর কাছে ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসম্ভব, এমন কিছু হয়নি।’
এদিকে যে তরুণীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, বরং ছকুর ছেলে মোজাম্মেলের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। এই স্বীকারোক্তির মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ হাতে এসেছে নিউজবাংলার।
ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রামবাসীকে ওই তরুণী বলছেন, ‘দুই-তিন বছর ধরে মোজাম্মেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আমার। আমাক কেউ অপহরণ, ধর্ষণ করে নাই। বাপ, চাচা, জ্যাঠা প্রতিদিন আমাকে মারধর করত। মোজাম্মেলকে মারার হুমকি দিত। আমি তো নিরুপায় হয়ে পুলিশের কাছে ও গাইবান্ধা আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছি।’
পরবর্তী সময়ে আদালতে গেলে সত্য বলবে বলেও জানান তরুণী।
ছকু হত্যা মামলাটির কার্যক্রম ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলাটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেনও। সেই সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঘটনাটি জনসমক্ষে আনায় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের ওপর ক্ষোভ জন্মানোয় তাকেও পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে সেই মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেল মোজাম্মেল একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বাদী। এ ছাড়া আরেকজন মামলাটির সাক্ষী। আর সাংবাদিক পিয়ারুল নির্যাতিত ছকুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ ঘটনাটি ফলাও করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করেন; যা দেখে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাটি জেলাজুড়ে আলোচনায় আসে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য